প্রেমময় প্রহর পর্ব ১০

#প্রেমময় প্রহর (deewana 2)
Urme prema (sajiana monir)
পর্ব :১০

সায়রা আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের নখ দিয়ে নিজের মুখ গাল সব পাগলের খামচাচ্ছে যেন চামড়া টেনে ছিড়ে ফেলবে ।চুল গুলো অগোছালো হয়ে আছে সায়রা যেন নিজের মধ্যে নিজে নেই জোরে জোরে চিৎকার করছে কাদঁছে ।
আরসাল এসব দেখে স্থব্দ হয়ে যায় সায়রার এই অসয্য যন্ত্রনা কষ্ট তা সয্য হচ্ছে মুহূর্তই তার শরীরের রক্তশূন্য হয়ে যায় হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায় ।
হঠাৎই সায়রা ফল কাটার ছুড়ি হাতে নিয়ে নিজের গলার কাছে আঘাত করতে নিয়ে যেতে লাগে ঠি ক এমন সময়ই আরসাল দৌড় দিয়ে এসে সায়রার হাত থেকে ছুড়ি টান মারে সায়রা আরসালের কাছে এসে তার বুকে আঘাত করতে করতে কান্না করে বলে
-“কেন আমাকে থামাচ্ছেন !
আমি চাইনা ঐ জানোয়ারের কোন স্পর্শ আমার শরীরে থাকুক ।ঐ জানোয়ার আমার যে‌ই যেই জায়গায় স্পর্শ করেছে ঐ চামড়া আমি কেটে চেনে ছিলে ফেলবো !”
সায়রা আবার ডুকরিয়ে কান্না করতে করতে বলে
-“ঐ জানোয়ার আমার সব শেষ করে দিয়েছে !
ঐ জানোয়ারে অপবিত্র স্পর্শ আমাকে অপবিত্র করে দিয়েছে ।
নিশ্বাস ফেলতেও ঘৃনা হচ্ছে প্রত্যেকটা নিশ্বাস যেন আমাকে মনে করিয়ে দেয় ঐ জানোয়ারের কথা ।
আমি বাচঁতে চাইনা ।নিজেকে শেষ করে দিলেই হয়তো এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাবো ।
প্লিজ আমাকে মরতে দিন না হয় মেরে ফেলুন ।
আমি বাচঁতে চাইনা !”
এসব বলতে বলতে আরসালের পা জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না করতে লাগে তার ভিতরের যন্ত্রনা গুলো কষ্ট গুলো এই অশ্রুর সাথে বেরিয়ে আসছে ।
সায়রা যন্ত্রনা গুলো কষ্ট গুলো আরসালকে দূর্বল করে দিচ্ছে সায়রার প্রত্যেকটা অশ্রু আরসালকে কাপিঁয়ে দিচ্ছে ভিতরে ভিতরে তাকে চুর্ন বিচুর্ন করে দিচ্ছে ।আরসাল ধপ করে সায়রার পায়ের কাছে বসে পড়ে সায়রাকে টেনে নিজের বুকের কাছে নিয়ে নেয় সায়রা বেশ কয়েকবার আরসাল কে বাধাঁ দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু আরসাল তাকে জোর করে নিজের বুকের মাঝে মিশিয়ে নেয় !
আরসাল সায়রাকে বুকের মধ্যে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলে
-“তুমি এখনো ততটাই পবিত্র আগে যতটা ছিলো !
ঐ শু** বাচ্চার স্পর্শ তোমাকে একটুও অপবিত্র করতে পারেনি কার ওর অপবিত্র স্পর্শ থেকে তোমার পবিত্র স্পর্শের অনেক বেশি শক্তি !”
সায়রা আরসালের কথা গুলো শুনে আর নিজের ভিতরের কষ্টগুলো ধরে রাখতে পারলো না আগের চেয়ে বেশ জোরে কান্না করতে লাগে যতটা শব্দ করে কান্না করলে নিজের বুকের কষ্ট গুলো কমবে ।
আরসাল ও আর থামায় না শুধু নিজের বুকে জরিয়ে ধরে রাখে যাতে মন একটু হালকা হয় ।
একসময় বুকে মাথা রেখে আগের মতই করে বলে
-“আমার যে নিজের শরীর কে খুব ঘৃনা হয় আরসাল
মনে হচ্ছে ঐ কুকুরের স্পর্শ আমার শরীরে লেগে আছে ।
আমি এভাবে পারবোনা বাচতেঁ এর চেয়ে মরন অনেক বেশি শান্তির ।”
আরসাল সায়রার এই কথার কোন উত্তর দেয়না সায়রাকে কলে করে ওয়াশরুমের দিকে নিয়ে যায় ।ওয়াশরুমে সায়রা নামিয়ে দেয় শাওয়ার অন করে দেয় ।শাওয়ারের পানিতে দুজন ভিজে যাচ্ছে সায়রা নিচের দিকে মাথা নত করে আছে আরসাল তার পলকহীন দৃষ্টি দিয়ে সায়রাকে দেখছে ।সায়রা শরীরের কাপড় ভিজে যাওয়ায় সায়রা বেশ আনকম্ফর্টেবল ফিল করছে বার বার শরীর ঢাকার চেষ্টা করছে আরসাল তা বুঝতে পেরে সায়রাকে নিজের বুকের মাঝে সায়রা কে চেনে নেয় সায়রা চুপটি করে আগের মতই মাথা নিচ দিকে দিয়ে রেখেছে ।আরসাল সায়রা ঘাড়ে খামচির জায়গায় নিজের ঠোঁট ছুয়িয়ে বেশ সময় নিয়ে শক্ত করে চুমু দেয় তাতে যেন সায়রা কেপেঁ উঠে আরসাল চুমু দিয়ে সেখানেই ঠোঁট স্পর্শ করে ফিসফিসিয়ে বলে
-“তার প্রতিটি অপবিত্র স্পর্শ আমি পবিত্র করে দিবো !
এই স্পর্শে কোন ঘৃনা থাকবেনা শুধুই থাকবে ভালোবাসা ।”
বলেই আস্তে আস্তে আরসাল সায়রা মুখ গলা ঘাড়ে নিজের ভালোবাসার পবিত্র স্পর্শ দিতে লাগে ।সায়রা আরসালের প্রতিটি স্পর্শে কেপেঁ উঠছে ।আরসালের এই স্পর্শগুলোতে এক অদ্ভুদ শক্তি আছে যা আস্তে আস্তে সায়রার সব কষ্টগুলো যন্ত্রনা গুলো ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে মনটাকে হালকা করছে ।সায়রা যেন কোন ঘোরে চলে যাচ্ছে ।আর তা আরসালেরই মায়া আর প্রেমঘোর !

