প্রেমনোঙর ফেলে পর্ব ১৩+১৪

#প্রেমনোঙর_ফেলে
#লেখনীতে: মিথিলা মাশরেকা

১৩.

খই গাছের সবচেয়ে নিচের ডালটায় রীতিমতো ঝুলছে। আর নিচ থেকে রাকীন ওর বিনুনি ধরে রেখেছে আর ফোন দেখছে। ভাবখানা এমন,ওর সব মনোযোগ মোবাইলেই। গাছের ডালে ওর বিনুনি ধরে রাখার জন্য একজন যে চরম বেকায়দায় পরে আছে,বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই তাতে। তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো খই। এই মানুষটা তো সত্যিই মানুষ! গতরাতে হাত কেটে তার প্রমান দিয়েছে ওকে। কিন্তু তাহলে আজ এভাবে জ্বী’নের মতো হুট করে আবির্ভাব হলো কিভাবে? একহাতে গাছের ডাল জড়িয়ে আরেকহাতে বিনুনিতে টান লাগালো খই। রাকীন প্রতিক্রিয়াবিহীন। খই আবারো বিনুনি টান লাগিয়ে বললো,

-আমার বিনি ধরছেন ক্যান?

-আরে? বিনি ছাড়েন না ক্যান?

-কথা কানে যায় না? কালা নাকি? বিনি ছাড়েন কইতাছি!

রাকীন এবার চোখ তুলে উপরে তাকালো। খইয়ের বিনুনি আঙুলে আরেকপ্যাচে পেচিয়ে মোবাইলটা পকেটে পুরলো ও। এখানে এসেছিলো পুকুরটা পরখ করে নিতে। সামনের রাস্তা সংস্কারের জন্য মাটি লাগবে। কচুরিপানায় মজা এই পুকুর সেচে এখান থেকেই মাটি রাস্তায় দেবে এমনটাই প্লান ওর। গ্রামের মাতব্বরের সাথে এ নিয়ে কথাও বলেছে রাকীন। মাটির জন্য মুন্সীর কাছ থেকে এই পচা ডোবাটা বেশ চড়া দামে কিনতে হয়েছে ওকে। তবুও সংস্কারকাজ শুরু করা চাই ওর। তাই বিকেল গরাতেই বেরিয়ে পরেছে ও। রাকীন যখন পুকুরের আরেকপাশ দেখছিলো তখনই খই এসে গাছে উঠতে শুরু করে। পাশ ফিরে খইয়ের বিনুনিটাই দেখেছে ও। পরে যাবে এমন ভয়ে মেয়েটাকে থামিয়ে দিতে গিয়ে বুঝতে পারে,ওটা খই। তাই আরো ভালোমতোন বিনুনি টেনে ধরেছে ওর। খইয়ের কথায় রাকীন গাছের দিকে ঘুরে দাড়ালো। খানিকটা গম্ভীরভাবে বললো,

-গায়ে শাড়ী পেচিয়ে গাছে ওঠে কেউ?

-আমি উডি! বিনি ছাড়েন!

-পরে হাত পা ভাঙুক! তখন বুঝবে! গেছো মেয়ে কোথাকার!

বিরক্তি নিয়ে বললো রাকীন। খই বিনুনি টানছিলোই। রাকীন একপা এগিয়ে আঙুল-বিনুনির প্যাঁচ খুলতে যাবে,খইয়ের আরেকহাত আচমকাই ডাল থেকে ফসকে গেছে। মাটিতে পরবে সে ভয়ে চোখমুখ খিচে বন্ধ করে নিলো খই। পরপরই অনুভব হলো,দুহাতে কারো গলা জরিয়ে আছে ও। মাটিতে পরার আগেই কেউ একজন পাজাকোলে করে শুন্যে ধরে রেখেছে ওকে। বাচিয়ে নিয়েছে পরে যাওয়া থেকে।
রাকীনের কয়েকমুহুর্তের স্তব্ধতা। খইয়ের দিকে কয়েকমুহুর্তের নিস্পলক স্থির দৃষ্টি। দুহাতের বাহুডোরে থাকা শ্যা‌মাঙ্গী, ভয়ে খিচে বন্ধ করে রাখা তার দু চোখ, কামড়ে ধরে রাখা নিচের ঠোট, সর্বশক্তিতে ওর গলা জরিয়ে রাখা হাতজোড়া যেনো আটকে দিয়েছে ওকে। শ্বাস হঠাৎই দ্রুত চলতে লাগলো ওর। একটা শুকনো ঢোক গিলে তাকিয়ে রইলো ও খইয়ের দিকে। যেনো অচেনা মেয়েটায় চেনা কোনো নেশা মিশে আছে।

