প্রেমময় প্রহর পর্ব ১১

#প্রেমময় প্রহর (deewana 2)
Urme prema (sajiana monir)
পর্ব :১১

নিলুফা বেগম সায়রার কাছে এসে সায়রার হাত টেনে দাড় করিয়ে রক্ত চক্ষু করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে যেন এখনই চোখ দিয়ে বস্ম করে দিবে ।
উনি রেগে চিৎকার করে বলে উঠে
-“চরিত্রহীন মেয়ে ছেলেদের দেখলে হুস থাকেনা তাইনা ?
নিজে প্রথমে ছেলেদের দিজের দিকে আকর্ষন করিস পরবর্তিতে যখন তারা কাছে আসে সেসময় তোর এসব নাটক তাই না ?
আমার ছেলে আজ শুধু তোর জন্য মৃত্যুর সাথে লড়াই করে যাচ্ছে তোর কারনেই আরসাল কাল ওকে এভাবে মেরেছে ।
নিজের বোনের শ্বশুর বাড়িতে থাকছিস নিলজ্জ বেহায়া মেয়ে ।
অবশ্য তোদের মত মিডেলক্লাস মেয়েরা এসব করেই বেড়ায় তোদের বাবা মা এসব করার জন্যই ছেড়ে দেয় ছোট থেকে এসব করারই শিক্ষা দেয় ।”
সায়রা এত সময় দাতঁ কামড় দিয়ে চুপ করে সব শুনছিল বড় ভেবে চুপ করে ছিল কিন্তু শেষের কথাটা সায়রার গায়েঁ বেশ লাগে কারন কথা তার বাবা মা আর তাদের দেওয়া শিক্ষার কথা তুলেছে আর সব সয্য করতে পারলেও কেউ যদি তার বাবা মা কে নিয়ে কিছু বলে তা সে সয্য করতে পারেনা ।
সায়রা মাথা তুলে নিলুফা বেগমের দিকে তাকিয়ে রেগে রেগে চিৎকার করে বলে
-“ব্যসসস অনেক বলেছেন আমি চুপ করে আপনার বয়সের দিকে লক্ষ রেখে কিছু বলছিনা বলে এই না যে আপনি আমাকে যা খুশি তা বলে যাবেন !
আমার বাবা মায়ের ব্যপারে কিছু বলার আগে নিজের দিকে লক্ষ করে দেখেন আপনি নিজের নেশাখোর ছেলেকে কি শিক্ষা দিয়েছে !
আপনি কি আপনার ছেলেকে এই সিক্ষা দিয়েছেন যে নেশায় ডুবে মেয়েদের ইজ্জতহরণ করতে তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়তে ?
হ্যা আমরা মিডেলক্লাস মানুষ আমার বাবা মা মিডেলক্লাস কিন্তু আপনাদের থেকে অনেক বেশি ভালো আমাদের শিক্ষা ।
আরে আপনি কেমন মা যে নিজের ছেলে সাফাই গাইছেন কাল রাতে এত কিছু করলো এত বড় একটা ‌অপরাদ করলো আর আপনি সকালে এসেছেন আমাকে হুমকি দিতে ?
আগে নিজের ছেলেকে ভালো হবার শিক্ষা দিন তারপর অন্যে কারো শিক্ষা নিয়ে কথা বলবে ।
আর এটা শুধু আমার বোনের শ্বশুরবাড়ি না এটা আমারও শ্বশুরবাড়ি আমি এই বাড়ির বড় বউ মিসেস সায়রা আরসাল খান ।”
সায়রার কথা গুলো শুনতেই নিলুফা বেগমের রাগ বেড়ে যায় সে নিজের রাগকে দমিয়ে মুখে বাকাঁ হাসি টেনে বলে
-“এই বাড়ির বউ ?
ঐ যোগ্যতা কি আদো তোমার আছে !
আরসাল কি তোমায় ভালোবাসে ?
আরে আরসাল তোমাকে বিয়ে করছে শুধুই তোমার রূপের দেমাগ বন্ধ করতে আর ব্যবহার করতে তোমাকে নিয়ে মজা করা শেষ হলে তোমাকে রাস্তায় ছেড়ে দিবে আবার নিহার কাছে ফিরে যাবে ।যতই হোক প্রথম ভালোবাসা সারাজীবন থাকে আর নিহা তো এখন এ বাড়িতেই।
যে কোন সময়ে আরসালের মন ঘুরে যাবে ।”
সায়রা মুখে জিদ চেপে বলতে লাগে
-“ঐটা আমার আর আরসালের মধ্যেকার কথা আপনি কে তা বলার !
আমাদের জীবনে দখল আন্দাজী করা বন্ধ করেন ।”
নিলুফা বেগম সায়রার হাত টেনে ধরে বলে
-“মেয়ে তোমার তো দেখছি লজ্জা শরম বলতে নে‌ই !
নিলজ্জের মত এই বাড়িতে পরে আছো
আরে আরসালের তোমাকে বিয়ে করার হলে কাবিনের পর বাবার বাড়িতে ফেলে রাখতো না ।ঠি কই বাড়িতে নিয়ে আসতো ।
পড়া লেখা তো শুধুই বাহানা তোমাকে এই বাড়ির বউ করে কোনদিন উঠাবে না ।
দেখোনা নিহার কোন সম্পর্ক না থাকার পরও ও এ বাড়িতে থাকে ।আরসাল আর নিহার মাঝে সম্পর্ক ছিলো এখন যে নেই তার কি নিশ্চয়তা আছে ?
আরসাল নিহার মাঝে তুমি এসেছো নিম্নতম লজ্জাবোধ থাকলে এখান থেকে আর আরসালের জীবন থেকে চলে যাবে ।”
বলেই সায়রাকে ধাক্কা দিয়ে এক মিনিটও দেরি করে না রুম থেকে চলে যায় ।
নিলুফা বেগম চলে যেতেই সায়রা ধপ করে নিচে বসে পরে নিলুফা বেগম যা বলেছে তা কি সত্য ?
সত্যকি আরসাল ও আবার ছেড়ে চলে যাবে ও নিহা আর আরসালের মাঝে এসেছে !

