প্রতিশোধ পর্ব ৭+৮

#প্রতিশোধ
#পার্ট_7
#জামিয়া_পারভীন_তানি

__আবির কিছু বলার আগেই নিরা জ্বলে উঠে
আপনাকে না বলেছি আমার আসেপাশে আসবেন না তাও কেন আসেন?

__তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে তাই।

__কি যা তা বলেন, আর এসব কথা ভুলেও বলবেন না।

__কেন, এমন কেন করো তুমি?

__চুপ! একদম চুপ! এক্ষুনি বেরিয়ে যান কিচেন থেকে।

__ওকে যাচ্ছি। আর আসবো না।

__হুহহ!

নিরা কাজ শেষ করে বেরিয়ে এসে আবির কে দেখতে পায়না। তাই ভাবে আবির উপরে গেছে, খেতে ডাকার জন্য উপরে গিয়েও না দেখে মন খারাপ করে বেরিয়ে আসে। কোথায় উধাও হয়ে গেলো , মেজাজ খারাপ করে শুধু। যেখানে খুশি সেখানে যাক আমার কি ? অন্যমনস্ক হয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে আবিরের সাথে ধাক্কা লাগে

__কি ব্যাপার, একটু না দেখেই মন খারাপ হয়ে আমাকে খুঁজতে গেছিলে।

__মোটেও না।

__আমি তো বুঝি, তুমি মিথ্যা বলছো কেনো?

__সরে দাঁড়ান।

__এতো রাগ দেখাও কেনো? মনে মনে তো ঠিকিই খোঁজ করো।

__বয়েই গেছে আপনাকে খুঁজতে।

আবির নিরার হাত ধরে নিজের দিকে টান দেয়। এতে নিরা আবিরের খুব কাছে চলে আসে, আবির শক্ত করে নিরাকে জড়িয়ে ধরে। নিরা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে, তখন আবির নিরার কানের কাছে গিয়ে বলে ” আমি তোমাকে ভালোবাসি নিরা “। নিরা কোনরকম নিরাকে সরিয়ে দিয়েই থাপ্পড় মেরে বসে।

__আই হেট ইউ মিঃ

__এমন করে বলিও না প্লিজ।

__আর কখনো এমন করলে আমি আপনার অনুপস্থিতিতে সুইসাইড করবো।

__তুমি এভাবে বলতে পারলে। তাহলে তোমার উপস্থিতি তেই আমি মরি।

__মানে! কি বলছেন? ( ভয় পেয়ে)

__আবির কথা না বাড়িয়ে কিচেন থেকে চাকু এনে নিজের হাত এ অনেক গুলি যায়গা কেটে দেয়। একসাথে প্রচুর রক্ত পড়তে থাকে আবিরের হাত থেকে। নিরা আবির কে বলতে থাকে

__এসব বন্ধ করেন, আমার ভয় করে।

__(কোন উত্তর নাই)

__প্লিজ, এমন করেন কেনো।

__( হাত টা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে)

__ হাত টা বাঁধুন, প্রচুর রক্ত পড়ছে।

__ তাতে তোমার কি।

__এমন করিয়েন না প্লিজ।

__ দূরে যাও, আমার কথা তোমার না চিন্তা করলেও হবে।

__ নিরা আবির কে জড়িয়ে ধরে বলে ” প্লিজ এমন করবেন না, বন্ধ করুন এসব” ( বলে খুব কাঁদতে থাকে)।

__ আমি মরলে তুমি তো খুশিই হবে, তাহলে কাঁদছো কেনো?

__ আপনি কি বলছেন এসব, আপনি আমার স্বামী। ভালো হোন মন্দ হোন আমি আপনার সাথেই মানিয়ে নিতে চাই। কথা দিচ্ছি আর খারাপ ব্যবহার করবোনা, প্লিজ তাও এসব বন্ধ করুন।

__ এসব বলে লাভ নাই।

__ আপনি যা বলবেন সেটাই করবো। আপনাকে ভালোবাসি বলে আবিরের পা ধরে নিরা।

__ আরে কি করছো এসব, তোমার স্থান আমার পায়ে নয় হৃদয়ে।

__ যদি ভালোবাসি তাহলে এসব বন্ধ করবেন, হ্যাঁ ভালোবাসি তাও বন্ধ করেন।

__ আবির যাই হোক নিরাকে কাঁদাতে চায় না তাই উপরে গিয়ে নিজের হাত ব্যান্ডেজ করে নিচে নেমে আসে। ততোক্ষণে দেখে নিরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। নিরাকে হাসানোর জন্য বলে..