খই পিটপিট করে চোখ মেললো। রাকীনের অদ্ভুত চাওনিতে কপাল কুচকে এলো ওর। রাতের আবছা আলোয় দেখা মানুষটাকে শেষ বিকেলের আলোতে আরো মোহনীয় দেখাচ্ছে যেনো। পরিহিত আকাশী রঙের শার্টের বুকের দু দুটো বোতাম খোলা। গরমের জন্যই হয়তো ছেড়ে দিয়েছে তাদেরকে। খই রাকীনের কাধে নখের আঁচড় বসাতেই ধ্যান ভাঙে রাকীনের। দু দন্ডের এমন ঘটনায় অস্বস্তিতে পরে গেছে ও। তৎক্ষনাৎ ও‌ ছেড়ে দিলো খইকে। জ্বিভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে,গলা ঝেরে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। এভাবে মেয়েটাকে কোলে ধরে রাখা মোটেও উচিত হয়নি ওর। পরপরই মনে পরলো খইকে কোল থেকে‌ রীতিমতো ফেলে দিয়েছে ও। নিচে তাকিয়ে দেখে কোমড় ধরে মাটিতে পরে আছে খই। রাকীন চটজলদি পরিস্থিতি সামাল দিতে বললো,

-আব্…দ্ দেখেছো,এভাবে গাছে চড়তে গিয়ে পিছলে পরে…

-কাইল আপনার লাগি ওই চেরাগ পাইনাই। আইজ আপনার লাগি গাব পাড়তে পারলাম না। আমার সব কাজের পথের কাটা আপনে! আস্ত একটা কাটাবাহার! আল্লা গো! গাবগাছ থাইকা পরলেও‌ মনে হয় মাজাটা বাচতো আমার! ওহন মনে হইতাছে আস্ত একটা তালগাছ থাইকা পরছি! ওমা গো!

-কি? আমি কাটাবাহার? আমি তালগাছ?

-খালি তাই না! আপনে একটা কালা! কানে কম শুনেন। তারসাথে কানাও। চোখেও কম দেখেন আপনে। বদুকাকার চেয়েও মনে হয় বয়স বেশি আপনের। গায়ে জোর নাই। ফালায়া দিছেন আমারে!

রাকীন ঠিক কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে,ভেবে পেলো না। খই উঠে দাড়িয়ে গায়ের ময়লা ঝাড়তে লাগলো। তারপর রাকীনের দিকে তীক্ষ্মদৃষ্টি ছুড়ে চলে গেলো রাগে গজগজ করতে করতে। হতভম্ব হয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো রাকীন। খই আড়াল হলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে নিলো গোটা বিষয়টা আর কারো নজরে পরেছে কিনা। কাউকে দেখলো না তেমন। দু তিনটে গরু চড়ানো ছেলেরা সড়কের ওপারে দৌড়াদৌড়ি করছে শুধু। স্বস্তির শ্বাস বেরোলো। সঙ্গে কাধ বেয়ে ঘাম গরিয়ে পরলো রাকীনের। তারসাথে কাধে জ্বালা অনুভব করলো ও। হাত তুলে কাধ স্পর্শ করে বুঝলো,খইয়ের নখের আঁচড়ে কিঞ্চিত কেটে গেছে সেদিকটা। তাতেই ঘাম লেগে জ্বালাপোড়া করছে। নিরবে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে নিজের সামনে তুলে ধরলো রাকীন। খইয়ের দেওয়া এটুকো আঘাত ওর পুরোনো ক্ষতে জাগিয়ে দিয়েছে। মোবাইলের স্ক্রিনে নিজের প্রতিবিম্বে গলার কাছের ছোট ক্ষতের দাগটা দেখে সেখানটায় স্পর্শ করলো একবার। নিজেকে সামলাতে কষ্ট হচ্ছিলো ওর। একবর্ন উচ্চারন না করে শুধু নিজেই নিজেকে শুনিয়ে দিলো,

-তোর স্মৃতি হিসেবে আমার কাছে অনেককিছু রয়ে গেছে খেয়া। সেগুলো আজীবন রয়ে যাবে। আর সাথে সেগুলোতে তুইও রয়ে যাবি। আজীবন। যদি স্মৃতি হয়েই থাকতে চাস,আমি বলবো, আমার অনুকুলে কিছুই নেই। তবে তোর স্মৃতিকে আগলে তোকে সত্যিসত্যি ফিরে পাবার লোভটা সম্পুর্নই আমার আয়ত্ত্বে। আর সে লোভ আমি আজীবন করে যাবো। আমার সে ভ্রম ভাঙার জন্য হলেও,ফিরতে তো তোকে হবেই খেয়া! ফিরতে তোকে হবেই!

