প্রণয়ের আসক্তি পর্ব -০১

জানেন ম্যাম আমার মা আমার থেকে আমার কুড়িয়ে পাওয়া বোনকে বেশী ভালবাসে।আমার আপণ মা অথচ আমাকে ভালবাসে না বললেই চলে।যার সাথে কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই তাকে নিয়েই তার পুরো পৃথিবী। আমার খুব অবাক লাগে নিজের গর্ভেধারণ করা সন্তানের চেয়ে রক্তের সম্পর্কহীন একটা মানুষ কে কিভাবে ভালবাসে। কি অপরাধে আমি মায়ের ভালবাসা থেকে বঞ্চিত সেটা জানিনা।আমার জন্মের আগেই আমার আপুকে কুড়িয়ে পেয়েছিলো ট্রেন লাইনের পাশে।সেখান থেকেই আপুর প্রতি মায়ের ভীষণ ভালবাসা।আপুর বয়স যখন ৪ বছর তখন আমার জন্ম হয়।আমার জন্ম হওয়াতে বোধ হয় আমার মা খুশি হন নি।আমার মায়ের প্রতি প্রাউড ফিল করে আপুকে এতটা ভালবাসার জন্য।আমি জেলাস নয় মোটেও। কিন্তু আমার মনে অনেক কৌতুহল রয়েছে।

–মৃথিলার মুখে এমন কথা শুনে দরূণভাবে অবাক হলেন প্রফেসর শায়লা রহমাণ।উনি এর আগে কোথাও এমন শুনেন নি যে নিজের মেয়ের থেকে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়েকে কেউ বেশী ভালবাসতে পারে।যেটা শুধু সিনেমা বা গল্পতেই শোনা যায়।প্রফেসর শায়লা রহমানের মনে ভীষণ ইন্টারেস্ট জাগলো মৃথিলার ফ্যামিলি সম্পর্কে জানার জন্য।শায়লা রহমান মৃথিলাকে বললেন মা মৃথিলা এইজন্য ই কি তুমি সব সময় মন খারাপ করে থাকো।

–ম্যাম আমি রাস্তাঘাটে যেখানেই হাঁটাচলা করি এই একটা চিন্তা আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়।কেনো এমন করে আমার ফ্যামিলি আমার সাথে।কেনো আমার ফ্যামিলিতে আমি অবহেলার পাত্রী।মা কেনো ভালবাসে না আমায়।মায়ের একটু ভালবাসার জন্য আমি কত চেষ্টা করি মায়ের পছন্দের সব কাজ করি তবুও মাকে খুশি করতে পারিনা।আমার কাছে মা একদিকে পৃথিবী এক দিকে।শুধু মা খুশি হবে বলে আমি সারাক্ষণ মায়ের সাথে সাথে থাকি মা যেটা বলে সেটাই করি তবুওর মায়ের কাছে আমি আজ ও প্রিয় হয়ে উঠতে পারি নি।আপু কোন কাজ না করলেও মা সেটা নিয়ে অভিযোগ করেন না কিন্তু আমি ভুল করলেই মার খেতে হয়।

–তোমার বাবা কাকে বেশী ভালবাসেন?

–দুজনকেই সমান ভালবাসেন।মাঝেমধ্য মনে হয় আমিই বাবার সব।বাবা রোজ গালে তুলে খাইয়ে দিন আমাকে।খুব যত্ন নেন আমার।এক কথায় বাবা আছেন বলেই আমি বেঁচে আছি।আমার ড্রেস ধুয়ে দেওয়া, কলেজে পৌছে দেওয়া আমার সব বায়না পূরণ করার জন্য বাবা সব করতে পারেন।বাবা মাকে বলেন আমার মিথুর সাথে এমন করো কেনো?মা তখন বলে কি করি আমি।আমাকে কি ডায়নি মা মনে হয় তোমার।আমার মেধার কে আছে এই পৃথিবীতে আপন বলতে তো কেউ ই নেই।মেয়েটা জন্মের পর মা বাবা সবাই কে হারিয়েছে।সেখানে আমি একটু ভালবাসি সেটাও তোমার আর তোমার মেয়ের হজম হয় না তাইনা?তোমার মেয়ের মন ভালো করতে বলো সব সময় মেধা কে নিয়ে পাল্লা দিতে নিষেধ করো।জানেন ম্যাম আমি অবাক হয়ে যায় মা এতটা তিক্ত কেনো আমার প্রতি।

— মা কি করেন?

