প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব -০৪

#প্রয়োজনে_প্রিয়জন
#তানজিলা_খাতুন_তানু
#পর্ব_৪

-স্যার আপনি আমাকে যা শা”স্তি দেবেন সেটাই আমি মাথা পেতে নেব।

প্রিন্সিপাল স্যার সকলের দিকে একপলক তাকালেন। প্রফেসররাও প্রিন্সিপাল স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে,স্যার কি শা’স্তি দেবে সেটাই খুঁজে পাচ্ছে না। প্রিন্সিপাল স্যার হেসে উঠে বললেন…
– তোমার মতো এত মিস্টি একটা মেয়েকে কি কেউ শা”স্তি দিতে পারে। তুমি এই সমাজের সমস্ত ধুলোবালি কে পরিস্কার করার জন্য এসেছ। আমি তোমার মাঝে অন্যরকম একটা স্পিরিট দেখছি তুমি অনেক দূর যাবে।
– দোয়া করবেন স্যার। আপনাদের দোয়া আমার জন্য অনেক প্রয়োজন।

অতসী ওর কাজের মাধ্যমে প্রতিটা টিচারের মনকে জয় করে নিল। টাকা- পয়সা, সম্পত্তির জন্য তুমি অনেকের কাছেই সম্মান পেতে পারো, কিন্তু সেটা কখনোই মন থেকে আসে না। একে অপরের প্রতি সম্মান আসে তার ব্যবহারের প্রতি মুগ্ধ হয়ে।।
– ক্লাসে যাও আর কোনরকম প্রয়োজন হলে আমাকে বলতে পারো।
– ওকে স্যার।

অতসী ক্লাসে ফিরে এসে দেখল শাহানা মুখ লাল করে বসে আছে,দেখে বোঝা যাচ্ছে প্রচন্ড রকমের রেগে আছে। ওহ ক্লাসের সকলের দিকে তাকাল সকলেই অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে আসলে ঠিক কি হয়েছে।

– শাহানা।

অতসীর মুখে নিজের নাম শুনে শাহানা রেগে গেলো।
– এই খবরদার তুই আমার নাম উচ্চারণ করবি না।

অতসী হাসল শাহানার কথা শুনে। ওর মুখের হাসি দেখে শাহনার রাগটা আরো তরতর করে বেড়ে উঠছে।
– আমার উপরে বেকার রাগ দেখিয়ে কোনো লাভ নেয়,, আমার কিছুই করতে পারবে না তুমি। তাই বলছি ঝামেলা না করে শুধরে যাও এটাই তোমার জন্য ভালো হবে।

– তোকে আমি দেখে নেব।
– দ্যাখো শাহানা তোমার সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেয়, এমনকি এই কলেজের এই ডির্পামেন্টের কোনো স্টুডেন্টই তোমার সাথে কোনো শত্রুতা নেয়। শুধু শুধু বিনা কারনে এই মানুষগুলোর সাথে তুমি অন্যায় করছিলে।

শাহানা চুপ করে আছে,কিছুই বলছে না।

– শাহানা আজকে কোনো কারনে তুমি যখন বিপদে পড়বে। তখন এই মানুষগুলো তোমাকে দেখেও এগিয়ে আসবে না, সাহায্য করবে না কারনটা কি জানো। তুমি ওদের সাথে অন্যায় করেছো, তোমার প্রতি ওদের একটা রাগ আছে। তাই সাহায্য তুমি পাবে না।‌ কি লাভ সকলের কাছে অপ্রিয় পাত্র হিসাবে থাকার। জানি কথাগুলো খারাপ লাগবে তবুও মন থেকে একবার ভেবে দেখো।

অতসী কথাগুলো বলে একমুহুর্ত ওইখানে দাঁড়াল না। ক্লাস থেকে বের হয়ে গেল আজকে ক্লাস করার ইচ্ছা নেয় একটুও।

জিনিয়া অতসীর দিকে তাকিয়ে ছিলো পুরোটা সময়। অতসীর প্রতিটা কথাতে রহস্যের গন্ধ‌ পেয়েছে। এতদিন ওর সাথে থাকাকালীন ওকে শান্ত, চুপচাপ কোমল প্রকৃতির বলেই সকলে জানত, কিন্তু জিনিয়ার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট হবার পর থেকে প্রতিদিনই ওর নতুন নতুন রূপ সকলের সামনে আসছে, প্রতিনিয়ত অতসী রহস্যময়ী হয়ে উঠছে সকলের কাছে।

