প্রেম পর্ব -২৩

প্রেম 💜 (Love has no limits)

#পর্বঃ ২৩

কেমন যেন ওলট পালট লাগছে স্পর্শিয়ার কাছে সব। সায়ান ওর আশেপাশে ঘুরঘুর করছে এটা ওর মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু শত হলেও সায়ান আরাধ্যর ভাই। ও এখানে যাওয়া আসা করবে এটাই স্বাভাবিক। সায়ান সবার সাথে হল রুমে আড্ডায় ব্যস্ত, আর স্পর্শিয়া দূরে দাড়িয়ে এসব ভেবে চলেছে।

হঠাৎ ঘাড়ে কারও ঠোঁটের ছোয়া পেতেই স্পর্শিয়া চিৎকার দিয়ে পিছনে ঘুরলো। আরাধ্য সাথে সাথে ওর মুখ চেপে ধরলো।
– স্পর্শ, কি হলো? ইটস মি।
স্পর্শিয়া ভয়ে থরথর করে কাপছে।
আরাধ্য স্পর্শিয়ার দুগালে আলতো করে ধরে বলল,
– আরে, কি হয়েছে? ভয় পাচ্ছ কেন?
– আরাধ্য, আ..আ…আমি
– হুম বলো।
– কিছু না।
– বলবে না?
– আসলে আমার কেমন যেন আনইজি লাগছে। সায়ান আমার আশেপাশে হাটাহাটি করছে। ওর সাথে এরকম প্রায়ই দেখা হবে, কিন্তু এটা কেন যেন আমি মেনে নিতে পারছি না। খুব অদ্ভুত লাগছে আমার কাছে।
– তুমি ভেবেছিলে তোমার ঘাড়ে আমি না, বরং সায়ান কিস করেছে তাই এভাবে চিৎকার দিয়েছিলে?

স্পর্শিয়া একবার চোখ তুলে আরাধ্যর দিকে তাকালো, তারপর আস্তে করে বলল,
– হুম। তাই ভয় পেয়েছিলাম।

– স্পর্শ, এটা জরুরি না যে আমরা সবসময় যা দেখি তা ই সত্যি হয়। মানুষের ভেতরে একটা থাকে, আর মানুষ আমাদের অন্য কিছুই দেখায়।
– কি বলতে চাচ্ছ আরাধ্য?
– সায়ান তোমার কাছে যা ফেস করিয়েছে আসলে ব্যাপারটা সেটা না।
– মানে?
– আমি কিছু জানতে পেরেছি সায়ানের ব্যাপারে।

ওদের কথার মাঝেই সায়ান এসে দাড়ালো। স্পর্শিয়া আর আরাধ্যকে উদ্দেশ্য করে বলল,
– কেমন আছ তোমরা?
– ভালো।
আরাধ্যর নির্লিপ্ত জবাব।
– হ্যা, ভালো তো থাকবেই তোমরা, দুজন এক যে হয়েছ। আরাধ্য ভাইয়া, জানো আমার খুব অবাক লাগে যে স্পর্শিয়া এক সময় আমার জন্য পাগল ছিল, সে স্পর্শিয়া কিছুদিনের মধ্যেই আমার ভাবি হতে চলেছে। আমার ধারণা ছিল স্পর্শিয়া আমাকে এতটাই ভালোবাসে যে এক বছর কেন, দশ বছরেও আমার জায়গা ওর মনে সেই আগের মতোই থাকবে।

আরাধ্য আর স্পর্শিয়া দুজনেই বুঝতে পারছে যে সায়ান কথাগুলো খোচা মেরে বলছে।
আরাধ্য সাথে সাথে জবাব দিয়ে দিল,
– হ্যা, ভাই৷ ঠিক বলেছিস। কিন্তু ভাগ্যের কি খেলা দেখ, আজ স্পর্শিয়া আমার। শুধুই আমার। আল্লাহ জানে তুই কখনো ওকে সুখ দিবি না, তাই হয়তো আমাকে ওর লাইফে এনেছে।

– সুখ আগে দেই নি, কিন্তু এখন তো ওকে ভালোবাসি বলেই ফিরে এসেছিলাম। কিন্তু স্পর্শিয়া আমাকে এক্সেপ্টও করলো, আবার ফিরিয়েও দিল।

স্পর্শিয়া কিছু বলতে যাচ্ছিল, আরাধ্য ওকে চোখের ইশারা দিয়ে থামিয়ে দিল।

– সায়ান, এত সুন্দর করে মিথ্যে কি করে বলিস? তুই স্পর্শিয়াকে আগেও কখনো ভালোবাসিস নি, আর এখনো বাসিস না।
সায়ান ভুত দেখার মতো চেহারা করে কিছুক্ষন আরাধ্যর দিকে তাকিয়ে রইলো।
– কে বলেছে তোমাকে আমি স্পর্শিয়াকে ভালোবাসি না? অকারণেই কি সবকিছু ছেড়ে দেশে চলে এসেছি?

আরাধ্য চেচিয়ে উঠলো। স্পর্শিয়া ভয় পেয়ে গেল। ভাগ্যিস এ দিকটায় কেও নেই, নয়তো এতক্ষনে কেও চলে আসতো।

– মিথ্যে কথা আর কত বলবি সায়ান? আমি একটু আগে তোকে এক মেয়েকে ফোনে আই লাভ ইউ বলতে শুনেছি। বল, মিথ্যা বলছি আমি? বলে দে মিথ্যা বলছি । আর তুই স্পর্শিয়ার জন্যও আসিস নি দেশে, এটাও মিথ্যা কথা। তুই অষ্ট্রেলিয়া যাওয়ার কিছুদিন পরেই স্টাডি ছেড়ে দিয়েছিলি। বাজে আড্ডা, খারাপ নেশা, মেয়েবাজি সবকিছুতে এ্যাডিক্টেড হয়ে গিয়েছিলি তুই। এক বছর আমার খালুর টাকা উড়িয়ে এখন দেশে ফিরে বলছিস স্পর্শিয়াকে ভালোবাসিস? অনুতপ্ত হয়ে ফিরে এসেছিস? আরে, কিছু তো লজ্জা কর। ও তোর বড় ভাইয়ের বউ। এতটুকু বিবেকে বাধলো না তোর ওর কাছে গিয়ে এরকমভাবে ওর সাথে রিলেশন কন্টিনিউ করতে চাইতে?

