প্রতিশোধ অতঃপর ভালোবাসা পর্ব ৫+৬

প্রতিশোধ_অতঃপর_ভালোবাসা
#পার্ট_০৫+৬
#জান্নাতুল_ফেরদৌস
অরিত্রি ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও পারলো না ছাড়িয়ে নিতে।অরিত্রির শরীর বেয়ে ভয়ের শিহরন বয়ে গেলো।অরিত্রি অজ্ঞান হয়ে গেলো।পরেরদিন সকালে অরিত্রির জ্ঞান আসতেই অরিত্রি দেখলো সে নিলয়ের বুকে শুয়ে আছে।
নিলয়-উঠছো তাহলে?
অরিত্রি-কী হয়েছে আমার?
নিলয়-রুম থেকে বের হয়ছিলাম রাতে পানির জন্য।দেখলাম দরজার কাছে তুমি অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছো।তাই তোমাকে কোলে করে রুমে আনলাম।বর তোমার এখন মাত্র জ্ঞান ফিরলো।
অরিত্রি-কে জানি আমার মুখ চেপে ধরছিলো নিলয়।
নিলয়-এখানে আমি,আব্বু ছাড়া আর কেউ নেই।মনে হয় স্বপ্ন দেখেছো।
অরিত্রি-আমি ভুল দেখি নি।
নিলয়-উঠো তো।ফ্রেশ হয়ে আসো যাও।
অরিত্রি মাথা নেড়ে বাথরুমে গেলো।আয়নার দিকে তাকাতেই চিৎকার দিয়ে উঠলো অরিত্রি।নিলয় দৌড় দিয়ে আসতেই দেখলো অরিত্রি ভয়ে কাপছে।অরিত্রিকে ধরতেই অরিত্রি ভয়ে নিলয়কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
নিলয়-অরিত্রি কী হলো?
অরিত্রি-আআআয়নায় দেখো।
নিলয়-কী দেখবো?
অরিত্রি-কেউ ছিলো?
নিলয়-কে?
অরিত্রি-প্রতিশোধ নিবে সে।
নিলয়-আরে কেউ নেই।তুমি ফ্রেশ হও আমি এখানে আছি।
অরিত্রি-থাকবে তো?
নিলয়-হুম আছি।
ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে বিছানায় বসে পরলো অরিত্রি।নিলয় পাশে বসে বললো,অরিত্রি তুমি বাড়িতে ফিরে যাও।
অরিত্রি-না আমরা বিয়ে করবো কবে নিলয়?
নিলয়-আমি তোমাকে কাল তো সবটা বললাম।
অরিত্রি-প্লিজ নিলয় আমাকে বিয়ে করে নাও।
নিলয়-অরিত্রি ছেলে মানুষি কইরো না।
অরিত্রি-তুমি বুঝছো না কেন নিলয়?
নিলয়-তুমি থাকো।আমি খাবার আনছি।
নিলয় বের হয়ে গেলো।অরিত্রির একটা কথাও শুনলো না। বিকেলে অরিত্রি রুমে বসে ছিলো।তখন-ই নিলয় আসলো অরিত্রির রুমে।
নিলয়-এই নাও রেডি হও।
অরিত্রি-কেনো?
নিলয়-আমাদের বিয়ে হবে।
অরিত্রি-সত্যি বলছো তুমি?
নিলয়-হুমম।
নিলয়ের কথাতে খুব খুশি হয় অরিত্রি।তাড়াতাড়ি নিলয়ের কথা মত সাজ গোজ শেষ করে পেললো অরিত্রি।নিলয় রুমে এসে-ই চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে পেললো।
অরিত্রি-কী করছো নিলয়?
নিলয়-সারপ্রাইজ দিবো।
অরিত্রি-কিসের সারপ্রাইজ?
নিলয়-চলো আমার সাথে।
অরিত্রি-ঠিক আছে।
নিলয় অরিত্রিকে নিয়ে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসিয়ে দিলো।
নিলয়-অরিত্রি আগে এই কাগজ গুলোতে সাইন করে দাও।তারপর চোখ খুলবা।
অরিত্রি-ওকে।
না দেখেই সব গুলো কাগজে অরিত্রি সাইন দিলো।
নিলয়-আজ থেকে তুমি আমার হলে।
এই বার নিলয় অরিত্রির চোখ খুলে দিলো।অরিত্রির সামনে হাটু গেড়ে বসে অরিত্রির হাতে একটা আংটি পড়িয়ে দিয়ে হাতে চুমু দিলো নিলয়। অরিত্রি খুশিতে সবার সামনেই নিলয়কে জড়িয়ে ধরলো।কিছুক্ষন পর লজ্জা পেয়ে ছেড়ে দিলো।
নিলয়-তোদেরকে অনেক ধন্যবাদ রে।অনেক বড় উপকার করলি।
রাফসান-আরে আমরা তো ফ্রেন্ডেই।ফ্রেন্ডের জন্য এই টুকু করতে পারবো না?
