#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#চতুর্থ_পর্ব
আঁধার আচ্ছন্ন ঝড় বাদলার রাত পেরিয়ে আবছা ভোরের আলো ফুটছে তখন৷ আবছা আলো আবছা আঁধার৷ আহা কি সুন্দর, আলো আঁধারের ভীর জমেছে আকাশে৷ প্রভাত বেলার স্বচ্ছ মিষ্টি হাওয়া মন প্রান জুড়িয়ে যায় এমন৷ পাখিরা নীড় ছেড়ে বেড়িয়ে গাছের ডালে বসে ডানা ঝাপটালো দু-বার, এতোখন যেন কোনো বন্ধিখানায় ওকে আটকে রাখা হয়েছিল এখন মুক্ত হয়ে আনন্দ পেল৷ মহা আনন্দ৷ উরে গেলো আকাশে ছুটবে এখন স্বাধিন হয়ে তার আবার পিছুটান কোথায়? সে তো মুক্ত পাখি৷৷
মাথা নুইয়ে বসে আছে মেঘলা৷ শোভন কথা বলছে হুজুরদের সাথে ক্ষানিকখন আগে “শুভ পরিণয়” ঘটলো দু- জনের৷ এ পরিণয় কি দুটো মনের হয়েছে? নাহ শুধু দুটো নামেরি পরিণয় ঘটলো, ওদের কাছে তো এ পবিত্র বন্ধন টা খুবই তুচ্ছ৷ দুজনি দু প্রান্তের একজন কঠিন তো আরেকজন তরল কারো কাছেই কারো মূল্য নেই৷ হবেই বা কি করে? এইটুকু দেখায় কি মনের মিল ঘটে???
হুজুর এর সাথে কথা বলে মসজিদের বাইরে আসলো শোভন৷ শোভন কে দেখে কাউচ থেকে নেমে দাঁড়ালো মেঘলা৷
শোভন কে কিছু বলবে এর আগেই শোভন শক্ত কন্ঠে বলে,
— ” বিয়ে করেছি বলে বউ হিসেবে মেনে নিব তোমার মত থার্ডক্লাশ মেয়ে কে এটা ভেবো না৷ আজ তোমার জন্যই সব হলো তুমি এর জন্য দায়ী, তোমাদের মত মেয়ে দের কাজই ছেলেদের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করা৷ তুমি যদি ভেবে থাকো তোমায় আমি নিয়ে যাবো তাহলে শুনে রাখো মেয়ে, সেগুরে বালি৷ শুনো মেয়ে এখন থেকে তুমি তোমার রাস্তায় আমি আমার রাস্তায়৷ আর জীবনেও আমার চোখের সামনে আসবে না তুমি৷ ”
বলে উল্টো পথে হাটা দেয় শোভন৷ মেঘলা এবার চটে গেলো কি বলে এই ছেলে? ও তো কাল বলেছিল ওকে এখানে না বসতে৷ মেঘলা শোভনের দিকে তেরে যেতে নিয়েও থেমে যায়, ইচ্ছে করছে না ঝগড়া করতে সে রকম মন মানসিকতা নেই ও ক্লান্ত খুব বেশি ক্লান্ত৷
কিন্তু এখানে আর থাকা যাবে না তাই ও উলটো পথে হাটা দেয়৷ অদ্ভুৎ ব্যাপার দুজন এর নাম টা একসাথে জুরে গেছে কিন্তু দু-জন দু-পথের পথিক, হবে কি তাদের মিল? ঘটবে কি দুটি মনের মিলন???
দীর্ঘ দুই ঘন্টা বাদ ঢাকা নামক কাঙ্খিত গন্তব্যে পা রাখলো মেঘলা৷ কি সুন্দর সব কিছু স্বাধীন ভাবে চলছে বেপরোয়া হয়ে ছুটছে৷ আচ্ছা ও কি এমন স্বাধীন ভাবে চলতে পারবে? নাকি আবার সেই,,,, না না সেই কালো স্মৃতি আর মনে রাখবে না মেঘলা৷ জীবনের কালো অধ্যায় মুছে এবার সে এগোবে, কি অদ্ভুত জীবনের নিয়ম কি অদ্ভুত নিয়তি? বিয়ে থেকে পালিয়েছে অথচ মাঝ রাস্তায় সত্যি বিয়ে হয়ে গেল? এটাই বুঝি তাকদির? এটাই বুঝি নিয়তি?