রিদ্ধি চোখ খুলে পাশের ঘড়িতে তাকাতেই দেখে ঘড়িতে সকাল ১১ বাজে ।পাশে আদি নেই তারাতারি করে বেড থেকে উঠতে নেয় হঠাৎ‌ পা আটকা পড়ে যায় ।
পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে সায়ন পায়ের মধ্যে মাথা দিয়ে আছে ।রিদ্ধি তা দেখে বেশ ‌অবাক হয়ে যায় তারাতারি করে পা সরাতে নিলে সায়ন মাথা তুলে তাকায় ।রিদ্ধি সায়নকে দেখে বেশ ভয় পেয়ে যায় কারন তার চোখ দুটো ভয়ংকর ফুলে লাল রং ধারন করেছে চোখ জোড়া ভিজা !
রিদ্ধি কে তার কাছে দেখতেই সায়ন হুট করে রিদ্ধিকে জরিয়ে ধরে ডুকরীয়ে কান্না করতে থাকে ।রিদ্ধি সায়নের এমন ব্যবহারে বেশ অবাক কাল রাতেই তো সায়ন সব ছেড়ে চলে গিয়েছিলো তাহলে এখন এসব করার কারন কি !
সায়ন রিদ্ধিকে জরিয়ে ধরে বলতে লাগে
-“ক্ষমা করে দেও আমায় আমি অনেক বড় ভুল করেছি !
আমি পারবোনা তোমাকে ছাড়া থাকতে ।
আমাকে ছেড়ে যেওনা প্লিজ !”
রিদ্ধি কিছু না বুঝতে পেরে সায়নকে একটু দূরে সরিয়ে মাথা তুলে তার দিকে তাকায় ।সায়নের রিদ্ধির গালে হাত রেখে বলে
-“যাবেনা তো কোন দিন আমাকে ছেড়ে থাকবে তো সব সময় আমার পাশে !
পরিস্থিতী যাই হোকনা কেন চলে যাবেনা তো কখনো আমাকে ভুল বুঝবেনা তো ।”
কথা গুলো বলার সময় সায়নের চোখে স্পষ্ট অপরাধবোধ আর ভয় কাজ দেখা যাচ্ছে যেন কোন বড় ধরনের অপরাধ করেছে সে ।
এসব কিছু রিদ্ধি চোখ এড়ায় না সে সায়নের প্রত্যেকটা কথা বেশ মনযোগ দিয়ে শুনছে আর সায়নের প্রত্যেকটা কাজ লক্ষ করছে আজকের সায়ন আর কালকের সায়নের মধ্যে আসমান জমিন পার্থক্য ।
কালকে রাতের সায়নের কথা গুলো রিদ্ধি সারাজীবন ভুলতে পারবেনা কারন এই কথা গুলো তাকে বেশ আঘাত দিয়েছে অনেক কষ্ট পেয়েছে সে ।কাল রাতের কথা মনে করতেই রিদ্ধির চোখ টলটল করছে নিজের কান্নাটাকে চেপে বড় নিশ্বাস নিয়ে বলে
-“হ্যা আমি কোনদিন এ বাড়ি ছেড়ে যাবো না কারন এবাড়িতে আমার শুধু আপনার সাথে সম্পর্ক নেই যে আপনার সাথে রাগ করে চলে যাবো ।
এবাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ আমার আপন তাদের জন্য আমার ছেলের জন্য আমি এখানে থাকবো !”
সায়ন ভালোই বুঝতে পারছে রিদ্ধি প্রত্যেকটা কথা রেগে বলছে সায়নের প্রতি তার রাগ আছে আর হওয়ারই কথা কাল রাতে রিদ্ধিরে সে কম শুনায়নি যা নয় তাই বলে গেছে তার ঐ সব কথায় রিদ্ধি খুব বেশি হার্ড হয়েছে ।
কিন্তু সায়ন এই ভেবে খুশি যে রিদ্ধি তার কাছে থাকবে সারাজীবনের জন্য যেই কোন পরিস্থিতীই হোক না কেন সে তার থেকে দূরে যাবে ।
তার কাছেই থাকবে আজ সকালে তার সেন্স ফিরার পর থেকে মনে ভয় ডুকে বসে কাল রাতে যা হয়েছে তা ভুল রাগ আর তার সেন্সলেস হওয়ার কারনেই কিন্তু তার এই ভুলের কারনে সে রিদ্ধিকে হারাতে পারবেনা তার বিনিময়ে তাকে যা করতে হয় সে করবে কিন্তু রিদ্ধি আর তার সন্তানদের ছাড়া বেচেঁ থাকার কথা সে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনা !

