প্রিয়োশীর ভালোবাসা পর্ব -০৫

#প্রিয়োশীর_ভালোবাসা
#পর্বঃ৫
#নুসাইবা_রেহমান_আদর

রওনাক ভেবেছিলো তাকে নিয়ে হয়তো কোনো পাঁচ তারকা রেষ্টুরেন্টে যাওয়া হচ্ছে। রওনাকের সব চিন্তাভাবনা ভুল প্রমান করে দিয়ে সমুদ্র তা কে নিয়ে গেলো এক লোকাল চায়ের দোকানে। শহর থেকে দূরে অনেকটাই গ্রামের দিকে হওয়ায় ভির খুব কম। ইতিমধ্যেই রাফিন ও সেখানে বাইক নিয়ে উপস্থিত হয়। চায়ের দোকানের সামনে থাকা বেঞ্চটি তে বসলো তারা।

– মামা দুধ ছাড়া চিনি কম দিয়ে একটা লাল চা দিবেন। আর দুধ চা বেশি লিকারের ২ টা।

– ঠিকাছে মামা আর কিছু লাগবে?

– একটা ড্রিংকো দিয়ে জান মামা,রাফিন তুই কিছু নিবি?

– না ব্রো আর কিছু না।

রওনাক তাকিয়ে আছে তাদের দিকে,তাকে তো কিছু নিতে সাধলো না। নিজের জন্য ড্রিংকো আর রাফিন কেও জিজ্ঞেস করলো একা তাকে বাদে ব্যাপার টা খুব গায়ে লাগলো তার। রাগে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকলো। ড্রিংকো টা নিয়ে সমুদ্র রওনাকের দিকে দিয়ে বললো।

– এই নে প্রিয়োশী এটা হাতে রাখ তোর কাজে দিবে৷ আর রাফিন ওরে রওনাক বইলা ডাক দেস কেন ভাই? ওর নাম রাখলাম প্রিয়োশী সব কাগজ পত্র তেও তাই।

– আসকে ব্রো রওনাক না তো আয়ান দিয়েছিলো আর আয়ানের জিদের কাছে হার মেনে বাড়িতে সবাই প্রিয়ো কে রওনাক ডাকে। তবে আব্বু আমি বাদে।

– আয়ান,আয়ান, আর আয়ান তাই না? ওর সব কথা কেনো শুনা লাগবে?

কেউই কোনো আওয়াজ করছে না সমুদ্র রেগে গেছে। প্রিয়োশী এখন নিজের মতো ড্রিংকো খাচ্ছিলো। সমুদ্র এবার প্রিয়োশীর দিকে তাকিয়ে বললো।

– তুই আমাকে বল যে তুই সু’ই’সা*ই’ডে করার চেষ্টার নাটক কেনো করলি? ইভেন রাফিন তুই কেনো সাপোর্ট দিলি?

– আব আসলে আমি আসলে আব আমি আমি।

– এইসব তোতলানো আর আব আমি বাদ দিয়ে আসোল কথায় আসো জলদি।

সমুদ্রের কথায় প্রিয়োশী আর রাফিন দুইজন একে অপরের চেহাদা দেখেতে লাগলো। কি উত্তর দিবে সে সবাইকে।

– আসলে ভাইয়া হয়েছে টা কি আমি তোমাকে বলি।

গত বছর আমার জন্ম দিনে লিয়া আমাদের বাসায় প্রথম আসে। লিয়া আর রাফিন ভাইয়ার রিলেশনে ছিলো। তারা একে অপরকে খুব ভালোবাসতো।

– হোয়্যাট লিয়া রাফিন কে ভালোবাসলে আয়ান কে কেন বিয়ে করলো?
– আমার কথার মধ্যে বাম হাত কেনো দেও সব কথা তো শুনবে না ক্লিয়ার করে আজব।

