প্রিয় প্রহর পর্ব ৭+৮+৯

#প্রিয়_প্রহর
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৭(বোনাস)
আরোহী ফ্রেশ হয়ে হাঁটু পর্যন্ত লং কুর্তি, প্লাজো ও ওড়না পড়ে বেরিয়ে দেখে শুভ্র পুরো রুমে চোখ বুলাচ্ছে। কি কারনে পুরো রুম স্ক্যানারের মতো স্ক্যান করছে বুঝে আসলো না আরোহীর। আরোহী ব্যালকনিতে তোয়ালে রেখে এসে শুভ্রকে এখনো কিছু খুঁজছে সেই অবস্থায় দেখে জিঙ্গাসা করে,
–আপনি কি কিছু খুঁজছেন?

শুভ্র আরোহীর দিকে তাকিয়ে ঘার নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝায়।
–কি খুঁজছেন?

শুভ্র এবারো মুখে কিছু না বলে ব্যলকনিতে যায় এরপর সামনে গোল দোলনাটা দেখে সেখানে বসে। আরোহী শুভ্রর পেছোন পেছোন ব্যালকনিতে যায়। আরোহী শুভ্রর কর্মকান্ড কিছু বুঝতে পারছে না। কিন্তু যখন দেখলো শুভ্রকে আয়েশ করে দোলনার মধ্যে বসতে তখন তার মাথায় ক্লিয়ার হলো যে শুভ্র এগজ্যাক্টলি কি খুঁজছিলো! আরোহী শুভ্রর দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে জিঙ্গাসা করে,

–আপনি কি এই দোলনাতে রাতে ঘুমানোর কথা ভাবছেন?

শুভ্র এবারো যখন ঘার নাড়িয়ে উত্তর দেয় তখন আরোহীর মাথা গরম হয়ে যায়। সে শুভ্রর সামনে দাঁড়িয়ে কোমরে দুহাত রেখে বলে,

–এই! এই! আল্লাহ আপনাকে মুখ দেয়নি? সেই কখন থেকে দেখছি মৌনব্রত ধারণ করে আছেন! নাকি আমার সাথে কথা বলবেন না তাই এরকম করছেন?

শুভ্র নিজের মাথা উুঁচিয়ে আরোহীর মুখ পানে তাকায়। একদম রৌদ্রময়ী রূপ! এখন মনে হচ্ছে আরোহী তার ফর্মে আছে। শুভ্র মুচকি হাসে। এরপর মাথা নিচু করে বলে,

–না। আমি তোমায় ইগনোর করছি না। উত্তর তো দিয়েছিলাম। মুখে না হোক ইশারায়।

আরোহী দমে যায়। সে চায় না শুভ্রর সাথে তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে এনে এখন কথা বলতে। তবে শুভ্র এই ঠান্ডার মধ্যে ব্যালকনিতে থাকবে এটা কোনো মতেই মানা যায় না। আরোহী এবার শুভ্রকে নরম সুরে বলে,

–এই ঠান্ডার মধ্যে আপনি বাহিরে থাকবেন! অক্টোবর মাস। রাতের দিকে ঠান্ডা পড়বে আর কিছুটা শিশির তো পড়বে। আপনার রুমের ব্যালকনিতে থাই গ্লাস লাগানো আছে অর্ধেকটা জায়গায় আর সেখানে ডিভান আছে। আর আমার রুমের ব্যালকনিতে কোন থাই গ্লাস লাগানো নেই। আর না আছে ডিভান। এই ছোট্ট দোলনায় আপনি ঘুমাতে পারবেন না।

শুভ্র প্রশ্ন করে,
–তাহলে কোথায় ঘুমাবো?

আরোহীর সরাসরি জবাব,
–কেনো বিছানায়। এত্তো বড় বিছানাটা কি আপনার চোখে পড়ছে না?

শুভ্র কিছুটা অবাক হয় আরোহীর কথায় এরপর জিজ্ঞাসু স্বরে বলে,
–তাহলে তুমি কোথায় ঘুমাবে?

আরোহী ঠোঁট উল্টে বলে,
–কেনো বিছানায়!

শুভ্র চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষণ আরোহীর দিকে তাকিয়ে থেকে পরে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলে,
–না। তা করার দরকার নেই। আমি এখানেই ঠিক আছি। তুমি রুমে বিছানায় ঘুমাও। আমি এখানে এডজাস্ট করে নিবো।

আরোহী তো মানবে না। সে শুভ্রকে রুমে নিয়েই যাবে। তাই নাছোড়বান্দার মতো বলে,
–এটা হবে না। আপনি রুমে যাবেন এবং বিছানায় ঘুমাবেন। কালকে রাতেও ছোট্ট ডিভানে ঘুমিয়েছিলেন। ওইটুকু ডিভানে কি আপনার মতো জিরাফের জায়গা হয় বলেন? আর আজকে তো দোলনায়!

