প্রিয়োশীর ভালোবাসা পর্ব -০৩

#প্রিয়োশীর_ভালোবাসা
#পর্ব_৩
#নুসাইবা_রেহমান_আদর

রওনাকের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আয়ান। আয়ান কে রওনাকের কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সমুদ্র৷ রওনাক আয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷ সমুদ্র এই দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে৷ অই সময় সমুদ্রের খালাতো বোন সামায়রা ও সেখানে উপস্থিত হয়। সেও এইসব দেখে চিৎকার করে উঠে৷

– রওনাক আয়ান ভাইয়া কি হচ্ছে এখানে?

সামায়রার চিৎকারে রুম থেকে বেরিয়ে আসে লিয়া,আর বাড়ির সবাই ও দ্রুত ওখানে এসে পড়ে৷ প্রথমে সামায়রার চিৎকারে রওনাক হকচকিয়ে গেলেও পড়ে তার কোলে আয়ান কে দেখে সেও আশ্চর্য হয়ে যায়।

– আয়ান ভাইয়া আপনি এখানে?

আয়ান কে অবাক হয়ে প্রশ্ন করে রওনাক। এসব দেখার পরে বাড়ির সবাই এইভাবেই অবাক হয়েছে আর সাথে রওনাকের প্রশ্ন শুনে তো আরো।

– তোমার কোলে আয়ান ভাইয়া মাথা রেখে শুয়ে আছে আর তুমি তার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছিলে। আমি আর সমুদ্র ভাইয়া নিজের চোখে এসব দেখছি। আর এখন তুমি আবার জিজ্ঞেস করো সে এখানে কি করে? এখানে কি কোনো ফিল্মের শুটিং চলছে নাকি রওনাক?

সামায়রার প্রশ্নে অনেক অপমানবোধ করলো রওনাক। সে বুঝতে পারছে সামায়রা কোন ইংগিতে তাকে এই কথা বললো। লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো সে।

– রওনু তুমি কাজ টা একদম ঠিক করো নাই, আজকের পরে যা তে এইসব না দেখি।

সমুদ্রের মায়ের কথায় রওনাক আকাশ থেকে পরলো৷ সবাই যে তাকে ভুল বুঝছে। বড় আম্মুর দৃষ্টিতে সে আজ অন্যকিছু দেখতে পাচ্ছে।

– আমি জানিনা আম্মু বিশ্বাস করো আয়ান ভাইয়া এখানে কি করছে।
– মিথ্যে কেনো বলছিস তুই রনো, আমি রুমে যাচ্ছিলাম আর তুই আমাকে ডেকে বললি যে তোর কোলে মাথা দিয়ে শুতে তুই আমার চুলে বিলি কেটে দিবি।

পরিবারের সব সদস্যের সামনে এইরকম কথা শুনে লজ্জায় কারো দিকে তাকাতে পারছেনা রওনাক। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে রাগে। ঘৃনা হচ্ছে প্রচন্ড তার আয়ান নামক ব্যাক্তির উপর।

– তা আয়ান সে আপনাকে বললো আর আপনিও তাকে না বলতে পারলেন না? সবাই যে যার কাজে জান সামান্য বিষয় টা কে এতোবড় করে দেখার মতো কিছু হয় নাই। ছোট বোন বড় ভাইয়ের চুল বিলি কেটে দিতেই পারে।

লিয়ার কথায় সবাই চলে গেলো, রওনাক কে ওর মা রওনাকের রুমে নিয়ে গেলো। সেখানে দাঁড়ানো আছে সামায়রা সমুদ্র আয়ান এবং লিয়া।

– তোমার হাসবেন্ডের এক মেয়ের সাথে দেখেও তুমি এতো স্বাভাবিক ভাবে আছো কিভাবে ভাবি সব জেনেও? দেখে রেখে জামাই কে রনের মতো মেয়ের থেকে।

– ওয়েট আ মিনিট রনের মতো মেয়ে মানে? তোমার কথার মানে বুঝলাম না।শুনো সামায়রা যে বাড়িতে দাঁড়িয়ে আছো সে টা ও রওনাকের বাড়িতে। রওনাক কে আমি অনেক আগে থেকে চিনি সে কেমন। তুমি এইটুকু কথা কে এতো বাড়াচ্ছো কেন আজব? নিজের চরকায় তেল অন্যের বেপারব নাক না গলিয়ে।

– তুমি আমার বোনের সাথে কিভাবে কথা বলছো লিয়া?

