প্রেমাঙ্গনা পর্ব -১০+১১

#প্রেমাঙ্গনা
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
১০।

হসপিটাল থেকে বাইরে বেরিয়ে দু কদম আগাতেই আবার থেমে গেল পৃথা। রুহা তার দিকে চাইতেই সে বলল,

‘ফুচকা খাবি?’

রুহা ফুচকার স্টলের দিকে একবার চেয়ে বলল,

‘না।’

পৃথা ভ্রু কুঁচকাল। জিজ্ঞেস করল,

‘তুই খাবি না?’

রুহার ইচ্ছে করলেও সে “না” বলল। পৃথা তার হাত ধরে টেনে বলল,

‘উঁহু, খেতে হবে। চল।’

‘আরে, পাগল হয়েছিস তুই? এমনিতেই তোর শরীরের অবস্থা ভালো নেই। এর মধ্যে যদি এসব বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাস তাহলে তো আরো অসুস্থ হয়ে পড়বি। সুস্থ থাকলে পরে এসব অনেক খেতে পারবি, আগে এখন সুস্থ হয়ে উঠ।’

পৃথা মুখ কালো করে বলল,

‘খাবো না তাহলে?’

‘না, খাবি না। চল।’

এই বলে রুহা একটা রিক্সা ডেকে তাতে উঠে পড়ল। পৃথাকেও বাধ্য হয়ে রুহার কথা মানতে হলো।

যাওয়ার পথে সিগন্যাল পড়ে। রোদহীন নরম বিকেল। আবছা বাতাসেরও সুর পাওয়া যাচ্ছে। পৃথার কাঁধ পর্যন্ত ছোট চুল। সেগুলো খোলা বাতাসে উড়ছে। তার উড়না’টা রিক্সার বাইরে দুলছিল। সিগন্যাল খুলতে আর দশ সেকেন্ড বাকি। এর মাঝেই পাশ থেকে বাইক আরোহিত একটা ছেলে এসে বলল,

‘এক্সকিউজ মি, আপনার ওড়নাটা ঠিক করুন, চাকায় আটকাবে নয়তো।’

পৃথা ছেলেটার দিকে ফিরে তাকাতেই ছেলেটা অবাক হয়। হেলমেট পরে থাকায় পৃথা তাকে চিনতে পারেনি। তাই সে আলতো হেসে ওড়নাটা কোলের উপর নিয়ে বলে,

‘ধন্যবাদ।’

তাকে চিনতে পারলেও অর্ণব স্বাভাবিক থাকে। মৃদু সুরে বলে,

‘ইট’স ওকে।’

তারপর সিগন্যাল ছাড়লে তাদের রিক্সা আবার চলতে আরম্ভ করে। অর্ণবের গন্তব্য তার বাসার দিকে হলেও, সে তার বাইক নিয়ে এখন পৃথাদের রিক্সার পেছন পেছন যেতে থাকে। রিক্সা গিয়ে পৃথাদের বাসার সামনে থামে। অর্ণব অনেক দূরে আড়ালে দাঁড়ায়। পৃথা নামতেই তার কাছে খালা ছুটে আসে। তিনি এসে ভয়ার্ত সুরে বলেন,

‘স্যার খুব চেইতা গেছেন, খালা।’

পৃথা চিন্তিত সুরে বলে,

‘কেন, কী হয়েছে?’

‘প্রথমত, আপনি উনারে না কইয়া বাইরে গেছেন, তার উপর বাড়ির গাড়িও নেন নাই। আমারে ফোন কইরা খুব বকছে। কইছে, আপনি আইলেই উনারে ফোন দিয়া জানাইতেন।’

‘উফ, আমি না বারণ করেছিলাম, আমি যে বাইরে যাচ্ছি এটা যেন বাবাকে না জানানো হয়। তাও কে বলেছে বাবাকে?’

খালা মিইয়ে যাওয়া সুরে বলল,

‘আমি বলি নাই, খালা। ঐ রহমত আলী কইছে। ও তো আর কিছু জানত না, তাই কইয়া দিছে।’

পৃথা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

‘আচ্ছা, যান। আমি বাবাকে সামলে নিব।’

তারপর সে রুহাকে বিদায় দিয়ে বাসার ভেতরে চলে যায়। সে চলে যাওয়ার পর অর্ণব তার বাইক নিয়ে রুহার কাছে আসে। হেলমেট টা নামিয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘কোথায় গিয়েছিলে, তোমরা?’

