প্রণয়ের সূচনা পর্ব -১৩

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_১৩
__________________________
সকাল এগারোটা।সূচনাদের বাসা থেকে এসে পড়েছে প্রণয়রা।আসার সময় হৃদুর সে কি কান্না।বারবার একটা কথাই বলছিলো-মিত্তি আমাল ফুপাকে নিয়ে যাততে।আমাল ফুপাকে নিওনা।এদিকে মিহুও তার বাসায় চলে যেতে চাইছিল কিন্তু সূচনা এক প্রকার জোর করে ই রেখে দিয়েছে।সূচনা, ইরাদের বাসায় পোঁছে দিয়েই তন্ময়ের সাথে অফিসে চলে গেছে প্রণয়।ইসহাক সাহেবও অফিসে। মিসেস আফিয়া সব কাজ সেড়ে পা বাড়ালেন রুমের উদ্দেশ্যে সূচনার কাছে।ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে সবে বের হয়েছে সূচনা,তখনই আগমন ঘটেছে মিসেস আফিয়ার।ঠোঁটে হাসি টেনে সূচনাকে জিজ্ঞেস করলেন –

–‘আসতে কোনো অসুবিধা হয়েছে?

–‘ না হয়নি।

–‘ফ্রেশ হয়েছো না চলো কিছু খাবে।

–‘এখন কিছু খাবনা ক্ষুদা নেই।আপনি নাস্তা করেছেন?

–‘ নাস্তা করেছি।চা করে রেখেছি,এক সাথে পান করব আর কথা বলবো চলো।

সূচনা মৃদু হেসে মাথা নাড়ালো।
.
.
ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে মিসেস আফিয়া আর ফ্লোরে বসে আছে সূচনা।মিসেস আফিয়া সূচনার মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছেন।অবশ্যই সূচনার ইচ্ছায় না জোর করেই।বিয়ের আগে মিসেস দিশা জোর করে দিয়ে দিতেন আর আজকে মিসেস আফিয়া দিচ্ছেন।সূচনার পাশে বসেই চা হাতে নিয়ে ফিরোজা খালা হা করে তাকিয়ে আছেন টিভির দিকে।সে আবার স্টার জলসার নাটকের ফ্যান নাকি।সব কাজ শেষ করে নেন আগে ভাগেই যেন নাটক দেখার সময় কোনো ডিস্টার্ব না হয়।সূচনা আমতা আমতা করে মিসেস আফিয়া কে বললো-

–‘মামী বেশি তেল দিলে কেমন কেমন লাগে না?

মিসেস আফিয়া হেসে বললেন-

–‘টেনশন করো না বেশি দেইনি।পরিমান মতো দিয়েছি।কালকে না হয় শ্যাম্পু করে নিও।

সূচনা মাথা নাড়ালো।হুট করে মিসেস আফিয়ার দিকে ঘুরে বললো-

–‘মামী আপনি না হয় আমাকে তুই করে সম্বোধন করুন।তুমি সম্বোধন টা কেমন জানি লাগে।

মিসেস আফিয়া হাসলেন সূচনার কথায়। হাসি টেনে ই বললেন –

–‘ঠিক আছে।

সূচনার মাথায় তেল দেয়া শেষ হলে বেনী করে তার কাধের একপাশে রেখে দিয়ে মিসেস আফিয়া বললেন –

–‘শোন আমি গোসল করতে যাচ্ছি।মিহু,দিনা তো ঘুমোচ্ছে ওদের ডেকে দেয়।ইরা বোধহয় রুমেই একটু দেখে আসিস আর তিথি তো পড়ছে ওকে গোসলে পাঠিয়ে দিবি আর বের হওয়ার জন্য তাড়া দিস না হয় দেরি করে ফেলবে। ওয়াশরুমে একবার গেলে তো আর আসার নাম নেয়না।আর হ্যা প্রণয়কে একটু ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করিস তো ও কখন আসবে।সম্ভব হলে দুপুরেই আসতে বলিস।

