প্রেমাঙ্গনা পর্ব -০৮+৯

#প্রেমাঙ্গনা
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৮।

“ফরহাদ খান”, লোকটাকে দেখলেই পৃথার রাগ হয়। কারণ লোকটার ব্যবহার তার একটুও পছন্দ না। ছেলে মানুষ এত গায়ে পড়া হয় কী করে। ছেলেটা বুঝতে পারে পৃথা তার সাথে কথা বলতে পছন্দ করে না তাও সে জোর করে পৃথার সঙ্গে কথা বলতে চায়। এই নিয়ে বাবাকে কিছু বললেও বাবা তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখান না। কারণ, বাবার চোখে ছেলে লাখে এক, এর মতো নাকি ছেলেই হয় না।

আজকেও ফরহাদ এসে পৃথার সাথে খুব কথা বলছিল। পৃথা শেষে রেগে গিয়ে বলে,

‘আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। দয়া করে আপনি আমার রুম থেকে বের হলে আমি একটু রেস্ট নিব।’

ভেবেছিল কথাটা শুনে ছেলেটার হয়তো একটু গায়ে লাগবে। অথচ হয়েছে উল্টোটা। ছেলেটা আরো আধ ঘন্টা তার প্রতি আহ্লাদ দেখাল। তাকে নানা ভাবে প্রশ্ন করে বিরক্ত করে তারপর সে রুম থেকে বের হলো। পৃথার মাঝে মাঝে মনে হয় ছেলেটাকে গলা টিপে ধরতে, একটা মানুষ এত বিরক্ত কী করে করতে পারে?

‘আপনার মেয়েকে আমি এখনও কনভিন্স করতে পারছি না, আংকেল।’

‘চেষ্টা করো, অল্পতেই হার মানলে চলবে?’

‘আর কত চেষ্টা করব? সেই তিন বছর আগ থেকে ওর পেছনে পড়ে আছি। মাঝখানে এত কাহিনী করল, তাও তো ওর পিছ ছাড়েনি। এখনও ওর সাথে লেগেই আছি, তাও আপনার মেয়ে আমাকে বুঝছে না। আর আমি কী করব বলুন? এবার আপনাকেই এর পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।’

পৃথার বাবা চিন্তিত স্বরে বললেন,

‘কী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছো?’

‘ও ভালো ভাবে রাজি না হলে, জোর করে বিয়ে দিবেন। আর আপনি জোর করলে ও রাজি না হয়ে পারবে না।’

‘এর আগের বার দেখনি কী করেছে? জোর করাতে বাড়ি ছেড়েই পালিয়ে গিয়েছিল। এবারও যদি এমন কিছু করে?’

‘এর আগের বার তো পালানোর সঙ্গী ছিল, এবার তো আর কোনো সঙ্গী নেই। তাই পালানোর রিস্কও নেই। আপনি ট্রাই করে দেখুন, আমার পক্ষে আর সম্ভব না।’

পৃথার বাবা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। মনে মনে ভাবলেন, এবার তাকেই কিছু একটা করতে হবে। এভাবে চুপচাপ বসে থাকলে চলবে না, যদি হুট করেই পৃথার আগের স্মৃতি সব ফিরে আসে, তাহলে আবার ঝামেলা হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা দিতে পারলেই তিনি বাঁচেন।

,

‘আমার পক্ষে আর সম্ভব না, রুহা।’

‘এমন করবেন না, ভাইয়া। আর কিছুদিন ধৈর্য ধরুন।’

‘আর কত? দু’মাস তো হয়ে গেল। এখনো ওর মাঝে কোনো উন্নতি তুমি দেখেছ? কোনো উন্নতি নেই। ওর মস্তিষ্ক থেকে ঐ ছয়মাসের স্মৃতি পুরোপুরি বিলিন হয়ে গিয়েছে। আর তার সাথে বিলিন হয়ে গেছি আমিও। কিন্তু ও তো রয়ে গেছে। আমার মন, আমার মস্তিষ্ক, আমার পুরো শরীর জুড়ে ওর বিচরণ। আমি কী করে ওর থেকে দূরে থাকব বলো? ভেবেছিলাম, সাজেক গিয়ে আবার না হয় নতুন করে সবকিছু শুরু করব। ও হয়তো আমাকে আগের মতোই প্রথম দেখে প্রেমে পড়বে, কিন্তু তেমন কিছুই তো হলো না। ও তো ওর মতোই রয়ে গেল। কীভাবে আগাবো আমি? কীভাবে ওকে বোঝাব? যদি আবার এর মাঝে ওর বাবা ওকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঐ ফরহাদের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়, তখন? তখন কী হবে, রুহা? কী করব আমি তখন?’

অর্ণবের এত হাহাকার দেখে রুহারও যে খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সেও যে কিছু করতে পারছে না। সে নিজেও অসহায়। তার বান্ধবীর জন্য তো তারও কষ্ট হয়। ভাগ্যের পরিহাসে মেয়েটা যে তার নির্মল প্রেমকে ভুলতে বসেছে। কীভাবে সবকিছু আবার আগের মতো হবে? কীভাবে অর্ণব পৃথার মিল হবে? কীভাবে?

