প্রেমময় আসক্তি❣️পর্ব ৮+৯

#প্রেমময়_আসক্তি ❣️
#পর্ব_৮
#নন্দিনী চৌধুরী

৮.
জানালার পাশে বসে আছে মুন। দৃষ্টি তার আকাশে ওঠা আজকের বড় গোল চাঁদটার দিকে।এই চাঁদের মতো সেও একা। ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পর বাবা আরেকটা বিয়ে করে সৎ মা ঘরে আনে। সেই সৎ মায়ের অত্যাচারেই বড় হয়েছে সে। একটা বড় ভাই ছিলো কিন্তু সেই বড় ভাই থাকা না থাকা সমান ছিলো। মুন যখন ক্লাস টেনে উঠে তখন ওর পড়াশুনার খরচ বহন ওর নিজেকে করতে হতো। ক্লাস টেন থেকেই নিজে নিজের পড়াশুনার খরচ বহন করছে। রোদেলার সাথে ওর পরিচয় স্কুল লাইফ থেকেই। দুজনে খুব ক্লোজ ছিলো। রোদেলাদের বাসায় প্রায় মুন যেতো। রোদেলার মা-বাবা মুনকে অনেক ভালোবাসতো। রোদেলার মা, মুনকে নিজের মেয়ের মতো আদর করতো। সে জানতো মুনের সৎ মা মুনকে কত অত্যাচার করে। মুন এভাবেই রোদেলাদের বাসায় আসা যাওয়া করতে করতে রাফসানকে দেখতে সেই দশম শ্রেণীতে পড়া কিশোরীর মনে জায়গা করে নিয়েছিলো রাফসান নামক যুবকটি। মুন প্রথমে তার এই অনুভূতিগুলো অতো পাত্তা দিতোনা। কিন্তু সময় যত যেতে লাগলো তার অনুভূতি গুলো খুব বেশি প্রখর হতে লাগলো।
কিন্তু সে তার মনের কথাগুলো কোনোদিন রাফসানকে বলেনি, ভয় হতো যদি রাফসান তাকে ভুল বুঝে। তাই সে তার মনের কথা আজও বলেনি রাফসানকে। এই না বলার কারনেই আজ তার রাফসান তার থেকে দূরে চলে গেলো। আজ তার রাফসান অন্য কারো হয়ে যাবে। অন্য কারো স্বামী হয়ে যাবে। অন্য কেউ রাফসানকের নিজের বলে দাবী করবে। এই কথাগুলো ভাবতেই মুনের চোখ জোড়া আবার পানিতে ভোরে এলো। আসলে সেতো রাফসানকে ছাড়া থাকতে পারবেনা। ভাগ্য এতো নিষ্ঠুর কেন। কেন তার সাথেই এমন হয়। মুন চোখের কোণে পানি মুছে নিলো। এই কান্না কাকে দেখাবে সে? কেউ নেই দেখানোর মতো!
মন চোখ বুঝে শুয়ে পড়ে। মুনের পাশে থাকা রোদেলা এতক্ষন দেখছিলো মুনকে ঘুমের নাটক করে। রোদেলার নিজেরও অনেক কষ্ট হচ্ছে, সেতো জানে মুন কতটা ভালোবাসে রাফসানকে! রোদেলা মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে রাফসান আসলে তাকে সে জানাবে, মুনের কথা।আর এখন সবার আগে তাকে তার মাকে জানাতে হবে। মা যদি পারে তার বাবাকে জানাতে তাহলে এই বিয়েটা হবেনা।

সকালে,,,,,

কাউসার আর ওর বন্ধুরা বসে আছে ক্লাসে। আড্ডা দিচ্ছে ক্লাসে বসে ওরা। তখন ওর বন্ধু জুনায়েদ ওকে বললো,