–ওইযে বললাম বাবা কিছু বললে অমন ই ব্যাবহার করেন।আপুকে খাইয়ে দেন আমি যদি বলি মা আমার ও তোমার হাতে খেতে খেতে ইচ্ছা করছে মা তখন চোখ রাঙিয়ে বলেন হাতে কি ফোসকা পড়েছে তোমার যাও গিয়ে খেয়ে নাও।মা বাইরে গেলে আপুর পছন্দের জিনিস নিয়ে আসে আমার কি পছন্দ মা সেটা জানেই না।মা আপুর চুলে তেল লাগিয়ে বেনুনি করে দেয় রাতে পড়ার সময় আপুর পাশেই বসে থাকে আপুকে নিয়ে বই পড়ায় আর আমাকে তখন আপুর জন্য চা বা কফি আনতে পাঠায় বলেই দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো মৃথিলা।

–তোমার মনের মাঝে এতটা চাপা কষ্ট নিয়ে আছো মৃথিলা। কি বলবো জানিনা আমার আসলে বলার মতো কিছুই নেই।আমার জীবনে সিনেমা বা গল্প বাদে প্রথম এমন হৃদয়বিদারক কথা শুনলাম।পৃথিবীতে এমন মা ও আছেন যা তোমার মায়ের সম্পর্কে না জানলে জানতেই পারতাম না।এমন সুন্দর ফুটফুটে মিষ্টি একটা মেয়েকে কেউ কিভাবে ভাল না বেসে থাকতে পারে।ডিপ্রেশন তোমাকে ঘিরে ধরেছে। এভাবে থাকলে তো তুমি মানুষ থেকে মানসিক রুগি হয়ে যাবে মৃথিলা।তোমার বাবাকে আমার সাথে দেখা করতে বলবা।

–বাবাকে প্লিজ কিছু বলবেন না ম্যাম।আজ আমার মন খারাপ তাই আপনার সাথে শেয়ার করলাম।আমার আসলে বলার মতো কেউ নেই।আমি জানিনা কেনো আপনাকে বললাম কিন্তু আপনাকে আপন মনে হয়েছে তাই বলে ফেলছি ম্যাম।

–তোমার আপু কেমন?

–আপুর অনেক ভালো।আমাকে ভীষণ ভালবাসে আমার মায়ের ভালবাসার অভাব টা আপুই পূরণ করে।আপু আমাকে খাইয়ে দেয়,পাশে নিয়ে ঘুমোয় সত্যি বলতে আপু আপুর মতোই।

–তোমার মন খারাপ কেনো আজ মৃথিলা?মনে হচ্ছে আজ একটু বেশী মন খারাপ তোমার।

–মা বাবা আপু আজ মামাবাড়িতে গিয়েছে অথচ আমাকে নেয় নি।অনেক বার বলেছিলাম বাট মা নেয় ই নি আমাকে।বাবা আর আপু বলেছিলো কিন্তু মা নিবে না।আমাকে নিলে সে যাবেই নাহ।তাই আমি যায় নি ম্যাম।

–প্রফেসর শায়লা রহমান এর কাছে পুরা বিষয় টা অনেক রহস্যঘেরা মনে হলো।অনেক আগ্রহ জন্ম নিলো মৃথিলার ফ্যামিলির উপর।স্বাভাবিক মনে হয় নি পুরা বিষয় টা।সব টায় রহস্যময় মনে হয়েছে।

–মৃথিলা এবার এইস এসসি পরীক্ষার্থী। গায়ের রং ফর্সা, লম্বা চুল, টানা ভ্রু , গলায় তিল,চেহারার কমতি নেই কোনো দিকে মৃথিলার মাঝে।কলেজ থেকে বাসায় ফিরে বেলকনির পর্দা সরিয়ে বিষন্ন মন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ দিয়ে ঝরছে পানি।মনের মাঝে সীমাহীন যন্ত্রণা মৃথিলার যা কাউকে বোঝাতে পারে না।পরিবার থেকেও না থাকার মতো।

