প্রণয় আসক্তি পর্ব ৩

#প্রণয়_আসক্তি
লেখিকাঃমাহযাবীন
পর্বঃ০৩

“চুমু চাই,চুমু চাই,চুমু চাই”
কলেজের খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে মিয়ামির এমন আবদার শুনে মুহূর্তেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো আর্শের।রাগে দাঁতে দাঁত চেপে কঠিন কন্ঠে সে বলে ওঠে,
-এখনই নিজের ক্লাসে যাও মিয়ু।নাহয় চড় খাবা।
আর্শের কথায় ভ্রু দুটি কুঁচকে নিজের ঠোঁট উল্টে মিয়ামি বলে ওঠে,
-তুমি আমাকে চুমু দিবা তারপরই আমি ক্লাসরুমে যাবো।আর যদি চড় দেও তাহলে আমি কলেজ ছুটি হওয়া অব্দি এখানেই রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকবো।
মিয়ামির এমন কথায় অসহায় চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে আর্শ।মেয়েটির চোখে দৃঢ় সংকল্প দেখতে পারছে সে।অর্থাৎ মেয়েটি যা বলছে তা সে করবেই।কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে আর্শ আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে।তেমন বেশি মানুষ এ জায়গা টিতে নেই।আর বেশ কয়েকটা বড়সড় গাছ থাকায় সহজে তাদের দিকে কারো নজর পরবে না। সবটা বিবেচনা করে আর্শ আরো একবার অসহায় চোখে মিয়ামির দিকে তাকায়। মিয়ামি এক ভ্রু উঁচু করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটি চুমু না নিয়ে এক বিন্দুও নিজের স্থান দিয়ে সরবে না তা বুঝা হয়ে গিয়েছে আর্শের।তাই আর সময় অপচয় না করে বাম হাত মিয়ামির কানের নিচ থেকে নিয়ে ঘাড় আঁকড়ে ধরে কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায় সে।আর্শের স্পর্শ পেয়েই ঠোঁটে হাসি নিয়ে চোখজোড়া বুজে নেয় মিয়ামি।আর্শের এতোটা কাছে আসাতে তার শরীরের পারফিউমের ঘ্রাণ মিয়ামির নাকে এসে লাগছে।মিয়ামি মুগ্ধ হয়ে সে ঘ্রাণ নিজের মাঝে টেনে নিচ্ছে।

চুমু দিয়েই মিয়ামির থেকে সরে আসতে যেয়েও থেমে যায় আর্শ।কিছু একটা মনে হতেই সে মিয়ামির কপালে ঠিক যে জায়গাটায় চুমু দিয়েছে সে জায়গাটিতেই নিজের দাঁত বসিয়ে দেয়।তার এ কামড়টি মোটেও আস্তে ছিলো না। যথেষ্ট জোরে কামড়ে দেওয়ায় জায়গাটি লাল হয়ে গিয়েছে সেই সাথে দাঁতের ছাপ ও বসে গিয়েছে।
ব্যথায় আবারও চোখজোড়া ঝাপসা হয়ে গিয়েছে মিয়ামির কিন্তু কোনো শব্দ করে না সে।আর্শ আজও তাকে ব্যথা দিবে তা সে আগের থেকেই আশা করেছিলো।
কামড় বসিয়ে মিয়ামির থেকে সরে এসে তার মুখ পানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আর্শ।মেয়েটির ঠোঁটে আজও হাসি লেগে আছে। আর্শ নির্বাক তাকিয়ে আছে মিয়ামির দিকে।শত ব্যথা পেয়েও মেয়েটি কি করে নিজের ঠোঁটে হাসি ধরে রাখে তা বোধগম্য হয় তার।মিয়ামি তার ঠোঁটে হাসি নিয়েই বলে ওঠে,
-চুমুর সাথে কামড় ফ্রি ছিলো জানলে এই অফারটি নিতে এতো দেরি করতাম না।তা স্যার,আর কি কি অফার আছে আপনার কাছে?
মিয়ামির এমন কথায় পুরোই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় আর্শ। মিয়ামি এমন কিছু বলবে তা পুরোই আশাতীত ছিলো তার। মিয়ামি আর্শের উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে আবারও বলে ওঠে,
-আচ্ছা আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।আসি।অফার নিয়ে পরে আলাপ-আলোচনা করবোনে,ওকে?
কথাটি বলেই আর্শের দিকে তাকিয়ে একটি চোখ মেরে নিজের ক্লাসরুমে যাওয়ার উদ্দেশ্য অগ্রসর হয় মিয়ামি।