জুনায়েদ: কিরে মামা তুই বলে নিশির লোগে প্রেম করতাছোস? আর আমাগো জানাইলিনা।
কাউসার: মানে নিশির সাথে কিসের প্রেম করতেছি আমি?
জুনায়েদ: ওমা নিশি দেখি পুরা কলেজ ঘোষনা দিতাছে তুই ওর বয়ফ্রেন্ড আর ও তোর গার্লফ্রেন্ড। আর তুই বলতাছোস কিসের প্রেম!
কাউসার: কি? নিশি সবাইকে এগুলা বলে বেড়াচ্ছে?
জুনায়েদ: হ্যাঁ।

ওদের কথার মাঝে নিশি আর ওর বান্ধুবিরা ক্লাসে আসলো। কাউসার নিশিকে দেখে রেগে ওর কাছে গেলো।নিশি কাউসারকে দেখে খুশি হলো কিন্তু কাউসার নিশিকে একটা থাপ্পড় মারলো সবার সামনে আর চিৎকার করে বললো,

কাউসার: ইউ স্টুপিড গার্ল! তোমার সাহস হয় কিভাবে পুরো ক্যাম্পাসে মিথ্যা বলার? যে আমি আর তুমি বয়ফ্রেন্ড ও গার্লফ্রেন্ড! তোমার মতো ফালতু মেয়েকে আমি কাউসার নিজের বাসার কাজের মেয়েও মনে করিনা আর তুমি সবাইকে বলতেছো আমি আর তুমি প্রেমিক ও প্রেমিকা! লাইক সিরিয়াসলি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখো নাকি? লিসেন এরপর এরকম করলে একদম সোজা প্রিন্সিপালের কাছে তোমার নামে রিপোর্ট করবো। আর এই মেডিকেল কলেজ থেকে তোমাকে টাটা বাই বাই করে দেবো। মাইন্ড ইট।

আশেপাশের সবাই মুখ টিপে হাসছে নিশিকে দেখে। কলেজের সব থেকে অহংকারী আর বিশ্রি কেরেক্টারের মেয়েকে কাউসার এভাবে অপমান করবে কেউ ভাবতে পারেনি। নিশি অপমানে লজ্জায় দৌড়ে চলে যায় ক্লাস থেকে।

ক্যান্টিনে বসে আছে কাশফিয়া। রোদেলা আর রুবা গেছে খাবার আনতে। মুন আজকে আসেনি। ওর নাকি ভালোলাগছেনা তাই আসবেনা। কাশফিয়া বসে ছিলো তখন নজর গেলো সামনের টেবিলে এসে বসা কাউসারের দিকে। কাউসার রেগে ক্যান্টিনে চলে আসছে জুনায়েদ আর সায়েমকে নিয়ে।

জুনায়েদ: একদম ঠিক করছিস, এই নিশি এতো বেড়ে গেছে ভাবনার বাহিরে।
কাউসার: ওর মতো ফালতু মেয়েকে আমি পাত্তা দেইনা আর ও আমাকে ওর বয়ফ্রেন্ড বানায়।

কাশফিয়া আর কাউসার একদম বরাবর বসা।কাউসার কথা বলার মাঝে কাশফিয়াকে দেখলো। কাশফিয়া মাথা নিচু করে বসে আছে। কাউসার জিনিশটা খেয়াল করেছে। রোদেলা আর রুবা খাবার নিয়ে আসতেই কাশফিয়া ওদের বললো,

কাশফিয়া: দোস্ত চল, এখানে খাবোনা। ক্লাসে যেয়ে খাই।
রুবা: কেন তুইতো বললি তুই এখানে খাবি।
কাশফিয়া: বলছিলাম কিন্তু এখন খাবোনা। চল না চল প্লিজ।
রোদেলা: আচ্ছা চল।

কাশফিয়া কাউসারকে এপ প্রকার এড়িয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেলো। কাউসার জিনিশটা বুজতে পারলো।

কাউসার: মেয়েটা আমাকে এভাবে এড়িয়ে গেলো কেনো। অন্য সময়তো আমার দিক থেকে নজরই সরায় না আজকে কি হলো?