কলিং বেল এর আওয়াজ আসছে বাইরে থেকে মা বাবা ফিরে এসছে ভেবে দরজা খুলে দিলো মৃথিলা। কেউ মুখে মুখোশ পরা অবস্থায় দরজা খুলতেই মৃথিলাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো আই লাভ ইউ ডারলিং বলেই ডান গালে একটা চুমু দিয়ে দিলো।মৃথিলার হাত পা অবশ হয়ে গেলো ভয়ে মুখ দিয়ে কথা বের করতে পারছে না।

ছেলেটি বলে উঠলো,কত সময় দেখি না বলোতো তোমাকে।বলেই মৃথিলার আঙুলে একটা রিং পরিয়ে দিলো কয়েক সেকেন্ডের মাঝে।মৃথিলার ভয়ে বুক দুরু দুরু করছে কে এই আগন্তক। বাসার মাঝে ঢুকে অসভ্যতা করছে।এর আগেও এমন হয়েছে কেউ একজন মৃথিলাকে মারার জন্য হাত পা বেঁধেছিলো।মৃথিলা ভাবছে আজ ও কি সেই এসেছে তাকে মারতে।মৃথিলা এবার চিৎকার দিতেই মানুষ টা মৃথিলাকে ছেড়ে দিয়ে মুখের মুখোশ খুলে হাত দিয়ে চুল ঠিক করছে।

“গায়ে কালো শার্ট, পরণে কালো জিন্স,হাতে কালো ফিতার ঘড়ি,পায়ে কালো জুতা হলুদ ফর্সা ইয়া লম্বা একটি ছেলে।ছেলেটাকে দেখেই মৃথিলা মুগ্ধ হলো।ছেলেটির দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ মুগ্ধতার সাথে দেখলো।মৃথিলার কালো প্লাজু,গোলাপি কামিজ সাথে কালো ওড়না পরা।ছেলেটির চোখে মুখে ভীষণ অস্বস্তি।লজ্জা আর অপরাধবোধ ছেলেটি কান ধরে মৃথিলার সামনে নতজানু হয়ে সরি বলছে।মৃথিলা যে ভীষণ ভয় পেয়েছে সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।ভয়ে এক পা দু’পা করে আলমারির পেছনে গিয়ে লুকালো মৃথিলা।ছেলেটি বললো এক্সকিউজ মি আই এম রিয়েলি সরি।আমি বুঝতে পারি নি যে এখানে অন্য কেউ থাকবে।আমি খারাপ কোনো উদ্দেশ্য এখানে আসি নি,প্লিজ বেরিয়ে আসুন।”

“মৃথিলা বেরিয়ে এসে বলে আ আ আপনি কে?”

“আমি নিরব?কোনো কিলার নয় প্লিজ অন্য কিছু ভাববেন না। আসলে আমি মেধা ভেবেছি।এখানে তো মেধার থাকার কথা। মেধা আমাকে বলেছিলো এই বাসায় ও থাকে।আর আজ এই টাইমে কেউ থাকবে না।আসলে মেধাকে টাইম দিতে পারি না তাই ও ভীষণ রাগ করেছে।কথা বলছে না বাধ্য এখানে এসছি।এনি ওয়ে আপনার নাম?”

