প্রিয় পরিণতি পর্ব ১৪

গল্প: প্রিয় পরিনতি!
পর্ব: ১৪!
লেখক: তানভীর তুহিন!

রাতুল তার এই আত্মসম্মানের আঘাতটা মেনে নিতে পারে নী। তাই আবিদ রুমে ঢোকার পরেই পুলিশকে ফোন দিয়ে বলে, ” আমার বোনের মাতাল প্রেমিক আমাদের বাসায় এসে বিশৃঙ্খল আচরন করছে। তাকে এসে নিয়ে যান! ”

এদিকে আবিদ মেঘকে জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই বেহুশ হয়ে যায়। আসলে ঘুমিয়ে গেছে না বেহুশ হয়ে গেছে বোঝা মুশকিল। মেঘ আবিদকে নিজের বিছানায় শুইয়ে পাশে বসে আবিদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো। সেই প্রাণোচ্ছল আবিদকে দেখে চেনাই যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে যেনো বহুদিন পাগলা গাড়তে ছিলো। মেঘ মাথায় হাত বুলাতে বুলাতেই আবিদের চুলগুলো খামচে ধরে কেদে ফেলে। সে সেদিন এভাবে আবিদকে না বললে হয়তো এতোসব কিছুই হতো না!!

রাতুল এতক্ষন পুলিশের সাথে কথা বলছিলো। কথা বলা শেষে মেঘের রুমের দড়জায় কষাঘাত করা শুরু করে। আর দরজায় হাত দিয়ে এতো জোরেই আঘাত করতে থাকে যে দড়জা কেপে ফেটে যাবার উপক্রম। রাতুল চিৎকার করে বলতে থাকে, ” মেঘ দড়জা খোল। আমি কিন্তু এবার দড়জাটাই ভেঙে ফেলবো। ওই অসভ্যটার সাহস হয় কীভাবে এত রাতে আমার বাসায় এসে আমায় ধাক্কা দিয়ে জোর করে সোজা আমার বোনের রুমে চলে যায়! এটাই কী ওর সভ্যতা আর ভদ্রতা?

ভাইয়ের চিৎকার আর দরজায় আঘাতের ফলে তৈরী হওয়া শব্দ সহ্য করতে পারে না মেঘ। আবিদের কপালে আলতো চুমু খেয়ে দড়জা খুলে বাইরে বেড়িয়ে আসে।আবিদকে বেড় হতে না দেখে রাতুল ভেতরে উকি মেরে দেখে আবিদ মেঘের বিছানায় বেহুশ হয়ে আছে। রাতুল রেগে তেড়ে মেঘের রুমে যেতে চায়। মেঘ রাতুলের হাত শক্ত করে টেনে ধরে বলে, ” ভাইয়া ওর হুশ নেই। এখন প্লিয ঝামেলা করিও না। ও আমার রুমেই থাক আমি বরং মায়ের রুমে চলে যাচ্ছি। সকাল হলেই ও চলে যাবে! ”
– ” হুশ নেই,তুই মায়ের ঘরে ঘুমাবি,ও সকাল হলে চলে যাবে! মানে এখানে কী কোনো সার্কাস হচ্ছে? is this a bloody joke? ”
– ” ভাইয়া চিৎকার করিও না। আশে-পাশের ফ্ল্যাটের মানুষ সব ঘুমাচ্ছে! ”
– ” চিৎকার করবো না মানে? ও কে? কে ও? ওর কী অধিকার আছে যে ও এখানে এসে বেহুশ হবে? এটা ওর বাড়ি? ”
– ” ভাইয়া ওর হুশ ছিলো না। তুমি নিজেই দেখেছো ও কী অবস্থাতে এসেছে! হুশ থাকলে কখনই এতো রাতে এখানে আসতো না! ”
– ” তোর এসব জ্ঞানের কথা আমায় শোনাতে আসিস না। এই তো সকালে বলছিলি যে ও ওইদিন ঝামেলা করে নাই প্রতিবাদ করেছে।আমার কাছে এখন সবটা পরিষ্কার। আজকের এই ঘটনার পড়ে আমিও দেখি তোদের বিয়ে কীভাবে হয়! ”
– ” দেখো ভাইয়া তুমি শান্ত হও। ও বাসায় এসেছে কেউই দেখে নী,জানেও না। তুমি চিল্লা-চিল্লি করেই জানাচ্ছো সবাইকে! ”
– ” আমি জানাচ্ছি? থাপ্পড় দিয়ে একদম গাল খুলে ফেলবো তোর। সকালে যখন বাসা থেকে বের হবে তখন সমাজ কী বলবে আমাদের পরিবারকে? কী বলবে তোকে? এসব ঘটনার পরে আমরা তোকে কোনো ভালো পরিবারে বিয়ে দিতে পারবো? ”
– ” দেখো ভাইয়া আমি তোমায় আগেও বলেছি আর এখনও বলছি। কথাটা তোমায়,মা,ভাবি সবাইকেই বলছি। আমি তোমাদের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করবো না। কারন তোমরা আমার কাছে সব কিছুর উর্ধে কিন্তু আমি বিয়ে করলে একমাত্র আবিদকেই করবো। নাহয় সারাজীবনে বিয়েই করবো না।আমার জীবনে যদি স্বামি হিসেবে কোনো পুরুষ আসে তাহলে সেটা একমাত্র আবিদ। আবিদ ছাড়া সে অধিকার কখনও কেউ পাবে না। কথাটা সবাই মাথায় ঢুকিয়ে নাও! ”