‘ভাইয়া, আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে?’

অর্ণব নিশ্বাস ছেড়ে বলল,

‘কী?’

‘আপনি পৃথাকে প্রপোজ করুন।’

‘আমি ওকে প্রপোজ করলেই কি ও রাজি হয়ে যাবে? ও তো এখন আমাকে পছন্দই করে না।’

‘রাজি না হলে, একেবারে প্রেমে অন্ধ রোমিওদের মতো ওর পেছনেই পড়ে থাকবেন। ও যেমনটা আপনার বেলায় করেছিল, এখন আপনি সেটা করবেন।’

‘আমার দ্বারা কি এসব সম্ভব হবে?’

‘কেন হবে না? প্রেমের জন্য মানুষ সব করতে পারে, আর আপনি একটু পাগলামী করতে পারবেন না?’

অর্ণব ভেবে বলল,

‘যদি ও রেগে গিয়ে আমার থেকে আরো দূরে সরে যায়?’

‘এমনটা হবে না, ভাইয়া। বি পজেটিভ। ও তো আপনার প্রেমিকা না, আপনার বউ। সবকিছু ভুলে গেলেও ওর মনে নিশ্চয়ই কোথাও একটা সেই অনুভূতিটা রয়েই গিয়েছে। হয়তো সেটা এখন প্রকাশ পাচ্ছে না। কিন্তু, আমি সিউর ভাইয়া, আপনি ওকে আবার আপনার প্রেমে ফেলতে পারবেন। আপনি শুধু একবার চেষ্টা করে দেখুন।’

অর্ণব সিদ্ধান্ত নিল। সে তার সবটুকু দিয়ে তার প্রেমাঙ্গনা কে তার করে নিবে। আর কাউকে সে কোনো সুযোগ দিবে না তাদের মাঝে আসার। পুরোনো প্রেমকে আবার নতুন করে আবির্ভূত করবে সে।

,

সন্ধ্যায় বসে বসে আচার খাচ্ছে পৃথা। রুহা যে তাকে আচার কিনে দিয়েছিল সেগুলোর কথা সে বেমালুম ভুলে গিয়েছিল। এখন ব্যাগ ঘাটতেই সেগুলো পেয়ে যেন আত্মা ফিরে পেয়েছে সে।

ফোনে স্ক্রল করতে করতেই হঠাৎ একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। পৃথা সেটা কেটে দেয়। কিন্তু, পরক্ষণেই আবারও কল আসে। পৃথা এবার কাটেনা, রিসিভ করে। তবে কথা বলে না, কানে নিয়ে বসে থাকে কেবল। ওপারের ব্যক্তি বলে উঠে,

‘হ্যালো, পৃথা বলছেন?’

পৃথা জবাবে বলে,

‘না, আমি পৃথার বোন। পৃথা এখন বাসায় নেই, পরে কল করবেন।’

ব্যক্তিটি বলল,

‘কল কাটবেন না, ম্যাডাম। পৃথার কোনো বোন নেই সেটা আমি জানি। অযথা মিথ্যে বলে লাভ নেই, আমি আপনার মিথ্যে ধরে ফেলেছি।’

‘আপনি কে বলছেন বলুন তো?’

‘অর্ণব বলছি। চিনতে পেরেছেন?’

‘আচ্ছা, তাই তো বলি, কার এমন কর্কশ গলা। গলা শুনেই বোঝা যায় এটা আপনি ছাড়া আর কেউ না। তা, আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?’

‘পেয়েছি কোথাও একটা। সেসব পরে জানা যাবে। আগে বলুন, আপনার শরীর এখন কেমন আছে? আগের থেকে ভালো?’

‘জি, ভালো। তবে আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেয়েছেন সেটা না জানা পর্যন্ত আমি আপনার সাথে কথা কন্টিনিউ করব না।’

অর্ণব বলল,

‘আমার বন্ধুর কাছ থেকে নিয়েছি।’

পৃথা চেঁচিয়ে উঠে বলে,

‘কী, আমার বন্ধুরা আপনাকে আমার নাম্বার দিয়েছে, তাও আবার আমাকে না জানিয়ে? এত বড়ো হারামী ওরা? একবার খালি পাই ওদের, তারপর ওদের খবর করে ছাড়ব।’

‘আচ্ছা, তা না হয় করলেন। এখন আগে আমার একটা প্রশ্নের জবাব দিন তো, আপনি কি আজ লাল রঙের জামা পরেছেন?’

পৃথা নিজের জামার দিকে চেয়ে বলল,

‘হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কী করে জানলেন?’

‘ম্যাজিক করে।’

পৃথা রেগে যায়। বলে,

‘মজা করছেন আমার সাথে? বলুন, আপনি কী করে জানলেন?’

অর্ণব হেসে বলল,

‘এত উত্তেজিত হওয়ার কিছু হয়নি। আমি জাস্ট আন্দাজে গেইস করেছি আর সেটা মিলে গিয়েছে, এইটুকুই।’

পৃথার তাও কেন যেন বিশ্বাস হলো না। তাই সে তার বারান্দার বাইরে তাকিয়ে বাসার আশ পাশটা ভালো ভাবে দেখে নিল। অর্ণব জিজ্ঞেস করল,

‘কী, আমায় পেলেন না তো?’

