প্রেম পায়রা ২ পর্ব অন্তিম

#প্রেম_পায়রা (২)
#অজান্তা_অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব_____২৫ [কপি নিষিদ্ধ] (শেষ পর্ব)

৩০.

আজ সূর্য উঠেনি। শেষ রাতের বৃষ্টিতে প্রকৃতি নব্যস্নান করেছে। সমস্ত গাছের পাতা ঝকঝক করছে। প্রকৃতির সবুজ রঙ যেন ঠিকরে পড়ছে। আকাশ এখনো মেঘলা। যখন তখন হয়তো বৃষ্টি নামবে। খোলা জানালার ওপাশে বিস্তীর্ণ পাকা ধানক্ষেত। মাঠে মানুষজনের আনাগোনা নেই৷ বৃষ্টির জন্য হয়তো কৃষকেরা ঘরে বন্দী। সম্পদ জানালা থেকে দৃষ্টি সরালো। শরীর বাঁকিয়ে বিছানার দিকে তাকালো। তিথি গভীর ঘুমে। কম্বল দিয়ে সম্পূর্ণ মুখ ঢাকা। কিছু খোলা চুল শুধু দেখা যাচ্ছে। সে মুচকি হাসলো।

শার্টের বাটন লাগিয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল সে। তার বুকের ভেতর পাহাড়সম সুখ সুখ অনুভব করছে। তিথি গতকাল যখন তাকে মেসেজ দিয়েছিল তখন সে অফিসে ছিল। মেসেজ চেক করা হয়নি। সন্ধ্যার সময় অফিস থেকে বের হওয়ার পর তিথির মেসেজ যখন চোখে পড়লো, হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল তার। খুশিতে চোখ ভিজে উঠেছিল। এই মুহূর্ত টার জন্য সে কতগুলো দিন ঢাকায় একা একা জ্বলছিল। তৃষ্ণার্ত পথিকের মতো অপেক্ষায় ছিল। আর এক মুহুর্ত দেরি না করে ছুট দিয়েছিল গ্রামের উদ্দেশ্যে। এখানে তার প্রাণভোমড়া রয়েছে যে! আসার পথে মায়ের ঘুম ভাঙিয়ে দেখা করে এসেছে। মাকে নিশ্চুপ জড়িয়ে ধরে নিজের না বলা খুশি টুকু জানান দিয়েছে সে। তারপর এখানে ছুটে এসেছে।

বিছানার এক পাশে বসে তিথির অধর্ভেজা খোলা চুলে হাত ছোঁয়াল সম্পদ। কানের কাছে মুখ নিয়ে নিচুস্বরে ডাকলো,

‘তিথি? এই তিথি?’

তিথি সাড়া দিল না। সম্পদ গভীর আবেগ মিশিয়ে ‘বউ’ বলে ডাক দিল। সঙ্গে সঙ্গে তিথি কম্বল সরিয়ে মুখ বের করলো। কিছু মুহূর্ত সম্পদের দিকে তাকিয়ে রইলো। আচমকা লজ্জামিশ্রিত হাসি উপহার দিয়ে পুনরায় কম্বল দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল। সম্পদ আর অপেক্ষা করলো। ঝট করে তিথির কম্বলের নিচে ঢুকে গেল। তিথিকে বুকে জড়িয়ে বলল,

‘বেলা হয়ে যাচ্ছে। উঠবে না?’

‘উহুঁ!’

লজ্জা লুকাতে তিথি সম্পদের বুকে মিশে গেল। এই মানুষটাকে সে প্রথম দিকে বিশ্বাস করতে পারেনি। সবসময় সতর্ক ছিল যেন সম্পদ তার মনে জায়গা করতে না পারে। কিন্তু সে হেরে গেছে। ঠিক কখন, কোন মুহূর্তে সম্পদ তার অস্তিত্বের সাথে রক্তের মতো এতটা গভীর ভাবে মিশে গেছে সে জানে না। শুধু তার অনুপস্থিতিতে মানুষটার জন্য হৃদয় ছটফট করেছে৷ এত আলোবাতাস পূর্ণ প্রকৃতিকে দম নিতে কষ্ট হয়েছে। বুকের ভেতরের খচখচানি ভাবটা সম্পদকে কাছে পাওয়ার পর চিরতরে নির্মূল হয়েছে।