!!
মন টা আজ ভালো নেই আর্শির।ছেলে টা ওকে ঠিকই ভিডিও কল দিয়েছিলো কিন্তু সে কলটি ৭-১০ সেকেন্ড ও স্থায়ী হয়নি।কলটি রিসিভ করার পর নেট প্রবলেম হওয়ায় কিচ্ছুটি দেখার সুযোগ হয়নি তার। কত উতলা হয়ে ছিলো সে এই ভিডিও কল নিয়ে! কিন্তু নেটের জন্য সব ভেস্তে গেলো।
হটাৎ ফোনে ম্যাসেজ আসার শব্দ কানে আসতেই মন খারাপের দেশ থেকে বিদায় নিয়ে মন ভালোর দেশে পা ফেলে আর্শি ঠোঁটে এক চিলতে হাসি টেনে ফোনটি হাতে নেয়।
“কি করছো?”(বিহান)
“এইতো বসে আছি,আপনি?”
“বাইরে।এখানে খুব বৃষ্টি হচ্ছে।”
“এই রাতে আপনি বৃষ্টিতে ভিজতেছেন?”
ম্যাসেজটি পাঠানোর সময় আর্শির চোখমুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট প্রকাশ পেলো। কিন্তু তা বিহানের দৃষ্টির অগোচরেই রয়ে গেলো।কারণ ম্যাসেজে শুধু শত শব্দে গঠিত বাক্যই প্রেরিত হয়।চিন্তিত কন্ঠস্বর, ভালোবাসায় টইটম্বুর গভীর চোখের চাহনি তো প্রেরণ করা যায় না।
আর্শির প্রশ্নের উত্তরে বিহান বলে ওঠে,
-হুম।ভালো লাগতেছে খুব।
চিন্তিত হলেও বিহানকে আর বাঁধা দিয়ে কিছু বলতে ইচ্ছে হলো না আর্শির।জীবনটা তো উপভোগ করার জন্যেই! উপভোগ করতে যেয়ে যদি একটু জ্বর হয় তো ক্ষতি কি? ১-২ দিনে জ্বর তো ঠিক হয়েই যাবে কিন্তু যে আনন্দ টা বিহান এখন কুড়িয়ে নিচ্ছে এই বহু মূল্যবান মূহুর্তটা জীবনে আর তো আসবে না।
বিহানের কথার উত্তরে আর্শি ঠোঁটে একটু হাসি টেনে টেক্সট করে,
-আচ্ছা আচ্ছা!
আর্শি ম্যাসেজটি পাঠাতেই বিহান ৩-৪ টির মতো ছবি পাঠায় ওকে।ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে বিহান ও তার বন্ধুরা বৃষ্টিতে ভিজতেছে।সবাই মিলে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে নিজেদের মধ্যে মজা করে বৃষ্টি বিলাসে ব্যস্ত।