__ তোমার কোমল হাতের তৈরি খাবার খাইয়ে দিবেনা।

__ হু দিবো, বলেই রেডি করে দেয়।

__ নিরা আগে আবিরকে খাইয়ে নিজেও খায়। নিরা বলে

__ হাত কেটেছেন, ইনফেকশন হতে পারে৷ এন্টিবায়োটিক আছেনা বাসায়।

__ হুম ঘরে আছে।

__ওকে ঘরে যান, পানি নিয়ে আসছি।

__ হুম। (বলে আবির চলে যায়)

নিরা নিচে সব ঠিকঠাক করে পানি নিয়ে উপরে গিয়ে আবির কে ওষুধ খাইয়ে দেয়।

নিজের দুঃখ কে মাটিচাপা দিয়ে আরেকজনের সেবা করা লাগছে ( মনে মনে বলে নিরা )।

আবির বিছানায় শুয়ে পড়ে, নিরাও একপাশে শুয়ে কষ্ট গুলোর কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যায়। সকালে নিরা ঘুম ভেঙে দেখে আবির তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। যেন নিষ্পাপ চেহেরা আবিরের, ঘুমন্ত অবস্থায় খুব মায়াবী লাগছে। বেশি কিছু না ভেবে আবিরকে সরিয়ে দিলো নিরা। উঠে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গিয়ে খাবার বানিয়ে এসে আবির কে ডাক দেয়। আবির উঠে না দেখে আবিরের কপালে হাত দিয়ে দেখে আবিরের জ্বর এসেছে। তাও আবির কে ডেকে তুলে ফ্রেশ হতে বলে। আবির নিরার কথা শুনে ফ্রেশ হয়ে নিরার কথা মতো খাবার খেয়ে ওষুধ খেয়ে নেয়।

__ চুপচাপ শুয়ে না থেকে গোসল করে আসেন, এতে জ্বর কমবে।

__ হুম জানি! কিন্তু ঠান্ডা লাগে তো ।

__ তাড়াতাড়ি করবেন।

__ আবির ওয়াশরুমে গিয়ে ৫ মিনিটে শাওয়ার শেষ করে এসে ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে নিরা কে জড়িয়ে ধরে।

__ আমি কি কম্বল নাকি?

__ হুম

__ কম্বলের নিচে যান কাজ আছে কিছু।

__ আমার থেকেও বড় কি কাজ শুনি।

__ ঘর টা এলোমেলো হয়ে আছে গোছাতে হবে।

__ ও নিয়ে তোমার টেনশন করতে হবেনা।

__ কেনো?

__ রোমানা আজ আসবে।

__ কে সে?

__ এই বাসার সব দায়িত্ব তার। চাচী হয়, দুঃসম্পর্কের আত্মীয়। কিন্তু আমি ছোট থেকেই রোমানা বলেই ডাকি।

__ ওহহ! কখন আসবে?

__ একটু পরেই

__ কে বললো?

__ সেইই ফোন দিয়েছিলো কাল।

__ এতো দিন কোথায় ছিলো?

__ বাড়ি গিয়েছিলো।

__ ছুটি দিয়েছিলেন তাইনা।

__ হুম, কেনো বলোতো।

__ কিছুনা ( বুঝলাম অন্যায় করার জন্যই বাড়ি ফাঁকা করেছিলেন)।

__ যা ভাবছো, তাই ঠিক।

__ কি ভাবলাম?

__ কিচ্ছুনা 🤣

কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বাজে, নিরা দরজা খুলতে যায়।