শোভন হয়তো কালো অধ্যায় ভেবে এই অদ্ভুত বিয়ে টা ঢাকা দিয়ে দিয়েছে কিন্তু মেঘলা? ও কি ভুলতে পারবে? মেঘলার মনে যে গেথে গেছে ও তো পবিত্র সম্পর্কে বিশ্বাসি৷ আচ্ছা বিয়ে নামক বন্ধন টা কি ভুলা যায়? এতই সহজ?
আকাশটা আবার আধারে ঘনিয়ে যাচ্ছে এই বুঝি বৃষ্টি নামবে৷ মেঘলা ধানমন্ডি নামক এলাকায় আসলো মাত্র, এ শহর-টা ওর চেনা মামার বাড়িতে আসতো প্রায়ই৷ কিন্তু এখন সেখানে যাবে না কেন সে ওখানে গিয়ে অন্যের ঘাড়ের ঝামেলা হবে? ক্লান্ত শরীর টা আর চলছে না তাই একটা ইটের কাউচে বসে আকাশ পানে তাকালো মেঘলা৷ কাকটা কা কা করে হাক ছেরে একটা গাছের ডালে বসলো কাকটা দু-তিন বার শরীর ঝেরে মুখ দিয়ে দু পাশের ডানা চুলকিয়ে এদিক ওদিক তাকালো তারপর আবার কা কা করতে করতে উরে গেলো৷
হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো নিমেষেই লাল শাড়ি টা স্যাঁত স্যাঁতে ভিজে গেলো৷ সে দিকে ব্রুক্ষেপ করলো না মেঘলা৷ এই বৃষ্টির ফোটা গুলো ওর একাকিত্ব যে মোচন করছে তার একাকিত্বের সঙ্গ দিচ্ছে নয়তো এ শহরে আছে কে ওর?
— ” এই মেয়ে ভিজছো কেন এখানে? ঠান্ডা লেগে যাবে তো৷৷ ”
হঠাৎ অচেনা মেয়েলী কন্ঠে পাশ ফিরে তাকালো মেঘলা, একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছাতা নিয়ে এবং সে ছাতা দিয়ে ওকেও ঢেকে রেখেছে৷
মেঘলা মেয়ে টা র কথায় ইতস্ত হয়ে বলে,
— ” এখনি বসেছিলাম কিন্তু বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিলো৷ ”
মেয়েটা ব্রু কুচকে মেঘলাকে পরখ করে বলে,
— ” বাড়ি কোথায় তোমার? আর এই বিয়ের শাড়ি পরে এখানে কি করছো?”
মেঘলা কৃত্রিম হেসে বলে,
— ” আমি ঢাকা আসলাম সবে এখানে আমার কেউ নেই, বৃষ্টি টা থেমে গেলেই আশে পাশে একটা থাকার জন্য রুম খুজবো৷ ”
বেশ অবাক হলো মেঘলার কথায় মেয়ে টি৷ মেয়ে টি বলে,
— ” তুমি একা? তোমার সাথে কেউ নেই?”
মেঘলা আনমনে বলে,
— ” হুম একা, কেউ নেই আমার৷ আচ্ছা এখানে কোথায় ভালো ঘর পাওয়া যায় তুমি যানো? আমার একটা ঘর এর খুব প্রয়োজন৷ ”
মেয়েটি আর প্রশ্ন করলো না কিছু একটা ভেবে মেঘলার কাছে গিয়ে হাত ধরে বলে,
— ” চলো আমার সাথে৷৷ ”
বলে হাত ধরে হাটতে থাকে, মেঘলা বেশ ইতস্ত হয়ে যায় এই মেয়ে আবার কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?
মেঘলা কিছু বলবে এর আগেই মেয়ে টি থামিয়ে বলে,
— ” ভয় নেই আমার সাথে আসতে পারো তুমি৷ আমার ফ্লাটে একটা রুম খালি আছে তুমি আমার সাথে থাকতে পারো৷ ”
অবাক হলো মেঘলা৷ আজ কাল এমন মানুষ ও আছে?
গাড়ির ফ্রন্ট সিটে মেঘলা কে বসিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলো মেয়েটি৷ তারপর গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলে,
— ” মনে তো হচ্ছে বিয়ে থেকে পালিয়ে এসেছো, তা তোমার পেরেন্টস চিন্তা করছে না?”
