প্রতিশোধ_অতঃপর_ভালোবাসা
#পার্ট-০১+২
#জান্নাতুল_ফেরদৌস
অরিত্রির শাড়িটা খুলে নিতেই অরিত্রি চিৎকার দিয়ে উঠলো।নিলয় জোরে হেসে উঠলো।অরিত্রি নিলয়ের পৈশায়িক হাসির আওয়াজে কেপে উঠলো।নিলয় এক নজর দেখলো অরিত্রির পুরো শরীর।তারপরেই শাড়িটা ফেরত দিয়ে দিলো।তারপর অরিত্রির পাশে বসে পরলো।অরিত্রি কান্না করছে,নিলয় সিগারেট খাচ্ছে।যে লোকটাকে ত্রিশ মিনিট আগেও ঠিক মত চিনতো না অরিত্রি,সেই লোকটার সাথে একই রুমে আছে অরিত্রি।তাও এত রাতে।ইজ্জত হারানোর ভয় অরিত্রিকে চেপে ধরলো।নিলয় এর থেকে বাঁচার জন্য মিনতি করলো নিলয়কে।
নিলয়-তোমাকে ভোগ করবো বলে এখানে আনি নি অরিত্রি।
অরিত্রি-আমাকে যেতে দিন প্লিজ।আমি আপনার কী ক্ষতি করেছি।
নিলয়-বললাম তো তোমার কোনো ক্ষতি করবো না আমি।আগামীকাল থাকবা।আগামী পরশু তুমি চলে যাবে।
অরিত্রি-মানে?
নিলয়-অরিত্রি তোমার বাবার নাম আশরাফ চৌধুরী।
অরিত্রি-হুমম।
নিলয়-তোমার ভাইয়ার নাম অনি চৌধুরী।
অরিত্রি-আমার সম্পর্কে এত কিছু কেন জানলেন?
নিলয়-ভাবছো আমি তোমার শরীর টা ভোগ করতে এখানে এনেছি তোমাকে?অরিত্রি আমাকে যতটা খারাপ ভাবছো ততোটা না আমি।
অরিত্রি-তাহলে কেনো এনেছেন আমাকে?
নিলয়-একটা গল্প বলতে চাই তোমাকে।অরিত্রি গল্পটা শুনবা তো?
অরিত্রি-কিসের গল্প?
নিলয়-শুনবা তো?
অরিত্রি-হুমম।
ভয়ে ভয়ে নিলয়কে বললো শুনবে।কিন্তু অরিত্রি এখনো ভয় পেয়ে যাচ্ছে নিলয়কে।নিলয়ের কথা শুনেও বিশ্বাস করতে পারছে না নিলয়কে।
নিলয়-জানো অরিত্রি আমি তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়তাম।আমার বোন অনার্সে পড়তো।আমার বোনের নাম নিহিতা।ওর সাথে অনেক দুষ্টামি করতাম।আমার সব কিছু ছিলো আমার কলিজার টুকরাটা।কিন্তু একদিন কেউ আমার বোনটাকে কেড়ে নিলো আমার থেকে,আমার পরিবার থেকে হারিয়ে গেলো আমার বোনটা।
সেদিন টা ছিলো নিহিতা আপুর বান্ধবীর বিয়ে।আপু এসে বললো….
নিহিতা-বাবা আমি আমার বান্ধবীর বিয়েতে যাবো আজকে।আমাকে একটু বিয়ে বাড়িতে দিয়ে আসতে পারবা?
বাবা-তুই নিলয়কে নিয়ে যা।আমার অফিসে কাজ আছে মা।
নিহিতা-ঠিক আছে বাবা।
নিহিতা নিলয়কে বললো কিন্তু নিলয় রাজি হলো নি।ওর ক্রিকেট খেলা ছিলো বলে চলে গেলো।বাড়ি থেকে একা বের হয়ে গেলো নিহিতা।
পরেরদিন সকালে….