পৃথা আবারও চমকাল। বলল,

‘আপনি কি এখানে আছেন?’

‘আপনি তো খুঁজলেন, থাকলে তো দেখতেনই।’

‘আপনি যদি এখানে নাই থেকে থাকেন, তাহলে আমি যে আপনাকে খুঁজছিলাম, সেটা আপনি কী করে জানলেন?’

অর্ণব আবারও হেসে বলল,

‘ঐ যে বললাম, আমি ম্যাজিক জানি।’

পৃথা এবার খুব রেগে যায়। তীব্র স্বরে বলে,

‘ফোন রাখুন তো। তখন থেকে একটা মজা শুরু করেছেন। আপনার সাথে কথা বলতে আমার ইচ্ছে করছে না।’

অর্ণব ম্লান হেসে বলল,

‘আচ্ছা, যখন কথা বলতে ইচ্ছে করবে, তখন কল দিবেন। রাখছি এখন।’

অর্ণব কল কেটে দেয়। পৃথা এখনও ভালো ভাবে দেখে যাচ্ছে, অর্ণব আসলেই তার বাড়ির আশে পাশে আছে কিনা। কিন্তু সে কাউকেই দেখতে পেল না। অবাক হলো। ছেলেটা হঠাৎ তাকে কল দিল কেন? সে কি কিছু বলতে চায়? পৃথার মনটা খুঁতখুঁত করে। আরেকবার সে কল দিবে? না থাক, ছেলেটা আবার কী না কী ভাববে। এমনিতেই উনার যা ইগো, ভাববে সে বুঝি তার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে। না না, ছেলেদের কাছে এত সহজে নরম হতে হয় না। একটু নরম হলেই ওরা আবার মাথার উপর একেবারে ঝেঁকে বসবে।

চলবে…#প্রেমাঙ্গনা
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
ঌ।

রাতে ভালো ঘুম হয়নি পৃথার। সারা রাত খুব অস্থিরতায় কেটেছে। এই অস্থিরতা উদ্ভবের হদিস সে মেলাতে পারেনি। সকালেও ঘুম ভাঙে তাড়াতাড়ি। উঠে খালাকে বলে এক কাপ গরম কফি দিয়ে যেতে। সেই কফিটাও পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি। এটাতেও তার বমি বমি লাগে। শরীরটা তার বেশিই হয়তো খারাপ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

বাবা অফিসের জন্য বেরিয়ে যাওয়ার পর পৃথা বাসায় একেবারে একা হয়ে যায়। আগে ভার্সিটিতে যেত বলে, সকালটা ভালো ভাবে কাটত। কিন্তু, তার বাবা এখন ভার্সিটিতে যেতেও নিষেধ করে দিয়েছেন। এই চার দেয়াল তার জন্য কোনো জেল খানার চেয়ে কম কিছু না। মাঝে মাঝে কান্না পায়, মনে হয় জীবন যেন বোঝা হয়ে উঠেছে। মুক্তিকে হাতড়ে বেড়ায়। কোথায় একটু মুক্তি পাওয়া যাবে সে বুঝে উঠতে পারে না।

সকালে দুই ঢোক কফি ছাড়া পৃথা আর কিছুই খায়নি। খালা অনেকবার তাকে খেতে ডেকেছে, কিন্তু সে কিছু খাবে না বলে সাফ মানা করে দিয়েছে। শরীর ভালো নেই, মন ও যে খুব খারাপ। ভেবেছিল একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসলে ভালো লাগবে, মন হালকা হবে; কিন্তু, তেমন কিছুই তো হচ্ছে না। উল্টো সময়টা আরো বিরক্তির মনে হচ্ছে যেন।

দীর্ঘশ্বাসের পর্যায় শেষ হতেই পৃথার ফোন বেজে উঠে। হাতে নিয়ে দেখে রুহা কল করছে। সে রিসিভ করে,

‘কেমন আছিস?’

‘ভালো না।’

‘কেন, শরীর এখনও ঠিক হয়নি?’

‘না, উল্টো আরো খারাপ হচ্ছে মনে হচ্ছে। জানিস, ভালো মতো কিছু খেতে পারছি না। যা খাই তাতেই যেন বমি আসে। রাতে বাবার সাথে দুই লোকমা ভাত খেয়েছিলাম, সেটাও রুমে এসে বমি করেছি। কী করব বুঝতে পারছি না। কাল সারারাত ঠিক মতো ঘুমাতেও পারিনি। হঠাৎ এমন কেন হচ্ছে বলতো?’

রুহার খুব কষ্ট হয়। ইশ, যদি সে তাকে সবটা বলতে পারত। মেয়েটাকে আর এত কষ্ট পেতে দেখা পারছে না। রুহা বলল,

‘ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।’

‘হ্যাঁ, আমিও তাই ভাবছি। আজকে বিকেলে ফ্রি আছিস?’

