প্রাণের_চেয়েও_প্রিয় পর্ব ৩৭+৩৮

#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_37
#Writer_TanhaTonu

আরশি ডক্টরের চ্যাম্বারের দরজার হ্যান্ডেলে হাত রাখতেই ওর ফোন বেজে উঠল।একপাশে সরে এসে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নুসাইফা চিল্লিয়ে বলল…

—”আরশির বাচ্চা কোথায় তুই?আমি এত্তগুলো বক্স নিয়ে নিচে দাঁড়িয়ে আছি।তাড়াতাড়ি আয় নাহলে তোর পিঠে আমি আজ লাঠি ভাঙব”

নুসাইফার চিৎকার শুনে ফোনটা কানের কাছ থেকে আরশি সরিয়ে নিলো।চোখ-মুখ কুচকে ডক্টরের চ্যাম্বারের দিকে একবার তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলো…
________________________________
রাতে সিদ্রাত বেডে বসে ল্যাপ্টপ নিয়ে অফিসের সিওকে ইমেইল করল ডিজাইনারদের কাজের চার্ট দেওয়ার জন্য।কিছুক্ষণের মধ্যেই সব ডিজাইনারদের কাজের চার্ট ওর হাতে চলে আসলে ও সেগুলো ভালো করে দেখতে লাগল।একটা টিমে দেখতে পেলো এক মাসে মাত্র ২৫ লাখ টাকার কাজ করেছে।ব্যাস এতেই ওর মাথা নষ্ট হয়ে গেলো।রেগে সেই টিমকে ইমেইল করে তারপর ল্যাপ্টপটা রেখে বেডে শরীর এলিয়ে দিলো।প্রতিদিন অফিসের এতো চাপ ইদানিং শরীর নিতে চাচ্ছে না।প্রতিটি মূহুর্তে মনে হয় শরীরটা ছেড়ে দিতে চাচ্ছে।সিদ্রাত শরীরটা বেডে এলিয়ে দিতেই সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়ল…

পরের দিন ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে টাইম মতো অফিসের জন্য বেরিয়ে গেলো।প্রায় অফিসের কাছাকাছি আসতেই কিছু একটা মনে করে কাউকে ফোন দিলো।ফোন দিতেই ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করল।সিদ্রাত বলল…

—”আজ তোদের ক্লাস কতক্ষণ হবে?আমাকে একটা কাজে একটু ওখানে যেতে হবে”

ওপাশ থেকে কিছু একটা বলল যা শুনে সিদ্রাত বলল…
—”ওকে প্রবলেম নেই।আমি ম্যানেজ করে নিবো”

কার অফিসের সামনে পৌঁছতেই সিদ্রাত ফোন রেখে ভিতরে চলে গেলো…

***
বিকাল তিনটা বাজে…
নুসাইফা আর আরশি ক্লাস শেষ করে বের হচ্ছে।আরশি আড়চোখে নুসাইফার দিকে তাকাচ্ছে বারবার।পরে আর নিজেকে দমাতে না পেরে বলেই ফেলল…
—”নুসু কোনো সমস্যা?তোকে এরকম লাগছে কেন?কোনো কিছু নিয়ে ঘাবড়ে আছিস? আমার সাথে শেয়ার করতে পারিস”

নুসাইফা একটা ঢোক গিলে না সূচক মাথা নাড়ায় আর বলে
—”কি নিয়ে ঘাবড়াবো?ছাড় তো।আসলে শরীরটা ভালো লাগছে না।চল তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যাই”
—”আচ্ছা চল তোকে ওই গাছটার নিচে বসিয়ে আমি রিক্সা ডেকে আনি।কষ্ট করে তোর আর হাঁটার প্রয়োজন নেই”

নুসাইফার চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেলো সামনের দিকে তাকিয়ে।আরশি ভ্রু কুচকে নুসাইফাকে বলল…
—”কিরে কি হলো?”
—”আরশি চল অন্যদিকে যাই আমরা।এখানে ভালো লাগছে না”
—”কিন্তু তুই তো সিক।তুই বস এখানে।আমি দেখি কোনো রিক্সা পাই কিনা?”

আরশি পেছনে ফিরতে নিতেই নুসাইফা আরশির হাত ধরে ফেলে।আরশি এবার সন্দেহ নিয়ে নুসাইফার দিকে তাকায়।নুসাইফা বিড়বিড় করে বলে..
—”আজ যদি হাটে হাড়ি ভাঙে তাহলে ভাইয়া আমায় জীবিত কবর দিবে।ইশ সকালেই বলে দিয়েছিলো যেনো তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যাই”
—”কিরে কি বিড়বিড় করিস?সত্যি করে বল তো তোর কি হয়েছে?”