–‘ঠিক আছে।

মিসেস আফিয়া চলে যেতেই ফিরোজা খালা সূচনাকে বললো-

–‘আপনে তো ভাগ্যবতী আফামনি। এমন পরিবারে বিয়া হইসে আপনের।আমি সাত বছর ধইরা এহানে কাজ করতাসি বহুত ভালা তারা।আর আব্বাজান তো একেবারে সোনার টুকরা।যার সাথে আপনের বিয়া হইসে।আমারও বিয়া হইসিলো কিন্তু আপনের মতো অত ভাগ্য নাই।ছোড বয়সেই বাপে মা*য়ে বয়সে বড় এক বে*টার লগে বিয়া দিয়া দে।পথম পথম ভালোই আছিলো কিন্তু পরে টেকার লাইগা চা*প দিতে থাকে।ধার দেনা কইরা বাপে পঞ্চাশ হাজার টেকা দিসিলো বাকিটা দিতে পারেনা।ডেলি ডেলি গায়ে হাত তুলতো,এক কাহিনি আর কত ভাল্লাগে কন।টিকলোনা সংসার।বাপে মা*য়েও রাখলোনা।হেরপর আইলাম ঢাকা শহরে।গেরামের এক পরিচিত খালায় এদিকে দিয়া গেল কাজে লাগায় তারপর তে এহানেই আছি।এই পরিবারের কেউই আমার লগে খা*রাপ ব্যবহার করেনাই।থাকার লাইগা আলাদা কামরা ও দিসে আমারে।এই গরিবের ক*পালে কিন্তু এডা অনেক আফা।এই ঢাকা শহরে কে করে এতখানি কার লাইগা।বলেন।

নিরব ভঙ্গিতে ফিরোজা খালার কথাগুলো শুনছিল সূচনা।তার কথা শেষ হলে সূচনাও তাকে বললো-

–‘হ্যা।খালা আমি এখন যাই।গোসল করতে।

–‘ঠিক আছে যান।আমিও উঠি।

ড্রয়িং রুম থেকে প্রথমে মিহু আর দিনার কাছে আসলো সূচনা।এখনও ঘুমাচ্ছে তারা।তাদের ডেকে দিয়ে ইরার রুমে আসলো।পড়ার টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে কিছু একটা নিয়ে দেখছিল ইরা।সূচনা পেছন থেকে ডাক দিতেই চমকে উঠলো ইরা।হাতের জিনিস টাও আড়াল করলো।সূচনা জিজ্ঞেস করতে নিয়েও করলো না।চেয়ার থেকে উঠে তার সামনে দাড়ালো ইরা।মিহি স্বরে জিজ্ঞেস করলো-

–‘কিছু বলবে ভাবি?

তৃতীয় বারের মতো সূচনাকে ভাবি বলে সম্বোধন ইরার।প্রথম দেখতে যেয়ে দুইবার করেছিল।তারপর বিয়ের তিনদিনের মাথায় আজকে।মৃদু হাসলো সূচনা।বললো-

–‘এমনি দেখতে এসেছিলাম কি করছো।

–‘দেখা হয়ে গেছে এখন কি চলে যাবে?

–‘তোমার সমস্যা না থাকলে থাকব তবে আমিতো শাওয়ার নেইনি,নামাজ ও পরতে হবে।

–‘আচ্ছা তাহলে দুপুরে খেয়ে একসাথে বসব।

–‘ঠিক আছে। যাই তাহলে।

সূচনা যেতে নিলে পিছু ডাকলো ইরা।থামলো সূচনা।কাবার্ড থেকে নীল রঙের একটা শপিং ব্যাগ বের করে হাতে দিল সূচনার।অধর কোণে হাসি টেনে বললো-

–‘তোমার জন্য ছোট্ট গিফ্ট।

সূচনা ঘোর আপত্তি জানালো।কিন্তু ইরা শুনলো না।অধিকারের স্বরে বললো-

–‘আমার একমাত্র ভাবীর জন্য ননদ হিসেবে আমি ছোট কিছু একটা গিফ্ট করতেই পারি তুমি না করছো কেন?খবরদার,,না করবেনা।নাও।

এবার নিঃশব্দে হাতে নিল সূচনা।মুচকি হেসে বললো-

–‘এত মূল্যবান উপহারের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

বিনিময়ে মুচকি হাসলো ইরা।ইরার রুম থেকে তিথির রুমে আসতেই দেখল সে এখনো পড়ার টেবিলে বই খাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে বসে আছে।

–‘এখনো পড়ার টেবিলে?

