#প্রাক্তন
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ১৫
এমন সময় ফোনে অচেনা নম্বর থেকে কল আসলো আমি কলটা ধরতেই একটু বিস্মিত হলাম। কারণ কলটা দিয়েছে নাফিসা। নাফিসা কলটা ধরতেই জিজ্ঞেস করলো
– অরন্য কোথায়? অরন্যকে কোথায় গুম করেছো বলো।
বেশ রাগী গলায় জবাব দিলাম
– আমি কী করে জানব অরন্য কোথায়। আর এভাবে কথা বলছেন কেন? আমি কী কোনো চুর ডাকাত নাকি যে, জলজ্যান্ত একটা মানুষকে গুম করে দিব?
– তোমার সাথে কথা বলার পর থেকেই অরন্যের ফোন বন্ধ। যখনই শুনেছো আমি অরন্যের জীবনে ফিরতে চাই তখনই আমার জীবন থেকে অরন্যকে দূরে সরাতে তাকে গুম করে দিয়েছো?
– আপনার জীবনে আপদ টা চলে গেলে আরও খুশি হতাম। দুঃখের বিষয় আপদটা এখন আমার ঘাড়ে চেপে ধরতে বসেছে। আমিও হাফ ছেড়ে বাঁচি আপনি আর অরন্য এক হলে। তাড়াতাড়ি দেশে এসে আপদ নিয়ে যান। আপদকে খুঁজে বের করে নিজের করে নেন। শুধু শুধু আমাকে কল দিয়ে আপনার মূল্যমান সময় নষ্ট করবেন না। কারণ আমি অরন্যের খুঁজ জানি না। আর আমার কোনো ঠেকাও পড়ে নি অরন্যকে লুকিয়ে রাখা। আর অরন্য কোনো বাচ্চা না যে চকলেটের লোভ দেখিয়ে লুকিয়ে রাখব।
নাফিসা আমার কথা শুনে হালকা হেসে বলল
– তোমাদের মতো মেয়েদের চকলেটের লোভ দেখাতে হয় নাকি, শরীর আছে কী করতে। কীভাবে একটা বিবাহিত ছেলে পটিয়ে নিজের করতে হয় সেটা তো ভালোই জানো। লোভ দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা।
নাফিসার কথা শুনে শরীরটা রাগে কাঁপছিল। তবুও একটা হাসি দিয়ে বললাম
– আমিও দেখেছি কীভাবে স্বামী রেখে বিদেশ চলে যেতে হয়। আর বাকি রইল আপনার স্বামী। তার চরিত্রের উপর এটুকু ভরসাও আপনার নেই। অরন্যের চরিত্র এতই নড়বড়ে যে একটা মেয়ের সামান্য লোভ দেখানোতে নষ্ট হয়ে যাবে। এমন স্বামী বাঁধাই করে রাখেন। আপনার স্বামীর চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র। আর আপনার চরিত্রের ব্যখা নাহয় নাই দিলাম। কারণ সেটা আপনিই ভালো জানেন। আপনাকে তুলনা করার কোনো উপমা পাচ্ছি না তাই চুপ রইলাম।
নাফিসা রেগে কঠোর গলায় বলল
– একদম উল্টা পাল্টা কথা বলো না। মুখ সামলে কথা বলো।
– আমি বললেই দোষ আর আপনি যখন বললেন? আর আপনাকে তুমি বলার অধিকার বা পারমিশন কে দিছে। আমাকে আপনি করে বলবেন। আর দ্বিতীয় বার কথা বললে ভেবে বলবেন। আপনি বলে যাবেন আর আমি ছেড়ে দিব এটা একদম ভাববেন না। অবলা নারী আমি না। নিজের সাথে লড়াই করে সংগ্রাম করে বড় হয়েছি। কীভাবে কোনটা সামলাতে হয় সেটার যথেষ্ঠ জ্ঞান আমার আছে। অরন্যকে পাচ্ছেন না দেশে এসে থানায় যান। থানায় জিডি করুন,মামলা করুন। আমাকে কল দিয়েছেন কেন? আমি তো হারানো মানুষ ফিরিয়ে দেওয়ার এজেন্সি খুলে বসে নি। আর একবার যদি কল দিয়ে বিরক্ত করা হয় সরাসরি থানায় গিয়ে হ্যারেসমেন্টের মামলা করব। মাথায় রাখবেন বিষয়টা।
