প্রণয়স্পর্শী পর্ব ২+৩

#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#দ্বিতীয়_পর্ব

প্রকৃতী তার নিজের ক্রুদ্ধ রুপ দেখাতে ব্যাস্ত যখন মেঘলা মনের গহীনে ভয় জারানো প্রশ্ন তখন, “এই ঝড়ের মাঝে ট্রেন থামিয়ে হট্টগোল করছে কে ”
প্যাচহীন মন তখন অজানা আতঙ্কে জরজরিত তাহলে বাড়ি থেকে পালিয়ে ও কোনো শেষ রক্ষা হলো না? জীবনে সুখ কী অমাবস্যার চাঁদের ন্যায় হয়ে গেছে? ইসস এমনটা যদি হতো অমাবস্যা-য় ও চাদের দেখা যেত?
জড়োসড়ো হয়ে সিটের উপর বসে বিড়বিড় করে বলে,
— ‘ আমি যাবো না, সে কি এসে গেল? আমায় ছাড়বে না? আমি যাবো না৷ ”
মেঘলা কে এমন ভয়ে জড়োসড়ো হতে দেখে কিঞ্চিত ব্রু কুচকিয়ে তাকায় শোভন, ষ্টুপিড মেয়ে টা এমন করছে কেন? কিসের আতংকে এমন করছে?
শোভন ব্রু কুচকেই অধর যুগল নাড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
— ‘ এই মেয়ে কি হয়েছে তোমার?
এমন ভয়ে কাপছো কেন? এই মেয়ে কি হলো বলো? ‘
নিজের প্রশ্নের উত্তর পেলো না শোভন মেঘলা নিজের মতই ভয়ে কি সব বিড়বিড় করে যাচ্ছে তার কি আর অন্য প্রশ্ন শোনার খেয়াল আছে নাকি? সে তো নিজের কথায় ব্যাস্ত শোভনের এবার বিরক্ত লাগছে মাত্রা তিরক্ত বিরক্ত-তা ভর করছে, মেয়েটা এমন কেন? স্বার্থচিন্তা-য় ব্যাস্ত কেউ যে নিজের সময় ব্যয় করে ওকে প্রশ্ন জিগ্যেস করছে ওই প্রশ্নের দাম দিচ্ছে না মেয়েটা? ভাবে কি নিজেকে? আপন মনে ভাবলো শোভন৷ শোভন যে বড্ড খেয়ালি মানুষ কোনো কিছু থেকে লক্ষ্য এরায় না তার কাছে তার সময়ের মূল্য হাজার দামি আর এই মেয়ে কিনা ওর মূল্যবান সময় ব্যয় করে করা প্রশ্ন গুলোর দাম দিলো না? ঘোড় অপরাধ করলো মেয়ে-টা আর শোভন কখনো অপরাধী-দের বিনা শাস্তি তে ছেরে দেয় না৷
শোভন আবার আড়ষ্ট চাওনিতে মেয়েটাকে পরখ করলো হঠাৎ-ই মেঘলা বিড়বিড় করতে করতে জ্ঞান হারালো শোভন ধরতে গিয়েও ধরলো না, কেন ধরবে? ধরবে না ভাবলো সে৷ এখানে যদি তৃতীয় কোন ব্যাক্তি থাকতো তাহলে নিশ্চই শোভন এর করা এমন অমানবিক নিষ্ঠুর কান্ডে অবাক হতো৷ কোনো ডাক্তার এমন হয়?
মেঘলা অচেতন হয়ে সিটের শেষ মাথায় পরে আছে৷ হাতের উপর মাথাটা৷ অবাধ্য চুল গুলো খুলে পরেছে শাড়ির আচলটা নিচে পরে আছে, শোভন ব্রুক্ষেপ না করে কোথায় হট্টগোল হচ্ছে তা দেখার জন্য পা বাড়াতেও থেমে গেলো৷ সে তো একজন ডাক্তার তার কাজ মানুষের প্রান বাচানো মেয়েটার সাথে এমন করবে? মেয়েটা তো ট্রামায় ছিলো কিন্তু কিসের এমন ভয় পেলো মেয়েটা?
শোভন মেঘলার দিকে এগোবে তখনি পিছন থেকে এক মহিলা বলে,
— ” একি আপনার স্ত্রী তো মনে হয় জ্ঞান হাড়িয়েছে৷ ”
মহিলা-টির কথা শুনে রাগ হলো শোভনের বেজায় রাগ৷ কোনো কিছু না জেনে একটা বলে দিলে হলো নাকি? তাও রাগ টা বহিঃপ্রকাশ করলো না শোভন রাগ নিয়ন্ত্রণ করে মেঘলার দিকে এগিয়ে যায় তখন মহিলা টি প্রস্থান করেছে৷ শোভন পালস চেক করে৷ মেঘলার মেয়েটা অনেক দূর্বল আর চেহারায় কেমন ভয়ের ছাপ, দাঁড়িয়ে পাশে থাকা পানির বোতল টা নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেই কয়েক ছিটে পানি ছুড়ে দেয় মেঘলার দিকে৷ প্রায় খানেকখন পর পিটপিট করে আঁখি মেলে মেঘলা৷
ধরফরিয়ে উঠে আবার জড়োসড়ো হয়ে বসে বলে,
