প্রেতপুরুষ পর্ব ৫

#প্রেত_পুরুষ
——————-(৫ম পর্ব)
বিয়ে পড়ানো শুরু হলো কাজী সাহেব আমাকে যখন কবুল বলতে বললেন ঠিক তখনই অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটলো।অপূর্ব কোথা থেকে এসেই আমাকে হাত ধরে টেনে উঠালো তারপর বেশ উত্তেজিত হয়েই বললো,কি হচ্ছে এখানে? সাইয়ারা তুমি আমার সাথে চলো, তোমার সাথে আমার কথা আছে।
ওর এমন অদ্ভুত কান্ডে আমি সহ সবাই বেশ অবাক হয়ে গেল।
আলিফও সাথে সাথে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
বাবা অপূর্বকে উদ্দেশ্যে করে বললো,কি হয়েছে অপূর্ব? তুমি সাইয়ারাকে কোথায় নিয়ে যেতে চাইছো?
মা তখন অপূর্বের উত্তরের অপেক্ষা না করে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো,এখন আমার মেয়ের বিয়ে তুমি তো দেখতেই পাচ্ছো বাবা।তোমার কী এমন কথা ওর সাথে যার জন্য ওকে বিয়ের আসর থেকে উঠিয়ে নিয়ে কথাটা বলতে হবে?
এখন তুমি ওর হাত ছাড়ো যা কিছু কথা পরে বলো আগে ভালোয় ভালোয় বিয়েটা শেষ হোক।
অপূর্ব এবার বিরক্ত হয়ে বললো,যা বলার আমি ওকেই বলবো।সাইয়ারা এসো আমার সাথে।
অপূর্বের এমন অদ্ভুত কান্ডে আমি এতোটাই অবাক হয়ে গেলাম যে মুখ থেকে টু-শব্দটি বের হচ্ছে না।
আলিফ এবার একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,অপূর্ব সাহেব বিয়েটা হয়ে যাক তারপর সাইয়ারাকে নিয়ে যাবেন এখন বিয়েটা দেখুন।কাজী সাহেবকে ঝড়ের মধ্যে অনেক কষ্টে আনানো হয়েছে তিনি বিয়েটা পড়িয়েই চলে যেতে চান।বিয়েতে তো দেরী করা যাবে না।
আলিফের কথা শুনে অপূর্ব চিৎকার করে উঠলো,আমি তোমার সাথে কথা বলছি না তাই চুপ করে থাকো।
তখন বাবা কিছুটা রাগান্বিত স্বরে বললো,কিছু যদি বলার থাকে এখানেই বলতে হবে আর তাড়াতাড়ি।বাইরে লোকজন তার উপর নানা রকম ঝামেলা তুমি আর ঝামেলার সৃষ্টি করবে না আশা করছি।
অপূর্বের চোখে মুখে রাগ সে আমার দিকে রাগী রাগী মুখ করে তাকিয়ে আছে।আমি ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে আলিফের দিকে তাকালাম আলিফ আমার দিকে কেমন যেন অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে ওর চোখ দুটি কিছু একটা বলতে চায় আমাকে।আমি অপূর্বের থেকে আমার হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,আমার হাতটা ছাড়ুন আর যা বলার এখানেই বলুন।
অপূর্ব আমার কথায় বেশ আশাহত হয়েছে বুঝা গেল।সাথে সাথে আমার হাত ছেড়ে দিলো। ওর চেহারাতেও এখন আর রাগ রাগ ভাব নেই কান্না কান্না ভাব চলে এসেছে।
অপূর্ব কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো, আমি তোমাকে ভালোবাসি সাইয়ারা। চাচা,চাচী আমার সাথেই তো তোমার বিয়ে দিতে চাইছেন আর কিছুক্ষণের জন্য আমি বাইরে লোকজনদের সামলাতে যেতেই তোমাকে এই অচেনা, অজানা ডাক্তারের সাথে কেন বিয়ে দিচ্ছেন?শুধুমাত্র আমার কোনো পরিচয় নেই বলেই কি আমার সাথে তোমার বিয়ে দিতে পারলেন না চাচা চাচী?
