প্রাণের_চেয়েও_প্রিয় পর্ব ৩৩+৩৪

#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_33
#Writer_TanhaTonu

আরশি সিদ্রাতের কাছে এগিয়ে যায় আর উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞাসা করে…
—”এমন লাগছে কেন আপনাকে?কি হয়েছে আপনার?আপনি কি সিক?”
সিদ্রাত অস্থিরতার সাথে জবাব দিলো…
—”আগে ভিতরে আসো।তারপর বলছি”

আরশির কলিজাটা একদম ছোট হয়ে যাচ্ছে সিদ্রাতের এমন অবস্থা দেখে।ও ধীর পায়ে হেঁটে সিদ্রাতের সাথে ওর রুমে যায়।রুমে ঢুকেই সিদ্রাত দরজা অফ করে সোজা হয়ে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়ে।আরশি কিছুটা অবাক হয় এতে..
—”স্যার?”
সিদ্রাত কপাল কুচকে চোখ বন্ধ করে অস্থিরতার সাথে জবাব দেয়…
—”আরশি প্লিজ আমায় খারাপ ভেবো না।আমি কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে তোমায় ডাকিনি।আমার মাথাটা ফেটে যাচ্ছে মনে হচ্ছে।এতো তীব্র যন্ত্রণা কখনো হয়নি।প্লিজ একটু টিপে দাওনা।মা বা মুন কেউ বাসায় নেই তাই তোমায় ডাকলাম…”

কথাগুলো বলার সময় সিদ্রাতের গলা কাঁপছিলো।সিদ্রাতের অস্থিরতা দেখেই আরশি বুঝতে পারছে ব্যথা আসলেই তীব্র।আরশি সিদ্রাতের পাশে গিয়ে বসে ধরা গলায় বলল…
—”স্যার আপনি সোজা হয়ে শুয়ে পড়েন।আমি টিপে দিচ্ছি”

সিদ্রাত সোজা হয়ে শুয়ে চোখগুলো খিচে বন্ধ করে রাখল।আরশি সিদ্রাতের মাথায় হাত দিতেই দেখল কপাল কিছুটা গরম।খুব যতনে টিপে দিতে লাগল সিদ্রাতের মাথা…
বেশ ক্ষানিকটা সময় যাওয়ার পরও ব্যথা কমে না।বরং তীব্র ব্যথার চোটে সিদ্রাতের দু’চোখের কার্নিশ দিয়ে পানি পড়তে লাগল।আরশিও এবার কেঁদে দিলো।একে তো মানুষটা খুব প্রিয়,অন্তরের খুব কাছের..তারপর আবার খুবই শক্ত…সেই মানুষটারও চোখ বেয়ে পানি পড়ছে যেটা আরশি সহ্য করতে পারছে না।কান্না মিশ্রিত কন্ঠেই আরশি বলতে লাগল…

—”স্যার আপনার ব্যথা তো একটুও কমছে না।কি করব এখন?খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনা?”
সিদ্রাত ঠোঁটের কোণে মলিন হাসি ফুটিয়ে বলল…
—”এই পাগলী কেঁদো না।আর খুব,,কষ্ট হচ্ছে না তো..আসলে আমাদের,, মাথার,,,সাথে চোখেরও তো কানেক্ট আছে..তাই হয়ত চোখ দিয়ে পানি পড়ছে”

—”মিথ্যাবাদী.. আমি সব বুঝি..আচ্ছা আপনি ওষুধ খেয়েছিলেন?এতো তীব্র ব্যথা এভাবে ঠিক হবে না”
—”প্রথমে তো হালকা ব্যথা ছিলো তাই নাপা খেয়েছিলাম।আচ্ছা একটা,,কাজ করো..বেড সাইড টেবিলের ড্রয়ারে আমার ওষুধের বক্স আছে।ওখান থেকে এঞ্জেন্টা আর লিঞ্জিট দাও তো…উফফ আর পারছি না”

সিদ্রাত কথাটা বলে উলটো হয়ে শুয়ে কপালটা বালিশে চেপে রাখল।এতো ব্যথা হঠাৎ..একদম নিতে পারছে না ছেলেটা।কতটা ব্যথা হলে এরকম একটা মানুষও কেঁদে দেয় তা কি আর বুঝার বাকি?

