প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব -০৫

#প্রয়োজনে_প্রিয়জন
#তানজিলা_খাতুন_তানু
#পর্ব_৫

– কে আপনি?
– আমি আরু মামনি অর্থাৎ আরাধ্যাদের বাড়িতে কাজ করি, দিদিমনি আমাকে আপনার কাছে পাঠালো।
– কিন্তু কেন?
– আরু মামনি খুব অসুস্থ। জ্বরের ঘোরে বারবার আন্টি আন্টি করছে। আপনি যদি যেতেন খুব ভালো হতো তাহলে।

অতসী চিন্তায় পড়ে গেলো কি করবে বুঝতে‌ উঠতে পারছিল না। কিন্তু আরুর শরীর খারাপ শুনে বুকের ভেতরটা কিরকম একটা করছে, অজানা ভয় জমা হচ্ছে।‌ অতসী সমস্ত উটকো ঝামেলাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বলল…
– আমি যাব।
– চলুন ম্যাডাম আমি নিয়ে যাচ্ছি।
– না,আমাকে ঠিকানাটা দিন আমি নিজেই চলে‌ যাব।
– কিন্তু ম্যাডাম!
– আমি যখন বলেছি যাব,তখন যাব এতটা চিন্তিত হবেন না। আপনি আপনার দিদিমনি কে আর আরু মামনিকে‌ বলে দেবেন আমি আসছি খুব শীঘ্রই।

লোকটা আর কি বলবে খুঁজে না পেয়ে ওখান থেকে চলে‌ যায়।

অন্যদিকে…

– মা প্লিজ আমি বলেছি না,আমাকে বিয়ের কথা বলবে না কেউ। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে ভালো আছি,, আর আমার মেয়ের খেয়াল আমি একাই রাখতে পারব। মা প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো, আমি নিজের স্বার্থে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে পারব না।

নিজের ছেলের কথাতে বিরক্ত হলেন মিসেস হাসান। ছেলেকে দ্বিতীয় বিবাহ করার জন্য হাজার বার বলেও রাজি করাতে পারছেন না।

– বাবা আমার কথাটা একবার শোন।
– না মা,বিয়ে নিয়ে একটাও কথা শুনতে চাই না আমি।

আদৃত রাগ দেখিয়ে চলে যায়। মিসেস হাসান একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ছেলের জীবনটাকে পুনরয়া গুছিয়ে দেবার জন্য চিন্তিত আছেন, নাহলে যে ম*রেও শান্তি পাবেন না।

——–

আদৃত হাসান। একজন ইঞ্জিনিয়ার,একটা প্রাইভেট কোম্পানি চাকরি করে।। মা,বোন আর আরাধ্যাকে নিয়েই সংসার। কয়েকবছর আগে সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে স্ত্রী মা*রা গেছে। সেই থেকে আরাধ্যাই ওর পৃথিবী। মা বিয়ের জন্য জোরাজুরি করলেও আদৃত বিয়ে করতে নারাজ। আদৃত চাই না, নিজের স্বার্থে একজন মেয়ের জীবনটা ন*ষ্ট করতে। আর তার থেকেও বড়ো কথা, ওর মনের মাঝে এখন পর্যন্ত ওর প্রথম স্ত্রী আছে,তাকে ছাড়া আর কাউকে মেনে নিতে পারবে না।

——–

আদৃত আরাধ্যার কাছে যায়। সকাল থেকে মেয়েটার জ্বর হয়েছে,ডাক্তার দেখে গেছে কিন্তু জ্বর নামছে না। এটা নিয়ে বড্ড চিন্তিত আদৃত।

– মা মা।
– কি হয়েছে ডাকছিস কেন?
– আরু বারবার আন্টি আন্টি করছে, এই আন্টিটা কে!
– আমি তো জানি না। মিতু হয়ত জানতে পারে।

তখনি কলিং বেলের শব্দ হল। মিসেস হাসান বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে দিলেন। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারন সাজপোশাকে সজ্জিত অচেনা মেয়েটিকে চিনতে পারলেন না। তাই তার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন…

-কাকে চাই?
– এটা কি আরু অর্থাৎ আরাধ্যার বাড়ি।
– হ্যা কিন্তু আপনি কে?
– আমি অতসী। আরাধ্যার সাথে আমার পার্কে আলাপ হয়েছিল। আপনাদের বাড়ির মেড বলল, আরাধ্যার খুব জ্বর হয়েছে আর জ্বরের ঘোরে বারবার আন্টি, আন্টি মানে আমাকে খুঁজছে তাই, আমাকে এইখানে আসতে বলেছেন আপনারা।

সবকিছু শুনে মিসেস হাসান অনেক অবাক হলেন, এইসবের কিছুই উনি জানতেন না। কথাটা তো সত্যি, আরু সত্যি সত্যিই আন্টি বলে কাউকে খুঁজছিল। কিন্তু একজন অচেনা অজানা মেয়েকে কি এইভাবে বাড়িতে ঢুকতে দেবেন, সেটা বুঝে উঠতে পারলেন না। তাই বাধ্য হয়েই আদৃতকে ডাকতে লাগলেন।

– কি হয়েছে মা,এইভাবে ডাকছ কেন?