মা-নিহিতা আমাকে একটা কলও দিলো না।আগে কোথাও এক রাত থাকলেও আমি রাতে খাবার খেয়েছি কিনা।ঔষধ খেয়েছি কিনা।ওর ভাই খেয়েছে কিনা সব খবর নিতো।মেয়েটার কোনো সমস্যা হলো না তো?তুমি আর নিলয় একটু ওর বান্ধবীর বাসায় যাও।
বাবা-চিন্তা করো না।আমি ওর বান্ধবীর বাসায় গিয়ে দেখে আসতেছি।
নিলয় আর ওর বাবা বের হয়ে গেলো।বান্ধবীর বাসায় গিয়ে শুনলো নিহিতা নেই ওইখানে।নিহিতা নাকি গতকাল বিয়ে বাড়িতে আসে-ই নাই।পাগলের মত নিলয় আর ওর বাবা ছুটে গেলো পুলিশ স্টেশনে।
অরিত্রি-তারপর আর পাননি নিহিতা আপুকে।
নিলয়-এক দিন কেটে যাওয়ার পর আপুর খোজ মেলে একটা হাসপাতালে।বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার পথে-ই আপুকে তুলে নিয়ে যায় কয়েকজন ছেলে।রাত ভর ধর্ষন করে ওদের চাহিদা মিটিয়ে আপুকে রেখে চলে যায়।তারপর হাসপাতালে আপু পুলিশকে সবটা জানায়।কিন্তু বিচার হয় নি ওদের।
অরিত্রি-ওরা কারা ছিলো?
নিলয়-জানবে তুমি সবটা।চুপ চাপ শুনো।
অরিত্রি চুপ হয়ে গেলো।নিলয় আবারও বলা শুরু করলো।
— পরে আপুকে বাড়িতে আনি।আপু খুব ভেঙ্গে পরলো।বের হতো না ঘর থেকে।চুপ চাপ থাকতো,মাঝে মধ্যে কান্নার শব্দ ভেসে আসতো আপুর রুম থেকে।পাড়া প্রতিবেশিরাও বসে থাকলো না।কথা শুনাতে লাগলো আমাদের।জানো তো আমাদের দেশে ধর্ষক বুক ফুলিয়ে হাটতে পারে,আর ধর্ষিতা ঘরের কোনো থাকলেও তাকে কথা শুনানোর মানুষের অভাব পড়ে না।ওই যে উপরের পাখাটা দেখছো।আমার আপু এই ফ্যানটাতে ঝুলে আত্নহত্যা করছিলো।
উপরের পাখার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে অরিত্রি।আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না।কেঁদে উঠলো অরিত্রি।কেনো এতটা অসহায় একজন ধর্ষিতা।কেনো সমাজ বার বার একজন ধর্ষিতাকেই দোষ দিবে।হঠাৎ নিলয় জড়িয়ে ধরলো অরিত্রিকে।নিলয়ের চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।অরিত্রি এতক্ষন নিলয়কে ভয় পেলেও এখন কেনো জানি ভয় লাগছে না।ভয়ের চেয়ে নিলয়ের প্রতি মায়া লাগতে শুরু করলো অরিত্রির। নিলয় অরিত্রিকে ছেড়ে দিয়ে বললো আরেকজনের কথা বলা-ই হলো না।ধর্ষকদের কথা।
অরিত্রি-বলো।
নিলয়-তোমার ভাই অনি আর ওর বন্ধুরা তিয়াস,তাসিন।
অরিত্রি-এটা কী বলছেন আপনি?আমার ভাই খুব ভালো.
নিলয়-তখন তুমি হয়ত একটু ছোট ছিলা।কিন্তু তোমার মনে থাকার কথা তোমার ভাই জেলে ছিলো।
অরিত্রি-আম্মু বলছিলো কে জানি মিথ্যে মামলায় ভাইয়াকে পাসিয়ে দিয়েছিলো।
নিলয়-তোমার ভাইয়াকে মিথ্যে মামলা না আমার বোনের ধর্ষন মামলার আসামী করা হয়।কারণ ক্লাশে যাওয়ার প্রথম দিনেই আপুকে বিরক্ত করা শুরু করে তোমার ভাইয়া।
অরিত্রি-আমার ভাইয়া এইসব করতে পারে?