মুক্তমঞ্চে আজ উন্মুক্ত সংগীতসভা বসেছে। ছোট,বড়,বাউল,ব্যান্ড সবরকমের গায়কের সুরে মুখরিত মুক্তমঞ্চ এলাকা। শ্রোতাসারির শেষ প্রান্তের এককোনে মাস্ক পরে দাড়িয়ে এ পর্যন্ত বারোটার মতো গান শুনে নিয়েছে ইচ্ছে। এদের মাঝে সাতজন খুবই ভালো গায়। মিউজিক একাডেমি থেকে আসার সময় দশটার মতো টোকেন নিয়ে এসেছে ও। মুক্তমঞ্চের ভালো গাইয়েদের গান বের করার সুযোগ করে দেবে বলে। একাডেমি জানে ওর বাছাই কেমন হবে। তাই অনুমতিও দিয়েছে। গানগুলো শুনে গায়ক গায়িকা নিজেনিজেই নির্বাচন করে নিলো ইচ্ছে। একজন অর্গানাইজারকে দিয়ে টোকেনগুলো দিয়েও দিয়েছে। এরা সরাসরি রেকোর্ডিংয়ের সুযোগ পাবে,এমনটাই সুপারিশ করা টোকেনে।
শেষেরজনের গান শুনে গিটারের ব্যাগ কাধে নিয়ে মাস্ক পরিহিত অবস্থাতে মঞ্চে উঠলো ইচ্ছে। প্রথমে সেভাবে কেউ গুরুত্ব দিলো না। ইচ্ছে মুচকি হেসে ব্যাগ থেকে গিটার নামালো। স্পিকারে বললো,

-ওপেন কনসার্ট! তবুও গান শুরুর আগে আপনাদের অনুমতি চাইছি। মে আই?

সেরকম সারা নেই দর্শকশ্রোতায়। মাস্কের আড়ালে ইচ্ছে হাসলো। কথা বলে নিলো সঙ্গীতযন্ত্র বাজানোর দায়িত্বে থাকা সবার সাথে। তারাও সেভাবে গুরুত্ব দেয়নি ওকে। ইচ্ছে ভাবলো,একেবারে গান শুরুর সময়ই মাস্ক খুলবে ও। গিটারটা নিয়ে সবে সুর তুলতে যাবে,টের পেলো,ওর গিটারের তারগুলোর একটা ছেড়া। হতাশার শ্বাস ছাড়লো ইচ্ছে। এজন্যই বুঝি আজ নাফিজা বেগম কোনোরকম বাধা দেয়নি ওকে কনসার্টে আসা নিয়ে। কোনো ঝামেলা করেনি আজ। গিটারটা আগে থেকেই নষ্ট করে রেখে দিয়েছিলো সে। ইচ্ছের গান গাওয়ার উদ্যমে শীতলতা চলে আসলো। ঠিক করলো,নিজে গিটার না বাজিয়ে,বাকিদের ক্যারাওকেতেই গান গাইবে আজ ও। মাস্কটা খুলে ফেললো আস্তেকরে। স্পিকারে বললো,

-আজকে ইচ্ছে গিটার ছাড়াই গাইবে।

ও মাস্ক খোলাতেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পরেছে পুরো জায়গাটায়। ইচ্ছের নামে সবাই চেচাতে শুরু করে দিয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এমন অবাক আগমন হয়তো ওর দ্বারাই সম্ভব। সবাই চিৎকার করে বলছে, “আমরা তোমার গান চাই ইচ্ছে। গিটার তো তোমার স্বরের সহচরী মাত্র” এমন আরো অনেককিছু। ইচ্ছের চোখ ভরে উঠলো আশপাশের এতো ভালোবাসা দেখে। বাইরের দেশে তো সবাই ওর স্বর কম,ওর গিটারের সুরকেই বেশি প্রাধান্য দিতো। আর এখানে ওর জন্মভুমি ওকে চায়,ওর স্বরকে চায়। ওকে ভালোবাসে সব। ইচ্ছে ব্যান্ডের লোকজনকে শুরু করতে বলবে বলে পাশ ফিরছিলো। কিন্তু ওর চোখ আটকে গেলো স্টেজের ডানপাশে বড়বড় অক্ষরে “সরি” লেখাটায়।

একটা মেয়ে হাতে “সরি” শব্দটা ধরে দাড়িয়ে আছে। আর ওর পেছনে আরেক অনাকাঙ্ক্ষিত চেহারা। ইচ্ছের রাগের আরেক নাম,সাদমান ইনাব প্রাপ্ত। বহুকষ্টে নিজেকে সংবরন করেছে প্রাপ্ত আজ। এর আগে কোনো কাজের জন্য কোনোদিন অনুতপ্ত হতে হয়নি ওকে। কোনোদিন সরি বলতে হয়নি। কিন্তু তা আজ খাটলো না। ইচ্ছের মায়ের দেওয়া গিটারটা ভাঙার জন্য তীব্র গ্লানি হচ্ছিলো ওর। তাই সরি বলতে চলে এসেছে। মেয়েটা স্টেজের দিকে এগিয়ে আসলো। নিচে থেকেই ইচ্ছেকে বললো,

-সেদিন আমার জন্য তোমার গিটার ভেঙেছিলো আপু। সরি।

ইচ্ছে চুপ করে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। এরমাঝে প্রাপ্ত এগোলো। চোয়াল শক্ত রেখে হাতে থাকা ইচ্ছের মায়ের দেওয়া গিটারটার অনুরুপ গিটারটা স্টেজে তুলে দিলো ও। বেখেয়ালিভাবে বললো,