অতসী কলেজ থেকে বের হয়ে কাছেই একটা পার্কে গেল। দুপুরের দিক হওয়াতে পার্কটা ফাঁকাই ছিল, তাই পার্কের একটা বেঞ্চে বসল। একমনে সামনের দিকে তাকিয়ে গভীর চিন্তায় চিন্তিত হতে হতেই যে কখন চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়েছে তার খেয়াল নেয়।। চোখের পানিটা মুছে নিয়ে বিরবির করে বলল…
– প্রতিনিয়ত নিজের সাথে যু”দ্ধ করতে করতে আমি ক্লান্ত। প্রিয়জনদের আ’ঘা’তে আ’ঘা’তে আমি প্রতিনিয়ত একটু একটু করে শে’ষ হয়ে যাচ্ছি। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার। এই পৃথিবীটা বড্ড বেশি অসহ্যকর হয়ে উঠছে।

তখনি কেউ একজন ওর সামনে গোলাপ ফুল ধরল। ও সামনে তাকিয়ে দেখলো একটা বাচ্চা মেয়ে, গোলাপি রঙের ফ্রক পড়ে আছে, মাথায় চুলগুলো ঝুটি করা, ইশ কি মায়াবী দেখতে। মেয়েটি বলে উঠল…

– আন্টি তোমার কি হয়েছে কাঁদছো কেন?

বাচ্চাটার এইরকম কথা শুনে অতসী মুচকি হেসে উত্তর দিলো…
– না মামণি দ্যাখো আমার কিছুই হয়নি আমি হাসছি।
– এই তো গুর্ড গার্ল,এই নাও এই রোজটা তোমার। আমার বাবাই বলে ফুল দিয়ে নাকি যে কারোর মন ভালো‌ করা যায়।
– তাই বুঝি।
– হুম।
– আচ্ছা মামনি তোমার নাম কি?
– আমার তো অনেক নাম, কোনটা বলবো।
– তোমার যে নামটা বেশি ভালো‌লাগে সেটাই বলো।
– মিস্টি বুড়ি।

বাচ্চাটার বলার ধরন দেখে অতসীর হাসি পেয়ে গেল হা হা করে হেসে উঠল। বাচ্চাটা ওর দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে বলে উঠল….
– তোমার হাসিটা কি সুন্দর।

বাচ্চাটির কথা বলার ধরন দেখে অতসীর খুব ইচ্ছা করল,বাচ্চাটিকে আদর করতে তাই বাচ্চাটির গালে চুমু দিল। বাচ্চাটির প্রতিটা কাজই ওকে‌ বারে বারে মুগ্ধ করছে,অসম্ভব মিস্টি একটা মেয়ে ।

– মিস্টি বুড়ি তোমার ভালো নাম কি?
– আরাধ্যা।
– ভারি মিষ্টি নাম তবে আমিও তোমাকে মিস্টি বুড়ি বলেই ডাকব ঠিকাছে।
– আচ্ছা। গোলাপটা নেবে না।
– হ্যা নেবো তো, দাও।

আরাধ্যার হাত থেকে গোলাপটা নিয়ে অতসী অরাধ্যাকে প্রশ্ন করল….
– তুমি এইখানে কার সাথে এসেছো।
– মনির সাথে।
– তা তোমার মনি কোথায় কাউকেই তো দেখতে পারছি না।

আরাধ্যা কিছু বলতে যাবে তখনি একজন লোক এসে বলল…

– মামনি চলো দিদিমনি তোমাকে নিয়ে যেতে বলল।
– আচ্ছা আন্টি আজকে তাহলে আমি আসি। বাই।

আরাধ্যা অতসীর গালে একটা হামি দিয়ে চলে যায়। আরাধ্যার যাবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো অতসী। মেয়েটা কি মায়াবী,অল্পতেই কি সুন্দর কয়েক মিনিটেই অতসীকে আপন করে নিল।‌ ওহ নিজের অজান্তেই একটা অন্যরকম টান অনুভব করলো আরাধ্যার প্রতি। তারপর একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে রওনা দিলো নিজের ঠিকানায়।

আরাধ্যাকে কোলে নিয়ে মেয়েটা বলল..
– মাম্মাম কেমন লাগলো আন্টিটার সাথে কথা বলে।
– খুব ভালো,আন্টিটা খুববব ভালো।
– পছন্দ‌ হয়েছে?
– হূম।
– আমার ভালো মাম্মাম।