রুহা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সত্য বলবে, নাকি মিথ্যে বলবে বুঝে উঠতে পারে না। অর্ণব কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,

‘কী হলো, কিছু বলছো না যে?’

রুহা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ছোট্ট একটা ঢোক গিলে বলল,

‘একটু ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম।’

অর্ণব আরো অস্থির হয়ে উঠল।

‘কেন? ওর শরীর কি বেশি খারাপ করেছে? তুমি আমাকে আগে কেন বলোনি? আমি না বলেছি, ওর কিছু হলে আমাকে আগে জানাবে। কী হয়েছে ওর, ডাক্তার কী বলেছেন?’

‘টেস্ট করিয়েছেন, এখন রিপোর্ট দিলে বোঝা যাবে?’

‘কিসের টেস্ট? ব্লাড টেস্ট?’

রুহা কিছু না ভেবেই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাল। অর্ণব বলল,

‘আচ্ছা, রিপোর্ট আনার সময় আমাকে বলবে। আবার একা গিয়ে নিয়ে এসো না।’

‘আচ্ছা, ভাইয়া।’

‘ঠিক আছে, যাও এখন। আল্লাহ হাফেজ।’

অর্ণব চলে যেতেই রুহা যেন শ্বাস নিতে পারল। উফ, মানুষটা রেগে গেলে ভয়ানক হয়ে উঠেন। আল্লাহই জানেন, সব সত্যি জানার পর তখন না জানি উনি কী করে বসেন।

,

রাতে পৃথার বাবা অফিস থেকে ফিরলে সে ইনিয়ে বিনিয়ে বাবাকে ম্যানেজ করে ফেলে। এই নিয়ে তাই পৃথার বাবা তাকে কিছু বলেননি। তবে তিনি পরবর্তীতে পৃথাকে আবার উনার রুমে ডাকলেন। পৃথা রুমে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘বাবা, কিছু বলবে?’

‘হ্যাঁ, বসো এখানে।’

পৃথা বাবার পাশে গিয়ে বসল। তার বাবা তার মাথায় হাত রেখে বললেন,

‘শরীর ভালো তো তোমার?’

পৃথা হালকা হাসার চেষ্টা করে বলল,

‘হ্যাঁ বাবা, আমি ঠিক আছি।’

‘আচ্ছা। তুমি ঠিক থাকলেই আমি খুশি। আসলে তোমাকে একটা কথা বলার ছিল…’

‘কী বাবা, বলো?’

বাবা তার দিকে চেয়ে বললেন,

‘ফরহাদকে তোমার কেমন লাগে?’

পৃথার তো ইচ্ছে করছে বলে দিতে যে, “একেবারে জঘন্য লাগে।” কিন্তু, সে নিজেকে সংযত রেখে বলল,

‘ভালোই। কিন্তু, তুমি হঠাৎ এই প্রশ্ন করলে কেন?’

‘বলছি বলছি। তার আগে আরেকটা কথা বলোতো, ফরহাদ জীবন সঙ্গী হিসেবে কেমন হবে?’

পৃথার বুক ধক করে উঠে। চোখ মুখ চুপসে যায় তার। ভীত স্বরে জিজ্ঞেস করে,

‘কার জীবন সঙ্গী?’

তার বাবা হেসে জবাবে বললেন,

‘কেন, তোমার।’

‘ইম্পসিবল। এটা কখনোই সম্ভব না।’

বাবার কপালে চওড়া ভাঁজ পড়ল। তিনি বিরক্ত স্বরে বললেন,

‘কেন সম্ভব না?’

পৃথা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল,

‘ও আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে একদমই পারফেক্ট না। আর সবথেকে বড়ো কথা হলো, ওকে আমার একদমই পছন্দ না। সো, ওকে বিয়ে করার কোনো প্রশ্নই উঠে না।’

পৃথার বাবা উনার চোখ থেকে চশমা নামিয়ে সেটা পরিষ্কার করে আবার চোখে লাগালেন। তারপর তিনি কঠিন গলায় বললেন,

‘সবসময় সবকিছু তোমার ইচ্ছে মোতাবেক হবে না। কিছু সিদ্ধান্ত তোমার মেনে নিতে হবে। আমি তোমার সাথে ফরহাদের বিয়ে ঠিক করেছি। আগামী শুক্রবার তোমাদের বিয়ে। এই নিয়ে যেন আমাকে আর কিছু বলতে না হয়।’