আরসাল নিজের রুমে এসে দেখে সায়রা নেই রুম পুরো ফাকা ওয়াশ রুম আর বারান্ধা খুজাঁ খুঁজির পর ও সায়রাকে পায় না ।তারাতারি করে সায়রার রুমে চলে যায় সেখানে গিয়ে দেখে সায়রার কোন জিনিসপত্র নেই সব কিছু একদম ফাকাঁ আরসাল বেশ ভয় পেয়ে যায় তার কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো ।
আবার সায়রা তার থেকে দূরে চলে গেল না তো ?
তারাতারি করে রিদ্ধির কাছে যেয়ে তাকে জিগাসা করতেই রিদ্ধি বলে এ ব্যপারে সে কিছু জানে না তার সাথে বেশ ঘাবড়িয়েও যায় সে না বলে কোথায় চলে গেল মাথায় কালকে রাতে সায়রার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা ঘুরঘুর করছে ।তারাতারি করে ফোন হাতে নিয়ে বাড়িতে ফোন দেয় ।ফোন দিয়ে জানতে পারে যে সায়রা বাসায় চলে গেছে ।
রিদ্ধি তা শুনে বেশ অবাক হয় সায়রার এভাবে না বলে চলে যাওয়ায় ।
সায়রা চলে গেছে তা শুনতেই মুহূর্তেই আরসালের ভয়টা রাগ আর জিদে পরিণত হয়ে যায় ।সায়রা কি আরসালকে এতটুকুও আপন মানে না যে যাওয়ার সময় অন্তত তাকে জানিয়ে। যাবে ।আরসাল এতটাই কি তার অপছন্দ যে জানিয়ে যাওয়ার মত যোগ্যতাও রাখেনা !
আদো কি সায়রার কোন দায়িত্ব আছে নাকি ?
আজ সায়রার এই ব্যবহারটা আরসালের বেশ সম্মানে আর ইগোতে লাগে ।
মূহুর্তেই রাগে তার মুখ লাল হয়ে যায় ।এবার সায়রার উপর ভয়ংকর রাগ হচ্ছে তার এখন হাতের কাছে পেলে কি করতো তার নিজের ও জানা নেই ।
নিচে এসে তারাতারি করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে ।