আরশি তাড়াতাড়ি করে ওষুধ দুটো নিয়ে সাথে এক গ্লাস পানি নিয়ে সিদ্রাতকে খাইয়ে দিলো।সিদ্রাত বেডে শুয়ে আবারও চোখ বন্ধ করল।আরশি সিদ্রাতের মাথা টিপে দিতে লাগল আবারও..প্রায় আধা ঘন্টা পর ব্যথার তীব্রতা কিছুটা কমল।আরশি ধরা গলায় জিজ্ঞাসা করল…
—”স্যার আপনি এতো টেনশন করেন কি নিয়ে?এতো টেনশন করে কি হবে বলুন?আরও নিজের শারীরিক সমস্যা বাড়বে..যেমন এখনো সাফার করছেন।আর টেনশন করিয়েন না কোনো কিছু নিয়ে।আল্লাহর উপর সব ভরসা”

সিদ্রাত ঠোঁট কামড়ে মলিন কন্ঠে বলল…
—”হুমম..থ্যানকিউ পাশে থাকার জন্য এতোক্ষণ..আমি একটু ঘুমোই কেমন?তুমিও রাত জেগো না।মুনের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো”

আরশি বুঝতে পারল ওষুধের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।এজন্যই সিদ্রাতের ঘুম পেয়েছে।আরশি সিদ্রাতের কপালে একটা চুমু এঁকে দিলো।সিদ্রাত ঘুমের মাঝেই মৃদু হাসল।তা দেখে আরশিও লাজুক হাসল…
মাঝরাতে আবার কোনো সমস্যা হয় কিনা ভেবে আরশি আর মুনের রুমে গেলো না।সোফাটায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে রইল…

°°°°°°°°°°°°°°
—”আর,,শিই..এক,,টু উঠো,,না,,”

সিদ্রাতের কাতর কন্ঠ আদৌ আরশির কানে যাচ্ছে কিনা সন্দেহ।সে তো ঘুমে বিভর।সিদ্রাত কাতরাতে কাতরাতে আবারও ক্ষীণ গলায় ডাকল…
—”আরশি,,ইই পাখিইই..আমার,,এতো কষ্ট,,,হচ্ছে কেন?প্লিজ উঠো একটু”

আরও প্রায় পাঁচ সাত মিনিট পর আরশির ঘুমটা হালকা হলো।ও ঘুমের মাঝেই কেমন যেনো কাতরানো কন্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছে।আরও কয়েক মিনিট পর ও লাফ দিয়ে উঠল।সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে আতকে উঠল।মাথার এক সাইড কেমন যেনো অন্যরকম লাগছে।আরশি দৌড়ে সিদ্রাতের কাছে এগিয়ে গেলো।সিদ্রাতের কাছে যেয়ে যেটা দেখল তাতে আরশি আওয়াজ করে কেঁদে দিলো।সিদ্রাতের গালে হাত বুলাতে বুলাতে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে জিজ্ঞাসা করল…
—”একি..কি হলো আপনার?মাথায় এক পাশ থেকে এমন রক্ত পড়ছে কেন?খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনা?দাঁড়ান আমি ডক্টরকে ফোন দিচ্ছি…”

সিদ্রাতের চোখ দিয়েও পানি পড়ছে।মাথা ব্যথায় মনে হচ্ছে রগগুলোও ছিড়ে যাচ্ছে।এক সাইড থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়তে পড়তে গাল বেয়ে বেডে গড়িয়ে পড়ল।এমন রক্ত দেখে আরশির মাথা চক্কর দিচ্ছে।ও ডক্টরকে ফোন দিলো।তারপর ওর আব্বুকে ফোন দিয়ে বলল আসতে।ফোন রেখে রুমের দরজা খুলে আবারও সিদ্রাতের পাশে গিয়ে বসে কাঁদতে লাগল আর রক্তগুলো মুছতে লাগল…
—”আরশি পাখি কেঁদো না।আমার,,, তেমন,, কি,,ছু হয়নি,,”

সিদ্রাত এটুকু বলে থেমে গেলো।আরশির আম্মু-আব্বু হুড়মুড়িয়ে ঢুকল।সিদ্রাতের এই অবস্থা দেখে দুজনই আৎকে উঠল।আরশির আব্বু বলল…
—”সিদ্রাতকে এখনি হসপিটালাইজড করতে হবে।আমি ড্রাইভারকে বলছি কার রেডি করতে”

আরশির আব্বু ফোন করতে চলে গেলো।আরশির আম্মু সিদ্রাতের পাশে এসে বসে কপালে চুমু এঁকে দিলো।আরশির আম্মুর চোখজোরাও ভরে গিয়েছে সিদ্রাতকে এভাবে দেখে।তিনি বললেন…
—”বাবা এরকমটা কিভাবে হলো?আমাদেরকে আগে কেন বলিসনি?খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনা?”

সিদ্রাত জবাব দিলো না।জবাব দেয়ার অবস্থাতেই হয়ত নেই।কিছুক্ষণ পর আরশির আব্বু আর ড্রাইভার এসে দুজন মিলে সিদ্রাতকে নিয়ে কারে আরশির আম্মুর কোলে শুইয়ে দিলো।আরশিও পাশেই বসল।আরশির আব্বু ড্রাইভারের পাশে বসতেই কার স্টার্ট করল…

আরশি সিদ্রাতের পাশে বসে অনর্গল কেঁদেই যাচ্ছে।আর সিদ্রাত প্রায় সেন্সলেস..আরশি কাঁদছে আর সিদ্রাতের মুখে হাত বুলাচ্ছে…
—”কিছু হবে না আপনার।ইনশা আল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।আপনি ভয় পাবেন না হুম?কিভাবে হলো এরকমটা?আপনি এতো কেয়ারলেস কেন?আমায় একটুও ভালোবাসেন না আপনি।ভালোবাসলে নিজের খেয়াল রাখতেন।আমার কলিজাটা যে কেমন লাগছে তা আমিই জানি..”