-সেদিন আমার হাতেই তোমার মায়ের গিটারটা ভেঙেছিলো। সরি।

ইচ্ছে অবাক হলো। গিটারটা ওর মায়ের দেওয়া,এটা তো কেউই জানতো না। তবে প্রাপ্তর ভঙিমায় ওর অপরাধবোধটা নেই এতোটুকোও। যেনো ও কারো চাপে পরে সরি বলতে এসেছে। ইচ্ছে সরু চোখে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। যেটুকো জেনেছে,তাতে প্রাপ্তকে চাপে পরে সরি বলার মতো ছেলে বলে মনে হয়নি ওর। প্রাপ্তর বর্তমান ভাবটায় পুরোপুরি প্রকাশ পায়,এ ছেলে ভাঙবে তবু মচকাবে না। গিটারটা দেখে আর বিশেষ কিছু বললো না ইচ্ছে। মুচকি হেসে মেয়েটাকে বললো,

-ইটস্ ওকে। সরি বলতে হবে না তোমাকে। তোমার উপর এতোটুকোও রাগ নেই‌ আমার।

-তাহলে প্রাপ্ত ভাইয়ার উপর রাগ করেছো?

ইচ্ছে আবারো তাকালো প্রাপ্তর দিকে। সে ছেলে এখনো সেই ভাবেই আছে,অপরাধবোধ নেই‌ তার। এদিকে দর্শকও অধৈর্য হয়ে পরছে। ইচ্ছে দ্রুত মাথা দুলিয়ে না বুঝালো। প্রাপ্তর ওপর রাগ নেই‌ ওর। মেয়েটা উৎফুল্লস্বরে বললো,

-তাই? তাহলে এই গিটারে গান গাও আজকে?

ইচ্ছে আগে দর্শকসমাজে চোখ বুলালো। সবাই কতো আগ্রহে অপেক্ষা করছে ওর গানের জন্য। প্রাপ্তর মুডি চেহারার জন্য,এদের সবার চাওয়াকে কেনো ফেলনা করে দেবে ও? ঠিক করলো,ওই বাকামুখোর দিকে ও আর তাকাবেই না! সুন্দর একটা হাসি উপহার দিলো ও মেয়েটাকে। তারপর প্রাপ্তর দেওয়া গিটারটা নিয়ে সুর তুলে গাইতে শুরু করলো,

“মুশকিলে পরে গেলো মনটা
পাঁচিলে চড়ে গেলো চাঁদ,
ছিলো নিজের কথা না ভেবে
হুম…খুশিগুলো দিয়েছিলো বাদ।
চুপিচুপি সে,খোলা আকাশে
আজ খেলতে যায়,জানি গান শোনায়
আঁকাবাকা পথ,ভাঙা মনোরথ
তবু গরিয়ে যায়,জানি পথ হারায়।
কিছু ঠিক কিছু ভুল,ছুয়ে সন্ধ্যে আঙুল
বলেছে বাড়ি ফিরে আয়…
কিছু দিন কিছু রাত,কাধে রেখেছে হাত
ডেকেছে বাড়ি ফিরে আয়…”

গান গাইতে গাইতে পুরো শ্রোতাজনতাকে দেখে নিলো ইচ্ছে। এইতো! ওর দেশ! ওর আপনজন! এসব ছেড়ে কি ভেবে ভিনদেশে পরে ছিলো ও? না চাইতেও গানের মাঝে গিটারে সুর দিতে দিতে হাতের ডানপাশে কয়েকবার তাকালো ও। মিষ্টিঘরের আরো কিছু বাচ্চাদেরও নিয়ে এসেছে প্রাপ্ত। ওরা হাতেতালি দিচ্ছে আর নাচছে। বোঝাই যাচ্ছে ইচ্ছের গান বেশ উপভোগ করছে ওরা। আর ওদের ঠিক পেছনে দাড়িয়ে প্যান্টের পকেটে দুহাত গুজে দাড়িয়ে মুগ্ধচোখে বাচ্চাগুলোকে আনন্দ করতে দেখছে প্রাপ্ত। ওর ঠোটেও হাসি। নজরকারা হাসি যাকে বলে। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই ইচ্ছের চোখ সে হাসিতে আটকালো। এবার ও প্রাপ্তর দিকে তাকিয়ে থেকে গাইলো,

“করপরতা টিকিটে আমি
উঠে পরেছি ঝুলন্ত ট্রেনে
নেমে পরেছি ঘুমের স্টেশনে,মন…
বেচে পরতে থাকার মানে
পাখিদের বাসারা জানে
ফিরে আসা তারই তো টানে,মন…
চোখেমুখে পরলে চাদর,
মাঝেমাঝে লাগছে ভালো
তোর আমার থেকে বেশি সেকথা জানে মন…
চুপচুপি সে…জানি পথ হারায়
কিছু ঠিক কিছু ভুল…বাড়ি ফিরে আয়! ”