স্পর্শিয়া স্তব্ধ হয়ে গেল আরাধ্যর কথা শুনে। সায়ান কিছুক্ষন স্পর্শিয়ার দিকে আবার কিছুক্ষন আরাধ্যর দিকে তাকিয়ে বলল,
– দেখ ভাইয়া, তুমি ভুল বুঝছো।
– চুপ। একদম চুপ। আমি ভুল বুঝছি? তুই দেশে থাকতে যা ই একটু ভালো ছিলি, বাইরে গিয়ে এমন অবনতি হবে আমি চিন্তাও করিনি। ঘৃণা লাগছে বলতে যে তোর সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের খাতিরেই ভালো করে বলছি কখনো আমার অথবা স্পর্শিয়ার আশেপাশে যাতে তোকে না দেখি। তোর এসব কুকির্তী খালামনি, খালুর সামনে আনতে আমার এক মিনিট সময়ও লাগবে না। আর তারা যে আমার কথাই বিশ্বাস করবে তা তুই ভালো করেই জানিস। শুধু কি তাই, তোর চরিত্র আমি সবার কাছে তুলে ধরবো। কখনো স্পর্শিয়ার আশেপাশে তোকে দেখলে আমার চেয়ে খারাপ কেও হবে না। চলে যা এখান থেকে।

সায়ান কিছু বলতে না পেরে রাগে গজগজ করতে করতে বাসা থেকে বের হয়ে গেল।

স্পর্শিয়া আরাধ্যকে খামচে ধরে কান্না করতে লাগলো। আরাধ্য ভয় পেয়ে গেল। ওর মাথায় আর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
– কি হয়েছে আমার সোনাটার? কাদছ কেন? স্পর্শ কি হয়েছে তোমার?

স্পর্শিয়া কাদতে কাদতে নাক মুখ লাল করে ফেললো।

– স্পর্শ, বলো কি হয়েছে? আমাকে বলবে না?
স্পর্শিয়া আরাধ্যকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
– আরাধ্য, আমাকে মাফ করে দাও আরাধ্য। প্লিজ আরাধ্য। অনেক বড় ভুল করেছি আমি জীবনে। আমি তোমার ভালোবাসার মূল্য না দিয়ে সায়ানের মতো ছেলের কথায় ফেসে গিয়েছিলাম। মাফ করে দাও প্লিজ আরাধ্য। আমি তো শাস্তির যোগ্য। কতটুকু বোকা হলে আমি তোমার ভালোবাসাকে ইগনোর করেছি, আর সায়ানের ফেক ভালোবাসাকে সত্যি ভেবে নিয়েছে। আরাধ্য তুমি আমাকে…

– এ্যাই মেয়ে চুপ। হুসসসসস! একদম কথা বলবে না।
আরাধ্য দু হাতে স্পর্শিয়ার চোখের পানি মুছে দিল।

– তুমি ভুল করেছ তা তো আমার কাছেও স্বীকার করেছ। এখন তো সবকিছু ঠিক আছে। এখন এভাবে কাদার কি আছে? আর তোমার মধ্যে তো একটা গিল্টিনেস কাজ করছিল যে সায়ান অনুতপ্ত হয়ে তোমার কাছে ফিরে এসেছে, আর তুমি ওকে এক্সেপ্ট করেও আবার ফিরিয়ে দিয়েছ তাই হয়তো ও কষ্ট পাচ্ছে। এবার বুঝেছ ও কেমন ছেলে? ও কখনো তোমাকে ভালোই বাসেনি। কত মেয়ের জীবন নিয়ে এভাবে খেলছে হয়তো তার হিসাব ওর কাছেও নেই। আমার বউ আমার কাছে ফিরে এসেছে এতেই আমার চলবে৷ অবশ্য একটা জিনিস খুব ভালো হয়েছে…

স্পর্শিয়া খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– কি জিনিস?
– সায়ান অনুতপ্ত হওয়ার অভিনয় করে তোমার লাইফে না আসলে তো তুমি কখনো বুঝতেও পারতে না আমাকে তুমি ভালোবাসো। আর, আমি তোমার এই ভালোবাসাও কখনো পেতাম না।

স্পর্শিয়া মিষ্টি হাসি দিয়ে আরাধ্যর বুকে ঘুষি দিল।
– আহহ!
– কি হলো আরাধ্য?
– ব্যাথা পেয়েছি।
স্পর্শিয়া ভয় পেয়ে আরাধ্যর বুকে ওর হাত দিয়ে ঘষতে লাগলো।
– স্পর্শ, হাত দিয়ে না ঘষে কিস করলে ব্যথা জলদি সেরে যায়।
আরাধ্যর চোখেমুখে লেপ্টে আছে দুষ্টুমি। স্পর্শিয়া আরও জোরে এবার ঘুষি দিল আরাধ্যর বুকে। আরাধ্য স্পর্শিয়াকে ওর বাহুডোরে আবাদ্ধ করে কপালে চুমু খেল।
.
.
.
.
.
.

গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠলো স্পর্শিয়া। ওর ওপর কেও ঝুকে আছে মনে হতেই চিৎকার করার চেষ্টা করলো। সাথে সাথে একজোড়া হাত ওর মুখ চেপে ধরলো। মূহুর্তেই ওর মনে হলো সায়ান না তো? স্পর্শিয়া নিজেকে ছাড়ানোর জন্য জোড়াজুড়ি করতে লাগলো। সাথে সাথেই সেই চিরচেনা কন্ঠঃস্বর।

– আরে স্পর্শ আমি, তোমার আরাধ্য।
স্পর্শিয়া এতক্ষনে খেয়াল করলো এটা তো আরাধ্য। ভয়ে ও আরাধ্যকে চিনতেও পারেনি।

স্পর্শিয়া শোয়া থেকে উঠে বসলো। চমকে উঠলো আরাধ্যকে দেখে। যদিও অন্ধকার, কিন্তু বাহির থেকে চাদের আলো ঘরে আসায় সবকিছুই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
ফিসফিসিয়ে বলল,
– আরাধ্য তুমি! এত রাতে!
– স্পর্শ, তুমি এভাবে ভয় পেয়ে যাবে বুঝতে পারিনি।
– কিন্তু এ সময় আমার রুমে কেন তুমি?
আরাধ্য নিজের মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,
– ইয়ে.. মানে.. মিস করছিলাম তোমাকে খুব। তাই দেখতে চলে এসেছি।
– জাগালে না কেন আমাকে?
আরাধ্য নরম সুরে বলল,
– তাহলে এই ঘুমন্ত মায়াবী চেহারাটা কি করে দেখতাম?
– জেগে থাকলে দেখতে মায়াবী লাগে না বুঝি?
স্পর্শিয়ার কন্ঠে অভিমান।
– নাহ, তা বলেছি নাকি? কিন্তু ঘুমানোর সময় অন্য রকম সুন্দর লাগে তোমাকে। তোমার প্রতিটি রুপের প্রেমে পড়ি আমি। যত দেখি ততই ভালো লাগে।

আরাধ্য স্পর্শিয়ার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
– আমার তো ইচ্ছে করে সারাটাদিন তোমার সাথেই থাকি। আর তো কয়েকটা দিন, বিয়েটা হোক তারপর দেখবে এক মূহুর্তের জন্যও ছাড়বো না তোমাকে।

স্পর্শিয়া লাজুক হাসি হাসলো। কয়েক সেকেন্ডের মাথায় নিজেই বলল,
– আরাধ্য মনে আছে গ্রামে গিয়ে এরকমই জোৎস্না রাতে আমরা হাটতে বের হতাম।
– হ্যা। সে রাতগুলো ভোলার মতো নয়। আজও তো চাদনী রাত। চলো সে দিনগুলোর মতো জোৎস্নাবিলাস হয়ে যাক।
– কিভাবে?

