প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব -১৭+১৮

#প্রয়োজনে_প্রিয়জন
#পর্ব_১৭ (বোনাস পার্ট)
#তানজিলা_খাতুন_তানু

চেনা কন্ঠস্বর, চেনা ডাক শুনে অতসী সামনে তাকিয়ে চমকে উঠল। মানুষটিকে দেখে আনন্দে দুই চোখ ভর্তি পানি আসলো, অস্ফূট স্বরে বেড়িয়ে আসলো…

– দাদাভাই।

অতসীর কন্ঠস্বর শুনে মানুষটি আবেগপ্রবণ হয়ে ওকে জড়িয়ে ধরতে যাবে। তখনি অতসী একপা পিছিয়ে গেল। মানুষটি আহত দৃষ্টিতে বলল..

– বোন, একবার দাদাভাইয়ের বুকে আয় বোন।
– আমি কারোর বোন নয়। আমি আপনাকে চিনি না।

কথাগুলো বলে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে চলে গেল অতসী। মানুষটি এত ভিড়ের মাঝে অতসী কে খুঁজে পেল না।

– আবারো হারিয়ে গেলি, প্লিজ বোন এইবার ফিরে আয় আমার বুকে।

অতসী আড়ালেই দাঁড়িয়ে ছিল, মানুষটির কথাগুলো সবটাই ওর কানে পৌঁছাল। নিজের কান্না আটকে রেখে বিরবির করে বলল…

– মাফ করে দিও আমাকে। আমি তোমাদের জীবনে আর ফিরতে পারব না।

অতসী বিধ্বংস্ত হয়ে কলেজ থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে বের‌ হতে পারল না, তার আগেই আদৃতের সাথে দেখা হয়ে যায়।

– এই অতসী। কি হয়েছে আপনার,আপনাকে এইরকম লাগছে কেন?
– কিছু না আমি বাড়ি যাবো।
– আর আপনার পুরস্কার।
– লাগবে না আমার কিছু, পথ ছাড়ুন আমি একাই চলে যেতে পারব। (ক্ষিপ্ত হয়ে বলল)

অতসীর এইরূপ টা সম্পূর্ণ নতুন আদৃতের কাছে। বুঝল কোনো বড়ো সমস্যা হয়েছে, তাই ওকে একা ছাড়াটা ঠিক হবে না।

– চলুন আমি পৌঁছে দিয়েই আসছি।

এলোমেলো পায়ে আদৃতের পেছন পেছন গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ল। মনখুলে কাঁদতে ইচ্ছা করছে, এতগুলো বছর পর আবারো কেন নিজের অতীত ওর সামনে ধরা দিল,কেন!

আদৃত বাড়ি না গিয়ে একটা ফাঁকা নির্জন এলাকায় নিয়ে আসলো ওকে।

– গাড়ি থেকে নামুন।
– কোথায় এটা।
– আসুন দেখতে পাবেন।

অতসী আর কিছু না বলে আদৃতের কথা মতোই গাড়ি থেকে নেমে ওর‌ সাথে হাঁটতে লাগল। আদৃত ওকে নিয়ে একটা ফাঁকা নদীর পাড়ে নিয়ে আসলো, জায়গাটা বড্ড নিরিবিলি তবে প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য আদর্শ জায়গা।

– বসুন।

সবুজ ঘাসের গালিচার উপরে দুজনে বসে পড়ল। অতসীর দৃষ্টি নদীর ওপর তীরের দিকে। আদৃত বুঝল অতসীর মন খুবই খারাপ, তাই মনটা ভালো করার উপায় খুঁজতে লাগল…

– আচ্ছা আমি যদি আপনাকে এইখানে মে*রে রেখে চলে যায় তো।

আদৃতের কথা শুনে অতসী ওর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে‌ বলল…

– তাহলে আমার থেকে খুশি আর কেউ হবে না।

এই উত্তরটা আদৃত কখনোই আশা করেনি।

– মানে!
– কিছু না এমনিতেই।

আদৃত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, তারপরে বলল..