গান শেষ হতেই আরো বেশি হুল্লোড়ে মেতে উঠলো বাচ্চাগুলো। স্টেজ থেকে প্রাপ্তর ঠোটের কোনের প্রসারিত হাসিটাও ঠিক চোখে পরলো ইচ্ছের। ছাইরঙা শার্টের গুটোনো হাতায় বলিষ্ঠদেহী মানুষটাকে ঘিরে চারপাশে অতীব স্নিগ্ধতা জুড়ে এসেছে যেনো। ইচ্ছে চোখ ফেরালো না। ওর কাছে আজ প্রথমবারের মতো কোনো পুরুষের হাসি আজ একটু বেশিই আকর্ষক। বেশিই অমায়িক! কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলোই না! তবে কেনো হচ্ছে এমন? অকারনে? নাকি অপ্রতিরোধ্য কারনে? কোনটা?
#প্রেমনোঙর_ফেলে
#লেখনীতে: মিথিলা মাশরেকা

১৪.

প্রাপ্তর দেওয়া নতুন গিটারটা সাথে না নিয়ে বাসায় ফিরলো ইচ্ছে। কনসার্ট শেষ করে ওখানে আসা মিষ্টিঘরের বাচ্চাগুলোর সাথে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়েছে ও। তখন প্রাপ্ত ছিলো না সেখানে। আড়চোখে ওকে কয়েকবার খুজেছে ইচ্ছে। মনেমনে রাগ হলো ওর প্রাপ্তর উপর। সরি বলাটাও জানে না ওই লোকটা। সরি বলে এভাবে গায়েব হয়ে গিয়ে আবারো প্রমান করে দিলো,মন থেকে সরি বলে নি ও। তাতে ওরই বা কি? একজনের বলা সরি মন থেকে বলা নাকি শুধুই ফর্মালিটি,ইয়ানাত নিক্কন কেনো তা নিয়ে বারবার ভাবতে যাবে? ওর দেওয়া গিটারটা ফেলে এসেছে। যদিও ইচ্ছে করছিলো না। অনেক খুজেছে মায়ের সেই পুরোনো ডিজাইনের গিটারটা। পায়নি। প্রাপ্তর গিটারটা দেখে,সময় অসময়ে অবয়বটাকে অন্তত মনে করতে পারতো!

ইচ্ছে বাসায় ঢুকলো হুইস্টলিং করতে করতে। নাফিজা বেগম যে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে ম্যাগাজিন পরছে সেটা টের পেলো ও। গিটারের কাটা তারটার কথা মনে পরে গেলো ইচ্ছের। কাধের ব্যাগেই সে গিটার। কোনোরকম হেয়ালি না করে সোজা নাফিজা বেগমের সামনে গিয়ে দাড়ালো ও। ম্যাগাজিনটা কেড়ে নিলো তার হাত থেকে। বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে চোখ তুলে তাকালেন নাফিজা বেগম। যেনো তিনি জানতেন,ইচ্ছের এই রুপটাই দেখতে হবে তাকে। স্বাভাবিক স্বরে বললেন,

-এসেই অভদ্রতা শুরু করে দিলে?

-আমি কোনোদিন তোমাকে ভদ্রতা দেখাইনি এস এম।

-হ্যাঁ! তাইতো আফসোস! তোমার বাবা এটা বুঝলো না কোনোদিনও। তার মেয়ে…

-তার মেয়ে কি,কেমন সেটা সে জানে এস এম। যাইহোক! তুমিও ভালোমতোই চেনো আমাকে। তারপরও বোকামো কেনো করো বলোতো?

নাফিজা বেগম ভ্রুকুচকে তাকালেন। ইচ্ছে তাচ্ছিল্যে হেসে বললো,

-তুমি জানো আমি আমার মিউজিক‌ নিয়ে কতোটা পসেসিভ। ইনস্ট্রুমেন্টগুলো আমার প্রান,এটাও জানো তুমি। ওগুলোর সাথে কখনো আপোষে যাইনি আমি। ওগুলোর একটুখানি এদিকওদিক হলেই ইচ্ছে পাগলামি করে। ঠিক সেভাবেই পাব্লিক প্লেসে সিন ক্রিয়েট করবো,এটা ভেবে তুমি আমার গিটারের তার কেটেছো দিয়েছো। রাইট?

-তোমাকে একটা সাজেশন দেই এস এম। আমাকে নিয়ে তোমার ধারনাটা বরং তুমি একটুখানি এডিট করে নাও। এখন সবার আগে আমার কাছে আমার ভিউয়ার্স। সবার আগে ওদের চাওয়া। ওরা আমাকে যেভাবে চাইবে,আমি সেভাবেই নিজেকে প্রেজেন্ট করতে পারবো। পারি। ইচ্ছে নিজেকে বদলে নিয়েছে এস এম। একের পর এক আঘাতগুলো এতো বেশি কঠোর ছিলো যে,এখন ওকে শত আঘাতেও আর ভাঙতে পারবে না তুমি। সো লেট ইট বি। ট্রাই করা বাদ দাও এখন।

কথা শেষ করে ইচ্ছে সিড়ি বেয়ে চলে আসছিলো। পেছন থেকে নাফিজা বেগম শক্তগলায় বললেন,

-তুমি তো নিজের সাথে নিজের লাইফকে বেশ ভালোভাবেই গুছিয়ে নিয়েছো ইচ্ছে। অনেক ভালো চাল চেলেছো। তোমার মাস্টারপ্লানে নওশাদের সবটায় তুমি,সিঙিং ক্যারিয়ারে এস্টাব্লিশড্ তুমি,হাজারহাজার ফ্যানফলোয়ার তোমার। আর তারসাথে,রাকীন শাফায়াতও!