‘হ্যাঁ, আছি।’

‘তাহলে আছই যাব। আর বাবাকে বলব না। বাবাকে বললেই বাবা আবার অস্থির হয়ে উঠবেন।’

‘আচ্ছা, ঠিক আছে।’

‘ঠিক আছে তাহলে, বিকেলে দেখা হচ্ছে।’

‘ওকে।’

কল কেটে দেওয়ার পর পৃথার মনে হলো, রুহার সাথে তো রাগই দেখানো হলো না। তাই সে আবার তাকে কল করল। রুহা কল রিসিভ করতেই সে তাকে ঝাড়ি মেরে বলল,

‘তুই আমার নাম্বার ঐ অর্ণব কে দিয়েছিলি?’

রুহা নির্ভয়ে বলে,

‘হ্যাঁ।’

‘একবার আমার অনুমতিও নিলি না। কেউ চাইলেই তুই তাকে আমার নাম্বার দিয়ে দিবি।’

‘না, কেউ চাইলে দিতাম না। কিন্তু, শুধু অর্ণব ভাইয়া চেয়েছেন বলে দিয়েছি। উনার জায়গায় অন্য কেউ হলে ভুলেও দিতাম না।’

পৃথা ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘কেন, উনাকে কেন দিতে হবে? উনি কে? কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী, যে উনি চাইলেই উনাকে সব দিতে হবে।’

‘উনি ভালো মানুষ। আর ভালো মানুষরা কিছু চাইলে তাঁকে দিতে হয়। না দিলে তাঁদের মনখুন্ন হবে না?’

‘চুপ কর। যত সব আলতু ফালতু কথা। উনি কোন দিক দিয়ে ভালো মানুষ? দেখতেই খালি সহজ সরল, পেটের ভেতর রাজ্যের প্যাচ। কথা বলতে গেলেই ঝগড়া লেগে যায়। আবার বলে উনি নাকি ভালো মানুষ।’

‘শোন, তুই শুধু শুধুই উনার সাথে ঝগড়া করিস। উনি কিন্তু দেখা হওয়ার পর থেকেই তোকে সাহায্য করে আসছেন। আর তুই এর বিনিময়ে উনাকে একবার থেংক্স ও বলিসনি, উল্টো দেখা হলেই ঝগড়া বাঁধিয়ে দিয়েছিস। এটা কিন্তু মোটেও ঠিক হয়নি। উনি আমাদের কত সিনিয়র, নূন্যতম ভদ্রতাটুকুও তো দেখাতে পারতি।’

পৃথা কিছুক্ষণ চুপ থেকে সন্দিহান স্বরে বলে,

‘বাই এনি চান্স, তুই কি উনার প্রেমে পড়েছিস নাকি?’

রুহা সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠে বলে,

‘আসতাগফিরুল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ। এত বড়ো কথাটা বলতে তোর একবারও মুখে বাঁধেনি?’

‘না তো। কেন বাঁধবে? তুই যেভাবে উনার সাফাই গাইছিস তাতে তো মনেই হচ্ছে তুই উনার প্রেমে পড়েছিস।’

রুহা রাগে গলার স্বর চওড়া করে বলে,

‘আরে খবিশ মাইয়া, উনারে আমি আমার দুলাভাই বানানোর স্বপ্ন দেখছি, আর তুই বলছিস আমিই উনার প্রেমে পড়েছি কিনা। আল্লাহ মাফ করুক, আমি এই কথা তো দুঃস্বপ্নেও মাথায় আনতে পারব না।’

‘উনাকে দুলাভাই বানাবি কী করে? তোর কি কোনো বোন আছে নাকি? এই, সারার সাথে বিয়ে দিবি? উমম, না, সারার সাথে উনাকে মানাবে না; দেখতে কেমন যেন ভাই বোন ভাই বোন লাগবে। আর কে আছে? তোর কোনো কাজিন?’

বড়ো করে নিশ্বাস ছেড়ে রুহা বলল,

‘কেন, নিজেকে কি চোখে পড়ে না?’

‘কী, তুই আমার জন্য ঐ ঝগড়াটে ছেলেটাকে পছন্দ করেছিস? ওর সাথে কখনো আমার মতের মিল হবে? জীবনেও না। সারাদিন আমাদের ঝগড়া করতে হবে। আর ওর যা ইগো, আমার ওতো ইগো ওয়ালা ছেলে মোটেও পছন্দ না।’

রুহা মনে মনে ভাবল, “একদিন তো এই ইগো ওয়ালা ছেলের জন্যই জান প্রাণ সব দিয়ে দিয়েছিলি। আর আজ বলছিস, তাকেই পছন্দ না।”

রুহা জবাবে বলল,

‘তোর এখন এসব মনে হচ্ছে, দেখবি বিয়ের পর মনে হবে তুই জীবনে একজন বেস্ট মানুষকে পেয়েছিস। ভাইয়া সত্যিই খুব ভালো মানুষ। আর আমার মনে হয় উনি তোকে পছন্দ করেন। সেই জন্যই হয়তো আমার কাছ থেকে তোর নাম্বার টা নিয়েছেন।’

পৃথা সামনের চুলগুলো পেছনে দিকে ফেলে মজার ছলে বলে,

‘বেশি সুন্দরী হয়ে ঝামেলায় পড়েছি। যে দেখে সেই প্রেমে পড়ে যায়। এইদিকে অর্ণব আর ঐদিকে ফরহাদ। এখন আমি কাকে মন দেই বলতো? উফফ, কী যে করি এখন।’

‘এই, ফরহাদ কি এখনও তোর পেছনে পড়ে আছে?’

