প্রণয়স্পর্শী পর্ব ২২+২৩

#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#দ্বাবিংশ_পর্ব

বেলা গড়িয়ে দুপুরের শেষ প্রহর, সেই সকাল হতেই আকাশটা আবছা রোদ আবছা মেঘ অপরুপ দৃশ্য এ যে রোদ্র মেঘের জুটি সেই সুন্দর আকাশটিতে৷ চারদিকেই কেমন যেন থমকা পরিবেশ সব কিছুই নিস্থব্দতায় ঘেরা, এতো সুন্দর রোদ্র মেঘের জুটির মিলন মেলা সে দিকে কেউ নজরি দিচ্ছে না৷ যে যার মত বসে ভাবছে, তাদের এতো কিছু দেখার সময় আছে নাকি? তারা তো গভীর ভাবনায় মত্ত৷
সকলের মাঝেই পিনপতন নীরবতা একটু আগেই যেন সকলের মাঝে ঝড় বয়ে গেছে আহানা কাচুমাচু খেয়ে বসে আছে ওর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে ঝড় টা ওর উপর দিয়েই গিয়েছে৷
ওর পায়ের সামনে ভাঙা ফুলের টব এর টুকরো পরে আছে যেখানে বসে আছে সে ঘরের অবস্থাও নাজেহাল সব কিছু ভাঙা পরে আছে৷ শোভন ঘরের মাঝে ডান হাতের আঙুল দিয়ে ঘষছে আর কিছু একটা ভাবছে৷ চোখ মুখ লাল হয়ে আছে উজ্জ্বল শ্যামবর্ন মুখশ্রীটাও লাল হয়ে আছে কপালের রগ রাগে ফুটে উঠেছে হাত এর উপরে ছিলে ছিলে আছে৷
আহানা আমতা আমতা করে বলে,
— ” ভাই এমন করছিস কেন? আমাকেও তোর বিশ্বাস হয় না? আমি তোর সাথে মিথ্যে বলবো কেন এমন করছিস? ”
শোভন টগবগে দৃষ্টিতে আহানার দিকে তাকায় আহানা চুপসে যায়, শোভন কিছুক্ষন সামনের বিছানায় বসে পরে আবার একই ভঙ্গিতে কিছু একটা ভেবে সামনে থাকা কাঁচের টি টেবিলটা রাগে গজ গজ করতে করতে লাথি দিয়ে দূরে ফেলে আর সাথে সাথে টেবিলটা ভেঙে ছড়িয়ে যায় কাঁচ গুলো৷ অতঃপর আবার পায়চারি করতে থাকে৷ আহানা পা গুটিয়ে নেয়৷ আহানার ও রাগ লাগছে শোভনের উপর কিন্তু প্রকাশ করলো না শোভনের রাগ সম্পর্কে আহানার যথেষ্ট ধারনা আছে, ও যা বলবে তাই করবে শোভনের রাগ মাথায় উঠলে হাতে যা পায় সামনে থাকা ব্যাক্তিকে তা দিয়েই আঘাত করে আর কটু কথা শুনায়৷
আহানা ভাবলো না ব্যাপারটা এখন সামলাতেই হবে তাই থমথমে কন্ঠে বলে,
— ” দেখ ভাই এবার বেশি হয়ে যাচ্ছে, তুই আমাকে বিশ্বাস করতে পারছিস না? আমি কি মিথ্যা বলবো তোকে? আর মিথ্যে বলে লাভ কি আমার? ”
শোভন তেরে এসে চেচিয়ে বলে,
— ” আমি জানি তুই সবটা জানিস ও তোকে সব বলে, এটাও নিশ্চয়ই বলেছে? আর ওর জন্য তুই আমার সাথে কথা বলা অফ করে দিয়েছিলি আমি জানি তুই জানিস দেখ আমি পরে জানতে পারলে ফল ভালো হবে না৷ ছাড়বো না তোকে আমি৷ ”
আহানা এবার অনেক রেগে গেলো, এ ছেলে নিজেকে কি ভাবে? ও যা বলে তাই ঠিক? মেঘলা যা করেছে এখন মনে হচ্ছে ঠিকি করেছে৷ অনেক কষ্ট দিয়েছে মেয়েটাকে শোভনে শাস্তি হওয়া উচিৎ৷
আহানা দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
— ” ও তাই নাকি? তুই আমাকেও ছাড়বি না? আর কি বললি মেঘলা আমায় সব বলতো? বিয়ের কথাই বলেনি তিনটা মাস আমার সাথে থাকলো, তোর বউ তোর মতই৷ আমি শেষ বারের মতো বলছি আমার কথা বিশ্বাস না করলে আমার কিছু করার নেই, আমি সত্যি জানি না মেঘলা কোথায় গেছে৷ আর এটাও জানি না যে ও তোকে ডিভোর্স পেপার ও দিবে৷ ”
শোভন আবার ধপ করে নিজের বিছানায় আবার বসে পরলো, রাগে ওর শরীর রি রি করছে৷ কাল সকালের কথা মনে পড়তেই আরো রাগ হচ্ছে৷ হ্যাঁ মেঘলাকে পাওয়া যাচ্ছে না এক দিন হলো৷