‌অন্যদিকে সায়রা বাড়িতে এসে সোজা নিজের রুমে চলে যায় কারো প্রশ্নের উত্তরে ভালো মন্দ টু শব্দটুকু করেনা ।পুরো বাড়ির মানুষ বেশ অবাক হচ্ছে সায়রাকে এসময় আসতে দেখে কারন কথা ছিল যে সায়রির বিয়ে শেষ করেই আসবে !
তারা কিছু জিগাস করলে উওরে বলে তার ভালো লাগেনি তাই সে ফিরে এসেছে ।
সায়রার সেখান থেকে বাড়িতে ফিরার কারন হলো তার আত্তোসম্মান ।সে আর যাই হোক এত কিছুর পর ঐ বৈড়্তে থাকতে পারবেনা ।যা মধ্যে কোন আত্তো সম্মানবোধ নেই সে মানুষের পর্যায় পরেনা ।আর আজ সকালে নিলুফা বেগমের এসব কথার পর ঐ বাড়িতে সে এক মূহুর্তের জন্যে ও থাকতে পারবেনা সেখানে থাকলে তার দম বন্ধ হয়ে আসবে ।সায়রা মিডেলক্লাস ফেমিলির হলেও তার মধ্যে যথেষ্ট সম্মানবোধ আছে তার বিবেক তাকে ঐ বাড়িতে থাকার অনুমতি দেয়না !
তাই সে ঐ বাড়ি থেকে চলে এসেছে ফোন অফ করে রেখেছে যাতে কেউ ফোন দিতে না পারে ।

আরসাল সায়রাদের বাড়িতে আসতেই সোজা সায়রাদের ফ্লাটে গিয়ে সায়রার রুমের সামনে চলে যায় ।রুমের সামনে গিয়ে দেখে রুম ভিতর থেকে লক করা ।

সায়রা ভিতরে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে চোখের পানি গাল গড়িয়ে পড়ছে হঠাৎই দরজা নক করার শব্দে সে কেপেঁ উঠে ।
বাহির থেকে এক ‌অতিপরিচীত কন্ঠ শুনতে পারছে হ্যা সে তার আরসাল সায়রা তাকে দেখার জন্য তারাতারি করে উঠতে নেয় হঠাৎই তার পা থেমে যায় তারপর আবার আগের মত বসে পড়ে ।
আরসালের প্রতি তার এক চাপা রাগ কাজ করছে নিলুফা বেগমের বলা কথা গুলো তার মনে বেশ গেথেঁ গেছে তার কাছে কোথাও মনে হচ্ছে আরসাল বুঝি সত্যি তাকে ধোকা দিচ্ছে তাই আরসালের প্রতি বেশ অভিমান আর রাগ জমেছে ।
আরসাল বাহিরে নক করে যাচ্ছে সায়রা কোন নড়চড় বা শব্দ করছেনা সে আগের মতই রয়েছে ।
আরসাল একসময় বিরক্ত হয়ে রেগে বলতে লাগে
-“তুমি কি দরজা খুলবে নাকি আমি এই দরজা ভাঙ্গবো ?”
তা শুনা মাত্রই ভয়ে সায়রা কেপেঁ উঠে তারাতারি করে দরজা খুলে দেয় ।দরজা খুলতেই দেখে আরসাল রাগে আগুন হয়ে দাড়িয়ে আছে ।ধিরে ধিরে রুমের ভিতরে ডুকে ধপ করে দরজা লাগিয়ে দেয় যার শব্দেই সায়রা কেপেঁ উঠে এই মূহুর্তে সায়রা বেশ ভয় করছে যাকে বলে ভয়ংকর ভয় কারন আরসালের অগ্নিদৃষ্টি আর তার শান্তরূপ নতুন কোন বড় ঝড়ের লক্ষন ।সায়রা ভয়ে ডোক গিলে নেয় ।

চলবে….❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here