নুসাইফা এবার আরশির মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরানোর জন্য বলল…
—”আরশি তুই কি আমাকে সন্দেহ করছিস?এহ ১৯ বছরের ছুকরি আমায় ডাউট করে!দুইদিন হলো না মেডিকেলে চান্স পেয়েছে আর ওমনি ভাব বেড়ে গেলো তাইনা?ঢঙ”

আরশি এবার রেগে গেলো।রেগে বলল…
—”তোর সেবা করতে চাওয়াটাই আমার ভুল হয়েছে।চল বাসায়।তোকে হাঁটিয়েই আজ বাসায় নিয়ে যাবো”

নুসাইফা আড়চোখে দেখে নিলো সামনে আর কেউ নেই।আরশিকে ভেঙচি দিয়ে বলল…
—”হুহ চল”
দুজন ঝগড়া করতে করতেই বাসায় চলে গেলো।বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেডে বসতেই দরজায় নক পড়ল।আরশি মুচকি হেসে বলল…
—”তোর নিহান এসেছে বোধয়”

নুসাইফা চোখ বড় বড় করে বলল…
—”কি বললি?নিহান!!ওর না এ বাসায় আসা নিষেধ?তাও এলো কেন?মামা বা ভাইয়া জানতে পারলে আমায় কুচি কুচি করবে”
—”আরে কুল..এতো ভয় পাচ্ছিস কেন?নিহান তো তোর ফিয়োন্সিই।কিছু বলবে না তোর মামা”

নুসাইফা বিড়বিড় করে বলল…
—”মামা না বললেও ভাইয়া যদি জানে ওর বাসায়
পর- পুরুষ এসেছে আমাকে খেয়ে ফেলবে।ধূর যদি জানে কি?জানবেই তো..এ বাসার কোণায় কোণায়ই তো সে সিসি ক্যামেরা সেট করেছে..উফফ আল্লাহ প্লিজ হেল্প মি”

আবারও কলিং বেল বেজে উঠল। আরশি বলল…
—”বিড়বিড় করা বাদ দিয়ে গিয়ে দরজা খুল।আর এতো ভয় পেলো তুই নিজেই নিহান ভাইয়ার সাথে কোথাও ঘুরে আয়”
—”হুম এই আইডিয়াটা মন্দ না”

নুসাইফা দরজা খুলতেই নিহান দাঁত কেলিয়ে হাসল।নুসাইফা রাগ করার ভান করে বলল…
—”তোমার সাথে না আমার ব্রেকাপ হয়েছে?কেন এসেছো এখানে?আর জানো না এ বাসায় পুরুষ ঢোকা নিষেধ?”
—”জানু এতো রাগ করলে হয়?চলো লেকে যাবো..তোমায় ছাড়া কি আমার কিছু ভালো লাগে আমার টুনটুনির মা..যাও তো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো”

নুসাইফা আর রেগে থাকার অভিনয় করতে পারল না।মুচকি হেসে ভিতরে গিয়ে দশ মিনিটে রেডি হয়ে নিলো।আরশি বেডে বসে বসে শুধু নুসাইফার কাজ দেখছে।যাওয়ার আগে আরশিকে বলল…
—”আরশি আসি।সাবধানে থাকিস।আর আজ কিছু রান্না করিস না।আসার সময় নিয়ে আসব নে”
আরশি সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায়।নুসাইফা মৃদু হেসে চলে যায়।নুসাইফা যাওয়ার পরই আরশি ছাদে গিয়ে জামা-কাপড় নিয়ে আসে।এর মাঝেই মাগরিবের আজান দিয়ে দেয়।নামাজ পড়ে মোনাজাতে বেশ কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করে।তারপর নামাজ শেষ করে কিছুক্ষণ দোয়া-যিকির পড়ে উঠতেই ডক্টর সাঈদ কবিরের কথা মনে পড়ে..
—”এটাই সুযোগ।নুসাইফা দুই তিন ঘন্টার আগে ভুলেও বাসায় আসবে না।আর ধানমন্ডি লেইকে গেলে তো প্রেমিক-প্রেমিকাদের আসতেই মন চায়না হাহ।আমি তার আগেই হসপিটাল থেকে ফিরে আসতে পারব”

আরশি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে একটা সিএঞ্জি নিয়ে বের হয়ে গেলো।হসপিটালের সামনে আসতেই সিএঞ্জির ভাড়া মিটিয়ে সাঈদ কবিরের চ্যাম্বারের সামনে চলে গেলো।দেখল ওয়েটিং রুমে কোনো পেশেন্ট নেই।আল্লাহর দরবারে শুক্রিয়া আদায় করল কারণ ওর সিরিয়াল দিতে মনেই ছিলো না।সে অনুযায়ী আজ রাত দশটা বাজার কথা ছিলো।কিন্তু পেশেন্ট না থাকায় এখনি যেতে পারছে।চ্যাম্বারের ভিতর গিয়ে ডক্টরকে সালাম দিয়ে সামনের চেয়ারে বসল।ডক্টর সাঈদ কবিরও সালামের জবাব নিয়ে বলল…
—”জ্বি কিভাবে সাহায্য করতে পারি আপনার?”