‘হ্যাঁ, একেবারে আঠার মতো লেগে আছে। যদিও লোকটাকে আমার একদম সহ্য হয়না। কিন্তু, বাবার জন্য কিছু বলতেও পারিনা।’

‘তাহলে ঐ লোককে তুই মন দেওয়ার কথা ভাবছিস কী করে?’

‘আরে, এটা তো আমি মজা করে বলেছি। আচ্ছা, এখন এসব কথা বাদ দে। বিকেলে রেডি থাকিস। রাখি এখন।’

‘আচ্ছা।’

কল কেটে দিয়ে রুহা দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। বলে তো দিয়েছে বিকেলে তারা ডাক্তারের কাছে যাবে। কিন্তু, সেখানে গিয়ে যদি ডাক্তার চেকআপ করার পর বুঝে ফেলে ও যে প্রেগনেন্ট, তখন তো ডাক্তার ওকে সব বলে দিবে। আর তখন তো ও আরো পাগল হয়ে উঠবে। ওর পাগলামী তখন কে সামলাবে? রুহার মাথায় আসছে না, কীভাবে সে এই পরিস্থিতিকে সামাল দিবে, কীভাবে সবকিছু সাজাবে। অর্ণবকেও কিছু বলা হয়নি। সত্যি জানলে তো উনাকেও আর আটকে রাখা যাবে না। তখন যে কী হবে, ভাবতে এখনই রুহার আত্মা কাঁপছে।

,

ডাক্তারের কেবিনের বাইরে বসে আছে পৃথা আর রুহা। দুজনের চোখে মুখেই চিন্তার ছাপ। তবে রুহা একটু বেশিই ভয় পাচ্ছে। মনে মনে দোয়া করছে, যেন তার ধারনা ভুল হয়।

অনেক অপেক্ষার পর তাদের সিরিয়াল আসে। পৃথা আর রুহা ভেতরে যায়। মহিলা ডাক্তার, পৃথার মুখে সমস্ত উপসর্গের কথা শুনে উনি জিজ্ঞেস করেন,

‘আপনি কি বিবাহিত?’

পৃথা কিছুটা অবাক হয়। অপ্রস্তুত হেসে বলে,

‘না তো। কেন?’

ডাক্তার বলে,

‘না, আসলে আপনি যা বলছেন, সেগুলো একজন প্রেগনেন্ট মহিলার লক্ষণ, তাই সিউর হয়ে নিচ্ছিলাম। কিন্তু, যখন আপনি বিবাহিত না, আমার মনে হয় আপনার ফুড পয়জনিং হয়েছে, ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করছেন না বলে দূর্বল হয়ে পড়েছেন। আর পিরিয়ড ঠিক মতো হওয়ার জন্য আমি কিছু ঔষধ দিয়ে দিয়েছি। রেগুলার ঔষধ নিলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’

পৃথা নিশ্চিন্ত হলেও রুহা কিছুতেই স্বস্তি পেল না। ডাক্তার তো ভালো ভাবে চেকআপ করলেই সব ধরা পড়ে যেত। কিন্তু, উনি তো ভালো মতো না দেখেই একগাদা ঔষধ দিয়ে দিচ্ছেন। সে না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে কিছু সহ্য করতে।

পৃথা প্রেসক্রিপশন নিয়ে উঠে যেতে লাগলেই রুহা বলে উঠে,

‘ম্যাম, আপনি ওকে আরেকটু ভালোভাবে চেকআপ করুন। ওর শরীর আজকাল একটু বেশিই খারাপ। শুধু কি ফুড পয়জনিং এর জন্য এসব হচ্ছে, নাকি অন্যকিছু; ভালোভাবে একবার দেখে নিন।’

ডাক্তার বললেন,

‘ঠিক আছে, আমি ভালো ভাবে দেখছি। আপনি গিয়ে একটু এই বেডে শুয়ে পড়ুন।(পৃথার দিকে চেয়ে)’

পৃথার পর্দার আড়ালে রাখা বেডে গিয়ে শুয়ে পড়ল। ডাক্তার উঠে যেতে নিলেই রুহা উনার সামনে এসে সাবধানের সহিত বলে,

‘ম্যাম, ও বিবাহিত। তবে ওর একটা এক্সিডেন্টে ওর মেমোরি থেকে ছয়মাসের সব স্মৃতি মুছে যায়। সেই সাথে ওর বিয়ে হওয়ার স্মৃতিও মুছে যায়। ওর মনে নেই, ওর যে বিয়ে হয়েছে। তবে আমরা জানি। আর ওর এসব লক্ষণ দেখে আমারও মনে হচ্ছে ও প্রেগনেন্ট। আপনি একটু ভালো ভাবে দেখে আমাকে বলুন। তবে ওকে কিছু বলবেন না, ওর ব্রেইনে চাপ পড়বে। প্লিজ, আমাকে এইটুকু সাহায্য করুন।’

ডাক্তার প্রচন্ড চমকালেও রুহাকে সাহায্য করতে রাজি হন।

ডাক্তার পৃথার কাছে গিয়ে বললেন,

‘আপনার ইউরিন টেস্ট করতে হবে।’

পৃথা খানিক বিচলিত হয়ে বলল,

‘কেন, ইউরিন টেস্ট কেন?’