– আপনাকে এইখানে নিয়ে এসেছি কেন জানেন!
– না।
– জানতে চান না।
– জেনে কি হবে।
– অদ্ভুত মেয়ে তো।
– আমি সত্যি অদ্ভুত জানেন না।
– হুঁ।

অতসী আদৃতের কথা বলার ধরন দেখে হেসে ফেলল। অতসীর হাসির দিকে তাকিয়ে আদৃত বলে উঠল…

– তুমি হাসলে মুক্ত ঝড়ে। সবসময়েই হাসি মুখে থাকবে ঠিকাছে।

আদৃতের কথা, আবার তুমি বলে ডাকা শুনে অতসী চমকে ওর দিকে তাকাল। আদৃত নেশালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।

– আপনি আমাকে তুমি বলছেন।
– হুমম,কেন বলতে পারি না।

অতসী কিছু বলল না। আদৃত নদীর অপর প্রান্তের দিকে দৃষ্টিপাত করে বলল…

– এইরকম একটা শুভ দিনে মন খারাপ করাটা তোমার কিন্তু একদম উচিত হয়নি।

অতসী নিশ্চুপ হয়ে রইল। আদৃত আবারো বলল..

– মনের উপরে আমাদের কোনো হাত থাকে না, অজান্তেই মন খারাপ ধরা দেয়। তবে আমাদের জীবনে সবসময়ে মন ভালো করার মানুষ থাকে না, নিজেদের মন খারাপ নিজেদেরকেই ঠিক করতে হয়।

– নিজেই তো ঠিক করি। নিজের মন খারাপ, খারাপ লাগা সবটাই নিজেকেই ঠিক করতে হয়। জীবন আমাকে যে পথে চালিয়ে নিয়ে চলেছে আমি সেই পথেই চলেছি। জীবনের প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেয়, আমি আমার জীবন নিয়ে সুখি।

অতসী কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মনটা কিছুটা হলেও শান্ত হয়েছে। আদৃত মুচকি হেসে বলল…

– মন ভালো হয়েছে।
– হুম।
– এইবার কি কলেজে যাবে?
– না। আমি বাড়ি ফিরব, কলেজে যাবো না।

আদৃত অতসীকে জোর করল না। ওকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

ওইদিকে…

প্রাইজ দেবার জন্য স্টেজে নাম ঘোষনা করতে শুরু করে দিল। জিনিয়া আর অন্য ছেলেটিকে পুরস্কৃত করার পর এইবার পালা হলো, অতসীর।

– … ডিপার্মেন্টে প্রথম হয়েছে অতসী। ওনাকে মঞ্চে আসার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

দুইবার ঘোষনা করা হলো। তবুও অতসীর পাত্তা নেয়, শেষবারের মতো ঘোষনা করা হলো। তখনি অতসী সিঁড়ি দিয়ে স্টেজে উঠে দাঁড়াল। সকলে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

– আমরা স্টেজে অতসীকে পেয়ে গেছি। ওর হাতে প্রাইজ তুলে দিচ্ছে ……..

অতসীর হাতে প্রাইজ তুলে দিল। অতসী প্রাইজ নিয়ে স্টেজ থেকে নেমে আসবে তখনি স্যারটি আবারো বলে উঠলেন…

– অতসী আবারো স্টেজে আসার অনুরোধ করছি।

অতসী সহ সকলেই চমকে উঠল। আবারো কেন ডাকছে সেটা বুঝে উঠতে পারল না।

– আপনারা সকলেই ভাবছেন আবারো কেন অতসী কে ডাকলাম তাই তো! অতসী শুধুমাত্র ডিপার্মেন্টে নয়, দ্বিতীয় বর্ষের সকল ছাত্রছাত্রীর মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এই বার ওর হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছে সমাজসেবী, কলেজের সভাপতি আকরাম খাঁন।

নামটা শুনে আদৃত চমকে উঠল। এতগুলো বছর পরে, হুট করেই মানুষটিকে দেখবে সেটা কল্পনাও করেনি। এখন মনে হচ্ছে, কেন কলেজে আসলো, না আসলেই ভালো হতো। আদৃতের সাথে বাড়ি ফেরার পথে হুট করেই, অতসী বলে উঠল…

– গাড়ি ঘোরান।
– মানে!
– কলেজে চলুন।
– তুমি সিরিয়াস তো।
– হুম,চলুন।

অতসীর কথা শুনে আদৃত গাড়ি নিয়ে কলেজের দিকে রওনা দিলো। আর একবার দৌড়েই স্টেজে উপস্থিত হয়েছে অতসী।

আকরাম খাঁন অতসীর হাতে পুরস্কার তুলে দিলেন, ওনার চোখগুলো জানো অতসী কে অনেককিছুই বলতে চাইছিল, কিন্তু অতসী সেইদিকে পাত্তা না দিয়ে, শান্ত স্বরে বলল…

– ধন্যবাদ।

অতসী প্রাইজ নিয়ে আদৃতের বাড়িতে ফিরে গেল। সকলেই খুব খুশি।

অন্যদিকে…

অতগুলো বছর পরে অতসী কে নিজের চোখের সামনে দেখে তব্দা খেয়ে বসে আছে আকরাম খাঁন। কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, বাড়ি ফেরার পর থেকেই চুপচাপ বসেই আছে।

সামিয়া রুদ্রকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করল…

– কি হয়েছে!