মেয়েটা প্রবেশ করেই নিরাকে জিজ্ঞেস করে

__ কে তুমি? এখানে কি করছো?

__ আপনি কে?

__ তার আগে বলো তুমি কে?
যাইহোক আবির কোথায়।

__ সে তো বাসায় আছে।

__ সরো আমার সামনে থেকে বলেই নিরাকে সরিয়ে ভিতরে ঢুকে সে।

__ আরে কোথায় যাচ্ছেন? কে আপনি?

__ তা তোমার জেনে লাভ কি? তোমাকে কি এই বাড়িতে নতুন কাজে দিছে নাকি? রোমানা কোথায়?

__ কি যা তা বলছেন?

__ আবির রুমে আছে তাই না।

__ আমি কাজের লোক না, আবিরের বউ আমি।

__ What?

__ জ্বী হ্যাঁ।

__ আবির বিয়ে কবে করলো, মজা নাও। ( দিয়েই উপরে যেতে থাকে)

__ আপনি পরিচয় না দিয়ে ভিতরে যেতে পারেন না।

__ এই ফকিন্নির মেয়ে তুই কে রে আমাকে আটকানোর।

__ ” তুমিও কাউকে অপমান করতে পারোনা। ” আবির বলে
( চিল্লাচিল্লি শুনে আবির নিচে নামতে গিয়েই এই কথা শুনে ফেলে তাই )
#প্রতিশোধ
#পার্ট_8
#জামিয়া_পারভীন_তানি

__ “আবির তুমি এসব বলছো টা কি, তুমি অন্য কারোর জন্য আমাকে অপমান করছো? ” মেয়েটি বলে আবিরকে।

__ “দেখো আমার কাছে তোমার কোনই ভ্যালু নাই। হয়তো ছিলো কোন একদিন এখন কিছুই নাই। তুমি চলে যেতে পারো, আর আনার সাথে কন্টাক্ট করার চেষ্টা ও করিও না।। “আবির বলে মেয়েটাকে।

__ ( মেয়েটা আবিরের কলার ধরে বলে ) ” এতো বড় কথা তুমি আমায় বলতে পারোনা আবির। আমি তো তোমায় ভালোবাসি, তার চেয়েও বড় কথা দুই দিন পর আমাদের বিয়ে। সব কিছু ঠিক ছিলো কিন্তু তুমি মাঝখানে এমন কথা কেনো বলছো আবির। ”

__ ( মেয়েটাকে সরিয়ে দিয়ে) দেখো অনু ( মেয়েটার নাম অনন্যা, আবির অনু বলে ডাকে ) , তোমাকে আমার বিয়ে করা সম্ভব না। কারণ আমার বিয়ে হয়ে গেছে নিরার সাথে। ( নিরার কাঁধে হাত রেখে বলে আবির)

__ ” তুমি আমার সাথে ফাজলামি করছো তাই না আবির, কতো টা ভালোবাসি তার পরীক্ষা নিচ্ছো তাই না। ” (অনু)

__ ” ফাজলামি করার কোন মুডে আমি নাই মিস অনু ” ( আবির)

__ ” এটা বিশ্বাস করিনা, বিয়ের দুই দিন আগে এসব কি বলছো তুমি “। ( অনু)

__ ” দেখো অনু, তোমাকে আমি মন থেকে কখনো ই ভালোবাসিনি। বাবা বিয়েটা ঠিক করেছিলেন বলে মত দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি বিয়ে করেছি আমার প্রেমিকা নিরা কে। তার সাথেই সংসার করবো, সেটা তোমার বাবা কে জানিয়ে দিয়েছি, তাও কেনো তুমি এখানে এসেছো? আমি চাই তুমি আমাকে কখনো বিরক্ত করবেনা। ” ( আবির বলে অনুকে)

__ ( নিরা আবিরের কাছ থেকে সরে এসে বলে) বিয়ে যখন ঠিকই করা ছিলো, তাহলে বিয়ে করতে কি প্রব্লেম। আর আমি আপনার প্রেমিকা ছিলাম ও না হবোও না কখনো। বিয়ে করে সুখী হয়েন, আমি চলে যাবো এই বাসা থেকে। ( বলেই নিরা উপরে চলে যায়)

__ নিরা ভুল বুঝোনা ( আবিরের কথা নিরা শোনেও না)

__ বাহ আবির বাহ, তুমি একটা অমানুষ, নইলে আমার সাথে এমন করতে না তুমি। বিয়ের সব কিছু ঠিকঠাক, কার্ড ছাপানো হয়ে গেছে আর তুমি অন্য কে নিয়ে সংসার করছো। বেশ ভালো, তোমাকে সুখে থাকতে দিবোনা। বিয়ে তোমাকে করতেই হবে ওই দিনেই, ওই সময়ের, পারলে আমি কেশ করে আসবো। ( বলে অনন্যা চলে যায় আবিরের বাসা থেকে)

