প্রতিশোধ অতঃপর ভালোবাসা পর্ব ৮

প্রতিশোধ_অতঃপর_ভালোবাসা
#পার্ট_০৮
#জান্নাতুল_ফেরদৌস
অরিত্রি ভাবি বলেই নিহিতাকে জড়িয়ে ধরলো।নিহিতা প্লেটটা রেখে অরিত্রিকে জড়িয়ে ধরলো।কিন্তু মুহুর্তটা বেশিক্ষন টিকলো না।হঠাৎ করেই মুখ চেপে ধরে অরিত্রি দৌড়ে চলে যেতেই নিহিতা পিছন পিছন গেলো।অরিত্রি বমি করছে দেখে নিহিতার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো।
নিহিতা-আমার ভাই টা এত খারাপ হতে পারে কখনো ভাবি নি।
একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো। অনি এসে নিহিতার পাশে দাঁড়ালো।
নিহিতা-আমি যেটার আশংকা করছিলাম, ওইটাই মনে হয় হতে চলছে অনি।
অনি-আগামীকাল যাবে ডাক্তারের কাছে?
নিহিতা-হুম যেতে তো হবেই।অরিত্রি আমারও বোনের মত।
পরেরদিনেই সবার চিন্তা আরো বাড়িয়ে দিলো রিপোর্ট পাওয়ার পরেই।অনি ভেঙ্গে পরলো।তার জন্যই তার আদরের বোনটার এই অবস্থা।বোন তো কলিজার টুকরা হয়।অরিত্রিকেও অনি কলিজার টুকরা ভাবে।
বাড়িতে ফিরে এসেই অরিত্রিকে নিয়ে বসলো অনি।
অনির বাবা-মা তোর ভবিষ্যতটা এইভাবে নষ্ট হয়ে যাক আমরা কেউই চায় না।তাই এই বাচ্চাটাকে তুই নষ্ট করে দে।
অরিত্রি-কী বলছো এইসব বাবা?
নিহিতা-অরিত্রি বাবা ছাড়া এই সন্তানের কী পরিচয় দিবা তুমি বলো।
অরিত্রি-নিলয়কে বলো না আমাকে মেনে নিতে।
অনি-নিলয় তোকে মেনে নিলে এভাবে বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারতো না।
অনির আম্মু-মা রে তুই কী নিজের কথাটা একবারও ভাববি না।
অরিত্রি-আম্মু ভাবার কিছু নেই।প্লিজ আমাকে জোর করো না।আমি আমার পরিচয়ে বড় করবো ওরে।কারো হেল্প চায় না আমার।
অরিত্রি উঠে চলে গেলো।অনি মাথা নিছু করে হাত দিয়ে মুখ ডেকে বসে রইলো।নিহিতার চোখ দিয়ে আপনা আপনি বৃষ্টি ঝরতেছে।
অনির মা-তুই যদি এই মেয়েটাকে বিয়ে না করতি তাহলে আমাদের এত দুর্গতি দেখতে হতো না অনি।
মায়ের কথাতে অনি মাথা তুললো।অনির আম্মু চলে যাচ্ছে রুমে।নিহিতার দিকে তাকালো।কিন্তু নিহিতার চোখের দিকে তাকাতে পারলো না অনি।নিহিতাকে কষ্টে দেখতে পারে না অনি।তাই তাকালো না।নিহিতা মুখ তুলে বললো,
–চলো নিলয়ের সাথে কথা বলি।
অনি-কেনো?
নিহিতা-অরিত্রির অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
অনি-তোমার ভাই শুনবে?
নিহিতা-বলে তো দেখি।
অনি-আচ্ছা।
নিহিতা-অরিত্রির কাছ থেকে ফোন নম্বরটা আনো।
অনি-ওকে।
নিলয়ের ফোনে কয়েক আার ট্রাই করেও ফোনটা অফ পেলো নিহিতা।অরিত্রির থেকে ঠিকানা নিয়ে অনি আর নিহিতা গেলো অরিত্রির বাড়িতে।কলিং বেল বাজাতেই নিলয় এসে দরজা খুলে অনিকে দেখতে পেলো।
নিলয়-কেনো এসেছেন এখানে?
