প্রতিশোধ অতঃপর ভালোবাসা পর্ব ১০

#প্রতিশোধ_অতঃপর_ভালোবাসা
#পার্ট_১০
#জান্নাতুল_ফেরদৌস
আরিশার কথা শুনেই নিহিতা পাগলের মত হয়ে গেলো।আরিশার সাথেই বের হয়ে গেলো বাড়ি থেকে।নিহিতার পিছনে নিলয়ও আসছিলো।হাসপাতালে ডুকতেই অরিত্রিকে দেখতে পেলো।চেয়ারে বসে মুখ লুকিয়ে কান্না করছিলো অরিত্রি।
নিহিতা দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করলো অনি কই?
অরিত্রি-ভিতরে।
নিলয়কে দেখেই মুখ ফিরিয়ে নিলো অরিত্রি।নিলয় অরিত্রিকে ডাকতে গিয়ে থেমে গেলো।আরিশা নিহিতার সামনে এসে বসে পরলো।
হাত জোড় করে বললো–
আমাকে ক্ষমা করো নিহিতা।তোমার সাথে এইরকম হলো আমার জন্যই।আমার মেয়ের পরিচয়টা পাওয়ার খুব দরকার ছিলো।তাই খুব বেশি স্বার্থপর হয়ে গেছিলাম।আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো।অনির দোষ নেই।দোষ তো আমার ভাগ্যের,যা সব সময় খারাপ-ই হয়।
আরিশার কান্না দেখে নিহিতা আরিশার পাশে এসে বসলো।আরিশাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো দুইজনেই।
___________________
অরিত্রি-চলে যাও এখান থেকে?
নিলয়-জানো আমি ভালোবাসাটা কখনোই বুঝতাম না।তোমার অভাবটা বুজতে পেরেছি তুমি চলে যাওয়ার পরেই।তোমার কাছে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পরছিলাম যখন দেখলাম তোমার ভিতরে আরেকটা মানুষ,আমার সন্তান আসতে চলছে।আমাকে ক্ষমা করা যায় না অরিত্রি?
অরিত্রি চুপ হয়ে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।অভিমান ভরা চোখগুলো লাল হয়ে পানি ঝড়তেছে।নিলয় উঠে জড়িয়ে ধরলো অরিত্রিকে।কিন্তু অরিত্রি জোর করে সরিয়ে দিলো।
অরিত্রি-সেদিন বাড়ি থেকে কুকুরের মত তাড়িয়ে দেওয়া মেয়েটা আমি।সেদিন পায়ে একটু জায়গা চাওয়া মেয়েটা আমি অরিত্রি। যে একটা অমানুষকে ভালোবেসে নিজের সবটা দিয়েছি। আর সে মানুষটা প্রতিশোধের নেশায় ঠকালো।আজ কেনো এসেছো?আবার ঠকাতে আসছো কেন?
অরিত্রি ফ্লোরে বসে পরলো।অরিত্রির চিৎকারে অনেকেই এক সাথে হয়ে গেলো।সবাই দেখছে নিলয় আর অরিত্রিকে।নিলয় বাকি সবার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে চলে গেলো।আরিশা এসে অরিত্রিকে তুললো।
অরিত্রি-ওই লোকটা কেনো এসেছে এখানে?
আরিশা-এইরকম কইরো না অরিত্রি।সবাই দেখতেছে।
অরিত্রি সবার দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেলো।ভীড় কমে যেতেই ডাক্তার বের হলো।অরিত্রি দৌড়ে গিয়ে অনির খবর জানতে চাইলো।
ডাক্তার-উনি এখন বিপদমুক্ত।তবে খেয়াল রাখবেন অতিরিক্ত মানষিক চাপ যেনো না হয়।
অরিত্রি-ঠিক আছে ডাক্তার।
ডাক্তার চলে যেতেই অরিত্রি আরিশা আর নিহিতার সামনে আসলো।দুইজনের দিকে তাকিয়ে বললো,
আমার ভাইয়াকে আমি সব সময় ভুল বুঝে এসেছি।সব সময় ভেবেছি ভাইয়া ভালো না।কিন্তু আমার জন্য,আমার বাবার জন্য ভাইয়া যা করছে তার অবদান কখনো-ই ভুলা যাবে না।আমি চায় না আমার ভাইয়া কষ্টে থাকুক।আরিশা ভাবি তুমি তো জানো নিহিতা ভাবি ফিরে আসলে তোমার চলে যাওয়ার কথা।তোমার কথা রাখার সময় চলে এসেছে ভাবি।
আরিশা-হুমম ঠিক বলেছো অরিত্রি।আমার চলে যাওয়ার সময় চলে এসেছে।নিহিতা আমি তোমাদের জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।ক্ষমা করে দিয়ো আমাকে।
