প্রেম পর্ব -২৬ ও শেষ পর্ব

প্রেম 💙 (Love has no limits)

#পর্বঃ ২৬

অবশেষে বিয়ের দিন চলে এলো। আরাধ্য আর স্পর্শিয়ার বিয়ে!

সকাল থেকেই স্পর্শিয়ার বুক ধুকধুক করছে। কেন যেন ভয় হচ্ছে। আগে যা হয়েছে সেই রেশটা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারছে না ও। বারবার মনে হচ্ছে আবার খারাপ কিছু না হয়ে যায়। খোদার কাছে বারবার দোয়া করছে এবার যাতে সবকিছু ঠিকঠাক মতো হয়, কোন বাধা না আসে।
স্পর্শিয়ার ধারণা ছিল আরাধ্যর ফ্যামিলি ওকে হয়তো আর মেনে নিবে না। অথবা, আরাধ্যর জিদের কারনে সবাই রাজি হবে। কিন্তু সবার ব্যবহার ওর সাথে খুবই নরমাল ঠিক আগের মতো, এখন যেন আরও বেশি আদর করে সবাই ওকে। আর তাছাড়া সায়ানের ব্যাপারটা জানার পরে ওর বাসার কেও একটা কথাও জিজ্ঞেস করেনি ওর কাছে। এসবের কিছুই ওর মাথায় ঢুকছে না। ওর মনে হচ্ছিল লাইফটা অনেক কমপ্লিকেটেড হয়ে যাবে। অথচ সবকিছু যেন আরও সিম্পল আর স্মুথ হয়ে গেল। একটা সময় ভয় হতো সায়ান আর ওর ব্যাপারটা আরাধ্যর ফ্যামিলিতে জানাজানি হয়ে যায় নাকি, আর এখন তো সে ভয়টাও নেই।
ওর ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে স্নিগ্ধা এসে ওর পাশে বসলো।
– কিরে বউ, কি ভাবছিস?
– সবকিছু কেমন যেন আজব লাগছে। এত সহজেই সব হচ্ছে মানতে পারছি না। কোন বড় তুফান আসার আগে নাকি পরিবেশ শান্ত থাকে, সে ভয়টাই পাচ্ছি।
– পরিবেশ শান্ত থাকার কারণ কিন্তু সবসময় তুফানের আভাস নয়। তুফান শেষ হওয়ার পরেও কিন্তু রৌদ্র ঝলমলে দিন শুরু হয়, পরিবেশ শান্ত থাকে।
– তবুও ভয়ভয় লাগছে আমার।
– মানুষ নাকি পাচটা একসাথে পায় না। তুই তো হ্যান্ডসাম, কেয়ারিং, লাভেবল সব একসাথেই পেয়ে গেলি, তবুও মন ভরে না? আমার জন্য কিছু তো রাখতি, সব কি তোর ভাগেই যাবে নাকি?
– তাই নাকি, আর তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে কি করো তা মনে হয় আমি বুঝি না, তাই না?
– কি করলাম আমি?
– রোহান ভাইয়ার সাথে তোর কি চলে, হুম?
– ক…কই, কিছু না তো।
– আমার কাছে মিথ্যা!
স্নিগ্ধা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
– জেনেই যখন গিয়েছিস তবে সেই ব্যবস্থাও কর যাতে জলদি সে বাড়ির বউ হতে পারি।
– শখ কত। লুকিয়ে লুকিয়ে মি. পারফেক্ট খুজে রেখেছে উনি, আর আমাকে বলে আমি নাকি উনার জন্য কিছু রাখিনি।
এভাবেই চলতে থাকলো দু বোনের খুনসুটি।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বিয়েটা এবার কোন সেন্টারে নয়, মসজিদে হবে। আরাধ্যর ইচ্ছা বিয়ে মসজিদে হবে। খুব ছোট একটা বিয়ে হবে সুন্নাতি তরিকায়, খোরমা ছিটানো হবে, আর বিয়ের পর এতিম বাচ্চাদের খাওয়ানো হবে। দুদিন পরে খুব বড় করে রিসেপশন হবে। গ্র্যান্ড ওয়েডিং এর চেয়ে এটাই আরাধ্যর কাছে বেস্ট মনে হয়েছে। সবাই আরাধ্যর প্রস্তাবে খুশি হয়েছে। আর তাছাড়া আরাধ্য এটাও চাচ্ছে না যে হাজারো মানুষের ভিড়ে কেও স্পর্শিয়াকে কটু কথা বলে কষ্ট দিক।
.
.
.
.
.
.
.

সবাই মসজিদে উপস্থিত। গেস্ট কেউই নেই, শুধু দুই পরিবারের সদস্যরা আছে আর রোহান আছে। স্পর্শিয়া ধবধবে সাদা সেলোয়ার কামিজ পরে এসেছে, মাথায় ঘোমটা, মুখে কোন সাজ নেই। আরাধ্য সাদা পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা পড়েছে। সবসময় আরাধ্য যেভাবে তাকিয়ে থাকে স্পর্শিয়ার দিকে, আজও ঠিক একইভাবে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে আছে। আজ যেন ওর কাছে স্পর্শিয়াকে আরও বাচ্চা লাগছে। চেহারা ভর্তি মায়া, জান্নাতের হুরের চেয়ে কোন অংশে যেন কম নয় ও। স্পর্শিয়ার সাথে আরাধ্যর একবার চোখাচোখি হতেই ও আরাধ্যকে ইশারায় চোখ সরাতে বললো। আরাধ্য মুচকি হেসে চোখ সরিয়ে ফেললো।