তিথি মুখটা কাঁদো কাঁদো ফেসে বললো-

–‘সামনে পরীক্ষা ভাবি।

–‘টেনশন হচ্ছে?

–‘হ্যা অনেক।

–‘টেনশন করো না একদম।সব কমপ্লিট করে ফেলো। ঠান্ডা মাথায় একেবারে চিল মুডে পরীক্ষা দিবে।টেনশন করলে পরীক্ষা খা*রাপ হয় বুঝলে?

–‘হ্যা বুঝলাম।

–‘গুড।এখন শাওয়ার নিতে যাও আর হ্যা অবশ্যই তাড়াতাড়ি বের হবে নাহলে মামাী কিন্তু আমাকে ব*কবে।

–‘ঠিক আছে।

রুম থেকে চলে আসতে নিলেই তিথির পড়ার টেবিলের সেলফের এক কোণে সূচনার চোখ আটকে গেল।অলকানন্দা ফুল।অদ্ভুত সৌন্দর্য সে হলুদ ফুলে।কিন্তু এই অলকানন্দা এখানে আসলো কিভাবে আসলো।গাছ তো দেখল না।আগ্রহ দমি*য়ে রাখতে না পেরে তিথিকে জিজ্ঞেস করলো-

–‘এই বাসায় কি অলকানন্দা গাছ আছে তিথি?

–‘হ্যা বাড়ির পেছন দিকটায় আছে।সেখানে অলকানন্দা গাছ আছে তিনটা।একটু আগে গিয়েছিলাম যেয়ে দেখি নিচে পড়ে আছে তারপর নিয়ে এসেছি।

–‘আচ্ছা আমি নিতে পারি?

সূচনার বাচ্চা সুলভ কণ্ঠে করা আবেদন। তিথি হেসেই ফেলল।হাসতে হাসতেই বললো-

–‘এমন ভাবে বলছ যেন আমি না করব।নিয়ে নাও যতটা খুশি।

হাসলো সূচনা। দুইটা ফুল নিল সেখান থেকে।রুমে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখলো।প্রণয়কে ফোন করতে হবে।ফোন হাতে নিয়ে প্রণয়ের নাম্বারে ডায়াল করলো।রিং হলেও ফোন রিসিভ হচ্ছে না।টানা তিনবার কল করলো সূচনা।কিন্তু রিসিভ করা হলো না।রিসিভ কেন করছেনা?হয়তো ব্যস্ত।একটু পরে ট্রাই করবে বলে ফোন রেখে দিল।আয়নার সামনে যেয়ে ড্রেসিং টেবিলের ওপর থেকে একটা ফুল হাতে নিল।গুজে দিল বিনুনী করা চুলের পাশে।
.
.
কলিং বেলের আওয়াজে এক প্রকার দৌড়ে গেল ফিরোজা খালা। দরজা খুলে প্রণয়কে দেখেই মিষ্টি হাসি দিলেন।বললেন-

–‘আব্বা আইজকা এত তাড়াতাড়ি যে?

প্রণয় ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো-

–‘হ্যা খালা আজকে কাজ কম ছিল আর মামী বললো তাড়াতাড়ি আসতে।সবাই কোথায়?

