প্রণয়ের সূচনা পর্ব -১২

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_১২
___________________________
সন্ধ্যা সাতটা।প্রণয়,সূচনা,মিহু,ইরা,দিনা,রিশা,তিথি সবাই বাইরে এসেছে। হৃদু ও এসেছে প্রণয়ের সাথে।মূলত সে প্রণয়কে ছাড়বেই না তাই তাকে সাথে করে নিয়ে এসেছে।ইরাদ ও আছে সাথে।তবে নিজ ইচ্ছায় না।সবার জোর জবরদস্তিতেই এসেছে।বিশেষ করে প্রণয়ের।না হলে কে চায় তার এত বছরের ভালোবাসাকে নিজের চোখের সামনে তার বরের সাথে দেখতে।পু’ড়ে যায় বু’কের ভেতর।নি’দারুন য*ন্ত্র*ণা!সূচনা নিজেও চায়নি ইরাদ আসুক।কারণ এই অনুভূতি সম্পর্কে তো সে অবগত।কিন্তু সে তো বলতে পারে না আর সবার সামনে।আপাদত রেস্টুরেন্টে বসে আছে সবাই খাবারের অপেক্ষায়।মিসেস দিশার কড়া আদেশ “ভারি খাবার খাওয়া,যাবেনা।হালকা পাতলা খাবে। মেয়ের জামাই প্রথমবার বাড়িতে এসেছে একটু খা’ক বেশি খা’ক বাসায়ই খে’তে হবে।” তাই শুধু চিকেন স্যুপ,চিকেন ললিপপ আর সাথে কোল্ড ড্রিংক।আর হৃদুর জন্য চিকেন ফ্রাই আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।তাদের খাবার আসতে আসতে তন্ময় আর জাওয়াদ এসে হাজির।প্রণয় ফোন দিয়ে বলেছে তাদের।সবাই যাবে তাহলে তারা দুজন কেন যাবেনা।এমনিতেও তন্ময় তার এসিসট্যান্ট কম কাছের মানুষ।আর জাওয়াদ দিনার হবু বর মানে তার হবু বোন জামাই।তাই বাদ দেয়নি তাদের।শুরুতে দু’জনের একজনও আসতে রাজি হচ্ছিল না।কিন্তু প্রণয়ের কথার ওপর আর কিছু বলতে পারে নি।তাদের আসার প্রায় দশ মিনিটের মধ্যে ই আসলো তাদের খাবার।একপাশে তন্ময়,ইরাদ,তিথি,মিহু,জাওয়াদ আর দিনা।অন্যপাশে মানে তাদের সম্মুখেই ইরা,রিশা,সূচনা,প্রণয় আর সূচনা, প্রণয়ের মধ্যিখানে বসেছে হৃদু।সবাই খাওয়া শুরু করলেও খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছে দিনা আর সূচনা।দিনার না খাওয়ার কারণটা জানে জাওয়াদ।তাকে দেখলে যে মেয়েটার ল’জ্জা বে’ড়ে যায় কয়েকগুণ।তার চোখে চোখ রেখে কথা বলতেও যেন রাজ্যের লজ্জা এসে হা*না দেয় মুখশ্রীতে।মাঝে মাঝে ভেবে পায়না সে “এত লজ্জা কেন তার প্রেয়সীর? বিয়ের পর কি হবে তাহলে?তাকে তো বোধহয় হালকা ছুয়ে দিলেই গ’লে যাবে মোমের ন্যায়।”
ভাবতেই হাসি পায় তার।অন্যদিকে সূচনাকে চামচ নিয়ে নাড়াচাড়া করতে দেখে প্রণয় নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলো-

–‘খাচ্ছোনা কেন?কি হয়েছে?

প্রণয়ের কণ্ঠ শুনে তার দিকে আড়চোখে তাকালো সূচনা।তার দিকেই তাকিয়ে আছে প্রণয় হয়তো জবাবের আশায়।সূচনা নিচু স্বরে ই জবাব দিলো –