বাবা কিছু বলতে যাবেন তখনই আমি হাত ইশারায় বাবাকে থামিয়ে অপূর্বকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
বাবা মা আপনার সাথেই আমার বিয়ে দিতে চেয়ে ছিলেন কিন্তু আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাইনি।ওনাকে বিয়ে করতে চেয়েছি।আমার কাছে আপনারা দুজনই অজানা, অচেনা।আপনার পরিচয় যেমন জানি না তেমন ডাক্তার আলিফেরও না।
অপূর্ব বেশ অবাক হয়ে কাঁপা গলায় বললো,তুমি চেয়েছো?কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব! তুমি কেন ওকে বিয়ে করতে চাইছো?নিশ্চয়ই ওই ছেলেটা তোমাকে জোর করেছে তাই না? একবার বলে দেখো আমি কী করি ওকে।
কেন জানি না অপূর্বের কথাটা শুনে আমার ভিষণ রাগ হলো।আমি দাঁত কটমট করে জবাব দিলাম, একবার বলেছি ওকে আমি বিয়ে করতে চাই কথা কানে যায়নি? আপনি এই মুহুর্তে এখান থেকে চলে যান।

আমার মনে হলো প্রয়োজনের তুলনায় আমি একটু বেশি রাগ করছি তাও আমার রাগ বেড়েই চলেছে।
মা হয়তো ব্যপারটা বুঝতে পারলো আমার কাছে এসে শান্ত হতে বললো।
অপূর্ব এবার বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়েই বললো,সাইয়ারা তুমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো তুমি ওই ছেলেটাকে বিয়ে করতে চাও।
আমি সাথে সাথে অপূর্বের দিকে তাকালাম, তারপর বললাম,ছেলেটা ছেলেটা বলবে না ওর একটা নাম আছে।আর হ্যাঁ আমি ওকেই বিয়ে করবো।

অপূর্ব চোখ বড়বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। এক মুহুর্ত চুপ করে থেকে কিছু একটা চিন্তা করলো,তারপর শব্দ করে হাসতে লাগলো।
আমরা সবাই অবাক হয়ে অপূর্বের দিকে তাকিয়ে আছি।
ওর হাসি দেখে আমার কেমন যেন গাঁ শিরশির করে উঠলো অদ্ভুতভাবে আমার ভয় ভয় লাগছিল।ভয়ে আমার বুক ধরফর করা শুরু করলো।
আমি মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলাম ঠিক তখনই আমার ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে কারোর আঙুলের ছুঁয়া পেলাম।
-ভয় পেও না সাইয়ারা আমি আছি, আমি এসেগেছি তোমার আর কোনো ভয় নেই।কানে এলো আলিফের ফিসফিস করে বলা কথাটা তাকিয়ে দেখলাম ওর আঙুলে আমার আঙুল জড়িয়ে আছে।অদ্ভুত রকম ভাবে এক মুহুর্তে আমার সব ভয় ভয় অনুভূতি কমে গেল।অনেক বেশি স্বস্তি অনুভব করলাম।আর আমার মনে পড়লো এই কন্ঠটাই আমি প্রতিরাতে স্বপ্নের মধ্যে শুনতে পেতাম।এর জন্যই আলিফের কন্ঠস্বর আমার এতো পরিচিত মনে হচ্ছিল।মুহুর্তেই মনে পড়লো এই সেই চেহারা যেটা আমাকে স্বপ্নে সাবধান করে দিতো।কিন্তু ঘুম ভেঙে আর চেহারাটা স্পষ্ট মনে করতে পারতাম না আমি।এর জন্যই আলিফকে প্রথম দেখায় এতোটা চেনা মনে হয়েছে।
কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব আলিফের কন্ঠস্বর ওর চেহারা কিছুই তো এর আগে আমি শুনিনি আর দেখিওনি।কিন্তু রোজ রাতে আমি ওকেই স্বপ্নে দেখতাম।আমার মাথাটা ভনভন করে উঠলো।চোখ দুটো কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আসছে এটা কি হচ্ছে আমার সাথে!আমি নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলাম।অপূর্বের হাসি থামলো,ও বলা শুরু করলো, আরে তোমরা এতো অবাক কেন হয়ে গেলে একটু পরীক্ষা করছিলাম সাইয়ারা সত্যিই ডাক্তার আলিফকে বিয়ে করতে চায় নাকি এমনিই হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে।
চাচা -চাচী আমাকে ক্ষমা করবেন সব কিছুই আমার অভিনয় ছিল।যা বলেছি সব মিথ্যে আমি তো অনেক খুশি হয়েছি যে সাইয়ারার ওই খারাপ ছেলেটার সাথে বিয়ে হচ্ছে না।এর জন্যই আমি সাইয়ারাকে বিয়ে করতে আপনার কথায় এক বাক্যে রাজী হয়ে ছিলাম।আমি চাই ও ভালো থাকুক।আমার চাচা,চাচী যারা আমাকে এতো ভালোবেসে আশ্রয় দিয়েছে তাদের মেয়ের খারাপ কী করে চাই বলুন তো।
অপূর্ব কথা শেষ করে একবার আমার দিকে তাকালো ওর চোখদুটি সেই প্রথম দিনের অপূর্বের মতোই মনে হচ্ছে এখন।ওর চেহারায় যেন কোনো নিষ্ঠুরতা আর নেই।
অপূর্ব মাথা নিচু করে হাসলো।আমার আবার অস্বস্তি লাগা শুরু হলো।
অপূর্বের কথা শুনে মা,বাবা শব্দ করে হাসছে।
আলিফ এবার দ্রুত বললো,এখন বিয়েটা শেষ করা উচিৎ। কাজী সাহেব চলে যাবেন বলছিলেন।
আমি আলিফের দিকে তাকালাম ওর চেহারায় চিন্তার ছাপ।আমাকে হাত ধরে ওর পাশে বসালো তারপর দ্রুত কাজী সাহেবকে বিয়ে পড়ানো শুরু করতে বললো।
অপূর্ব এখনও মিটমিট করে হাসছে।
আলিফের কথা শুনে বাবাও তাড়া দিলেন।
বিয়ে পড়ানো শেষ হলো।
বাবা কাজী সাহেবকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলেন লোকজনকে জানাতে হবে আমার বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে তবেই তাড়া যার যার বাসায় যাবে।
মা চম্পাকে ডেকে নিয়ে গেলেন।
আমি চুপচাপ বসে আছি আমার মাথা থেকে কিছুতেই স্বপ্ন আর আলিফের চেহারা, কন্ঠস্বর মিলে যাওয়ার ব্যপারটা বের হচ্ছে না।সবকিছুই কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ আমার মনে হলো আসলে আজ সারাদিন যা ধকল গেছে আমার উপর দিয়ে এর জন্যই আমি ভয় পেয়ে অদ্ভুত অদ্ভুত চিন্তা করছি যার পুরোটাই অবাস্তব আর অবিশ্বাস্য।
অপূর্ব আর আলিফের মধ্যে কথা হচ্ছে, অপূর্ব আলিফকে কোথায় থাকে না থাকে এসব বিষয় জিজ্ঞেস করছে আর আলিফ উত্তর দিচ্ছে।কিছুক্ষণ পরেই চম্পা বেশ উৎফুল্ল ভাবে ঘরে ঢুকলো।ওর এক হাতে মিষ্টির প্লেট আর অন্যহাতে ফুলের ঝুড়ি।
আমি একটু রাগ করেই বললাম তুই ফুল তুলেছিস কেন?