আরশি আমতা আমতা করে বলল…
—”স্যার আই ওয়ান্ট টু নৌ এবাউট সিদ্রাত আজওয়াদ”

ডক্টর সাঈদ কবির সরু চোখে আরশির দিকে তাকালো।আরশি এতে বিব্রত বোধ করল।ডক্টর বলল…
—”কিন্তু আমি আমার কোনো পেশেন্ট সম্পর্কে পার্সোনালি কারও সাথে ডিসকাস করি না.. সরি মা”
আরশির কাছে ডক্টরের ব্যবহার খুবই ভালো লাগল।স্পেশালি যখন “মা” বলে সম্বোধন করল।আরশি করুণ চোখে তকিয়ে বলল…
—”ডক্টর আমার জানাটা খুব জরুরী।আমি উনার খুবই কাছের একজন”

ডক্টর সাঈদ স্বাভাবিকভাবেই বলল
—”খুবই কাছের?দ্যাটস মিন তুমিই সেই হৃদহরণী আরশি যার জন্য আমার পেশেন্টটা তিন তিনবার সুইসাইড করার ট্রাই করেছে”

আরশি থমকে গেলো ডক্টরের কথা শুনে।ওর হৃদয় ক্রমাগত ধুকপুক করছে।এটা কি শুনল ও!সিদ্রাতের মতো শক্ত একটা মানুষ কি করে এমন কাজ করতে পারে?আরশি উদ্বিগ্ন হয়ে ধরা গলায় বলল…

—”ডক্টর আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।উনার মতো স্ট্রং একজন মানুষ এমন কাজ করতেই পারে না”
—”রিলাক্স মা..এটা রাইট তার মতো একজন স্ট্রং মানুষ এমন কাজ করতে পারে না।কিন্তু একজন মানুষ যখন মানুসিকভাবে একদম সিক হয়ে যায় তখন এমন কাজ করা অস্বাভাবিক নয়।বরং এমন কাজ না করাটাই অস্বাভাবিক।ওর ট্রিটমেন্ট করছি আমি গত আড়াই বছর ধরে।কিন্তু তার আগে ছয় মাস ও পুরোপুরি সিক ছিলো মেন্টালি।যখন ও ফার্স্ট টাইম সুইসাইড করার ট্রাই করে তখনই ওকে আমার কাছে নিয়ে আসা হয়।এরপর আমার আন্ডারে থাকা অবস্থায়ই ট্রিটমেন্টের প্রথম আড়াই মাসের মধ্যেই আরও দুইবার ট্রাই করে একই কাজ করার।তুমি চলে যাওয়ার পরপরই তোমার শোকে ও ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলো।ওর মনের ভিতর একটা ভয় ঢুকে গিয়েছিলো যা ওকে ভিতর থেকে শেষ করে দিচ্ছিলো।সাথে ওর ভিতর একটা শূন্যতাও কাজ করত।আর ও মূলত এই ভয় আর শূন্যতা থেকে বাঁচার জন্য,মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেকটা উন্মাদ হয়েই এধরণের ক্রাইম করতে চাইত।ওকে যদি আমার কাছে আর মাত্র দুই মাস লেইট করে আনা হতো তাহলে ওকে মেন্টাল এসাইলামে পাঠানোর প্রয়োজন হতো।ওর প্রবলেমটাও ছিলো বেশ সিভিয়াস..হঠাৎ হঠাৎ চিৎকার করে কাঁদত,নিজে নিজে কথা বলত।বাট আলহামদুলিল্লাহ ট্রিটমেন্ট শুরু হওয়ার পাঁচ মাসের মধ্যেই ওর অবস্থা অনেকটা ডেভেলপ হয়।তার আরও পনেরো দিন পর অর্থাৎ তুমি চলে যাওয়ার সাড়ে এগারো মাসের মাথায় ও ৯৮℅ ডেভেলপ করে যেটা অবশ্যই মিরাকেল ছিলো।আর সাইকোজির ভাষায় এধরণের মিরাকেল তখনই সম্ভব যখন পেশেন্ট সেই জিনিসটা পেয়ে যায় যেটার শূন্যতায় সে মানুসিক রোগী হয়ে গিয়েছিলো।”

ডক্টর সাঈদ কবিরের কথাগুলো শুনে আরশি অনর্গল কাঁদছে।মানুষটাকে যে সে আজও আগের মতোই ভালোবাসে।এখনো যে আগের মতোই পাগলামি করতে মন চায়।এই ভালোবাসা একবিন্দুও কমেনি।এতো ভালোবাসার মানুষটার এমন করুণ ইতিহাস কিভাবে সহ্য করা সম্ভব?কান্নার সাথে আরশি ডক্টরের লাস্টের কথাটাও বিশেষভাবে খেয়াল করে।কান্নামিশ্রিত কন্ঠেই বলে…
—”ডক্টর আপনার শেষের কথার মানে তো এটাই দাঁড়ায় যে উনি আমি চলে যাওয়ার সাড়ে এগারো মাসের মাথায়ই আমাকে খুঁজে পেয়েছিলো।কিন্তু আসলে তো এমন কিছু হয়নি।সে তো আমার কাছে যায়নি।আমি এই তিন বছরে গতকাল ছাড়া আর কখনো তার দেখা পাইনি”