–‘ কিছুনা এমনি।খাচ্ছি।

কথাটুকু বলে এক চামচ স্যুপ মুখে নিল সূচনা।প্রণয় নিজে খাচ্ছে সাথে হৃদুকেও খায়িয়ে দিচ্ছে। সূচনা খাওয়ার ফাঁ’কে একপলক তাকালো তাদের দিকে।সুন্দর লাগছে এই দৃশ্য।দেখে মনে হবেনা তাদের পরিচয় ঘন্টা খানিকের মাত্র।কত সুন্দর করে সামলাচ্ছে প্রণয় তাকে।খাওয়ার সময়ে হৃদুর মুখের একপাশে মেয়োনেজ লেগে যায়।একসাথেই চোখে পড়ে দুজনের।দুজন ই উদ্বত হয় তা মু’ছে দিতে।যার দরুন আঙুলে আঙুলে হয় ক্ষণিকের অনাকাঙ্ক্ষিত এক স্পর্শ।প্রথম স্পর্শ।চ’ম’কে যায় দুজনেই।নিবদ্ধ হয় দুজোড়া চোখ।তবে ক্ষণিকের জন্য।সেই দৃষ্টি যে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিচ্ছে।সূচনা মাথা নিচু করে নিল।ল’জ্জা লাগছে তার।শুধু এটুকু স্পর্শে!প্রণয় স্বাভাবিক ভাবেই তার কাজে ব্যস্ত।মিহু, দিনা,তিথি,ইরা চারজনই মুখ টি’পে হাসছে।এই প্রথম ইরাকে হাসতে দেখা গেল।নজরে পড়ল সূচনার।কিছু বললো না আর।তন্ময়ের চোখেও পড়েছে ব্যাপারটা সাথে সূচনার ভাব ভঙ্গি ও।তাই সে তিথির দিকে তাকিয়ে চি*বিয়ে চি*বিয়ে বললো-

–‘তিথি এত হাসা ভালোনা,, দেখা যাবে হাসার জন্য দাঁত ই থাকবেনা।

তন্ময়ের কথা শুনে ফুসে উঠলো মিহু।সেও দাঁ’তে দাঁ’ত চে*পে বললো –

–‘তিথি আমাদের না হয় দাঁত থাকবেনা কারো যদি বলার জন্য মুখই না থাকে তখন?

পাল্টা জবাব তন্ময়ের –

–‘তিথি দেখ আমার মুখ আমি সামলে নিব।অত ফেল*না,কমদামি মুখ না আমার, এসব মোয়া টোয়ার জন্য আমি আমার মূল্যবান সময় নষ্ট করি না।

–‘তিথি বল এসব তেলময়ের কথা শোনে না কেউ,,তাই কথা বলবেই কেন? ষু*হ ষু*হ হুঁশ।

–‘তিথি বলে দাও বেশি কথা বললে মোয়াকে মোয়ার মতে চি*বিয়ে খে*য়ে ফেলব।

–‘তিথি তাকেও বলে দেয় তেলময় কে তেলে ফ্রাই করে চি*লি সস দিয়ে খেয়ে ফে*লব একদম।

তন্ময় আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই তিথি ধমকের স্বরে বললো-

–‘উফফ থামুন তো , এই মিহুপু থামো। ঝ*গড়া করবেন করুন আমাকে টানা হচ্ছে কেন? আমি নির্দোষ।

এতক্ষণ সবাই অবাক চোখে একবার মিহুকে একবার তন্ময়কে দেখছিল।এবার মুখ খুললো প্রণয়। বললো-

–‘আজকের জন্য ঝ*গড়া এখানেই সমাপ্ত।বাকি পর্ব কালকে টেলিকাস্ট হবে।

সূচনা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো প্রণয়ের দিকে।বললো-.

–‘বাকি পর্ব কালকে মানে? আপনার মনে হয় মজা লাগছিল এতক্ষণ।

প্রণয় বা’কা হেসে নিচু স্বরে বললো-

–‘হ্যা ভালোই লাগছিল।আমার বউ তো আর ঝগ*ড়ুটে না যে তার সাথে ঝ*গড়া করব তাই এখন অন্যদেরটাই তো দেখতে হবে।কি করার।

শেষর কথা গুলো উদাস কণ্ঠে একেবারে নিচু স্বরে বললো প্রণয়।সূচনা গোল গোল চোখে তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিকে,,যেন কিছুই বোধগম্য হয়নি।প্রণয় হতাশ চোখে তাকালো।এমন আলাভোলা মেয়ে তার বউ,, ভাবা যায়।
.
.
রেস্টুরেন্ট থেকে সবাই বাসায় এসেছে ঘন্টাখানেক।ইরাদ পুরোটা সময় ছিল একেবারে নিশ্চুপ। একটা টু শব্দ ও করেনি।কেউ কিছু বললে শুধু হু হা করেছে।রেস্টুরেন্ট থেকে এসেই রুমে ঢুকেছে।ড্রয়িংরুমে ফ্লোরে ছোটরা সবাই গোল হয়ে বসেছিল।মিসেস দিশা, আরহাম সাহেব, মিসেস আফরোজা সোফায় বসে কথা বলছিলেন।তখনই আগমন ঘটলো ইরাদের।ইরাদ কে আড্ডায় ডা’কা হয়েছে কয়েকবার কিন্তু আসেনি সে,শরীর খা’রাপের বাহানা দিয়ে। ইরাদ মিসেস আফরোজার সামনে যেয়ে নিচু স্বরে বললো-

–‘আম্মু আমার একটু যেতে হবে।কালকে ভার্সিটি তে একটা ইম্পরট্যান্ট এক্সাম আছে। বাসায় যেয়ে পড়তে হবে।