‘ইউরিন টেস্ট করলে আমরা বুঝতে পারব, আপনার অন্য কোনো সমস্যা আছে কিনা। তাতে আপনার জন্যই ভালো হবে।’

পৃথার ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও রুহার জোরাজুরিতে সে রাজি হয়। ডাক্তার তাদের দু’দিন পর এসে টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে যেতে বলে। তবে রুহার মন বলছে, টেস্টের রিপোর্ট পজেটিভ আসবে।

চলবে…

#প্রেমাঙ্গনা
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
ঌ।

রাতে ভালো ঘুম হয়নি পৃথার। সারা রাত খুব অস্থিরতায় কেটেছে। এই অস্থিরতা উদ্ভবের হদিস সে মেলাতে পারেনি। সকালেও ঘুম ভাঙে তাড়াতাড়ি। উঠে খালাকে বলে এক কাপ গরম কফি দিয়ে যেতে। সেই কফিটাও পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি। এটাতেও তার বমি বমি লাগে। শরীরটা তার বেশিই হয়তো খারাপ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

বাবা অফিসের জন্য বেরিয়ে যাওয়ার পর পৃথা বাসায় একেবারে একা হয়ে যায়। আগে ভার্সিটিতে যেত বলে, সকালটা ভালো ভাবে কাটত। কিন্তু, তার বাবা এখন ভার্সিটিতে যেতেও নিষেধ করে দিয়েছেন। এই চার দেয়াল তার জন্য কোনো জেল খানার চেয়ে কম কিছু না। মাঝে মাঝে কান্না পায়, মনে হয় জীবন যেন বোঝা হয়ে উঠেছে। মুক্তিকে হাতড়ে বেড়ায়। কোথায় একটু মুক্তি পাওয়া যাবে সে বুঝে উঠতে পারে না।

সকালে দুই ঢোক কফি ছাড়া পৃথা আর কিছুই খায়নি। খালা অনেকবার তাকে খেতে ডেকেছে, কিন্তু সে কিছু খাবে না বলে সাফ মানা করে দিয়েছে। শরীর ভালো নেই, মন ও যে খুব খারাপ। ভেবেছিল একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসলে ভালো লাগবে, মন হালকা হবে; কিন্তু, তেমন কিছুই তো হচ্ছে না। উল্টো সময়টা আরো বিরক্তির মনে হচ্ছে যেন।

দীর্ঘশ্বাসের পর্যায় শেষ হতেই পৃথার ফোন বেজে উঠে। হাতে নিয়ে দেখে রুহা কল করছে। সে রিসিভ করে,

‘কেমন আছিস?’

‘ভালো না।’

‘কেন, শরীর এখনও ঠিক হয়নি?’

‘না, উল্টো আরো খারাপ হচ্ছে মনে হচ্ছে। জানিস, ভালো মতো কিছু খেতে পারছি না। যা খাই তাতেই যেন বমি আসে। রাতে বাবার সাথে দুই লোকমা ভাত খেয়েছিলাম, সেটাও রুমে এসে বমি করেছি। কী করব বুঝতে পারছি না। কাল সারারাত ঠিক মতো ঘুমাতেও পারিনি। হঠাৎ এমন কেন হচ্ছে বলতো?’

রুহার খুব কষ্ট হয়। ইশ, যদি সে তাকে সবটা বলতে পারত। মেয়েটাকে আর এত কষ্ট পেতে দেখা পারছে না। রুহা বলল,

‘ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।’

‘হ্যাঁ, আমিও তাই ভাবছি। আজকে বিকেলে ফ্রি আছিস?’

‘হ্যাঁ, আছি।’

‘তাহলে আছই যাব। আর বাবাকে বলব না। বাবাকে বললেই বাবা আবার অস্থির হয়ে উঠবেন।’

‘আচ্ছা, ঠিক আছে।’

‘ঠিক আছে তাহলে, বিকেলে দেখা হচ্ছে।’

‘ওকে।’

কল কেটে দেওয়ার পর পৃথার মনে হলো, রুহার সাথে তো রাগই দেখানো হলো না। তাই সে আবার তাকে কল করল। রুহা কল রিসিভ করতেই সে তাকে ঝাড়ি মেরে বলল,

‘তুই আমার নাম্বার ঐ অর্ণব কে দিয়েছিলি?’

