প্রতিশোধ অতঃপর ভালোবাসা পর্ব ৯

প্রতিশোধ_অতঃপর_ভালোবাসা
#পার্ট_০৯
#জান্নাতুল_ফেরদৌস
সকালে ঘুম থেকে উঠেই অরিত্রি অনিকে খুজতে শুরু করলো।কিছুক্ষনের মধ্যে পেয়ে যেতেই অনিকে নিয়ে রুমে বসালো।
অরিত্রি-আজ নাকি আরিশা ভাবি ঐশ্বর্যকে নিয়ে চলে আসবে।।আরিশা নাকি নিহিতা কে তোমার বউ সত্যি করে বলো তো।
অনি-আমি আরিশাকে ধর্ষন করি নি রে।করেছিলো অরূপ।অরূপ এখন বিদেশ থাকে ওর বউ নিয়ে।
অরিত্রি-অরুপ ভাইয়ার কাজের দায় কেনো মাথায় নিতে গেলা?
অনি-কী করবো বল।অরূপের বাবা আমাদের ব্যবসায় হেল্প করছিলো।প্রায় ৩ কোটি টাকা দিয়েছিলো বাবাকে।যে টাকাটা আরিশাকে বিয়ে করলেই শোধ হয়ে যেতো সব টাকা।তখন বাবার অবস্থাও ভালো ছিলো না,তাই আরিশাকে বিয়ে করার অভিনয় করি আমি।এইসব ব্যাপারে বাবাও জানে না কিছু।এইসব আমার আর আঙ্কেলের মধ্যে হয়ছিলো।সবাই জানে আমি আরিশাকে ধর্ষন করেছি,তারপর জোর করে বিয়ে করছি।তোরাও এটা জানলি।আমি খারাপ না রে বোন,তখন আমার উপর তোদের দায়িত্ব ছিলো।
অরিত্রি-এইরকম টা কেন করলি ভাইয়া?
অনি-আমি ভবিষ্যতের চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম।তার উপর বাবার এত টাকা ঋণ।তাই বিয়ে করার অভিনয় করতে হয়।সত্যি বলতে বিয়ে হয় নাই,সবার সামনে অভিনয় এটা।তবে এইসবের আগেই আমি নিহিতাকে বিয়ে করছিলাম।এটা আরিশা জানে।ও বলছে নিহিতা ফিরে আসলেই চলে যাবে।
অরিত্রি-নিহিতা ভাবি যদি তোর কথা না শুনে।
অনি-নিহিতা আমার কথা শুনবে আমি জানি।আমরা দুই জন দুইজনকে অনেক ভালোবাসি রে।
অরিত্রি-আর ঐশ্বর্য?
অনি-ওরে আমি আমার পরিচয় দিয়ে বড় করবো।আরিশা কোনো দিনেই আমার কাছে স্ত্রীর অধিকার চাই নি,শুধু ওর সন্তান ঐশ্বর্য যেনো বাবার পরিচয়টা পায় এইটুকুই চেয়েছিলো।
অরিত্রি-আরিশা কখনো আমাকে এইগুলা বলে নাই কেন?
অনি-আমিই নিশেধ করছিলাম।কেউ জানলে আমি টাকা গুলো পেতাম না।আর আরিশাও এই বাড়িতে স্ত্রীর অধিকার পেতো না।
অরিত্রি-সরি ভাইয়া আমি না জেনে এত কিছু বলে পেলছি তোমাকে।
অনি জড়িয়ে ধরলো অরিত্রিকে।মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,না রে বোন তুই তো আর এইসব কিছু জানতি না।আচ্ছা বাদ দে নাস্তা রেডি আছে,খেতে আয়।
বিকেলে…
আরিশা ঐশ্বর্য কে নিয়ে ফিরে আসতেই অনি বিপদে পড়ে গেলো।নিহিতা আরিশাকে কে দেখে অনিকে জিজ্ঞেস করলো এই মেয়েটা কে?
অনি-নিহিতা আমি তোমাকে সবটা বলবো তুমি চলো আমার সাথে।
নিহিতা-আমি জানতে চাইছি ওই মেয়েটা কে?
ঐশ্বর্য-বাবা আমাকে আদর করবে না??
কথাটা শুনেই নিহিতা অবাক হয়ে অনির দিকে তাকালো।চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়ে পরলো।
নিহিতা-আমাকে তুমি ঠকালে অনি?এতদিন তোমাকে আমি ভুল চিনলাম।
অনি-নিহিতা আমার কথাটা শুনো।
নিহিতা অনির গালে থাপ্পড় বসিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।অনি ফ্লোরে বসে পরতেই অরিত্রি নিহিতাকে ডাকতে ডাকতে বের হয়ে গেলো।আরিশা পিছন থেকে আসতেই অনি দাঁড়ালো।আরিশা অনির গালে হাত দিতে গেলেই গেলেই অনি হাত ধরে পেললো।
অনি-আমার সবটা শেষ করে দিয়ে এখন কী জন্য আসছো।আমাকে সহানূভুতি দেখাতে হবে না।
অনি চলে গেলো।অরিত্রি নিহিতাকে ডাকলেও নিহিতা গাড়িতে উঠে চলে গেলো।অরিত্রি রুমে ফিরে আসতেই আরিশা আসলো।
আরিশা-অরিত্রি নিহিতার ফোন নম্বরটা আছে?