আরাধ্যার গালে চুমু খেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।‌

নিত্যদিনের মতোই সারাটা দিন সবকিছু নিয়ে অতসী ব্যস্ত থাকলেও রাতের দিকে সম্পূর্ণ রূপে একা হয়ে‌ পড়ে। খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না ওর।

পরেরদিন…

অতসী কলেজ করার পর অজানা কিছু কারনে ছুটে যায় সেই পার্কে যেই পার্কে আগের দিন আরাধ্যার সাথে দেখা হয়েছিল, আরাধ্যাকে কিছুতেই ভুলতে পারছে না। একটা অজানা আকর্ষন অনুভব করছে আরাধ্যার প্রতি।

অতসী পার্কে ঢুকে এদিক ওদিক দেখতে লাগল। কিন্তু কোথাও আরাধ্যাকে দেখতে না পেয়ে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেঞ্চে বসে‌ পড়ল।

– আন্টি

চেনা কারোর কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে অতসী সামনে‌ তাকিয়ে দেখল, ছোট আরাধ্যা দাঁড়িয়ে আছে।

– মিস্টিবুড়ি।

অতসীর মুখে ডাকশুনে আরাধ্যা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল। অতসীও পরম আবেশের সাথে আদর করতে লাগল, কেউ দেখলে ভাববে কতদিনের সম্পর্ক, কিন্তু পরিচয়টা যে শুধুমাত্র একদিনেরই।

– কেমন আছো মিস্টি বুড়ি।
– ভালো আছি তুমি।
– হুম আমিও ভালো আছি।

আরাধ্যা অতসীর সাথে গল্প করতে শুরু করে, আরাধ্যা বলে চলেছে আর ও মুগ্ধ‌ নয়নে‌ তাকিয়ে দেখছে ওকে।‌ এই বাচ্চা মেয়েটার প্রতি এত মায়া কেন জন্মাচ্ছে জানা নেয় অতসী ।

– ওহ আন্টি কি ভাবছ?
– কিছু না সোনা। বলো তোমার বাড়িতে কে‌ কে আছে?
– আমি বাবাই, মনি, দাদু আর দিদুন।
– আর কেউ নেয়?
– না, বাবাই বলে আমার মা নাকি ওই আকাশের তারা হয়ে গেছে।‌

অতসীর বড্ড মায়া হলো মেয়েটার কারনে এইটুকু একটা মেয়ের মা নেয়,কিভাবে বড়ো হচ্ছে বাচ্চাটা।

– মায়ের জন্য তোমার মন খারাপ হয়।
– না একদম না।
– কেন? (ভ্রূ কুঁচকে)
– আমি মন খারাপ করলে‌ বাবাই কষ্ট‌ পাই আর আমি আমার বাবাইকে খুব ভালোবাসি, আর‌ আমার বাবাইয়ের কষ্ট আমার দেখতে ভালো লাগে না।

এইটুকু মেয়ের বোঝার ক্ষমতাটা দেখে অতসী না অবাক হয়ে পারল না।

– তাই তাহলে আমার মিস্টি বুড়ি তো খুব বুঝদার।
– হুমমম আমি গুড গার্ল।
– একদম।

এইভাবেই কয়েকটা দিন কেটে যায়। প্রতিদিন বিকালেই আরু অর্থাৎ আরাধ্যার সাথে অতসীর দেখা হয় আর দুজনেই গল্পতে মেতে থাকে সারাক্ষণ। অতসীর মন খারাপের ওষুধ হয়ে উঠেছে ওই আরাধ্যা নামক ছোট মেয়েটা।

অতসী পার্কে এসে‌ অপেক্ষা করছে আরুর জন্য কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে যাবার পরেও কেউ আসলো না।‌ মন খারাপ করে বেঞ্চে বসে পড়তেই, কারোর মুখে নিজের নাম শুনে সামনে‌ তাকালো।

– অতসী।

#চলবে….

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সকলে পড়ে বলবেন কেমন হয়েছে।

বিঃ দ্রঃ… সর্বনাশা অঘ্র্যান গল্পটির পর্ব লেখার হয়ে উঠেনি ব্যস্ততার কারণে। আগামীকাল দুই পর্ব একসাথে দেব ইনশাআল্লাহ।

||আসসালামু আলাইকুম||

গল্প সংক্রান্ত সমস্ত আপডেট পেতে জয়েন করুন আমার পাঠক পরিবারে তানুর গল্পকাহন 💝

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here