মিসেস আফরোজার কপালে ভাজ পড়লো। চিন্তিত স্বরে বললো-

–‘রাত নয়টা বেজে গেছে এখন কোথায় যাবি বাবা,,এখন যেতে হবেনা। সকালে উঠে চলে যাব।

–‘বললাম তো আম্মু ইম্পর্ট্যান্ট এক্সাম।বাসায় যেয়ে এখন পরতে হবে।

–‘কিন্তু,,

–‘আম্মু তুমি চিন্তা করোনা।

–‘নিহাদকে নিয়ে যা তাহলে

–‘আমি যেতে পারব একা। কিছু হবেনা।
.
.
নিহাদ প্রণয় আসতে চেয়েছিল এমনকি তন্ময়কে সাথে পাঠানোর কথাও বলেছে প্রণয় কিন্তু ইরাদ রাজি হয়নি কিছুতেই।কোনোরকম জোর করে দু’টো খায়ি*য়ে দিয়েছ।সে কি করবে এখানে থাকাটা যে গার জন্য সম্ভব না।এই মুহূর্তে একা থাকতে পারলে হয়গো শান্তি লাগবে তাই পরীক্ষার বাহানা দেখিয়ে চলে এসেছে।ইরাদ বের হবার পর থেকেই হা হু*তাশ করছিলেন মিসেস আফরোজা। মিসেস দিশা অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে দিয়ে এসেছে রুমে।এখন সাড়ে এগারোটা বাজে প্রায়।ইরাদ ফোন দিয়েছে।সে পৌছে গেছে বাসায়।স্বস্তি পেয়েছেন মিসেস আফরোজা।এখন সবাই খে*য়ে রুমে চলে গেছে।সকালেই চলে যাবে সূচনারা।মিহু, ইরা,তিথি,দিনা,রিশা সবাই এক রুমেই।কেউ কাউকে ছাড়া শুবেনা এমন অবস্থা।তারওপর এখন গরমের পরিমানটা ও কমে এসেছে একটু।তাই এক রুমে শুতে খুব একটা সমস্যা হবে না। সূচনা ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে আসতেই দেখল বিছানার এক পাশে হৃদু আর একপাশে প্রণয়। দুজনই গালে হাত দিয়ে বসে আছে।সূচনা কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো-

–‘কি হয়েছে?

প্রণয় কিছু বললো না।হৃদুই তার অস্ফুট ভাষায় বললো-

–‘মিত্তি আজকে লিদু তার মিত্তি আর ফুপার ছাতে ঘুমাবে।মাম্মাকে কিতু বলো মাম্মা আমাকে নিয়ে যেতে আথতে।আমি দাবনা।

সূচনা একপলক তাকালো প্রণয়ের দিকে।তারপর কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই রুমে আফরিনের প্রবেশ।আফরিন নিয়ে যেতে চাইলেও পারেনি।হৃদু যাবেনা তাই প্রণয় আর সূচনা ও রেখে দিয়েছে।আফরিন চলে গেলে প্রণয় দরজা লক করে সূচনাকে বললো-

–‘তুমি ওকে নিয়ে বিছানায় ঘুমাও আর আমি সোফাতে ঘুমাই।

হৃদু বিছানায় বসেছিল আর সূচনা বিছানার পাশেই দাড়িয়ে ছিল।তখনই প্রণয় উক্ত কথাটুকু বললো।তার সোফায় শোয়া নিয়ে সূচনা ঘোর আপত্তি জানাতে নিবে তার আগেই। হৃদু হাত দিয়ে দেখিয়ে বললো-

–‘মিত্তি তুমি একানে আর ফুপা একানে ছুবে।আর লিদু মাঝখানে।

প্রণয় সাথে সাথে ই দৃষ্টি তাক করলো সূচনার পানে।সূচনা ও তার দিকেই তাকিয়ে ছিল।প্রণয়কে অবাক করে দিয়ে সূচনা মৃদু স্বরে বললো-

–‘এক বিছানা তেই তো ঘুমাতে হবে তাহলে একদিনের জন্য কেন সোফায় ঘুমাবেন।বিছানা তেই ঘুমাবেন।

সূচনার কথা মনে মনে হাসলো প্রণয়।তবে মুখে তার ছাপ পড়তে দিলনা।চুপচাপ এসে শুয়ে পড়ল বিছানার ডান পাশে, তার দেখা দেখি সূচনা ও শুয়ে পড়ল লাইট অফ করে।

#চলবে
টাইপো-সুমাইয়া বিনতে নাজিম
( আসসালামু আলাইকুম। প্রচন্ড মাথা-ব্যথা আর চোখ ব্যথা নিয়ে লিখেছি আজকের পর্ব।রিচেক ও করতে পারিনি।ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।অবশ্যই ধরিয়ে দিবেন।কমেন্ট চাই আজকে প্রচুর🙃।আমার জন্য দোয়া করবেন একটু।হ্যাপি রিডিং❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here