শুভ্রকে জিরাফ বলায় শুভ্র চোখ ছোট ছোট করে তীক্ষ্ম নজরে তাকায় আরোহীর দিকে এরপর বলে,
–তুমি আমাকে জিরাফ বললে? আমি জিরাফ?

আরোহী দাঁত দিয়ে জিভ কাটে। তাও হার মানবে না এই মনোভাব নিয়ে বলে,

–তো কি! জিরাফই তো! আপনি দেখছেন আপনি আমার থেকে কতো লম্বা? পাঁচ ইঞ্চি লম্বা! তাহলে আপনি তো জিরাফই হলেন। আপনি বেশি লম্বা। আমার মাথা আপনার নাক পর্যন্ত হয়।

শুভ্র বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে,
–হাসবেন্ডরা লম্বাই হয় বউদের থেকে। বুঝেছো!

আরোহী বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,
–তো মিস্টার হাসবেন্ড! হাসবেন্ডরা লম্বা হয় এটা জানেন। তো হাসবেন্ড ও ওয়াইফ যে এক বিছানায় ঘুমা তা জানেন না?

শুভ্র থতমত খেয়ে যায় আরোহীর কথায়। সে তো ভুলেই গেছিলো তার সাথে কথা বলা মেয়েটা তর্কে এক্সপার্ট!
শুভ্র চুপ করে আছে। আরোহী শুভ্রকে চুপ করে থাকতে দেখে নরম স্বরে বলে,

–এক বিছানায় থাকলেই যে একে অপরকে ছুঁয়ে ফেলবো এমন কিছু না। আমরা নিজেদের মধ্যবর্তী দূরত্ব বজায় রেখেও এক বিছানায় ঘুমাতে পারি। তাছাড়া আমরা শরীয়ত মোতাবেক স্বামী-স্ত্রী এবং আইন অনুসারেও। আপনি আমার সাথে ঘুমালে আপনার গুনাহ হবে না আর না হবে জেল। ওয়েদার যদি গরমকালের হতো তাহলে রাতে ব্যালকনিতে দোলনায় থাকলেও কিছু বলতাম না কিন্তু ওয়েদারটা ঠান্ডা তার উপর আমাদের এখানে মশার উপদ্রব বেশি। আপনাদের বাসায় তো এতো গাছ গাছালি নেই আমাদের বাসার মতো। তাই ওখানে মশা কিছুটা কম।

আরোহী থামে। শুভ্রর ভাবগতি বুঝতে পারছে না এখনও। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে শুভ্র। আরোহী আবারো বলে,

–জানি আপনি আমায় স্ত্রী মানেন না। সত্য বলতে আমি আপনার জায়গায় হলে হয়তো আপনার সাথে ক্রমাগত রুড বিহেব করতাম। আপনার কষ্ট হয় আমি বুঝি তবে কারো সম্পর্কে সেচ্ছায় তৃতীয় ব্যক্তিকে কেউ পছন্দ করে না। আপনি সবটা জানার পরেও যখন ক্রমাগত তৃতীয় হতে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনি আপনার পথ রোধ করতে আমি আপনায় বিয়ে করেছি। আপনাকে আয়ু ভাই মানে। হ্যাঁ, আমি জানি আপনি তা মানেন না তবে যদি আয়ুর পূর্বের প্রতি ফিলিংস একতরফা হতো তবে আমি চেষ্টা করতাম যাতে আপনি আপনার ভালোবাসা পান। কিন্তু ওরা একে অপরকে কমিটেড। আপনার জন্য কষ্টকর তবে দেখবেন একসময় আপনিও পারবেন।
“জীবনে অন্যকাউকে জায়গা দেওয়া মানে এটা না যে, প্রথম জনের প্রতি কোনো ফিলিংস থাকবে না!”
আমি কখনোই বলবো না আপনি আয়ুকে ভুলে যান। আপনি আয়ুকে ভুলে গেলে হয়তো আমি বলতে বাধ্য হবো আপনার ভালোবাসাটা মোহ ছাড়া অন্য কিছু না।