“আমি মৃথিলা।”

“তুমি মৃথিলা রিয়েলি।তোমার গল্প সহস্রবার শুনেছি কিন্তু সরাসরি দেখি নি কোন দিন।ভয় পেও না আমি পুলিশের জব করি গোয়েন্দা বিভাগের অফিসার আমি।তোমার আপু মেধার ইয়ে মানে তোমার দুলাভাই এইবার বুঝেছো।কিছুক্ষণ আগে যেটা ঘটেছে স্বপ্ন ভেবে ভুলে যাও প্লিজ।আমি আসলে কিভাবে সরি বলবো বুঝতেই পারছি না।আমাকে ক্ষমা করেছো তো প্লিজ বলো।আমি ইচ্ছাকৃত এমন করিনি।”

“ওহ আপনি নিরব ভাইয়া।আপনার কথাও অনেক বার শুনেছি।আমি ও বুঝতে পারিনি যে আপনি। বসুন না ভাইয়া আমি কফি নিয়ে আসছি।”

“মৃথিলা! নিরবের এমন ডাক শুনে আচমকা ফিরে তাকালো মৃথিলা।নিরব মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো একটা ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করি।”

“জ্বী বলুন।”

“তুমি এতটা ভয় পেলে কেনো?তোমার চোখে মুখ এখনো ভয় আছে।এর আগেও কি কখনো ভয় পেয়েছো?”

“গ্যাসে পানি ফুটাচ্ছে মৃথিলা, নিরব ও পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো কি হলো বলো।”

“সে অনেক কথা ভাইয়া।কোনএকদিন শুনাবো।চিনি কি বেশী না কম দিবো।”

“চিনি হালকা দাও।তোমার আপু কোথায়? ”

“আপু মা বাবার সাথে মামা বাড়ি গিয়েছে।আপনাকে বলেনি।”

“না বলেনি।তুমি যাও নি কেনো?বাসার পিচ্চি মেয়েকে রেখে গিয়েছে অদ্ভুত না ব্যাপার টা।”

“আমি ইচ্ছা করেই যায় নি।”

“তুমি এতটা নরম শান্ত শিষ্ট তোমার আপু টা যে কেনো তোমার মতো হলো না।”

“কেনো আপু কি করেছে?..”

“এইযে আমাকে শুধু পেইন দেয় তোমার আপু।সময় দিতে না পারলে ভীষণ অভিমান করে।আর কথায় বলে না।”

“দিনে কয় মিনিট সময় দেন আপুকে,?”

“আজ সাতদিন পরে ফোন দিয়েছি সে তো লঙ্কাবতি হয়ে আছে।কোনো কথা ই বলবে না।”

“সাতদিন এতদিন কেনো?”

“আসলে আমাকে ভীষণ বিজি থাকতে হয় মাঝে মাঝে।সেটা তোমার আপু বোঝে না এটাই সমস্যা।ইয়ে মৃথিলা তুমি এমন চুপচাপ গম্ভীর আছো কেনো?এত্ত কিউট একটা মেয়ের মুখে হাসি নেই কেনো?

এর ই মাঝে মৃথিলার মা এবং মেধা বাড়িতে প্রবেশ করে।দরজা থেকেই বাজখাই গলায় প্রবেশ করলো মৃথিলার মা।এইভাবে দরজা খোলা কেনো?এইদিক দিয়ে সবাই সব নিয়ে গেলে তো কেউ টের ও পাবে না।এই মেয়েটা এই সংসার শেষ করে ফেলবে।অনুক্ষণে মেয়ে একটা।খাওয়া আর ঘুম ছাড়া কোনদিকে হুঁশ নেই।খাওয়া পরা কম হলে কিভাবে ঝগড়া করতে হবে সেটা খুব ভাল বোঝে এই মেয়ে।ভেতরে ঢুকেই কফি হাতে নিরব কে দেখে অবাক হয়ে গেলো মৃথিলার মা।নিরব কফির মগ রেখে সালাম দিয়ে বললো আসলে ভুলবশত এখানে প্রবেশ করে ফেলেছি।বলেই নিরব চলে গেলো।

মৃথিলার মা মৃথিলার চুলের মুঠি ধরে বললো আমরা বাসায় নেই সেই সুযোগে তুই বাসায় ছেলে নিয়ে এসছিস।বাসায় ফুর্তি করছিস।আজ তোকে মেরেই ফেলবো বল ছেলেটা কে?আমি প্রায় দেখি ছেলেটাকে আমাদের এরিয়াতে।আমাদের মুখ পোড়াবি নাকি মুড়ামুখি।

চলবে,,

#প্রণয়ের_আসক্তি
১.
#WriterঃMousumi_Akter

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here