.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আরাধ্য আর স্পর্শিয়া ছাদে বসে আছে। ছাদে বিশাল বড় একটা জাজিম বিছানো। আরাধ্যর কাজিনরা আসলে সবাই রাতে এখানে আড্ডা দেয় তাই এই ব্যবস্থা।

আরাধ্য স্পর্শিয়া দুজনের হাতেই কফির মগ। আরাধ্যর নিজের বানানো স্পেশাল কফি। স্পর্শিয়া কফিতে চুমুক দিতেই চিৎকার করে উঠলো।
আরাধ্য হন্তদন্ত হয়ে বলল,
– কি হলো?
– কফি যে খুব গরম।
আরাধ্য মিস্টি হেসে বললো,
– আমি ঠান্ডা করে দিচ্ছি তবে।

আরাধ্য স্পর্শিয়ার কফি ফু দিয়ে ঠান্ডা করে দিচ্ছিল আর স্পর্শিয়া শুধু চুমুক দিয়ে খাচ্ছিল।

– বুঝলে পিচ্চি মেয়ে, কফিটাও ঠান্ডা করতে জানো না, তোমার সবকিছু তো আমার ই করে দিতে হবে।
স্পর্শিয়া রাগ দেখিয়ে বলল,
– খোচা মারছ? যাও লাগবে না কফি ফু দিয়ে দেওয়া।
– আরে না, না। শুধু মজা করেছিলাম।
– আবার এমন কিছু বললে তোমার খবর আছে।
আরাধ্য খুশি হয়ে বলল,
– সত্যিইইইই? নিশ্চয়ই সুখবর। কিন্তু স্পর্শ, তোমার এতো ছোট পিচ্চিদের মতো পেট, সুখবর কিছুদিন পর যখন একটু বড় হবে, তোমার পেটে যায়গা হবে কি করে? এখন কি করা যায় বলো তো।
চিন্তিত গলায় বলল আরাধ্য।

আরাধ্য কি বলছে তা বুঝতে স্পর্শিয়ার কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো। বুঝামাত্রই স্পর্শিয়া আরাধ্যকে এলোপাতাড়ি মারতে লাগলো।
আরাধ্য হাসতে হাসতে বলল,
– আরে আরে, মারছো কেন?
– কি বলছ এসব তুমি হুমম?
– তুমিই তো বললে খবর আছে, তাই তো..
বলতে গিয়েই আরাধ্য জিব কাটলো তারপর বললো,
– আরে স্পর্শ, সরি। আমি তো কিছু করলাম ই না, তবে সুখবর আর হবেই কি করে?
স্পর্শিয়া রাগে গজগজ করতে লাগলো।
আরাধ্য হাসি দিয়ে কান ধরে স্পর্শিয়ার কাছে সরি বলল। মূহুর্তেই স্পর্শিয়ার রাগ পানি হয়ে গেল । দুজনেই দুজনকে জড়িয়ে ধরলো।

– স্পর্শ, একটা আবদার করবো?
– হুম, করো।
– আজ তুমি আমার বুকে ঘুমাবে প্লিজ?
স্পর্শিয়া মুখ তুলে আরাধ্যকে দেখলো। ওর চোখ জোড়া চকচক করছে ইচ্ছা পূরণের আশায়। ও জানে স্পর্শিয়া ওর কথা ফেলবে না । স্পর্শিয়া আরাধ্যর বুকে মুখ লুকিয়ে বলল,
– এটা আবার জিজ্ঞেস করতে হয়?
আরাধ্যর মুখে রাজ্য জয়ের হাসি৷ স্পর্শিয়াকে নিয়ে জাজিমের ওপর শুয়ে পড়লো আরাধ্য।
– স্পর্শ, বালিশ তো নেই। লাগবে তোমার?
– তোমার বুক থাকতে আমার আবার বালিশ লাগবে?
আরাধ্য স্পর্শিয়ার কপালে চুমু খেল। ভারি কন্ঠে বলল,
– আই লাভ ইউ স্পর্শ। আই লাভ ইউ মোর দ্যান এনিথিং। এভাবে ভালোবেসো আমাকে সবসময়, আগলে রেখো তোমার কাছে।
স্পর্শিয়া আরাধ্যকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
– আই লাভ ইউ টু মাই আরাধ্য । অনলি স্পর্শ’স আরাধ্য।

আরাধ্যর হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে তা স্পর্শিয়া আরাধ্যর বুকে মাথা রেখে শোয়াতে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। মনে হচ্ছে বুকে স্পর্শিয়ার নামের স্পন্দন চলছে।

চাঁদ আলো দিচ্ছে, তারারা মিটিমিটি জ্বলছে। ওদের ভালোবাসা দেখে যেন প্রকৃতিও হাসছে।

পরদিন…

স্পর্শিয়া আজ সকালের নাস্তা নিজ হাতে বানিয়েছে। সবাই খাবার টেবিলে বসে খুব প্রশংসা করলো স্পর্শিয়ার। আরাধ্যর দাদা খুশি হয়ে স্পর্শিয়াকে বখশিশ দিলেন।
– এই না হলো আমার নাত বৌ। বাহ। কি মজার রান্নাটাই না হয়েছে।
নিশাত চৌধুরী খুশি হয়ে নিজের গলার চেইন খুলে স্পর্শিয়ার গলায় পড়িয়ে দিলেন। কিন্তু স্পর্শিয়া আরাধ্যর প্রশংসা এই মূহুর্তে খুব মিস করছে। আরাধ্য অফিসের জরুরি কাজে সকালেই বের হয়ে গিয়েছে। আরাধ্য এখন পুরোপুরি সুস্থ। আর এই প্রজেক্টটা শুরু থেকেই আরাধ্য হ্যান্ডেল করছিল, অন্য কেও হুট করে বুঝবেও না এখন সব ডিটেইলস। তাই বাধ্য হয়েই কিছু সময়ের জন্য ওর বাহিরে যেতে হয়েছে।