ডক্টর সাঈদ কবির মুচকি হেসে বলল…
—”বাসায় যাও মা।অনেক রাত হয়েছে।মোরওভার সিদ্রাত এখন পুরোপুরি সুস্থ এটাই বড় কথা।”

আরশি আর কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস পেলো না।বুঝতে পারল যে ডক্টর ওকে সবকিছু বলতে চাচ্ছে না।আরশি চিন্তা করতে করতেই ডক্টরকে আবারও সালাম দিয়ে চলে গেলো।সারা রাস্তা মেয়েটা সিদ্রাতের কথা ভেবে কাঁদতে কাঁদতে এলো।ইচ্ছে করছে দৌড়ে মানুষটার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে…

আরশি বাসায় এসে রুমে ঢুকতেই দেখতে পেলো নুসাইফা কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলছে
—”আরে ভাইয়া চিন্তা করো না তুমি।আমি আছি তো।কিছু হবে না।আমার দশটা না পাঁচটা না একটা ভাবী মাত্র”
“——–
—” হুম ভাইয়া।তুমি এতো টেনশন নিয়ো না।নিজের শরীরের কেয়ার করো।টেনশন করে যদি তুমি পাগলই হয়ে যাও তাহলে তোমাকে আর কেউই বিয়ে করবে না..হাহা।”
“———
—” না আমি তো বাসায় এসে পাইনি আরশিকে।হয়ত কোথাও গিয়েছে।চলে আসবে।আর বললাম তো বি কুল।তুমি যেহেতু ওর দায়িত্ব আমায় দিয়েছ আমি পুরোপুরিভাবে তা পাল,,,,”

নুসাইফা কথা শেষ করার আগেই আরশি ছো মেরে ফোনটা নিয়ে নিজের কানে নিলো।নুসাইফা ভূত দেখার মতো চমকালো।আরশি ধরা গলায় বলল…
—”হ্যালো,,,স্যার,,,”

ওপাশ থেকে কিছুক্ষণ নিশ্বাসের শব্দ এলো তারপর ফোনটা কেটে গেলো।আরশি মোবাইলটা বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠল।নুসাইফা এখনো আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছে।মূহুর্তেই কি ঘটে গেলো তা যেনো বুঝতেই পারছে না নুসাইফা।ও ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে আরশির কাঁধে হাত রাখল।আরশি নুসাইফার হাত দুটো বুকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে লাগল।কাঁদতে কাঁদতে বলল…
—”উনিই তোর মামাতো ভাই তাইনা?এটা উনাদেরই কোনো বাসা।কেন আমার কাছ থেকে সব লুকালি?কেন বললি না উনি এতো সিক?কেন আমায় বললি না উনি মরতে গিয়েছিলো?তুই ভাবতে পারছিস উনার কিছু হয়ে গেলো আমার কি হতো?আমি মরে যেতাম নুসু..আমি মরে যেতাম।আর যে অভিমান করে থাকা সম্ভব না তার উপর..আর সম্ভব না নুসু।আমি একটিবার উনাকে ছুঁতে চাই।উনাকে জড়িয়ে ধরে মন খুলে কাঁদতে চাই।আমি যে ক্লান্ত রাতে আঁধারে লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদে..”

নুসাইফা আরশিকে জড়িয়ে ধরে বলল…
—”আরশি সবকিছুতে বাচ্চামো মানায় না।যে তোকে এতো মানুষের সামনে অপমান করেছে,,সবসময় অবহেলা করেছে তুই কেন তার জন্য এভাবে কেঁদে মরছিস?সামনে তোর ভবিষ্যৎ পড়ে আছে আরশি..সেদিকেই ফোকাস কর বোন আমার”

আরশি এবার রেগে নুসাইফাকে ধাক্কা দিয়ে চিল্লিয়ে বলল…
—”তোর ভাইও তিন বছর আগে আমায় এভাবে ভবিষ্যৎ ভবিষ্যৎ করে অবহেলা করেছে আর এখন তুই শুরু করেছিস?চাইনা আমি এমন ফিউচার যা আমায় ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে দূরে রাখে।দরকার নেই আমার এমন ফিউচার।আমার সাথে তোরা অন্যায় করছিস।ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য সবসময় দূরে যেতে হবে কোথায় লিখা আছে আমায় বল?সে কি আমায় ভালোবেসে সাহায্য করতে পারত না সুন্দর একটা ফিউচার গিফট দিতে?সে কি পারত না আমায় ভালোবেসে সবসময় আমার কেয়ার করে সঠিকভাবে শাসন করতে?পারত কিন্তু তারপরও আমায় দূরে সরিয়ে দিলো..কি দোষ আমার?উনাকে ভালোবাসা?হ্যাঁ হ্যাঁ..উনাকে ভালোবাসাটাই আমার দোষ যার জন্য আজও আমায় সাফার করতে হচ্ছে”