— ” আমি যাবো না আমি যাবো না, সে আমায় মেরে ফেলবে৷ ”
শোভন প্রশ্ন বোধক চাওনি দিয়ে মেঘলার বাহু চেপে বলে,
— ” হেই হোয়াট হ্যাপেন? এমন করছো কেন? কি হয়েছে বলো?
কোথায় যাবে না? কি বলছো? কে মারবে?”
শান্ত হলো না মেঘলা আগের ন্যায় করে চলেছে শোভন এর ব্যাপার টা বেশ অদ্ভুত লাগছে মেয়েটা কি নিয়ে এতো ভয় পাচ্ছে? কে মারবে?
এমন করলে আবার অসুস্থ হয়ে পরবে তাই আবার বলে,
— ” হুসস চুপ!!
এমন করছো কেন? দেখ কিছু হয় নি কে মারবে তোমায়?
এখানে কেউ নেই৷ ”
মেঘলা আশপাশ টা তাকালো কিন্তু বাইরে হট্টগোল শোনা যাচ্ছেই শোভনের কথা মত শান্ত হলেও ক্ষান্ত হলো না মেয়ে টা বিড়বিড় করছেই৷
এবার শোভন চোটে গেলো ভারি অদ্ভুত তো প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে না সাথে কথার অমান্য ও করছে৷
এবার শোভন রেগে জোরে ধমক দিয়ে বলে,
— ” হেই স্টুপিট গার্ল কানে কি কথা যায় না? নাকি নাটক করছো?”
ফুপিয়ে উঠলো মেঘলা কিছু বললো না৷
বাইরে থেকে এখন একটু বেশি আওয়াজ আসছে তাই শোভন এখানে আর না দাঁড়িয়ে বাইরে দিকে গেলো৷ কেন ট্রেন থামলো তা যানতে৷
গুটি গুটি পায়ে শোভনের পিছু পিছু মেঘলা ও এলো তবে আড়ালে দাড়ালো ঝড়ের তান্ডব অনেক টা কমেছে৷
বাইরে এসে জানতে পারলো সামনে ট্রেন লাইনে বড় বড় গাছ ভেঙে পরেছে তা দেখে কর্তৃপক্ষ এখানেই থামিয়েছে তবে এটা ও একটা স্টেশন কিছুখন আগে মধ্য বয়স্ক একজন ছেলের সাথে পুলিশের মারামারি হয়েছে এখানে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেছে তারি হট্টগোল ছিলো৷
কানাঘুষোয় ছেলেটির নাম ও জানতে পারলো মেঘলা যা ভেবেছিলো তাই হয়েছে তবে আল্লাহ-র রহমতে বেচে গেছে এ যাত্রায়৷
কিন্তু এখন এতো রাতে কোথায় যাবে মেঘলা? এখানে তো কিছুই চিনে না, তাও ব্যাগ টা নিয়ে ট্রেনের বাইরে বেড়িয়ে আসে প্রায় সবায়ই বেরিয়ে গেছে এখানে থেকে বিপদ বাড়িয়ে লাব নেই৷
শোভন রাগে রি রি করছে প্রথমত ওর এই ট্রেনে আসার কোনো ইচ্ছে ছিলো না৷ ফ্লাইট মিস হয়েছে তাই ট্রেনে এসেছে এখন আবার মাঝরাতে উটকো ঝামেলা৷ ট্রেনে আবার মেঘলা নামক মেয়েটার কারনে রাগে মাথায় রক্ত উঠে আছে, এখানের নেটওয়ার্ক অনেক স্লো কিছুতেই কাউকে ফোন করতে পারছে না ব্রিফকেস টা টেনে বাইরে এলো শোভন তখনি বাইরে মেঘলার সাথে চোখা চোখি হলো মেয়েটা কে দেখলেই বিরক্ত লাগে শোভনের কারন অজানা৷ মেঘলা মাথা নিচু করে এদিক ওদিক চোখ বুলায়৷ সবার মাঝে ও ই হয়তো এমন অসহায় যার এ দুনিয়ায় কেউই নেই৷
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সামনে হাটা দিলো মেঘলা প্রায় স্টেশন এর মাঝ বরাবর আসতেই চায়ের টং এ কয়েকটা ছেলে দেখতে পেলো এদিকটায় এতো মানুষ নেই৷ মেঘলা সে দিকে ব্রুক্ষেপ না করে সামনে হাটা দিবে তখনি লক্ষ করলো একটা ছেলে এদিকেই এগিয়ে আসছে৷
মেঘলা পিছনে তাকিয়ে দেখে শোভন কাউকে ফোন করছে শোভন কে দেখে মেঘলার ঠোতে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে এখানে আর দাঁড়ায় না ছুটে শোভনের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়৷
শোভন মেঘলা কে দেখে মুখে বিরক্ত ফুটিয়ে বলে,
— ” এই ষ্টুপিড মেয়ে এখানে ছুটে আসলে কেন? ”