ইচ্ছে থামলো। তবে পেছন ফিরলো না। নাফিজা বেগমের চোখে ওর জন্য একরাশ ক্ষোভ,রাগ আর ঘৃনা। ছলছল করছে তার চোখ। ইচ্ছেকে থামতে দেখে সে‌ আরেকপা এগিয়ে বললো,

-অস্বীকার করতে পারো ইচ্ছে? এ সবকিছু শুধু তোমার না,আরো কেউ‌ অংশীদার ছিলো এর। অস্বীকার করতে পারো? নওশাদের কাছ থেকে বাবার ভালোবাসা আরো একজনের পাওয়ার কথা ছিলো। অস্বীকার করতে পারো? আরেকজনের তোমার চেয়ে ভালো ক্যারিয়ার নিয়ে বাচার কথা ছিলো। অস্বীকার করতে পারো ইচ্ছে? রাকীন শাফায়াতের “হবু বউ” সমেত “বউ” নামটা তোমার জন্য না,অন্যকারো জন্য বরাদ্দ ছিলো। অস্বীকার করতে পারো? বলো ইচ্ছে? অস্বীকার করতে পারো তুমি?

চেচিয়ে বললেন নাফিজা বেগম। চোখভরা জল তার। তবু তার আগে টুপটাপ জল গরালো ইচ্ছের চোখ থেকে। সিড়ি শক্তমুঠো করে ধরলো ও। এই চোখের জল নামক দুর্বলতাকে কারো সামনে আসতে দেওয়া যাবে না। একটা শুকনো ঢোক গিলে বললো,

-খেয়া ফিরে আসবে এস এম।

-আসবে না! আসবে না খেয়া! কোনোদিনও আসবে না! তুমি ওর ফেরার কোনো পথ খোলাই রাখোনি ইচ্ছে! আমার মেয়েটার অভিমান কোনোদিনও ভাঙবে না! ফিরবে না ও!

নাফিজা বেগমের চিৎকারে টমি ছুটে এসে শোড়গোল শুরু করে দিলো। ইচ্ছে শান্তভাবে বললো,

-স্টপ ইট টমি।

টমি থামলো না। ওর মতো চেচিয়ে ভয় দেখাচ্ছে নাফিজা বেগমকে। নাফিজা বেগম ঘৃনাদৃষ্টি ছুড়ে চলে গেলেন ওখান থেকে। ইচ্ছে থমথমে পায়ে নিজের ঘরে চলে আসলো। টমিও আসলো ওর পেছন পেছন। কাধের ব্যাগটা মেঝেতে রেখে বিছানায় পিঠ ঠেকিয়ে মেঝেতেই বসে পরলো ইচ্ছে। চোখ থেকে অনবরত পানি পরছে ওর। ঘাড় ঘুরিয়ে আস্তেধীরে ব্যালকনির সামনের দেওয়ালে সেই ভাঙা গিটারের কাঠে লেখা মা শব্দটার দিকে তাকালো ও। অস্ফুটস্বরে বললো,

-আর কতোদিন এই এতোবড় দায় বয়ে বেরাবো মা? আর কতোদিন? তোমার মেয়েকে কেউই বুঝলো না যে! তুমি চলে যাবার পর খেয়াই তো আমার সব ছিলো মা। ওউ কেনো ছেড়ে চলে গেলো আমাকে বলতে পারো? এতোভাবে নিঃস্ব করে দিয়ে কেনো উপরওয়ালা আমাকে বাচিয়ে রাখলো মা? শুধু এই দায়ের বোঝা বয়ে বেরোনোর জন্য? কোনোদিনও কি শেষ হবার নয় এ যন্ত্রনা? এভাবেই বাচতে হবে আমাকে? এভাবেই?

কথাগুলো বলে ইচ্ছে হাটু জরিয়ে নিলো নিজের। হুহু করে কাদতে কাদতে বললো,

-ফিরে আয় খেয়া! প্লিজ ফিরে আয়! আর পারছি না আমি! আর পারছি না!

টমি আবারো চেচাতে শুরু করেছে। ইচ্ছের কান্না সহ্য হচ্ছে না ওর। ইচ্ছে বললো,

-কাম ডাউন টমি।

টমি চেচাচ্ছেই। এবার ওর চেচানোটা সহ্য হচ্ছে না ইচ্ছের। নিজেও সর্বোচ্চস্বরে বললো,

-স্টপ বার্কিং এন্ড গেট লস্ট টমি! এখান থেকে চলে যা প্লিজ! একা থাকতে চাই আমি! একা থাকতে দে আমাকে!

