#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_1
#Writer_TanhaTonu
আরশি কাল স্কুলে আসলি না কেন?জানিস এট লাস্ট নিউ টিচার এসেছে ম্যাথমেটিকসের..—(ফারহা)
—কাল আমার হালকা জ্বর ছিলো দোস্ত।তাই আসতে পারিনি।বাট এট লায়ায়াস্ট..উফ তার মানে এই হাদারাম নবিন স্যারের ক্লাস করা লাগবে না তাইনা?
হাহা..আসলেই হাদারাম!কি অঙ্ক যে করায়?কিছুই বুঝি না।কত বিদ্রোহ করার পর ম্যাথমেটিক্সের নিউ টিচার আসল!বাট জানিস স্যারটা অনেক কিউট আর
সুন্দর..—(ফারহা)
আমি ফারহার কথায় হাসলাম।ও-ও হেসে দিয়েছে কথাটা বলেই।আমি হালকা হেসেই বললাম…
—সে যত সুন্দরই হোক আমার কী?আমি তো আমার মজনুর উপর ক্রাশ খেয়েই ফেলেছি।আহা যেখানেই চাই..তাহাকেই দেখতে পাই..
হাহাহা..ভাই হাসি থামাতে পারব না।চুপ যা মেরে মা।এমন ক্রাশই খেয়েছিস যে তার নামই জানিস না।জানস বনি তো আমাদের নতুন টিচারকে দেখে এমন ক্রাশই খেয়েছে যে কি বলব?স্যার অফিস রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো।ও স্যারের সামনে দিয়ে ঢঙ করে হেঁটে যেতে নিয়ে ঠাশ করে পড়ে পায়ে সেরকম ব্যথা
পেয়েছে—(ফারহা)
ফারহার কথা শুনে আমি এবার জোরেই হেসে দিলাম।হাসতে হাসতেই জবাব দিলাম
—বনু আর বলিস না।আমাদের বনি তো আবার স্পেশাল।হাহা..তো কোথায় ও?
আসবে নে একটু পরই(হেসে)—(ফারহা)
আমি আমাদের ক্লাসের সামনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমার বেস্টু ফারহার সাথে কথা বলছিলাম এতক্ষণ।হঠাৎ পাশের বারান্দায় চোখ গেলো টিচারস রুমের সামনে। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে আমার চোখ কপালে।মনে হচ্ছে কেউ বুকের ভিতর তবলা বাজাচ্ছে অনবরত।আমি হা করে তাকিয়ে আছি মানুষটার দিকে।নিজের চোখকে বিশ্বাসই হচ্ছে না আমার আমি আমার ক্রাশকে দেখতে পারব আবারও..খুশিতে নাগিন ড্যান্স দিতে ইচ্ছে করছে
এই তুই ওই দিকে সিদ্রাত স্যারের দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?মানুষ দেখলে কি ভাববে?—(ফারহা)
—ফারু দোস্ত এই ব্লু শার্ট পড়া আর চোখে যে চশমা লাগানো.. এই লোকটাই তোর জিজু দোস্ত।আমি হার্ট এটাক করব বনু।আমারে ধর কেউ।মনে হচ্ছে এই দুইতলা থেকে পড়ে আমি ইন্তেকাল করব অতি সুখে..ওহ নোওওও..আমার ক্রায়ায়াশ🙈🙈🙈
কি বলছিসটা কি?সিদ্রাত স্যারই তোর সেই ক্রাশ?একমাস আগে যে পার্কে গিয়ে ক্রাশ খেয়েছিলি?(অবাক হয়ে)—(ফারহা)
—হো দোস্ত এটাই তোর সেই জিজু মানে আমার ফিউচার হাবি🙈..ওহ আল্লাহ আমি মরে যাবো খুশিতে।উনি এখানে কেমনে দোস্ত(খুশি হয়ে)
উনিই আমাদের নিউ টিচার…(লম্বা শ্বাস
ফেলে)—(ফারহু)
—কিইইহ??
ফারহা আমার কথার জবাব হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো।এবার যেনো আমি অবাকের চরম পর্যায় ছেড়ে আরও উপরে চলে গেলাম…
—আচ্ছা ফারহা একটু পর কি উনিই আমাদের ক্লাশ নিবে?