কিশোরী বয়স থেকে তার মেন্যুস্ট্রেশনে অনিয়ম। লাজুকতার জন্য তেমন কাউকে বলা হয়নি। নিজের মধ্যে চেপে রেখেছে। এই অনিয়মের জন্য দেহের ভেতর সবুজ জানোয়ারটার বেড়ে উঠা ভ্রুণের ক্ষেত্রে সে ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি। তার মিসক্যারেজ, থাইরয়েড সমস্যা, হরোমানাল ইমব্যালান্স, বাচ্চা না হওয়ার কিছু সম্ভবনা সবকিছু সম্পদ কতটা স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছে। তার অপবিত্রতাকে নিজের ভালোবাসা দিয়ে শুদ্ধস্নান করিয়েছে। এই মানুষটার ভেতরটা ভালো মতো রপ্ত করার পর তার প্রতি শ্রদ্ধা আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। তিথির মুখে হাসি ফুটে উঠলো। তার সমস্ত প্রশান্তির হাসির ভান্ডার সম্পদের মধ্যে নিহিত। এই হাসির জন্য মানুষটাকে পাশে প্রয়োজন। হৃদয়ের খুব কাছে প্রয়োজন। সে সম্পদকে গভীর ভাবে আঁকড়ে ধরলো। ধরা গলায় বলে উঠলো,

‘ভালোবাসি মি. প্রোপার্টি! সারাজীবন আমার ব্যক্তিগত সম্পদ হয়ে থাকবেন প্লিজ।’

শিয়রের কাছে একগুচ্ছ গোলাপ বিছিয়ে আছে। ইতোমধ্যে পাপড়ি শুকিয়ে গেছে অনেকটা। গতরাতের তরতাজা ভাব আর টকটকে কড়া লাল রঙ কেমন ফিকে হয়ে এসেছে। দু একদিন পর একেবারে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। অথচ গোলাপ উপহার দেওয়া মানুষটার ভালোবাসা দিন কে দিন বেড়ে চলবে। কখনো মলিন হবে না। কখনো না!

#পরিশিষ্ট:

হাসতাপালের বিছানায় শুয়ে আছে তিথি। মস্তিষ্ক অল্প অল্প সজাগ হতে চেনা এক স্পর্শ অনুভব করলো সে। কেউ খুব যত্ন নিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নিজেকে অনেক দূর্বল লাগছে। খুব কষ্টে সে চোখ মেললো। চোখ মেলতে একটা উদ্বিগ্ন মুখ আবিষ্কার করলো। মুখটা স্পষ্ট হতে ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো তার। অস্পষ্ট ভাবে বলল,

‘মি. প্রোপার্টি!’

‘তিথি, কেমন আছো? কেমন লাগছে এখন? কোথাও কষ্ট হয়? একটু সুস্থ লাগছে?’

সম্পদ একনাগাড়ে প্রশ্ন করতে থাকলো। তার ডান হাত ক্রমাগত তিথির মুখ ছুঁয়ে যাচ্ছে। তিথি পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালো। সম্পদের চোখে মুখে চিন্তার রেখা। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। তিথি অনুভব করলো তার হাত আঁকড়ে রাখা সম্পদের বাম হাতটা এখনো কাঁপছে। সে মুচকি হাসলো। এই মানুষটা তাকে নিয়ে সবসময় এত অস্থির থাকে কেন? সে একটু উঁহু, আহা করলে সম্পদ যেন পাগল হয়ে যায়। প্রথম দিকে তার মনে ক্ষীণ ধারণা ছিল, সময়ের পরিক্রমায় সম্পদ হয়তো আস্তে আস্তে তার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়বে। কিন্তু ঘটনা সম্পূর্ণ উল্টো। সম্পদের সাথে তার পথচলা সাত বছরের কাছাকাছি। যত দিন যাচ্ছে সম্পদের পাগলামি আরো বেড়ে যাচ্ছে। তাকে যেন সর্বদা চোখে হারায়।

অথচ, এই মানুষটা তার জীবনের সবচেয়ে গোপন দুঃখটা জানে। জানার পরও কোনোদিন এতটুকু আঘাত করে কথা বলেনি। সিন্দুকের মধ্যে তালাবদ্ধ করে সেই গোপন দুঃখটা ভাসিয়ে দিয়েছে। সে গোপন দুঃখ আজ অবধি পৃথিবীর কেউ জানতে পারেনি। তিথি জানে, ভবিষ্যতেও কেউ জানতে পারবে না!