প্রিয়োশীর রাগি কন্ঠে দমে গেলো সমুদ্র৷তবুও নিজের ইমেজ ঠিক রেখে বললো।

– এরপর বলত্ব থাক।

– জন্মদিনের দিন থেকে আয়ান লিয়ার পিছে হাত ধুয়ে লেগে যায়। লিয়ার প্রতি আয়ানের এক প্রকার ভালোলাগা কাজ করে। যখন সে জানতে পারে লিয়া রাফিন ভাইয়া কে ভালোবাসে তখন সে ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আমি জানিনা কেনো আয়ান ভাইয়া আমাকে তোমাকে আর রাফিন ভাইয়া কে একদম সহ্য করতে পারে না। তখন ও আমি এসব জানতাম না। ১০ মাস আগে একদিন হঠাৎ লিয়া গায়েব হয়ে যায় কেনো হয়ে যায় আমরা জানিনা। শুধু লিয়া না ওর পুরো পরিবার। ওর পরবার বলতেনোর ভাই ছোট আর ওর মা। আমি রাফিন ভাইয়া অনেক খোঁজ খবর নেই তবুও পাই না। এরপর আয়ান ভাইয়া ও চেঞ্জড হতে শুরু করে আমার পিছে ঘুরত্ব থাকতো। আমাকে ফলো করা বিরক্ত করা তার প্রধান কাজ হয়ে গেলো। একসময় সে আমাকে তার মনের কথা জানায় আর আমার তার প্রতি একটু সফট কর্নার কাজ করছিলো। একদিন আমি লিয়ার ভাই লাবিব আর আয়ানের এক পিকচার পাই। ফোনের ডায়েলপেড খুঁজে লিয়ার মায়ের নাম্বার নিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করি। ওনার সাথে দেখা করার পর যা জানলাম তা শুনে আমি অনেক অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। লিয়ার মা বলেছিলো লিয়ার সাথে আয়ানের বিয়ে হয়ে গিয়েছে লিয়া ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা৷ কিভাবে কি হয়েছে তখন জানলাম,আয়ান লিয়ার মা আর ভাই কে কিডন্যাপ করে বাধ্য ক্রে বিয়ে করেন। এরপর ওদের অন্য যায়গায় সিফট করে সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করায়। আমি আন্টিকে দিয়ে প্রমিজ করাই যে এই কথা যেনো সে লিয়া আয়ান কাউকেই না জানায়।

– এতো কিছু হয়ে গেলো লিয়া কেনো তোকে বা রাফিন কে জানায় নাই?

– এটা আমিও জানি না ব্রো সে কেনো আমাকে বা বোন কে এসব জানায় নাই।

– তাহলে আয়ান তোকে কেনো বিয়ের আসরে নিয়ে গেলো আর এতো নাটক করলো?

– সে কথা আমিও জানিনা এটার জানার চেষ্টা করেছি অনেক৷ অইদিন আমি এসব কথা রাফিজ ভাইয়া ছাড়া কাউকে জানাই নাই। এইদিকে আয়ান ভাইয়া আমাকে প্রপোজ করে আমি উত্তর না দেওয়ায় সে বাসায় জানায় আমাকে বিয়ে করবে। প্রথমে বড় আব্বু আর বড় আম্মু রাজি হয় নাই। আয়ান কিন্তু আপনি দেশ ছেড়্ব যাওয়ার পর থেকে বাড়িতে খাবার খায় না। এমন কি আংকেলের টাকায় ও চলে না। আজ ও কেউ এই খবর জানেনা যে সে কি কাজ করে এতো টাকা কোথায় পায়। কেউ জিজ্ঞেস করলেও বলে না। বড় আম্নুকে দিয়ে বড় আব্বুকে এই কথায় রাজি করায় নাহয় আয়ান ভাই মরে যাবে এই কথা বলে। একে তো আপনি বড় আব্বুর সাথে যোগাযোগ রাখতেন না তার ওপর আয়ান কে যা একটু দেখতো যদি ছেলেকে হারিয়ে ফেলতে হয় এই ভয়ে বড় আব্বু ও রাজি হয়। আমার বাবা- মা কে বড় আম্মু অনেক ইমোশোনাল ব্লাকমেইল করে রাজি করান। যখন আমি জানালাম এই বিয়ে আমি করবো না তখন বড় আব্বু আমাকে তার মাথা ছুইয়ে কথা আদায় করেন বাধ্য হয়ে আমি রাজি হই। আয়ান ভাই আমাকে কোন উদ্দেশ্যে বিয়ে করতে চাইছে আমি জানিনা ভাইয়া। তবে সিউর ছিলাম বিয়েটা হবে না আর তাই হলো বিয়ের দিন আয়ান ভাই লিয়াকে নিয়ে হাজির।

– সব ঠিক হলে তুই কেনো সুইসাইডের নাটক টা করলি?