চম্পা হেসে বললো, মামী বলেছে তোর ঘর সাজাতে।
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, কী দরকার ছিল এসবের, অহেতুক ফুল গুলো নষ্ট করবি।
চম্পা চোখ পাকিয়ে বললো,ইরা তুই এখন নতুন বউ তাই চুপচাপ বসে থাকবি কোনো কিছুতেই নাক গলানো যাবে না।আজ আমার যা খুশি তাই করবো।আর মামী যা হুকুম দিয়েছে আমি শুধু সেটাই করছি।
চম্পা আমার সাথে কথা শেষ করে আলিফের সামনে মিষ্টির প্লেটটা রেখে বললো মামী সবাইকে মিষ্টিমুখ করতে বলেছে।অপূর্ব আপনিও খান।
আর মিষ্টি খাওয়া শেষ হলে তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বের হোন আমার কাজ আছে।আলিফ সাহেব মানে দোলাভাই আমি বলার পর এ ঘরে ঢুকবেন এর আগে না।
আলিফ মুচকি হাসলো, অপূর্বও হাসলো।
অপূর্ব মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
আলিফ খেতে না চাইলেও চম্পা জোর করে খাওয়ালো তারপর ওকে বের করে দিয়ে মিষ্টি নিয়ে এসে আমাকে খাইয়ে দিলো।
আমি ওকেও মিষ্টি নিয়ে খাইয়ে দিলাম মেয়েটা মিষ্টি খেতে খুব পছন্দ করে।
চম্পার চোখদুটো ছলছল করছে ও মাথা নিচু করে রাখলো যেন চোখের পানিটা আমার থেকে আড়াল করতে পারে।
আমি চম্পার মুখটা টেনে তুলে বললাম,কি হয়ে হয়েছে তোর?তুই কাঁদছিস?
চম্পা চোখে পানি নিয়ে হেসে বললো,কই না তো কাঁদবো কেন পাগলী? তুই এক কাজ কর এখন মামীর কাছে গিয়ে বস আমি তোর ঘরটা সাজিয়ে দেই।
চম্পার মন খারাপের কারণ আমি বুঝতে পারলাম এবার।হঠাৎ করে যেন একটা ঘুর থেকে বেরিয়ে এলাম আমি।আমার যে আজ বিয়ে হয়ে গেছে সে খেয়াল আমার এতক্ষণ ছিলই না।আমার খুব কান্না পেল কিন্তু আমি নিজেকে সামলে চম্পার হাত দুটি ধরে বললাম,আমার বিয়ে হয়ে গেছে বলে মন খারাপ করছিস তাই না? আরে গাধী বিয়ে হলে কী হয়েছে আমি তো তোদের সাথেই আছি।
চম্পা এবার ফুফাতে ফুপাতে বললো,মামা মামীর সাথে তোর শ্বশুর শ্বাশুড়ির কথা হয়েছে।ওনারা অনেক ভালো জানিস! সব শুনে তোদের বিয়েতে মত দিয়ে দিলেন।আর মামা ওদের পরিচয়ও জানতে পেরেছে সে জন্য মামাও তো বিয়েতে আর অমত করলেন না।ওনারা বলেছেন কাল এসে ওনাদের ছেলের বউকে সাজিয়ে নিয়ে যাবেন।
এবার আমার মনে হলো সত্যিই তো আমি ওদের ছেড়ে চলে যাবো এই কথাটা একবারও ভাবিনি।কিন্তু বিয়ে হয়ে গেলে মেয়েদের তো সবাইকে ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি চলে যেতেই হয়।আমার বুক ফেটে কান্না আসলো।আমি চম্পাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম, আমি তোকে ছেড়ে, বাবা মাকে ছেড়ে কোত্থাও যাবো না চম্পা রানী।
চম্পাও কান্না শুরু করলো।
আমি আর চম্পা সেই ছোট বেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছি।ফুপা,ফুপু চলে যাওয়ার পর থেকেই চম্পা আমাদের কাছে আছে।এমন কোনো দিন নেই যেদিন চম্পাকে ছাড়া আমি খাবার খেয়েছি,ঘুমিয়েছি।মেয়েটা আমার থেকে কয়েক মাসের ছোট হলেও সব সময় আমার খেয়াল রেখেছে বড় বোনের মতোই।বাবা,মা না থাকার জন্যই হয়তো বয়সের থেকে একটু তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গিয়ে ছিল।বোন বলি আর বন্ধু বলি আমার সবকিছু এই মেয়েটা।কিছুতেই কান্না থামাতে পারছিলাম না আমি।চম্পা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,কাঁদিস না পাগলী বিয়ে যখন হয়েছে যেতে তো হবেই কিন্তু আমাদের পাগলীটাকে আমরা নিয়ে আসবো কয়দিন পরই।বিয়ে হয়ে গেলেই পর হয়ে যাবি নাকি?