পায়েল স্পর্শিয়াকে শান্ত্বনা দিচ্ছে আরাধ্য কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে। আরাধ্য তো জানেও না যে আজকের নাস্তা স্পর্শিয়া বানিয়েছে।

সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হওয়ার একটু পরেই আরাধ্য বাসায় এলো। খুব টায়ার্ড লাগছে বেচারাকে দেখতে। তাই স্পর্শিয়া কিছু বললোও না। স্পর্শিয়ার সাথে দেখা করে আরাধ্য সরাসরি উপরে ওর রুমে চলে গেল। স্পর্শিয়ার মন খারাপ হয়ে গেল৷ এই প্রথম ও আরাধ্যর বাসায় এসে রান্না করেছে, আর আরাধ্যকেই খাওয়াতে পারবে না।

একটুপর নিশাত চৌধুরী স্পর্শিয়াকে বললেন নাস্তা নিয়ে আরাধ্যর রুমে চলে যেতে। স্পর্শিয়ার এতক্ষনে স্বস্তি লাগলো। খুশি হয়ে নাস্তা নিয়ে আরাধ্যর রুমে চলে এল স্পর্শিয়া।

আরাধ্য মাত্র ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছে ওয়াশরুম থেকে । পড়নে কালো সেন্টু গেঞ্জি, আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট৷ আরাধ্যর ওপর থেকে নজর সরানো দায়। এতো সুন্দর লাগছে ওকে! ওর হাতের মাসলস যে কোন মেয়েকে ক্রাশ খাওয়াতে বাধ্য করবে।

আরাধ্য স্পর্শিয়াকে খেয়াল করতেই বলল,
– লজ্জা নেই তোমার? আমাকে এভাবে চোখ দিয়ে খেয়ে ফেলছ যে।
– না লজ্জা নেই৷ আমার খাবার আমি খাবো, তাতে কার কি?
– আজ তুমিও রোমান্টিক মুডে আছ মনে হচ্ছে।
– হয়েছে, ঢং এর কথা রাখো। এবার তোমার খাবার তুমি খাও।
আরাধ্য খুশিতে গদগদ হয়ে স্পর্শিয়ার কাছে এসে বলল,
– সত্যিইইই?
স্পর্শিয়া আরাধ্যর সামনে খাবারের প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলল,
– হ্যা, সত্যি। এই যে তোমার খাবার।
আরাধ্যর মুখে একরাশ কালো মেঘ এসে ভর করলো।
– আমি তো এই খাবারের কথা বলিনি। তোমাকে খাওয়ার কথা বলেছি।
– আরাধ্য চুপ করো তো। আজকের নাস্তা আমি বানিয়েছি।
আরাধ্যর চোখ খুশিতে চকচক করে উঠলো।
– তুমি বানিয়েছ? আমার বউ নাস্তা বানিয়েছে! বাহ! দাও, জলদি খাই৷

আরাধ্য প্লেট স্পর্শিয়ার কাছ থেকে নিতে চাইলেও স্পর্শিয়া নিতে দিল না। স্পর্শিয়া আরাধ্যকে টেনে খাটের ওপর বসালো, নিজেও বসলো। তারপর নিজ হাতে আরাধ্যকে খাইয়ে দিতে লাগলো । আরাধ্য মন্ত্রমুগ্ধের মতো স্পর্শিয়াকে দেখেই যাচ্ছে।

– কি দেখছো আরাধ্য?
– দেখছি, বাচ্চা মেয়েটা কিভাবে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বড় হয়ে গেল।
– কিন্তু তুমি তো আমাকে এখনো বাচ্চা বলো।
– এখন থেকে বুড়ি ডাকবো তবে।
– কিহ?
স্পর্শিয়া চোখ রাঙালো।
– না, না৷ কিছুনা।
– না হলেই ভালো।
– স্পর্শ জানো, তোমাকে এখন একদম বউ বউ লাগছে ।
স্পর্শিয়া আরাধ্যর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
– কিভাবে লজ্জায় ব্লাশ করছে আমার বউ। তোমার হাতের রান্না এই প্রথম খাচ্ছি তাও তোমার হাতে, ডাবল বোনাস৷ সেই উপলক্ষে কিছু তো দিতেই হয়। আজ চলো ঘুরে আসি।
– কোথায়?
– উমম, লং ড্রাইভে। শুধু তুমি আর আমি । সারাদিন ঘুরবো, তারপর রাতে ডিনার করে বাসায় ফিরবো।

চটজলদি স্পর্শিয়ার মাথায় একটা প্ল্যান চলে এলো।
– ওকে ডান। তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
– এমনিতেই নিজের হাতে রান্না করে সারপ্রাইজ দিয়েছ, আবার আরও একটা সারপ্রাইজ।
– হুম।
– বলো কি সারপ্রাইজ।
– একটু পরেই দেখতে পাবে। এখন বলবো না।
– লেটস সি।

ওদের কথার মাঝেই নিকিতা এসে রুমে ঢুকলো।
– ভাইয়া ভাবির রোমান্স চলছে নাকি? ডিস্টার্ব করলাম মনে হয়।

স্পর্শিয়া বলল,
– আরে নাহ। ডিস্টার্ব করো নি। তোমার ভাইকে খাইয়ে দিচ্ছিলাম। এখন তো খাওয়া শেষ।
– হুম। তা তো দেখতেই পাচ্ছি আমার ভাই কতো আদর যত্নে খাবার গিলছে। আমাকে কেও খাইয়ে দেয় না। রাগ করেছি।
মুখ বাকিয়ে বললো নিকিতা।
– তোমাকে খাইয়ে দিব আমি? দাড়াও এক্ষুনি নিয়ে আসছি খাবার।
– আরে না ভাবি, মজা করছিলাম। আমি তো এসেছিলাম অন্য কারনে।

নিশাত চৌধুরী রুমে ঢুকে সবাইকে একসাথে দেখে খুব খুশি হলেন।
– আরে বাহ। আমার সব বাচ্চারা একসাথে আড্ডা দিচ্ছে দেখছি। কিন্তু, নিকিতা তুই আবার ওদের দুজনকে ডিস্টার্ব করছিস না তো?

নিকিতা মায়ের কথার সুরে বলল,
– মামনি, দেখ কি সুন্দর করে ভাবি ভাইয়াকে খাইয়ে দিচ্ছিল। সব আদর তো ভাইয়াই পায়, আর আজ আমি একটু এসে গল্প করাতেই তোমার ডিস্টার্ব মনে হলো?