নাফিসার রাগটা আরও প্রবল হলো। রাগে আর জোরে চেঁচিয়ে বলল
– তোমার সাহস তো কম না যা’ তা বলছো।
আমি কথা আটকে দিয়ে বললাম
– এখনও তো বলা শুরু করি নি। ভালোভাবে বলা শুরু করলে টিকতে পারবেন না। রাতের ঘুমও হারাম হয়ে যাবে। এর চেয়ে বরং ফোনটা কেটে শান্ত হয়ে বসে সমাধান বের করুন। অরন্যকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। ভালো থাকবেন।
বলেই কলটা কেটে দিলাম। জানি না তারপর নাফিসার কী হয়েছিল। কল কাটার আগে রাগী রাগী নিঃশ্বাস নেওয়ার শব্দ পাচ্ছিলাম শুধু। কিন্তু অরন্য কোথায় আছে সেটাও ভাববার বিষয়। হুট করেই বা সে কোথায় গেল। আজকাল সবকিছুতে অদ্ভুত রহস্য খুঁজে পাই। না চাইতেও যেন রহস্যে জড়িয়ে যাই। নাকফুলটা হাতে নিলাম আবার। যতবারেই নাকফুলটা এপিট ওপিট করে দেখছিলাম ততবারেই মনে হচ্ছিল এটা অরন্যের সেই নাকফুলটা যেটা ও আমাকে ওর সাথে এনগেজমেন্ট হওয়ার পর দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী তে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় আমার পরিবার তা ফেরত দিয়েছিল। একই ডিজাইনের দুটো নাকফুলের এতটা মিল মানতে পারছি না। কেন জানি না মনে হচ্ছে আমি কোনো ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছি। নাক ফুলটা ধরেই হাজারটা কথা ভাবছিলাম। এমন সময় ভাবি এসে ধাক্কা দিয়ে বলল
– কী ব্যপার ননদীনি নাক ফুল হাতে নিয়ে কোন জগতে হারালে। এত কী ভাবছো? নাকি আবিরের সাথে কল্পনায় রোমান্স করছো?
ভাবির কথা শুনে ভাবনার জগত থেকে বের হলাম। হালকা হেসে বললাম
– আরে কী বলো না ভাবি। তেমন কিছু না। নাকফুলটা দেখছিলাম।
ভাবি আমার হাত থেকে টেনে নাকফুলটা ভাবির হাতে নিয়ে দেখে বলল
– এটা তো ডায়মন্ডের নাকফুল। তবে নাকফুলের নীচের দিকে ডাটায় এত এলোমেলো দাগ কেন?
ভাবির কথাটা শুনেই আমার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল। আমি ভাবির হাত থেকে নাকফুলটা নিয়ে নাকফুলের নীচের দিকে তাকালাম। আর বুঝতে পারলাম এটা অরন্যের নাকফুলেই। কারণ অরন্য নাকফুল দেওয়ার পর, ডাটা টা বড় হওয়ায় আমি ছুরি দিয়ে কেটে ছোট করতে চেয়েছিলাম তাই ডাটার নীচের দিকটায় বেশ কয়েকটা দাগ পড়েছিল তবে কাটতে ব্যর্থ হয়েছিলাম। বুঝতে আর বাকি রইল না এটা সেই নাকফুল। আর আমার সাথে যা হচ্ছে সেটা একটা খেলা। এ খেলার মূখ্য গুটি আমি যাকে বারবার চেক দিচ্ছে সবাই। আমার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। আমার আঁধারে নিমজ্জিত মুখটা দেখে ভাবি বলল
– কী হলো তোমার? কথায় কথায় কোন জগতে চলে যাও। তোমাকে বড্ড অচেনা লাগে। বিয়ের পর থেকে কখনও তোমাকে এভাবে দেখে নি। কী হয়েছে বলো তো অপ্সরা। কিছু নিয়ে কী চিন্তা করছো?