আরশি এরকম হাজারটা কথা বলছে আর কাঁদছে।আরশির এই পাগলামোগুলো আরশির আব্বুর কানে না গেলেও আরশির আম্মুর কানে ভালো করেই গেলো।বাট উনি তেমন গুরুত্ব দিলেন না এই মূহুর্তে…

সিদ্রাতকে হসপিটালে নিয়ে আসার পর ওর মাথা ব্যান্ডেজ করা হলো আর কিছু এক্স-রে আর টেস্ট করতে করতে সকাল সাড়ে ছয়টা বেজে গেলো।রিপোর্ট দেখার পর ডক্টর জানালো তেমন কোনো প্রবলেম নেই।জাস্ট মাথায় আঘাত পাওয়ার কারণে ব্লিডিং হয়েছে।আরশি কথার মাঝেই জিজ্ঞাসা করল…
—”কিসের আঘাত আঙ্কেল?”
—”হয়ত উনার মাথায় ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করার ট্রাই করা হয়েছে।কিন্তু সফল না হওয়ায় এক সাইডে শুধু পোচ লেগেছে।তবে যদি আঘাতটা ভালোভাবে করতে পারত তাহলে এখন হয়ত আপনাদেরকে হসপিটালের পরিবর্তে কোনো কবরস্থানে থাকতে হতো।পেশেন্টের খেয়াল রাখবেন এন্ড আমি প্রেসক্রিপশন লিখে দিচ্ছি”

ডক্টরের “কবরস্থান” কথাটা শুনে আরশির বুকটা ধক করে উঠল।ও দৌঁড়ে সিদ্রাতের কেবিনে গিয়ে ঘুমন্ত সিদ্রাতকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো

—”কার সাথে আপনার শত্রুতা?কে করল এমন কাজ আপনার সাথে?আমার যে ভয় লাগছে।অনেএএক ভয় লাগছে”

আরশি মাথায় কারও স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে তাকালো।সিদ্রাত চোখ খুলেছে।আরশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ক্ষীণ কন্ঠে বলল…
—”ভয় পেও না।আমার কোনো শত্রু নেই।এটা একটা মিসয়ান্ডার্স্টেন্ডিং এর কারণে হয়েছে”

আরশি সিদ্রাতের কথা শুনে সিদ্রাতের বুকে মুখ গুঁজে আবারও কাঁদতে লাগল।সিদ্রাতের দু’চোখে ঘুম।তবুও আরশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।এক পর্যায়ে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ল সিদ্রাত…

—”আরশি?”

আরশি ওর আম্মুর কন্ঠ শুনে চমকে উঠল।সাথে সাথে সিদ্রাতকে ছেড়ে দিয়ে ওর আম্মুর সামনে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো।আরশির আম্মু ঠান্ডা গলায় বলল…
—”তুমি বাসায় চলে যাও।আজ তো আবার এক্সামের খাতা দিবে।বাসায় গিয়ে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে হাফ বেলা পর স্কুলে গিয়ে খাতাগুলো নিয়ে এসো”

আরশির যেতে ইচ্ছা করছে না।কিন্তু ওর আম্মুর উপর আর কথা বলার সাহসও পাচ্ছে না যেহেতু ওর আম্মুকে ওকে সিদ্রাতকে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় দেখে ফেলেছে…
★★★★★

বিকাল চারটা বাজে..আরশি মন খারাপ করে সিদ্রাতের রুমে বসে আছে।সিদ্রাতকে দুপুরেই হসপিটাল থেকে নিয়ে আসা হয়েছিলো।খবর পেয়ে সিদ্রাতের আম্মু-আব্বুও ফিরে আসে।ক্ষত তেমন গভীর না হওয়ায়,জাস্ট উপরের চামড়ায় পোচ লাগায় তেমন ক্ষয় ক্ষতি হয়নি।আর দু বেলা ওষুধ খাওয়ার কারণে ব্যথাও তেমন একটা নেই সিদ্রাতের।আরশি মুখ ফুলিয়ে বলল…
—”স্যার আমি এখন কি করব?আম্মু তো বাসায় ঢুকতে দিবে না”

সিদ্রাত চোখ বন্ধ রেখেই জবাব দিলো…
—”ম্যাথে A- পাওয়ার পরও তুমি আশা করো তোমাকে বাসায় জায়গা দিবে!”
আরশি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল…
—”স্যার দশটা মার্কস দিন না।শুধু ভেক্টর চিহ্নটাই তো উলটো দিয়েছি এজন্য পুরো আট মার্ক্স কেটে দিলেন?আমি বাসায় ঢুকব কি করে?অলরেডি আম্মু আমাকে তিনটা চড় দিয়েছে আর আব্বু বকেছে।আপনি না সেদিন বললেন সবাই ভালো করেছি আমরা ম্যাথ হায়ার ম্যাথে”