__ ( দরজা খোলাই ছিলো , তাই রোমানা কখন এসেছে আবির খেয়াল করেনি। রোমানা আবির কে এসে বলে) ” কি হয়েছে আবির বাবা? ” অনু মা এতো রাগ করে চলে গেলো ক্যান ? ”

__ ” খালা তুমি এসেছো ভালো করেছো, দুপুরের খাবার ব্যবস্থা করো ” (আর কিছু না বলে আবির উপরে যায়)

__ উপরে গিয়ে দেখে নিরা বিছানায় বসে আছে। নিরার পাশে গিয়ে বসতেই আবিরকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় নিরা।

__ ” দেখুন! আমি আপনাকে ভালোবাসি না, বাসবো ও না কখনো। আর আমার কাছে আসার চেষ্টা ও করবেন না “।

__ দেখো! এতো রাগ করতে হয়না, তুমি খুব রাগী। রাগ টা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করো।

__ জ্ঞান দিয়েন না, আপনার জ্ঞান শুনার জন্য আমি বসে নাই। ( নিরা)

__ ” রাগ তোমার হওয়া টা স্বাভাবিক, আমি তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করিনি সেটা ঠিক। কিন্তু এখন ভালোবাসি, তোমাকে সত্যিই খুব ভালোবেসে ফেলেছি নিরা। ”

__ এসব ফালতু কথা কখনো ই বলবেন না। ( নিরা)

__ ওকে কাজের কথাতে ই আসি তাহলে, রোমানা চলে এসেছে সে রান্না করছে। আর তার চেয়েও বড় কথা পরশু আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান। কেনাকাটা হবে তোমার পছন্দের, রেডি হয়ে থেকো।

__ কিসের অনুষ্ঠান? আমি এর মাঝে নাই।

__ দেখো, সব সময় জেদ ভালো না। ২ ঘন্টার মাঝে যেন তোমাকে রেডি দেখি।

__ আপনার কথা অনুযায়ী আমি চলতে পারবোনা।

__ আবির একটু রাগ করে নিরাকে হটাৎ ই কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ভিজিয়ে দেয়। নিরা আবির কে মারতে থাকে খুব কিন্তু তাও ছাড়ে না। আবির আর নিরা দুজনেই ভিজে গেছে তখন নিরা বাধ্য হয়ে শাওয়ার শেষ করে। আবির ততোক্ষণে বের হয়ে গেছিলো। নিযে পরিষ্কার হয়ে নিরার জন্য ড্রেস রেডি করে দেয়, গয়না সহ। নিরা রাগ করে থাকলেও রেডি হয়৷

__আবির ডাইনিং টেবিলে বসে আছে আর রোমানা খাবার দিচ্ছিলো। তখন নিরা নিচে নামে, নিরাকে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিতে বলে। নিরাও কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নেয়, কারণ জানেই ঝগড়া করে লাভ নাই। আবির নিরাকে রোমানার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। রোমানাও বউ মা বলে খুব সুন্দর করেই মেনে নেয়।

__ এরপর দুইজনে শপিং এ যায়। বিয়ের ড্রেস কিনে আবির, নিরার পছন্দেই। আবিরের গুলা আগে থেকেই কেনা ছিলো । গয়না কিছু কিনে সন্ধ্যার পর রেস্টুরেন্টে ঢুকে। সেখানে ডিনার করে রোমানার জন্য এক প্যাকেট নিয়ে বাসায় আসে।