স্পর্শিয়া লজ্জা পেয়ে গেল। ওর নিজেরই ননদ ওকে ওর শ্বাশুড়ির সামনে এভাবে লজ্জায় ফেলবে বুঝতে পারেনি।

নিশাত চৌধুরী নিকিতার কান টেনে বললেন,
– তার মানে তুই সত্যিই কাবাব মে হাড্ডি হয়ে এসেছিস ওদের মাঝে তাই না?
– না মামনি আমি..
স্পর্শিয়া কথার মাঝে বললো,
– না আম্মু। ও তো মাত্রই এলো।

মিসেস চৌধুরী স্পর্শিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
– আর তো কিছুদিন। বাসায় আসো, তখন শুধু আমার ছেলেকে না সবাইকে মাতিয়ে রাখবে তুমি।

আরাধ্য আস্তে করে বলল,
– আমি আমার বউকে কারও কাছে যেতে দিলে তো।
নিশাত চৌধুরী চোখ বড়বড় করে বললেন,
– কি বললি তুই?
– না মা, কই কিছু বলিনি তো। তুমি না একটু বেশি বেশিই শোন।

নিশাত চৌধুরী স্পর্শিয়ার দিকে নজর দিয়ে বললেন,
– তোমার তো প্রি-টেস্ট এক্সাম কিছুদিন পরে তাই না? একদিকে এক্সাম টা শেষ হবে আরেকদিকে তুমি আমাদের বাড়িতে পারমানেন্ট হবে । ভালো মতো পড়াশুনা করো, বিয়ের টেনশনে রেজাল্ট যাতে খারাপ না হয় খবরদার।

– না আম্মু, ভালো মতোই পড়বো। দোয়া করবেন।

– আমি তো জানি তুমি পড়ালেখায় ফাকিবাজ। না বিয়ের উছিলায় ফাকিবাজি চলবে, আর না বিয়ের পরে চলবে। শোন স্পর্শিয়া, আমাদের এতো জলদি খুশির খবর দিতে হবে না, আগে স্টাডি শেষ করবে তারপর বাকি সব।

স্পর্শিয়ার তো লজ্জায় মরেই যেতে ইচ্ছে করছে। এক তো বলেই ফেললো যে ও পড়ালেখায় ফাকিবাজ, আর আবার বলছে খুশির খবর এতো জলদি দিতে হবে না। আরাধ্যর দিকে একবার আড়চোখে তাকাল স্পর্শিয়া। আরাধ্য মুখ চেপে হাসি আটকে রেখেছে, আর নিকিতা কিছু বুঝতে না পেরে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে ওর মায়ের মুখের দিকে।
কিন্তু স্পর্শিয়া সব বুঝেও না বুঝার ভান করে বলল,
– আম্মু, খুশির খবর মানে? বুঝলাম না।
নিশাত চৌধুরী হাসি থামিয়ে রাখতে না পেরে খুব জোরে জোরে কিছুক্ষন হাসলেন, আরাধ্যও মায়ের সাথে যোগ দিল হাসিতে। স্পর্শিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলো। আর নিকিতা বোকা বোকা চেহারা করে নিজের ভাই আর মা কে দেখতে লাগলো।

অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে নিশাত চৌধুরী তার ছেলেকে বললেন,
– তোর বউকে আগে একটু বড় বানিয়ে নে। নয়তো মান সম্মান ডুববে।

নিশাত চৌধুরী নিকিতার মাথায় টোকা দিয়ে বললেন,
– তুই বসে আছিস কেন ওদের মাঝে? ওরা দুজন দুজনকে টাইম দেক। তুই চল।
– মামনি ভাবির সাথে একটু জরুরি কথা বলতে এসেছিলাম।
– বলে ফেল।
– মামনি, তুমি তো জানো আমার ফ্রেন্ডরা ভাবিকে দেখার জন্য কত আগে থেকে আমাকে পাগল বানিয়ে রেখেছে। ওরা যখন শুনলো ভাবি আমাদের বাসায়
ভাবিকে দেখার জন্য বায়না শুরু করলো। কাল তো ভাবি চলেই যাবে। তাই চাচ্ছিলাম আজ ভাবিকে নিয়ে বের হবো, ওদের সাথে ঘুরবো, শপিং করবো, লাঞ্চ করবো, তারপর হাতিরঝিল ঘুরে বিকালে চলে আসবো ।

নিকিতার কথা শুনে আরাধ্য আর স্পর্শিয়া দুজনেই দুজনের দিকে ভীত দৃষ্টিতে তাকালো। দুজনের মনেই ওদের প্ল্যান নষ্ট হওয়ার সঙ্কা। আরাধ্য মনে প্রানে দোয়া করছে যাতে নিকিতাকে যেতে ওর মা মানা করে দেয়।

নিশাত চৌধুরী নিকিতাকে বললেন,
– তা তুই আমাকে জিজ্ঞেস করছিস কেন? তোর ভাবিকে বল।
নিকিতা খুশি খুশি চেহারা নিয়ে স্পর্শিয়ার দিকে মুখ করে বলল,
– ভাবি তুমি যাবে না?

নিকিতার প্রশ্ন শুনে স্পর্শিয়া চোখে সরষে ফুল দেখলো। একবার আরাধ্যর দিকে তাকাচ্ছে, একবার নিকিতার দিকে, আরেকবার নিশাত চৌধুরীর দিকে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। আর এদিকে আরাধ্য হাসি হাসি মুখ করে মনে বিশাল আশা নিয়ে বসে আছে যে স্পর্শিয়াকে যেহেতু জিজ্ঞেস করা হয়েছে, ও নিশ্চয়ই নিকিতাকে মানা করে দিবে।

নিকিতা তাড়া দিচ্ছে।
– এ্যাই ভাবি বলো না। যাবে না?
– হ্যা, যা.. যাবো তো।
স্পর্শিয়া সাথে সাথে আরাধ্যর দিকে তাকালো। আরাধ্যর দৃষ্টি শক্ত হয়ে আছে ওর দিকেই। মনের মধ্যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে আরাধ্যর। স্পর্শিয়া এটা কি করলো!

নিকিতা খুশি হয়ে স্পর্শিয়াকে টানতে টানতে নিয়ে চলে গেল রেডি হওয়ার জন্য। আরাধ্য একা একা বসে রইলো ওর রুমে। রাগ হচ্ছে ওর। স্পর্শিয়া চাইলেই নিকিতাকে মানা করে দিতে পারতো।

.
.
.

.
.
.

.
.
.