—”হ্যাঁ অবশ্যই আমার দৃষ্টিতে তুমি অনেক ভালো করেছে।কারণ আমি তোমাকে যতটুকু পড়াশুনা করতে দেখি সে অনুযায়ী তোমার D পাওয়ার কথা ছিলো।বাট তুমি (A-)পেয়েছো..অবশ্যই এটা অনেক ভালো রেজাল্ট”
আরশি সিদ্রাতের দিকে মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে হনহনিয়ে চলে যেতে লাগল
—”শেষ পর্যন্ত মিষ্টি ভাষায় অপমান করল।পড়ি না তো কি হয়েছে?পড়াশুনা করেও তো উনার ছেলে-মেয়েই সামলাবো..হুহ..সেটাও কথা না।আগে তো আমি অনেক ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম।আর যাই হোক ম্যাথে নিরানব্বইয়ের নিচে কখনো পাইনি।এবার কপাল খারাপ বলেই তো এমন খারাপ করলাম।এটা কি আমার দোষ নাকি কপালের?হুহ..থাক যাবো না রুমে।একটু পর আম্মু-আব্বু এসে ডাকাডাকি করে যখন জোর করবে রুমে যাওয়ার জন্য তখন একটু ভাব নিয়ে তারপর রুমে যাবো..আমিও আরশি..হুহ”

চলবে..
এক্সামের প্যারায় ছিলাম এই কয়দিন।তাই গল্প ঠিকমতো দিতে পারিনি।আজও প্রচুর লিখেছি।হাতে শক্তি পাচ্ছি না।সো প্লিজ সবাই সন্তুষ্ট থাকো এটুকুতেই…
প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_34
#Writer_TanhaTonu

আরশি মুখ ফুলিয়ে সিদ্রাতদের রুম থেকে বের হয়ে সিড়িতে গিয়ে বসে রইল আর বিড়বিড় করে ওর আম্মু-আব্বু আর সিদ্রাতের গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগল…
—”শালা নিষ্ঠুর একটা..তোকে আমি কিভাবে যে ভালোবাসলাম আল্লাহই জানে..আমি তো জানি তুইও আমায় ভালোবাসিস।একটু দয়া করে কয়েকটা নাম্বার বেশি দিলে কি হত?প্র‍্যাক্টিক্যালেও নাম্বার কাটল..হারামী..হারামীর ঘরে হারামী..আমি যে রাত জেগে সেবা করলাম সেটার কৃতজ্ঞতা স্বরূপও তো পাঁচটা নাম্বার বেশি দিতে পারত..হুহ..দাঁড়া তোর বউ হই শুধু..তোর বাচ্চা কাচ্চার উপর আমি শোধ নিবো..হারামী..ভ্যাএএএএ..”

সিদ্রাতের আম্মু রুমে ঢুকে সিদ্রাতের সামনে চোখ গরম করে তাকায়
—”আম্মু কিছু বলবে?”
—”মেয়েটাকে এভাবে চলে যেতে দিলি কেন?একটু ভালো ব্যবহারও তো করতে পারতিস।আর এতো মার্ক্স কাটার কি প্রয়োজন ছিলো?”
—”আম্মু প্লিজ তুমি আর কিছু বলো না।তুমি তো জানোই না ওর পড়াশুনার কি অবস্থা।এতো ব্রিলিয়ান্ট একটা স্টুডেন্ট যদি এভাবে শেষ হয়ে যায় তাহলে সেটা কি কাম্য?অবশ্যই না।আমি ওর ভালো চাই।আর ভালো করতে হলে মাঝে মাঝে কঠোর হতো হয়”

সিদ্রাতের আম্মু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল…
—”এতোটা কঠোর হোস না যেন পরবর্তীতে আফসোস করা লাগে..যাই হোক..মেয়েটা তো মনে হয় বাইরে বসে আছে। রাবিয়া আজ ভুলেও মনে হয়না বাসায় ঢুকতে দিবে”

সিদ্রাত মুচকি হেসে বলল…
—”আম্মু তোমার কি আমাকে এতোটাই ইরিসপন্সিবল মনে হয়?বাইরে থাকুক কিছুক্ষণ।আমি যেয়ে নিয়ে আসব নে”

সিদ্রাতের আম্মু সিদ্রাতের কাঁধে হাত দিয়ে আস্তে করে চাপর দিয়ে চলে যায়…

—”এই যে মিস..শুনছেন?সিড়ি থেকে সরে বসুন।এভাবে পথ আটকানোর কোনো মানে হয়না”

আরশি এমনিতেই রেগে ফায়ার ছিলো।আর এখন এই কথাগুলো শুনে রেগে আরও ফায়ার হয়ে গেলো।ও দাঁত কটমট করে পেছনে তাকালো।একটা ২৪/২৫ বছর বয়সী ছেলে।ব্লাক শার্টের উপর গ্রিন কালার জ্যাকেট পড়ে আছে।আরশি দাঁত কটমট করে বলল…
—”ওই বেটা তোর কি সমস্যা?চোখে কি লিফট পড়ে না?ভাগ এখান থেকে”

আরশির কথা শুনে ছেলেটার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।ছেলেটা বলল…
—”কত বড় বেয়াদ্দপ??অসভ্য মেয়ে কোথাকার?বড়দের সম্মানও করতে শিখোনি?ছিহ..অসভ্য,বদমাশ মেয়ে..এগুলোই শিখো বাসায় বসে বসে?আল্লাহ জানে কোন বস্তি থেকে উঠে আসছে!”