নিহিতা-তোমার সাথে আমিও খারাপ বিহেভ করছিলাম সেদিন।তার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো আরিশা।
আরিশার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছিলো।অন্যদিকে ঘুরে চোখের পানি মুছে পেললো,নিহিতার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক একটু হাসলো আরিশা।তারপরেই হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো আরিশা।চোখের পানি টপ টপ করে ঝরেই যাচ্ছে।কিন্তু আর কারো দিকে ঘুরে তাকালো না আরিশা।বাড়িতে চলে গেলো আরিশা।ঐশ্বর্য ডাকলো,কিন্তু সাড়া পাওয়া গেলো না।কয়েকবার ডেকেও সাড়া না পেয়ে রুমে গেলো আরিশা।অনির হাসি মুখের ছবিটার দিকে তাকালো,হাত দিয়ে একটু ছুয়ে দিলো।একটা ছবির অ্যালবাম নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো আরিশা।
অনির জ্ঞান ফিরতেই নিহিতা অনিকে দেখতে চলে গেলো।অরিত্রি বাইরে বসে রইলো।ঘুমে অরিত্রির চোখ বন্ধ হয়ে আসছিলো।তখন-ই নিলয় আসলো।অরিত্রির পাশে এসে বসলো।
নিলয়-অরিত্রি
অরিত্রির সাড়া না পেয়ে অরিত্রির দিকে তাকালো নিলয়।দেখলো অরিত্রি ঘুমিয়ে পরছে।অরিত্রিকে জড়িয়ে ধরে বুকে জায়গা করে দিলো নিলয়।অরিত্রিও নিলয়ের বুকে ঘুমালো সারা রাত।
পরেরদিন সকালে..
ঘুম থেকে উঠেই নিলয়কে দেখে রেগে গেলো অরিত্রি।তাই চিৎকার দিয়ে বললো–ছাড়ো আমাকে।
নিলয়-অরিত্রি কখন উঠলে?
অরিত্রি-কেনো এসেছো তুমি এখানে?
নিলয়-আমার কথা তো শুনবা অরিত্রি।
অরিত্রি-যাও এখান থেকে।
নিলয়-অরিত্রি ক্ষমা….
এমন সময়ে আরিশা আসলো।এসেই কেঁদে উঠলো।অরিত্রি আরিশার কাছে যেতেই চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো।
অরিত্রি-কী হয়েছে ভাবি?
আরিশা-অরিত্রি আমার ঐশ্বর্য কে কোথাও খুজে পাচ্ছি না।আমার ঐশ্বর্য কে এনে দাও।
অরিত্রি কিছু বলার আগেই আরিশা অজ্ঞান হয়ে গেলো।
অরিত্রি-ভাবি কথা বলো।
নিলয়-টেনশনে হয়ত অজ্ঞান হয়ে গেছে।আমি ডাক্তার আনতেছি।
নিহিতা বের হয়েই আরিশাকে দেখে আরিশার কাছে আসলো।
নিহিতা-কী হয়েছে ওর?
অরিত্রি-ভাবি ঐশ্বর্য কে খুজে পাচ্ছি না।আরিশা ভাবি অসুস্থ হয়ে গেছে এই জন্যই।
নিহিতা পানি এনে আরিশার হুশ ফেরানোর চেষ্টা করলো।অনির আব্বু আম্মু এসেই অনির খোজ জানতে চাইলো।
অরিত্রি-ওই দিকে আছে যাও।
অনির আব্বু-আরিশার কী হয়েছে?
অরিত্রি-তোমরা যখন গ্রামের বাড়ি গেছিলে, অনেক কিছু ঘটে গেছে।পরে সব বলবো।
ডাক্তার এসে আরিশাকে বেডে নিয়ে গেলো।জ্ঞান ফিরে আসতেই আরিশা ঐশ্বর্য কে খুজতে শুরু করলো।
আরিশা-অরিত্রি আমার আরিশাকে পাইছো?
অরিত্রি-ভাবি চুপ করো প্লিজ। ঐশ্বর্য ফিরে আসবে,তুমি শান্ত হও।
আরিশা-আমার ঐশ্বর্য কে এনে দাও প্লিজ।অরিত্রি বলো না এনে দিবে ঐশ্বর্য কে।
ডাক্তার এসে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিতেই কিছুক্ষণের মধ্যেই আরিশা ঘুমিয়ে পরলো।অরিত্রি বের হয়ে আসতেই নিলয় আসলো।নিলয় কিছু বলতে গেলে অরিত্রি পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে নিলয় অরিত্রির হাত ধরলো।
চলবে…..
লেখিকাঃজান্নাতুল ফেরদৌস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here