মেঘলা তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
— ” কেউ নেই আমার৷ ”
মেয়েটি কিছুখন অবাক চোখে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে বলে,
— ” সরি আমি বুঝতে পারিনি৷ কোথায় থাকতে তুমি? আর পালিয়েছো কেন?”
মেঘলা এরিয়ে গেল কথা৷ কথা পাল্টানোর জন্য বলে,
— ” আপনি আমাকে না জেনেই নিজের ফ্লাটে নিয়ে যাচ্ছেন যে? ”
মেয়ে টি মুচকি হেসে বলে,
— ” কিছু কিছু মানুষ কে জানার জন্য তার সবটা জানতে হয়না মুখ দেখেই বুঝা যায়৷ তা কি করবে ভাবছো?”
মেঘলা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
— ” দেখি একটা জব পাওয়া যায় কিনা নার্সিং কোর্স করেছিলাম কোনো হসপিটাল এ নার্স হিসেবে দেখি জব পাই কি না নয়তো অন্য কিছু ভাবতে হবে৷ ”
মেয়েটি হেসে বলে,
— ” ও গ্রেট আমার ফ্রেন্ড এর হসপিটাল আছে তুমি চাইলে সেখানে কথা বলে দেখতে পারি৷ ”
ওরা কথা বলতে বলতে মেয়েটির বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামে গাড়ি পার্ক করে দুজনেই নামে গাড়ি থেকে৷ মেঘলা আবেগ প্রবন হয়ে মেয়ে টি কে জরিয়ে ধরে বলে,
— ” ধন্যবাদ আপু তুমি একটা অচেনা মেয়ের জন্য এতো কিছু ভাবছো? আমার এতো উপকার করার জন্য ধন্যবাদ তোমায়৷ ”
মেয়েটি মলিন হেসে বলে,
— ” আপু বলছো আবার ধন্যবাদ ও দিচ্ছো? কারো জন্য যে কিছু করতে পারছি এটাই আমার কাছে অনেক, কিন্তু এখনো জানতে পারলাম না পালিয়েছো কেন৷৷৷ ”
মেয়েটির কথায় মেঘলা মুখ মলিন করে বলে,
— ” চাচা, চাচি জোর করে বিয়ে দিচ্ছিলো সেখান থেকেই পালিয়ে এসেছি৷ ”
মেয়েটি কিছু একটা ভেবে বলে,
— ” শুধু এই কারন নাকি,,,৷ ”
মেয়েটিকে থামিয়ে মেঘলা কথা এরানোর জন্য বলে,
— ” তোমার নামটাই তো জানা হয়নি আপু তোমার নাম কি? ”
মেয়েটি ব্যাপার টা বুঝতে পারে পরক্ষনে হেসে বলে,
— ” আহানা৷ তোমার নাম কি? ”
মেঘলা মুচিকি হেসে তার নামটি বলে৷ এখানে তো আসলো মেঘলা কিন্তু সত্যি কি মুক্ত ভাবে বাচিতে পারবে? পালিয়ে পালিয়ে আর কতদিন কাটাবে? সে যদি ওর মুখোমুখি হয় আর তো তখন কিছু করার থাকবে না আবার তার খাচায় আটকে রাখবে৷
প্রায় অনেক্ষন কেটে গেছে রাত তখন ১০ টা বাজে ফুরফুরে হয়ে সোফায় বসে আহানার সাথে আড্ডা দিচ্ছে মেঘলা৷ প্রায় বছর খানেক পর এমন কারো সাথে কথা বলছে৷ আহানার সেই বন্ধু আসবে আহানা আসতে বলেছে মেঘলার ব্যাপারে কথা বলার জন্য তার জন্যই দু-জনে এখানে বসে আছে৷
হঠাৎই মেঘলার মন টা ভার হয়ে আসে যতই ভুলে থাকার চেষ্টা করুক দিন শেষ এ একবার হলেও বিয়ে নামক কথাটা মনে পরবেই তা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মেঘলা৷ হঠাৎ ডোরবেল এর আওয়াজে ধ্যান ভাঙে দু-জনের৷
আহানা হেসে বলে,
— ” হয়তো এসে পরেছে৷ আমি দেখছি৷ ”
বলে উঠতে নিলেই মেঘলা বলে ” আমি দেখছি তুমি বসো৷ ”
বলে ও নিজে উঠে দরজা খুলতেই চমকে উঠে কিঞ্চিৎ গলা উঁচিয়ে বলে,
— ” আপনি??”