আরশি এবার রেগে উঠে দাঁড়ালো।ছেলেটার সামনে গিয়ে কলার ধরে বলল…
—”ওই কি বললেন আপনি আমায়?আমি বস্তির মেয়ে?”

ছেলেটা আরশির হাত থেকে ঝটকা দিয়ে কলার ছাড়িয়ে নিয়ে আরশির হাতটা শক্ত করে ধরে টেনে আরশিদের রুমের সামনে গিয়ে দরজায় কলিং বেল বাজালো।আরশি ভয় পেয়ে গেলো এতে।কারণ এখন যদি এই ছেলে ওর আম্মুর কাছে বিচার দেয় তাহলে কপালে দুঃখ আছে।আরশি আমতা আমতা করে বলল…
—”কলিং বেল বাজালেন কেন?”
—”বাড়িওয়ালার কাছে তোমার নামে বিচার দিবো।এরকম ভদ্র বাসায় বস্তির মেয়ে ভাড়া দেয় কেন তা-ই জিজ্ঞাসা করব”

নূপুর এসে দরজা খুলল।দরজা খুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ দুটিকে দেখে ওর চোখ দুটো গোল হয়ে গেলো..
—”রাফিইইইদদ??তার মানে তুমি সত্যিই আমার সাথে শুধু টাইম স্পেন্ড করার জন্য এ বাসায় ভাড়া নিয়েছো??আই কান্ট বিলিইইভ”

আরশি ভ্রু কুচকে নূপুরকে বলল…
—”নূপুর আপু..তোমার এই ঘোড়ার ডিম রাফিদকে বলো আমার হাত ছাড়তে”

নূপুরও ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করল…
—”রাফিদ তুমি আরশির হাত ধরে রেখেছো কেন?”

রাফিদ হাতটা ছেড়ে অবাক হয়ে বলল…
—”এটা আরশি??হাও ডাজ ইট পসিবল?তুমি না বলেছিলে আরশি অনেক ভালো একটা মেয়ে।কিন্তু এটা তো একটা ধানি লঙ্কা”

আরশি মুখ ফুলিয়ে রাফিদের দিকে তাকালো।রাফিদ নূপুরকে সব বলল কি কি করেছে আরশি এতোক্ষণ।নূপুর তো শুনে হাসতে হাসতে শেষ।হেসেই বলল…

—”উফফ রাফিদ প্লিজ ভুল বুঝো না।আসলে পিচ্ছি মানুষ তো..রাগলে বোম্ব হয়ে যায়।একচুয়ালি ওর এক্সাম একটু খারাপ হয়েছে তো তাই আঙ্কেল প্রচুর বকেছে।আর আন্টি মেরে রুম থেকে বের করে দিয়েছে..এজন্য বেচারির মন খারাপ”

আরশি নাক ফুলিয়ে বলল…
—”নূপুর আপু তুমি আমার সাফাই গাইলে নাকি যেটুকু প্রেস্টিজ ছিলো সেটাও পাঞ্চার করে দিলে?”
রাফিদ আরশির কথা শুনে হো হো করে হেসে দিলো।হেসে বলল..
—”ওকে ওকে..সরি পিচ্ছি আপুনি।তোমার সাথে আমার ওরকম বিহেইভ করা উচিত হয়নি”

আরশিও মৃদু হেসে বলে…
—”আ’ম অলসো সরি জিজু ভাইয়া..আমি বেশি রিয়েক্ট করেছি”

নূপুর ভ্রু কুচকে বলল…
—”জিজু ভাইয়া??”
আরশি ভেঙচি কেটে বলল…
—”আপু আমি এতো বোকা না।তোমাদের একটু আগের কথা শুনেই বুঝেছি তোমরা একে অপরকে লাভ করো।আর তুমি এখানে আমার জন্য না বরং জিজু ভাইয়ার জন্য এসেছো..হুহ”

রাফিদ আরশির কথা শুনে হাসল।নূপুর আরশিকে জড়িয়ে ধরে বলল…
—”ওলে ওলে পিচ্চিটা দেখি লাগ কলেচে..সলি পিচ্ছি”
আরশি ফিক করে হেসে দেয় নূপুরের কথা শুনে। তারপর বলে…
—”আচ্ছা তোমরা একসাথে আশেপাশে কোথাও থেকে ঘুরে আসি।আমি আবার কাবাব মে হাড্ডি হবো না”

নূপুর আর রাফিদ হেসে দিলো।তারপর আরশির থেকে বিদায় নিয়ে দুজন বের হলো।আরশি ফুসস করে একটা শ্বাস ফেলে সিদ্রাতদের বাসার দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে রইল…

কিছুক্ষণ পর হাতের উপর কারও স্পর্শ পেয়ে চমকে পাশে তাকাতেই দেখে সিদ্রাত।আরশি অভিমান করে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।সিদ্রাত দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে আরশির পাশে বসল।তারপর বলল…
—”বাব্বাহ পিচ্চি মানুষেরও এতো রাগ?”