নিকিতার ফ্রেন্ডগুলো খুবই ভালো, ফ্রি মাইন্ডের। ভাবি ভাবি বলে সবাই স্পর্শিয়ার ওপর জান দিচ্ছে। কিন্তু স্পর্শিয়ার ভালো লাগছে না। ওর মন তো আরাধ্যর ওপর পরে আছে। দুবার কল দিয়েছিল স্পর্শিয়া আরাধ্যকে, কিন্তু আরাধ্য ঠিকমতো কথাই বললো না। আরাধ্যর কথায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল ও খুব রাগ স্পর্শিয়ার ওপর। স্পর্শিয়ার নিজেরও খারাপ লাগছে। ও চেষ্টা করছে যত জলদি বাসায় যেতে পারে ততোই ভালো। দ্রুত বাসায় ফিরতে পারলে কিছু সময়ের জন্য হলেও ঘুরতে বের হবে আরাধ্যর সাথে।

সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলো নিকিতা আর স্পর্শিয়া। হল রুমে কাওকেই পেল না। ওপরে গিয়ে দেখলো পায়েল আর তার দুই মেয়ে সিনথিয়া আর সিলভিয়া বসে বসে টিভি দেখছে। পায়েলের কাছ থেকে জানতে পারলো আরাধ্যর মা, বাবা, দাদা, দাদু সবাই কোন রিলেটিভের বাসায় গিয়েছিলেন ঢাকার শেষ প্রান্তের দিকে। রাতেই ফেরার কথা ছিল৷ কিন্তু হঠাৎ সেখানে মারামারির কারণে কারফিউ লাগানো হয়। তাই তারা আজ রাতে বাসায় ফিরতে পারবেন না৷ আরাধ্যর বড় ভাই আরিয়ানও দেশের বাহিরে এই মূহুর্তে। আজ রাতে বাসায় শুধু পায়েল, আরাধ্য, নিকিতা, স্পর্শিয়া, আর বাচ্চারা আছে।

স্পর্শিয়ার মন খারাপ হয়ে গেল৷ এই অবস্থায় ও চাইলেও পায়েল আর নিকিতাকে বাসায় একা রেখে আরাধ্যর সাথে বাইরে যেতে পারবে না। মন খারাপ করে আরাধ্যর রুমে গেল ও। আরাধ্য রুমে নেই। রোহানের বাসায় গিয়েছে। স্পর্শিয়া ফোনটা হাতে নিল আরাধ্যকে কল দেওয়ার জন্য। আরাধ্যর নিশ্চয়ই মন খুব খারাপ। ওকে কল দিয়ে বাসায় আসতে বলবে স্পর্শিয়া। ঘুরতে যেতে না পারুক, কমপক্ষে একসাথে গল্প করে সময় তো কাটাতে পারবে দুজন।

সাথে সাথেই একটা বুদ্ধি চলে এলো স্পর্শিয়ার মাথায়। ভালোই হয়েছে পায়েল আর ও খুব ফ্রি দুজন দুজনের সাথে। নয়তো এই বুদ্ধি কখনো কাজেই লাগানো যেতো না।

স্পর্শিয়া পায়েলকে গিয়ে সব খুলে বললো। সকাল থেকে এই পর্যন্ত সব ঘটনাই বললো। আর এখন ও চাচ্ছে আরাধ্যর রুমটাকে ডেকোরেট করতে, রুমটাকেই ডেটিং স্পট বানিয়ে ফেলতে। ঘুরতে বাইরে যেতে না পারলেও রুমটাকে স্পেশাল বানিয়ে কিছুটা হলেও আরাধ্যকে রিয়েল ডেটিং এর ফিল দিতে চাচ্ছে স্পর্শিয়া। পায়েলও স্পর্শিয়াকে খুব হেল্প করলো সবকিছু করতে । ভালোই হয়েছে আরাধ্য রোহানের বাসায় থাকায়, এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে স্পর্শিয়ার যা কিছু করার ও করে ফেলেছে। এখন শুধু আরাধ্যর অপেক্ষা।

নিজের রুমে আসার আগে আরাধ্য স্পর্শিয়ার রুমে গিয়ে ওর খোজ করলো, কিন্তু পেল না। যেহেতু স্পর্শিয়ার ওপর ও রাগ, তাই কিছুটা এ্যাটিটিউড নিয়েই স্পর্শিয়াকে অন্য কোথাও না খুজে আরাধ্য নিজের রুমে চলে এলো। দরজা খুললো আরাধ্য ।

রুম দেখে আরাধ্যর চোখ ছানাবড়া। পুরো রুম রেড ক্যান্ডেল, রেড হার্ট শেপ বেলুন, ফেয়রি লাইট, আর রজনীগন্ধা ফুলে সাজানো। আরাধ্যর পছন্দের ফুল রজনীগন্ধা। ফুলের সুবাসে পুরো রুম মৌ মৌ করছে। এক মূহুর্তের জন্য মনে হলো নিজের রুমেই এসেছে তো ও? ভালো মতো নজর বুলিয়ে দেখলো, হ্যা ও নিজের রুমেই আছে। তবে, এসব কি? কে করেছে? আজ তো ওর বার্থডে নয়। তবে কি স্পেশাল কিছু আজ? কিন্তু কি? নিজের মাথায় অনেক প্রেশার দিয়ে আরাধ্য মনে করতে লাগলো আজকের দিনে কি স্পেশাল।

দরজা বন্ধ করার আওয়াজ হতেই আরাধ্য পিছনে ঘুরলো। স্পর্শিয়া ওর সামনে লাল টকটকে জর্জেটের শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে, সাথে স্লিভলেস ব্লাউজ। স্পর্শিয়ার ফর্সা হাত উন্মুক্ত। এটা সেই শাড়িটা যে শাড়িটা আরাধ্য ওকে এ্যানিভার্সারিতে গিফট করার জন্য কিনেছিল। কিন্তু এ শাড়িটা তো আরাধ্য সেদিন ই রেস্টুরেন্টে ফেলে এসেছিল। তবে কি স্পর্শিয়া তখন ফেলে আসা শাড়িটা রেখে দিয়েছিল নিজের কাছে?
এতকিছুর মধ্যে আরাধ্য এমন হতভম্ব হয়ে গেল যে কয়েক সেকেন্ড পরে ওর খেয়াল এলো স্পর্শিয়াকে আজ কোন মানুষ না, এই আধো আলোতে ওকে দেবী মনে হচ্ছে। আবার এক মূহুর্তের জন্য আরাধ্যর এমনও মনে হলো যে ও স্বপ্ন দেখছে। নিজের হাতেই নিজে চিমটি কাটলো। স্পর্শিয়া হেসে দিল আরাধ্যর বাচ্চামি দেখে।

স্পর্শিয়ার হাসিতে আরাধ্যর ঘোর কাটলো।
– স্পর্শ, তুমি দরজার পেছনে লুকিয়ে ছিলে?
স্পর্শিয়া ওর আঙুল নিজের ঠোটে ছুয়ে ইশারা করলো আরাধ্যকে চুপ থাকতে। স্পর্শিয়ার খুব লজ্জা করছে। কিন্তু সবসময় লজ্জা পেলে কি আর চলে? আজ লজ্জা না হয় একটু কম কম ই করুক।