পৃথা উঠে দাঁড়ায়। বাবার দিকে চেয়ে বলে,

‘আমাকে না জানিয়ে যখন এত কিছু করে ফেলছ, তখন আর আমার অনুমতি নিতে এসেছ কেন? আগামী শুক্রবার কেন? আজই, এক্ষণি আমার বিয়ে দিয়ে দাও। এমনিতেও মা মারা যাওয়ার পর থেকেই আমার কোনো কথার গুরুত্ব তুমি দাওনি। সব তোমার সিদ্ধান্ততেই চলেছে। আজ তাহলে তার বিপরীত হবে কেন? যাও তোমার সুপাত্র ফরহাদকে নিয়ে এসো, আমি এখনই তাকে বিয়ে করব।’

এই বলে পৃথা দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। দরজা ভেতর থেকে আটকে দিয়ে জোরে জোরে কাঁদতে আরম্ভ করে। বিছানার বালিস ছুড়ে মারে এদিক ওদিক। খুব কষ্ট হচ্ছে তার। বুক যেন ফেটে যাচ্ছে সেই কষ্টে। মা’কে চিৎকার চরে ডাকছে। কিন্তু, মা কি আদৌ শুনতে পাচ্ছে তার মেয়ের এই আর্তনাদ।

কাঁদতে কাঁদতে পৃথার এখন মাথা ধরেছে। ঝাপসা চোখে ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখে এগারোটা বাজে। এর মাঝে একবারের জন্যও বাবা তাকে মানাতে আসেনি। আর আসবেই বা কেন, ঐ মানুষটা তো তার কষ্ট বোঝে না। সে কোনটাতে খুশি থাকবে তার থেকেও উনার কাছে বেশি ইম্পোরটেন্ট উনি কোনটাতে বেশি লাভ করতে পারবেন। ঐ ফরহাদের সাথে বিয়ে দিতে পারলে তো উনারই লাভ। উনি উনার বিজনেসটাকে আরো শক্ত করতে পারবেন। কিন্তু, এসবের প্যাঁচে পড়ে তো পৃথা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। তার দম আটকে আসছে। মনে হচ্ছে সবকিছু ছেড়ে পালিয়ে যেতে। কিন্তু, উপায় কোথায়…

চলবে….#প্রেমাঙ্গনা
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
১১।

ঘড়ির কাটায় তখন দুইটা বেজে পনেরো মিনিট। পুরো শহর যখন ঘুমে নিস্তব্ধ তখন একজন উদাসী রমনী রুম জুড়ে পায়চারি করে চলছে। দু চোখে তার ঘুমের ছিটে ফোঁটাও নেই। চোখ ফুলে আছে। নাক টকটকে লাল। সে যে কেঁদে কেটে অস্থির তা এখন যে কেউ একবার দেখেই বলে দিতে পারবে।

এত ভেবেও কোনো সমাধান যে বের করতে পারছে না। মনকেও বোঝাতে পারছে না। মন কোনোভাবেই ঐ ফরহাদকে জীবন সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করতে চাইছে না। কী করবে? কার কথা শুনবে? বাবা? নাকি মনের?
অনেক সময় নিয়ে মনকে বুঝিয়েও যখন লাভের লাভ কিছু হলো না, তখন পৃথা রুহাকে কল দিল। তার সকল সমস্যার সমাধান যেন এই মেয়েটার কাছেই আছে।

রুহা ঘুমিয়ে পড়েছিল। এত রাতে পৃথার কল দেখে সে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে। কল রিসিভ করেই অস্থির হয়ে বলে,

‘কী হলো, পৃথা? তুই ঠিক আছিস?’

‘না, ঠিক নেই। বিশাল বড়ো সমস্যাই আছি।’

‘কেন, কী হয়েছে? শরীর কি অনেক বেশি খারাপ লাগছে?’

পৃথা ঠোঁট উল্টে বলল,

‘শরীর না মন। মনের আজ ভীষণ শরীর খারাপ।’

‘কী হয়েছে, বলবি তো?’

‘বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছেন, ফরহাদের সাথে।’

রুহা চকিত হয়ে বলল,

‘কী?’

‘হ্যাঁ, এখন বল আমি কী করব? আমি আমার মনকে কোনোভাবেই মানাতে পারছি না। বারবার মন বলছে ঐ ছেলেকে তার একেবারেই পছন্দ না। এখন যাকে পছন্দ না, তাকে বিয়ে করব কী করে?’