টমি গুটিয়ে গেলো। লেজ নেড়ে ইচ্ছের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করলো বারকয়েক। ইচ্ছে প্রতিক্রিয়া দেখালো না বলে কিছুক্ষন পর চুপচাপ বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।
অনেকটাসময় কান্নার পর হুশ ফিরলো ইচ্ছের। নিজেকে সামলাতে শাওয়ার নিলো ঘন্টাভর। তারপর ভেজা চুলগুলো ছেড়ে নিচে নেমে আসলো। মাথা ভারি হয়ে আছে একদম। নিচে ততোক্ষনে আবারো এসে বসেছেন নাফিজা বেগম। ইচ্ছে শক্ত রাখলো নিজেকে। একজন সার্ভবয়কে ডেকে দিয়ে বললো,

-কফি।

দুদন্ড পরই কফি হাজির। ইচ্ছে কফিমগে দুবার চুমুক দিয়ে একুরিয়ামের মাছগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো। হুট করেই কিছু একটা মনে পরে গেছে ওর। টমিকে ডাক লাগালো ইচ্ছে। কোনো সাড়া নেই। কয়েকবার ডাকার পর ইচ্ছে বাসার চারজন সার্ভবয়কে ডেকে বললো,

-টমি কোথায়?

ছেলেগুলো ভয়ভয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকালো। ইচ্ছে কিঞ্চিত উচ্চস্বরে বললো,

-কিছু জিজ্ঞাসা করলাম আমি!

-আ্ আমরা দেখিনি ম্যাম! ও তো আপনার সাথেই আপনার রুমে…

নাফিজা বেগম বললেন,

-যাক। একটা আপদ তো বিদেয় হলো।

একপলক তার দিকে তাকিয়ে তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে পরলো ইচ্ছে। এই প্রানীটাই আছে একমাত্র ওকে বোঝার মতো। বোঝে বলেই হয়তো অভিমান জানে। আগেও একবার ধমক দিয়েছিলো বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো টমি। ইচ্ছে তাড়াহুড়ো করে গাড়ি স্টার্ট দিলো। বুঝে উঠতে পারছে না ঠিক কোনদিকে যাবে ও। তবুও খুজতে তো হবেই। আপন মানুষগুলোর মতো এই প্রানীটাকেও হারিয়ে ফেলতে চায়না ও। রাস্তার জায়গায় জায়গায় গাড়ি ঠেকিয়ে টমির ছবি দেখিয়ে একে ওকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো দেখেছে কিনা। মাস্কের আড়ালে ওর চেহারাটা না দেখায় স্বাভাবিক ছিলো সবাই। কিন্তু স্বাভাবিক ছিলো না সে মানুষটা। হারানোর ভয়ে চারপাশ আবছা হয়ে আসছিলো তার।

নিজের বাইকটার উপর ভাব নিয়ে বসে থাকা প্রানীটিকে সরু চোখে দেখে চলেছে প্রাপ্ত। তার সাদা ধবধবে লোমশ শরীরটা অল্পের জন্য ছিন্নভিন্ন হওয়া থেকে বেচেছে। প্রাপ্তই‌ বাচিয়েছে। কিন্তু তাতে যেনো ও‌ সন্তুষ্ট না। ওর মতে, এই প্রানীটার চারপায়ের মিনিমাম ছয়জায়গায় ফ্র্যাকচার হওয়া উচিত ছিলো। তাহলে অনেকটা শান্তি পেতো প্রাপ্ত। কারন ওটা টমি। সেই কুকুরটা,যেটার জন্য দ্বিতল বাসার জানালার সেল্ফ থেকে পরে গিয়ে ব্যথা পেতে হয়েছিলো ওকে। আর আজ ওই কিনা এই কুকুরটাকে বাচালো। মাহীম অনেকক্ষন হলো টমির প্রতি প্রাপ্তর প্রতিক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। একসময় বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,

-আর কতোক্ষন খালি চোখেই এটাকে জুম ইন,জুম আউট করে করে পরখ করবি ভাই? বিলেতি কু’ত্তা তোর পছন্দ? আগে জানতাম না তো!

মাথায় চাটি পরলো মাহীমের। প্রাপ্তই মেরেছে। তবে তাকিয়ে আছে এখনো টমির দিকে। যেনো মারটা টমিকেই‌ লাগালো ও। কিন্তু টমি বেপাত্তায মনের সুখে নিজের গায়ে জিভ লাগিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছনের অভিযান চালাতে ব্যস্ত সে। মাহীম মাথায় হাত বুলিয়ে কাদোকাদোভাবে বললো,

-মারলি কেনো ভাই?

-এটাকে বাচালাম বলে আফসোস হচ্ছে।

-তাই বলে আমাকে মারবি? দে ওটাকে আবারো মেইনরোডে ছেড়ে দিয়ে আসি। দে!

