প্রেমের খেয়া পর্ব ২১

#প্রেমের_খেয়া
#লেখিকা_জান্নাতুল_মীর
#পর্ব_২১

প্রচন্ড বজ্রপাণির শব্দে মায়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলতেই দেখলো সামরানের বুকে শুয়ে আছে। মাথা উঁচিয়ে সামরানের মুখের দিকে একবার তাকালো মায়া। ঘুমাচ্ছে সামরান। ঘুমন্ত মানুষটির মুখের দিকে তাকাতেই মায়ার মুখে বাকা হাসির রেখা ফুটে উঠলো। সামরানের হাতের বাধন ছাড়িয়ে উঠে বসে পড়ে মায়া। অবিরত ধারায় ঘামছে মায়া। জ্বর ছেড়ে দিয়েছে মায়ার। অনেক গরম লাগছে। ফ্যানে ধীরগতিতে ঘুরছে। কিন্তু এতে তো গরম কাটছে না মায়ার। আস্তে আস্তে বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো। বাহিরে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। বাতাসে উড়ছে রুমের পর্দা। বৃষ্টির পানি ছিটকে রুমে আসছে। মায়া বারান্দার দরজা বন্ধ করতে গেল। কিন্তু বাহিরের বাতাস এতোই ভালো লাগছিল যে মায়া আর দরজা বন্ধ করলো না। বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো। বৃষ্টি ছিটকে মায়ার চোখ মুখে আছড়ে পড়ছে। চোখ বন্ধ করে তা অনুভব করছে মায়া। বৃষ্টির পানিতে শাড়ি অনেকটাই ভিজে গেছে। ঠান্ডা বাতাস আর ঠান্ডা পানির স্পর্শে মায়ার সারা অঙ্গ কেঁপে উঠলো। তারপরও ভেতরে গেল না। বারান্দায় রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে একটু ঝুকে মুখ টা বাহিরে বের করলো মায়া। বৃষ্টিতে মায়ার মুখ ভিজে যাচ্ছে। মুখে আছড়ে পড়ে পানি থুতনি বেয়ে ফোটায় ফোটায় পড়ছে।

সামরান পাশে ফিরতেই দেখলো বিছানা খালি। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে পড়ে। বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে দেখল রাত ৩টা। বাহিরের বৃষ্টির শব্দ কানে আসতেই সামরান বারান্দার দিকে তাকালো। বারান্দার দরজা বন্ধ করে দিলে হয়তো আওয়াজ কম আসবে। সামরান বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো। বারান্দার সামনে আসতেই মায়াকে দেখে থমকে দাড়ালো। এই মেয়ের এমনিতেই জ্বর তার উপর বৃষ্টিতে ভিজছে। বিরক্তি নিয়ে সামরান বারান্দায় পা রাখলো। বারান্দায় যেতেই সামরান নিজেও বৃষ্টির ঝাপটায় অনেকটা ভিজে গেল। মায়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো সামরান। শাড়ির নিচে পেটে ঠান্ডা স্পর্শ পেতেই মায়া চট করে পেছনে ফিরে গেল। থুতনি বেয়ে এখনো পানি পড়ছে মায়ার। সামরান থুতনিতে মুখ ঠেকিয়ে পানি শুষে নিল। এই প্রথম কোনো পুরুষের স্পর্শ পেয়ে মায়া পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল। সামরান সরে আসে। মায়ার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে–

–আপনি না অসুস্থ? এইভাবে ভেজার মানে কি?

–না জ্বর তো নেই তাই….

–তাই ভিজতে হবে?

— না ভিজি নি। পানি ছিটকে….

–বাহানা দিচ্ছেন যখন সুন্দর করে দিন। কেন এমন বেঢং এর বাহানা দিচ্ছেন?

মায়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো সামরানের দিকে। লোকটা কেন এমন? একটু ভিজলে কি হয়?

–আসুন শাড়ি বদলে নিন। নাহলে আবার জ্বর আসবে।

সামরান রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। মায়া সামরানের হাত ধরে ফেলে। নিজের হাতে মায়ার স্পর্শ পে চটজলদি ফিরে তাকালো সামরান। মায়া হাত ছেড়ে এক কদম পিছিয়ে যায়। মৃদুস্বরে বলে–

–আমি শাড়ি পরতে পারিনা!আর এখানে শাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই। কিভাবে পরবো?

একটু এগিয়ে আসে সামরান।

–এটা ভেজার আগে মনে রাখা উচিৎ ছিলো। এখন মনে রেখে লাভ কি?

মায়া শুকনো ঢোক গিলে অসহায়ের মত তাকিয়ে রইলো।

–আসুন আমি হেল্প করবো।

–না না…

সামরান ভ্রু কুঁচকে তাকাল

–এই ভেজা শাড়ি নিয়ে রাত পার করবেন?