আমি নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম
– না তেমন কিছু না। এটা আবিরের মায়ের নাকফুল তাই হয়তো এমন দাগ পড়েছে। এখন তৈরী হয়ে আবিরদের বাসায় যাব। এসে তোমার সাথে কফি খেয়ে আড্ডা দিব কেমন?
– আচ্ছা যাও আর সাবধানে। আর নাকফুলটা দাও তো।
– কেন?
– আরে দাও তো।
বলেই হাত থেকে নাকফুলটা নিয়ে আমার নাকে পরিয়ে দিয়ে বলল
– হবু শ্বাশুড়ি নাক ফুল দিয়ে গেছে তাদের বাসায় নাকফুল না পড়ে গেলে কেমন দেখাবে বলো। এখন সুন্দর লাগছে। পরীর মতো সুন্দরী তুমি।
– একটু বেশি বেশি বলছো না।
বলেই হাসতে হাসতে ওয়াশরুমের দিকে এগুলাম। ওয়াশ রুমে গিয়ে আয়নায় নিজের মুখ দেখে কেন জানি না ভয় পাচ্ছিলাম। এ নাক ফুলটা পড়েছিলাম চার বছর আগে। নাকফুলটা পড়ার ১৫ দিন পরেই অরন্যের সাথে আমার বিয়ে ভেঙ্গে যায় সে সাথে জীবনে নেমে আসে কালো অধ্যায়। শুরু হয় অকৃত্রিম যন্ত্রণা। সেদিন নাকফুলটা পড়ে যতটা খুশি হয়েছিলাম আজ ঠিক ততটাই ভয় পাচ্ছি। অন্য কোনো অঘটন আমার জন্য অপেক্ষা করছে না তো? এ নাকফুলটা আবার আমার জীবনকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিবে না তো। এসব ভাবতে ভাবতেই চোখ বেয়ে পানি পড়ছিল। চোখের পানিটা মুছে নিজেকে একটু শান্ত করে নিলাম। আামাকে আরও শক্ত হতে হবে। সবকিছু শক্ত হাতে মোকাবেলা করতে হবে। আবিরের কাছে গিয়ে অবশ্যই নাকফুলের রহস্য বের করতে হবে। এ বিয়েটা তো আমার প্রয়োজন না। তবে আবির নিজের ভুল স্বীকার করেছে বলেই আমি মেনে নিয়েছি। কিন্তু এর পেছনে যদি কোনো অজ্ঞাত কারণ থাকে আমি তাকে ছেড়ে দিয়ে কথা বলব না।
নিজেকে বুঝ দিয়ে মুখে পানির ঝাঁপটা দিয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হলাম। সোনালী পাড়ের বেগুনী রঙের একটা শাড়ি আর সোনালী ব্লাউজ পড়লাম। মাথায় একটা খোঁপা করে বারান্দার টবে ফুটে উঠা চন্দ্রমল্লিকা ফুল এনে এক পাশে গুজে দিলাম। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর মুখে পাউডারের প্রলেপ দিলাম। চোখে গাঢ় কাজল। কানে বড় ঝুমকা। দু হাত ভর্তি করলাম কাচের চুড়ি দিয়ে। আজকে নিজেকে বেশি প্রাধান্য দিলাম। তারপর রুম থেকে বের হলাম। রুম থেকে বের হতেই মা আমার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসি দিল। মায়ের মনটা আমার এ সাজ প্রশান্ত করেছে বুঝতে পারছিলাম। আমি মায়ের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় ভাবি এসে কানের কাছে বলে গেল আবির তো তোমায় দেখে চোখ ফেরাতে পারবে না। কথাটা শুনে আমি মৃদু হেসে বাসা থেকে বের হলাম।
সি এন জি নিয়ে আবিরের বাসায় চলে গেলাম। আবিরের বাসায় গিয়ে দেখলাম মা বাসায় নেই। বাসাটা পুরো ফাঁকা। আবিরের রুমে ঢুকলাম। আবির শুয়ে শুয়ে মোবাইল চাপছে। আবিরের পাশে বসতেই মোবাইলটা তাড়াহুড়ো করে সরিয়ে নিল। মনে হচ্ছিল চুরি করে ধরা পড়তে নিয়েছিল সে। আমি কিছুটা রহস্যের আভাস পেয়ে আবিরের হাত থেকে মোবাইলটা টেনে নিতে চাইলে সে দিতে চাইল না। এক পর্যায়ে বেশ জোর করেই মোবাইলটা টেনে নিই। মোবাইলটা নিয়ে আবিরের পাশ থেকে একটু দূরে যাই। মোবাইলে তেমন কোনো লক নেই। মোবাইল খুলতেই আমার চোখ কপালে উঠল। কারণ….
