প্রতিশোধ অতঃপর ভালোবাসা পর্ব শেষ

#প্রতিশোধ_অতঃপর_ভালোবাসা
পার্ট-১১+১২+১৩+১৪+১৫ শেষ
লেখিকাঃজান্নাতুল ফেরদৌস
কিছুক্ষণের মধ্যেই আরিশা ঘুমিয়ে পরলো।অরিত্রি বের হয়ে আসতেই নিলয় আসলো।নিলয় কিছু বলতে গেলে অরিত্রি পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে নিলয় অরিত্রির হাত ধরলো।
অরিত্রি-এটা কী অসভ্যতা হচ্ছে নিলয়?
নিলয়-কথা ছিলো।
অরিত্রি-আমার নেই।
নিলয়-শেষ বারের মত সুযোগ দেওয়া যায় না?
অরিত্রি-কী করবা সুযোগ নিয়ে?
নিলয়-কোনো অভিযোগ দেওয়ার সুযোগ রাখবো না।
অরিত্রি-এই সব বাদ দাও এখন।ঐশ্বর্যকে খুজতে হবে।ভালো থেকো।
নিলয়-তুমি একা যেয়ো না।আমি যাবো তোমার সাথে।
অরিত্রি-দরকার নেই কাউকে।
অরিত্রি বের হয়ে গেলো।কিন্তু এত বড় শহরে কই খুজবে সে ঐশ্বর্য কে।রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে হঠাৎ নিলয় দৌড়ে এসে সরিয়ে নিলো অরিত্রিকে।
নিলয়-একটু হলেই তো গাড়িটা গায়ে উঠে আসতো।
অরিত্রি-তুমি আমার পিছনে আসতাছো কেন?
নিলয়-না আসলে এখন যে এক্সিডেন্ট করতা।
অরিত্রি-প্লিজ আমার লাইফে আইসো না।
অরিত্রি চলে গেলো।নিলয় তবুও পিছু ছাড়লো না।স্টেশনের একটা বেঞ্চে বসে পরলো অরিত্রি।সন্ধ্যার আকাশটা একটু বেশি-ই সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে।হঠাৎ ছোট হাত গুলো এসে অরিত্রির হাত ধরলো।অরিত্রি চমকে উঠে তাকাতেই দেখলো ঐশ্বর্য দাঁড়িয়ে আছে।জড়িয়ে ধরলো অরিত্রি ঐশ্বর্য কে।গালে মুখে চুমু দিয়ে আবারও জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
অরিত্রি-কই ছিলি তুই?
নিলয়-একা একা বাড়ি থেকে বের হয়ে পথ হারিয়ে পেলছিলো।তোমার পিছন আসতে গিয়ে দেখি একটা মেয়ে কান্না করছিলো।তুমি এতটাই চিন্তায় ছিলে যে খেয়াল করো নি।আমি গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করতেই বললো ওর নাম ঐশ্বর্য। তাই আপুকে কল দিয়ে ঐশ্বর্যের একটা ছবি নেয়,তারপর ঐশ্বর্য কে এখানে নিয়ে আসলাম।
অরিত্রি নিলয়ের দিকে তাকিয়ে ঐশ্বর্য কে নিয়ে হাটা শুরু করলো।
নিলয়-আরে একটা ছোট থ্যাংকসও তো দেওয়া যায়।
অরিত্রি নিলয়ের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলো।তারপর আবারও হাটা শুরু করলে ঐশ্বর্য দৌড়ে নিলয়ের কাছে আসলো।
ঐশ্বর্য-আঙ্কেল বসো।
নিলয় বসতেই ঐশ্বর্য নিলয়ের গালে চুমু দিলো।নিলয়ও হেসে ঐশ্বর্যের কপালে,গালে চুমু দিলো।
নিলয়-এই ছোট মেয়েটা থেকেও তোমার কিছু শেখা উচিত।
অরিত্রি-ঐশ্বর্য চলে আসো।
নিলয়-শুনো তোমার ফুপিমনিকে আমার হয়ে এত্তগুলা সরি বলে বলবা আমাকে ক্ষমা করে দিতে।
ঐশ্বর্য-ঠিক আছে।
নিলয়-যাও তাহলে।
ঐশ্বর্য দৌড়ে এসে অরিত্রির হাতের আঙ্গুল ধরলো।হাসপাতালে গিয়ে আরিশার কাছে নিয়ে গেলো ঐশ্বর্য কে।
অরিত্রি-দেখো তোমার আম্মুর অবস্থা।
ঐশ্বর্য-আম্মু এত্তগুলা সরি।আমি আর যাবো না তোমাকে ছেড়ে।
আরিশার গলা জড়িয়ে ধরতেই আরিশা চুমু দিলো ঐশ্বর্যের গালে।
আরিশা-তুই ছাড়া আমার যে আর কেউ নেই।তুই না থাকলে আমি মরে যাবো মা।আমাকে ছেড়ে যাইস না কোথাও।
অনি আসতেই ঐশ্বর্য অনির কাছে গেলো। অনি ঐশ্বর্যকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিলো।
অনি-কই চলে গেছিলি বল তো?
ঐশ্বর্য-বাবাই আমি তো তোমার কাছে যেতে চাইছিলাম।তোমাকে আমি কত খুজছি।
অনি-পাকনা বুড়ি এই জন্য একা একা বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে হয়?
