প্রতিশোধ অতঃপর ভালোবাসা পর্ব ৭

প্রতিশোধ_অতঃপর_ভালোবাসা
#পার্ট_০৭
#জান্নাতুল_ফেরদৌস
(আজকের পর্বে বিরাট ধামাকা আছে)
অরিত্রি খুশিতে জড়িয়ে ধরলো নিলয়কে। নিলয় হাসলো অরিত্রির বাচ্চামি দেখে।ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে অরিত্রির জন্য সেটা অরিত্রি কখনো-ই ভাবে নি।
১ মাস পর…
নিলয়-অরিত্রি চলো তোমার বাড়িতে যাবো।
অরিত্রি-সত্যি যাবা?
নিলয়-হুম তোমাকে রেখে আসবো।
অরিত্রি-কী বলছো এইসব নিলয়?
নিলয়-অরিত্রি আজ কিছু কথা বলি।
অরিত্রি-কী কথা নিলয়?
নিলয়-আমি তোমাকে ভালোবাসবো এটা তুমি ভাবলা কীভাবে?
অরিত্রি-এইসব কী বলছো নিলয়?
নিলয়-সত্যি কথা বলতেছি।
অরিত্রি-আমি বিশ্বাস করি না।
নিলয়- শত্রুর মেয়েকে আমি ভালোবাসবো। এটার মত হাস্যকর ছাড়া আর কী হতে পারে?জানিস আমি তোর কাছে ভালো হতে চেয়েছিলাম যেনো তোকে ভালোবাসার জালে পাসাতে পারি।তার জন্য তোকে রাতে পেয়েও ছেড়ে দিছিলাম।পরক্ষন-ই তুই আমার ভাবনাটা সত্যি করে দেখিয়ে দিলি যখন তুই আমার সাথে পালাতে চেয়েছিলি।এটা-ই চেয়েছিলাম আমি।তোকে ভূতের ভয় দেখিয়ে আমার কাছে-ই রাখছিলাম,তবে রাতে তোর কোনো ক্ষতি করি নি।যেনো তুই ভাবিস আমি নিলয় খুব ভালো ছেলে।তোকে এত কাছে পেয়েও সুযোগ দিচ্ছিলাম।আর অবশেষে মিথ্যা বিয়ের অভিনয়ও করলাম।আর যখন তুই পুরো পুরি নিঃস্ব তখন তোকে তোর বাড়িতে রাখতে যাচ্ছি যেনো তোর বাবা আর ভাই কে শিক্ষা দিতে পারি।এখন তোর কষ্ট দেখে ওরা কষ্ট পাবে,আর আমি খুশিতে থাকবো।আমার বোনের আত্মা শান্তি পাবে।আমি প্রতিশোধ নিয়েছি।শেষ করে দিছি অনি আর ওর বাবাকে।
নিলয়ের কথা শুনে অরিত্রি ফ্লোরে বসে পরলো।নিলয় হাসতে শুরু করলো।নিলয়ের হাসির আওয়াজ বাড়তে লাগলো।নিলয়ের হাসির আড়ালে লুকিয়ে পরলো অরিত্রির কষ্টের আত্নচিৎকার গুলো।
নিলয়-উঠবি নাকি ঘাড় ধরে বাড়ি থেকে বের করে দিবো।
নিলয়ের কথা শুনেই অরিত্রি নিলয়ের পা জড়িয়ে ধরলো।কাঁদতে কাঁদতে বললো, আমাকে এত কষ্ট দিয়ো না নিলয়।আমি পারবো না সহ্য করতে।আমাকে তোমার পায়ে একটু জায়গা দাও নিলয়।
নিলয় অরিত্রিকে সরিয়ে দিয়ে টেনে তুললো।বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বললো,ভাবছি তোকে পৌছে দিয়ে আসবো।এখন ওই টুকু সহানুভূতি দেখানোর প্রয়োজনও মনে করছি না।
মুখের উপর দরজাটা বন্ধ করে দিলো নিলয়।অরিত্রি নিশ্চুপ,শুধু জল গড়িয়ে পরছে।বাড়ির সামনেই বসে পরলো অরিত্রি।নিলয়ের এই রূপটা দেখবে তা কখনোই আশা করে নি অরিত্রি।বাড়িতে কীভাবে মুখ দেখাবে অরিত্রি ভাবতে ভাবতে রাস্তায় এসে পরলো অরিত্রি।গাড়ি গুলো পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে।রাস্তায় মানুষগুলো অদ্ভুদ চোখে তাকিয়ে আছে অরিত্রির দিকে।একা একটা মেয়ে রাস্তায় কান্না করাটা হয়ত অস্বাভাবিক।জীবন টা এমন ভাবে কালো অন্ধকারে ডেকে গেছে যে যেদিকেই তাকানো হয়,ওই অন্ধকারটাই সামনে এসে দাঁড়ায়।হয়ত ডুকরে কান্না করাটাই অনেকের নিয়তি আর অনেকেই সহ্য করতে না পেরে আত্নহত্যা করে নেয়।অরিত্রিও যাচ্ছিলো তেমনি একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে,তেমনি ভালোবাসার পরিণতির ভয়াবহ একটা ফলাফলের দিকে পায়ে পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে।পিছানোর উপায় নেই,স্বপ্নগুলো যে ভঙ্গুর।হঠাৎ কেউ একজন এসে বাঁচিয়ে নিলো অরিত্রিকে।অবাক হয়ে তাকাতেই দেখলো অনিকে।অনি জড়িয়ে ধরলো অরিত্রিকে।অরিত্রি অনিকে ঠেলে সরিয়ে দিলো।
–আমাকে ধরিস না ভাইয়া।আমি অপবিত্র হয়ে গেছি।আমাকে অপবিত্র করে দিয়েছে।আমাকে ধরলে তোর ক্ষতি হবে।
অনি-কী বলছিস এইসব।কাঁদছিস কেন বোন।কী হইছে তোর?