মেঘলা একবার ছেলেদের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলে,
— ” ডাক্তার সাহেব আপনার সাথে আমায় নিবেন? আমি খুব একা, প্রমিস করছি ঢাকা গেলে আপনার মুখোমুখি ও আর হবো না৷ ”

শোভন বিরক্ত হলো মেঘলার কথায়, মেয়েটা কি বলছে? মাথাটা একেবারে গেছে নাকি? এই ইরিটেটেড মেয়ে কে শোভন সাথে নিবে? কখনোই না৷
শোভন রেগে বলে,
— ” হোয়াট ডিড ইউ সে? আমি তোমাকে আমার সাথে নিবো? কখনোই না, ম্যানার্স লেস ষ্টুপিড গার্ল কোথা থেকে আবার পালিয়ে এসেছো যতসব উটকো ঝামেলা৷ সরো আমার চোখের সামনে থেকে যাস্ট গেট লস্ট৷ ”

শোভনের কথায় বেশ অবাক হলো মেঘলা, এতো নির্দয় মানুষ হয়? আজ কাল মানুষ বড়ই স্বার্থপর৷
মেঘলা আবার বলে,
— ” প্লিজ ডাক্তার সাহেব আমাকে সাথে নিন না, এতো স্বার্থপর কেন হচ্ছেন একা একটা মেয়ে সাহায্য চাইছে আপনি সাহায্য করবেন না? ওই ছেলে গুলো কে কেমন বাজে দেখতে আমাকে একা পেলে হয়তো নর পিচাশের মতো খুবলে খাবে প্লিজ আমাকে একটু সাহায্য করুন৷ ”
বলতে বলতে মেঘলা ফুপিয়ে উঠলো, কিন্তু তাতে শোভনের কোনো ব্রুক্ষেপ নেই৷
শোভন নিজের ব্রিফকেস উঠাতে উঠাতে বলে,
— ” এই পুরো ট্রেনে অনেক মানুষ আছে যাও না তারা তোমায় সাহায্য করতেও পারে৷ প্লিজ আমার চোখের সামনে থেকে সরো তুমি মেয়ে একটা ঝামেলা৷ ”
বলে সামনে হাটা ধরে৷ শোভনের যাওয়ার দিকে মেঘলা তাকিয়ে থাকে কি পাষাণ লোকটা৷ শোভন যাওয়ার পর অনেক কে ই বলেছে ওর সাহায্য করতে কিন্তু যে যার মতো চলে গেছে প্রায় স্টেশন ফাকা হয়ে গেছে কয়েকটা লোক শুধু দাঁড়িয়ে আছে শোভন ও নেই আশে পাশে হয়তো চলে গেছে?
মেঘলা অশ্রুসিক্ত চোখে সামনে হাটা দেয় কিছু করার নেই যার এই পৃথিবী তে বাবা মা নেই তার হয়তো কেউ নেই৷
সামনে যেতেই আবার ছেলে গুলো ঘিরে ধরে ওকে ছেলে গুলোর ঠোটে বিচ্ছিরি হাসি কিভাবে বাচবে এখন? আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো স্টেশন এর এদিক টায় একটা চায়ের টং ছাড়া কিছুই নেই চায়ের টং টা তেও বয়ষ্ক লোক ওপাশ ঘুড়ে শুয়ে আছে নর পিচাশ গুলোর হাত থেকে তাহলে আর রক্ষা পাবে না?