অন্ধকার রুমে রিদ্ধি বালিশের উপর মাথা রেখে নিজের চোখের জল ফেলছে পাশেই আদি ঘুমিয়ে আছে ।আজ যেন বছর পুরোনো সেই ঘাঁ নতুন করে জেগে উঠেছে ।আজ আবার আগের সেই ভয়ংকর স্মৃতি গুলো চোখে ভেসে উঠছে আর চোখজোড়া বার বার অশ্রুতে ভরে যাচ্ছে ।
তার মনে বার বার সেই একই প্রশ্ন জেগে উঠছে ।
তবে কি এত বছরে সায়নের মনে তিল জায়গাও সে করতে পারেনি ?
আজ ও কি সায়ন তার প্রথম প্রেমিকাকেই ভালোবাসে !
এমন হাজার ও প্রশ্ন জাগছে তার মনে ।

অন্যদিকে সায়ন ড্রিংক্স করে পুরো টাল হয়ে গাড়ি চালাচ্ছে তার মাথায় যেন রাগ জিদ চেপে বসেছে ।অনেক সময়ই মানুষ নেশা আর জেদের বসে অন্ধ হয়ে যায় কোন ন্যায় আর কোনটা অন্যায় তা ভুলে যায় ।
হঠাৎ সায়নের মোবাইলে ফোন আসে সায়ন ড্রাইভ করতে করতে তা রিসিভ করে চুপ হয়ে থাকে ওপর পাশ থেকে এক মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসে ।অপর পাশের মানুষটা বেশ মিষ্টি করে বলে উঠে
-“তুমি কোথায় ?
আমি পৌছিয়ে গেছি তোমার আসতে কত সময় লাগবে ”
সায়ন শীতল কন্ঠে উত্তর দেয়
-“আমি আসছি !”
বলেই সায়ন ফোন রেখে দেয় ।অপর পাশের মেয়েটার চেহারায় এক ভয়ংকর পৌশাচীক হাসি ফুটে উঠে ।
এদিকে সায়ন এক পুরোতন বাড়ির সামনে থামে গাড়ি থেকে নামতেই কার বুক ধুকধুক করছে আজ কত বছর পর এই বাড়ির সামনে সে কোথাও ভয় কাজ করছে রিদ্ধিকে সে ধোকা দিচ্ছেনা তো !
পরবর্তিতে রিদ্ধির বলা কথা গুলোর কথা মনে পড়তেই আবার রাগ আর জিদ চেপে ধরে রেগে ড্রিংক্সের বতলটা হাতে নিয়ে বাড়ির ভিতর চলে যায় !