ফ্লাশব্যাক,,,

সে দিন প্রায় বারোটার সময় বাড়ি ফিরে শোভন মেঘলা, এতো রাতে এপার্টমেন্ট এ একটা ছেলের সাথে দু-জন মেয়ে গেলে কেউ ভালো চোখে দেখবে না আর শোভন ওদের একাও ছাড়তে পারছিলো না তাই ওর বাড়িতেই নিয়ে এসেছিলো৷ আহানা প্রথমত আসতে চাইনি ও চায় না শোভনদের বাড়িতে যেতে কিছু বিষাক্র কারনেও বাড়ি ছেড়েও বেড়িয়ে গিয়েছিলো তখন থেকে এ বাড়ির শুধু শোভন ছাড়া কারো সাথেই ও যোগাযোগ রাখে নি৷ ও কখনোই চায় না কখনো এ বাড়িতে আসবে আবার সেই অতীতের মুখোমুখি হবে৷
কিন্তু এক প্রকার জোর করেই শোভন আহানা আর মেঘলাকে নিজের বাড়িতে এনেছিলো৷
রাত বারোটা বাজলেও এহসান ভিলায় তখনি আড্ডা জমে সবার এটা নিত্য দিনের কাজের মধ্যে একটা সবাই সবার অফিস শেষ করে এ সময়টায় বাড়ির বৈঠখানায় বসে আড্ডা দেয়৷ আজও ব্যাতিক্রম নয় শোভনের মা বাবা বড় চাচা আর চাচি মিলে খোশ গল্প করছিলো তখনি শোভন আসে ওদের নিয়ে৷
এতোদিন পর আহানাকে দেখে সবাই চমকে গিয়েছিলো শোভনের বড় চাচা আহানাকে দেখে ছলছলে চোখে এগিয়ে এসে বলে,
— ” তুই ওকে নিয়েসেছিস বাবা? ”
আহানা লোকটির দিকে না তাকিয়েই বড় বড় পা ফেলে উপরের দিকে যেতে যেতে শোভনকে বলে,
— ” আমি উপরে যাচ্ছি ওকে নিয়ে আয়, আর কাল সকালে আমি চলে যাবো কেউ যেন আমার সামনে না আসে বলে উপরে চলে যায়৷ ”
আহানার এহেন ঘটনা দেখে মেঘলা বেশ অবাক হয় সাথে মাথায় প্রশ্নও জাগে, আহানা কি শোভনের কিছু হয়? যদি কিছু নাই হয় তাহলে কেউ কারো বাসায় এসে এমন ব্যবহার করে?
মেঘলার কৌতুহল মাখা চেহারা দেখে আমতা আমতা করে কথা ঘুরানোর জন্য বড় মায়ের দিকে তাকিয়ে কিছু ইশারা করে৷
ওর মা মেঘলার সামনে এসে বলে,
— ” তুমি তাহলে মেঘলা? যার জন্য আমার ছেলে পাগল প্রায়? বাহ তাই তো বলি আমার রাগী ছেলেটা হঠাৎ প্রেমিক পুরুষ হয়ে উঠলো কি করে? ”
শোভনের মায়ের কথায় মেঘলা কিছুটা ইতস্ত হয়ে পরে, তাচ্ছিল্য দৃষ্টিতে শোভনের দিকে তাকায়৷
কিছুক্ষন ওখানে সবার সাথে কথা বলে মেঘলাকে নিয়ে উপরে আসে শোভন, মেঘলা উপরে এসেই হাফ ছেড়ে বাঁচে৷ দম বন্ধ হয়ে আসছে ওর, শোভনের আদিক্ষেতা সহ্য হচ্ছে না৷
উপরে আসতেই নিজের রুমে মেঘলাকে নিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে গালে আলতো ঠোঁটের পরশ দিয়ে বলে,
— ” কি বউ শশুর বাড়ি পছন্দ হয়েছে তো? ”