দুনিয়া বড়ই স্বার্থপর সবাই নিজের টা ভাবে৷ চাতক পাখির ন্যায় ছোটা ছোটি করছে মেঘলা তখনি ওখান থেকে একটা ছেলে এসে শাড়ির আচল ধরে টান দেয় মেঘলা শাড়ি টা ধরে রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু এতো গুলো ছেলের সাথে কি একটা মেয়ে পেরে উঠতে পারে? মেঘলা শাড়ি ছারছে না তাই ছেলেটা পকেট থেকে ছুড়ি বের করে হাতে কয়েকবার ছুড়ি চালায় রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে হাত তাও নিজের শক্তি দিয়ে শাড়ি ধরে রেখেছে৷ মেঘলার নিষ্পাপ আঁখি যুগল দিয়ে মুক্তার ন্যায় পানি গড়িয়ে পরছে বাচার জন্য চাতক পাখির ন্যায় হয়ে উঠেছে নিজের প্রান দিবে তাও সতিত্ব ধ্বংস হতে দিবে না কিন্তু কি করে? হয়তো সত্যি এখানে সব শেষ?
#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#তৃতীয়_পর্ব

আকাশ তখনও মেঘাচ্ছন্ন, ঝড় হচ্ছে৷ উগ্র ঝর৷ সব যেন এখনি ধ্বংস করে দিবে৷ প্রকৃতির এমন বিধ্বংসী রুপ কোনো বড় কিছু জানান দিচ্ছে যেন, এই বুঝি কিছু ধ্বংস ঘটে গেলো৷
প্রকৃতী-র এমন কর্কশ ধ্বনির সাথে মেঘলার চাতক পাখির ন্যায় বাঁচার জন্য উগ্র কন্ঠে চেচানোটা মিশ্রিত হয়ে পরিবেশ আরো ক্রুদ্ধ করে তুলছে৷ রক্তাক্ত হাতে এখনো বাঁচার চেষ্টা করছে মেঘলা গলায় হাতে আচরের দাগ ছেলেগুলো হাত দিয়ে আচড় দিয়েছে প্রানপন চেষ্টা করছে মেঘলা শাড়ি খামছে ধরে আছে এখনো শাড়ি খুলতে পারেনি মেঘলা রক্তাক্ত হাতে শক্তি দিয়ে ধরে আছে হঠাৎ করে সকল শক্তি দিয়ে শাড়িতে হাত দেওয়া ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে হাত থেকে ছুড়িটা কেরে নিয়ে তেজী কন্ঠে বলে,
— ” যেতে দে আমাকে নয়তো এখনি একেকটাকে মেরে দিবো, কি ভেবেছিস একা বলে পার পেয়ে যাবি? সব মেয়েকে এক ভাবিস না যে ভয়ে গুটিয়ে নিজের সতিত্ব হরন হতে দেখবো৷ কেমন রে তোরা ঘরে মা বোন নেই তোদের? ”