#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#পঞ্চম_পর্ব
হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত জায়গায় অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষ দেখে তাজ্জব বনে গেলো যেন দু-জনেই৷ কোনো ভাবেই কেউ কারো চোখকে আস্থা করতে পারছে না৷ আচ্ছা ভ্রম নয় তো? কিন্তু সব রেখে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষকে-ই দেখবে কেন? দরজার এপাশে এবং ওপাশে দুজনি ভাবনার জগত বুনছে হঠাৎ
তখনি দুজনের ভাবনায় ফোরন কেটে আহানা দরজার সামনে এসে বলে,
— ” তোমরা কি দু-জন, দু-জন কে চিনো? না মানে এমন অবাক বনে গেলে দুজনেই তাই বললাম৷ ”
দরজার ওপাশে শোভন রেগে আহানা কে বলে,
— ” আহান এই মেয়েটা এখানে কি করছে?”
আহানা কিঞ্চিত অবাক হয়৷
একবার মেঘলার দিকে এক বার শোভনের দিকে তাকিয়ে বলে,
— ” তুই ওকে চিনিস ভাই? ”
শোভন নিজের রাগটা দমিয়ে রাখে পরক্ষনে নিজেকে সামলে স্বাভাবিক হয়ে না চেনার ভান করে বলে,
— ” না তো একে আমি চিনবো কি করে? তাই তো জিগ্যেস করলাম তোকে এই, মেয়েটা এখানে কি করছে আর কে এই মেয়ে?”
আহানা আশ্বস্ত হয়ে বলে,
— ” ও ও আমি তো ভাবলাম তুই ওকে চিনিস, আচ্ছা আয় ভিতরে আয় বলছি৷ ”
শোভন ভেতরে আসলো, শোভন এর চেহারাকৃতি স্বাভাবিক থাকলেও মেঘলা এখনো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে৷ শোভন আড়ষ্ঠ হয়ে তাকালো মেঘলার দিকে মেয়েটা বাচ্চাদের মতো মুখ করে ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে আছে৷ মেয়েটা এমন কেন? চোখ ফেরালো শোভন মেঘলার এমন হাব-ভাব বিরক্ত লাগে বড্ড বিরক্ত৷
মেঘলা ওখানে দাড়ালো না আর ওর রুমে চলে আসলো, আসার আগে জানতে পারলো শোভনি আহানার বেস্ট ফ্রেন্ড যাকে আহানা ভাই বলে ডাকে ওরা বাইরে কথা বলছে তাই চলে এলো৷ লোকটাকে ওর প্রথম থেকেই ভয় করে কেমন কেমন ধমক দেয়৷ আচ্ছা ডাক্তার দের কি এমন হওয়া সাজে? আচ্ছা এমন রাগী ডাক্তারের কাছে কেউ যায়? হার্ট এর ডাক্তার তাও৷ এই রাগী ডাক্তারকেই নিয়তি মেঘলার স্বামী বানিয়ে দিলো৷
বারান্দায় এসে বসলো মেঘলা, খাওয়া হয়েছে শোভন আসার আগেই এখন বেশ শান্তি শান্তি লাগছে মেঘলার৷ মুক্ত লাগছে নিজেকে কিন্তু জানে না কতদিন এমন শান্তি থাকতে পারবে৷ যতদিনই হোক ওই পর্যন্ত না হয় মুক্ত পাখির মত ডানা মেলে উরলো জীবনটা উপভোগ করলো ক্ষতি কি তাতে?