কবুল বলার সময় মেয়েরা কাদে এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু আরাধ্যও কবুল বলার পরে দু ফোটা চোখের জল ফেলে। এটা খুশির কান্না। স্পর্শিয়াকে আজ ও নিজের করে পেয়েছে সেই খুশির কান্না। স্পর্শিয়ার নামের সাথে ওর নাম জুড়ে গিয়েছে এটা সেই খুশির কান্না। স্পর্শিয়াকে আর কেও ওর কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না, এটা সেই খুশির কান্না। স্পর্শিয়ারও মনের অস্থিরতাটা তখনি কমলো যখন ও কবুল বললো। মেয়েরা কবুল টা একটু রয়ে সয়ে দেড়ি করে বলে, কিন্তু স্পর্শিয়া এতো দ্রুত কবুল বললো যে সবাই না হেসে পারলো না। শত বাধা বিপত্তি, শত কষ্ট পেরিয়ে আজ ও আরাধ্যর হতে পেরেছে এর চেয়ে বড় পাওয়া ওর জন্য আর কিছুই নেই।

বিয়ের কার্যক্রম শেষ হলো। সবাই মসজিদ থেকে বের হয়ে চলে যাচ্ছিল, আরাধ্য সবাইকে বললো,
– সবাই পাচ মিনিটের জন্য বাইরে ওয়েট করুন, আমি আর স্পর্শিয়া আসছি।
সবাই মসজিদ থেকে বের হয়ে গেল।
স্পর্শিয়া কিছুক্ষন এদিক সেদিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– এটা কি তোমার কাছে কোন ঘোরার স্পট মনে হচ্ছে?

আরাধ্য স্পর্শিয়ার হাত ধরলো। স্পর্শিয়া জিজ্ঞাসু চোখে আরাধ্যর দিকে তাকালো।
– স্পর্শ, আজ আমার জীবন সার্থক আমি তোমাকে আমার স্ত্রী হিসেবে পেয়েছি। আজ এই পবিত্র মসজিদ সাক্ষী রেখে আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই।
স্পর্শিয়া একটা শান্ত হাসি দিয়ে চোখের ইশারায় অনুমতি দিল।
– স্পর্শ, আমি তোমার ছিলাম, আমি তোমার আছি, আর আমি তোমারই থাকবো এটা তোমার কাছে আমার প্রথম ওয়াদা। তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা সবসময় বাড়বে, কখনো কমবে না। আমি কখনো তোমাকে অবিশ্বাস করবো না। জীবনের যে কোন পরিস্থিতিতে, যে কোন মোড়ে তোমার সাথে থাকবো। আমি স্বামীর কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করবো। আর হ্যা, শেষ একটা কথা, তোমার অতীত নিয়ে আমার কিছু যায় আসে না, আর তোমার অতীত নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র কষ্ট নেই। তোমার কাছে শুধু একটাই রিকুয়েষ্ট, কখনো তোমার অতীত মনে করে এই মহামূল্যবান চোখের পানি ফেলবে না। তোমার চোখ থেকে পানি পড়লে আমার বুক থেকে রক্ত ঝড়ে। রাখবে তো আমার কথা?
– হুম, অবশ্যই রাখবো।
স্পর্শিয়া কেদে দিল। কাপা কাপা গলায় বলল,
– জানিনা কোন সৎ কাজের প্রতিদান হিসেবে তোমাকে পেয়েছি।
– এইমাত্র না ওয়াদা করলে তুমি কাদবে না, আর এখনি…
– ওয়াদা কিন্তু না কাদার করিনি, অতীত নিয়ে কষ্ট পেয়ে যাতে না কাদি সে জন্য করেছিলাম।
– আরে বাহ, আমার পিচ্চি বউয়ের সব মনে আছে দেখছি।
– আমাকে আর পিচ্চি বলবে না। আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে, আমি বড় হয়ে গিয়েছি।
– তাই নাকি? তবে আমার বড় বউটার কাছে বড় কিছু চাওয়া যাক।
– কি?
– এক ডজন ছেলেমেয়ে।
– কিহহহহহ?
– হুম। আর প্রসেসিং কিন্তু আজ রাত থেকেই শুরু হবে?
– ছিঃ! কতো খারাপ তুমি। লুইচ্চা বেটা।
– এখন কিন্তু এটা আমার অধিকার, এখন আর আমাকে তুমি লুইচ্চা বলতে পারো না।
আরাধ্যর কথা শুনে স্পর্শিয়ার চেহারা মলিন হয়ে গেল। তা দেখে আরাধ্য হো হো করে হাসতে লাগলো।
একটু পর হাসি থামিয়ে নিজেই স্পর্শিয়ার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে শক্ত করে ধরলো । স্পর্শিয়ার চোখে চোখ রেখে বলল,
– আই লাভ ইউ মাই লাভলি ওয়াইফ। আজ থেকে তুমি আরাধ্যর স্পর্শ, শুধুই আরাধ্যর স্পর্শ।
– আর আরাধ্য শুধুই স্পর্শিয়ার।

(সমাপ্ত)

লিখা: Dewan Oishi

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here