#প্রাক্তন
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১৬
(নোট- গল্পটা এখন থেকে একদিন পর পর দিব।)
মোবাইল খুলতেই আমার চোখ কপালে উঠল। কারণ আবিরের মেসেন্জারে সাহেরা নামে এক মেয়ে মেসেজের উপর মেসেজ দিয়েই যাচ্ছে। আমি মেসেজ গুলো যতই ঘাটছিলাম ততই আমার বুকে কম্পন হতে লাগল। বুঝতে পরলাম আবিরের সাথে এই মেয়ের সম্পর্ক দীর্ঘ তিন বছরের। মেয়েটার লাস্ট মেসেজ গুলো ছিল
– অপ্সরার ঝামেলা কবে শেষ করবে। অরন্যের জন্য আর কত করবে। এসব একদম ভালো লাগছে না। অরন্যকে সাহায্য করতে গিয়ে তুমি আমার মনে অনিশ্চয়তা ঢুকাচ্ছ। এ ৫ মাস যাবত আমি অনেক সহ্য করেছি আর করতে পারব না। হাত, পা ভাঙ্গার নাটক আর কত করবে? এভাবে শুয়ে বসে থেকে আর কত কী করবে? অরন্যকে ঘরে লুকিয়ে রেখে অপ্সরাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছো। তোমার মা তো কিছুই জানে না ভালো আর মন্দ। উনি তো ভেবেই নিয়েছে তুমি অপ্সরাকে পছন্দ করো। পরে তোমার মাকে কী বুঝাবে? আদৌ কী অপ্সরাকে অরন্য বিয়ে করবে নাকি তুমি৷ কী হলো মেসেজ সিন করে যাচ্ছ রিপ্লাই কেন দিচ্ছ না।
আমি মেসেজ গুলো পড়ে সামনে তাকাতেই দেখলাম আবির দাঁড়িয়ে আছে। তার মানে আবির অসুস্থতার নাটক করেছিল এতদিন। সে আমার হাত থেকে মোবাইলটা টেনে নিয়ে বলল
– একদম বাড়াবাড়ি করবে না।
আমি আবিরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। মুখ দিয়ে কোনো কথায় আমার বের হচ্ছিল না। কোন খেলায় ফেঁসে গেলাম আমি নিজেও টের পেলাম না। বিশ্বাসের খাতায় আবারও ভাঙ্গন ধরল। আমার নীরবতা যেন আমাকে ঘিরে ধরল। আবির এত বড় নাটক করল। আমি আবিরের দিকে তাকিয়ে কেঁদেই দিলাম। হালকা গলায় বললাম
– তুমি অসুস্থ না? আর সাহেরা মেয়েটা কে? কেন তুমি এসব নাটক করেছো আমার সাথে? তুমি আর অরন্য প্ল্যান করে এমন করেছো? আমার সব প্রশ্নের উত্তর চাই।
আবিরের মুখে ঘন কালো মেঘের আভা ফুটে উঠেছে। মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে চিন্তিত। জানতাম আবির সহজে মুখ খুলবে না। তাই আবিরকে নাড়া দিতে বললাম
– তুমি কী সহজে মুখ খুলবে নাকি তোমার নামে মামলা করব? তোমার অফিসে লিখিত অভিযোগ দিলে কিন্তুু তোমার চাকুরী থাকবে না। আশা করি তুমি সত্যিটা বলবে। আর না বলতে চাইলেও জোর নেই। বাকিটা আমি ব্যবস্থা করতেছি। যেমন কুকুর তেমন মুগুর আমি দিতে পারি। কুকুর কামড়ালে কুকুরকে কামড়ানো ঠিক না তবে একটা মুগুর দিয়ে আঘাত করে কুকুরকে তার স্থানটা বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। যতটা আবেগী আর সহজ সরল ভাবো ততটা আমি না। এ নাকফুলটা অরন্যের আমি নিশ্চিত হওয়ার পরও বাড়াবাড়ি করে নি। কারণ আমার হাতে প্রমাণ দরকার ছিল।