রুদ্র কোনো কথার উত্তর না দিয়েই নিজের ঘরে চলে গেল। রাতে খাঁন ভিলাতে কেউ কিছু মুখে তুলল না। রুদ্রর ওহ ভীষন মন খারাপ, সামিয়া ওর পাশে বলল…

– কি হয়েছে ফেরার পর থেকেই দেখছি তুমি আর বাবা মনম*রা করে বসে আছো। কি হয়েছে?

রুদ্র কিছু না বলে চুপ করে বসে রইল। কিছুক্ষণ যাবার পর নিজে থেকেই বলে উঠল…

– সামিয়া তুমি আমাদের‌ পরিবার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানো না। আমাদের পরিবারের অনেক সত্যি লুকিয়ে আছে, যেগুলোর তুমি কিছুই জানো না।
– কি জানি না আমি।
– অনেককিছু।
– বলো আমাকে।
– জানতে চাও, এই বাড়ির মানুষগুলোর না হাসার কারন! জানতে চাও মায়ের সকলের আড়ালে লুকিয়ে কাঁদার কারন! প্রাণোচ্ছল রুদ্র গম্ভীর হয়ে যাবার কারন!

সামিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে। রুদ্রের কথা শুনে মনে হচ্ছে, এই পরিবারের সদস্যদের মাঝে অনেক গোপন কথা লুকিয়ে আছে। সামিয়া আরো আগ্রহী হয়ে উঠল সবকিছু জানার জন্য।

#চলবে…

আমার পাঠকদের ভালোবাসা দেখে আমি সত্যি আপ্লুত। এত মানুষ আমার “প্রয়োজনে প্রিয়জন” গল্পটি মনযোগ সহকারে পড়ছে, গল্পটিকে উপভোগ করছে সেটা আজকের পোস্টটা না দিলে বুঝতাম না। সকলেই ভালোবাসা নেবেন।

আর হ্যাঁ ৩০০+ রিয়াক্ট কিন্তু এখনো হয়নি তবুও সকলের গঠনমূলক মন্তব্য এবং ভালোবাসা দেখে গল্প না দিয়ে পারলাম না।

প্রতিবারের মতোই এইবারের ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
#প্রয়োজনে_প্রিয়জন
#পর্ব_১৮
#তানজিলা_খাতুন_তানু

– কিরে শেষমেশ একজন এক বাচ্চার বাবার গলাতে ঝুলে পড়লি।

শাহানার কথার মানেটা সঠিক ভাবে অতসীর কাছে পরিস্কার হলো না। তাই দাঁতে দাঁত চেপে বলল…

– কি বলতে চাইছিস তুই।
– বুঝতে চাইছিস না, না বোঝার ভান করছিস বল তো।
– যা বলার ক্লিয়ার করে বলবি, এত ঘো’র প্যা*চ আমার ভালো লাগছে না।

শাহানা কতকগুলো ছবি দেখিয়ে বলল ..

– এইগুলো কি!

ছবি গুলো পড়ে অতসীর আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা। সেইদিন অতসী কে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচানোর সময়ে আদৃত যখন ওকে আগলে নিয়েছিল, সেই পিকটাই কেউ তুলেছে। আর কাজটা কার সেটা বুঝতে অসুবিধা হলো না অতসীর।

– এই ছবিটা না এখন সবার কাছে। গোটা কলেজ ক্যাম্পাসের সবাই তোকে ছিঃ ছিঃ করছে। তোর মানসম্মান আমি মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছি অতসী।

অতসী নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারল না, শাহানার গালে একটা থাপ্পর দিলো। শাহানার রাগ আকাশ ছোঁয়া তখনি প্রিন্সিপাল স্যার ওইখানে উপস্থিত হলেন।