আরোহী থামে এবার। কয়েক সেকেন্ড শুভ্রর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আরোহীর তাকিয়ে থাকার মধ্যেই শুভ্র সেখান থেকে উঠে রুমের দিকে যায়। শুভ্র আরোহীর কথা শেষ হবার পর রুমে যেয়ে বিছানায় শুয়ে পরে একপাশ হয়ে। তা দেখে আরোহীর ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। এরপর আরোহী নিজেও রুমে যেয়ে কোলবালিশটা দুজনের মাঝে বর্ডারের মতো করে দিয়ে অপর পাশে শুয়ে পরে রুমের লাইট অফ করে। আজ মশারি টাঙ্গানোর ইচ্ছে নেই তাই দুইটা কয়েল জ্বালিয়ে ব্যালকনির দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।

_________
আর এদিকে মেঘ ও নীড়, দুই ভাই আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে চর্চা করছে। মেঘ তো খুশিতে বেশি এক্সাইটেড। কারন আজকে সাদিয়া মেঘ ও সাবিলার মধ্যে বাগড়া দিতে আসেনি। যখনি মেঘ ও সাবিলা কথা বলতে যায় তখনি সাদিয়া এসে সাবিলাকে নিয়ে টানাটানি করে। টানাটানি বলতে, কথা মাঝে এসে ঢুকে পরে আর মেঘের সাথে টম এন্ড জেরির মতো লেগেই থাকে। তখন সাবিলাও সাদিয়ার সাথে যোগ দেয়।

নীড় ওদের ঝগড়া দেখে আর হাসে। যখন ঝগড়া বেশি মেঘ ও সাদিয়ার মাঝে মারামারির পর্যায়ে চলে যায় তখন
নীড় গিয়ে ওদের থামায়। আর সাবিলা তখন থামাবে কি সে নিজেই হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার মত অবস্থা।
আজকে মেঘের সামান্য চশমা নিয়ে দুষ্টামি করাতে, দুই জনের মনের রানী তাদের ভালোবাসার বহিঃ প্রকাশ করেছে। মেঘ যখন নীড়ের কাছ থেকে সাদিয়ার করা কাজ গুলো শুনে তখন মেঘ তো হাসতে হাসতে খাট থেকে পড়ে যেতে নিয়েও নীড় ধরাতে বেঁচে গেছে।
_______
সকাল ভোরে শুভ্রর ঘুম ভেঙে যায়। নিজের শরীরে কারো পা দেখতে পেয়ে সে পায়ের মালিককে দেখতে নিজের পাশে কোলবালিশের অপর প্রান্তে থাকা রমণীর দিকে নজর দেয়। পুরো এলোমেলোভাবে ঘুমিয়ে আছে আরোহী।
জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে ওর রুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে ভোরের শুভ্র রাঙ্গা আলো কিছুটা রুমে এসে রুমের অন্ধকারছন্ন ভাবটাকে কাটিয়ে তুলছে। ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বাজে এখন। ফজর নামাজের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
#প্রিয়_প্রহর
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৮
শুভ্র আরোহীর পা নিজের উপর থেকে সরিয়ে উঠে বসে। এরপর একপলক আরোহীর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ওয়াশরুম থেকে অজু করে বের হয় একবারে। বিছানার দিকে নজর যেতেই দেখে আরোহী পুরো বিছানা দখল করে ঘুমাচ্ছে। ফজরের ওয়াক্ত প্রায় শেষ তাই শুভ্র আরোহীকে নামাজের জন্য ডাকার কথা ভাবে। কিন্তু পরক্ষনেই ইতস্তত বোধ করে যে ডাক দিবে নাকি দিবে না। মনের দোলাচলে ফেঁসে গিয়ে শুভ্র ভাবে, নামাজ পড়তেই তো ডাক দিবে! অন্য কোনো কারণে তো না। তাই শুভ্র আরোহীকে ডাক দেয়।

আরোহী তো ঘুমে বিভোর। সকালের মিষ্টি রোদ ওর চোখে মুখে পরছে। এতে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে না কারন শীতল হাওয়ায় একটু মিষ্টি রোদ উষ্ণতা ছোঁয়ায়। রাতে ফ্যানের গতি কমিয়ে রেখেছিলো তাই এখন গুঁটিসুটি মেরে নেই। কাঁথা গায়ে দিয়েই পুরো বিছানা ফাঁকা পেয়ে এলোমেলো হয়ে ঘুমাচ্ছে।

–আরোহী! আরোহী!
শুভ্র জড়তা কাটিয়ে আরোহীকে দুই বার ডাক দিলো কিন্তু আরোহী নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে যায়। আরোহীকে সবার মতো শুভ্র কখনো “আরু” বলে ডাকে নি। তাই এখন কি বলে সম্বোধন করবে তা নিয়ে দোটানায় আছে। একবার ভাবে “রৌদ্রময়ী” বলবে আবার ভাবে “রুহি” বলবে! সব মিলিয়ে সে আর না ভেবে পুরো নামেই ডাকবে বলে ভাবে। অলরেডি ৫.৪৫ বেজে গেছে।

–আরোহী! ঘুম থেকে উঠো। ফজরের সময় চলে যাচ্ছে। আরোহী! তুমি কি শুনতে পাচ্ছ?