কথা বলার মাঝে,দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে নজর পড়ল। নিজের মস্তিষ্কে চাপ দিয়েও বুঝল না,সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা কে।

– কে উনি। (মায়ের উদ্দেশ্য বলল)

আদৃতের মা সংক্ষেপে সবটা বললেন। আদৃত অতসীর দিকে তাকিয়ে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলল…

– আচ্ছা আপনি আসুন।

আদৃত অতসীকে নিয়ে আরুর ঘরে গেল। আরু বিছানায় শুয়ে আছে, একদিনেই কিরকম মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। অতসীর ইচ্ছা করছে,এখুনি আরুর কাছে যেতে।

– আপনি মিষ্টির কাছে যান।

আদৃতের অনুমতি পেয়ে অতসী আরুর কাছে গেল। মাথায় হাত দিয়ে দেখল, গায়ে অনেক জ্বর। অতসী আরুর মাথাতে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

– আন্টি আন্টি।
– এই তো মামনি আমি এসেছি।

আরু চোখ পিটপিট করে তাকাল। অতসীকে সামনে দেখে ওর মুখে হাসি ফুটে উঠল।

– আন্টি তুমি সত্যি এসেছ।

আরু অতসীকে জড়িয়ে ধরল।

– মামনি তুমি অসুস্থ্ হলে কিভাবে?
– তুমি এসে গেছো, দেখো আমি ঠিক হয়ে গেছি।
– তাই সোনা।
– হুমম।

আরু অতসীর‌ সাথে আড্ডায় মেতে উঠল। আদৃত হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,ওদের দিকে। আরুকে আগে কখনো এতটা খুশি হতে দেখেনি,মা ম*রা মেয়েটাকে সব সুখ দিতে পারলেও মায়ের অভাবটা পূর্ন করতে পারেনি।

আদৃতের মা ও সবটা দেখে খুব অবাক হলেন। নিজের মনে মনেই বললেন…

– ভাগ্য কি তবে আমাদের সহায় হলো। আরুর মায়ের অভাব কি এইবার পূরন হবে।

জানা নেয়, ভাগ্য কি লিখে রেখেছে। অতসী আরুকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতেই, আদৃত নিজের কাজে বেড়িয়ে গেল। আদৃতের মা বলল…

– মা তুমি কে? তোমার বাড়ি কোথায়?
– আমার নাম অতসী। বাড়ি নেয়,এই শহরে ভাড়াই থাকি।
– আর তোমার বাবা-মা।

অতসী কিছু বলল না। আদৃতের মা ধরে নিলেন, অতসীর বাবা মা জী*বিত নেয়। মেয়েটার প্রতি বড্ড মায়া হলো ওনার।

– আন্টি এইবার আমাকে যেতে হবে।
– আচ্ছা মা এসো।
– আন্টি কিছু না মনে করলে একটি কথা বলতে পারি।
– হ্যাঁ বলো।
– নম্বরটা পাওয়া যাবে? না মানে আরোহীর খোঁজ নিতাম একটু।
– আচ্ছা দিচ্ছি।

আদৃতের মা অতসীকে নম্বরটা দিতে,অতসী ওনাকে বিদায় জানিয়ে বেড়িয়ে পড়ল। টিউশনি পড়াতে যেতে হবে।

ছাত্রের বাড়িতে কলিংবেল বাজানোর পরে, একজন মহিলা এসে দরজা খুলে দিলেন। অতসীকে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিষ্টি হেসে বললেন..
– আরে অতসী তুমি চলে এসেছে।
– হ্যাঁ ভাবি।
– কিন্তু রিক তো বাড়িতে নেয়।
– কোথায় গেছে।
– ওর‌ বাবার সাথে একটু বেড়িয়েছে,এখুনি চলে আসবে।‌ তুমি ভেতরে আসো, আমার সাথে একটু গল্প করো ততক্ষন।

রিকের মায়ের কথা শুনে অতসী ভেতরে গিয়ে ওনার সাথে কথা বলতে লাগল। রিকের মা বড্ড মিশুকে, অতসী কে বোনের মতো স্মেহ করে সবসময়ে।

– তার বিয়ে করবে না নাকি।
– পড়াশোনা শেষ করতেই পারলাম না এখনো।
– কেন,বিয়ের পর কি পড়াশোনা করা যায় না।
– সংসার নিয়ে পড়লে কি আর পড়াশোনা হয়।
– সেটা অবশ্য‌ ঠিক বলেছে। আমাকেই দেখ না, ১৮ না হতে‌ হতেই বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দিল, তবুও তোমার দাদার সার্পোটে‌ পড়াশোনা চালিয়ে যেতে লাগলাম। রিক আসার পর আর‌ পড়াশোনা হয়নি।
– হুম।

আড্ডার‌ মাঝে রিক ওর বাবার সাথে‌ ফিরে আসে। অতসী রিককে পড়িয়ে বাড়ি ফিরে আসে। রিকের মা-বাবার সম্পর্কটা অতসীর‌ কাছে বড্ড ভালো‌ লাগে, দুজন দুজনের প্রতি যথেষ্ট কেয়ারিং। সুখের পরিবার,আচ্ছা অতসীর ও কোনোদিন ওইরকম সুখের সংসার হবে।

#চলবে….

সকলে বেশি বেশি করে রেসপন্স করুন। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

||আসসালামু আলাইকুম||

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here