ঐশ্বর্য-আমার কথা কেউ শুনে না।কেউ বাবাইকে আমার কাছে এনে দেয় না।সবাই শুধু বকে,শুধু আঙ্কেল ভালো।
অনি-কোন আঙ্কেল?
ঐশ্বর্য-ওই তো ভালো আঙ্কেল।
অনি তাকাতেই নিলয়কে দেখতে পেলো।অনি উঠে গেলো নিলয়ের কাছে।
অনি-আমার মেয়েকে তুমি ফিরিয়ে দিয়েছো?
নিলয়-হুম ওরে রাস্তায় পাইছিলাম।তারপর আপুর থেকে..
অনি-হুম নিহিতা সব বলছে।
নিলয়-আচ্ছা।
নিহিতা-অনি এখন চলো।তোমারও তো শরীর ঠিক নেই।
অনি-আমার আম্মুটা কী যাবে আমার সাথে?
ঐশ্বর্য-কোলে নাও।
নিহিতা-আমার কোলে আসো।তোমার বাবাই তো অসুস্থ
ঐশ্বর্য-না।বাবাই কোলে নিবে,বাবাইইই
অনি-নিচ্ছি।
অনি কোলে নিয়ে ঐশ্বর্য কে নিয়ে চলে গেলো।পাশের রুমেই বেডে নিজের পাশে নিয়ে বসালো।
ঐশ্বর্য-বাবাই তুমি বাড়ি যাবা কবে?
অনি-আগামী কালকেই যাবো।
ঐশ্বর্য-বাবাই জানো ফুপিমনির কাছে ভালো আঙ্কেল এত্তগুলা সরি বলছে।
অনি-তারপর?
ঐশ্বর্য-ফুপিমনি রাগ করছে।অনেক রাগ।
অনি-কত রাগ?
ঐশ্বর্য হাত দিয়ে অনেকগুলা রাগ দেখিয়ে দিলো।অনি হাসলো।এমন সময় অরিত্রি এসে ডুকলো অনির রুমে।অনি অরিত্রির দিকে তাকিয়ে বললো,কিছু বলবি?
অরিত্রি-হুম ভাবি শুনো তোমার ভাইকে বলবা আমার পিছন পিছন যেনো না ছুটে।সাবধান করে দিবা।
অরিত্রি হন হন করে বেরিয়ে গেলো।নিলয় এসে ডুকতেই অনি হাসতে হাসতে বললো,বোন আমার ধানীলঙ্কা।অভিমান ভাঙ্গানো এত সহজ না শালাবাবু।
নিলয়-দেখি না কতদিন রাগ করে থাকতে পারে।
অনি-আরিশা কী করতেছে?
নিলয়-আছে।বাইরে বসে রইছে।
অনি-একটু ডেকে দাও তো।
নিলয়-ঠিক আছে।
আরিশা দরজার নক করতেই অনি ভিতরে আসতে বললো।ভিতরে আসতেই আরিশাকে বসতে বললো।
আরিশা-কিছু বলবে আমাকে?
অনি-তোমার সাথে যা অন্যায় করেছি তার জন্য ক্ষমা চাইবো কীভাবে আমি জানি না।
আরিশা-আমার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে না।তোমরা ভালো থেকো।
অনি-একটা অনুরোধ করি?
আরিশা-বলো।
অনি-তুমি থেকে যাও আমাদের সাথে।
আরিশা-সেটা হয় না অনি।
অনি-প্লিজ আরিশা বুঝার চেষ্টা করো।তোমার বাবা মা তুমি একা ফিরে গেলে আর এইসব জানলে তোমাকে মানবে না।আর ঐশ্বর্য কে ছেড়ে আমি আর ঐশ্বর্য আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে না।প্লিজ থেকে যাও তুমি।
নিহিতা-আরিশা প্লিজ তোমার পায়ে পরছি.
আরিশা-এটা কী করছেন আপনি।প্লিজ আমাকে আর ছোট কইরেন না।আমি থাকবো।
নিহিতা-থ্যাংকিউ আরিশা।
নিহিতা আরিশাকে জড়িয়ে ধরলো।ঐশ্বর্য কিছুক্ষণ আরিশা আর নিহিতাকে দেখছিলো।দেখার পর গিয়ে অনির কোলে ডুকে গেলো।
অনি-কী হলো মহারাণী?