অরিত্রি-আমার সব শেষ ভাইয়া।
অরিত্রি বসে পরতে গেলেই অনি ধরে অরিত্রিকে।বোনের কান্নায় আজ অনিও কাঁদছে।হঠাৎ কেউ এসে বললো,
কী হইছে অনি?ওই মেয়েটা কে?
অনি-ও আমার বোন হয় নিহিতা।
নিহিতা নামটা শুনতেই অরিত্রি চমকে উঠে তাকালো নিহিতার দিকে।নিহিতাকে ছবিতে দেখছিলো অরিত্রি,তাই চিনতেও পারলো।নিহিতা জীবিত,তাহলে নিলয় ওইসব কী বলছিলো ওরে?
অরিত্রি-আপু তুমি তো মারা গেছো।তাহলে ভাইয়ার সাথে????
নিহিতা-মারা গেলে তোমার সামনে কীভাবে আসছি?
অরিত্রি-তাহলে নিলয় যে বললো?
নিহিতা-নিলয়,আমার ছোট ভাই নিলয়ের কথা বলতেছো তো?
অরিত্রি মাথা নেড়ে হ্যা বললো।নিহিতা বললো হুম ওদের কাছে আমি মৃতই।
অরিত্রি-মানে?
নিহিতা-আমি অনিকে ভালোবাসতাম।কিন্তু বাবা মা মেনে নেয় নি।এটার জন্য আমাকে অনেক মারধোরও করছিলো।কিন্তু অনিকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না বলেই আমরা পালিয়ে বিয়ে করি।বিয়ে করলেও অনিকে জেলে পাঠিয়ে দেয় আমার বাবা।অনেক কষ্টে ওরে ছাড়িয়ে আনার পর শুনি আমার মা মারা গেছে।আমার বাবা খুবেই ভয়ানক একজন মানুষ,আমার মনে হয় আমার বাবা-ই আমার মাকে মারছিলো।আর এই খুনের দায় এড়াতে তিনি পাগল রূপে থাকেন।সত্যি বলতে তিনি অত্যন্ত চতুর বুদ্ধি সম্পূর্ণ মানুষ।
অরিত্রি-তাহলে নিলয় যে বললো ভাইয়া তোমাকে ধর্ষন করে মেরে পেলছিলো।
নিহিতা-ও ঠিক বাবার মত হয়েছে।মিথ্যার জালে পেসে গেছিলা তুমি।অনিকে ছাড়িয়ে আনার কিছু পর আমি বিদেশ চলে যায়।কিছুদিন আগে শুনলাম তোমাকে পাওয়া যাচ্ছে না।আমি ভাবতে পারি নি আমাদের উপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে নিলয় তোমাকে ইউজ করছে।আর তুমি তো ছোট ছিলা,তাই আমরা কেউই চাই নি তুমি এইসবে জড়িয়ে যাও।তাই আমি তোমাদের বাড়িতে কখনোই যায় নি,একটা হোস্টেলে থাকতাম,তারপর বিদেশ।তাই আমি তোমাকে চিনি না,তুমিও আমাকে চিনো না।
অনি-চল এইবার বাড়ি চল।বাবা মা চিন্তা করতেছে।বাকি কথা বাড়িতে গিয়ে শুনিস।
তিনজন মিলে বাড়ি গেলো।বাড়িতে যেতেই অরিত্রির বাবা মা অরিত্রিকে পেয়ে খুব খুশি হয়।কিন্তু মেয়ের এই অবস্থায় খুব কষ্ট পায়।
সন্ধ্যায় রুম থেকে বের হয় অরিত্রি।এক মাসে কিছুই বদলায় নি,বদলে গেছে ওর জীবনটা।দীর্ঘশ্বাস,কষ্ট,চোখের পানিতে হাসতেও ভুলে গেছে সে।জোর করে হাসতেও ইচ্ছে হয় না।সোফায় এসে বসলে অনি এসে পাশে বসলো।অরিত্রিকে আদর করে বুকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো।
অনি-বোন তুই ওইসব ভুলে যা।ও ভালো ছেলে না।
নিহিতা-অনি ঠিকেই বলছে অরিত্রি।
অনি-বোন কিছু খেয়ে নে।
নিহিতা-আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
নিহিতা খাওয়াতে গেলো অরিত্রিকে।অরিত্রির চোখ দিয়ে টুপ করে অশ্রু গড়িয়ে পরতেই অনি মুছে দিলো।
নিহিতা-সব ভুলে যাও অরিত্রি।দেখবা জীবন টা অনেক সুন্দর।
খাবার খাওয়ানো শেষ হতেই অরিত্রি বললো,আপু তুমি অনেক ভালো।
নিহিতা-তাহলে ভালো হওয়ার সুবাদে কী এই আপুটাকে ভাবি ডাকা যায় না?
অরিত্রি ভাবি বলেই নিহিতাকে জড়িয়ে ধরলো।নিহিতা প্লেটটা রেখে অরিত্রিকে জড়িয়ে ধরলো।
চলবে…..
লেখিকাঃজান্নাতুল ফেরদৌস।
বি.দ্র.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here