নুসাইফা আরশিকে শান্ত করার জন্য বলল…
—”আরশি এতো হাইপার হোস না।তুই যা বলছিস সব ঠিক।কিন্তু তুই করেছিস বেঠিক কাজটা।ভাইয়া যে তোকে ভালোবেসে আগলে রাখার চেষ্টা করেনি তা না।বরং তুই-ই বেশি ডেস্পারেট হয়ে গিয়েছিলি।আমি তো জাস্ট শুনেছি এসব কিন্তু তুই তো করেছিস।তাই তোর ভালোই মনে আছে নিশ্চয়ই তুই কিভাবে পাগলামি করতি?ভাইয়া কিন্তু তোর প্রিটেস্ট খারাপ হওয়ার পরও তোকে মাফ করে দিয়েছিলো আর বলেছিলো তুই ঠিকমতো যদি পড়াশুনা করিস তাহলে উনিও তোকে ভালোবাসবে।এমনকি ভাইয়া প্রিটেস্টের আগ থেকে তুই চলে আসার আগ পর্যন্ত কিন্তু তোর বাসায় গিয়ে তোকে সব সাবজেক্ট নিজ দায়িত্বে পড়াতো আর সবসময় বুঝাতো ভালো করে পড়ার জন্য।কিন্তু তারপরও কি তুই ঠিক হয়েছিলি বল?হোসনি..তাছাড়া সেদিন তোকে সবার সামনে অপমান করার আরও কিছু কারণ ছিলো যা আমি জানি না।শুধু ভাইয়া এটুকু আমায় বলেছে ভাইয়া তোকে চলে যাওয়ার জন্য সেদিন অপমান করেনি।ইভেন ভাইয়া ভাবতেও পারেনি তুই এমন কাজ করবি।আর তোর ভালোবাসাকে যে অবহেলা করত সেটাও তোর দূরে চলে যাওয়ার জন্য না।রেদার তুই যেনো ওর সাথে জেদ ধরে ভালোভাবে পড়াশুনা করিস সেজন্য।কিন্তু তোর ভাবনা আমার ভাইয়ার ভাবনা থেকেও এক ধাপ এগিয়েছিলো।ভাইয়া কি আর জানত তার প্রেয়সী তাকে এমন চমক দিবে?এটুকু বয়সে এতোদূর চলে আসবে?হাহ..আর কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না আমার।যা ফ্রেশ হয়ে আয়”

নুসাইফা কথাগুলো বলে নিজের রুমে চলে গেলো।আরশি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে।ফ্যালফ্যাল নয়নে নুসাইফার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।ওর অজানায় যে এতকিছু ঘটে গেলো তা ও ঘুনাক্ষরেও টের পেলো না?বুঝতে পারল না সিদ্রাতের উদ্দেশ্য?না বুঝে নিজেও কষ্ট পেলো তিনটা বছর আর মানুষটাকেও এতো বেশি কষ্টই দিলো যে শেষ মেষ মানুষটা সুইসাইড করতে বাধ্য হলো।এসব ভেবেই আরশির কষ্টটা বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে।কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে।খুব আফসোস হচ্ছে জীবনের তিনটা বছর প্রিয়তমের কাছ থেকে দূরে থাকায়।কয়েকটা মূহুর্তেই মনে উথাল-পাতাল ঢেউ উঠে গিয়েছে।ছুটে যেতে ইচ্ছা করছে চেনা সেই মানুষটার হৃদয় পানে।কিন্তু আরশি তা না করে ছুটে গেলো নুসাইফার রুমে।এখনো যে অনেক কিছু জানার বাকি আছে।যার উত্তর নুসুটাই দিতে পারবে..
#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_38
#Writer_TanhaTonu

নুসাইফা কথাগুলো বলে নিজের রুমে চলে গেলো।আরশি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে।ফ্যালফ্যাল নয়নে নুসাইফার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।ওর অজানায় যে এতকিছু ঘটে গেলো তা ও ঘুনাক্ষরেও টের পেলো না?বুঝতে পারল না সিদ্রাতের উদ্দেশ্য?না বুঝে নিজেও কষ্ট পেলো তিনটা বছর আর মানুষটাকেও এতো বেশি কষ্টই দিলো যে শেষ মেষ মানুষটা সুইসাইড করতে বাধ্য হলো।এসব ভেবেই আরশির কষ্টটা বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে।কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে।খুব আফসোস হচ্ছে জীবনের তিনটা বছর প্রিয়তমের কাছ থেকে দূরে থাকায়।কয়েকটা মূহুর্তেই মনে উথাল-পাতাল ঢেউ উঠে গিয়েছে।ছুটে যেতে ইচ্ছা করছে চেনা সেই মানুষটার হৃদয় পানে।কিন্তু আরশি তা না করে ছুটে গেলো নুসাইফার রুমে।এখনো যে অনেক কিছু জানার বাকি আছে।যার উত্তর নুসুটাই দিতে পারবে..
________________________________________