মেঘলা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে একেবারে৷ নিজের সব শক্তি দিয়ে শোভনকে সরিয়ে রাগী কন্ঠে বলে,
— ” দূরে থাকতে বলছিনা না আপনাকে? দূরে থাকুন আর এই ঘরে নিয়ে এলেন কেন? আপু কোথায়? আপুর রুমে নিয়ে চলুন আপনার সাথে আমি থাকবো না৷ ”
শোভনের এবার রাগ উঠে যায় মেয়েটা শুরু করেছে কি? কেন এতো ইগনোর করছে ওকে? মেঘলার হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে আলমারিতে ঠেস দিয়ে দাড় করিয়ে হাত দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরে বলে,
— ” এই মেয়ে এমন করছো কেন? মানছি আমি ভুল করেছি তাও এমন করবে নাকি? নিজের মায়ায় আমাকে জড়িয়েছো তুমি৷ জাদু জানো তুমি? আমার মাথাটা বিগ্রে দিয়ে আমায় আঙ্গার করে পালাতে চাইছো? তা কি করে হয়? শুনে রাখো অনেক হয়েছে ভালোমানুষি-গিরী এবার আমার কথার নরচর হলে তোমায় আমি ছাড়বো না৷ আমি যখন বলেছি তোমাকে আমার চাই তার মানে চাই৷ ”
বলে মেঘলাকে ছেড়ে আলমারি থেকে নিজের টি-শার্ট বের করে ওয়াশ রুমের দিকে যেতে নিলেও ঘাড় গুরিয়ে বলে,
— ” আমি যেন এসে তোমায় এখানেই দেখি, কোথাও যাবে না বলে দিলাম৷ ”
বলে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়৷ মেঘলা বিছানার কোনে বসে ফুপিয়ে উঠে৷ এ ছেলে কখনোও ভালো হবে না স্বার্থপর ছেলে কষ্ট ছাড়া কিছুই দিতে পারে না, ভেবেছিলো সময় দিবে শোভনকে কিন্তু না এবার যা করার ওকেই করতে হবে ভাবলো মেঘলা৷
শোভনের জোরাজোরিতে এ ঘরেই থাকলো মেঘলা সারা রাত ওকে ঝাপটে ধরে শোভন ঘুমালেও ও ঘুমায় নি৷
সকালে ছয়টা বাজতে ঘুম ভেঙে যায় শোভনের চোখ খুলে মেঘলাকে নিজের বাহুডোর এ দেখতে না পেয়ে উঠে বারান্দায় গিয়ে খুজে কিন্তু নেই৷ আহানা এখনো ঘুমাচ্ছে আহানার রুমেও নেই এ বাড়ির কিছুই চিনে না মেঘলা তবুও শোভন পুরো বাড়ি খোজে কিন্তু পায় না৷
আহানার এপার্টমেন্ট এ ও যায়নি দাড়োয়ানকে ফোন করেছিলো শোভন, হসপিটালেও যায়নি৷ শোভন সকাল থেকেই প্রায় অনেক জায়গা খোজাখুজির পর পায় না মেঘলাকে৷
কাল সারা দিন মেঘলাকে খুজেছে না পেয়ে রাতে বাড়িতে এসে নিজের ঘর ভাঙচুর করেছে রাগে৷
আজ সকাল দশটা বাজতেই একটা লইয়ার এসে শোভনের হাতে মেঘলার সাইন করা একটা ডিভোর্স পেপার দিয়ে যায়৷ ডিভোর্স পেপার দেখে শোভন আরো রেগে যায় শোভনের ধারনা আহানা সবটাই জানে৷