ক্লাস শেষে রোদেলারা হোস্টেলে চলে আসলো। রাফসান কল দিয়েছিলো আর কিছুক্ষনের মাঝে সে পৌছে যাবে। ওদের রেডি থাকতে বলেছে। মুন প্রথমে রাজী হচ্ছিলোনা কিন্তু রোদেলার জেদের কাছে হার মানতে হয় ওকে। কিছু সময়ের মাঝে রাফসান চলে আসে রোদেলাদের হোস্টেলে।

রাফসান: রেডি তোরা?
রোদেলা: হ্যাঁ, আমরা রেডি।
রাফসান: তাহলে চল যাওয়া যাক।

তারপর রাফসান রোদেলাদের নিয়ে ওর নিউ ফ্লাটে আসলো।:যেটা রোদেলাদের কলেজের উল্টো সাইডে। রাফসান অনেকটা পথ জার্নি করে আসায় ক্লান্ত থাকায় শাওয়ার নিতে যায়। রাফসান বাহিরে থেকে খাবার নিয়ে এসেছে। মুন এখনো রাফসানের সামনে তেমন যায়নি। আড়ালে আড়ালে থাকছে। রাফসান ফ্রেশ হয়ে এসে সবাইকে নিয়ে খেতে বসলো। এই পুরো ফ্লাটে চারটা রুম আছে। একটা রুম রাফসানের, আরেকটায় রোদেলা আর মুন থাকবে। একটায় কাশু আর রুবা থাকবে, অন্যটা ড্রইং রুম। খাওয়া শেষে রাফসান নিজের রুমে চলে আসলো। রোদেলা আর মুন সব গুছিয়ে ওদের রুমে আসলো। রোদেলা ফোন হাতে নিয়ে ওর মাকে কল দিলো।

রোদেলা: আসসালামু আলাইকুম আম্মু।
রোদেলা মা: ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছিস মা?
রোদেলা: ভালো আম্মু। তুমি কেমন আছো?
রোদেলার মা: আমিও আলহামদুলিল্লাহ। তোর ভাইয়ার সাথে না তুই?
রোদেলা: হ্যা ভাইয়ার সাথে ফ্লাটে আসছি।
রোদেলার মা: মুন,রুবা,কাশু কেমন আছে?
রোদেলা: আলহামদুলিল্লাহ। আচ্ছা মা তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো!
রোদেলার মা: বল মা কি কথা।
রোদেলা: মা, তোমরা ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করছো অথচ আমাকে জানালাও না!
রোদেলার মা: তোর বাবাই হুট করে রাফসানের বিয়ে দিতে চাচ্ছিলো আর রাফসানের বিয়ের বয়স তো হয়েছে তাই আরকি। তোর ভাই তোকে মেয়ের ছবি দেখায়নি এখনো।
রোদেলা: দেখাবে বলছে। ভাইয়া এখন ঘুমাচ্ছে কিন্তু মা তুমি কি ভাইয়াকে জিজ্ঞেশ করছিলা তার কোনো পছন্দ আছে কিনা?
রোদেলার মা: হ্যাঁ, করেছিলামতো। ও বলেছে ওর কোনো পছন্দ নেই। তাইতো তোর বাবা তার বন্ধুর মেয়ে রিয়ার সাথে ওর বিয়ে ঠিক করেছে। আর তোর ভাইয়েরও রিয়াকে পছন্দ হয়েছে। রিয়াও তো ঢাকা যাচ্ছে।
রোদেলা: রিয়া ঢাকা আসছে।
রোদেলার মা: হ্যাঁ, যাচ্ছে শুনলাম এই শনিবার।
রোদেলা: ওহ আচ্ছা। আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে থেকো বাবার খেয়াল রেখো। আমি আবার রাতে কল দিবো।
রোদেলার মা: আচ্ছা ঠিক আছে।