আমি চম্পার দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই বললাম, তুই রাতের বেলায় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে না দিলে আমার যে ঘুম আসে না।
-তুই পাশে না থাকলেও যে আমার ঘুম আসে না ইরা আর তো কেউ রাতের বেলা আমাকে ভয় না পেয়ে ঘুমাতে বলবে না।
চম্পা কথাটা বলে আবারও কান্না শুরু করলো।দুই বোনই অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করলাম তারপর চম্পা আমাকে ছাড়িয়ে বললো,তোর বর হয়তো বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে বকছে তুই এবার বের হ তো আমি কাজটা শেষ করে তোদের ডেকে আনবো।
-তোকে বকবে কেন? আর আমি এখানে থাকলে কী হয় তুই সাজা আমি দেখি।
-ওমা বউয়ের কাছে আসতে দিচ্ছি না বকবে না?
চম্পার কথাটা শুনে আমি হেসে দিলাম।চম্পাও হাসছে তারপর আমাকে জোর করে ঘর থেকে বের করে দিলো ও নাকি ঘর সাজিয়ে তারপর আমরা দুজনকে একসাথে দেখাবে।
আমি অনিচ্ছা সত্যেও ঘর থেকে বেরিয়ে মায়ের ঘরে চলে এলাম।এখানে মা বাবা আর আলিফ গল্প করছে।আমাকে দেখে মা বললো,অনেক রাত হলো আয় তো খাওয়ার ব্যবস্থা করি সবাই একসাথে খেয়ে নিবি।আমি মায়ের সাথে রান্না ঘরে গিয়ে মাকে সাহায্য করলাম।আমাদের কাজ প্রায় শেষ কিন্তু চম্পা এখনও ঘর সাজিয়ে এলো না আমি বার বার দেখছিলাম ও কেন আসছে না এতক্ষণ ধরে কী সাজাচ্ছে!
মাও এবার বললো,চম্পাটার এখনও ঘর সাজানো শেষ হলো না?খাবার তো নিয়ে নিলাম ঠান্ডা হয়ে যাবে তুই একবার দেখ গিয়ে মেয়েটা কি করছে।
আমি কাচুমাচু করে বললাম,ও আমাকে যেতে নিষেধ করেছিল, বলছিল দুজনকে একসাথে ডেকে নিয়ে দেখাবে।
মা আমার কথা শুনে মুচকি হেসে বললো,চম্পাটা আজকে যা খুশি ওর বোনের বিয়ে সবকিছু নেচে নেচে করছে।আমি আলিফকে পাঠিয়ে দিচ্ছি তুই যা।
আমি রান্নাঘর থেকে বেরোতেই অপূর্বকে দেখলাম খুব দ্রুত এদিকেই আসছে।আমাকে দেখে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে বললো দেখতে এলাম খাবার তৈরি কি না খুব ক্ষুধা পেয়েছে।আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,হয়ে গেছে।
তারপর আমার ঘরের দিকে হাটা শুরু করলাম।দরজা খুলতে যাবো তখনই আলিফ দরজা আগলে দাঁড়িয়ে বললো,আরে করছেন কী? ওকে আগে জিজ্ঞেস করে নিবেন না সাজানো শেষ কী না মেয়েটা এতো কষ্ট করে এতক্ষণ থেকে সাজাচ্ছে ওর খুশিটা নষ্ট হয়ে যাবে।
আলিফের কথা শুনে আমারও তাই মনে হলো,আমি মুচকি হেসে বাইরে থেকে চম্পাকে ডাকলাম চম্পা তোর শেষ হয়েছে? আসবো?
কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই।আমি কিছুক্ষণ থেমে আবারও ডাকলাম, চম্পা.. কী ব্যপার সাড়া দিচ্ছিস না কেন? তোর সাজানো শেষ হয়নি? আচ্ছা বাবা সাজানো শেষ না হলে বল পরে আসবো কিন্তু কথা তো বলবি।
চম্পা এবারও কোনো সাড়াশব্দ করলো না।
আমি একটু বিরক্ত হয়েই আলিফকে বললাম,ও কিছু বলছে না তো কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো?
আলিফ একটু চিন্তিত হয়েই বললো,আবার ডেকে বলুন আমরা ভিতরে চলে আসবো।
আমি আবার চম্পাকে ডেকে বললাম,এবার যদি জবাব না দিস চলে এলাম কিন্তু পরে বলতে পারবি না তোর সাজানো শেষ হয়নি।পরে আর রাগ করতে পারবি না কিন্তু।সাজানো শেষ না হলেও বল তাহলে আমরা পরে আসবো।
এবারও চম্পার কোনো জবাব এলো না আমি একটু অস্থির হয়েই ভাবছি, চম্পা এতোবার ডাকার পরও জবাব কেন দিচ্ছে না!আলিফকে দরজা থেকে সরিয়ে আমি দরজাটা খুলার জন্য হাত দিতেই বুঝলাম এটা ভিতর থেকে বন্ধ।
আমি দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা দিয়ে চম্পাকে ডাকতে লাগলাম তারপরও ওর কোনো জবাব নেই।আমি এবার বিচলিত হয়ে আলিফকে বললাম দরজাটা তো বন্ধ আর ভিতর থেকে চম্পা কোনো জবাবও দিচ্ছে না।আপনি দেখুন না দরজাটা খুলতে পারেন কী না আর নাহলে ভেঙে ফেলুন আমি বাবা মাকে ডেকে আনি। কথাটা বলে আমি মা,বাবাকে আনার জন্য যেতে লেগেছি তখনই মনে হলো আলিফ দরজাটা ভেঙে ফেলেছে। সম্ভবত ধাক্কা দিয়েই ভেঙেছে কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি! যাই হোক এসব ভাবার সময় এখন না, তাড়াতাড়ি দরজাটা খুলেছে এটাই তো বেশি আমি এক দৌড়ে ঘরে প্রবেশ করলাম।আলিফও আমার সাথে সাথে এলো।
চম্পা ঘরটাকে খুব সুন্দর করেই সাজিয়েছে কিন্তু ও কোথায়, আমি এদিক তাকাতেই দেখলাম ঘরের এক কোনায় চম্পা পড়ে আছে ওর নাক,মুখ দিয়ে নদীর স্রুতের মতো রক্ত বের হয়ে ঘর ভেসে যাচ্ছে।
চম্পাকে এই অবস্থায় দেখে আমার নিশ্বাস আটকে এলো আমি দৌড়ে গিয়ে চম্পার মাথাটা কোলে তুলে নিলাম।ওর শরির স্পর্শ করতেই দেখলাম সারা শরির ঠান্ডা হয়ে আছে।আমার মনে হলো চম্পা আর নেই, আমি চিৎকার করে উঠলাম, চম্পা রে…….
চলবে..
লিখা: উম্মেহানি মিম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here