ঐশ্বর্য-দেখো বাবাই ওরা আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে না।
ঐশ্বর্যের কথা শুনে দুইজনেই হেসে উঠে ঐশ্বর্য কে এনে দুইদিক থেকে জড়িয়ে ধরে গালে আদর দিলো।
পরেরদিন অনি বাড়িতে চলে যায়।সাথে নিলয়ও আসে।নিলয় এসে কিছুক্ষণ পর অরিত্রির রুমে চলে যায়।অরিত্রি গোসল করে বের হতেই নিলয়কে দেখে রেগে গেলো।নিলয় এগিয়ে এসে অরিত্রির ভিজা চুল গুলোতে হাত দিয়ে অরিত্রির ঘাড়ের কাছে মুখ এনে একটা চুমু দিলো। অরিত্রি কেপে উঠতেই নিলয় মুচকি হাসলো।
অরিত্রি-ছাড়ো আমাকে।
নিলয়-চলো না ফিরে যাবে।কোনো কষ্ট পেতে দিবো না।বিশ্বাস করো আমাকে।
অরিত্রি-ছাড়তে বলছি।
নিলয়-আমাদের সন্তানের কথা ভাবো অরিত্রি।
অরিত্রি-ছাড়তে বলছি।
অরিত্রি নিলয়কে জোর করে ছাড়িয়ে দিলো।
অরিত্রি-আমাকে স্পর্শ করার কোনো অধিকার নেই তোমার।
নিলয়-অরিত্রি চিৎকার চেঁচামেচি কইরো না।বাড়িতে সবাই আছে।
অরিত্রি-আসছো কেনো আমার বাড়িতে।বের হয়ে যাও এখন-ই।
নিলয়-আমি সরি বললাম তো অরিত্রি।একটা ভুলের জন্য আর কত শাস্তি দিবা।
অরিত্রি-তোমার প্রতিশোধ ছিলো।নেওয়া শেষ,চলে যাও।আমার সব তো শেষ করেই দিলে,আর কী চাও আমার থেকে।আমাকে মুক্তি দাও।
অরিত্রি ফ্লোরে বসে গেলো।চোখ দিয়ে পানি ঝরতেছে।নিলয় অরিত্রির দিকে এগিয়ে আসতে গেলেই অরিত্রি বলে উঠলো–আমাকে ধরবা না নিলয়।
নিলয়-আমাকে ক্ষমা করে দাও।ভালোবাসি অনেক বেশি।আমার ভুলটা ক্ষমা করে দিয়ে একটা বার ভালোবাসি বলো।
অরিত্রি-আমি চায় না তোমাকে নিলয়।প্লিজ আমার থেকে দূরে যাও।
নিলয়-সত্যি চলে গেলে ভালো থাকবে?
অরিত্রি-অনেক ভালো থাকবো।
নিলয়-সত্যি বলতেছো অরিত্রি।আমার চোখের দিকে তাকিয়ে একবার বলো।
অরিত্রি বসেই রইলো।নিলয় মাথা নিচু করে বের হয়ে গেলো।রাতে তুহান আসলেও অরিত্রি নিছে নামলো না।তুহান অরিত্রির খালাতো ভাই হলেও অরিত্রকে নিজের বোনের আদর করে সে।তাই তুহান নিজেই অরিত্রির রুমে গেলো।
তুহান-কিরে একি হাল করেছিস নিজের?কি হয়েছে বল আমাকে।
অরিত্রি-কিছু না ভাইয়া।
তুহান-তাহলে বলতে চাস না আমাকে।
অরিত্রি-ভাইয়া নিলয় বলছে আর আসবে না।
তুহান-পাগলি এই জন্য কাঁদছিস?
অরিত্রি মাথা নাড়তেই তুহান হাসলো।
অরিত্রি-হাসছিস কেনো তুই?
তুহান-জানিস পাগলি সত্যি কারের ভালোবাসা কখনো হারায় না।নিলয় আসবে,তোর সামনে না আসলেও তোকে চোখের আড়াল করতে দিবে না।
অরিত্রি-তুই তাহলে বলছিস আসবে?
তুহান-১০০% সিউর হয়ে বলছি।এইবার উঠ।
তুহান অরিত্রিকে টেনে নিয়ে ড্রয়িং রুমে চলে গেলো।ঐশ্বর্য চিপসের জন্য কান্না করছিলো তাই আরিশা চিপস এনে দিলো।অনি খাইয়ে দিচ্ছিলো ঐশ্বর্য কে।
তুহান-আমাদের মহারাণী,বিল্লিরাণী,ট্যারা চোখী,কাঁদুনি বালা এসে হাজির হয়েছে।
অরিত্রি- তুই আমাকে এইসব বলেছিস?
তুহান-তুই তো এইসব কিছু।তোর উপাধী গুলা ভালো লাগছে?
অরিত্রি-আজ তোর খবর আছে।
অরিত্রি তুহানকে দৌড়াতে লাগলো।দৌড়াতে দৌড়াতে বাইরে চলে গেলো।গার্ডেনের এক প্রান্তে এসে অরিত্রি হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই নিলয় এসে অরিত্রিকে ধরে।
নিলয়-এই অবস্থায় এত দৌড়াদৌড়ি করা ভালো না।
অরিত্রি-আমার শখ হইছে আমি দৌড়াবো, লাফাবো,নাচবো তাতে তোমার কী?
তুহান-এই অবস্থায় মানে?
নিলয়-অরিত্রি মা হতে চলছে।
তুহান-কেউ আমাকে জানালো না কেন।কী অবিচার। থ্যাংকিউ ব্রো,তুমি না জানালে জানতেই পারতাম না।কাঁদুনিবালা মা হবে,কাঁদুনিবালার মেয়েও দ্বিতীয় কাঁদুনিবালা হবে।
অরিত্রি-তোরে তো আমি পচা নোংরা পানিতে চুবাবো।
নিলয়-চুপ আর কোনো দৌড়াদৌড়ি না।আর আমার কী জানো না?আমার-ই তো সব,বউটাও আমার।যে আসবে সেও আমার।
অরিত্রি-কেউ তোমার না,চলে যেতে বলছি না?যাচ্ছো না কেন?
নিলয়-অরিত্রির অভিমানের ভাষা আমি বুঝি।
অরিত্রি-বুঝতে হবে না।
নিলয়-আমি না বুঝলে কে বুঝবে শুনি?