–‘খালাজান তো রুমে।আফামনি রা সবাই তো দেখলাম রুমে।আপনে রুমে যান।আমি শরবত কইরা আনতাসি।

–‘ঠিক আছে খালা।

রুমে এসে সূচনাকে পেলনা প্রণয়।বিছানায় ব্যাগ রেখে টাই খুলতে খুলতে ব্যালকনিতে গেল।ব্যালকনির একপাশে মানি প্ল্যান্ট গুলোকে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করছিল সূচনা।নিঃশব্দে তার পেছনে যেয়ে দাড়ালো প্রণয়।সূচনা এক পা পেছাতেই প্রণয়ের বু*কের সাথে পিঠ ঠেকলো।চম*কে গেল সূচনা।সে তো একাই ছিল তাহলে কে আসলো?চকিতে সামনে ঘুরলো সূচনা।প্রণয়কে দেখে যেন আকাশ থেকে পড়লো সে।তার ওপর প্রণয় তার এত সন্নিকটে।প্রণয়ের দিকে মাথা তুলে তাকালো সূচনা।প্রণয়ের তপ্ত শ্বাস আছড়ে পড়ছে তার চোখেমুখে।হৃদকোমলে অস্থিরতার জোগান তার।তাতে নতুন মাত্রা যোগ দিল প্রণয়ের ফিচেল কণ্ঠে বলা উক্তি –

–‘রঙ্গন থেকে অলকানন্দা হয়েছ কেন আজকে।এলোকেশী কন্যার চুলে হলুদ রঙা ফুল।একদম অলকানন্দা রাণী লাগছে।

দৃষ্টি নত করে নিল সূচনা।সরে আসলো প্রণয়।সূচনা ধীর পায়ে ব্যালকনি প্রস্থান করল।একটুপর হাতে এক গ্লাস শরবত নিয়ে আসলো সূচনা।প্রণয়ের দিকে বাড়িয়ে দিলে প্রণয় জিজ্ঞেস করলো-

–‘কে বানিয়েছে?

সূচনা মুখ ছোট করে উত্তর দিলো-

–‘ফিরোজা খালা বানিয়েছেন।

–‘আমি লেবু বেশি খাই।খেয়ে দেখ তো লেবু কতটুকু।

সূচনা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-

–‘খেয়ে দেখব মানে?

–‘খেয়ে দেখবে মানে খেয়ে দেখবে।খাও

আমতা আমতা করে এক চুমুক খেয়ে বললো-

–‘ঠিক আছে।

–‘এটা কি করলে,, তোমার মুখ দেয়াটা আমি এখন খাব?

প্রণয়ের কথায় সূচনা অপমানিত বোধ করলো।চোখ নামিয়ে ফ্লোরে নিবদ্ধ করলো।এভাবে কেন বললো প্রণশ?সে নিজেই তো বলেছিল।প্রণয় সূচনার সামনে এসে দাড়ালো।তার হাত থেকে গ্লাস নিয়ে এক চুমুকেই শেষ করলো।সূচনার দৃষ্টি এবার ফ্লোর থেকে প্রণয়ের দিকে নিবদ্ধ হলো।প্রণয়ের অধর কোণে বা*কা হাসি।সেই হাসি বজায় রেখেই তার কানের কাছে এসে বললো-

–‘এখন থেকে রোজ তুমি শরবত বানাবে, খেয়ে চেক করবে তারপর আমাকে দিবে।

সূচনা হা হয়ে গেল প্রণয়ের কথা শুনে। প্রণয় আবার বললো-

–‘গট ইট?

মাথা ঝাকালো সূচনা।

——————————————
–‘ মা-বাবা হারানো সন্তানদের সুখে থাকা কিন্তু আসলেই সহজ না,,তার ওপর অন্য কাউকে খুশও রাখা তো তার চেয়ে ও কঠিন।

প্রণয়ের করা উক্ত উক্তি শুনে চমকে তার দিকে তাকালো সূচনা।

#চলবে

( আসসালামু আলাইকুম। আজকেও দেরি হলো দিতে।আজও মাথা ব্যথা নিয়ে লিখলাম🙃। এত কষ্ট করে লিখেছি একটু বেশি রেসপন্স আর গঠনমূলক মন্তব্য আশা করতে পারি?ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।গল্পের কাহিনি টা আস্তে আস্তে এগোবে।তাই একটু ধৈর্য ধরে পড়ার অনুরোধ রইলো।আমার জন্য দোয়া করবেন।ভালোবাসা সবাইকে। ফি আমানিল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here