রুহা নির্ভয়ে বলে,

‘হ্যাঁ।’

‘একবার আমার অনুমতিও নিলি না। কেউ চাইলেই তুই তাকে আমার নাম্বার দিয়ে দিবি।’

‘না, কেউ চাইলে দিতাম না। কিন্তু, শুধু অর্ণব ভাইয়া চেয়েছেন বলে দিয়েছি। উনার জায়গায় অন্য কেউ হলে ভুলেও দিতাম না।’

পৃথা ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘কেন, উনাকে কেন দিতে হবে? উনি কে? কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী, যে উনি চাইলেই উনাকে সব দিতে হবে।’

‘উনি ভালো মানুষ। আর ভালো মানুষরা কিছু চাইলে তাঁকে দিতে হয়। না দিলে তাঁদের মনখুন্ন হবে না?’

‘চুপ কর। যত সব আলতু ফালতু কথা। উনি কোন দিক দিয়ে ভালো মানুষ? দেখতেই খালি সহজ সরল, পেটের ভেতর রাজ্যের প্যাচ। কথা বলতে গেলেই ঝগড়া লেগে যায়। আবার বলে উনি নাকি ভালো মানুষ।’

‘শোন, তুই শুধু শুধুই উনার সাথে ঝগড়া করিস। উনি কিন্তু দেখা হওয়ার পর থেকেই তোকে সাহায্য করে আসছেন। আর তুই এর বিনিময়ে উনাকে একবার থেংক্স ও বলিসনি, উল্টো দেখা হলেই ঝগড়া বাঁধিয়ে দিয়েছিস। এটা কিন্তু মোটেও ঠিক হয়নি। উনি আমাদের কত সিনিয়র, নূন্যতম ভদ্রতাটুকুও তো দেখাতে পারতি।’

পৃথা কিছুক্ষণ চুপ থেকে সন্দিহান স্বরে বলে,

‘বাই এনি চান্স, তুই কি উনার প্রেমে পড়েছিস নাকি?’

রুহা সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠে বলে,

‘আসতাগফিরুল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ। এত বড়ো কথাটা বলতে তোর একবারও মুখে বাঁধেনি?’

‘না তো। কেন বাঁধবে? তুই যেভাবে উনার সাফাই গাইছিস তাতে তো মনেই হচ্ছে তুই উনার প্রেমে পড়েছিস।’

রুহা রাগে গলার স্বর চওড়া করে বলে,

‘আরে খবিশ মাইয়া, উনারে আমি আমার দুলাভাই বানানোর স্বপ্ন দেখছি, আর তুই বলছিস আমিই উনার প্রেমে পড়েছি কিনা। আল্লাহ মাফ করুক, আমি এই কথা তো দুঃস্বপ্নেও মাথায় আনতে পারব না।’

‘উনাকে দুলাভাই বানাবি কী করে? তোর কি কোনো বোন আছে নাকি? এই, সারার সাথে বিয়ে দিবি? উমম, না, সারার সাথে উনাকে মানাবে না; দেখতে কেমন যেন ভাই বোন ভাই বোন লাগবে। আর কে আছে? তোর কোনো কাজিন?’

বড়ো করে নিশ্বাস ছেড়ে রুহা বলল,

‘কেন, নিজেকে কি চোখে পড়ে না?’

‘কী, তুই আমার জন্য ঐ ঝগড়াটে ছেলেটাকে পছন্দ করেছিস? ওর সাথে কখনো আমার মতের মিল হবে? জীবনেও না। সারাদিন আমাদের ঝগড়া করতে হবে। আর ওর যা ইগো, আমার ওতো ইগো ওয়ালা ছেলে মোটেও পছন্দ না।’

রুহা মনে মনে ভাবল, “একদিন তো এই ইগো ওয়ালা ছেলের জন্যই জান প্রাণ সব দিয়ে দিয়েছিলি। আর আজ বলছিস, তাকেই পছন্দ না।”

রুহা জবাবে বলল,

‘তোর এখন এসব মনে হচ্ছে, দেখবি বিয়ের পর মনে হবে তুই জীবনে একজন বেস্ট মানুষকে পেয়েছিস। ভাইয়া সত্যিই খুব ভালো মানুষ। আর আমার মনে হয় উনি তোকে পছন্দ করেন। সেই জন্যই হয়তো আমার কাছ থেকে তোর নাম্বার টা নিয়েছেন।’

পৃথা সামনের চুলগুলো পেছনে দিকে ফেলে মজার ছলে বলে,

‘বেশি সুন্দরী হয়ে ঝামেলায় পড়েছি। যে দেখে সেই প্রেমে পড়ে যায়। এইদিকে অর্ণব আর ঐদিকে ফরহাদ। এখন আমি কাকে মন দেই বলতো? উফফ, কী যে করি এখন।’

‘এই, ফরহাদ কি এখনও তোর পেছনে পড়ে আছে?’

‘হ্যাঁ, একেবারে আঠার মতো লেগে আছে। যদিও লোকটাকে আমার একদম সহ্য হয়না। কিন্তু, বাবার জন্য কিছু বলতেও পারিনা।’

‘তাহলে ঐ লোককে তুই মন দেওয়ার কথা ভাবছিস কী করে?’