মেঘলার কথা শুনে সেখান থেকে একটা ছেলে বিচ্ছিরি হাসি দিয়ে বলে,
— ” বাহ মুখে বুলি আছে দেখছি, ব্যাপার না এখনি সব ভেঙে দিবো৷ ”
বলে পাশের জন কে ইশারা করতেই পাশের ছেলেটি এসে মেঘলার কোমরে হাত দিবে তখনি কেউ ছেলেটির হাতে মোটা লাঠি দিয়ে বাড়ি দিয়ে মেঘলার হাত ধরে৷ হঠাৎ কেউ হাত ধরায় ভয় পেয়ে যায় মেঘলা পরক্ষনে তাকিয়ে দেখে শোভন দাঁড়িয়ে আছে শোভনকে দেখে কিছুটা হাসির রেশ ফুটে উঠে মেঘলার ঠোঁটে নিজের জমিয়ে রাখা আবেগ গুলো উপচে পরে যেন নিজেকে আর শান্ত রাখতে পারলো না মেঘলা শোভনকে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও থেমে যায় শান্ত হয়ে দাঁড়ায়৷ ততক্ষনে আরেকটা ছেলে এসে শোভনকে মারবে সেই ছেলের কলারে ধরে জোরে পেটে লাথি দিয়ে হাতে থাকা লাঠিটা মেঘলার হাতে দিয়ে বলে,
— ” মারো এদের মেঘলা৷ ”
অবাক নয়নে শোভনের দিকে তাকায় মেঘলা ততক্ষনে আরেকটা ছেলে পিছন থেকে মেঘলাকে ধরবে সে ছেলেকে শোভন জোরে থাপ্পড় মেরে রেগে মেঘলা কে বলে,
— ” আমি কি বলছি শুনতে পাচ্ছো না তুমি? মারো ওদের৷ ”
এখনো মেঘলা দাঁড়িয়ে আছে ঘাবড়ে যাচ্ছে যেন শোভন আবার ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে,
— ” টেক ইট, এন্ড হিট ফাস্ট৷ এই মেয়ে শুনতে পাও না তুমি? মারো এদের একটাকেও ছাড়বে না এমন ভাবে মারবে যেন দ্বিতীয় বার কোনো মেয়ের দিকে এমন পৈচাশিক চাওনি দিতেও আত্মা কেঁপে উঠে৷ ”
শোভনের কথায় লাঠিটা হাতে নেয় মেঘলা৷ ছেলে গুলো ওর ঘাড়ে গলায় হাতে আচড় দিয়েছি তখনকার কথা ভাবতেই শরীর রাগে রি রি করে উঠে লাঠিটা নিয়ে ছেলেগুলো কে মারতে থাকে সর্ব শক্তি দিয়ে পাঁচজনকেই মারছে৷
ছেলে গুলো রক্তাক্ত অবস্থায় নিচে পরে আছে ক্লান্ত হয়ে মেঘলা লাঠি রেখে ঢুকরে কেঁদে উঠে৷ সারাজীবনটা বুঝি ওর এমন কাঁদতে কাঁদতেই পার হবে? এমন কেন জীবন টা?
শোভন মেঘলার সামনে এসে বাহু চেপে ঠিক মতো বসায় মেঘলা এখনো কাঁদছে আজ হয়তো শোভন না এলে এখানেই শেষ হয়ে যেত সব? তখন হয়তো মরা ছাড়া কোনো উপায় থাকতো না৷
শোভন আড়ষ্ট কন্ঠে বলে,
— ” সরি তোমাকে তখন একা ফেলে যাওয়ার জন্য৷ তখন ঝামেলা-র জন্য মাথাটা বিগড়ে ছিল৷ ”
কিছু বললো না মেঘলা কিন্তু থেমে গেলো দুজনের মাঝেই এখন পিনপতন নীরবতা৷ নীরবতা বিচ্ছিন্ন করে তাচ্ছিল্য হেসে মেঘলা বলে,
— ” সরি? সরি প্রয়োজন নেই ডাক্তার সাহেব, আমার মত একটা মেয়ের জন্য যে দ্বিতীয় বার এসেছেন এই অনেক৷ ”