আরশি নুসাইফার রুমে এসে দেখে ও রুমে নেই।ওয়াশরুমের দরজা ভিতর থেকে লাগানো দেখে বুঝল যে ভিতরেই আছে।নুসাইফার মোবাইলটা বেডে পড়ে আছে।আরশি মোবাইলের লক খুলে সিদ্রাতের নাম্বারে ডায়াল করতে গিয়েও থেমে গেলো।হাতগুলো কাঁপছে খুব।আর ডায়াল করেই বা কি হবে?সে কি আর কথা বলবে?এসব ভেবেই আরশি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।এতোদিন সিদ্রাতের প্রতি চাপা একটা অভিমান থাকলেও আজ আসল সত্যটা জেনে সেই অভিমানের জায়গাটা দখল করে নিয়েছে এক সমুদ্র চোখের পানি আর কষ্ট।ভালোবাসাটা তো সবসময়ই ছিলো।সেটা কখনোই কমে যায়নি।আরশির এসব ভাবনার মাঝেই নুসাইফা ওয়াশরুম থেকে বের হলো।আরশিকে বেডে বসে থাকতে দেখেও কোনো পাত্তা দিলো না।ডিরেক্টলি ড্রেসিং টেবিলের সামনে চলে গেলো।আরশি করুণ কন্ঠে ডেকে উঠল…
—”নুসু…”
নুসাইফা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দিলো…
—”আমি আর কিছু এখন বলতে পারব না আরশি।আমায় ফোর্স করিস না।লাভ হবে না।তোকে যা বলেছি সেগুলো বলার পার্মিশনও আমার ছিলো না।আই ডোন্ট নৌ ভাইয়া আমায় কি করবে”
আরশি ঠোঁট কামড়ে ধরে কাঁদতে লাগল।নিজেকে আজ বড্ড অসহায় লাগছে।সিদ্রাতের কাছে ছুটে যেতে মন চাচ্ছে।তবুও যেনো এক অদৃশ্য শিকলে বন্দি তার হাত পা।এ শিকলের চাবি কার কাছে জানা নেই আরশির।ও নুসাইফার কাছে গিয়ে নুসাইফাকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কাঁদতে লাগল….

—”আমার এতো বেশি কষ্ট হচ্ছে কেন নুসু?কেন এতো পাগল পাগল লাগছে?এই তিনটা বছরও তো অনেক কষ্ট হয়েছিলো।নির্ঘুম কত রাত পাড় করেছি তার হিসেব নেই।কিন্তু এমন তো লাগেনি কখনো..এমন অস্থির কেন লাগছে নুসু?আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে..অনেক বেশি..আমার কাছে উনাকে এনে দে না নুসু।প্লিজ উনাকে এনে দে।উনার বুকেই যে আমার শান্তি”

আরশি কাঁদতে কাঁদতে নুসাইফাকে ছেড়ে ফ্লোরে বসে পড়ল।আরশির কান্না দেখে নুসাইফার চোখের কোণেও পানি জমেছে।আরশির পাশে ও-ও বসে আরশির কাঁধে হাত রাখল।তারপর বেশ সময় নিয়ে বুঝালো আরশিকে।আরশি কি বুঝল কে জানে..উঠে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।নুসাইফা দীর্ঘশ্বাস ফেলল…

————–
—”সিদ্রাত এবার একটু সিরিয়াস হও বাবা।তুমি অলরেডি ত্রিশে পা ফেলেছো।এখনো একা জীবন কাটালে হবে?একজন জীবন সঙ্গি তো প্রয়োজন আছে”

সিদ্রাত লিভিং রুমে সোফায় বসে টিভিতে নিউজ দেখছিলো।আরশির আব্বুর কথায় ওর যেনো কোনো ভাবাবেগই হলো না।সিদ্রাতের আব্বু-আম্মু দীর্ঘশ্বাস ফেলল।সিদ্রাতের আম্মু বলল..
—”ভাইজান কোনো লাভ নেই ওকে বুঝিয়ে।যে ইচ্ছে করে বুঝতে চায়না তাকে আপনি কি বুঝাবেন?”