– কি হচ্ছে এইখানে।

অতসী কিছু বলতে যাবে তখনি স্যার বললেন…

– অতসী আমি তোমার থেকে এইটা আশা করিনি।

অতসীর স্যারের দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকাল। শাহানার চোখে মুখে শয়তানী হাসি ফুটে উঠেছে। প্রিন্সিপাল স্যার একবার অতসীর দিকে আর একবার শাহানার দিকে তাকিয়ে বলল…

– তা নেমন্তন্নটা কবে পাচ্ছি।

অতসী, শাহানা দুজনেই তব্দা খেয়ে স্যারের দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকাল।স্যারের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে, অতসী কি বলবে বুঝে উঠতে পারল না, তবূও আমতা আমতা করে বলল…

– কিসের নেমন্তন্ন স্যার।
– বিয়ের।

অতসী শক খেয়ে চুপ করে গেছে। কথা বলার মতো আর কিছু খুঁজে পেল না লজ্জায়, অস্বস্তিতে জড়োসড়ো হয়ে গেল। শাহানা নিজের কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে বলল…

– স্যার আপনি কি বলছেন এইসব।

শাহানার কথাতে পাত্তা না দিয়ে স্যার রাগী কন্ঠে বলল…

– শাহানা অতসীর সাথে তোমার ঝামেলা আমি মানলাম,তবে কারোর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এইভাবে অপমান করার অধিকার কিন্তু তোমার নেয়। অতসী কাকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেবে সেটা সম্পূর্ণ ওর বিষয়। ভালোবাসা কখনো বলে আসে না,মন থেকে উপলব্ধি করতে হয় বুঝেছ। অতসী তুমি চিন্তা করো না, তোমাকে এইবিষয়ে আর কেউ কিছু বলবে না। তুমি তোমার মতো জীবনটাকে উপভোগ করো।

স্যার কথাগুলো বলে চলে গেলেন। শাহানা এইবারেও ফেল‌ হয়ে রেগে আগুন হয়ে আছে। অতসী শাহানাকে আর কিছু বলেই ক্লাসের দিকে রওনা দিল,তখনি একটা হাত ওকে টেনে নিয়ে বন্ধ ঘরের মাঝে নিয়ে গেল।

অতসী নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে, কিন্তু পুরুষ শক্তির কাছে পেড়ে উঠছিল না। অতসীর‌ মনের মাঝে একটা খারাপ চিন্তা জমা হতে থাকে। অতসী চেঁচিয়ে উঠতে যাবে তখনি চেনা কারোর কন্ঠস্বর শুনতে পাই।

– অতসী আমি,আমি মিহান।

অতসী কিছুটা শান্ত হলো, নিজের রাগ জেদ সবটাকে উজার করে দিয়ে গর্জে উঠে মিহান কে সরিয়ে দিল।

– অতসী তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। প্লিজ একটু শোনো।
– আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেয়।
– একটাবার প্লিজ।

মিহান অতসী কে বারবার আকুতি মিনতি করতে থাকে। শেষে উপায় না পেয়ে অতসী বলল…
– তাড়াতাড়ি বলুন।

– ভালোবাসি অতসী।

অতসী তাচ্ছিল্যের হাসল।

– ভালোবাসার কথা আপনার মুখে মানায় না মিষ্টার মিহান। জিনিয়া আপনাকে বড্ড ভালোবাসে, ওকে মন দিয়ে ভালোবাসুন সুখে থাকবেন।
– কিন্তু আমি যে তোমাকে ভালোবাসি।
– কিসের ভালোবাসা! যদি সত্যি ভালোবাসতেন না, তাহলে আমার সাথে কখনোই প্রতারনা করতেন না। আমাকে সকলের সামনে অপমানিত হতে দিতে পারতেন না।
– বিশ্বাস করো অতসী। আমি পরিস্থিতির শিকার, আমার যে আর কিছুই করার ছিল না। আমি নিরুপায়। আজ পর্যন্ত আমাকে কেউ বোঝেনি, তুমি একটু বোঝো আমাকে।
– মাফ করুন। আপনাকে বোঝার মতো আমার কোনো ইচ্ছা নেয়। আর কি জানেন, আপনার সাথে আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ জড়িয়ে গেছে তাকে আমি ঠকাতে পারব না।
– কার কথা বলছো‌ তুমি।
– জিনিয়া। মেয়েটা আপনাকে বড্ড ভালোবাসে, ওকে আগলে রাখুন।
– আমি জিনিয়াকে ভালোবাসি না আমি তোমাকে ভালোবাসি।
– তাহলে কেন ওর সাথে প্রেমের নাটক করছেন।
– পরিস্থিতি।
– কি এমন পরিস্থিতি যাতে একটা মেয়ের সাথে আপনাকে প্রেমের নাটক করতে হচ্ছে।
– আমার জীবনটা অনেক জটিল, জীবনে যেটা চেয়েছি সেটা কখনোই পাইনি। লোকের প্রয়োজনে প্রিয়জন হয়েছি। স্বার্থ ছাড়া কারোর কখনোই প্রিয়জন হয়নি।