অরিত্রি-হুম আছে।
আরিশা-আমাকে দাও।
অরিত্রি-তোমার কল ধরবে?
আরিশা-বুঝানোর চেষ্টা করবো।যে লোকটা আমার সন্তানের পরিচয় দিলো,তাকে এত কষ্ট পেতে দেখতে পারবো না।
অরিত্রি-আচ্ছা দিচ্ছি।
অরিত্রি ফোন নম্বরটা দিতেই অনির রুম থেকে আওয়াজ শুনা গেলো।অরিত্রি,আরিশা দৌড়ে যেতেই দেখলো ঐশ্বর্য কান্না করতেছে।
অরিত্রি-কী হইছে আমার সোনা পাখি টার?
ঐশ্বর্য-বাবাই পচা।আমাকে বকে দিয়েছে।বাবাই পচা।
অরিত্রি-ভাইয়া তুমি এই ছোট মেয়েটার সাথে এই রকম বিহেভ করতাছো কেনো?
অনি বিছানা থেকে উঠে ঐশ্বর্য কে জড়িয়ে ধরলো।
অনি-সরি পচা বাবাইটা কান ধরতেছে।আর বকবে না।
ঐশ্বর্য চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো, বাবাই কান্না করে না।তোমাকে কে মেরেছে?
আরিশা-ঐশ্বর্য বাবাইকে একটু একা থাকতে দাও।তুমি চলো আমার সাথে।দুইটা চকলেট দিবো।
ঐশ্বর্য-চকলেট।আমি চকলেট খাবো।
কোল থেকে নেমে ঐশ্বর্য আরিশার সাথে চলে গেলো।অরিত্রি অনির পাশে এসে বসতেই অনি অরিত্রির কোলে শুয়ে পরলো।
অনি-বোন আমাকে একটু ঘুম পাড়িয়ে দে না।আমার ঘুম আসতেছে না।দেখ ঘুমের ঔষধ গুলোও ঘুম দিতে পারছো না আমাকে।
অরিত্রি-ভাইয়া তুমি ঘুমের ঔষধ খাইছো।
অনি-হুম আমার অনেক ঘুমের দরকার।
অরিত্রি-ভাইয়া উঠো।
অনি-না রে আমি ঘুমাবো।
অরিত্রি-চুপ উঠো তুমি।
অনিকে নিয়ে নিচে নামছিলো অরিত্রি।ঘুমে অনি পড়ে যেতে নিলেই অন্য পাশ দিয়ে আরিশা এসে ধরলো।
অরিত্রি-ভাবি ভাইয়া ঘুমের ঔষধ খেয়ে পেলছে।তুমি যাবে আমার সাথে?
আরিশা অনির দিকে তাকাতেই চোখে পানি চলে আসলো।যে লোকটা তার এত বড় উপকার করলো,আজ আরিশার জন্যই তার এত বড় ক্ষতি হলো।হাসপাতালে বসে থাকতে পারলো না আরিশা।নিলয়ের বাড়ির ঠিকানা নিয়ে নিহিতা আনতে বের হয়ে গেলো আরিশা।নিলয়ের বাড়িতেই নিহিতাকে পেয়ে গেলো আরিশা।
আরিশা-নিহিতা আমি আরিশা।
নিহিতা-হুম আমার জীবনটা ধ্বংস করা ব্যাক্তি।
আরিশা-নিহিতা প্লিজ আমার কথাটা শুনো।
নিহিতা-কী শুনবো।আমার অনিকে যাকে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসতাম তাকে কেড়ে নিয়েছো তুমি।
আরিশা-অনি তোমার-ই আছে।
নিহিতা-আমি কোনো বাচ্চা মেয়ে না আরিশা।
আরিশা-অনি হাসপাতালে আছে।প্লিজ তুমি চলো।
আরিশার কথা শুনেই নিহিতা পাগলের মত হয়ে গেলো।আরিশার সাথেই বের হয়ে গেলো বাড়ি থেকে।নিহিতার পিছনে নিলয়ও আসছিলো।হাসপাতালে ডুকতেই অরিত্রিকে দেখতে পেলো।চেয়ারে বসে মুখ লুকিয়ে কান্না করছিলো অরিত্রি।
চলবে…..
লেখিকাঃজান্নাতুল ফেরদৌস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here