নিলয়-আমি মিথ্যা বলছি না অরিত্রি।তোমার ভাইয়ার কাজের শাস্তি সে পেলো না।আর আমার আপুটা বিনা দোষে মরে গেলো।
অরিত্রি নিলয়ের কথায় চুপ হয়ে গেলো।নিজের ভাই এর এমন রূপ দেখবে ভাবতে পারে নি অরিত্রি।
নিলয়-আমি তোমাকে এখানে এনেছি চার বছর আগে আমার বোনের সাথে যা হয়েছে তা তোমার সাথে করতে।কিন্তু আমার সে সাহস নেই অরিত্রি।
অরিত্রি-নিলয় আমি যদি তোমাকে তা করার অধিকার দেয়?
নিলয়-আবেগে সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো না অরিত্রি।আমি তোমাকে ছেড়ে দিবো শুধু তোমার বাবা মা আর ভাইকে একটু টেনশন দিয়ে।এখন ঘুমাও।
নিলয় চলে গেলো।অরিত্রি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে। একটা ছেলে একটা মেয়েকে এতটা কাছে পেয়েও কোনো ক্ষতি করলো না।অরিত্রি একটু অবাক হলো।নিলয়ের সব গুলো কথা মনে পরতেই অরিত্রির রাগ বাড়তে লাগলো অনির উপর।
চলবে…..
লেখিকাঃজান্নাতুল ফেরদৌস।
#প্রতিশোধ_অতঃপর_ভালোবাসা
#পার্ট_০২
#জান্নাতুল_ফেরদৌস
নিলয় চলে গেলো।অরিত্রি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে। একটা ছেলে একটা মেয়েকে এতটা কাছে পেয়েও কোনো ক্ষতি করলো না।অরিত্রি একটু অবাক হলো।নিলয়ের সব গুলো কথা মনে পরতেই অরিত্রির রাগ বাড়তে লাগলো অনির উপর।
পরেরদিন….
অরিত্রি-এই যে আমাকে তো নিয়ে আসলেন এখানে।আমার যে ক্ষিধা লাগছে তার জন্য কিছু খাবার তো দিবেন।
নিলয়-সিগারেট আছে খাবা?
অরিত্রি রেগে নিলয়ের দিকে তাকাতেই নিলয় হেসে উঠলো।অরিত্রি মুখ গোমড়া করে বললো ক্ষিধা লাগছে।
নিলয়-ভয় লাগছে না?
অরিত্রি-না।
নিলয়-আচ্ছা আমি খাবার নিয়ে আসতেছি।শুনো দরজা আটকে রাখবা ভিতর থেকে।কেউ আসলেও খুলবে না।সবাই ভাবে এখানে ভূত আছে।
ভূতের কথা শুনেই অরিত্রি লাফ দিয়ে এসে নিলয়কে জড়িয়ে ধরলো।
অরিত্রি-ভূ..ভূ..ভূতত।আমাকে রেখে যাওয়ার দরকার নেই।খাবারেরও দরকার নেই।প্লিজ এখানেই থাকো।
নিলয়-আরে অরিত্রি এটা তো আমি সবাইকে বলেছি।কিছু নেই এখানে.
অরিত্রি-আমার ভয় লাগছে।তাড়াতাড়ি চলে আসবে তো?
নিলয়-হুম আমি যাবো আর খাবার নিয়ে চলে আসবো।
অরিত্রি নিলয়কে ছেড়ে বসলো।নিলয় বের হয়ে গেলো।কিছুক্ষনের মধ্যেই খাবার নহয়ে আসলো।অরিত্রিকে খেতে দিয়ে সিগারেট ধরালো নিলয়।অরিত্রি হাত থেকে সিগারেটটা নিয়ে নিলো।
নিলয়-এটা কী হচ্ছে?
অরিত্রি-এইগুলা খাবে না তাই নিয়ে নিলাম।
নিলয়-তুমি আমার বউ না জিএফ যে আমাকে আদেশ করতেছো।
অরিত্রি-দুই দিনের বউ।
নিলয়-দুই দিনের বউ হয় নাকি?
অরিত্রি-চাইলেই হতে পারে।
নিলয়-বউ হওয়ার এত শখ?
অরিত্রি-হুম অনেক শখ।
নিলয়-এখন কথা না বলে সিগারেট দাও।
অরিত্রি নিলয়ের সামনে এসে আলতো করে ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে দিলো।কিছুক্ষন পর ছেড়ে দিয়ে বললো,কোনটা বেশি মিষ্টি?