আবির ঢুক গিলতে লাগল। বেশ ভয় পেয়ে গেছে বুঝায় যাচ্ছে। কারণ প্রতিষ্ঠিত ছেলের দুর্বল জায়গা তার চাকুরি আমি তার সে জায়গায় নাড়া দিয়েছি। অবশ্য যা বলেছি ভয় দেখানোর জন্য না সম্পূর্ণ সত্যি। আবির হালকা গলায় বলল
– অরন্যের সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে তোমার কথা বলত। আমি তোমাকে চিনতাম,ছবিও দেখেছি। মা তোমার ব্যপারে জানত তবে তোমাকে চিনত না। মা এসবের কিছুই জানে না। অরন্য এ তিন বছর তোমার খুঁজ নিয়ে গেছে৷ অরন্য জানত তুমি এ পর্যন্ত কোনো বিয়েতে রাজি হও নি। কিন্তু নাফিসাকে ডিভোর্স ও দিতে পারছিল না তাই তোমার সামনেও যেতে পারছিল না৷ অরন্য আমার জীবন বাঁচিয়েছিল। আমি ওর কাছে ঋণী। এদিকে তোমার পরিবার একের পর এক পাত্র দেখেই যাচ্ছিল। অরন্য বেশ অনিশ্চয়তায় ছিল। কিন্তু নাফিসার সাথে ডিভোর্স হয়নি তাই তোমার সামনেও যেতে পারছিল না। কাকতালীয় ভাবে তোমার সাথে আমার এক্সিডেন্ট হয়। সেখান থেকেই আমাদের পরিকল্পনা শুরু। অরন্য চেয়েছিল তোমার বিয়ে যেন না হয় তাই আমি তোমার সাথে কথা বলে গেছি। আর এনগেজমেন্ট এর দিন ইচ্ছা করেই অরন্যকে দিয়ে আংকটি পড়িয়েছি। অরন্য জানত যে তোমার অতীতটা সামনে নিয়ে আসলে তুমি সবটা আমাকে বলবে। আর আমি সেই সুযোগে তোমাকে ছেড়ে দিব৷ সে সময়টায় অরন্য তোমার জন্য পাগলামি করবে। মানুষ একটা ধাক্কা পুনরায় খেলে সে আগের জায়গায় চলে যায়। আমরা ভেবেছিলাম তুমি আমার থেকে একটা ধাক্কা খেলে অরন্যকে মেনে নিবে৷ তাই বিয়ে পেছানোর জন্য এত নাটক করতে হয়েছিল আর তোমাকে মেনে না নেওয়ার পেছনেও এ কারণ ছিল। কিন্তু তুমি পুরো খেলাটা পাল্টে দিলে যখন এতকিছুর পরও অরন্যকে মেনে নিলে না।
তোমার জন্য পুরো খেলাটা পাল্টাতে হলো। আমি পুনরায় তোমাকে মেনে নেওয়ার নাটক করলাম। উদ্দেশ্য ছিল ডিভোর্সের নাম করে অরন্যকে বিয়ের কাগজটা পুনরায় পাকা পুক্ত করব। আমি দুঃখিত অপ্সরা। তোমার সাথে আমার ব্যক্তিগত কোনো আক্রোশ নেই। যা করেছি সেটা শুধু অরন্যের জন্য। আমি অরন্যকে তোমার জন্য কষ্ট পেতে দেখেছি। জানি না ঠিক করেছি নাকি ভুল। তবে অরন্যকে ভালো রাখতে এটুকু করা। এই যে আমি আজকে দাঁড়িয়ে আছি সেটাও অরন্যের জন্য।