আরশি মুখ ফুলিয়ে বলল…
—”পিচ্চি পিচ্চি করবেন না”
সিদ্রাত হালকা হেসে বলল…
—”তাই?উমম…তাহলে কি বলা যায়?অব্ পিচ্চির আম্মু বলব?”

আরশি মনে মনে ব্লাশিং হলেও বাইরে থেকে তা প্রকাশ না করে বলল…
—”আমাকে কোন দিক দিয়ে পিচ্চির আম্মু মনে হয়?আমার এখনো বিয়েই হয়নি।আর হবেই বা কিভাবে?আমি কি জানতাম আমি যাকে ভালোবেসেছি সে একটা আস্ত ছাগল….ছাগলের ছাগলামীর জন্য আমি আজীবন কুমারিই থাকব”

সিদ্রাতের চোখগুলো অটোমেটিক বড় বড় হয়ে গেলো।ও চোখ বড় বড় করে বলল…
—”তুমি আমাকে ছাগল বললে কোন সাহসে?”
আরশিও দাঁত কাটমট করে বলল..
—”আপনাকে কেন ছাগল বলব?আমি তো ছাগল বলেছি আমার ছাগল প্রেমিককে।আপনি তো আমার শিক্ষক..বাবার সমান”

সিদ্রাত বুঝল আরশি ওর সব রাগ কথার মাধ্যমে মিটাচ্ছে।সিদ্রাত লম্বা একটা শ্বাস ফেলে আরশিকে হুট করে কোলে তুলে নিলো।আরশির চোখগুলো গোল গোল হয়ে গেলো…
—”স্যার কি করছেন?ছাড়ুন আমায়..নামান”
—”হুশশশ…”

সিদ্রাত আরশির মুখের দিকে ঝুঁকে কথাটা বলল।মুখের উপর সিদ্রাতের গরম নিশ্বাস পড়তেই আরশি আবেশে চোখ বন্ধ করে সিদ্রাতের শার্ট খামচে ধরে।সিদ্রাত মৃদু হেসে আরশিকে নিয়ে ছাদে যায়।ছাদের রেলিংয়ের উপর বসিয়ে দিয়ে দুহাত দিয়ে আরশির কোমর নিজের দিকে টেনে ধরে।আরশি সাথে সাথে চোখ খুলে ফেলে কোমরে সিদ্রাতের হাতের স্পর্শ পেয়ে।পরক্ষণেই নিজেকে রেলিংয়ের উপর বসা দেখে ওর প্রাণ যায় যায় অবস্থা।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে…
—”স্যার,,আমি পড়ে,,যাবো”
—”উহু..আমি পড়তে দিবো না”

সিদ্রাতের ঘোর লাগানো কন্ঠ স্বর যেনো আরশির শরীরে স্রোত বইয়ে দেয়।ও সিদ্রাতের চোখের দিকে তাকাতেই থমকে যায়।ঘোর লাগানো চোখজোরা এক দৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।আরশির ইচ্ছা করছে এ চোখের মাঝে হারিয়ে যেতে।আরশি সিদ্রাতের গলা জড়িয়ে ধরে। সিদ্রাত আরশির কোমর ধরে রেলিং এর উপর থেকে নামিয়ে রেলিংয়ের সাথে মিশিয়ে দাঁড় করায়।আরশি তখনো সিদ্রাতের গলা জড়িয়ে ধরে ছিলো।সিদ্রাত ধীরে ধীরে আরশির ঠোঁটজোড়ার কাছে এগিয়ে যায়।সিদ্রাতকে এগিয়ে আসতে দেখে আরশি চোখ বন্ধ করে ফেলে।সিদ্রাত মুচকি হেসে প্রেয়সীর ঠোঁটের কোণায় আলতো করে কামড় দেয়।আরশি শিহরণে দু পা দিয়ে ছাদের ফ্লোর খামচে ধরে।প্রায় এক মিনিট পর সিদ্রাত আবারও আরশির ঠোঁট জোরার কাছে এগিয়ে গিয়ে নিজের দখলে নিয়ে নেয়।পরম আবেশে ভেসে যেতে থাকে দুটো আত্মা।সময়টা যেনো থেমে গিয়েছে দুজনের মাঝে।এভাবে কতক্ষণ ছিলো তারা কেউই জানে না।হুশে ফেরার পর সিদ্রাত আরশির ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিয়ে কানের লতিতে ঠোঁট ছোঁয়ায়।আর আরশি সিদ্রাতের কোমল স্পর্শে কেঁপেই চলেছে।সিদ্রাত টেডি হেসে ফিসফিসিয়ে বলল…

—”এরপরও কি তোমার সেই ভালোবাসার মানুষকে ছাগল নিরামিষ বলবে?”