__ বাসায় এসে দেখে আবিরের বাবা মা এসেছে, নিরার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় আবির।

__ নিরা সবাইকে সালাম দেয়, কিন্তু নিরাকে যে আবিরের বাবা মা মানতে পারেনি সেটা বুঝতে পারে আবির। এতে আবিরের তেমন কিছুই যায় আসে না কারণ আবির সারাটা জীবন একা একা ই বড় হয়েছে। আবিরের বাবা মা শুধু টাকার পিছনে দৌড়িয়েছে। আবিরের জন্য কোন স্পেশাল সময় ছিলো না তাদের। আবিরের কাছের মানুষ বলতে ছিলো এক রোমানা আর একমাত্র ফ্রেন্ড মিশি। আবিরের বাবা মা দুইজনেই ডাক্তার, তারা সব সময়ই ব্যস্ত থাকতো । আর এখন বেশির ভাগ সময় ই বিদেশে থাকে। যেখানে টাকা বেশি তারা সেটাকেই বেছে নিয়েছে। । কিন্তু আবিরের জন্য কোন আদর ভালোবাসা ছিলো না কোনদিনই। আবিরের ইচ্ছে ছিলো শিক্ষক হবার কিন্তু বাবা মায়ের ইগোর কাছে হেরে গিয়ে মেডিকেলে ভর্তি হতে হয়। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে প্রফেসর হয়ে শিক্ষক হবার ইচ্ছেটাই শুধু পূরণ করতে পারে।

__ তৃণার বাবা আসে সেদিন রাত্রে, তৃণা তার বাবার গলা জড়িয়ে কি যে কান্না করে তা বলার মতো না। তৃণার বাবাও একটু আবেগী, তাই মেয়ের জন্য সব কিছুই করতে চায়। তৃণার বাবা প্লান করে নিরার যায়গাতে তৃণা করে দিয়ে নিরাকে সরিয়ে দিবে। তৃণার জন্মের সময় ওর মা মারা গেছে তাই এতো আদরের মেয়েকে কখনো কষ্ট দিতে পারবেনা তৃণার বাবা।

__ আচ্ছা ড্যাডি, ওই মেয়েটা আমার মতো দেখতে হলো কিভাবে। ( তৃণা)

__ নারে তেমন কিছুই না। তুই এতো ভাবিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে।

__ তুমি নিরাকে কি করবে?

__ আমার বাসায় নিয়ে গিয়ে বন্দী করে রাখবো।

__ নাহ এতে ধরা পড়ে যেতে পারো।

__ তো কি করতে বলছিস?

__ আমি বরং নিরা হয়ে যায়, আর ওকে তৃণা বানিয়ে দাও।

__ নাহ এটা সম্ভব না।

__ কেনো ড্যাডি, আমার জন্য এটুকুও পারবে না।

__ আচ্ছা দেখছি, কি করা যায়।

__ ওকে ড্যাডি, খুব আনন্দে জড়িয়ে ধরে তার বাবা কে।

তৃণার বাবা খুব টেনশন এ পড়ে যায়। যদি তৃণাকে নিরা বানিয়ে পাঠায় তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে। তাহলে কি করে কি হবে কিছুই বুঝতে পারেনা তৃণার বাবা।

একমাত্র মেয়ের সুখের জন্য সব কিছুই করতে পারবে কিন্তু কিভাবে সম্ভব। তৃণাকে উনি হারাতে চায় না, তার থেকে আবিরের বাবা মায়ের সাথে কথা বলবে ভাবে তৃণার বাবা। এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে তৃণার বাবা।

__ তৃণাও মহা খুশি যে তার একটা চাওয়া আবারো পূর্ন হবে। সাইরাও খুব খুশি তৃণার সুখে।

__ ______

আবিরের মা আর বাবা আবিরের সাথে মিটিংয়ে বসে। নিরা তখন উপরে ছিলো সেই সুযোগে বলে

__ আবিরের বাবা আবির কে বলে ” দেখো আবির, তুমি এমন একটা কাজ করেছো , সেটা আমাদের স্টাটাস এর সাথে সত্যিই যায় না। কোথায় আমাদের অবস্থা আর কোথায় একটা নিম্নঘরের মেয়ের স্টাটাস। ” ( খুব গম্ভীরমুখে বললেন)

__ আচ্ছা ড্যাড, তোমরা সারা জীবন এতো এতো আয় করেছো কার জন্য।

__ এটা কেমন কথা, আমাদের আর কেই বা আছে তুমি ছাড়া ( আবিরের মা)

__ আচ্ছা মম, এতো বাড়ি, গাড়ি সম্পত্তি দিয়ে আমি কি করবো যদি আমি কখনো মন থেকে সুখী নাই হতে পারি।

__ তাহলে অনন্যাকে বিয়েতে মত দিয়েছিলে কেনো? ( আবিরের বাবা)

__ কারণ তুমি পছন্দ করেছিলে তাই।

__ তাহলে এখন কি হলো, অন্য মেয়েকে তুমি কিভাবে বিয়ে করতে পারো।

__ এটা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো, কিন্তু বিয়ের পর আমি নিরাকেই ভালো বেসে ফেলেছি।

__ কিসের এক্সিডেন্ট ? ( আবিরের মা)

__ আমি তোমাদের এতো কিছুর জবাব দিতে পারবোনা মম। প্লিজ আমার ভালোবাসা কে তোমরা মেনে নাও। নইলে তোমরা তোমাদের বাসায় গিয়ে তোমাদের মতো ব্যস্ত লাইফ লিড করো। নিরার সাথে আমাকে সুখী থাকতে দাও প্লিজ।