রোদেলা ফোন কেটে ভাবতে লাগলো।

রোদেলা: বাবাকে বলে লাভ হবেনা। বাবার বন্ধুর মেয়ে যেহুতু বাবা বিয়ে ভাঙ্গবেনা। আমাকে রিয়ার সাথে কথা বলতে হবে। ওকে বলতে হবে। আর তার আগে ভাইয়াকে আমাকে জানাতে হবে।

রোদেলা ফোন রেখে বারান্দায় চলে গেলো মুনের কাছে।

এদিকে,,,,,,,,

আদ্রিয়ানের সামনে সায়মন দাঁড়ানো। আদ্রিয়ান আজকে কোভরা গ্যাংএর আরেকজনকে মেরেছে। অবশ্য ওরাই আগে আদ্রিয়ানের দিকে হাত বাড়িয়েছিলো। আদ্রিয়ান কাজ শেষ করে গাড়িতে গিয়ে বসলো। ল্যাপটপ অন করতেই রোদেলা আর মুনকে এক সাথে গল্প করতে দেখতে পেলো। আদ্রিয়ান রোদেলার বাসায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছে। আদ্রিয়ান জানতো রাফসান আসবে ওদের নিউ ফ্লাটে তাই আদ্রিয়ান আগেই সব ফিট করে এসেছে ওই ফ্লাটে।

আদ্রিয়ান বিড়বিড় করে বলছে,

“বিড়ালের বাচ্চা আমার। একদম বিড়ালের মতো। সারাদিন টইটই করে আর এদিকে কেউ তার জন্য হাহাকার করে সেটা বুজেনা।”

“এই প্রেমের উত্তপ্ত নেশা আমাকে দিন দিন পাগল বানিয়ে দিচ্ছে। না পারছি তোমাকে কাছে আনতে আর না পারছি ছেড়ে থাকতে। তোমার নেশায় নিজেকে গুম করে ফেলতে ইচ্ছা করে নেশামই। আসক্তি আমি তোমাতে।”

আরাভ আজকে ডিউটি শেষ করে বাসায় যাচ্ছে। যাওয়ার সময় জুঁইয়ের জন্য কিছু জিনিশ কিনে নিলো। আরাভ আজকাল একটু মিস করছে রুবাকে। লাস্ট সেই হাসপাতালে দেখা হয়েছিলো তার সাথে। আরাভ মনে মনে বলছে,

মিস চেইন খুলা আপনার সাথে আবার কবে দেখা হবে কে জানে! ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়িই দেখা হবে।
#প্রেমময়_আসক্তি❣️
#পর্ব_৯
#নন্দিনী_চৌধুরী

৯.
সকালে মুন রান্না ঘরে রান্না করতে এসেছে। আজকে তার খুব ইচ্ছে করছে রাফসানের জন্য কিছু রান্না করতে। মানুষটার সামনে তেমন একটা যাচ্ছেনা সে কিন্তু তাই বলে কি রান্না করা যায়না! মুন রাফসানের জন্য আলু পরাটা আলুর দম রান্না করছে। মুন জানে এগুলো রাফসানের খুব পছন্দের খাবার। মুন আলু কাঁটতে কাঁটতে হঠ্যাৎ বেখেয়ালে তার আংগুল চাকু চালিয়ে দেয়। সাথে সাথে মুন চিৎকার দিয়ে উঠে,

মুন: আহ্!

রাফসান সেই সময় কিচেনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। রাফসানের রুমের আগে কিচেন। রাফসান উঠে বাহিরে গেছিলো। এখন বাসায় এসে রুমে যেতে নিলে মুনের আওয়াজ পেলো। রাফসান রান্না ঘরে এসে দেখে মুনের হাত থেকে রক্ত পরছে।।রাফসান ধমক দিলো মুনকে।

রাফসান: স্টুপিড মেয়ে রান্না ঘরে কি করতে আসছো তুমি?