অতসী কিছুই বললো না, চুপ করে থাকল। মিহান অতসীর হাত দুটোকে শক্ত করে নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বারবার রিকুয়েস্ট করতে থাকল, অতসী নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল..

– অতসী কাউকে দ্বিতীয় সুযোগ দেয় না, আপনিও পাবেন না।
– আমার ভালোবাসার কি কোনো দাম নেয় তোমার কাছে!
– আমার আত্মসম্মান বোধটা অনেকটা বেশি। আমি কোনো খেলনা নয়, যে যখন ইচ্ছা ব্যবহার করবেন। আমি অতসী, আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত আমাকে দিয়ে কেউ কিছু করাতে পারেনি আজকেও পারবেন না আপনি।

অতসী কথাগুলো বলে চলে গেল। মিহান অতসীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল…

– যে নিজেই একটা কাঠের পুতুল,সে কিভাবে তোমার জীবনকে নিয়ে খেলবে। হেরে গেলাম আমি, আপন মানুষদের প্রিয়জন- প্রয়োজন খেলায় আমি হেরে গেলাম। ভালো থেকো অতসী।

অতসী বাড়ি না ফিরে আদৃতের নিয়ে যাওয়া জায়গাটাই গেল। নিজের সাথে নাটক করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছে, প্রতিনিয়ত নিজের সাথে লড়াই করতে করতে আর পারছে না দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে অতসীর।

অতসীর খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে, ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করতে করতে মিহানের কথাগুলো ভাবতে লাগল। মিহানের হঠাৎ করেই পরির্বতনগুলো‌ বড্ড ভাবাচ্ছে অতসী কে।

– মিহান হঠাৎ করে এতটা বদলে গেল কেন? কি চলছে ওর মনের মাঝে, আর কিসব বলল। মিহানের‌ বিষয়ে আরো গভীরভাবে কিছু জানতে হবে।

অতসী কিছু একটা ভেবে কাউকে একজনকে ফোন করে কিছু বলল। তারপর আরো কিছুক্ষণ নদীর ধারে সময় কাটিয়ে আদৃতের বাড়িতে ফিরে গেল। অতসী কে অনেকটা গম্ভীর লাগছে, বাড়ি ফেরার পর থেকে কারোর সাথেই ঠিকমতো কথা বলছে না।

রাতে খাবার খাওয়ার সময়েও আসলো না। রুম বন্ধ করে চুপ করে বসে আছে। আদৃত আরুকে ঘুম পাড়িয়ে অফিসের কাজ গুলো নিয়ে বসেছিল। তখনি দরজায় টোকা পড়ল, আদৃত ভ্রু কুঁচকে দরজা খুলে দেখল অতসী গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে।

– আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
– কি কথা?

অতসী একটু ইতস্তত করে বলল…
– ছাদে যাবেন একটু।
– আচ্ছা চলো।

সেইদিনে কলেজে আকরাম খাঁন’কে দেখে আদৃত কিছুটা অতীতে ফিরে গিয়েছিল। পুরানো আঘাত গুলো পুনরায় তাজা হয়ে উঠছে, আবারো নিজের মনে দ্বন্দের সৃষ্টি হয়েছে। আদৃতের মনে হচ্ছে অতসীর‌ সাথে অন্যায় করছে। নিজের জীবন, আরুর জীবনটাকে সুন্দর করে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য অতসীকে ব্যবহার করছে। নিজেদের জীবনের সাথে অতসী কে জড়িয়ে নিচ্ছে, অতসী কে নিজেদের প্রয়োজনে প্রিয়জন করতে চাইছে এটা তো অন্যায়।

আদৃত কি করব, নিজের অনুভূতিগুলোকে শুরু হওয়ার আগেই শেষ করে দেবে। নাকি নিজের অনুভুতিগুলো প্রায়োরিটি দিয়ে অতসীর মনের নিজের জন্য অনুভূতির সৃষ্টি করবে!

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here