আরশির গাল দুটো লজ্জায় গরম হয়ে যায়।ও সিদ্রাতকে ধাক্কা দিয়ে লজ্জা রাঙা মুখ নিয়ে দৌড়ে সিড়ি বেয়ে চলে যেতে থাকে।সিদ্রাত আরশির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে…

আরশি নিজেদের ফ্লোরে আসতেই মুনের সাথে ধাক্কা খায়।মুন আরশিকে দেখে সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে….

—”আরশিইই…কত্তগুলো দিন পরে তোমায়
দেখলাম?মনটা জুড়িয়ে গেলো”

আরশি মুচকি হেসে বলল…
—”আপু তুমিও না..দুইদিন আগেই না তোমার সাথে গল্প করলাম!”

মুন মাথা চুলকে হাসে।আরশিও ফিক করে হেসে দেয়।মুন বলে…
—”আচ্ছা আমাদের বাসায় আসো।দুজন গল্প প্লাস মজা করব”
—”কিন্তু আপু তোমার ভাই..উনার সামনে আমি যাবো না।লজ্জা লাগে।একটু পরই তো ছাদ থেকে চলে আসবে”

মুন সরু চোখে আরশির দিকে তাকিয়ে বলল…
—”বাই এনি চান্স..আমার হবু পিচ্চি ভাবীটা কি এতক্ষণ আমার বদমেজাজি ভাইটার সাথে রোমান্স করছিলো নাকি?”

আরশি লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে।লাজুক কন্ঠে বলে..
—”আমি কিছু করিনি।তোমার সজারু ভাই করেছে”

মুন আরশির কথায় শব্দ করে হেসে দেয়।হাসতে হাসতে বলে…
—”দাঁড়াও আম্মু-আব্বুকে বলে তোমাকে আমার ভাইটার নামে চিরতরে লেখানোর ব্যবস্থা করছি।আমার ভাইটা মে বি একটু বেশিই অধৈর্য হয়ে গিয়েছে”

আরশিও মুনের কথায় হেসে দেয়।তারপর বলে…
—”না গো আপু।তোমার ভাইকে কতবার বললাম আমি উনাকে ভালোবাসি।সে তো বিনিময়ে কিছু বললই না..উলটা আমাকে পড়াতে পড়াতে শেষ করে দিচ্ছে”

মুন মুচকি হেসে বলে…
—”আরে ডিয়ার রিলাক্স…আমার ভাইয়াটা হয়ত চায় তার বউটা যেনো পড়াশুনায় গাফিলতি না করে..তাই হয়ত ধরা দিচ্ছে না”
—”হুউম..আমারও তাই মনে হয়”
—”আচ্ছা এখন রুমে আসো তো”

আরশি মুনের সাথে ওর রুমে যায়।মুন ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে।আরশি বেডে পা তুলে বসে মুনের মোবাইলটা নিয়ে ফেইসবুকে ঢুকে।নিউজিফিডে কয়েকটা পোস্ট স্ক্রল করে একটু নিচে যেতেই একটা পোস্ট দেখে থমকে যায়।মুন সিদ্রাতকে ট্যাগ দিয়ে উইশ করেছে… “হ্যাপি ডাউনলোড দে ভাইয়া।আল্লাহর কাছে লাখো শুক্রিয়া আল্লাহ তোমাকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছে আর এতো ভালো মানুষ করে পাঠিয়েছে।তুমি যদি না আসতে তাহলে আমিও তোমার বোন হতে পারতাম না।লাভ ইউ এন্ড ম্যানি ম্যানি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্যা ডে”

আরশি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো পোস্টটা দেখে…
—”আজ উনার জন্মদিন!কিন্তু আমি তো জানি না।এখন আমি কি করব?কি দিবো উনাকে?আহ ভালো লাগে না”

আরশি দৌড়ে মুনের রুম থেকে চলে গেলো।এদিক-ওদিক তাকিয়ে গুটিগুটি পায়ে নিজের রুমে চলে গেলো।বেডে বসে বেশ কিছুক্ষণ ভাবল কিভাবে কি করা যায়!কিছুক্ষণ পর মুচকি হেসে নূপুরকে ফোন দিলো।নূপুরের সাথে কথা হলে রেডি হয়ে পার্স ব্যাগটা নিয়ে আবারও চোরের মতো হেঁটে বাসা থেকে বের হলো আর স্বস্তির একটা নিশ্বাস ফেলল..
—”ভালোই হয়েছে আজ আমার বাসায় যাওয়া নিষেধ।শান্তিতে সব এরেঞ্জমেন্টস করতে পারব।আম্মু-আব্বু খুঁজবেও না..আল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ ”