নিলয়-বলা মুশকিল।
অরিত্রি রেগে নিলয়ের দিকে তাকাতেই নিলয় বললো,আরে সারা জীবন তো আর মিষ্টিটা পাবো না।তাই আমার সিগারেটেই ভালো।
অরিত্রি মুখ ফুলিয়ে সিগারেটটা নিলয়ের হাতে দিয়ে বসে গেলো।নিলয় আর বসলো না অরিত্রির সামনে থেকে বের হয়ে আসলো।বের হয়েও অরিত্রিকেই ভাবতে লাগলো।মার্কেটে গিয়ে একটা ড্রেস কিনে বাড়ি ফিরলো নিলয়।এসেই দেখলো অরিত্রি কান্না করছে।
নিলয়-কী হয়েছে অরিত্রি।
নিলয়কে দেখেই জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো অরিত্রি।
নিলয়-বলো কী হইছে?
অরিত্রি-আমাকে রেখে কই গেছিলা।আমি একা থাকতে পারি না।আমার ভয় লাগে।আর তুমি আমাকে রেখে চলে যাও।
নিলয়-তার জন্য রাগ করছো।আর যাবো না সরি।দেখো তোমার জন্য ড্রেস আনতে গেছিলাম।
অরিত্রির হাতে ড্রেসটা দিয়ে অরিত্রির চোখের পানি মুছে নিলো নিলয়।অরিত্রি ঠোঁট ফুলিয়ে আবারও কান্না করতে লাগলো।নিলয় বুকে জড়িয়ে নিলো অরিত্রিকে।নিলয়ের বুকেই কান্না করে যাচ্ছে অরিত্রি।নিলয় হাসছে মেয়েটার পিচ্চি স্বভাব দেখে।
পরেরদিন…
অরিত্রি-আমি বলছি তো আমি বাড়ি যাবো না।
নিলয়-তোমার বাবা মা চিন্তা করছে তো।
অরিত্রি-আমি যাবো না,যাবো না,যাবো না।
নিলয়-কই থাকবা?
অরিত্রি-এখানে থাকবো।
নিলয়-এখানে ভূত আসবে।
অরিত্রি-তারপরেও থাকবো।
নিলয়-বাহ এত সাহস?
অরিত্রি-হুহ।
নিলয়-আচ্ছা তুমি থাকো।আমি চলি।
নিলয়ের কথা শুনেই ভ্যা করে কেঁদে উঠলো অরিত্রি।নিলয় হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পরলো।অরিত্রি এই সুযোগে নিলয়ের বুকের উপর উঠে নিলয়ের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরলো।
নিলয়-কী হচ্ছে।
অরিত্রি-আমি এখানে থাকবো তোমার বুকে।
নিলয়-আমি রাখবো না।
অরিত্রি-কেন আমি কী দেখতে পচা?
নিলয়-জানো না তুমি দেখতে একদম পেত্নির মত দেখতে।
অরিত্রি-আমি পেত্নি হলে তুই পেত্নির বর ভূত।
নিলয়-তোমার মত পেত্নির বর আমি হবো না।
অরিত্রি-কেনো হবা না?
নিলয়-ওই যে তুমি পেত্নির মত দেখতে।
অরিত্রি-আচ্ছা আমি সুন্দরী হয়ে গেলে তো বিয়ে করবা।
নিলয়-ভেবে দেখবো।
অরিত্রি- ঠিক আছে আমি সুন্দরী হবো।
নিলয় অরিত্রির কথা শুনে জোরে হেসে উঠলো।অরিত্রি আবার নিলয়ের দিকে চোখ বড় করে তাকালো।
নিলয় হাসতে হাসতে বললো,পাগলি তুই এমনিই সুন্দরী।আর সুন্দরী হতে হবে না।
হঠাৎ দরজা ভাঙ্গার আওয়াজ শুনে দুই জনেই চমকে উঠলো।নিলয় বুঝতে পারলো কেউ তার খোজে-ই এসেছে।
চলবে…..
লেখিকাঃজান্নাতুল ফেরদৌস।