বর্তমান,,

আহানা শোভনের এমন রাগ আর নিতে পারছে না, ওর জন্যই এমন টা হলো ও আবার সবার উপর রাগ দেখাচ্ছে৷
প্রথম থেকেই মেঘলাকে কোনো রকম বাজে কথা না নেই যে বলেনি, সব ব্যাপারেই অপমান করেছে এমন কি ওই নরখাদকদের কাছেও একা ফেলে গিয়েছিলো প্রথম তারপর কি ভেবে বাঁচিয়েছে৷ হসপিটালেও সবার সামনে অপমান করেছে রাস্তায় সবার সামনে মেরেছে পর্যন্ত আর আজ ভালোবাসা দেখাতে এসেছে৷
আহানা এখানে আর না বসে রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে যায়৷
শোভন ড্রেসিন টেবিলের আয়নায় জোরে একটা বাড়ি মেরে বেরিয়ে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলে,
— ” অনেক হয়ে গেছে এবার তোমাকে নিজের পিঞ্জিরায়-বদ্ধ করার পালা তোমাকে তো আমার কাছেই ফিরতে হবে চড়ুই পাখি৷
যত উরার উরে নেও তোমায় হাতের মুঠোয় এনে শুধু পায়ে শিকল পড়ানোর পালা৷ ”
#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#ত্রয়োবিংশ_পর্ব

আজ আকাশে মেঘ জমেছে ঘনো কালো, কোথাও কোনো আলোর ছিটে ফোটাও নেই কে বলবে সবে বিকেল হলো৷ রাতের ন্যায় আধার নেমেছে, বৃষ্টি আসবে বলেও আসছে না সেই সকাল থেকেই এমন হচ্ছে আবার তীব্র বাতাসে অন্ধকার কেটে যাচ্ছে আবার কিছুক্ষন পর রাতের ন্যায় অন্ধকার নামছে৷
আহানা সেই ঝিলের সামনে গাড়িতে হ্যালান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে মেঘলা পরে গিয়েছিলো৷ আজ মেঘলাকে খুব মনে পরছে কাল থেকে মেয়েটাকে পাওয়া যাচ্ছে না কোথায় আছে কি করছে কে জানে?
আচ্ছা মানছে শোভন না হয় ভুল করেছে তাই বলে এভাবে চলে যাবে? আহানাকে বললেও তো পারতো? মানুষ মাত্রই ভুল তাই বলে কি চলে যাওয়াটা কোনো সমাধান? ওর গ্রামে যে যাবে না এটা আহানা একশ পার্সেন্ট সিউর তাহলে কোথায় যাবে?
মেয়েটা যেখানেই আছে ঠিক আছে তো?
এতো বড় সিদ্ধান্তটা নিলো একটু জানাতেও পারলো না ওকে? যেখানেই থাকুক না কেন আহানা জানে মেঘলাকে খুজে বের করবেই, তবুও মেয়েটা তখন পর্যন্ত কোথায় থাকবে কি করবে?
আহানা জানতো এখানে কোথাও একটা ওর মামার বাড়ি আছে কিন্তু সেখানেও যে যাবে না এটাও জানে৷
কি রকমটা বোকামো করলো? এখন কোনো মানুষই ভরসা যোগ্য নয় আর একা একটা মেয়ে কখনোই সেফ নয় কখন কোথায় কি হয়ে যায়৷ এ সমাজে নর খাদক এর অভাব নেই একা একটা মেয়ে দেখলেই তাদের পুরুষত্ব জেগে উঠে হয়ে উঠে পিচাশ এর মতো কখন তাকে খুবলে খাবে৷ আর মেঘলা তো নিতান্তই বাচ্চা স্বভাবের বয়সটা বেশি হলেও ওর মধ্যে বাচ্চামোটা অনেক৷

— ” এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ”
হঠাৎ পুরুষালী কন্ঠ ভেসে আসতেই তাকায় ঘুরে৷ রাজ দাঁড়িয়ে আছে আজ অনেকদিন পর দেখা হলো এ ছেলে যে কেন বার বার ওর সামনে আসে?
চায় কি এ ছেলে? আবার ওর প্রতি দূর্বল করে দিতে? না এবার আর সে ভুল করবে না, ভাগ্যিস সেদিন ও নিজেও মেঘলার ওর মনের কথা এ ছেলে কে জানায়নি নয়তো বড় ভুল করতো৷
শোভন তো তাও মেঘলাকে ভালোবাসে, কিন্তু ও? তা ভেবে তাচ্ছিল্য চোখে তাকালো রাজের দিকে৷
মৃদু গলায় উত্তর দেয়,
— ” ইচ্ছে করছে তাই দাঁড়িয়ে আছি৷ ”
রাজ সামনে এসে বাকা হাসি দিয়ে বলে,
— ” ও৷ ”
একটু থেকে বাকা হাসির রেখাটা আরেকটু বড় করে বলে,
— ” তোর প্রান প্রিয় ভাই কোথায়? ”
উত্তর দিলো না আহানা, ইচ্ছে করছে না ওর সাথে কথা বলতে আজ কাল ওর সাথে কথা বলতে একদমই ভালো লাগে না আহানার৷
হঠাৎ-ই তীব্র বাতাস বয়ে গেলো আর মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো, ভিজিয়ে দিয়ে গেলো দুজনকেই কি অদ্ভুত এ বৃষ্টির অপেক্ষায় দুপুর থেকে এখানে অপেক্ষা করছিলো এ বৃষ্টি এলো তো এলো এ অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটি-র সামনেই এলো?
আহানা চায় না এ পাষাণ লোকের সাথে ভিজতে আহানা তো চেয়েছিলো বর্ষনে তার মন খারাপটা ধুয়ে মুছে দিবে কিন্তু এ বর্ষন যে ওর মন খারাপের পাল্লা আরো ভারি করে দিচ্ছে এখন তো কাঁদতে ইচ্ছা করছে খুব করে৷
তবুও এ পাষাণ মানুষটা-র সামনে নিজের দূর্বলতা দেখাবে না, খুব কষ্টে এতোটা-দিন নিজেকে সামলে রেখেছিলো কিন্তু আর পারছে না৷ মেঘলা থাকতে এসব মনেই করতো না ও মেয়ের বাচ্চামো দেখলেই মন ভালো হয়ে যেতো কিন্তু স্বার্থপর মেয়েটাও চলে গেলো এমনকি একবার বললোও না৷
আহানা একবার তাচ্ছিল্য দৃষ্টিতে রাজের দিকে তাকিয়ে গাড়ির দরজা খুলে উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বিরবির করে বলে,
— ” হোক না কিছু ইচ্ছা অপূর্ন, তবুও আর হবো না তোমার তুমি না চাইলেও না আর চাইলেও না৷ ”
বলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নিজ গন্তব্যে চলে যায়, এ ভয়ংকর বাক্যটি রাজ শুনলো ও না বুঝলো না৷ কি অদ্ভুত প্রকৃতির নিয়ম কেউ জোর করে পেতে চায় কেউ ছেড়ে যেতে চায়৷ কিন্তু রাজ? সে কি চায়? তা আজ পর্যন্ত আহানার বোধগম্য হলো না আহানার কাছে তো রাজ শোভনের মতই হৃদয়-হীন৷ আর আহানার কাছে এখন মনে হচ্ছে যে মেঘলা যা করেছে ঠিক করেছে৷ হৃদয়হীন স্বার্থপর মানুষের সাথে এমনটাই করা উচিৎ৷