রুহা মাথায় হাত দিয়ে বসে। একের পর এক ঝামেলা কেবল লেগেই চলছে। এই ঝামেলার শেষ কোথায়?

‘কিরে রুহা, বল কিছু; চুপ করে আছিস কেন?’

‘তুই আংকেল কে বারণ করে দে, বল তুই বিয়ে করবি না।’

‘বলেছি তো। আমি বলেছি বাবাকে, যে ঐ ছেলেকে আমার পছন্দ না, ওকে আমি বিয়ে করব না। কিন্তু, বাবা বলেছেন, উনি নাকি আমার আর কোনো কথা শুনবেন না। জোর করেই নাকি আমাকে এবার বিয়ে দিবেন। আমি এখন কীভাবে এই বিয়ে আটকাবো? একটা উপায় বল না, দোস্ত।’

রুহা চোখ বুজে ভাবতে থাকে এবার তার কী করা উচিত। এইসব কিছু এখন হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। পৃথাকে এবার সব সত্যি বলতেই হবে।

রুহা বলে,

‘পালিয়ে যা।’

‘পালিয়ে যাব কোথায়? তোর কাছে আসব? বাবা ইজিলি আমাকে খুঁজে বের করে ফেলতে পারবেন।’

‘একা একা পালালে তো হবে না। কারোর সাথে পালাতে হবে।’

‘কিন্তু, কার সাথে পালাবো?’

রুহা শক্ত হয়ে বলল,

‘অর্ণব ভাইয়ার সাথে।’

পৃথা নাক মুখ কুঁচকে বলে,

‘মাথা খারাপ তোর? উনার সাথে আমি কেন পালাতে যাব? উনি কি আমার বয়ফ্রেন্ড হোন যে আমি এখন সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে উনার সাথে পালাব?’

‘তাছাড়া আর উপায় নেই, পৃথা। তোকে আবার পালাতে হবে। ঐ বাড়িতে থাকলে তোর বিয়ে ফরহাদের সাথেই হবে। এই বিয়ে কেউ আটকাতে পারবে না।’

পৃথা খানিক চুপ থেকে বলল,

‘আবার পালানোর কথা বলছিস কেন? আমি কি এর আগে কখনো পালিয়েছি নাকি?’

রুহা ঢোক গিলে বলল,

‘জানি না আমি, তোর এত প্রশ্নের জবাব আমার কাছে নেই। এখন যেটা বলছি, সেটা কর। পালিয়ে যা। অর্ণব ভাইয়াকে এখন কল দে। কল দিয়ে সব খুলে বল উনাকে। তারপর উনিই সব ব্যবস্থা করবেন।’

পৃথা বুঝে উঠতে পারে না কিছু। অর্ণবই বা কেন তার সাথে পালাতে রাজি হবে? সে না হয় পৃথাকে পছন্দ করে, তাই বলে হুট করে বললেই কেউ কারোর সাথে পালিয়ে যাবে নাকি? আশ্চর্য!

পৃথা বিরক্ত গলায় বলে,

‘তোর মাথা খারাপ? উনার সাথে আমার ভালো করে একদিন কথাও হয়নি, আর আজ আমি উনাকে কল দিয়ে বলব, “চলুন, পালিয়ে যাই” আর উনিও তখন নাচতে নাচতে বলবেন, “হে হে, চলো।” তোর কি তাই মনে হয়?’

‘আমার শুধু মনে হয় না। আমি সিউর। উনি আমাকে বলেছেন, উনি তোকে ভালোবাসেন। তুই এই সুযোগটা কাজে লাগা, পৃথা। পরে নয়তো পস্তাবি।’

পৃথার মাথা ঘুরাচ্ছে। কী করছে, কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। অর্ণব কে হুট করে পালিয়ে যাওয়ার কথা সে কী করে বলবে? তার উপর ছেলেটাকে তো সে ভালো করে চেনেও না। এভাবে হুট করে কারো সাথে পালিয়ে যাওয়া যায় নাকি? না, রুহার এই আইডিয়াটা পৃথার একেবারেই পছন্দ হয়নি। তাই সে তেঁতো মুখে বলে,

‘আচ্ছা, তুই ফোন রাখ; আমি ভেবে দেখছি।’