নিহিতা-তোর সাথে কথা বলতে এসেছি।
নিলয়-তুই কেনো এসেছিস এখানে?
নিহিতা-আমি এখানে এসেছি তার কারণ নিশ্চয়ই তুই জানিস।
নিলয়-বাইরে চল।
অনি,নিহিতা আর নিলয় গিয়ে গার্ডেনের একটা টেবিলে বসলো।
অনি-তুমি আমার বোনের সাথে এটা ঠিক করছো নিলয়?
নিলয়-আপনি আমার বোনের সাথে সহ আমার পুরো পরিবারের সাথে যা করেছেন তা কী ভুল ছিলো না?
নিহিতা-অনি কী করেছে?
নিলয়-শুধু উনি না,তুইও তো করলি।তোর জন্য আম্মু মারা গেছে,বাবা পাগল হয়ে আছে।
নিহিতা-তুই কী ভাবছিস আমার জন্য আম্মু মারা গেছে?
নিলয়-তোর জন্যই তো আম্মু সুসাইড করলো।
নিহিতা-তোকে বোকা বানানো খুব সহজ।আমাদের বাবা মায়ের উপর কেমন অত্যাচার করতো ভুলে গেছিস?
নিলয়-না।
নিহিতা-আমি তোকে প্রমানও দিতে পারি বাবা মাকে খুন করেছে।আর সেই খুন কে সবার সামনে আত্নহত্যা বলে চালিয়েছে।
নিলয়-আমি বিশ্বাস করি না।
নিহিতা-তোর বাবাকে বিশ্বাস করিস,অথচ বোনকে না।ভুলে গেলি তুই সব,ছোট বেলায় বাবা কীভাবে আম্মুর উপর অত্যাচার করতো।তুই সব ভুলে গেলি।আর শেষে তুইও বাবার মত প্রতারনা করলি,তাও অরিত্রির মত একটা মেয়ের সাথে।মেয়েটা তোকে এত ভালোবাসতো, তোর জন্য সবাইকে ছাড়লো।শেষে তুই ছেড়ে দিলি ওরে।আমি তো আমার ভাইকে এভাবে চিনতাম না।একটু ভাবিস তুই,বাবার কথায় সবটা করিস না।নিজের জীবন টা নষ্ট করিস না।
নিলয় চুপ হয়ে গেলো।নিহিতা-অনি চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।কিন্তু কিছু দূর গিয়েই অনি আবার নিলয়ের কাছে আসলো।
অনি-একটা কথা বলা হয় নি বলতে আসছি।
নিলয় অনির দিকে তাকাতেই অনি বললো,আমার বোনটার সাথে আরেক জনের জীবনও জড়িয়ে আছে।যার জন্মদাতা তুমি।তাই প্লিজ যা করার ভেবে কইরো।
অনি চলে গেলো।নিলয় কয়েকদিনেই ভালোবেসে পেলছে অরিত্রিকে।গতকালকেই অরিত্রির অনুপস্থিতি নিলয়কে ঘুমাতে দেয় নি।সারা রাত কেটে যাচ্ছিলো ভয়াবহ একাকিত্বের মাঝে।মনের মধ্যে অরিত্রি বড্ড বেশি আনাগোনা করছিলো।শান্তিতে ঘুমাতে দিচ্ছিলো না অরিত্রি।আজকের দিনটাও অরিত্রিকে ছাড়া কাটাতে হচ্ছিলো নিলয়ের।সারাদিন কাটলেও আর এক মুহুর্তও কাটাতে পারছে না নিলয়।
চলবে…..
লেখিকাঃজান্নাতুল ফেরদৌস।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here