বলেই রাফসান মুনের আংগুলটা নিজের মুখে নিয়ে নিলো। রক্ত গুলো সে শুষে নিচ্ছে। আর মুন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রাফসান এক খেয়ালে শুষে নিচ্ছে ওর রক্ত গুলো। শুষে নেওয়া শেষ হলে রাফসান মুনের আংগুল ছেড়ে দিয়ে ওর পকেট থেকে রুমাল বের করে পেঁচিয়ে দিলো আর বললো,

রাফসান: আর কোনোদিন রান্না ঘরে আসার দরকার নেই। আজকে থেকে বাসায় মেইড আসবে। সেই সব কাজ করবে। এখন নিজের রুমে যাও আর কাঁটা যায়গায় একটা মলম লাগাও।

বলেই রাফসান নিজের রুমে চলে গেলো। আর মুনের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাঁসি ফুঁটে উঠলো।

মুন তাও সেই কাঁটা হাত দিয়েই রান্না করলো। রান্না শেষ করে রাফসানের রুমে উকি দিয়ে দেখলো রাফসান রুমে নেই শাওয়ারের শব্দ আসছে মানে রাফসান শাওয়ার নিচ্ছে। মুন আর কিছুনা করে ওর রুমে চলে আসলো। রোদেলা রুমে রেডি হচ্ছে। মুনকে দেখে রোদেলা বললো,

রোদেলা: কিরে সকাল সকাল কই ছিলি? আমি তো তোকে উঠে দেখলাম না।
মুন: রান্না করছিলাম সবার জন্য।
রোদেলা: ওহ আচ্ছা, তাহলে রেডি হয়ে নে।

মুন আলমারি থেকে জামা নিয়ে রেডি হতে গেলো। রেডি হয়ে হাতে কিছু দিলোনা শুধু রুমালটাই রাখলো। রেডি হয়ে ৫জনেই খাবার টেবিলে আসলো। রাফসান খাবার টেবিলে আলু পরাটা আলুরদম দেখে অবাক হলো। পরে বুজতে পারলো এটা মুনের কাজ। রোদেলাও এই ডিস দেখে অবাক হয়েছিলো। কিন্তু সেও বুজতে পেরেছে জিনিশটা। খাবার খেয়ে রাফসান ওদের কলেজে দিয়ে অফিসে চলে গেলো। রোদেলাদের আজকে প্রেক্টিকাল আছে ল্যাবে আছে সবাই। আজকে ওদের মরা দেহো কেঁটে দেখানো হবে। স্যার ক্লাসে এসে ওদের কেঁটে দেখাচ্ছে আর কাশফিয়া এগুলো নিতে না পেরে বমি শুরু করে দেয়। স্যার ওকে রিলেক্স করতে বাহিরে পাঠায়। কাশফিয়া বাহিরে এসে বমি করে দুইবার। তখন পাশ থেকে কেউ একজন ওকে একটা পানির বোতল এগিয়ে দেয়। কাশফিয়া লোকটাকে না দেখে পানির বোতল হাতে নিয়ে পানি খেয়ে নিলো। পানি খেয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে কাউসার দাঁড়ানো। কাউসারকে দেখে কাশফিয়া মাথা নিচু করে বলে,

কাশফিয়া: সরি ভাইয়া বুজতে পারিনি আপনি। প্লিজ রাগ করবেন না। আমি বুজতে পারিনি।

কাশফিয়া কথা টুকু বলে চলে যেতে নিলো কাউসার ওকে একটান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। কাউসারের গরম নিশ্বাস কাশফিয়ার মুখের উপর পরছে। কাশফিয়া ভয়ে একদম শক্ত হয়ে গেছে। কাউসার কাশফিয়ার চোখের দিকে চোখ রেখে বলে,

কাউসার: I Love You.