সায়রা শান্ত হয়ে মাথা নিচ দিকে দিয়ে বসে আছে আরসাল তার সামনে বসে তুলাতে মেডিসিন নিয়ে আস্তে আস্তে ফু দিয়ে সায়রার গলার নিচে কাটা স্থান পরিষ্কার করছে জ্বালা পোড়া করার কারনে সায়রা বার বার ছটফট করে উঠছে আরসাল সে দিকটা খেয়াল রেখে বেশ সময় নিয়ে ফু দিয়ে ঔষধ লাগাচ্ছে ।
সায়রা ছোট ছোট চোখ পিটপিট করে একবার আরসালের দিকে তাকাচ্ছে আবার নিচের দিকে তাকাচ্ছে ।
আরসাল ঔষধ লাগিয়ে দিতে দিতে বলে
-“এরপর থেকে নিজেকে আঘাত করার আগে হাজার বার ভেবে নিবে কারন তোমার উপর তোমার কোন অধিকার নেই সব অধিকার আমার !
তুমি আমার ।”
সায়রা উত্তরে মুখে কিছু বললো না কিন্তু তার চোখজোড়া যেন কিছু বলতে চাইছে আরসাল তা বুঝতে পেরে বলে
-“কিছু বলবে ?”
সায়রা কিছু একটা ভেবে নিজের মাথা নাড়ায় ।আরসাল কিছু সময় তাকিয়ে থেকে গভীর ভাবে সায়রাকে লক্ষ করে আবার মাথায় কাটা জায়গায় বেন্ডেজ লাগাতে ব্যস্থ হয়ে পড়ে ।
বেন্ডেজ বাধাঁ শেষ হতেই সায়রা আরসালের বেড থেকে উঠে যেতে নেয় ।আরসাল পিছন থেকে হাত ধরে আটকায় ।হালকা আওয়াজে বলে
-“কোথায় যাচ্ছ !”
সায়রা মাথা নিচ দিকে করে ভীত স্বরে বলে
-“আ…আমার রু..রুমে ।”
আরসাল কঠোর আওয়াজে বলে উঠে
-“এখন থেকে যতদিন তুমি এই বাড়িতে আছো এই রুমেই থাকবে আমার সাথে ।আমি চাইনা তুমি এক মূহুর্তের জন্যও আমার চোখের আড়াল হও ।
(পাশে দেয়ালে জোরে বারি মেরে রেগে বলে )আমার কারনেই আজ তোমার সাথে এতবড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে ।আমি যদি সে সময় তোমাকে চোখের আড়াল না করতাম তাহলে এসব কিছুই হতো না !”
সায়রা চোখ টলটল করছে আগের মতই মাথা নিচু করে বলে
-“আপনার কোন দোষ নেই সব আমার ভাগ্যের দোষ !”

আরসাল সায়রাকে ঘুমাতে বললে সায়রা আগের মত বেডের পাশে দাড়িয়ে থাকে মুখে বিচলিত ভাব ।আরসাল তা বুঝে বলে
-“কি হয়েছে যাও বেডে শুয়ে পড়ো রেস্ট নেও অনেক রাত হয়েছে !”
সায়রা ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে বলে
-“তা…তাহলে আপনি ?”
-“আমি এখানেই তোমার পাশে ঘুমাবো ।”
-“স..সবাই কি বলবে “
-“তুমি আমার বিয়ে করা স্ত্রী আমার স্ত্রী আমার সাথে থাকবে এতে কিছু বলার কি আছে !”
-“তা.তার পর ও ..,”
-“তোমার এসব নিয়ে ভাবতে হবে না তুমি এখন রেস্ট নেও ।”
সায়রা আর কোন কথা বলেনা আরসালের কথা মতই বেডে উঠে বালিশে মাথা রেখে খিচে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে ।আরসাল সায়রার পাশে এসে দূরত্ব বজায় রেখে পাশের বালিশে শুয়ে সায়রা কে দেখতে লাগে ।
অন্য সময় হলে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে রাখতো কিন্তু পরিস্থীতি ঠি ক না তাই সে সায়রাকে স্পেস দিচ্ছে দূর থেকেই নিজের ভালোবাসার প্রকাশ করছে ।

সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই সায়রা উঠে বসে আসে পাশে তাকিয়ে আরসালকে খুজঁছে ঠি ক এমন সময় তার কানে শব্দ ভেসে আসে
-“গুড মর্নিং !
উঠে গেছ ।”
সায়রা দরজার দিকে তাকায় কারন শব্দ দরজা দিক থেকেই আসছে ।তাকিয়ে দেখে আরসাল দাড়িয়ে আছে ।সায়রা ঠি ক ঠাক হয়ে বসে ।আরসাল সায়রার কাছে এসে তার কপালে হাত রেখে দেখে জ্বর আছে কিনা ।তারপর বেশ সস্থির শ্বাস নেয় যেন চিন্তা দূর হলো ।
সায়রা ছোট ছোট চোখ করে আরসালের দিকে তাকায় এই চাহনির অর্থ আরসাল বুঝতে পেরে বলে
-“কাল রাতে অনেক জ্বর ছিল এখন আবার এসেছে কিনা তা চেক করছিলাম ।
আচ্ছা এখন কেমন লাগছে ?”
সায়রা গলা ঝেড়ে নিচু গলায় বলে
-“অনেকটা ভালো “
হঠাৎ রুমে কেউ নক করে আরসাল কঠোর গলায় বলে
-“কাম ইন !”
কাজের মহিলা হাতে নাস্তার ট্রে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে তা সায়রার সামনে রেখে আবার দরজা লক করে চলে যায় ।
আরসাল সায়রাকে উদ্দেশ্য করে বলে
-“যাও ফ্রেশ হয়ে নেও ।”
সায়রা বেড থেকে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায় ।
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আরসাল টি-টেবিলে খাবার সাজিয়ে বসে সায়রার অপেক্ষা করছে ।সায়রাকে দেখেই আরসাল বলে
-”এখানে বসো “
সায়রা লক্ষি মেয়ের মত চুপ করে বসে যায় আরসাল স্যুপের বাটিটা হাতে নিয়ে সায়রাকে খায়িয়ে দিতে লাগে সায়রাও বাধাঁ দেয়না ।

সায়রা বারান্ধায় দাড়িয়ে আছে আরসাল রুমে নেই নিচে গেছে আজ বিরতী আগামীকাল বিয়ে আর তারই তোড়জোড় চলছে বাহিরে ।
বাহিরে তার একদম যেতে ইচ্ছে করছেনা কারন কালকের ব্যপারটা সবাই কমবেশি জানে ।কে কি ভাববে তার উপর বাড়ি ভরা আত্নীয় স্বজন সবাই তাকে নিয়ে গসিপ করবে বলাবলি করবে যা সায়রা সয্য করতে পারবেনা ।তার লজ্জা লাগবে তাই ঘরে থাকাই উত্তম ।
বাহিরে মিষ্টি রোদ সায়রার গাঁ ছুয়ে যাচ্ছে সায়রা বারান্ধার রকিং চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে আরসালের ব্যবহার গুলোর কথা ভাবছে ।আরসালের চোখে অনুভূতি গুলো তার মনে হাজার প্রশ্ন তুলছে ।আরসালের পাগলামো ,কেয়ারিং ,প্রজেসিভনেস সব কিছু হাজার প্রশ্ন তৈরী করছে কারো চোখের ভাষা তো আর মিথ্যা হতে পারেনা ।আরসালের চোখে সে তার জন্য অনুভূতি দেখে তা অনুভব করে ।
তাহলে কি সায়রা ভুল ছিল আরসালকে কি সে ভুল বুঝতে ।এমন হাজার কথা ভেবে যাচ্ছে ।
হঠাৎ কেউ তার গালে সজোরে নিজের সর্বচ্চো সক্তি নিয়ে সায়রা কে থাপ্পর মারে সায়রা রকিং চেয়ার থেকে সাইডে বারান্ধার রেলিং এ বারি হয় মাথা চোট লাগা স্থানে আবার ব্যথা পায় হাত চলে যায় সেখানে চোখ গুলো টলটল করছে তার !

চলবে…..❤️

ah ❤️❤️❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here