মাহীম এগোচ্ছিলো টমির দিকে। প্রাপ্ত ওর বাইকে পকেটে দুহাত গুজে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ছিলো। আর ওদের সামনে টমি একা প্রাপ্তর বাইক জুড়ে বসে ছিলো। প্রাপ্ত মাহীমকে আবারো চাটি লাগালো মাথায়। মাহীম পেছন ফিরে খ্যাক শব্দে কেদে দিয়ে বললো,

-তুই কি চাস কি প্রাপ্ত?

-এটাকে পিসপিস করতে ইচ্ছে করছে।

-ইচ্ছের জিনিস নিয়ে ইচ্ছে করার রাইট তোমার নেই মিস্টার সাদমান ইনাব প্রাপ্ত।

ইচ্ছের গলা শুনে প্রাপ্ত ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকালো। সত্যিই বুকে হাত গুজে ওদের পাশে দাড়িয়ে আছে ইচ্ছে। গায়ে হালকা গোলাপি রঙের একটা কুর্তা,ল্যাগিংস্। ছাড়া চুলগুলো আধভেজা। কোনোরকম সাজগোজ ছাড়াই মোহনীয় এক রুপের সমাহার ওই উজ্জ্বল চেহারা। প্রাপ্তকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর সামনে তুড়ি বাজালো ইচ্ছে। টমির খোজে গাড়ি নিয়ে অনেকক্ষন ওভাবে ছুটছিলো ও। একসময় এক চেইকপোস্টের এক পুলিশকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে কারো গাড়ির সামনে পরতে গিয়ে কোনোমতে বেচে গেছে টমি। এক বাইকার নিয়ে গেছে টমিকে। সেদিক অনুসরন করেই এসেছে ইচ্ছে। এখানে এসে প্রাপ্তকে দেখবে,ধারনাতেও‌ ছিলো না ওর। প্রাপ্ত নিজেও এক আকাশ বিস্ময়ে আটকে আছে। মাহীম মোটামুটি ভয় পায় ইচ্ছের তীক্ষ্মদৃষ্টিকে। তাছাড়া প্রাপ্ত যেহেতু ইচ্ছেকে দেখতে পারে না,এখানে কিছু অঘটন ঘটবেই এমনটা ভেবে আস্তেধীরে কেটে পরলো ও। ইচ্ছে প্রাপ্তকে লক্ষ্য করে বললো,

-টমির প্রতি এতো রাগ কেনো তোমার মিস্টার গ্যাংস্টার?

প্রাপ্ত শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। কিছু বললো না। উত্তর না পেয়ে ইচ্ছে টমির দিকে তাকালো। টমি প্রাপ্তর বাইকে থাকা সেই গিটারটার উপরেই বসে। কি হলো,নিশব্দে হেসে দিলো ইচ্ছে। ওর শব্দহীন হাসিতে প্রাপ্তর আশেপাশে একদফা দমকা হাওয়া বয়ে গেলো যেনো। কি ভেবে তখনতখনই চোখ সরিয়ে নিলো ও ইচ্ছের দিক থেকে। হনহনিয়ে গিয়ে টমিকে নামিয়ে দিলো বাইক থেকে। ইচ্ছের কাছে ছুটে আসলো টমি। আর ইচ্ছে কপাল কুচকে তাকালো প্রাপ্তর দিকে। প্রাপ্ত বাইকে বসে বাইকটা স্টার্ট দিয়ে বললো,

-আমার রাগের কারন জানার না তোমার দরকার আছে,না অধিকার। মাইন্ড ইউর‌ ওন বিজনেস মিস রকস্টার।

প্রাপ্ত বাইক ছুটাবে,টমি একদম সামনে এসে দাড়িয়েছে ওর বাইকের। বাইকটা থামাতে বাধ্য হলো ও। ইচ্ছে মুচকি হেসে ওর‌ বাইকের ব্যাকসিট থেকে গিটারটা খুললো। ওটা নিজের কাধে ঝুলিয়ে বললো,

-সরি এক্সেপ্টেড।‌ এখন এটলিস্ট রাগ কমাও মিস্টার গ্যাংস্টার? আর হ্যাঁ! এতো রাগ পুষতে নেই। তোমার এই রাগে তোমাকে আর যেই‌ হোক,ইচ্ছে ভয় পায় না। মাইন্ড ইট! বাই।

ইচ্ছে গিটার কাধে নিয়ে টমিকে কোলে রেখে আদর করতে করতে চলে গেলো। স্তব্ধ হয়ে বাইকে বসে রইলো প্রাপ্ত। ও তো ইচ্ছেকে ইগ্নোর করতে চাইছিলো। আর এই‌ মেয়ে ওর সরি,গিটার নিয়ে রাগের উল্টো মানে বের করে গেলো? ইচ্ছের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে ওর জীবনের সবটা এভাবে উল্টে যাচ্ছে কেনো? এ কোন অসীমকরনে আটকে যাচ্ছে ও? এ কোন বাধন? কোন নোঙর?

#চলবে…
#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here