হুম..আর কে নিবে?হুহ তোর তো ভালোই নিজের ক্রাশের ক্লাশ করবি—(ফারহা)
—নারে বনু।আমার হার্ট খরগোশের মতো লাফাচ্ছে।ইশ কত সুন্দর উনি।আমার তো তাকিয়েই থাকতে মন চাচ্ছে…
আরশির আর ফারহার কথার মাঝেই বেল বেজে গেল।আরশি কাঁপা কাঁপা পায়ে ক্লাসে গিয়ে বসল।তখনই বনিও আসল।আরশি একদম সাইডে।সাথে বনি আর তারপর ফারহা বসেছে।ওরা এভাবেই বসে।যত টিচার রুমে আসার টাইম হচ্ছে আরশির বুকের ঢিপ ঢিপানি বাড়ছে।কয়েক মিনিটের মধ্যেই সিদ্রাত রুমে প্রবেশ করল।সবাই দাঁড়িয়ে সালাম দিলো।আরশি তো জাস্ট দাঁড়িয়েছে।মুখ দিয়ে ওর সালামটাও আসেনি…
So everyone.. How are you all?—(সিদ্রাত)
ভালোওও স্যার—(সবাই)
Ok Sit down please—(সিদ্রাত)
সিদ্রাত সবাইকে বসতে বলে হোয়াইট বোর্ডটা ডাস্টার একবার মুছে নিলো।সবাই বসে পড়লেও আরশি এখনো বসেনি।ও তো এখনো ঘোরের মধ্যেই আছে।ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে আছে সিদ্রাতের দিকে।ফারহা আর বনি ফিসফিস করে বারবার বলছে বসতে কিন্তু আরশির কান পর্যন্ত আদৌ সেই আওয়াজ গিয়েছে কিনা সন্দেহ আছে।সিদ্রাত হোয়াইট বোর্ডটা ক্লিন করে পেছনে ঘুরে আরশিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকালো…
হেই মিস,, হোয়াটেভার,,দাঁড়িয়ে আছেন
কেন?বসুন—(সিদ্রাত)
আরশি সিদ্রাতের কথায় হুশ পেলো।এবার নিজেই নিজের কাজ দেখে লজ্জা পেয়ে গেলো।তাড়াতাড়ি করে বসে পড়ল আর লজ্জায় মাথাও নামিয়ে ফেলল…
—ইয়া আল্লাহ!আমার মান-সম্মান শেষ!ছি ছি আরশি..এখন কি ভাবতে তোকে?হায় রে কপাল!ধূরর,,,
বনি ফিসফিস করে ফারহাকে জিজ্ঞাসা করল…
কিরে দোস্ত এগুলা কি?আরশি না কার উপর জানি ক্রাশ খেয়েছে?তাহলে এখন আবার স্যারকে গিলে খাচ্ছে কেন?—(বনি)
আরশির ওই ক্রাশই সিদ্রাত স্যার..—(ফারহা)
বনির চোখগুলো আন্ডার মতো গোল হয়ে গেলো।আরশি আস্তে করে ফিক করে হেসে দিলো…
স্টুডেন্টস..please attention here..গতকাল তো আমার পরিচয় দিয়েছিই।আর তোমাদেরটাও নেয়া হয়েছে।বাট আজ থেকে আমরা রেগুলারলি ম্যাথসগুলো করব।and most importantly আমি কিন্তু কোনো ধরণের ফাকি টলারেট করব না।রেগুলারলি পড়া শিখতে হবে।ওকে?—(সিদ্রাত)
ছাত্র-ছাত্রীরা সবাই হ্যা সূচক সম্মতি দিলো।হঠাৎ ক্লাসেরই রিতু নামে আরেকটা মেয়ে দাঁড়িয়ে বলল…
স্যার আপনি তো কাল আপনার পরিচয় দিয়েছিলেন।কিন্তু কাল অনেকেই আসেনি।আজ আরেকবার
বলুন—(রিতু)
সিদ্রাত মুচকি হাসল…
তোমরা তো আছো।তোমরাই তাদেরকে আমার পরিচয় জানিয়ে দিও।ক্লাশ করতে করতে এমনিও জেনেই যাবে সবাই—(সিদ্রাত)
আরশি ভেঙচি কাটল..
—হুহ ভাব!একটু পরিচয়টা দিলে কি হতো?
সিদ্রাত তারপর ত্রিকোনমিতির চ্যাপ্টারটা ধরল।ও বলাই তো হয়নি..ওরা সবাই এসএসসি ক্যান্ডিডেট।অর্থাৎ ক্লাস টেনের সদস্য সবগুলো…
সিদ্রাতের ক্লাশ শেষ হওয়ার পর আরও ছয়টা ক্লাশ হলো।দুপুর দেড়টায় আরশিদের স্কুল ছুটি হয়।আরশি অফিসরুমের দিকে একবার উঁকি দেয়।দেখে সিদ্রাত মৃদু হেসে অন্য টিচারদের সাথে কথা বলছে।আরশি বুকে হাত দিলো…
—উফফ কি মিষ্টি হাসি!হে আল্লাহ আমার সিদ্রুকে তাড়াতাড়ি আমার হাবি বানিয়ে দাও।শাকচুন্নিদের নজরে আবার ব্রণ হয়ে যাবে উনার কপালে আর গালে..উহু..ভালো লাগবে না
আরশি নিজের অবস্থা দেখে নিজেই হেসে দিলো।ওদিকে তো বনি আর ফারহা হেসে শেষ।তিনজন তিনজনের থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে গেলো।আরশি বাসায় এসে দেখে ওর আম্মু রুমে নেই.