রাতের আকাশটা কি মশ্রিন তবে একটাও তারা নেই কোনো দিকেই কোনো আলোর রেশ নেই কেমন আঁধার আর আঁধার৷ ভয় হয় মেঘলার এমন আঁধার আচ্ছন্ন রাত দেখে ওর জীবনটাও এমন আঁধার মাখা৷
হঠাৎ নিচে চোখ পরতেই সেই অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে দেখতে পায়৷ শোভন চলে যাচ্ছে মাত্র গাড়িতে উঠলো, মানুষটি বড়ই অদ্ভুত৷ দেখলে কেউ বুঝবেই না মানুষ টা এতো রাগি৷
কাল রাতের মতই আজ রাতেও ঝড়ের তান্ডব শুরু হলো আবার৷ মেঘলার মাথায় চিন্তা ভর করলো, আচ্ছা মানুষটা বাড়ি পৌছেছে তো ঠিক মতো? নিষ্পাপ মনের চিন্তা কপালে ফুটে উঠলো বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে ভিজে যাচ্ছে প্রায় তাই রুমের দিকে অগ্রসর করলো৷
অদ্ভুত তো লোকটার জন্য কেন মেঘলার চিন্তা হচ্ছে? নিজের এমন হাস্যকর চিন্তা দেখে হাসলো মেঘলা৷ তাচ্ছিল্য হাসি৷ বিয়ে নামক বন্ধন টার বুঝি এতোই টান? হঠাৎ বউদের মতো চিন্তা ভাবনা আসছে মাথায়, যে বিয়ে কেউ মানেই না তাই কেউ কারো কথা ভাবা ও উচিত না হয়তো৷ কিন্তু মানে না বললেই কি অমান্য করা যায়? পবিত্র একটা বন্ধন৷
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মেঘলা, আচ্ছা লোকটা ওকে কাজ দিবে তো? এই শোভনকে নিয়ে ভরসা নেই মেঘলার যা রুক্ষ তার ব্যাবহার৷ হয়তো ওর কথা শুনলে না ও দিতে পারে? তখন কি করবে? কোথায় কাজ পাবে?
——————————————
আঁধার কাটেনি এখনো মিষ্টি আজানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে দু-এক টা পাখি কিচির মিচির করছে কি মিষ্টি ধ্বনি৷ প্রায় অনেক দিন পর শান্তির ঘুম দিয়েছিলো মেঘলা আজান শুনেই উঠলো সবে৷
নামজ পরে বারান্দায় এসে দাড়াঁলো মেঘলা৷ সকালের আকাশটা বেশ মুগ্ধ৷ কাল যদি আহানা ওর এপার্টমেন্ট এ না নিয়ে আসতো কাল কোথায় ঘর পেতো বা কোথায় থাকতো তা মেঘলার অজানা৷ আহানা সত্যি বেশ খোলাসা মনের কিন্তু মেয়েটার মনেও কোনো কষ্ট রয়েছে তা কাল কথা বলেই বুঝতে পেরেছে৷
রুম থেকে বেরোলো মেঘলা কাল ফ্লাটটা ঘুরে দেখেনি, জবটা পেয়ে গেলে থাকার জন্য টাকা দিবে বলেছে মেঘলা৷ আহানা প্রথমত রাজি হয়নি তাই মেঘলা বলেছিলো চলে যাবে, আহানা এক প্রকার বাধ্য হয়েই রাজি হয়৷
ফ্লাটটা বেশ বড় আর সুন্দর এই বড় ফ্লাট টায় আহানা একা থাকতো ভাবতেই মেঘলা অবাক হচ্ছে৷
ড্রইং রুম এ এসে দেখে আহানা আসলো সবে আহানাকে দেখে মেঘলা মিষ্টি হেসে বলে,
— ” উঠেছো? ”
— ” উঠেছি৷ ”
— ” উনি কাল কিছু বলেছে? চাকরির ব্যাপারে? ”
আহানার সাথে কথা বলে জানতে পারলো শোভন প্রথমত রাজি হয় নি আহানার জোরাজোরি-তে রাজি হয়েছে ওর সহকারী নার্স প্রয়োজন ছিল সহকারী নার্স হিসেবেই এক তারিখ থেকে মেঘলাকে জয়েন করতে বলেছে৷
আহানার জন্য তারাতারি চাকরিটা হয়ে গেলো নয়তো অন্য কোনো হসপিটাল হলে বেশ বেগ পেতে হতো আর চাকরি হতো কি না তাও অজানা ছিল মেঘলার৷
কিন্তু শোভনের সহকারী নার্স হিসেবে জয়েন করবে তা শুনেই ভয় করছে মেঘলার৷ এই ছেলে থেকে কতবার ধমক খেতে হবে কে জানে?