অরিত্রি-জানি না।
অরিত্রি চলে গেলো।নিলয় বাইরে যেতে নিলেই তুহান নিলয়কে দাঁড় করালো।
তুহান-অরিত্রি কিন্তু খুব রাগী একটা মেয়ে।
নিলয়-আমি হাল ছাড়বো ন।
তুহান-অল দ্যা বেস্ট।
নিলয়-থ্যাংকিউ ভাইয়া।
তুহান-আচ্ছা আমি যায়।আবার দেখা হবে।
নিলয়-হুম যান।
তুহান-আমাকে তুমি বা তুই করে বলবে।
নিলয়-ঠিক আছে।
ঐশ্বর্যের পিছন পিছন আরিশা দৌড়াচ্ছিলো। তুহান আসতেই ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিলে তুহান আরিশাকে ধরলো।এক নজরে আরিশার চোখের দিকেই তাকিয়ে আছে তুহান।নেশা ধরানো চোখ,ঠোঁটের দিকে তাকাতেই দেখলো ঠোঁটের নিছে একটা সুন্দর তিল আছে।তুহান তাকিয়েই রইলো।
আরিশা-ছাড়ুন আমাকে।
তুহান-হুমমম.
আরিশা-ছাড়তে বলছি।
কথাটা কানে যেতেই আরিশাকে ছেড়ে দাঁড়ালো তুহান। আরিশার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,হাই আমি তুহান।
আরিশা হাত মিলালো না।নিজের নামটাও বললো না।চলে গেলো সেখান থেকে।ঐশ্বর্য এগিয়ে এসে তুহানের আঙুল ধরে টান দিতেই তুহান তাকালো ঐশ্বর্যের দিকে।
ঐশ্বর্য-আমার আম্মুর নাম আরিশা জাহান।
তুহান-তোমার আম্মু হয়?
ঐশ্বর্য-হুম আমার আম্মু।
তুহান-তোমার বাবা কে?
ঐশ্বর্য-বাবাইর নাম অনি চৌধুরী।
এক মূহুর্তের জন্য অবাক হয়ে গেলো তুহান।আরিশা যদি অনির বউ হয় তাহলে নিহিতা কে?প্রশ্নটার উত্তর ভাবতে ভাবতে অনির রুমে ডুকলো তুহান।
চলবে…..
লেখিকাঃজান্নাতুল ফেরদৌস
#প্রতিশোধ_অতঃপর_ভালোবাসা
#পার্ট_১৩
#জান্নাতুল_ফেরদৌস
এক মূহুর্তের জন্য অবাক হয়ে গেলো তুহান।আরিশা যদি অনির বউ হয় তাহলে নিহিতা কে?প্রশ্নটার উত্তর ভাবতে ভাবতে অনির রুমে ডুকলো তুহান।
তুহান-অনি.
অনি-বল।
তুহান-আরিশা তোর বউ?
অনি-উত্তরটা ঠিক কী দিবো আমি জানি না।
তুহান-সত্যিটা বল।
অনি-আচ্ছা শুন তাহলে।
তুহান কে অনি সমস্ত ঘটনা খুলে বললো।তুহান অবাক হয়ে সবটা শুনে বললো-তুই এত কিছু করার আগে আমাকে তো বলতে পারতি।
অনি-যা ঘটার ঘটে গেছে।এইগুলা বাদ দে তো।
তুহান-আরিশার জীবনটা তো শেষ হয়ে গেলো অনি।
অনি-আমি জানি না আমি কী করবো?
তুহান-আচ্ছা আমি তাহলে চলি।
অনি-ঠিক আছে।
ছাদে দাঁড়িয়ে তুহান আরিশার কথা ভেবেই যাচ্ছে।রাত দশটা বেজে গেলো।তুহান আরিশার জন্য কী করতে পারবে সেটাই
ভাবছে।এমন সময় ছাদে কারো পায়ের আওয়াজ শুনা গেলো।
তুহান-কে?
আরিশা-আমি আরিশা।
তুহান-ওহ কেন আসছো?
আরিশা-খাবার খেতে ডাকতে আসলাম।
তুহান-আমি একটু পরে খাবো।
আরিশা-ঠিক আছে।
আরিশা চলে গেলো।ড্রয়িং রুমে যাওয়ার আগে অরিত্রিকে ডেকে খাবার খেতে বললো।অরিত্রি রুম থেকে বের হতে গেলেই কেউ অরিত্রির হাতে স্পর্শ করলো।
অরিত্রি-আবার কেনো আসছো?
নিলয়-নিজে যে খেতে চলে যাচ্ছো।তোমার একমাত্র স্বামীকে খেতে যেতে বলবা তো।
অরিত্রি-আমাদের বিয়ে হয়েছে নাকি?
নিলয়-সমস্যা নাই।এইবার বিয়ে করবো।
অরিত্রি-আমি করবো না।
নিলয়-জোর করে করবো।
অরিত্রি-ছাড়ো আমাকে।
নিলয়-বউ গো এত অভিমান কেনো তোমার?
অরিত্রি-আমাকে আমার মত ছেড়ে দাও।
অরিত্রি হাত ছাড়িয়ে চলে গেলো।কয়েকদিন নিলয় অরিত্রিকে কোনো প্রকার বিরক্ত করে নি।এমন কী অরিত্রির বাড়িও আসছিলো না।তাই অরিত্রি নিহিতার কাছে গেলো।
অরিত্রি-ভাবি তোমার ভাই কই?
নিহিতা-আমি নিজেও জানি না।কল দিলেও ফোন বন্ধ বলে।
অরিত্রি-তোমার সাথেও যোগাযোগ নেই?
নিহিতা-না।
অরিত্রি-তাহলে কই গেলো?