কাউসারের মুখ থেকে এই কথাটা শুনে একদম বরফ হয়ে গেলো কাশফিয়া। সব কেমন এলোমেলো লাগছে তার। কাশফিয়া কাঁপাকাঁপা গলায় বলে,

কাশফিয়া: ককি বলছেন এসব!
কাউসার: Yes I Love You Mis kashfiya.

কাউসারের কথা শুনে কাশফিয়া কি বলবে বুজে উঠতে পারছেনা। কাশফিয়া আবার বললো,

কাশফিয়া: আপনি এগুলো কি বলছেন। নিশি আপু শুনলে আমাকে আবার বকা দেবে। প্লিজ আমাকে ছাড়ুন।

কাউসার কাশফিয়াকে ছেড়ে দিলো। আর কাশফিয়া এক ছুঁটে ল্যাবে চলে গেলো।

ল্যাবে ক্লাস শেষ করে রোদেলারা বাকি দুটো ক্লাস করে বাসায় যাওয়ার জন্য বের হলো।

রোদেলা: এই শুন তোরা যা আমি আসছি আমি অই সামনের লাইব্রেরী থেকে দুইটা বই নেবো। তারপর আসছি।

মুন: আমরাও যাই সাথে তুই একা যাবি কেন!
রুবা: হ্যা আমরাও যাই।
রোদেলা: লাগবেনা তোরা যা আজকে নিউ মেড আসবে, এসে বাসায় কাউকে না পেলে সমস্যা হবে। আর বেশি সময় লাগবেনা তোরা যা আমি ১০মিনিটে আসছি।
মুন: পাক্কা?
রোদেলা: হ্যা মেরি মা পাক্কা।
কাশু: আমরা তাহলে যাচ্ছি তুই ১০মিনিটে আসবি।
রোদেলা: হ্যা ওকে।

রোদেলা লাইব্রেরীর দিকে যায়। আর বাকিরা বাসার দিকে।

রাফসানের সামনের বসে আছে আদ্রিয়ান। রাফসানের কম্পানির সাথে ডিল করতে এসেছে ও। রাফসান ও এই ডিলে অনেক খুশি। আদ্রিয়ানের মতো লোকের সাথে কাজ করতে পারবে এটার জন্য।

রাফসান আদ্রিয়ান কথা বলছে এর মাঝে রাফসানের ফোনে কল আসলো।

রাফসান ফোন রিসিভ করতেই মুন বললো,

মুন:রাফসান ভাইয়া রোদেলাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। রোদেলা আমাদের সাথে কলেজ থেকে বেরিয়ে লাইব্রেরী গেছিলো বই আনতে। বলেছিলো ১০মিনিটে আসবে। সেখানে এখন পুরো ২ঘন্টা হয়েছে ও বাসায় ফেরেনি।

মুনের কথা শুনে রাফসান বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো আর বললো,

রাফসান: কিহ!!এখনো বাসায় ফেরেনি। তোমরা আশে পাশে দেখছো?
মুন: রুবা কাশু দুইজনে গেছে কিন্তু কোনো খোঁজ পায়নি।

রাফসানঃ ওকে আমি আসছি এখোনি।

রাফসান ফোন রেখে আদ্রিয়ানকে বলে,

রাফসানঃ সরি স্যার। কিন্তু আনার বোনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।আমাকে এখন যেতে হবে।

রাফসানের কথা শুনে আদ্রিয়ান বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। আদ্রিয়ান এখন রাফসানের সামনে কিছু বলতে পারছেনা শুধু এই টুকু বলছে,

আদ্রিয়ানঃওকে আপনি আসতে পারেন।

রাফসান চলে যেতেই আদ্রিয়ান সায়মনকে কল করে।সায়ম কল ধরতেই আদ্রিয়ান চিৎকার দিয়ে বলে,