আর সাহেরা আমার গার্ল ফ্রেন্ড। আমি বিয়ে করলে ওকেই করব। তিন বছরের সম্পর্ক আমাদের। শুধু অরন্যের জন্য বিষয়টা পিছিয়েছি। অরন্য আর তোমার বিয়ে টা হলেই আমি বিয়ে করে নিতাম। অপ্সরা অরন্যকে আর ফিরিয়ে দিও না। এই যে আমরা এতকিছু করেছি সেটা শুধু তোমাকে আর অরন্যকে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য। আর মা ও কিছু জানে না। আমার মা অনেক সহজ সরল।।দয়াকরে মাকে কিছু বলো না। আমি চাই তুমি আর অরন্য এক হয়ে যাও।
আরও কিছু বলতে নিবে আবির, আমি সুযোগ না দিয়ে আবিরের গালে জোরে চড় দিয়ে বললাম
– তোরা একেকটা কুত্তা। আমার সাথে যা করেছিস। তোদের প্রত্যেককে উপযুক্ত শাস্তি আমি দিব। অরন্য কোথায় বল।
আবির আমার রাগী কন্ঠ শুনে ঢুক গিলতে লাগল। কিছু বলছে না। আমি তার দিকে তাকিয়ে জোর গলায় পুনরায় বললাম
– অরন্য কোথায়?
– পাশের রুমে।
আমি আবিরের কাছ থেকে বের হয়ে পাশের রুমে গেলাম। অরন্য তখন ঘুমুচ্ছিল। ঘরের কোণে থাকা জুতো জোরার একটা জুতো পা দিয়ে চেপে ধরে দরজাটা লাগিয়ে অরন্যকে হালকা গলায় বললাম
– অরন্য উঠো। সমস্ত কাহিনি জেনে আমি তোমাকে মেনে নিছি। আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
অরন্য ঘুম থেকেই উঠেই হালকা হেসে বলল
– আমি স্বপ্ন দেখছি না তো?
– কেন কী মনে হচ্ছে?
– মনে হচ্ছে মধুর স্বপ্ন দেখছি।
– এখন মনে হবে তুমি দুঃস্বপ্ন দেখছ।
– মানে?
কথাটা বলতেই আমি পায়ে চেপে রাখা জুতোটা হাতে নিয়ে এলোপাতারি কয়েকটা মেরে বললাম
– কু্ত্তার বাচ্চা,শুয়োরের বাচ্চা তোরা আমার সাথে যা করেছিস এর ফল তোদের পেতে হবে।
রুম থেকে বের হয়ে চলে আসলাম। আবিরের মা তখন বাসায় ছিল না। বাসায় এসেই দরজাটা লাগিয়ে ধুপ করে বসে পড়লাম। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। এত বড় নাটকের নায়িকা হলে গেলাম বুঝতেই পারলাম না। আমি দম নিতে লাগলাম। প্রতিটা মানুষকে আমি উপযুক্ত শিক্ষা দিব । এদের শাস্তি পেতেই হবে। তানা হলে এরা আরও জঘন্য হবে। যে ক্ষমতার জন্য আজকে এদের এত বড়াই সেটাই আমি কেড়ে নিব। মনে মনে কথাটা ভেবেই মাথায় গুজে থাকা ফুল গুলো টেনে বের করলাম। ছিড়ে ফেলে দিলাম মেঝেতে। শাড়িটা খুলে চোখগুলো মুছে ধুয়ে নিলাম। নিজেকে সামলে নিলাম। কারণ আমাকে লড়াই করতে হবে আর নতুন লড়াই এ জিততে হবে।
সারাদিন আর রাত এসব ভাবনাতেই কেটে গেল। পরদিন সকালটা শুরু করলাম নতুন ঘটনার সূত্রপাত দিয়ে।
চলবে
(কপি করা নিষেধ,বেশি বেশি শেয়ার করে পাশে থাকুন)
(কপি করা নিষেধ,চাইলে শেয়ার করতে পারেন)