এই বলে সে নিজেই কল কেটে দেয়। রুহা ঐদিকে আর বিলম্ব না করে দ্রুত অর্ণবকে কল করে। সে তাকে সবকিছু খুলে বলে। সব শোনার পর অর্ণবের সেই দমে যাওয়া রাগ পুনরায় তড়তড় করে মাথায় চড়ে উঠে। সে তখনই রুহার কল কেটে পৃথাকে কল দেয়। পৃথা নাম্বারটা দেখেই চিনতে পারে। অর্ণব এই সময় কল দেওয়ায় সে বুঝে ফেলে যে রুহা তাকে সব বলে দিয়েছে। তাই সে কল রিসিভ করে। ওপাশ থেকে অর্ণবের ঝাঁঝাল স্বর শোনা যায়। সে বলে উঠে,

‘কালকে বিকেলে সবকিছু গুছিয়ে তৈরি থাকবেন, আমি আপনাকে নিতে আসব।’

‘কেন?’

‘কেন মানে? আপনি কি তাহলে ঐখানে থেকে ফরহাদকে বিয়ে করবেন?’

‘না, ঐ ছেলেকে আমি বিয়ে করতে চাই না।’

‘তাহলে এত কথা না বলে যা বলেছি তাই করবেন।’

‘কিন্তু, আমি আপনার সাথে পালাতেও চাই না। আপনার সাথে পালালে আমার বাবা কষ্ট পাবেন। আর তাছাড়া আমি আপনাকে চিনিও না।’

পৃথার কথা শুনে অর্ণব কিছুক্ষন থ মেরে বসে থেকে বিষন্ন সুরে বলে,

‘আপনি আমাকে চিনেন না?’

‘না, আপনার সাথে তো আমার খুব একটা কথাও হয়নি। আপনার সম্পর্কে তো আমি তেমন কিছুই জানি না। আর আপনিও তো আমাকে ভালোভাবে চেনেন না। এভাবে না চিনে, না জেনে কারোর সাথে পালিয়ে যাওয়া যায় নাকি?’

অর্ণব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,

‘জানেন, একদিন আমাকে একজন বলেছিল, ভালোবাসার জন্য নাকি চেনা জানার প্রয়োজন নেই। ভালোবাসা তো এমনই হয়। সবসময় পরিচয়ে পরিনয় হয় না। মাঝে মাঝে অপরিচিতের মাঝেও প্রণয় মেলে। কথাটা কিন্তু সত্যি। আপনি আমায় চেনেন না, তাই বলে কি ভালোবাসা যায় না? অপরিচিত থেকেই তো পরিচিত হয়, হাত না বাড়ালে হাত ধরার মানুষ কোথায় পাবেন? আর বাকি আমার আপনাকে চেনার কথা? সেটা তো আমি আরো আগেই চিনে ফেলেছি। হাজার অপরিচিতের ভিড়েও আমি আপনাকে চিনতে পারব। তাই আপনাকে আর আমার নতুন করে চেনার কোনো প্রয়োজন নেই। তারপরও যদি আমাকে আপনার বিশ্বাস না হয়, তাহলে ঐ ফরহাদকেই বিয়ে করে নিন।’

পৃথা জোরে নিশ্বাস ছাড়ে। গালে হাত দিয়ে ভাবে, কী করবে সে। এই লোকটা, এত অপরিচিত তাও লোকটাকে তার কত আপন মন হয়। মনে হয়, লোকটার কাছে সে সম্পূর্ণ নিরাপদ। মনে হয় যেন তাকে চোখ বন্ধ করেই বিশ্বাস করা যায়। অন্য কাউকে তো সে এত সহজে বিশ্বাস করতে পারে না, তাহলে এই লোকটাকেই কেন মন এত সহজেই ভরসা করতে চাইছে? কেন তার প্রতি কোনো সন্দেহ হচ্ছে না? আচ্ছা, লোকটা কি তার পরিচিত কেউ? যাকে সে হয়তো চিনে, কিন্তু মনে করতে পারছে না?

অর্ণব বলে,

‘তো,কী সিদ্ধান্ত নিলেন? পালাবেন, নাকি বিয়ে করবেন?’

‘বিয়ে তো আমি মরে গেলেও করব না। আর পালাব কিনা সেটা এখনও বলতে পারছি না। আমার দুদিন সময় লাগবে।’

‘ঠিক আছে, সময় নিন। তবে বেশি দেরি যেন না হয়।’

অর্ণব কল কেটে দেয়। আর পৃথা, বিছানায় হেলান দিয়ে ভাবতে থাকে, এবার তার কী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here