স্পর্শিয়া আরাধ্যর সামনে এগিয়ে এলো। আরাধ্যর সামনে হেটে যাওয়ার রাস্তাটা ওর কাছে অনন্তকালের মনে হলো। কিছুক্ষন আরাধ্যর সামনে দাঁড়িয়ে ভয়ে ভয়ে হাটু গেড়ে বসে পড়লো নিচে। আরাধ্য অবাক হয়ে গেল, স্পর্শিয়া করছে কি? স্পর্শিয়ার বুকের হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে, আর তার সাথে আরাধ্যও। স্পর্শিয়ার হাত কাপছে, কখনো এমন কিছু করবে চিন্তাও করেনি ও। এত লজ্জা লাগছে যে শব্দ যেন গলায় এসে দলা পেকে গিয়েছে, বের হতেই চাচ্ছে না মুখ দিয়ে। প্রথমবার আরাধ্যকে এভাবে প্রপোজ করতে যাচ্ছে ও, ভয় তো হবেই। কিন্তু, শেষ মূহুর্তে এসে এভাবে হাল ছাড়াতো যায় না। এদিকে আরাধ্যও ভাবছে স্পর্শিয়া কি করছে। বারবার মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে ও। এখনি হয়তো ভেঙে যাবে। আরাধ্য টেনশনে না হাসতে পারছে, না চেহারায় খুশির এক্সপ্রেশন দিতে পারছে। স্পর্শিয়া ওর হাত পেছন থেকে সামনে আনলো। এক তোড়া লাল গোলাপ আরাধ্যর সামনে এগিয়ে দিলো।

স্পর্শিয়া কাপাকাপা স্বরে অবশেষে বলেই ফেললো,
– আই লাভ ইউ আরাধ্য।

ভয়, আর লজ্জা সব একসাথে ভর করে আছে স্পর্শিয়ার মুখে।

আরাধ্য যেন স্ট্যাচু হয়ে গিয়েছে। নড়ছেও না, কিছু বলছেও না। ওর ধারণাও ছিল না স্পর্শিয়া কখনো এমন কিছু করবে । এত রোমান্টিক মুহূর্তে আরাধ্যর ই যেন আজ গলা শুকিয়ে আসছে। আরাধ্য কিছু না বলাতে স্পর্শিয়া বুঝতে পারলো ও খুব শকড হয়েছে।
হালকা গলা ঝাড়া দিয়ে স্পর্শিয়া বলল,
– মি. আরাধ্য চৌধুরী, তুমি কি আমার সুবহানা আর কায়নাতের পাপা হবে?
এবার আরাধ্যর মুখে বিশাল আকারের একটা হাসির রেখা দেখা দিল। আরাধ্য স্পর্শিয়ার হাত থেকে ফুল নিয়ে বললো,
– সেই কবে থেকে তো এই অপেক্ষাতেই আছি যে সুবহানা আর কায়নাতের পাপা হবো।

স্পর্শিয়াকে দাড়া করালো আরাধ্য। দুষ্টিমির সুরে বললো,
– স্পর্শ, তুমি কি তবে আজ এতো এ্যারেন্জমেন্ট এই প্রসেস শুরু করার জন্য করেছ?
স্পর্শিয়া কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করল,
– কিসের প্রসেস?
– সুবহানা আর কায়নাতকে পৃথিবীতে আনার প্রসেস।

স্পর্শিয়া আরাধ্যর বুকে কিল দিল৷ সাথে সাথে নিজেই আবার আরাধ্যকে জড়িয়ে ধরলো।
– আরাধ্য তুমি কি এখনো আমার উপর রেগে আছ?
– কি নিয়ে?
– ওই যে, আজ তোমার সাথে ঘুরতে যেতে পারলাম না তাই৷
– এত সুন্দর সারপ্রাইজ পাওয়ার পরে রাগ তো দূরের কথা, রাগের দাদার দাদা থাকলেও চলে যাবে।
আরাধ্য স্পর্শিয়ার নাকে নাক ঘষলো। স্পর্শিয়া আর আরাধ্যর চোখ মিলিত হলো। স্পর্শিয়া আরাধ্যর হাত ধরে বলল,
– আরাধ্য, আই লাভ ইউ।
– আই লাভ ইউ টু মাই লাভ।
– সবার প্রথমে তো তোমাকে ধন্যবাদ আমার লাইফে আসার জন্য, আমাকে ভালোবাসার জন্য, এভাবে ভালোবেসে আগলে রাখার জন্য। এই এক বছরে আমার সব বাচ্চামি মাথা পেতে সহ্য করেছ তুমি। আমার এতো ভুলের পরেও আমাকে তুমি মাফ করেছ তা ই বা কয়জন করে? তুমি লাইফে না এলে হয়তো বুঝতামই না সত্যিকারের ভালোবাসা কি? আই লাভ ইউ আরাধ্য, আই লাভ ইউ সো মাচ।

দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলো।
– আমার পিচ্চি বউ টা আজ খুব ম্যাচিউর টাইপ কথা বলছে যে।
– হুম, পিচ্চি বউ যে বড় হয়ে যাচ্ছে তাই।
– কি করে বড় হচ্ছে পিচ্চি বউ?
– বিয়ে হবে কিছুদিন পর তোমার পিচ্চি বউ এর। আর কত ছোট থাকবে?
আরাধ্য অবাক হওয়ার ভান করে স্পর্শিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
– সত্যি স্পর্শ? কার সাথে বিয়ে হচ্ছে তোমার? কিছু জানালেই না আমাকে।
স্পর্শিয়া আরাধ্যর নাক ধরে টান দিল।
– আরাধ্য, মারবো কিন্তু তোমাকে।
– সারাদিন শুধু মারতেই পারো, কখনো তো বলো না আরাধ্য আজ আদর করবো তোমাকে।
– চুপ করবে নাকি আমি নেক্সট সারপ্রাইজটা ক্যান্সেল করে দিব?
আরাধ্য চোখ বড়বড় করে বললো,
– নেক্সট সারপ্রাইজ মানে? আরও কিছু বাকি আছে?
– হুম।
– পাগল বানিয়ে দিবে নাকি আজ আমাকে?
– চুপ করবে একটু?