– আমি বলছি ব্রো, তুমি তো এমনি এমনি আসবে না তাই আমি বনু কে এই আইডিয়া টা দেই যে এটা কর তাহলে ভাইয়া চলে আসবে।

– আমাকে দিয়ে তোরা কি করবি হ্যাঁ?

সমুদ্র একবুক আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে প্রিয়োশীর উত্তরের জন্য। তার মনের মধ্যে কি চলছে তা প্রকাশ করার বাহিরে।

– আমি তোমাকে আসতে বলেছি তার ও কারন আছে। আমাদের আয়ান ভাই সম্পর্কে জানতে হবে। ওনার মূল উদ্দেশ্য আমাদের খুঁজে বের করতে হবে৷ এই কাজ আমি বা রাফিন ভাই একা পারবো না তাই তোমাকে আনা।

কথা শেষ করে প্রিয়োশী সমুদ্রের দিকে মুচকি হেসে তাকালো। সমুদ্র হতাস দৃষ্টিত্ব তার প্রিয়োর দিকে তাকালো। রাফিন শব্দ করে হেসে দিলো।

– তোর এতো হাসি কেনো পাচ্ছে রে রাফিন?

– ভাই চা খাবা না চা তো পানি হয়ে গেছে।

– তুই যে একা একা চা খেলি আমাদের মনে করিয়ে দিবি না যে আমাদের টা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে৷

– কিছু করার ছিলোনক ব্রো তুমি কথা শুনছিলে তাই। আর বোনু তো এই চা কম শরবতই খাবে ওর অভ্যাস। চা কে ঠান্ডা করে শরবত বানিয়ে খায়।

– বান্দার কেয়া জানে আদরাগ কা ছোয়্যাদ? এইভাবে খেতে দারুন লাগে তোমরা বুঝবানা বুঝলা?

প্রিয়োশী সেই ঠান্ডা চা টাই খেয়ে নিলো। সমুদ্রের তা খাওয়া হলো না সে উঠে বিল পে করে দিলো সাথে৷ ২ টা চিপস নিয়ে নিলো। তা যাওয়া যাক এখন এইজন্য তোদের এখানে আনা।

– তা ভাইয়া এরপর কি করবো ঠিক করবানা?
– তোর আর কিছু করা লাগবে না তুই পড়াশুনায় মন দে, যা করার আমি করবো যা গাড়িতে উঠে বস।

প্রিয়োশী মুখ গোমড়া করে গাড়িতে উঠে বসে পড়লো চুপচাপ। এই লোক তাকে সবসময় ধমকাবে একটু ও ভালা না। সমুদ্র হাল্কা হেসে রাফিন কে নেক্সট এড্রেস দিলে জানাত রাফিনের কাজ আছে সে আসতে পারবেনা। সমুদ্র প্রিয়োকে নিয়ে যেনো একাই লাঞ্চ করে নেয়। রাফিন কে বিদায় দিয়ে সমুদ্র ও গাড়িতে উঠে বসে৷ প্রিয়োর দিকে চিপ্সের প্যাকেট দুটি দিয়ে বলে।

– এভাবে মুখ ফুলিয়ে না রেখে চিপ্স খা,একদম এই ফুলানো প্যাকেটের মতো লাগছে তোকে।

– আমি জানি তো আমি একটু গুলুমুলু দেখে তোমাদের সবার হিংসা হয় বুঝলা? করতে থাকো হিংসা আমিও আর ডায়েট করবো না।

সমুদ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে প্রিয়োশীর দিকে৷ এই মাইয়া ডায়েট করছে এটাও শুনা লাগলো?

চলবে.?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here