আরশির আম্মু দাঁতে দাঁত চেপে বলল…
—”সিদ্রাত আমরা তোর গুরুজন।আমাদেরকে তুই এভাবে ইগনোর করতে পারিস না”

সিদ্রাত এবার আরশির আম্মুর দিকে তাকালো।স্বাভাবিক ভাবেই বলল…
—”তো এখন আমাকে কি করতে বলতে চাচ্ছো তোমরা?”
সিদ্রাতের আব্বু রেগে বলল..
—”কেন সেটা কি তুমি বুঝতে পারছ না?বিয়ের বয়স পার হওয়ার পর তুমি বিয়ের পিড়িতে বসবে?”
সিদ্রাত নির্লিপ্তভাবে বলল…
—”আমি আরশি ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করার কথা ভাবতেও পারিনা”

আরশির আব্বুও শান্ত কন্ঠেই বলল…
—”আমরা তো অন্য কাউকে বিয়ে করতে বলছি না।আরশিকে ফিরিয়ে আনলেই তো হয়।ওর সাথে তোমার আন্টির প্রায়ই ফোনে কথা হয় যদিও ও আমাদেরকে ঠিকানা বলে না কোথায় আছে।হোয়াটেভার..তুমি প্রিপেরাশন নাও।আমরা আরশিকে ফিরিয়ে আনব”
—”নো আঙ্কেল..ওর স্টাডিতে এর বড় ধরণের প্রভাব পড়বে।আরও কয়েকটা বছর যাক”

আরশির আম্মু এবার রেগেই গেলো।রেগেই বলল…
—”নিজে তো দেবদাশ হয়েছিসই আর এখন আর কি কি হতে চাচ্ছিস তুই?বুড়ো হয়ে বিয়ে করবি?তোর বিয়ে করা লাগবে না।আমার মেয়েকে আমি এক সপ্তাহের মধ্যে বাসায় আনব আর অন্য জায়গায় বিয়ে দিবো।তোর কষ্টে থাকতে মন চাইলে থাক”

আরশির আম্মু হনহন করে চলে গেলো।সিদ্রাতের আব্বু-আম্মু রাগ দেখিয়ে নিজেদের রুমে চলে গেলো।আরশির আব্বু সিদ্রাতের কাঁধে হাত রেখে বলল…

—”সিদ্রাত বাবা তুমি যে ব্যাপারটা নিয়ে ভয় পাচ্ছো আমার মনে হয়না তেমন কিছু হবে।আমি বলব না যে মেয়েটা খুব বড় বা ম্যাচিউরড হয়ে গিয়েছে।তিন বছর সময়টা এতোটাও দীর্ঘ নয় যে একটা বাচ্চা মেয়ে অনেক বড় হয়ে যাবে।কিন্তু তুমি তো জানো ও কতটা বুদ্ধিমতি আর পজিটিভ থিনকার।আমি মানছি তিন বছর আগে ও একটু বেশিই পাগলামি করে ফেলেছে।তবে তুমি কি অস্বীকার করতে পারবে সেই পাগলামীগুলো তোমাকে হারানোর ভয়ে করেনি?তোমাকে হারানোর ভয় প্লাস আবেগের তাড়নায়ই পড়াশুনা থেকে মেয়েটা ছিটকে পড়েছিলো আর পাগলামিতে মেতে উঠেছিলো।কিন্তু এখন তোমাদের সম্পর্কটাকে একটা বৈধতা দান করলে আমার মনে হয়না একই হিস্টোরি আবারও রিপিট হবে।হয়ত এতে ও আরও নিশ্চিত থাকবে যে তুমি কোথাও হারিয়ে যাচ্ছো না।এতে ও একটা টেনশন থেকে বের হতে পারবে যা এখনো ওর পড়াশুনায় প্রভাব ফেলছে।এটা সত্যি সংসারে লিপ্ত হয়ে গেলে পড়াশুনায় মন বসানো কঠিন।কিন্তু আমার বিশ্বাস তোমার শাসন আর ভালোবাসায় এই সমস্যাটা হবে না।সর্বোপরি এটাই বলতে চাই..বাবা-মা হয়ে আমরা তোমার বা আরশির কারোরই কষ্টগুলোই সহ্য করতে পারছি না।তোমার চোখের নিচের কালিগুলো আর ভেঙে আসা চেহারাটাই বলে দেয় তুমি ভালো নেই।আর মেয়েটা যে ভালো নেই সেটা তো নুসাইফার থেকেই শুনা যায়।এটুকু মেয়ে রাত জেগে কাঁদে!তুমিও যে রাতে ঘুমাও না তা আমি দেখতেই পারছি..প্লিজ সব সংকোচ, কনফিউশন বাদ দিয়ে বাবা-মার কথাগুলো শুনো।বড়রা কখনো খারাপ বুদ্ধি দেয়না বাবা।যাই হোক..তুমি তারপরও ভাবো এন্ড দেইন ডিসিশন নাও”

আরশির আব্বু কথাগুলো বলে সিদ্রাতের কাঁধে চাপড় মেরে চলে গেলো।সিদ্রাত ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল আরশির আব্বুর কথাগুলো…