— না মানে..মাথা নত করে নেয় মায়া। সামরান হালকা হেসে বলে,

–প্রমিস! আমি কিছু দেখবো না। কিছুক্ষণের জন্য ব্লাইন্ড হয়ে যাবো। চলবে…?

মায়া মাথা তুলে তাকালো। হেসে বলল,

–চলবে।

বাথরুম থেকে ব্লাউজ, পেটিকোট পরে মায়া বের হলো। বের হওয়ার আগে একবার উঁকি দিলো রুমে। কিন্তু রুম্ব সামরানকে দেখলো না। সামরান নিজের চোখ একটি রুমাল দিয়ে বেধে নিল। মায়া পেছনে এসে দাড়ালো। শাড়ি হাতে নিয়ে সামরান মায়ার দিকে ফিরলো।

–শুনুন? আমি স্টেপ বাই স্টেপ কমপ্লিট করে আপনাকে দেবো! আপনি সেটা সেট করবেন ঠিক আছে?

–আচ্ছা। মায়া একদৃষ্টিতে সামনে থাকা মানুষটির দিকে তাকিয়ে রইলো।

সামরান শাড়ির এক প্রান্ত হাতে নিয়ে। মায়ার দিকে এগিয়ে দিলো,

–এটা এখানে(নিজের কোমরে হাত দিয়ে দেখিয়ে) গুঁজে দিন।

–দিলাম।

–একটু ঘুরুন।
মায়া একটু ঘুরলো। শাড়ি পেঁচিয়ে গেল। তারপর সামরান হাতের আঙুলের ভাঁজে কুচি ধরলো। কুচি করে মায়ার দিকে এগিয়ে দিলো।

–নিন। এটা ধরুন। আর এখানে সেট করুন। আবার ইশারায় বোঝালো মায়াকে। মায়া শাড়ি সেট তো করছে। তবে দৃষ্টি জোড়া তার সামনে থাকা অদ্ভুত মানুষটির দিকে স্থির হয়ে আছে।

শাড়ির আঁচল তুলে দিয়ে সামরান হালকা হাসলো।

–ডান?

–ডান..
নিজের চোখ থেকে বাধন খুলে দেয় সামরান। মায়াকে মাথা থেকে পা অবধি দেখে নিল।

–পারফেক্টলি ডান। বলেই হাসলো সামরান।

মায়া চোখ সরিয়ে নিলো। সামরান গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

–আসুন ঘুমিয়ে পড়ুন। আর কিন্তু বারান্দায় যাবেন না। ঠিক আছে।

–হুম,আসছি।

ভোরের আলো মুখে এসে পড়তেই মায়ার ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভাঙতেই দেখল সামরান ঘুমাচ্ছে। ঘুমন্ত মুখে হালকা তেল ছিটে ভাব। গালে থাকা দাড়ি যেন সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মায়া আস্তে করে সামরানের পাশে গিয়ে বসলো। এক হাতের কুনুই বিছানায় ঠেকিয়ে ভর দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় সামরানের দিকে ঝুকে বলল–

–ইশশ!কত্ত মায়াবী আপনি। একদম আমি যেমন চেয়েছিলাম তেমন। কেন যে শ্যামবর্ণের হলেন? আমার তো ইচ্ছে করে আপনার দিকে তাকিয়ে থাকি। কিন্তু পাছে আপনি বেহায়া ভাবেন তাই আর সাহস হয় না। কথা বলতে বলতে মায়া একটি ভয়ানক কান্ড ঘটিয়ে ফেলল। সামরানের কপালে চুমু খেল। সোজা হয়ে নিজের মুখ চেপে হালকা হাসলো,

–ইশশ!! ভাগ্যিস জেগে নেই আপনি। আমি না বেশিদিন আপনার কাছ থেকে দূরে থাকতেই পারবো না। কি মায়াবী আপনি? আমি প্রেমে পড়ে যাবো। ইশশ!একটু ফর্সা হতেন তাহলে কিন্তু আমি আজীবন দুঃখ বয়ে বেড়াতাম। এটা ভেবে যে, আমার স্বামী আমার মন মতো হলোই না। বলেই মায়া ফিক করে হেসে দিল। সরে আসতে নিলেই মায়ার হাতে টান পড়ে। মায়া ভয়ে তটস্থ হয়ে যায়। সামরান মৃদু হেসে বলল–

–প্রেমে পড়লে খুব একটা মন্দ হবে না বলুন?

–আপপনি ঘুমমান ননি?

–ঘুমিয়েছি তো! কিন্তু কারো মিষ্টি কন্ঠ আমাকে ঘুমে থাকতেই দিল না। আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়ে দিল।

–আস আসলে…

–এখন আবার আসল নকল চেনাবেন?