আরোহী ঘুমের ঘোরেই জবাব দেয়,
–উফফ! আমায় আরেকটু ঘুমাতে দে। তোর আমার ঘুম নিয়ে এতো প্রবলেম কেনো রে আয়ু?

শুভ্র অবাক। এই মেয়ে এতোই ঘুম কাতুরে যে ঘুমের ঘোরে তাকে নিজের বোন ভাবছে। শুভ্র দেখছে সময় কম তাই আবারো ডাক দেয়।

শুভ্রর ডাকে এবার আবারো আরোহী বিরক্তিতে কানের উপর বালিশ দিয়ে বলে,
–দেখছিস আজকে আমি এলার্ম দেই নি। তাও কেন ডাকতেছিস? আমার যে এখন নামাজ নেই তা তুই জানিস না? যাতো নিজে নামাজ পড়।

শুভ্র আর কথা বারায় না। জলদি করে নামাজ পড়ে নেয়। নামাজ শেষে একটু ব্যালকনিতে গিয়ে দোলনায় বসে। এখনো ছয়টা বাজতে মিনিট দুয়েক বাকি। সূর্য উঠে গেছে। আরোহীদের বাড়িতে বড় বড় গাছ আছে বিধায় গাছের ফাঁকা দিয়ে সূর্যের আলো খুব সুন্দর ভাবে আসছে। এসময় এক কাপ চা হলে মন্দ হতো না। কিন্তু নিজের বাড়ি হলে হয়তো রান্নাঘরে গিয়ে বানিয়ে নিত কিন্তু এখন তো শ্বশুর বাড়িতে আছে।

আরো আধঘন্টা কিভাবে কেটে গেলো বুঝতেই পারলো না শুভ্র। সকালের মনোরম শীতল হাওয়ায় এতটাই বিমুগ্ধ চিত্তে প্রকৃতি অবলোকন করছিলো যে তার পাশে এক রমণী দুকাপ ধোঁয়া উঠা চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তা বুঝতে পারেনি।
——–আরোহী আরো পনোরো মিনিট আগে ঘুম থেকো উঠেছে। শুভ্রর ডাকে তার ঘুম অনেকটা হালকা হয়ে এসেছিলো তারপর শুভ্র জানালার পর্দা খানিকটা সরিয়ে দিয়েছিলো আবার ব্যালকনির দরজাটাও খোলা। কানের উপর থেকে বালিশতো সরিয়ে ফেলেছিল তাই সকালের শুভ্র রাঙা আলো ও হালকা রোদের ছটায় ঘুম ভেঙে যায়। এরপর তার আশপাশ দেখে মনে পরে যে সে এখন তার বোনের সাথে না বরং তার স্বামীর সাথে। আরোহী শোয়া থেকে উঠে বসে এরপর ব্যালকনিতে নজর গেলে বুঝতে পারে শুভ্র ব্যালকনিতে আছে কারন রুমের দরজা বন্ধ ভিতর থেকে।
আরোহী ফ্রেশ না হয়ে আগে রান্নাঘরে যায় আদা, লং ও এলাচ দিয়ে লেবুচা বানাবে তাই। হালকা চায়ের পাতা দিয়ে আদা, লবঙ্গ, এলাচ দিয়ে রং চা বানিয়ে তাতে চিনি ও লেবু দিয়ে চা বানাবে। আরোহী রান্নাঘরে যেয়ে দেখে তার মা সবজি কাটছে নাস্তার জন্য। আরোহী ওর মাকে বলে সে চা বানাবে তাই চায়ের পানি বসায় চুলায়। চা পাতা বাদে বাকি সব মশলা দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। এরপর ফ্রেশ হয়ে চা বানিয়ে নিজের বাবা-মাকে দুকাপ দিয়ে শুভ্র ও নিজের জন্য নিয়ে আসে।

শুভ্রকে নিমগ্ন চিত্তে প্রকৃতি দেখতে দেখে আরোহী চায়ের কাপ শুভ্রর সামনে বাড়িয়ে দেয়। নিজের সামনে ধোঁয়া উঠা কিছুর উপস্থিতি পেয়ে নজর সরায় আর চায়ের কাপ দেখে তা বাড়িয়ে দেওয়া রমণীর দিকে তাকায়। শুভ্র চায়ের কাপটা নেয় এরপর তাতে চুমুক দেয়। চা টা তার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। আরোহী কে উদ্দেশ্য করে শুভ্র বলে,
–চা টা কি তুমি বানিয়েছো?