নিলয়-আছা চল অরিত্রির সাথে কথা বল।
রাফসান আর রোহান এসে অরিত্রির সাথে কথা বললো।কিছুক্ষন পর সন্ধ্যা হয়ে আসতেই তারা খাবার খেয়ে বাড়ি চলে গেলো।রাতে নিলয় রুমে এসেই অরিত্রিকে কোলে তুলে নিলো।
অরিত্রি-কী হচ্ছে নিলয়?
নিলয়-আজ থেকে তুমি আমার রুমে থাকবা।
অরিত্রি নিলয়ের কথায় লজ্জা পেয়ে নিলয়ের বুকে মুখ লুকালো।নিলয় রুমে নিয়ে গিয়ে অরিত্রিকে শুইয়ে দিয়ে অরিত্রির পাশে শুয়ে পরলো।অরিত্রি নিলয়ের দিকে তাকাতেই দেখলো নিলয় অরিত্রির দিকে তাকিয়ে আছে।লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে তাকালো অরিত্রি।নিলয় অরিত্রির হাতটা ধরতেই অরিত্রির মধ্যে অজানা শিহরন বয়ে গেলো।
চলবে…..
লেখিকাঃজান্নাতুল ফেরদৌস।
#প্রতিশোধ_অতঃপর_ভালোবাসা
#পার্ট_০৬
#জান্নাতুল_ফেরদৌস
নিলয় অরিত্রির হাতটা ধরতেই অরিত্রির মধ্যে অজানা শিহরন বয়ে গেলো।আস্তে আস্তে নিলয় অরিত্রির কাছে আসতে লাগলো।অরিত্রির নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছিলো।নিলয় কাছে আসতেই চোখ বন্ধ করে পেললো অরিত্রি।নিলয় অরিত্রির ঠোঁট স্পর্শ করলো।অরিত্রির যেনো নিলয়ের প্রতিটা স্পর্শে পাগল হয়ে যাচ্ছে।সময়টা কাটছিলো দুইজন মানুষের এক হওয়ার সাথে।সময়ের সাথে নিলয়ও ভালোবাসায় ভরিয়ে তুললো অরিত্রিকে।মিশে গেলো দুইটা মানুষ ভালোবাসার অতল সাগরে।
পরেরদিন সকালে…
অরিত্রির ঘুমটা ভাঙ্গতেই লজ্জায় নিজের শরীরের দিকে তাকাতে পারছিলো না সে।উঠে যেতে নিলেই নিলয় হাত ধরে টান দিতেই অরিত্রি নিলয়ের বুকের উপর এসে পড়ে।নিলয় অরিত্রির চুল গুলোতে বিলি কেটে দিতে দিতে বললো,এত লজ্জা পাচ্ছো কেন?কাল তো সব লজ্জা ভেঙ্গে দিলাম।
অরিত্রি নিলয়ের দিকে তাকাতে পারছিলো না।নিলয় অরিত্রির মুখটা তুলতেই দেখলো অরিত্রির চোখে পানি।
নিলয়-কাঁদছো কেনো?
অরিত্রি-আমার মা আমার জন্য চিন্তা করতে করতে মনে হয় অসুস্থ হয়ে গেছে।
নিলয়-যেতে চাও?
অরিত্রি-না আমি এখন আর তোমাকে হারাতে পারবো না।
নিলয় অরিত্রির কপালে চুমু দিয়ে বললো, যাও তাহলে ফ্রেশ হয়ে আসো।
অরিত্রি উঠে চলে গেলো।গোসল করে বের হতেই নিলয় উঠলো।অরিত্রি চা করে নিলয়ের বাবার রুমে গিয়ে দেখলো নিলয়ের বাবা কথা বলছে।
অরিত্রি-বাবা আসবো?
নিলয়ের বাবা-আয় মা।
অরিত্রি-নিন বাবা চা নিন।
নিলয়ের বাবা-কতদিন পর তুই আমাকে চা খাওয়াচ্ছিস মা।
অরিত্রি-এবার থেকে প্রতিদিন খাওয়াবো বাবা।
নিলয়ের বাবা-সত্যি খাওয়াবি মা?