শোভন নিজের ব্রিফকেস থেকে ফাস্ট এইড বক্স বের করে মেঘলার হাত স্যাভলন দিয়ে পরিস্কার করতে করতে বলে,
— ” এড্রেস দাও তোমার এতো রাতে এখানে হয়তো গাড়ি পাবো না সামনে একটু হেটে দেখি হোটেল বা কিছু আছে নাকি রাতটুকুর জন্য সকালে আমার গাড়ি আসবে তখন তোমাকে পৌছে দিব৷ তোমার যেই অবস্থা একা হয়তো যেতেও পারবে না৷ ”
মেঘলা বেশ অবাক হয়ে শোভনের দিকে তাকালো অনেকটা সামনেই বসে ওর হাত আর গলার দাগ গুলোতে মলম লাগাচ্ছে৷
মেঘলা কিছুক্ষন চুপ থেকে স্মিত কন্ঠে বলে,
— ” ঠিকানা? আপনি আমাকে ঢাকা অবদি পৌছে দিলেই হবে৷ ”
শোভন এবার চটে যায় মেয়েটা বড্ড ফাজিল তো দেখলো তো গ্রাম থেকেই এসেছে তাও বিয়ের পোশাকে পালিয়ে যে এসেছে এটাতে কোন সন্দেহ নেই শোভনের তাহলে ঢাকা কেন যাবে বাড়ি না গিয়ে?
শোভন রূঢ় কন্ঠে বলে,
— ” গ্রামে নিজের বাড়ি না গিয়ে ঢাকা যাবে কেন? এড্রেস দাও তোমার বাড়ি কোথায় বাবা মা তোমার জন্য চিন্তা করছে না? কেমন মেয়ে তুমি বাবা মায়ের ইচ্ছের দাম না দিয়ে এমন বিয়ের সাজে পালালে? বাজে স্টুপিড মেয়ে একটা৷ ”

মেঘলা তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
— ” ডোন্ট জ্যাজ অ্যা বুক বাই ইটস কভার৷ ”
বলেই মাথা নুয়ালো মেঘলা, ব্যাপারটা শোভন বুঝলো না মেয়েটা কি উদ্দেশ্য করতে চাইলো? মেয়েটা এমন কেন৷ মেয়েটা বেশ রহস্যময়ী৷
হাতটা ব্যান্ডেজ করে ব্রিফকেস এ ফাস্ট এইড বক্সে রাখতে রাখতে শোভন ব্রু কুচিয়ে বলে,
— ” হোয়াট ডিড ইউ সে? ”

মেঘলা তাচ্ছিল্য সুরে বলে,
— ” বাজে মেয়ে? কাউকে না জেনে সবটা বিচার করবেন না ডাক্তার সাহেব৷ ৷ আর আমার জন্য চিন্তা করার মতোও কেউ নেই৷”
বলে কোনো মতে উঠার চেষ্টা করলো শোভন ততক্ষনে উঠে বাহু চেপে ধরে উঠাতে সাহায্য করতে করতে বলে,
— ” মানে বুঝলাম না? ”

মেঘলা শোভনের দিকে তাকিয়ে কম্পিত কন্ঠে বলে,
— ” মা নেই আর বাবা? থেকেও নেই৷ ”
বলতে বলতে এক ফোটা চোখের পানি গড়িয়ে পরলো স্টেশনের কৃত্রিম মাটিতে৷
শোভন অবাক নয়নে মেঘলার দিকে তাকায় মেঘলা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে,
— ” এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবেন ডাক্তার সাহেব? চলুন সামনে এগোই৷ ”