নিহিতা-তুমি টেনশন করতাছো কেন?তুমি তো ওর কেউ না।
অরিত্রি-এইভাবে বলতাছো কেন ভাবি।
নিহিতা-যা সত্যি তাই তো বললাম।ও কতবার তোমার কাছে ক্ষমা চাইলো,একটা ভুলের জন্য এত কষ্ট দিলে অরিত্রি?
অরিত্রি মাথা নিচু করে পেললো।অনি রুমে আসতেই কথাগুলো অনির কানে গেলো।
অনি-অরিত্রি ভালোবাসিস যখন,তাহলে দূরে ঠেলে দিস না আর।
অরিত্রি বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো নিলয়ের খোঁজে।নিলয়ের বাড়ি তে গিয়েও নিলয়ের কোনো খোজ পেলো না।
তুহান-কয়েকদিনেই আরিশাকে অনেক ভালো বেসে পেলেছি।ওরে ছাড়া থাকবো কীভাবে?
মনে মনে ভাবছিলো তুহান।তখন-ই অনি এসে তুহানের পাশে বসলো।
অনি-কি এত চিন্তা করছিস বল তো আমাকে।
তুহান-আমি আরিশাকে ভালোবেসে পেলছি রে।
অনি-তুই কী সিরিয়াসলি বলছিস?
তুহান-হ্যা আমি সিরিয়াসলি তোর সাথে কথাটা শেয়ার করতেছি।আমি আরিশা কে অনেকটাই ভালোবেসে পেলছি।
অনি-আমি তোর ব্যাপারে আরিশার সাথে কথা বলে দেখবো।
তুহান-ও যদি রাজি না হয়।
অনি-দেখি কী হয়.
তুহান মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।তখন-ই চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনা গেলো।তুহান আর অনি দুইজনেই নিচে গিয়ে অরিত্রি কান্না করতেছে।
অনি-কী হয়েছে কাঁদছিস কেন?
অরিত্রি-ভাইয়া আমি নিলয়কে অনেক জায়গায় খুজছি।ওরে আমি খুজে পাচ্ছি না।
অনি-কান্না অফ কর।
অরিত্রি-ভাইয়া ওরে এনে দাও।
অনি-দিবো তো।তুই কান্না অফ কর।আমি দেখতেছি।
অরিত্রি-আমি ওরে ছাড়া থাকতে পারবো না।
অনি-দেখ তোর সাথে যে আছে ওর তো ক্ষতি হবে।এইভাবে কান্না কাটি করিস না।
অরিত্রি একটু শান্ত হলো।আরিশা এসে অরিত্রিকে সোফায় বসিয়ে পানি খাওয়ালো।নিহিতা পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো।অনি আর তুহান বের হয়ে গেলো।পুলিশ স্টেশনে গিয়ে নিলয়কে খোঁজার ব্যাপারে কথা বলে আসলো।কিন্তু কয়েকদিন কেটে গেলেও নিলয়কে পাওয়া গেলো না।
তুহান-এই অরিত্রি চল তো আমি একটু মার্কেটে যাবো।
অরিত্রি-তোমরা যাও।আমি যাবো না।
তুহান-আরে চিন্তা করিস না তুই।নিলয় ফিরে আসবে।তুই চল।
অরিত্রি-ভালো লাগছে না ভাইয়া।
তুহান-চল তো। তোকে আজকে একটা সিক্রেট বলবো।চল এইবার।
তুহানের জোরাজুরিতে অরিত্রি তুহানের সাথে গেলো।
অরিত্রি-শাড়ি কার জন্য ভাইয়া?
তুহান-একটা সিক্রেট বলি?
অরিত্রি-বল।
তুহান-আমার না আরিশাকে ভালো লাগে।ওর জন্যই কিনতেছি।
অরিত্রি-সেলফিস।
তুহান-আমি কি করলাম?
অরিত্রি-কখনো আমাকে একটা কিছুও কিনে দিলে না।এখন ভাবির জন্য শাড়ি কিনছো।
তুহান-আচ্ছা তোকেও কিনে দিবো।খুশি তো এইবার?
অরিত্রি-হুম।
শপিং করে বের হয়ে গাড়িতে উঠলো অরিত্রি।হঠাৎ-ই কাউকে দেখে অরিত্রি অবাক হয়ে গেলো।
চলবে…..
লেখিকাঃজান্নাতুল ফেরদৌস
#প্রতিশোধ_অতঃপর_ভালোবাসা
#পার্ট_১৪
#জান্নাতুল_ফেরদৌস
হঠাৎ-ই কাউকে দেখে অরিত্রি অবাক হয়ে গেলো।তাড়াতাড়ি তুহানকে বললো গাড়ি ঘুড়াতে।
তুহান-কেন?
অরিত্রি-ওই দেখ উনি নিলয়ের বাবা।উনার পিছনে যাও প্লিজ ভাইয়া।
তুহান-ওকে।
তুহান আর অরিত্রি ফলো করতে লাগলো নিলয়ের বাবাকে।আস্তে আস্তে একটা পুরোনো গোডাউনের সামনে এসে গাড়ি থেকে নামলো নিলয়ের বাবা।নেমেই ভিতরে ডুকে গেলো।
তুহান-সাবধানে আসবি।
অরিত্রি মাথা নাড়লো।পিছনের দরজাতে কেউ না থাকায় দুইজনেই ডুকে পরলো গোডাউনে।কিছু পথ হাটতেই নিলয়কে চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায় দেখলো অরিত্রি আর তুহান।অরিত্রি ছুটে যেতে চাইলেই তুহান অরিত্রির হাত ধরে পেলে।
তুহান-চুপ থাকো।
তুহানের কথাতে অরিত্রি চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।
নিলয়ের বাবা-তোকে আমি ছোট থেকে বড় করলাম।এত কষ্ট করলাম,আর তুই একটা ছোট কাজ করতে পারলি না।প্রতিশোধের বদলে তুই ওই মেয়েটাকে ভালোবেসে পেললি।
নিলয়-আমাকে যেতে দাও বাবা।
নিলয়ের বাবা-তুই যাবি না।আমি যা বলবো তুই তা করতে বাধ্য।
নিলয়-আমার মা কে তুমি শেষ করে দিছো।আমার বোনের লাইফটা নষ্ট করে দিছো।আমার অরিত্রি থেকো আমাকে আলাদা করালে।কেনো এত অভিনয় করলে বাবা?