অরিত্রি-সত্যি খাওয়াবো।
নিলয়ের বাবা-তুই আমাকে ছেড়ে আর কোথাও যাবি না তো মা?
অরিত্রি-যাবো না বাবা।এখন খেয়ে নিন।
নিলয়ের বাবা-ঠিক আছে মা।
নিলয়ের বাবার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে অরিত্রি নিলয়ের রুমে গেলো।নিলয় কোথাও বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।
অরিত্রি-কোথায় যাচ্ছো?
নিলয়-এই তো বের হতে হবে।
অরিত্রি-কই?
নিলয়-দেখো অরিত্রি আমি এত কৈফিয়ত দিতে পারবো না।
অরিত্রি-ঠিক আছে।
অরিত্রি বের হতে নিলেই নিলয় হাত টেনে ধরে অরিত্রির ঘাড়ে চুমু দিলো।
নিলয়-রাগ করো না পাগলি বউ টা। ভালোবাসি তোমাকে।
অরিত্রি-ভালোবাসি।
নিলয়-হাসো।
অরিত্রি মৃদু হাসতেই নিলয় বের হয়ে গেলো।দুপুরে অরিত্রির খুব ক্ষিধা লাগলো।কিচেনে গিয়ে দেখলো তেমন কিছু-ই নেই।রুমে এসে নিজের ফোন টা হাতে নিলো।সেদিন বাড়ি থেকে পালাতে গিয়ে ফোনটা অফ করছিলো,আর অন করা হয় নি।ফোনটা অন করলো অরিত্রি।অন করতেই মেসেজ আসা শুরু করলো।পাঁচ মিনিট মেসেজ গুলো দেখে রিপ্লাই করলো না অরিত্রি।তারপর নিলয়কে কল দিলো।কিন্তু ধরলো না।কয়েকবার ট্রাই করলেও নিলয় কল রিসিভ করলো না।অরিত্রির খুব রাগ হয়।ফোনটা ছুড়ে মারতেই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো।
অরিত্রি নিলয়ের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পরলো। নিলয় এসেই অরিত্রিকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললো।ঘুম ভাঙ্গতেই অরিত্রির গালে থাপ্পড় মারলো।চোখের ঘুম উড়ে গিয়ে নিলয়ের দিকে তাকালো অরিত্রি।
নিলয়-তোমার মাথায় কী আছে হ্যা?তোমার নম্বর থেকে এখন আমরা কই আছি সবটা জেনে যাবে তোমার বাবা আর ভাই।
অরিত্রি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো আমি বুঝতে পারি নি?
নিলয়-বাচ্চা তুমি?
নিলয়ের চিৎকারে অরিত্রি ভয় পেয়ে গেলো।জোরে কেঁদে দিলো।নিলয় অরিত্রির কান্না দেখে কিছুটা শান্ত হলো।অরিত্রিকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
নিলয়-আমাদের চলে যেতে হবে।রেডি হয়ে যাও।সরি আমার মাথা ঠিক ছিলো না।
অরিত্রি মাথা নাড়লো।বের হয়ে গেলো নিলয়-অরিত্রি আর নিলয়ের বাবা।ওরা যাওয়ার ত্রিশ মিনিট পরেই পুলিশ আসলো।কিন্তু খুজে পেলো না কাউকেই।নতুন একটা বাসায় গিয়ে উঠলো সবাই।
নিলয়-অরিত্রি এই বাসাটা আমার আম্মু নিজ হাতে সাজিয়েছিলো।এটা আমাদের নিজেদের বাসা।
অরিত্রি-তাহলে ভাড়া বাসায় থাকতে কেন?
নিলয়- বাসার খোজ পেয়ে যাবে পুলিশ সেটা আমি জানতাম।
অরিত্রি-আমার ভুল হয়ে গেছে।
নিলয়-আমি কিছু মনে করি নি।আর এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে-ই তোমাকে নিয়ে যাবো তোমার বাবার বাড়িতে।
অরিত্রি-সত্যি যাবো?
নিলয়-হুম সত্যি।
অরিত্রি খুশিতে জড়িয়ে ধরলো নিলয়কে। নিলয় হাসলো অরিত্রির বাচ্চামি দেখে।ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে অরিত্রির জন্য সেটা অরিত্রি কখনো-ই ভাবে নি।
চলবে…..
লেখিকাঃজান্নাতুল ফেরদৌস।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here