মেঘের এই কথা শুনে রাতুলের সহ্যের বাধ ভেঙে যায়। ” বিয়ে করবি না মানে? মস্কারি পেয়েছিস নাকি তুই? ” চিৎকার দিয়ে এসব বলেই মেঘকে মারার জন্য তেড়ে যায় রাতুল। রাতুলের বউ রাতুলকে চেপে ধরে, ” দেখো মেঘ যথেষ্ট বড় হয়েছে। এভাবে ঝগড়া করে নিজেদের সম্পর্ক নষ্ট করিও না প্লিয! ”
– ” স্বম্পর্কের কী বোঝে ও? ইম্যাচিউড এর মতো কথা বলে যাচ্ছে! ”
– ” স্বম্পর্কের সিদ্ধান্তে আসলেই কী কোনো ম্যাচিউরিটি কাজে আসে ভাইয়া? যেখানে ম্যাচিউরিটি দিয়ে স্বম্পর্ক বিচার করা হয় সেটা কী আসলেই সম্পর্কের কাতারে পড়ে?! ”

রাগে রাতুলের শরীর কাপছে। সে তার বউকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে মেঘকে উচিৎ শিক্ষা দেবে বলে। তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো। রাতুল মেঘের দিকে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে বললো, ” ঐ দেখ হয়তো সোসাইটির লোকজন এলো।তোর জন্য আমাদের এতোদিনের মান-সম্মান আজ বাজারে উঠলো! ”

মেঘের মা দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই একজন দারোগা আর ছয়জন হাবিলদার ঘরে ঢুকে এলো। বাইরের লোকজন দেখে রাতুলের বউ রাতুলকে ছেড়ে দিলো। রাতুল গিয়ে দারোগাকে বললো, ” অফিসার এসেছেন! ওই অসভ্যটা ওই রুমে বেহুশ হয়ে আছে। নিয়ে যান ওই অসামাজিকটাকে! ”
দারোগা মাথা নাড়িয়ে বললো, ” হ্যা আমরা দেখে নিচ্ছি ব্যাপারটা! ”