–ফে ফ্রেশ হহতে হবে?

–ধরে কে রেখেছে? বলেই সামরান মায়ার পিঠের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিলো। মায়া দ্রুতগতিতে বিছানা ছেড়ে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেল। সামরান হাসতে থাকে।

সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। মায়া আগেই চলে এসেছে। সামরান এসে চেয়ার টেনে নিল। বাড়িতে ডেকোরেশন এর লোক দেখে সামরান সেলিনা মালিকের দিকে তাকালো–

–এসব কি?

— কি আবার? রিসেপশন পার্টির আয়োজন।

–ওহহ।

–হুম। তুই কোথাও যাবি?

— বাড়িতে বসে থাকবো?

–কাল বিয়ে হয়েছে আজ কোথায় যাবি ভাই? অবাক হয়ে বলে শেহেরজাদ।

সামরান মায়ার দিকে তাকালো। মায়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

–কোথাও যাবো না। আউট হাউজে আছি। কারো প্রয়োজন হলে ডেকে নিও।

খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সিমি সেলিনা মালিককে ডেকে রুমে নিয়ে আসে। সেলিনা মালিককে বলে দেয় যে মায়া তার বোন। সেলিনা মালিক সবটা শুনে বিস্ময়ের চরম সীমায় পৌছে গেল।

–বাহহ অজান্তেই হোক একটা ভালো কাজ করেছি।
এবার দেখিস উনারা মেনে নেবে। তোর আর কাদঁতে হবে না।

–আম্মা! আমি তোমাদের খুব ভালোবাসি।

–আর শেহেরজাদকে?

সিমি সেলিনা মালিকের দিকে তাকিয়ে রইলো।

–ওনারা জানে না সিমি। সেদিন তুই যা করেছিলি তা বাধ্য হয়ে করেছিলি। সত্যিটা কেউ না জানুক আমি তো জানি। আর আজ যখন ওনারা আসবেন তখন সব ভুল-ভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে। দেখিস!

–তাই যেন হয় আম্মা। আমি আর কিছু চাইনা।

–আচ্ছা এখন আর মন খারাপ করে থাকিস না। হাতে হাত লাগিয়ে সব করে দে। আর মায়া কোথায়?

–হয়তো রুমে আছে।

–আচ্ছা আমি যাচ্ছি। দেখি কিছু লাগবে নাকি।

–আচ্ছা।

মায়া ঘুমাচ্ছিলো। রাতে ঘুম হয়নি। বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো মায়া নিজেও টের পেলো না। ফোনের রিংটোন এর শব্দে মায়ার ঘুম ভেঙে গেল। ফোন হাতে নিতেই দেখলো ফাইজা কল করেছে। বিয়েতে মেয়েটা আসেনি।

–হ্যালো,

–কেমন আছিস নতুন বউ?

–এইতো ভালো। তুই কেমন আছিস?

–ভালোই। কি করছিলি?

–ঘুমাচ্ছিলাম। রাতে ঘুম হয়নি।

–হবে কি করে? বর সাহেব কি ঘুমাতে দিয়েছেন?

–আরে তেমন কিছুই না। আমার শরীর খারাপের জন্যই।

–ওহহ। তারমানে তুই বলছিস কিছুই হয়নি?

–না মানুষটা অনেক ভালো।

-একদিনেই ভালো লেগে গেল? বাব্বাহহ।

মায়া হাসলো।

–শোন আজ কিন্তু আসবি তুই। সন্ধ্যায় না এলে আর আমার মুখ দেখবিনা বলে দিলাম।।

–যথা আজ্ঞা মহারানী আপনি দেখবেন আমি সন্ধ্যার আগেই হাজির।

–আচ্ছা।

সেলিনা মালিক দরজার নক করতেই মায়া উঠে বসে,

–আসুন আম্মা।

— কি করছিলে?

-চোখ লেগে এসেছিলো!

–ওহহ,জ্বর কমেছে? মায়ার কপালে হাত রেখে বলল সেলিনা মালিক।

–হ্যা রাতেই কমেছে।

–আমি কিছু বলতে এসেছিলাম।

–বলুন না আম্মা।

–কথা দে সবটা শুনে তারপর সিদ্ধান্ত নিবি!

–আচ্ছা। কিন্তু এমন কথা আম্মা?

— আছে কিছু একটা। মন দিয়ে শোন। তারপর যা বলবি তাই হবে…

–আচ্ছা বলুন…….

বিঃদ্রঃ দেরীতে দেওয়ার জন্য দুঃখিত। আমি অনেক ব্যস্ত ছিলাম। তাই দিতে পারিনি। কথা দিয়েছিলাম তাই দিয়েছি নাহলে কিন্তু দিতাম না। আবারো বলছি দেরী হওয়ার জন্য সরি!!

চলবে???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here