শুভ্রর পাশে দাঁড়িয়ে তখন আরোহী চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখছিলো। শুভ্রের করা প্রশ্নে নজর না সরিয়েই জবাব দেয়,

–হুম। আমি বানিয়েছি।
–চা টা কিন্তু অনেক দারুন হয়েছে।

শুভ্রর প্রতিউত্তরে আরোহী মুচকি হেসে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগে।
প্রিয়জনের সামান্য প্রশংসা যেনো মনকে প্রশান্তি দেয়।

শুভ্রর কাছে সময়টা সুন্দর লাগছে। তার পাশে থাকা রমণীর পরিচয় এই মূহুর্তে যাই হোক না কেনো তার সঙ্গ শুভ্রর ভালো লাগছে।
চা পান করা যখন শেষ তখন আরোহী শুভ্রকে বলে,
–আপনার মশলা দিয়ে লেবুচা অনেক পছন্দের।

শুভ্র সচকিত নয়নে তাকায়। এরপর ঘার হেলিয়ে হ্যাঁ বুঝায়। তার বিপরীতে আরোহী মুচকি হেসে শুভ্রের হাত থেকে খালি কাপটা নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

আরোহী জানতো যে শুভ্রের মশলা দিয়ে লেবুচা পছন্দের। সাত বছর আগে শুভ্র এব্রোড যাওয়ার আগে শুভ্রদের বাসায় গেলে দেখতো সকাল বেলা শুভ্র লেবুচা পান করতো।
ওই সময় পনেরো বছরের কিশোরীর মনে সদ্য ফোঁটা প্রেমের কলি যেনো পরিস্ফুটিত হবার আশায় ছিলো। কিশোরী মন তখন নতুন অনুভূতির জোয়ারে ভাসতো আর নিজের না বলা প্রেমিক পুরুষের পছন্দ অপছন্দ লক্ষ্য করতো। কিন্তু সে কি জানতো? যে তার প্রেমিক পুরুষের মনে তার চঞ্চল স্বভাবের বিপরীত তার শান্ত স্বভাবের বোনকে নিয়ে এক পাহাড় সম অনুভূতির আনাগোনা!
________

সবাই একত্রে ব্রেকফাস্টের জন্য বসে আছে। হলুদ ছাড়া ডিম ও সবজি দিয়ে একটা ভাজি, ডিম ভাজা ও রুটি। এগুলো নাস্তার জন্য। সবাই ব্রেকফাস্ট শেষে শুভ্র সবাইকে বলে হসপিটালে চলে যায়। আরোহী ও আয়ানা নিজেদের রুমে যায়, যেখানে বিয়ের আগে আরোহী ও আয়ানা থাকতো।

নীড় ও মেঘ চলে যায় নিজেদের চাকরি ক্ষেত্রে। নীড় একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সিএসসি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক আর মেঘ ফার্মেসি ডিপার্টমেন্টের।
(কম বয়সে ইউনিভার্সিটির শিক্ষক হওয়া যায়। আমার ইউনিভার্সিটিতে আছে।)

আরোহী ও আয়ানা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।
–আরু! তুই কিন্তু আমাকে এখনো বলিস নি যে তুই শুভ্র ভাইকে ভালোবাসিস।

আয়ানার কথায় আরোহী হকচকিয়ে যায়। আয়ানা আবারো বলে,

–আমি আমার মনের সব কথা তোর সাথে শেয়ার করেছি। তুই কেনো লুকিয়ে গেলি?
আরোহী চুপ করে আছে। কি বলবে? এটা তো বলতে পারে না যে আরোহী সাত বছর আগেই শুভ্র মনের মানুষের নাম জানতে পেরেছিল!

আয়ানা আবারো বলে,
–তোর মনে আছে? আমার আর ধ্রুবের প্রথম আলাপ? মেডিকেল ভর্তি কোচিং করতে গিয়ে সেখানে ওর সাথে দেখা হয় আমার। ধ্রুব ছিলো আমাদের কোচিংয়ে নতুন মেনটর। আমাদের ক্লাস টাই ছিলো ওর প্রথম কোনো কোচিংয়ে ক্লাস নেওয়া। প্রথম দিন হিসেবে সে নার্ভাস ছিলো অনেক তাইতো সে কোনো রকমে নিজের পরিচয় নিয়ে আর কোনো দিকে না তাকিয়ে বই খুলে পড়াতে শুরু করে দেয়।

আরোহী ও আয়ানা একত্রে হেসে উঠে। আরোহী বলে,
–সত্যি আয়ু! আমি ওই দিন ধ্রুবকে “গবেট” নাম দিয়েছিলাম। প্রথম দিন কই পরিচিত হবে তা না করে সরাসরি পড়াতে চলে গেলো!
#প্রিয়_প্রহর
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৯
আরোহীর কথায় আয়ানা বলে,
–চুপ! বেশি বুঝিস তুই। আর তুই যে নিজে গবেট সেটা! এখনো কিন্তু বললি না আমাকে পুরো কাহিনী। আমার কাছ থেকে কেনো লুকালি বল!