!!
সকালের রোদ চোখের উপর পরতেই ধীরে ধীরে ঘুম
ভেঙে যায় মিয়ামির।চোখজোড়া খুলে নিজের ফোন টা খুঁজে তা হাতে নিয়ে প্রতিদিনের মতো আজও কল দেয় আর্শকে।আর প্রতিদিনের মতো আজও আর্শ তার কল ধরে নাহ।মন খারাপ হলেও তা পাত্তা না দিয়ে চোখজোড়া বুজে নেয় মিয়ামি।ওমনি তার মনে পরে আজ তো আর্শের বাসায়ই থাকার কথা কারণ আজ আর্শের ছুটির দিন।এটি মনে হতেই চটজলদি চোখজোড়া মেলে ফোনটি হাতে নিয়ে আর্শির নাম্বার ডায়াল করে মিয়ামি।২য় বার কল দিতেই আর্শি কল রিসিভ করে ঘুমু কন্ঠে বলে ওঠে,
-সকাল সকাল কি হইছে তোর?
-নবাবজাদি, কয়টা বাজে?এখনো ঘুমাস কেন?ওঠ!
-তোর মধ্যে কি আমার মার আত্মা ঢুকছে?মার মতো পেঁচাল পারতেছিস কেন?
-আজাইরা পেঁচাল রাখ! তোর ভাইয়ের রুমে যেয়ে দেখতো কি করতেছে ও?
বিরক্ত কন্ঠে আর্শি বলে ওঠে,
-তুই কল দিয়ে ওরে জিগা।আমি এখন উঠতে পারবো না।
-আরেহ আমার জামাই অনেক সঞ্চয়ী, বুঝলি? বউয়ের কল কখনো রিসিভ করে না,বউয়ের টাকা কাটবে তাই।
মিয়ামির কথাটি শুনেই ওঠে বসে আর্শি।মিয়ামির কথার অর্থ এই যে তার ভাই সবসময়ই মিয়ামির কল উপেক্ষা করে।সাথে সাথেই মন খারাপ হয়ে যায় আর্শির।নিরাশ কন্ঠে সে বলে ওঠে,
-ভাইর এতো উপেক্ষা,অবহেলার পরও তুই কেন ওরে এতো ভালোবাসিস?
-আমরা কেউকে ইচ্ছে করে ভালোবাসতে পারি না। ঠিক তেমনই আমরা নিজের ইচ্ছেতে কেউকে ভুলতেও পারি না।মন,অনুভূতি এসব আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
মিয়ামির কথা শুনতে শুনতেই আর্শের কক্ষ অব্দি এসে পৌঁছায় আর্শি।দরজা খোলা থাকায় আর্শি সোজা রুমে ঢুকে পরে।আর্শ বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে ঘুমোচ্ছে।তা দেখে আর্শি মিয়ামিকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-তোর হবু জামাই ঘুমাইতেছে।
-দোস্ত,প্লিজ কয়টা ছবি তুলে পাঠা না!কাছ থেকে দূর থেকে অনেক গুলো ছবি তুলে পাঠাবি, ঠিক আছে?
-হো, আমি তো তোর কিনা গোলাম। পারমু না এতো কিছু করতে।
-তোর হবু বড় ভাবীর কথা শুনবি না?বড়দের কথা না শুনলে পাপ হয় পাপ।
-থাম, পাঠাইতেছি।

কয়েক মিনিট অতিবাহিত হতেই আর্শি বেশ কয়েকটি ছবি পাঠায় মিয়ামিকে।আর্শি ছবি পাঠাতেই মিয়ামি ঠোঁটে হাসি টেনে ছবিগুলো দেখা শুরু করে।এতো বছরে বেশ কয়েকবার ঘুমন্ত আর্শকে দেখেছে মিয়ামি কিন্তু তাও দেখার লোভ এক বিন্দু পরিমাণ ও কমে না তার।প্রতিটি ছবি জুম করে করে দেখছে সে আর ঠোঁটের হাসিটি প্রসস্থ হচ্ছে বারংবার।ইশ! এখন আর্শের সামনে থাকলে নির্ঘাত তার এই ফোলা চোখ দুটোয় ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দিতো মিয়ামি।

চলবে

[আচ্ছা আমার পাঠক-পাঠিকাদের মাঝে কেউ কি আছেন যাদের ফেসবুকে পরিচয়ের মাধ্যমে প্রেম হয়েছে?বা ফেসবুকে পরিচয় হয়ে বিয়ে?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here