আরশি গেইটের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই একটা ছেলে বাইক নিয়ে আরশির সামনে এলো।আরশি মুচকি হেসে বাইকে উঠে বসতেই বাইক স্টার্ট দিলো ছেলেটা।ছাদের উপর থেকে সবই দেখল সিদ্রাত।আরশি চলে যাওয়ার পরপরই রেগে রেলিংয়ে ঘুষি দিলো…

—”জিজু নূপুর আপু কোথায়?”
—”তোমার নূপুর আপু মার্কেটেই।তুমি আসলেই একটা ঝামেলা পিচ্ছি।কই আমি আর নূপুর একটু রোমান্স করব তা না..এখন তোমার সিদ্রুর জন্য বার্থডে এরেঞ্জমেন্টস করি..হাহ”

আরশি রাফিদের কথা শুনে হাসল।আরও পাঁচ মিনিট পর ওরা মার্কেটে এসে পৌঁছালো।নূপুর জিজ্ঞাসা করল…
—”আরশি তা গিফট হিসেবে কি কি কিনবে?”
—”আপু আমি অলরেডি ভেবে রেখেছি কি কি দিবো।এবার চলো শপিং শুরু করা যাক”
নূপুরও মুচকি হেসে সায় দিলো…

প্রায় দেড়ঘন্টার মতো ঘুরে ওরা কেনাকাটা কমপ্লিট করল।সিদ্রাতের জন্য ব্ল্যাক একটা শার্ট,সিদ্রাতের হাতে থাকা বিড ব্রেসলেটের মতোই আরে দু’টো ব্ল্যাক বিড ব্রেসলেট,দুটো গোল্ডেন ফিসের মাঝারি সাইজের রাউন্ড শেপের একটা এক্যুরিয়াম..এক্যুরিয়ামটার সাইজ এমন যে বেড সাইড টেবিলে রাখা যাবে আর পারফিউ,চুলের জেল..সবশেষে তিনরকমের গোলাপের (মেইডেন’স ব্লাশ রোজ,ড্যামাস্ক রোজ,সুগার বেবি) একটা বুকে নিলো..ব্যাস কম্পলিট.. তারপর এক্যুরিয়ামটা একটা গিফট বক্সে আর বাকি সবগুলো একটা গিফট বক্সে ঢুকিয়ে র‍্যাপিং পেপার দিয়ে র‍্যাপড করিয়ে নিলো।রাফিদ বলল…

—”বাব্বাহ পিচ্চি তোমার পছন্দ আছে বলতে হবে”
—”নো জিজু ভাইয়া..এগুলো আমার পছন্দ না।উনাকে এসবে ভালো লাগে তাই..ব্ল্যাক শার্ট পড়লে উনাকে এতো ভালো লাগে কি বলব!আর উনার হাতে অলওয়েজ একটা বিড ব্রেসলেট থাকে।তাই হুবুহু ওরকম দুটো কিনলাম।একটা উনার আর একটা আমার।আর পারফিউম আর জেল..এ দুটো উনার পছন্দের ব্র‍্যান্ডেরই কিনেছি।শুধু এক্যুরিয়াম আর বুকেটা আমার পছন্দের।এক্যুরিয়ামে দুটো মাছ দেখলে না..একটার নাম সিদ্রাত আর আরেকটার নাম আরশি..”

আরশি এটা বলে লাজুক হাসল।নূপুর আর রাফিদও মুচকি হাসল আরশিকে দেখে।দুজন একসাথে বলল…
—”আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসাকে পূর্ণতা দিক”

বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে ছয়টা বেজে যায়।আরশি আর নিজেদের রুমে যায়না।একবারে সিদ্রাতদের রুমেই নক করে।মুন এসে দরজা খুলে কতগুলো ধমক দিলো আরশিকে…
—”এই ফাজিল মেয়ে কোথায় গায়েব হয়ে গিয়েছিলে হুম?আমি কত ভয় পেয়েছি জানো?আর তোমার হাতে এগুলো কি?একটার উপর আরেকটা বক্স..কি আছে এগুলোতে?”

আরশি মাথাটা নিচু করে বলল…
—”আপু তোমার আইডিতে গিয়ে দেখলাম উনার বার্থডে।তাই নূপুর আপুর সাথে গিয়ে উনার জন্য এগুলো কিনেছি”

মুন আরশির কথায় অবাক হলো।পাশাপাশি মুচকি হাসলোও..মৃদু হেসে বলল…
—”ভাইয়া ওর রুমেই আছে”

আরশি লাজুক হেসে সিদ্রাতের রুমে চলে গেলো।দেখল লাইট অফ।শুধু ব্লু শেডের একটা লাইট জ্বালানো।আরশি বক্স দুটো বেডে রেখে লাইট অন করল।সিদ্রাতকে কোথাও না পেয়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলো…

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here