আরোহী হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলতে লাগে,

“ফ্লাসব্যাক______________________________________
আয়ানা ও আরোহী তখন চৌদ্দ বছরের কিশোরী। আর কয়েকদিন পর পনোরো বছর পূর্ণ হবে ওদের। দুই ভাইয়ের আদরের ছোট বোন।
সময়টা তখন ফেব্রুয়ারী মাস,,

মিস্টার মুনতাসির তার পুরো পরিবার ও তার বোনের পরিবার নিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে এসেছে। উদ্দেশ্য তার আদরের দুই মেয়ের জন্মদিন এই “নারিকেল জিঞ্জিরা” খ্যাত প্রবাল পাথরে সমৃদ্ধ দ্বীপে উদযাপন করতে এসেছেন। আয়ানা ও আরোহীর ফুফি মিসেস কায়রা ও তার দুই ছেলে-মেয়ে ও তার স্বামী এসেছেন।

শুভ্রর মনে তখনো আয়ানাকে নিয়ে ফিলিংস তৈরি হয়নি। কারন সে এদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারত না। শুভ্রর বয়স যখন ১২ তখন শুভ্রর পরিবার দিনাজপুরের শিফট হয়ে যায়। তখন শুভ্র ক্লাস ফাইভে পড়ে। এরপর শুভ্র যখন দশম শ্রেণীতে উঠে তখন শুভ্রর বাবা আবার ঢাকাতে ট্রানস্ফার হয় এরপর তাকে ঢাকাতে একটা স্কুলে ভর্তি করে দেয় দশম শ্রেণীতে। শুভ্রর বাবা এবার ঢাকাতে নিজের সম্বন্ধির বাসার কাছেই নিজের ফ্ল্যাট কিনে।

আরোহী ও আয়ানার জন্মদিনের দুই দিন আগে সবাই সেন্টমার্টিন দ্বীপে আসে। এরপর জন্মদিনের দিন আয়ানা ও আরোহীর দুই বোন সবার অগোচরে সমুদ্র সৈকতে যাবার উদ্দেশ্যে একা বেরিয়ে যায়। আর সেটাই ছিল ওদের সবচেয়ে বড় ভুল!

পুরো সমুদ্র সৈকত তখন প্রায় ফাঁকা ছিল। দুই বোন নিজেদের মতো করে সমুদ্রের পানিতে লাফালাফি করছিল। ঘন্টা পেরিয়ে গেছে আর এখন দুপুরের সময় তাই লোকজন নেই। আর ওরা দুই বোন কিছুটা দূরে চলে এসেছে।
হঠাৎ তিনজন লোক এসে ওদের দুই বোনের সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করলো। লোকগুলো নানারকম কুরুচিপূর্ণ কথা বাত্রা বলতে লাগলো। আয়ানা ইতিমধ্যে ভয়ে কেঁদে দিয়েছে। আরোহী নিজেকে ও নিজের বোনকে ওদের থেকে সেফ রাখার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে যখন অবস্থা বেগতিক তখন আরোহী আয়ানাকে বলে,

–তুই জলদি করে এখান থেকে হোটেলের উদ্দেশ্যে যা।আশেপাশে আমি কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। যদি কাউকে পাস তো নিয়ে আয়।

এদিকে সবাই আরোহী ও আয়ানাকে খুঁজে না পেয়ে ভয় পেয়ে আছে। নীড়, মেঘ ও শুভ্র তিনদিক দিয়ে খুঁজতেছে আর বাকি বড়রা আরেকদিক দিয়ে।

আরোহীর কথায় আয়ানা প্রথমে যেতে চায় না। সে তার বোনকে ছেড়ে যেতে চাচ্ছেনা। আরোহী অনেক জোর করে ওকে কোনরকমে সেখান থেকে দৌড়ে যেতে বলে।লোক গুলো ইতিমধ্যে গায়ে হাত দেওয়া শুরু করেছে। আয়ানার কান্না স্বরে লোক গুলো যেন আনন্দ পায়। তাই তারা আরও বেশি করে উত্তক্ত করতে থাকে। কোনোমতে আয়ানা দৌড়ে সেখান থেকে লোকালয়ের উদ্দেশ্যে যেতে থাকে। তিনজন লোকের থেকে একজন আয়ানার পিছু নেয় আর বাকি দুজন আরোহীর সাথে বাজে ব্যাবহার করছে। আরোহী লোকগুলো থেকে নিজেও পালানোর রাস্তা খুঁজছে কিন্তু পারছে না। আয়ানাকে এক ফাঁকে পালিয়ে যেতে বলেছে কারন আয়ানা এখানে থাকলে আরোহী কোনো কিছুই করতে পারবে না।