নিলয়ের বাবা-প্রতিশোধ।অরিত্রির বাবার উপর প্রতিশোধ নিতে হবে।ওর এত সাহস আমাকে জেলে দেয়।কী করেছিলাম আমি,ওর বোনকে চেয়েছিলাম।আমাকে বের করে দিলো বাড়ি থেকে।ওর বোনকে এনে বিয়ে করতে চাইছি,কিন্তু ওই মেয়েটাকে ধর্ষন করার পর সুসাইড করে নিলো।আর আমাকে জেলে ডুকিয়ে দিলো।চৌদ্দ বছর জেলে ছিলাম।এতগুলা বছর আমাকে জেলে ডুকিয়ে দিলো।
নিলয়-বাবা তুমি এত নিছে কীভাবে নামতে পারো?
নিলয়ের বাবা-তোকে নিয়ে অনেক আশা করছিলাম।কিন্তু তুই কোনো আশা পূরন হতে দিলি না।
নিলয়-আমাকে আপু বলছিলো তুমি খারাপ।আমি বিশ্বাস করলাম না।
নিলয়ের বাবা-তুইও তো অরিত্রির বিশ্বাস নিয়ে খেলা করছিলি।
নিলয়-এটাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো।
নিলয়ের বাবা-আর তুই খেলা মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে আরো বড় ভুল করেছিস।
নিলয়-তুমি কী চাও?
নিলয়ের বাবা-তোকে শেষ করে পেলতে।তবে সেটা আগামীকাল।জানিস তোর মাকে এইরকম একটা দিনে মারছিলাম।তোকেও মারবো আগামীকাল।
নিলয় অবাক হয়ে তাকালো একটা নিষ্ঠুর মানুষের দিকে।একটা মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তা ভাবছে নিলয়।নিলয়ের বাবা চলে যাচ্ছিলো।দরজার কাছে যেতেই পুলিশ ধরে পেললো নিলয়ের বাবাকে।অরিত্রি নিলয়কে নিয়ে এগিয়ে আসলো।
নিলয়-বাবা ভালোবাসা পাশে থাকলে সব বিপদ থেকে বাঁচা যায়।তবে ভালোবাসাকে ইউজ করে পাশে পাওয়া যায় না, ভালোবাসাকে ভালোবেসে পাশে রাখতে হয়।
নিলয় অরিত্রিকে নিয়ে চলে গেলো।নিলয়ের ফিরে আসাতে সবাই খুশি হয়।রাতে গার্ডেনে বসে সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলো।এমন সময় অনি এসে বললো,চল আমরা গেম খেলি।
নিহিতা-কি গেম?
নিলয়-ট্রুথ অর ডেয়ার?
অরিত্রি-না।
নিলয়-খেলবো।
অরিত্রি-কীভাবে?
অনি-এই যে এই বোতলটা ঘুরাবো।তার পালা আসবে সে যে কোনো একটা চয়েজ করবে।তারপর গেম অনুযায়ী আমরা কিছু একটা করতে দিবো বা জিজ্ঞেস করবো।
অরিত্রি-ওকে।
প্রথম বার বোতল ঘুরাতেই নিহিতার সামনে এসে পরলো।নিলয় বলে উঠলো আমি জিজ্ঞেস করবো?
অনি-ওকে।
নিহিতা-ট্রুথ
নিলয়-আপু তুই অনি ভাইয়াকে কী দেখে ভালোবেসেছিস?
নিহিতা-ক্লাশের প্রথম দিন গম্ভীর হয়ে চশমার ফাঁকের চোখ গুলো দেখে মায়ায় ডুবে ভালোবেসে পেলি।
আবারও বোতল ঘুরালো।অরিত্রির সামনে গিয়ে পরতেই অরিত্রি ডেয়ার নিলো।
আরিশা-আমি দিচ্ছি।
অনি-ওকে।
আরিশা এক ফুল নিয়ে আসলো বাগান থেকে।তারপর বললো,এখন নিলয়কে প্রোপোজ করতে।
কথাটা শুনেই অরিত্রির চোখ বড় হয়ে গেলো।আরিশার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকাতেই আরিশা কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললো ডেয়ার নিছো মানতে হবে।
নিলয়-আমি তো প্রোপোজ পেতে রেডি।চলে আসো অরিত্রি।
নিলয় উঠে দাঁড়ালো।অরিত্রি নিলয়ের সামনে আসতেই তুহান বললো,আরে বোন বসে যাও।বসে বসে সুন্দর ভাবে প্রোপোজ করো।অরিত্রি হাটু গেড়ে বসলো।
অরিত্রি-I Love you.