‘আরে, এটা তো আমি মজা করে বলেছি। আচ্ছা, এখন এসব কথা বাদ দে। বিকেলে রেডি থাকিস। রাখি এখন।’

‘আচ্ছা।’

কল কেটে দিয়ে রুহা দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। বলে তো দিয়েছে বিকেলে তারা ডাক্তারের কাছে যাবে। কিন্তু, সেখানে গিয়ে যদি ডাক্তার চেকআপ করার পর বুঝে ফেলে ও যে প্রেগনেন্ট, তখন তো ডাক্তার ওকে সব বলে দিবে। আর তখন তো ও আরো পাগল হয়ে উঠবে। ওর পাগলামী তখন কে সামলাবে? রুহার মাথায় আসছে না, কীভাবে সে এই পরিস্থিতিকে সামাল দিবে, কীভাবে সবকিছু সাজাবে। অর্ণবকেও কিছু বলা হয়নি। সত্যি জানলে তো উনাকেও আর আটকে রাখা যাবে না। তখন যে কী হবে, ভাবতে এখনই রুহার আত্মা কাঁপছে।

,

ডাক্তারের কেবিনের বাইরে বসে আছে পৃথা আর রুহা। দুজনের চোখে মুখেই চিন্তার ছাপ। তবে রুহা একটু বেশিই ভয় পাচ্ছে। মনে মনে দোয়া করছে, যেন তার ধারনা ভুল হয়।

অনেক অপেক্ষার পর তাদের সিরিয়াল আসে। পৃথা আর রুহা ভেতরে যায়। মহিলা ডাক্তার, পৃথার মুখে সমস্ত উপসর্গের কথা শুনে উনি জিজ্ঞেস করেন,

‘আপনি কি বিবাহিত?’

পৃথা কিছুটা অবাক হয়। অপ্রস্তুত হেসে বলে,

‘না তো। কেন?’

ডাক্তার বলে,

‘না, আসলে আপনি যা বলছেন, সেগুলো একজন প্রেগনেন্ট মহিলার লক্ষণ, তাই সিউর হয়ে নিচ্ছিলাম। কিন্তু, যখন আপনি বিবাহিত না, আমার মনে হয় আপনার ফুড পয়জনিং হয়েছে, ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করছেন না বলে দূর্বল হয়ে পড়েছেন। আর পিরিয়ড ঠিক মতো হওয়ার জন্য আমি কিছু ঔষধ দিয়ে দিয়েছি। রেগুলার ঔষধ নিলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’

পৃথা নিশ্চিন্ত হলেও রুহা কিছুতেই স্বস্তি পেল না। ডাক্তার তো ভালো ভাবে চেকআপ করলেই সব ধরা পড়ে যেত। কিন্তু, উনি তো ভালো মতো না দেখেই একগাদা ঔষধ দিয়ে দিচ্ছেন। সে না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে কিছু সহ্য করতে।

পৃথা প্রেসক্রিপশন নিয়ে উঠে যেতে লাগলেই রুহা বলে উঠে,

‘ম্যাম, আপনি ওকে আরেকটু ভালোভাবে চেকআপ করুন। ওর শরীর আজকাল একটু বেশিই খারাপ। শুধু কি ফুড পয়জনিং এর জন্য এসব হচ্ছে, নাকি অন্যকিছু; ভালোভাবে একবার দেখে নিন।’

ডাক্তার বললেন,

‘ঠিক আছে, আমি ভালো ভাবে দেখছি। আপনি গিয়ে একটু এই বেডে শুয়ে পড়ুন।(পৃথার দিকে চেয়ে)’

পৃথার পর্দার আড়ালে রাখা বেডে গিয়ে শুয়ে পড়ল। ডাক্তার উঠে যেতে নিলেই রুহা উনার সামনে এসে সাবধানের সহিত বলে,

‘ম্যাম, ও বিবাহিত। তবে ওর একটা এক্সিডেন্টে ওর মেমোরি থেকে ছয়মাসের সব স্মৃতি মুছে যায়। সেই সাথে ওর বিয়ে হওয়ার স্মৃতিও মুছে যায়। ওর মনে নেই, ওর যে বিয়ে হয়েছে। তবে আমরা জানি। আর ওর এসব লক্ষণ দেখে আমারও মনে হচ্ছে ও প্রেগনেন্ট। আপনি একটু ভালো ভাবে দেখে আমাকে বলুন। তবে ওকে কিছু বলবেন না, ওর ব্রেইনে চাপ পড়বে। প্লিজ, আমাকে এইটুকু সাহায্য করুন।’

ডাক্তার প্রচন্ড চমকালেও রুহাকে সাহায্য করতে রাজি হন।

ডাক্তার পৃথার কাছে গিয়ে বললেন,

‘আপনার ইউরিন টেস্ট করতে হবে।’

পৃথা খানিক বিচলিত হয়ে বলল,

‘কেন, ইউরিন টেস্ট কেন?’

‘ইউরিন টেস্ট করলে আমরা বুঝতে পারব, আপনার অন্য কোনো সমস্যা আছে কিনা। তাতে আপনার জন্যই ভালো হবে।’

পৃথার ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও রুহার জোরাজুরিতে সে রাজি হয়। ডাক্তার তাদের দু’দিন পর এসে টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে যেতে বলে। তবে রুহার মন বলছে, টেস্টের রিপোর্ট পজেটিভ আসবে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here