– সামায়রা যেমন তোর খালাতো বোন রওনাক ও কিন্তু তোর চাচাতো বোন ভুলে যাস না আয়ান। একজন কে সম্মান দিবি অন্যজন কে ছোট করবি এটা তো হয় না। আমি বাড়িতে ছিলাম না কি হয়েছে না হয়েছে আমি কিছুই জানিনা তাই কিছু বলতে পারলাম না। তবে প্রিয়োশীকেও আমি ভালোভাবে চিনি সে তোকে তার কোলে দেখে ততোটাই অবাক হয়েছে যতোটা আমরা হয়েছি। আজ কিছু বললাম না এরপর এমন কিছু আমার সামনে হলে ভালো হবেনা আয়ান। আর সাময়রা সামান্য বিষয় কে এতো বাড়িয়ে মানুষের সামনে উপস্থাপন করেছিস এরজন্য তোকে কিছু বলবো না এমন নয় আমি মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না। বেড়াতে এসেছিয়া ভদ্র মানুষ হয়ে থাক। লিয়া আয়ান কে নিয়ে রুমে যাও তুমি।

সমুদ্রে অপমানে আয়ান আর সামায়রা মাথা নিচু করে রাগে ফুসতে ফুসতে চলে গেলো সেখান থেকে । লিয়া মুচকি হেসে সমুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলে।

– ভাইয়া সবসময় আমরা চোখের সামনে যা দেখি তা সত্যি নাও হতে পারে। আমি অবাক হই না একটুও কারন সব আমি নিজের চোখেই দেখেছি কিন্ত আমি কাউকে বলি নাই কারণ আপনার আম্মুর ব্যাবহারে। মানুষ বলে না যার যার তার তার ই। এই কথাটির ব্যাখ্যা আমি আজ পেলাম।

লিয়াও চলে গেলো রুমে,লিয়ার এক রহস্যের মধ্যে সমুদ্র কে রেখে গেলো। সমুদ্র প্রচুর টায়ার্ড থাকায় নিজের রুমে চলে গেলেও বাড়ির মানুষের ব্যাবহার আর কথাবার্তায় তার সন্দেহ হচ্ছে। এখানে এমন কিছু হয়েছে তা সে জানেনা। তার প্রিয়োশী কেন সু*ই*সা*ই*ড করার চেষ্টা করেছিলো এই ব্যাপার টাও তাও এখনো জানেনা।

– আম্মু বিশ্বাস করো আয়ান ভাইয়া ওখানে অই অবস্থায় কিভাবে ছিলো আমি জানিনা।

রওনাকের কান্না করতেও কষ্ট হচ্ছে। মেয়ের অবস্থা দেখে মেয়েকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলেন আলিয়া সিকদার।

– আমি জানি তো আমার মেয়ে এইরকম না। কি হয়েছে আমি জানতেও চাইবো না মা কারন আমি তোকে বিশ্বাস করি।

মায়ের কথায় রওনাক নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে৷ আর কেউ বিশ্বাস করুক বা না করুক তার মা তো তাকে বিশ্বাস করে৷।

– আয়ান কে ওর কাজের শাস্তি আমরা দিবো, আমাদের ভুল বুঝিস না আজ এতোবছর পরে সমুদ্র এসেছে তাই আমরা সিনক্রিয়েট করতে চাই নাই মা। সে তো কিছুই জানেনা বাড়ির সম্পর্কে৷

– মা আমার আর এসব ভালো লাগেনা, আমি এখাবে থাকবো না আর। তুমি আব্বুকে বলে এই বাড়ি থেকে অন্য কোথাও সিফট হওয়ার চেষ্টা করো প্লিজ।

– আমি আর তোর বাবাও এটা ভেবেছি আজ রাতেই তোর বড় আব্বুর সাথে আমরা কথা বলবো। তুই বিশ্রাম নে আমি একটু আসছি৷

মিসেস আলিয়া ও অবাক তার বড় জায়ের কাজে। কি সুন্দর ব্যাবহার আজ তার দেখলো। কষ্ট পেয়েছে তার মেয়ে অথচ এই নিয়ে মিসেস আফিয়ার কোনো মাথাব্যাথা নাই। সে কি সুন্দর তার ছেলেদের নিয়ে ব্যাস্ত৷ মিসেস আলিয়া চলে যেতেই রওনাক কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা ভাবতে লাগলো৷ সে তো রাফিনের চুল বিলি কেটে দিচ্ছিলো সেখানে আয়ান কিভাবে আসলো?