নিলয়-বলছো তো ভালোবাসি।কিন্তু মুখটা রাখলে পেঁচার মত করে।একটুও মানাচ্ছে না।একটু হেসে লাভ ইউ বলো।
অরিত্রি উঠে নিলয়ের মুখে গোলাপটা ছুড়ে মেরে বললো এর থেকে ভালো আমি পারি না।
তারপর চলে যেতে নিলে অরিত্রির হাত ধরে টান দিয়ে নিলয় অরিত্রিকে বুকে মিশিয়ে পেললো।
অরিত্রি-কী হচ্ছে এটা।সবাই দেখছে তো।
নিলয়-আমার বউ কে আমি জড়িয়ে ধরেছি।সবাই দেখলে আমার কী।অন্য কারো বউ কে তো আর জড়িয়ে ধরি নি।
নিলয়ের কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো।সবাই বসতেই আবারও বোতল ঘুরানো শুরু হলো।এইবার আসলো অনির পালা।
অনি-সবাই ডেয়ার নিতেছে আমিও ডেয়ার নিবো।
অরিত্রি-আমি দিচ্ছি।ভাইয়া তুমি এখন সুইমিংপুলে সাতার কেটে আসবা ৫মিনিট।
অনি-এটা কী রকম ডেয়ার?
অরিত্রি-না করতে পারলে তুমি ভীতু।
অনি-যাচ্ছি।
সাতার কেটে উঠে এসে ঠান্ডায় কাপাকাপি শুরু হয়ে যায় অনির।জামা কাপড় পড়ে আবারও এসে বসলো অনি।অনি বসতেই বোতল ঘুরানো শুরু হয়।এবার আসে তুহানের পালা।
অনি-আমি দিবো।কিন্তু তুই কি নিবি?ট্রুথ নাকি ডেয়ার?
তুহান-অবশ্যই ডেয়ার।
অনি-ওকে তুই তোর মনের মানুষের নাম বলে এখন-ই তাকে ভালোবাসি বল।
কথাটা শুনেই তুহান এক দৌড়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে-ই রইলো তুহানের চলে যাওয়ার দিকে।কিছুক্ষণ পর অরিত্রি জোরে হেসে উঠলো।কিন্তু অরিত্রির হাসি থেমে গেলো কিছুক্ষণের মধ্যেই।
চলবে…..
লেখিকাঃজান্নাতুল ফেরদৌস
#প্রতিশোধ_অতঃপর_ভালোবাসা
#পার্ট_১৫_শেষ_পর্ব
#জান্নাতুল_ফেরদৌস
কথাটা শুনেই তুহান এক দৌড়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে-ই রইলো তুহানের চলে যাওয়ার দিকে।কিছুক্ষণ পর অরিত্রি জোরে হেসে উঠলো।কিন্তু অরিত্রির হাসি থেমে গেলো কিছুক্ষণের মধ্যেই।তুহান ছাদে দাঁড়িয়ে ফোন করলো অনিকে।
তুহান-অনি।
অনি-কই তুই?
তুহান-ছাদে।
অনি-ওই তুই ছাদে গেলি কেন?
তুহান-আমি ওরে প্রোপোজ করবো।তুই ফোনটা লাউডস্পিকারে দে।
অনি-মানে?
তুহান-আরে দে তো।
অনি-ওকে।
তুহান-আরিশা শুনতে পাচ্ছো?
আরিশা-হুম বলুন।
তুহান-আমি ছাদে দাঁড়িয়ে আছি আরিশা।আর এক পা এগুলেই নিছে ঝাপ দেওয়া হবে।
আরিশা-আরে পাগল নাকি।নামুন আপনি।
তুহান-না আগে আমার মনের কথা শুনতে হবে।
আরিশা-বলুন
তুহান-আমি তোমাকে ভালোবাসি আরশা।সত্যি অনেক ভালোবাসি।
আরিশা-পাগল হয়ে গেছেন নাকি আপনি?
তুহান-হুম তুমি রাজি না হলে আমি এখান থেকে ঝাপ দিবো।
আরিশা-পাগলামি না করে নিছে আসুন।
তুহান-তাহলে প্রোপোজ একচেপ্ট করো।
আরিশা-আরে পাগল হয়ে গেছেন আপনি?আমি বিবাহি…..
তুহান-তাহলে আমি গেলাম।
তুহান ফোনটা রেখে ঝাপ দিয়ে দিতেই নিলয় এসে তুহানকে ধরে পেললো।
নিলয়-পাগল হয়ে গেছো নাকি?
তুহান-হুম হয়ে গেছি।
নিলয়-উঠো।
তুহান-না আমাকে ছাড়ো।
নিলয়-আরে ভাই নিচে পরলে উপরে চলে যাবে।উঠো তাড়াতাড়ি।
তুহান-সত্যিই তো আমি মনে হয় তিন তলার ছাদের উপর চলে আসছি।
নিলয়-হুম এখন উঠেন।
নিলয় তুহানকে টেনে তুলতেই তুহান বললো,আরে ভাই আমি তো এক তলার ছাদের উপর যেতে চাইছি।তিন তলায় আইছি কেমনে?
নিলয়-বেশি আনন্দ থাকলে এটাই হবে।
তুহান-পায়ে মনে হয় ব্যাথা পাইছি।
আরিশা-ঝাপ দিতে গেছেন তো আসেন।
তুহান-কই যাবো।
আরিশা-আপনাকে ধাক্কা দিয়ে পেলে দিয়ে আসি।
তুহান-ওই আমি তোমাকে ভালোবাসার জন্য ঝাপ দিতে গেছিলাম।আর তুমি কি বলো এইসব?