আরোহী লোকগুলোর থেকে বাঁচতে সমুদ্রের পানি তাদের চোখের দিকে মারছে। সমুদ্রের পানিতে গড় লবণাক্ততা প্রায় ৩.৫%। ১ কিলোগ্রামে ৩৫ গ্রামে দ্রবীভূত লবণ আছে। চোখে গেলে কিছুটা জ্বালাপোড়া করবে তাই আরোহী সেটা করছে। দুই জন লোকের যখন চোখ জ্বালাপোঁড়া করছে তখন আরোহী সেখান থেকে পালিয়ে যেতে নিলে, একটা লোক আরোহীর হাত চেপে ধরে। আরোহীর হাত চেপে ধরাতে সেখান থেকে পালাতে পারে না আরোহী। ওরা আরোহীকে নির্জন জায়গায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আরোহী প্রাণপনে চেষ্টা করছে নিজেকে ছুটানোর জন্য।

আয়ানা দৌড়ে যেতে যেতে পথিমধ্যে শুভ্রকে দেখে। শুভ্র এদিকটায় ওদের খুঁজতে এসেছে। আয়ানা শুভ্রকে দেখে দৌড়ে শুভ্রর সামনে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে হিচকি তুলে কাঁদতে থাকে। শুভ্র নিজের সামনে কন্দনরত মেয়েটা কি আয়ানা নাকি আরোহী সেটা বুঝতে পারছে না।

কাঁদতে কাঁদতে আয়ানার বেহাল দশা! যেকোনো সময় সে সেন্সলেস হয়ে যেতে পারে ভয়ে। হিচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে আয়ানা শুভ্রকে এটা বলে,
— ভাইয়া। আরু! আরু!

শুভ্র এমনিতে দুটি মেয়েকে এতক্ষণ ধরে খুঁজতে খুঁজতে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল আর এখন একটি মেয়েকে কাঁদতে দেখে আর আরেকটি মেয়েকে আশেপাশে না দেখে আরো বিচলিত হয়ে পড়ে। আয়ানার মুখ থেকে “আরু” নামটা শুনে বুঝতে পারে মেয়েটা আয়ানা আর আরোহীর কিছু হয়েছে। শুভ্র আয়ানাকে জিজ্ঞাসা করে,

–কি হয়েছে আরোহীর?
–আরুকে ওওই ললোকক গুলো কিছু ককরে ফেলবে!

আয়ানা ভয়ে ও নার্ভাস হয়ে তোতলিয়ে কথাগুলো বলে।
–কারা আরোহীকে কিছু করবে? বলো আমাকে? আর তুমি একা কেনো? তোমাদের দুই বোনকে আমরা কখন থেকে খুঁজতেছি? আরোহী কই?

আয়ানা কোনমতে ঢোক গিলে বলে,
–আমরা সমুদ্রের তীরে খেলছিলাম। তারপর তিনটা লোক এলো আর আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করল। আমাদের গায়ে হাত দিচ্ছিল। আরু আমাকে কোনমতে বলেছে ওখান থেকে যেতে আর কাউকে ডেকে আনতে। আরু ওখানের রয়ে গেছে। আমি আসতে চাই নাই। আমাকে জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন আরুর কি হবে? আপনি প্লিজ আমার আরুকে বাঁচান!

কথাগুলো বলে আয়ানা শুভ্রর বুকের ওপর ঢলে পড়ল। কাঁদতে কাঁদতে আয়নার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। শুভ্র এক কন্দনরত রমণীর রক্তিম মুখ দেখে প্রথমবারের মতো কিছু একটা অনুভব করলো।
কিন্তু এখন তার হাতে সময় নেই। সে আশেপাশের কোন এক মহিলা টুরিস্টকে দেখে বলল, আয়ানাকে একটু খেয়াল রাখতে। সে ফোন করে ওর ভাইদেরকে আসতে বলছে।
শুভ্র আয়ানাকে ওখানে রেখে, দৌড়ে আয়ানা যেদিকে হাত দিয়ে ইশারা করে কথাগুলো বলছিল সে দিকে যায়। সেদিকে যেয়ে দেখে সমুদ্র তীর পুরো ফাঁকা। আশেপাশে কেউ নেই। এখন শুভ্র নিজে বুঝতে পারছে না কোন দিকে যাবে! আর আরোহীকে ওরা কোন দিকে নিয়ে গেছে!