—–কিছুক্ষন আগে——-

ডাইনিং টেবিলে রওনাক কে নিয়ে মজা করায় মন খারাপ করে বসে আছে সে। শরীরের থেকে মনের অসুখ রওনাকের। দোতালায় এক সাইডে রাখা আছে অনেক বড় এক দোলনা। দোলনা টা রওনাকের জন্য বানানো হয়েছে। দোলনায় বসে আপন মনে ভেবে চলছে তার সাথে হওয়া অন্যায় গুলো। অথচ তার বাড়ির লোক কি সুন্দর স্বাভাবিক আচরণ করছে আয়ান আর লিয়ার সাথে৷ সে কিছুতেই এই বাসায় থাকবে না। তখন রাফিন রওনাকের কাছে আসে।

– বনু আমার মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে তুই একটু আমার চুল গুলো টেনে দে তো৷

– আচ্ছা ভাইয়া তুমি এখানে শুয়ে থাকো আমি দিচ্ছি।

– তোর কি খুব মন খারাপ বনু? মন খারাপ করিস না অই আয়ান কে আমি ছাড়বো না।

রওনাক তো নিজের ভাবনায় ই হারিয়ে আছে, তার কানে রাফিনের বলা কথা যাচ্ছে না। সে এতোটাই ভাবনায় হারিয়ে ছিলো যে রাফিন উঠে সেখান থেকে চলে গেলো বাড়ির বাহিরে স্ব টের পেলো না। আয়ান নিজের রুমে যাচ্ছিলো তখন সমুদ্র কে আসতে দেখে সেও সুযোগ বুঝে রাফিনের যায়গা নিয়ে নেয়।

—–বর্তমানে—–

– কি চান আপনি আমার থেকে আয়ান কেনো এমন করছেন। আমাকে এতোটা ছোট করছেন সবার সামনে। আমার কি দোষ আয়ান আমাকে বলবেন? আর পারছি না আমি এসব নি তে।

রওনাক এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো। মিসেস আলিয়া রান্নাঘরে গেলো মেয়ের দুপুরের খাবার বানাতে। রান্নাঘরে গিয়ে আফিয়া কে দেখেও না দেখার মতো করে নিজের কাজ করতে লাগলো সে৷ আফিয়ার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তার। নিজের বড় বোনের মতো ভাবতে সে আফিয়া কে আর আজ তার ব্যাবহার মানতে কষ্ট হচ্ছে আলিয়ার।

– আলিয়া মেয়েক্ব বুঝাও তুমি তোমার। যা হবার তা হয়ে গেছে এখন আয়ানের স্ত্রী এখানে আছে। আয়ান থেকে দূরে থাকতে বলো তুমি এসব শোভা পায় না এসব। আমি ওর ইমোশন বুঝি বাট আয়ানে তো বিবাহিত এখন।

মিসেস আফিয়ার কথায় আলিয়া হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সে ভাবতেও পারছে না মিসেয়া আফিয়া ওসব কিভাবে ভাবছে।

– কোন মুখে আপনি এসব কথা বলছেন ভাবি? আপনাদের মধ্যে মিনিমাম লজ্জা কাজ করছে না। আপনার ছেলে এতোবড় অন্যায় আমার মেয়ের সাথে করার পরেও আপনি ছেলের সাপোর্টে এমন নোংরা ভাবনা আমার মেয়ের সম্পর্কে ভাবেন?

– ভাবাভাবির কি আছে আজ আমি তুমি সবাই সবার চোখের সামনে দেখলাম কি ঘটেছে। রওনাকের বয়স কম আবেগ কাজ করে হয়তো করে ফেলছে তখন।

আলিয়া সিকদার কি আর বলবে এই কথায় সে আর কথা না বাড়িয়ে নিজের মতো রান্না করছে। আফিয়া সিকদার ও খাবার বেরে নিয়ে যেতে লাগলো সামায়রার জন্য। সামায়রার রুমে গিয়ে খাবার রেখে দিলো সে।

– জানো খালামনি তোমার ছোট ছেলের বউ আমাকে অনেক অপমান করেছে। আমি যা দেখেছি তাই তো বলেছি বলো।
– বাদ দে সামায়রা তোকে যেই কাজের জন্য এখানে এনেছি সেই কাজে মন দে।

– আমি জানিনা অই ক্যারেক্টরলেস মেয়ের মাঝে কি এমন দেখলো আংকেল আর সমুদ্র ভাই?

..চলবে..?

শব্দ সংখ্যাঃ১২৭২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here