আদ্রিয়ানঃ রোদেলা ২ঘন্টা ধরে মিসিং আর আমাকে তোমরা জানাও নি কেন? Why Anewer me?
সায়মনঃ স্যার আমরা আপনাকে কল দিয়েছিলাম আপনি কল ধরেননি। আমি জনকে কল দিছিলাম কিন্তু আপনি মিটিং থাকায় ও আপনাকে বলতে পারেনি। আমরা রোদেলা ম্যামকে খুঁজেতেছি স্যার।
আদ্রিয়ানঃ আমি কিছু জানিনা।বিকেলের মধ্য আমি রোদেলাকে ওর বাসায় দেখতে চাই।
সায়মনঃ জ্বি স্যার।

রাতে,,,,,
রাত হয়ে এসেছে কিন্তু রোদেলার কোনো খোঁজ এখোনো মেলেনি।আদ্রিয়ানের সকল লোক রোদেলাকে খুঁজে যাচ্ছে কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেনা।রাফসান পাগলের মতো বোনকে খুঁজে চলেছে। সেও খুঁজে পায়নি রোদেলাকে।

আদ্রিয়ান মদের গ্লাস হাতে নিয়ে বসে আছে। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে তার।
চাপ দিতেই গ্লাসটা টুকরা টুকরা হয়ে গেলো। আর আদ্রিয়ানের হাত থেকে ছিটকে রক্ত পরা শুরু করলো।

আদ্রিয়ানঃকোথায় হারিয়ে গেলে তুমি নেশামই। আমাকে একা করে আবার কোথায় চলে গেলে। আমাকে কষ্ট দিতে অনেক মজা লাগে তাইনা। নেশামই ফিরে আসোনা প্লিজ। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছিনাতো।

আদ্রিয়ানের হাত থেকে রক্ত পরছে কিন্তু ওর তাতে কোনো খেয়াল নেই।

একটা বন্ধ রুমে আটকে আছে রোদেলা। হাত পা বাধা অবস্থায় পরে আছে সে। মুখে লাল দাগ। হয়তো কেউ থাপ্পর মেরেছে অনেকগুলা। রোদেলার সামনে দাঁড়ানো লিজা। লিজার মুখের হাঁসি।

লিজাঃ তোর এতো বড় সাহস তুই আমার আদ্রিয়ানকে কেড়ে নিবি আমার থেকে আর আমি সেটা হতে দেবো? এটা তুই ভাবলি কেমন করে? তোর জন্য আমাকে আদ্রিয়ান ভালোবাসেনা। আমার আদ্রিয়ান আমাকে অপমান করে তোর জন্য। এখন আমি তোকে এই দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দেবো। তারপর আদ্রিয়ান আমার হয়ে যাবে। তুই থাকলে আদ্রিয়ান কোনোদিন আমার হবেনা। তোকে আমি কিছুতেই বাঁচিয়ে রাখবোনা।

লিজা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো কথাগুলো বলে।

সকাল হয়ে গেছে,,,,
রাফসানরা কেউ কাল রাতে ঘুমাতে পারেনি, রোদেলার চিন্তায় সবাই চুপ হয়ে আছে। মেয়েটার সাথে এমন কেন হচ্ছে বুজতে পারছেনা তারা। রাফসান বোনের জন্য একদম বেকুল হয়ে গেছে।

আদ্রিয়ান নিজের অফিসের কেবিনে বসা। সব জায়গা খোঁজা হয়েছে। কোভরা গ্যাং এর কেউ এর সাথে জরিতো নেই। তাহলে কে রোদেলাকে গায়েব করলো বুজতে পারছেনা আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান এসব ভাবছে তখন সায়মন ওর রুমে আসলো হাঁপাতে হাঁপাতে।সায়মন রুমে এসে বললো,

“স্যার রোদেলা ম্যাম এর খোঁজ পাওয়া গেছে।”

#চলবে
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here