হঠাৎ কিছুটা দূরে বালির মধ্যে কাউকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাবার মতো চিহ্ন দেখে। শুভ্র সেই চিহ্ন অনুসরণ করে সেদিকে দৌড়ে যায়। এরপর দেখে একটা নির্জন ঝোপের কাছে একটু শোরগোল শোনা যাচ্ছে।

————তিনজন আরোহীকে এক নির্জন ঝোপের কাছে নিয়ে এসেছে। তৃতীয় ব্যক্তি ফিরে এসেছে কারণ সে যখন দেখে, সে যেই মেয়েটার পিছু নিয়েছে সেই মেয়েটা মেয়েটা লোকালয়ের ভিতরে ঢুকে গেছে তখন সে আর রিস্ক নিয়ে সে দিকে গেল না।
আরোহীকে বালির মধ্যে ফেলে তারা ওর দিকে আগাতে থাকে। আরোহী ভয়ে পেছাতে পেছাতে মুঠোভর্তি বালি নিয়ে ওদের দিকে বারবার ছুড়ে মারছে। বারবার বালি ছুড়ে মারার দরুন, একজন লোক এসে ওর চুলের মুঠি ধরে আর আরেকজন লোক ওর দুহাত ধরে। আরোহী নিজেকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছে। সে শুধু দোয়া করছে কেউ যেন আসে আর তাকে বাঁচায়।

একজন লোক যখন আরোহীর জামার এক হাতের দিকের কাপড় ছিড়ে ফেলে তখন আরোহীর চোখ দিয়ে নোনা জল গড়াতে থাকে। যেই ব্যক্তি ওর চুলের মুঠি ধরেছে সে আরোহীর মুখ চেপে ধরেছিলো কারণ আরোহী চিল্লাচ্ছিল জোরে জোরে। মুখ চেপে ধরার দরুন আরোহীর মুখ দিয়ে শুধু গোঙ্গানির আওয়াজ আসছে। তৃতীয় ব্যক্তি আরোহীর দুইপা চেপে ধরে আর ঠিক তখনই শুভ্র এসে দেখে আরোহীকে তিনজন লোক মিলে চেপে ধরে রেখেছে।
আরোহী নিজের সামনে শুভ্রকে দেখে যেন প্রাণ ফিরে পায়। ওই লোক গুলো এখনো শুভ্রকে দেখেনি। কিন্তু আরোহী শুভ্রকে দেখে আরোহীর চোখে যেন খুশির ঝিলিক খেলে যায়।

যেই ব্যক্তি আরোহীর পা ধরে রেখেছে, শুভ্র সেই লোকটাকে একটা লাথি মেরে সরিয়ে দেয় এরপর বাকি দুজনকেও। লোকগুলো হতভম্ব হয়ে যায় এই নির্জন জায়গায় কাউকে আসতে দেখে। লোকগুলো আরোহীকে ছেড়ে দিয়েছিল শুভ্রর হঠাৎ আক্রমণে। লোক গুলো এরপর শুভ্রর সাথে মারামারি করতে গেলে শুভ্র একমুঠো বালি একজনের চোখে ছুড়ে মারে। যেই লোকটার চোখের শুভ্র বালি ছুড়ে মারে, সে নিজের চোখে হাত দিয়ে বালিতে বসে পারে কারন তার চোখ অনেক জ্বালাপোড়া করছে। অপর দুজন শুভ্রর দিকে আগাচ্ছে। আর আরোহী এদিকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। আরোহী বুঝতে পারছে যে, শুভ্র একা তিনজনের সাথে পারবে না তাই আরোহীও একমুঠো বালি নিয়ে একটু উঠে আরেকজনের চোখে বালি ছুড়ে মারে।

দুইজনের অবস্থা বেগতিক। আরেকজন একা শুভ্রর সাথে পারবে না আর সেই আরেকজন কম বয়সি। তাই সেই জন পালিয়ে যায়। শুভ্র গিয়ে আরোহীকে ধরে। আরোহী নিজের সাথে ওই অবস্থায় সম্মুখীন হয়ে তার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠেছিল। শুভ্র বুঝতে পারে আরোহী অনেক ভয়ে আছে তাই সে আরোহীকে নিজের বুকে জড়িয়ে নেয় আশ্বাসের সাথে যাতে আরোহীর ভয় কমে। যেকোনো মেয়ে এরকম পরিস্থিতিতে প্রচন্ড ভয় ও শক পায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here