আহানা মেয়েটা বেশ মিশুক আর পরিপাটি৷ দেখতে কিছু-টা শোভনের মত চেহারার আকার আকৃতিও আসে বটে৷ মেয়েটা প্রায়ই আপন মনে কিছু ভাবে মেঘলা জিগ্যেস করলে “কিছু না ” বলে এরিয়ে যায়৷
আহানার কাছেও মেঘলাকে খুব বেশি ভালো লাগে মেয়েটার বয়স বাইশ কি তেইশ হলেও স্বভাব বাচ্চা বাচ্চা চশমা পড়ায় আরো বাচ্চা দেখায়৷ কথা বার্তা চালচলন ও আহানার কাছে মেঘলাকে বাচ্চা মনে হয়৷ কোনো সিরিয়াস কথা শোনার সময় গোলগোল চাওনি দিয়ে তাকিয়ে থাকে৷ কথা শুনে কখনো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে কখনো পিট পিট করে চেয়ে থাকে, একটা কথা বললে বেশ খানিকক্ষন পর বোধগম্য হয় মেয়েটার এই মেয়ে নার্সিং কোর্স করলো কি করে এটাই আহানার বোধগম্য হলো না৷ চেহারা দেখে যে কেউ মায়ায় পরে যাবে সর্বদা চশমা পরে থাকে আর মনের কথা বেশি সময় মনে রাখতে পারে না মুখ দিয়ে ফস করে বেরিয়ে যায়৷ একা থাকলে আহানা বেশি সময়-ই বাইরে বাইরে কাটায় কিন্তু এখন মেঘলা থাকায় কোথাও গেলেও তারাতারি এসে পরে৷
মেঘলা এসেছে তিন দিন হলো আজ সময় যেমন পলকেই কেটে যায় আর পাঁচ দিন পর থেকে হসপিটালে জয়েন করবে মেঘলা৷ এই তিন -দিনে শোভন একবার এসেছে কিন্তু মেঘলা সামনেও যায়নি৷
দিবা শেষ প্রহর পেরিয়ে গধুলি তখন, সূর্যাস্তের সময় ঘনিয়ে এসেছে পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়েছে৷ আঁধার কমলা রশ্মি আকাশে বিরাজমান অতি সুন্দর সু-দৃশ্য যেন কোন শিল্পী নিজ হাতে একে রেখেছে৷ কি সুন্দর আল্লাহর সৃষ্টি৷ হঠাৎ একটা কাক কোথা থেকে ঘুরে ফিরে মুখে করে কিছু নিয়ে এসে উচু বারোতলা বিল্ডিং এর ছাদের রেলিং এর উপর বসলো সবে, মুখ দিয়ে কিছু একটা এনেছে সেটা রেলিং এর উপর রেখে আবার উরে কোথাও গেলো৷ কিছুক্ষন পর আরেকটা ছোট কাককে সাথে নিয়ে এসে নির্দিষ্ট স্থানে বসলো৷ দেখেই বুঝা যাচ্ছে এ কাকের বাচ্চা হয়তো, কাক দুটো ঠুকরিয়ে ঠুকরে সেই খাবারের টুকরোটা খেলো৷ খাওয়া শেষ হতেই ছোট কাকটা চলে গেলো সেই কাকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বড় কাকটা কা কা করে কিছু বললো৷ হয়তো ছোট কাক-টাকে ডাকলো৷ আসলো না সেই কাকটা বড় কাকটা এদিক ওদিক তাকিয়ে মুখ দিয়ে নিজের ডানা চুলকে কা কা করতে করতে সে ও উরে গেলো৷ হয়তো নিজের বাচ্চার খোজেই গেলো, মহান সৃষ্টিকর্তা সব প্রানির মাঝেই মমতা বোধ দিয়ে দিয়েছে৷ মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি সত্যি অতি অসাধারণ৷ এতোক্ষন ছাদের মাঝখানে দোলনাটাতে বসে দেখছিলো মেঘলা৷ অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো৷
আহানা এতোক্ষন মেঘলার সাথেই ছিলো বেশ কিছুক্ষন আগে নিচে গেছে কফি করে আনতে৷ সন্ধ্যা হয়ে আসছে আহানা ও আসছে না তাই মেঘলা নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে তখনি ছাদের দরজার সামনে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে “আহহ ” করে আর্তনাদ করে উঠে৷ ভেবেছিলো পরে গেছে কিন্তু না পরে নি কেউ ধরে রেখেছে কোমর ঝাপটে৷ মেঘলা চোখ খুলে সেই মানুষটিকে দেখে বিস্ময় হয়ে তাকায়৷ পর পর দু-বার শুকনো ঢোক গিলে আপন মনে বলে,
— ” মেঘলা তুই শেষ৷ ”
চলবে,
চলবে,