রাত হয়ে গেছে সারা বিকেল তুমুল বর্ষনের পর এখন আকাশ পরিষ্কার, পরিবেশ আজ হিমেল এ যেন কোনো বিষাদ মাখা আধার কেটে গেছে আকাশ থেকে৷ আধার যত গভীর হয় তা কেটে গিয়ে আলো ততো ঝমকালো হয় সে আলো সব কিছু পরিপূর্ন করে দেয়৷
সারাদিন মেঘলা নামক ওর প্রান-পাখিটাকে খুজে ক্লান্ত হয়ে শরীর এলিয়ে দিলো সোফায়, কি ভুল টাই না করেছে এতো-দিন এ ভুলের মাসুল আজ দিতে হচ্ছে ওকে৷
মেয়েটাকেও যা তা বলে অপমান করেছে কিছু দিন যাবৎ তো মেয়েটাকে না দেখলে ওর সব কিছু বিষাদ লাগতো আর দু’দিন যাবৎ দেখছে না মেঘলাকে৷ মানুষ প্রবাদ বাক্যে বলে ” দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝে না” এটা সত্যি আজ মনে হচ্ছে, এ কেমন যন্ত্রনা? আগে তো বুঝেনি? এটাই তাহলে প্রনয়? বিষাক্ত প্রণয়ে জড়িয়ে গেছে যে৷ কিন্তু ওর প্রণয়স্পর্শী ওকে নিজের মায়ায় ভস্ম করে চলে গেলো? তা কি করে হতে দেয় ও?মেঘলাকে যে ওর চাই, ভালো থাকার জন্য হলেও চাই৷
আজ মিস করছে শোভন মেঘলাকে, ওর তাকিয়ে থাকা বোকা বোকা কথা হুট করে হেসে দেওয়া আর কাজের মাঝে একশত বার ” ডাক্তার সাহেব আপনি এতো সুন্দর কেন” এ কথা গুলোকে মিস করছে৷
প্রায় পনেরো দিন আগেও ওর চ্যাম্বারে লাঞ্চ ব্রেকের পর বসেছিলো হুট করে ওর চুল গুলো এলো মেলো করে দিয়ে বলেছিলো,
— ” ডাক্তার সাহেব আপনি হসপিটালে মাক্স পরে আসবেন, মেয়ে গুলো কেমন কেমন তাকিয়ে থাকে কেন তাকাবে? আপনার দিকে তাকানোর অধিকার শুধু আমার৷ ”
সে দিন রাগ দেখিয়ে অনেক কথা শুনিয়েছিলো শোভন মেঘলাকে কিন্তু মেঘলা? সে বিনিময়ে হেসেছিলো শুধু৷ সে দিন বকা খাওয়ার পর ও পরের দিন এসে একি কান্ড করেছিলো৷
মেয়েটা আগে তো অভিমানী ছিলো না? হুট করে সেদিন রাস্তায় এতো কান্ড ঘটার পর থেকে মেঘলা শোভন এর সাথে আগের মত আর কথা বলতো না ইগনোর করা শুরু করলো এই ইগনোরটা নিতে পারছিলো না শোভন হঠাৎ-ই এই মেয়ের প্রেমে পরে যায়৷ যাকে বলে ভয়ংকর প্রেম শোভনের যে মেঘলাকে চাই চাই৷
মেয়েটা যে ওকে দিন দিন পাগল করে দিচ্ছে, দিচ্ছে কোথায়? দিয়েছেই তো? এখন যে ভয়ংকর পাগলামি শুরু করেছে আর এ পাগলের পাগলামি ঠিক করতে শুধু মেঘলাই পারবে৷ ওই তো শোভনকে পাগল বানিয়ে ঘোর অন্যায় করেছে, এ শাস্তি তো পেতেই হবে? ভয়ংকর প্রেমিকের প্রেম পাগলামির আরোগ্য যে মেঘলাই৷ হুম সুক্ষ্ম আরোগ্য যাকে ছাড়া শোভন এর চলবেই না৷

চলবে,

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here