শোভন সম্মতি জানিয়ে সামনে পা বাড়ায়, মেয়েটার ব্যাপারে এখনো খোলাসা হতে পারলো না শোভন৷ মেয়েটার যদি বাবা মা না-ই থেকে থাকে তাহলে এতো দিন কোথায় ছিল? কার কাছে ছিল কে ই বা বিয়ে দিতে চেয়েছিল আর কেনই বা পালালো?
কিছুক্ষন এসব ভাবলো শোভন পরক্ষনে নিজের উপরি বিরক্ত হলো কেন ভাবছে এই ষ্টুপিড মেয়েটার জন্য? হয়তো কেউ ভালোর জন্যই বিয়ে দিতে চেয়েছিলো পালিয়ে এসেছে ভাবলো শোভন৷

দুজনে হাটতে হাটতে প্রায় অনেকটা পথ এসে পরেছে বসার মতো কোনো জায়গা হোটেল বা রেস্টুরেন্ট কিছুই পেলো না আর এতো রাতে কে-ই বা খোলা রাখবে?
গ্রামের মাঝ পথ দিয়ে হাটছে শোভন মেঘলা৷ শোভনের বেশ বিরক্ত লাগছে মেয়েটার জন্য উটকো ঝামেলায় পরতে হলো৷ আর মেয়েটাকে একা ছেড়ে দিলে আবার কি না কি হয়ে যেতো৷
প্রায় অনেকক্ষন হেটে একটা মসজিদ দেখতে পেলো বাইরে বসার অনেক জায়গা রয়েছে আর এতো রাতে নিশ্চয়ই এখানে কেউ আসবে না? শোভন সে দিকে যেতে নিলেই মেঘলা বাধা সেধে বলে,
— ” ওখানে যাবেন না ডাক্তার সাহেব গ্রামের মানুষ দেখলে খারাপ ভাববে, গ্রামে কোনো ছেলে আর মেয়ে কে এতো রাতে এক সাথে তারা ভালো চোখে দেখে না৷ ”

শোভন বিরক্ত হলো মেঘলার এমন কথায় কিঞ্চিত রাগ দেখিয়ে বলে,
— ” তোমার ইউসলেস কথা তোমার কাছেই রাখো তোমার যেতে ইচ্ছা হলে আসো নয়তো এখানেই দাঁড়িয়ে থাকো আমি যাচ্ছি৷ ”
বলে মসজিদের বাইরে ইট পাথরের উচু কাউচের উপর বসলো৷ মেঘলা আর কি করবে না পেরে সে ও ওখানে গেলো৷
মেঘলা শোভন পাশাপাশি বসে আছে দুজনের মাঝেই পিনপতন নীরবতা হঠাৎ-ই মেঘলা ‘আহহ’ বলে আর্তনাদ করে উঠলে তা শুনে শোভন কিঞ্চিত কন্ঠে বলে,
— ” হোয়াট হ্যাপেন?”
মেঘলা চোখ হাত দিয়ে ঘষতে ঘষতে বলে,
— ” চোখে কিছু একটা পরেছে৷ ”
মেঘলার কথায় বিরক্ত হলো শোভন এই মেয়ের কিছু না কিছু হয়েই থাকে সত্যি স্টুপিড মেয়ে একটা৷
শোভন বিরক্ত নিয়ে বলে,
— ” ষ্টুপিড মেয়ে একটা, দেখি সামনে এসো দেখতে দাও৷ ”
মেঘলা একটু শোভনের দিকে ঘুরে বসে, শোভন মোবাইরের ফ্লাস অন করে চোখ দেখলো তখনি পিছন থেকে খাকারি দিয়ে কেউ বলে,
— ” এই ছেলে মেয়ে এখানে কি করছো?”
হঠাৎ কারো কন্ঠে দুজনেই ছিটকে সরে গেলো সামনে তাকিয়ে দেখে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে দেখে মনে হলো মসজিদে-র ইমাম হয়তো৷ মেঘলা ভয়ে ঢোক গিললো শোভন তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
— ” আমারা ট্রেন যাত্রি, ট্রেন নষ্ট হয়ে গেছে তাই বসেছিলাম ভোরের আলো ফুটতেই চলে যাবো৷ ”
ইমাম মেঘলাকে একবার পরখ করে রাগী কন্ঠে বলে,
— ” মাইয়াডারে মনে হইতাছে ভাগাই লইয়া আইছো তা বিয়াসাদি করছ নাকি বিয়া ছাড়াই ফষ্টি নষ্টি করতাছো?”
ইমামের কথায় চটে গেলো শোভন৷ একজন মানুষ না জেনে এতো মন্তব্য কিরে কি করে?
শোভন কন্ঠে গম্ভীর্য ফুটিয়ে তুলে বলে,
— ” আপনি ভুল ভাবছেন হুজুর ও আমার কেউ না ঝড়ের জন্য ট্রেন লাইনে গাছ পরেছে তাই ট্রেন সামনে যাবে না আর, মেয়েটা একা আমিও ঢাকা যাবো মেয়েটাকে তো আর একা রাত বিরাতে ছেড়ে দিতে পারি না তা,,,৷ ”