আরাধ্য মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করে রইলো। স্পর্শিয়া মিউজিক প্লেয়ারে সং প্লে করলো। রোমান্টিক সফট সং প্লে করেছে স্পর্শিয়া। আরাধ্যর সামনে এসে হাত বাড়িয়ে দিলো ও। আরাধ্যর বিস্ময়ের আর সীমা রইলো না। স্পর্শিয়া ওর সাথে এই রোমান্টিক গানে নাচতে চাচ্ছে? আরাধ্যর যেন সব কল্পনা মনে হচ্ছে।

মিউজিক প্লেয়ারে সং হচ্ছে, আরাধ্যর কাধে স্পর্শিয়ার হাত, স্পর্শিয়ার কোমড়ে আরাধ্যর হাত, দুজনের দু জোড়া চোখ মুগ্ধতায় দুজনকে দেখছে, আর তার সাথে সুরের তালে নাচ তো চলছেই। দুজনেই এই রাতের আধারে এক নেশা লাগানো দুনিয়ায় ডুবে আছে, যে দুনিয়ায় ওরা দুজন ছাড়া তৃতীয় কোন ব্যক্তি নেই। এই মূহুর্তে আরাধ্য শুধু স্পর্শিয়ার, আর স্পর্শিয়া শুধুই আরাধ্যর।

বেশ কিছুক্ষন পর সং অটো স্টপ হয়ে গেল। স্পর্শিয়া নতুন সং প্লে করতে মিউজিক প্লেয়ারের সামনে যাচ্ছিল কিন্তু আরাধ্য ওর শাড়ির আচল টেনে ধরলো। স্পর্শিয়া ঘুরে তাকালো আরাধ্যর দিকে। চোখের ইশারায় আচল ছেড়ে দিতে বললো। আরাধ্য ছাড়লো না আচল, বরং আচল টেনে স্পর্শিয়াকে নিজের কাছে নিয়ে এলো। শাড়ির আচলের ভেতর দিয়েই স্পর্শিয়ার কোমড়ের কার্ভে হাত দিল আরাধ্য। স্পর্শিয়া শিউরে উঠলো। স্পর্শিয়ার ঘাড়ের কাছে এসে গরম নিঃশ্বাস ছাড়লো আরাধ্য। চুমু খেল ওর নরম গলায়। স্পর্শিয়ার ঘাড় বেয়ে নিচে এক শীতল রক্তের স্রোত বেয়ে গেল।

আরাধ্য স্পর্শিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে খাটে শুইয়ে দিল। স্পর্শিয়ার চুল নিয়ে খেলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো আরাধ্য। স্পর্শিয়ার চোখে চোখ পড়লো। স্পর্শিয়া চোখ সাথে সাথেই নিচে নামিয়ে ফেললো। স্পর্শিয়ার দু চোখে চুমু খেল আরাধ্য। কপালে, ঘাড়ে চুমু খেল। স্পর্শিয়ার মুখের প্রতিটা লোমকুপ, গলার প্রতিটা ভাজ আরাধ্যর ঠোটের ছোয়া পেল। আরাধ্য স্পর্শিয়ার ঠোটে ঠোট মিলালো। স্পর্শিয়া লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। আরাধ্য ওর ঠোটের উপর থেকে ঠোট সরাতেই স্পর্শিয়া জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। স্পর্শিয়ার নিঃশ্বাস আরাধ্যর ঠোটে, মুখে ধাক্কা লাগছিলো।
স্পর্শিয়া যে খুব লজ্জা পাচ্ছে তা আরাধ্য বুঝতে পারছে।
– স্পর্শ শোন।
স্পর্শিয়া চোখ খুললো আরাধ্যর ডাকে।
– আমি কিন্তু এখনো রাগ স্পর্শ।
স্পর্শিয়া অনেকটা জোরেই বলল,
– কি? তখন না বললে রাগ নেই এখন আর।
– হ্যা, কিন্তু আবারও রাগ চলে এসেছে।
– কি.. কিন্তু কেন?
– সবসময় তো আমিই আদর করি, তুমি তো কখনো করো না। আজ আমার আদর লাগবে।
স্পর্শিয়া কিছুক্ষন এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল,
– পারবো না আদর করতে।
– না, করতেই হবে।
– কখনোই না।
– ঠিকাছে, তবে চললাম৷

আরাধ্য স্পর্শিয়ার ওপর থেকে সরে বেড থেকে নামতে গেল। স্পর্শিয়া ওর হাত ধরে ফেললো।
– কোথায় যাচ্ছ?
– জাহান্নামে।
– আরাধ্য প্লিজ রাগ করো না।
– তবে আদর করো। নয়তো যাচ্ছি আমি।
– না, ওয়েট। যেওনা। করছি।
আরাধ্যর মুখে হাসি ফুটলো।
স্পর্শিয়া কয়েক সেকেন্ড চুপ করে জিজ্ঞেস করলো,
– কি করবো বলো?
– যা তোমার ইচ্ছা।
স্পর্শিয়া আরাধ্যর সাথে নজর মেলাতে পারছিলো না লজ্জায়। আরাধ্যর কাছে গিয়ে ভয়ে ভয়ে চোখ বন্ধ করে আরাধ্যর গালে আলতো করে চুমু খেল। আরাধ্য তা সাদরে গ্রহন করলো। স্পর্শিয়ার করা প্রথম কিস বলে কথা।
– এভাবে তো চলবে না স্পর্শ। আমার সারা মুখে অন্তত দশটা কিস করতে হবে।
– কিহ? কিন্তু তুমি তো বলেছিলে..
– আগের কথা বাদ। এখন তো আমার ইচ্ছে করছে তোমার আদর পেতে। দিবে না?
স্পর্শিয়া লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে, তবুও আরাধ্যর গালের সামনে গেল৷ আরাধ্য স্পর্শিয়ার দু হাত নিজের গলার পেছনে এনে দিল। স্পর্শিয়া চোখ বন্ধ করে আরাধ্যর গালে কিস করা শুরু করলো। গালে, চোখে, নাকে।

চোখ বন্ধ থাকায় স্পর্শিয়া আরাধ্যর থুতনিতে কিস করতে গিয়ে ভুল করে ঠোটে করে ফেললো। স্পর্শিয়া সাথে সাথে চোখ খুলে ফেললো। আরাধ্যও বুঝতে পারলো স্পর্শিয়া ভুলে কিস করে ফেলেছে। কিছুক্ষন হতভম্বের মতো আরাধ্যর দিকে তাকিয়ে থেকে এবার নিজ থেকেই আরাধ্যর ঠোঁটে ঠোট মিলালো স্পর্শিয়া। স্পর্শিয়ার হাত আরাধ্যর গলা থেকে পিঠ বেয়ে নিচে নামলো। স্পর্শিয়ার তালে তাল মিলালো আরাধ্যও। দুজন ভালোবাসায় ডুবে গেল।

(চলবে)

লিখা: Dewan Oishi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here