আরিশা-আমি বলছি নাকি ঝাপ দিতে?
তুহান-আজ তোমাকে আমি কি করি দেখো।
বলেই উঠে আরিশার হাত ধরে টেনে নিয়ে রুমে চলে গেলো তুহান।
তুহান-বলো আমার মাঝে কিসের অভাব আছে?
আরিশা-আমাকে যেতে হবে।
তুহান-শুনো তুমি নতুন জীবন শুরু না করলেও অনি অপরাধ বোধে ভুগবে।আর তোমার এত বয়স হয়ে যায় নাই যে তুমি নতুন জীবন শুরু করতে পারবা না।
আরিশা-ভালো বলেছেন।আমি যার সাথেই আমার জীবন টা গুছিয়ে নেয়,সে কি পারবে আমার মেয়েটাকে অনির মত করেই আপন করে নিতে।
তুহান-আমি অবশ্যই পারবো।ভরসা করে দেখো আমাকে।
আরিশা চুপ হয়ে গেলো।তুহান এসো হাটু গেড়ে বসে পরলো আরিশার সামনে।আরিশার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,উইল ইউ ম্যারি মি?
আরিশা কিছুক্ষণ ভেবে তুহানের হাতটা ধরতেই তুহান আনন্দে আরিশাকে কোলে নিয়ে ঘুরাতে লাগলো।চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলো-ভালোবাসি,ভালোবাসি,অনেক ভালোবাসি তোমাকে।
অনি-চিল্লানি শেষ হলে বাইরে আয়।আমরা ওয়েট করতেছি।
অনির কথা শুনে দুইজনেই বাইরে আসলো।সবাই জোরে হেসে উঠতেই আরিশা লজ্জায় মাথা নিচু করে পেললো।
অরিত্রি-ভাবি তুমি তাহলে আমার আরেক ভাই এর বউ হয়েই থাকলে।
আরিশা-আচ্ছা উনার পায়ে আঘাত পাইছে তো আমি ওরে নিয়ে রুমে যাচ্ছি।
অরিত্রি-কোলে করে ঘুরানোর বেলায় আঘাত ছিলো না?
তুহান-চুপ থাক তুই।আরিশা চলো তো।
তুহান আরিশাকে নিয়ে চলে যেতে নিলেই অনি এসে বললো,ট্রিট কবে দিবি?
তুহান-গত শুক্রবারে।
বলেই দরজা বন্ধ করে দিলো।নিহিতা হেসে উঠে বললো,গত শুক্রবারের ট্রিটের জন্য তহালে অপেক্ষা করো।আমি চললাম ঘুমাতে।
অনি-আরে আমিও আসতেছি।
অনি চলে যেতেই অরিত্রি নিলয়ের দিকে তাকালো।নিলয় তাকিয়ে আছে বন্ধ হয়ে দরজাটার দিকে।
অরিত্রি-কি হলো?
নিলয়-আচ্ছা আরিশা আর তুহান এখন কি করবে?
অরিত্রি-তোমার মন্ডু করবে,চলো এখান থেকে।
নিলয়-একটু ওয়েট করে দেখি।
অরিত্রি-নিলয় তোমারে আমি আজকে…
অরিত্রির রাগ দেখে নিলয় দৌড় দিলো।অরিত্রিও নিলয়ের পিছন পিছন ছুটলো।
তুহান-আরিশা ভালোবাসা বলতে কী বুঝো?
আরিশা-ভালোবাসা মানে বিশ্বাস।পাশে থাকার কথা দেওয়া।সব সময় যে পাশে থাকবে।যাকে ভালোবেসে সবটা ছাড়া যাবো।যার সাথে জীবন টা কাটানোর কথা ভাবা যাবে।
তুহান-আচ্ছা আমি যদি তোমাকে সবটা সবটা দেয় তুমি থাকবে তো আমার হয়ে।আমরা ঐশ্বর্য কে নিয়েই থাকবো।আমাদের আর কোনো সন্তানের দরকার নেই।
আরিশা-আমাদের তো বিয়েই হলো না।তুমি কত কি প্ল্যান করতাছো।
তুহান-হয় নি তো কি হয়েছে।হয়ে যাবে।তুমি রাজি,আমিও রাজি,কালকেই কাজি ডাকবো।
আরিশা-আচ্ছা ঐশ্বর্য একা আছে।আমি চলি।
তুহান-চলো আমিও যাচ্ছি।
আরিশা আর তুহান ঐশ্বর্যের রুমে গেলো।তুহান ঐশ্বর্যের পাশে এসে ওর কপালে চুমু দিলো।ঐশ্বর্য কে জড়িয়ে ধরলো কিছুক্ষণের জন্য।আরিশা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।তুহান আরিশার দিকে তাকিয়ে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো।অল্প কিছুদিন,কিছু স্বপ্ন সত্যি হওয়া,নতুন অধ্যায়ের প্রতিক্ষায় থাকা সময়টা হয়ত একটু বেশি-ই দীর্ঘ মনে হয়।তবে স্বপ্ন সত্যি করার প্রতিক্ষা তো করতেই হয়।ভালোবাসা কখনো ঠুনকো হয় না,তাই একটু অপেক্ষা শেষে যদি সূর্যের আলো আসে জীবনে,তাহলে অপেক্ষা করাটাই শ্রেয়।
সমাপ্ত
লেখিকাঃজান্নাতুল ফেরদৌস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here