হঠাৎ পুলিশ দেখে মেঘে যেনো আক্কেল-গুড়ুম। ভাইয়ার এসব কথা শোনার পরে মেঘ দারোগা-র কাছে গেলো দৌড়িয়ে, ” স্যার দেখুন। তেমন কিছুনা আবিদ ড্রিংকস করেছিলো আর আমাদের মধ্যে ঝগড়ার কারনে এতোদিন কথা না হওয়ায় ও এখানে চলে এসেছে। ওর হুশ ছিলো না স্যার প্লিয থানায় নিয়ে যাবেন না ওকে! ”
– ” দেখুন ম্যাডাম অভিযোগ যখন করা হয়েছে দায়িত্ব আমাদের পালন করতেই হবে! ”
– ” স্যার প্লিয, প্লিয স্যার ওর কোনো দোষ নেই! ” এসব বলে মেঘ চিল্লাতে থাকে। রাতুল মেঘের হাত ধরে টেনে নিয়ে অন্য একটা রুমে বন্ধ করে দেয় মেঘকে। মেঘ কেদে চিৎকার করে বলতে থাকে, ” ভাইয়া তুমি এটা করতে পারো না। ভাইয়া আবিদেকে থানায় নিয়ে যেতো দিও না। ওর বাবার সাথে ওর স্বম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাবে ভাইয়া। প্লিয ভাইয়া তুমি পুলিশকে না করো! ” কিন্তু রাতুল কোনো কথাই কানে তোলে না।পুলিশ আবিদকে নিয়ে যাওয়ার সময় দারোগা রাতুলকে বলে, ” সকালে নয়টার দিকে একবার থানায় আসবেন। ওখানে এই ছেলের অভিভাবক ও ডাকা হবে যদি মিটিয়ে নিতে চান তাহলে মিমাংসা করে দিবো। আর নাহয় আপনি কেইস করতে চাইলে কেইসও করতে পারেন! ”
– ” কীসের মীমাংসা? আমি কেইস করবো ওর নামে! ”
– ” আগে সকালে থানায় আসুন তারপর দেখা যাবে! ”

বেহুশ আবিদকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। নিয়ে জেলে রাখা হয় আবিদকে।বেহুশ আবিদ জানতেই পারে না যে সে এখন থানায়!

সকাল প্রায় ৮ টা বাজে…….

আবিদ এখনও ঘুমাচ্ছে।মদের নেশা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারে নী সে। বেঘোরে ঘুমিয়েই যাচ্ছে।থানার এক হাবিলদার এর বদৌলতে দারগা জানতে পারে যে এটা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদ তালুকদার এর ছেলে আবিদ তালুকদার। দারগা ফোন দেয় রাশেদ তালুকদারকে!

এদিকে আবিদের বাড়ির কেউই জানে না যে আবিদ রাতে এসব কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছে। আবিদের বাবা জানে যে আবিদ বাসায় ঘুমাচ্ছে। দারগা ফোন দিয়ে, – ” আসসালামু আলাইকুম স্যার! ” থানার দারোগা-র নাম্বারটা সেইভ করা আবিদের বাবার ফোনে।
– ” ওয়ালাইকুম আসসালামু দারোগাবাবু, বলুন! ”
– ” স্যার আসলে একটা অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা আপনার ছেলে আবিদকে থানায় নিয়ে এসেছিলাম রাতে। আসলে আমি জানতাম না যে এটা আপনার ছেলে। এখন আপনি যদি একটু থানায় আসতেন আরকি! ”
– ” কীহ? আবিদ থানায়? কীসের অভিযোগে আপনি গ্রেফতার করেছেন ওকে? ”
– ” আসলে স্যার আবিদ গতকাল রাতে তার প্রেমিকার বাসায় মাতাল অবস্থায় গিয়ে বিশৃঙ্খলতা করে আর প্রেমিকার ভাই থানায় অভিযোগ করে। সেজন্যই রাতে থানায় আনা হয়েছে। স্যার আপনি আসুন না, আমি যে অভিযোগ করেছে তাকেও থানায় ডাকছি। থানায় কথা হবে স্যার, আপনি আসুন! ”
– ” আচ্ছা আমি আসছি! ”

রাশেদ তালুকদার আবিদের কাছ থেকে এটা কখনোই আশা করে নী। যে তার ছেলে এসব করে থানায় যাবে, আর তাকে এভাবে বেইজ্জত করবে। আবিদের বাবা এটা জানতো যে আবিদ প্রেম করে। কিন্তু কোন মেয়ের সাথে? বা মেয়ের ফ্যামিলি স্বমন্ধ্যে তা আবিদের বাবা জানে না। আবিদের বাবা কখনও জিজ্ঞেস করে নী প্রয়োজন মনে করলে আবিদই বলবে এ ব্যাপারে এই ভেবে। আবিদ ভেবেছিলো মেঘের ভাইয়ের সাথে কথা বলেই বাবাকে সবটা জানাবে। কিন্তু তা আর হলো কোথায়?

আবিদের বাবা বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো কিন্তু বাসায় কাউকেই বললো না যে আবিদ থানায়। যাবার সময় তামান্নার বাসা থেকে তামান্নাকে সাথে নিয়ে গেলো!!!

চলবে!
#thetanvirtuhin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here