.
—উফফফ এই আম্মুটা যে কই গেলো?ভালো লাগে না।এখন লেবুর শরবত কে দিবে আমায়?
আমি এসব ভাবতে ভাবতেই আম্মু রুমে আসল।আমি বিরক্তি মাখা কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলাম…
—আম্মু কোথায় গিয়েছিলে?লেবুর শরবত দাও
আরে শান্ত হো।নূপুররা অন্য জায়গায় জমি কিনবে শুনেছিলি না?—(আরশির আম্মু)
—হুম..সে তো আরও পরে।তো কি হয়েছে?
আরে ওরা আজই শিফট হয়ে যাবে।জায়গা ওদের মিরপুর আছে।ওখানেই শিফট হবে।ইশ কত আপন মানুষ ছিলো তারা আমাদের।আজ চলে
যাবে—(আরশির আম্মু)
আম্মুর কথা শুনে আমার মাথা যেনো চক্কর দিয়ে উঠল।কান্না চলে আসবে মনে হচ্ছে।আমাদের বাসাটা সাত তলা।আমার আব্বু আর নূপুর আপুর আব্বু শেয়ারে এই বাসাটা তৈরি করেছিলো।সেই ছোট থেকে আমরা একসাথেই থেকেছি।বাকি ছয়তলা ভাড়া দেওয়া।আমরা পাঁচতলায় থাকতাম।প্রত্যেক ফ্লোরে চারটা করে ইউনিট।কিন্তু পাঁচতলায় দুইটা ইউনিট।একটায় থাকি আমরা আর অপরটায় নূপুর আপুরা।বিশাল বড় প্রতিটি ফ্লোর।আমাদের ফ্লোরের ডান সাইডে আমাদের মেইন ডোর আর বাম সাইডে আপুদের।মাঝখানে বিশাল স্পেস আছে চলাচলের জন্য। কত হাসি-খেলা করেছি একসাথে।সেই মানুষগুলো চলে যাবে।মানতে কষ্ট হচ্ছে।আমি দৌড়ে নূপুর আপুদের রুমে গেলাম।গিয়ে দেখি আন্টি সব জামা গুছাচ্ছে।আমি আন্টিকে জড়িয়ে ধরলাম দৌড়ে গিয়ে…
—আন্টিইই..তোমরা নাকি চলে যাবা?
নূপুরের আম্মু মৃদু হাসলেন…
তোকে অনেক মিস করব রে সোনা—(নূপুরের আম্মু)
—আন্টি প্লিজ যেওনা।আর তোমরা গেলেও নূপুর আপুকে রেখে যাও
তা কি হয় নাকি পাগল?আর আমাদের শেয়ারে যতটুকু ছিলো সেটা তোর আঙ্কেল আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।তারা কালকেই এই বিল্ডিংয়ে উঠবে।কি যেনো নাম..হুম মুন!নূপুরের মতোই মুন মেয়েটা।তুই ওকে ফ্রেন্ড বানিয়ে নিস।আর আমি কিন্তু মাঝে মাঝেই ফোন দিবো তোদেরকে—(নূপুরের আম্মু)
আরশি তবুও কেঁদেই চলেছে।আর এটাই স্বাভাবিক।একসাথে এতগুলো বছর থাকার পর যদি কেউ ছেড়ে চলে যায় তাহলে আসলেই অনেক কষ্ট হয়..
আরশি সারাদিন নূপুরদের বাসায় ছিলো।সবকিছু গুছানো হলে নূপুররা রাতেই মিরপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।ওখানেও ওদের বাড়ি আছে…
রাতে আরশির খুব মন খারাপ থাকে।কেমন যেনো খালি খালি লাগে।পরের দিন আরশি আবারও স্কুলে যায়না।দশটার দিকে ঘুম থেকে উঠে।ঘুমু ঘুমু চোখ নিয়ে বারান্দায় যেতেই দেখে একটা পিকাপ থেকে একজন পুরুষ তদারকি করে মানুষ দিয়ে ফার্নিচার নামাচ্ছে।আর আরও কিছু লোক ফার্নিচারগুলো বিল্ডিংয়ের ভিতর নিয়ে যাচ্ছে।আরশি বুঝতে পারে এরাই হয়ত কিনেছে বাড়িটা
চলবে…