কেটে গেলো আরও দুইদিন..
আরশি শরীরে কম্বল জড়িয়ে ঘুমাচ্ছিলো।নুসাইফা এসে কম্বলটা এক টান দিয়ে সরিয়ে ফেলল।আরশি চোখ মুখ কুচকে বলল…
—”হোয়াট’স ইউর প্রবলেম নুসু?কম্বল ব্যাক কর।আমি ঘুমাচ্ছি তো”

নুসাইফা কোমরে হাত দিয়ে বলল…
—”থাপ্পর চিনিস?উঠ তাড়াতাড়ি। দুদিন ধরে ভার্সিটি যাচ্ছিস না।বাসায়ও কিছু পড়ছিস না।তোর এসব কাজের জন্যই সিদ্রাত ভাইয়া তোকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়”

নুসাইফার কথায় আরশির ঘুম ভেঙে গেলো।মলিন মুখে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো।নুসাইফার খারাপ লাগল কথাটা এভাবে বলে ফেলায়।আরশি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো।ব্যাগটা গুছাতে গুছাতে বলল…
—”দুদিন ব্রেক নিলাম নিজেকে সামলানোর জন্য।উনি মানুষটাই এমন..আমি অলওয়েজ বেসামাল হয়ে যাই তার কথা ভেবে”

নুসাইফা আরশিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদি গলায় বলল…
—”রাগ করেছিস ইয়ার?সরি এভাবে বলার জন্য”

আরশি মুচকি হেসে বলল…
—”একটু তো কষ্ট পেয়েছি।তবে তুই চাইলে আমার কষ্টটা কমিয়ে দিতে পারিস।উনাকে কনভেন্স কর না যেনো আমাকে আর দূরে সরিয়ে না রাখে”

নুসাইফা চোখ-মুখ কুচকে ফেলল।তারপর স্বাভাবিক কন্ঠেই বলল…
—”তোর উনি তোকে দূরে সরিয়ে দেয়নি।তুই নিজেই দূরে সরে এসেছিস”

আরশি নুসাইফার কথায় সন্তুষ্ট হলো না।চোখ-মুখ কুচকে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।নুসাইফা মুচকি হেসে নিজেও বের হয়ে একটু সামনে আগাতেই দেখল আরশি একটা রিক্সায় উঠছে।নুসাইফাও দৌড়ে উঠে গেলো।আরশি রেগে বলল…
—”কুত্তিইই”

নুসাইফা দাঁত কেলালো।আরশি মুখ বাঁকালো…

দুটো ক্লাস শেষ হওয়ার পরই আরশির কেমন যেনো লাগতে লাগল।পেটের ভিতর যেনো গুলাচ্ছে।আরশি কাতর কন্ঠে পাশে বসে থাকা নুসাইফাকে বলল…
—”নুসুরে আমার শরীর কেমন যেনো লাগছে।বমি হবে মনে হচ্ছে”

নুসাইফা চিন্তিত হয়ে তাকালো আরশির দিকে…
—”লিভ নিবি ক্লাস থেকে?হসপিটাল যাবি?বেশি খারাপ লাগছে?”

আরশি না সূচক মাথা নাড়ালো আর বলল…
—”তুই ক্লাসের নোটসগুলো উঠা নোটপ্যাডে।আমি ওয়াশরুমে যাই।খুব জোরে বমি পাচ্ছে।মাথাটাও ঘুরছে”

নুসাইফা উদ্বিগ্ন হয়ে বলল…
—”চল আমিও যাই তোর সাথে।নোটস পরে উঠানো যাবে”

আরশি নুসাইফাকে না করে বলল…
—”আমি নিজেকে সামলাতে পারব।অন্যদের থেকে নোটস নিয়ে ভরসা পাবো না।আর লেকচারও অন্যরা ভালো করে বুঝাতে পারবে না।তুই ক্লাসে মনোযোগ দে”

কথাটা বলেই আরশি ছুটে ওয়াশরুমের সামনে গেলো আর বেসিনে গড় গড় করে বমি করে দিলো।এতো বমি করার পরও থামছে না।মনে হচ্ছে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।বমির সাথে কিছুটা রক্তও আসল।দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি না পেয়ে আরশির মাথাটা ঘুরে উঠল
চারপাশটা যেনো আবছা হতে আরও আবছা হতে লাগল আর এক সময় অন্ধকারে ঢেকে গেলো।কিন্তু আরশি ফিল করতে পারল কেউ ওকে বুকে জড়িয়ে ধরেছে।শক্ত করে নিজের মাঝে আগলে রেখে গালে হাত বুলাচ্ছে আর কিছু হয়ত বলছে যা আরশির কানে আসছে না।একসময় সম্পূর্ণ জ্ঞান হারালো মেয়েটা আর সাথে সাথে তাকে আগলে রাখা মানুষটাকে কোলে তুলে নিলো ওকে…

চলবে…
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here