__ তার মানে আমরা তোমার কেউ না তাইতো আবির ( মা)

__ তোমরা আমার বাবা মা, আমি যদি তোমাদের পছন্দ অনুযায়ী চলি। তাহলে আমার সুখের দিক টাও তোমাদের দেখা উচিৎ।

__ তোমার সাথে কথা বলেই বা কি লাভ, আমরা এখন পর হয়ে গেছি।

নিরা উপরে দাঁড়িয়ে সব শুনেও কিছু না বলে ঘরে গিয়ে কাঁদে। আসলে তো নিরা চায়নি এমন তার সংসার হোক। এরা এতো ই ধনী যে মানুষকে শুধু কস্ট দিতেই জানে। আমি তো নিম্নঘরের মেয়ে, এই বাড়িতে থাকা আমার সত্যিই অনুচিত। কাল সকালে ই চলে যাবে এমন টা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে।

মিটিং শেষ করে আবিরের মন ও খারাপ, ঘরে এসেই দেখে নিরা ঘুমিয়ে গেছে তাই নিরা কে আর জাগায় না। বিছানার এক পাশে সেও শুয়ে পড়ে।

,
,
,
আবিরের বাবা মা একটু রাগারাগি করেই নিজের বাসায় চলে আসেন। সকাল সকাল আবিরের বাবার ফোনে একটা নাম্বার থেকে ফোন আসে। জরুরি ভিত্তিতে আবিরের বাবাও দেখা করতে রাজি হয়ে যায়। আবিরের বাবা আর তৃণার বাবা একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করে।

,
,
তৃণাকে দেখার পর আবিরের বাবা যেন অবাক ই হয়। পুরোই নিরার মতো দেখতে কিন্তু পোশাক গুলো ই শুধু শর্টকাট। তৃণা বেশ মধুর কন্ঠে বলে

__ আংকেল , আমি আবির স্যার কে খুব বেশি ভালোবাসি। তাই তাকে একটু কস্ট দিই, কিন্তু আবির স্যার আমায় ভুল বুঝে। তারপর কিভাবে যে ওই মেয়েটা কে পেলো তা জানিনা।

শুধু একটা রিকুয়েস্ট, নিরাকে সরিয়ে দিয়ে আমাকে নিরার যায়গায় দিবেন। তাহলে আপনার সামাজিক স্টাটাস ও ঠিক থাকে। আর আমিও আবিরের বউ হয়ে গেলাম।

__ নিরার বাবা মনে মনে খুবিই খুশি হয়। ( কিন্তু হতাশা নিয়ে বলে) আবির অনেক চালাক, সব বুঝে নিবে। কিন্তু ওদের বিয়েও হয়ে গেছে৷ বিয়ে ছাড়া তুমি ওর সাথে থাকতেও পারবেনা।

__ আবার কায়দা করে বিয়ে করে নিবো।

__ আবির বুঝে ফেলবে, এমনিতেই আমাদের সাথে ওর ঝগড়া হয়, সে আরোও রেগে যাবে।

__ প্লিজ আংকেল, কিছু হতে দিবোনা।
আমরাই সব সামলিয়ে নিবো।

__ ওকে ওকে, তাহলে অনন্যার ফ্যামিলি কে ম্যানেজ করো।

__ অনন্যা কে আংকেল?

__ ওর সাথে আজ আবিরের বিয়ে হবার কথা ছিলো । কিন্তু আবির আগেই বিয়ে করে নেয় তাই খুব রেগে আছে।

__ আপনি শুধু ঠিকানা দেন, আমি সব ম্যানেজ করে নিবো আংকেল।

__ ওকে ভরসা করলাম, তোমার উপর।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here