শোভন কে থামিয়ে ইমাম সাহেব বলে,
— ” রাখ তোমার মিথ্যা কথা৷ তোমাদের শহরের ছেলে মেয়েদের কাম জানা আছে৷ এতো রাতে দু-জন পোলা মাইয়া৷ মসজিদের সামনে একা না না এই অনর্থ আমি মানতে পারুম না৷ ”
ইমাম সাহেব এর কথায় আরো রেগে গেলো শোভন, এতোক্ষনে আরো দু-জন এসেছে সেই দু-জন ও একি কথা বলছে৷ মেঘলা এই ভয়টাই পেয়েছিলি চুপ থাকলে হবে না তা মুখ খুললো,
— ” হুজুর সত্যি বিপদে পরেছি আমরা,,,৷ ”

মেঘলাকে থামিয়ে আরেকজন বলে,
— ” হুজুর এদের মোড়লের কাছে নিয়া চলেন৷৷ ”

মেঘলা শুকনো ঢোক গিলে বলে,
— ” দয়া করে এমনটা করবেন না সত্যি আমরা বিপদে পরে এসেছি ছেড়েদিন আমাদের৷ ”
শোভনের রাগ হচ্ছে এই মেয়ের উপর৷ এই মেয়ের জন্যই আজ এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হলো৷
হুজুর রেগে বলে,
— ” না মোড়ল এর কাছেই নিয়া যামু৷ আমাগো গ্রামে এমন অন্যায় মানমু না৷ ”

শোভনের রাগে শরীর রি রি করছে তাও নিজে কে যথা সাধ্য শান্ত রেখে বলে,
— ” প্লিজ এমন টা করবেন না৷ আমি একজন ডক্টর এসব মানুষ জানাজানি হলে আমার রেপুটেশন খারাপ হয়ে যাবে৷ প্লিজ আমাদের যেতে দিন সত্যি এখানে বিপদে পরে এসেছি৷ ”
হুজুর কিছুক্ষন ভেবে গলা উচিয়ে বলে,
— ” না এমনে ছাইরা দিতে পারি না, আর দেখাই যাইতাছে মাইয়া ভাগায় নিয়া আইছো৷ গ্রামে রাত বিরাইতে পোলা মাইয়া এক লগে দেখি বিয়া দেওয়া হয় তাই তোমাগো এখন বিয়া করতে হইবো নয়তো তোমাগো মোড়লের কাছে নিয়া যামু৷ ”
হুজুরের এমন কথায় মেঘলা আর শোভন যেন আকাশ থেকে পরলো শোভন কটমটে চোখে একবার মেঘলার দিকে তাকায়৷ তারপর হুজুরের দিকে তাকিয়ে রেগে দুজনেই একসাথে বলে,
— ” বিয়ে? ইম্পসিবল৷৷৷ ”

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here