বছর দুই হলো সবুজ নামক মানুষটার মৃত্যু হয়েছে। সবুজ কবে অবৈধ ভিসায় বিদেশে গিয়েছিল তা সে জানতো না। বিদেশে রাজমিস্ত্রীর কাজ করা অবস্থায় বহুতল ভবনের উপর থেকে নিচে পড়ে গিয়েছিল। তার লাশ দেশে আনা হয়নি। তিথি মৃত্যুর ব্যাপারে জানতো না। সবুজের মৃত্যুর কয়েক মাস পর গ্রামে গিয়ে জানতে পেরেছে। কেন জানি তার কোনো দুঃখবোধ হয়নি। সম্পদকে বিষয়টা যখন অবগত করেছিল, সম্পদ বিস্মিত হয়নি। সে বুঝতে পেরেছিল, সম্পদ আগে থেকে জানতো। আজ পর্যন্ত তিথি মানুষটার মুখে সবুজের নাম উচ্চারণ করতে দেখেনি। তাকে কখনো কটু কথা বা এতটুকু দুঃখ পেতে দেয়নি। একমাত্র সম্পদের জন্য, সবুজ নামের কেউ যে তার জীবনে ছিল সেটা সে বেমালুম ভুলে গেছে।

সম্পদ তার জন্য কতটা পাগল তা সে বিগত বছরগুলোতে খুব করে টের পেয়েছে। তার অন্তঃসত্ত্বার সময় সম্পদ যতটা যত্ন করে, বাচ্চাদের মতো যেভাবে বুকে আগলে রাখে তিথি অবাক না হয়ে পারে না। আবার যখন মিসক্যারেজ হয়, সে যখন প্রচন্ড রকম ভেঙে পড়ে সে দিনগুলোতে সম্পদ তার ভরসার শক্তপোক্ত খুঁটি হয়ে পাশে দাঁড়ায়। এক মুহূর্তের জন্য তাকে কষ্ট অনুভব করতে দেয় না। তাকে বিষণ্ণ হতে দেয় না! কাউকে নিজের অস্তিত্ব ভুলে এতটা ভালোবাসা যায়, এতটা আপন করা যায়, সম্পদকে না দেখলে তা তার অজানা থেকে যেতো।

তিথি হাত বাড়িয়ে সম্পদের কপালের ঘাম মুছে দিল। গালে হাত ছুঁইয়ে বলল,

‘তোমার মেয়ে সুস্থ আছে?’

সম্পদ মাথা নাড়লো। পরক্ষণে তিথির হাতটা মুখে জড়িয়ে বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠলো। এতক্ষণ চেপে রাখা সমস্ত উদ্বেগ, যন্ত্রণা, চিন্তা, দমবন্ধ ভাব অশ্রু হয়ে দেখা দিল। জড়ানো গলায় বলল,

‘তুমি জানো, আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম? তুমি যখন লেবার পেইনে কান্নাকাটি করছিলে আমার বুকের ভেতর ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছিল। বার বার মনে হচ্ছিল, এইবার বুঝি তুমি সত্যি সত্যি হারিয়ে যাবে।’

‘হারিয়ে যাইনি তো! এতবড় মানুষ এভাবে ইমোশনাল হয়? আমি কয়টা বাচ্চা সামলাবো বলো তো? তোমাকে নাকি তোমার মেয়েকে?’

তিথি ফিক করে হেসে দিল। তার বিদ্রুপাত্মক কথায় সম্পদ কিছুটা সহজ হয়ে এলো। তিথির কাছ ঘেঁষে এসে বলল,

‘প্রতিবার মিসক্যারেজের পর তুমি কতটা কষ্ট পেতে। সাথে গোপন যন্ত্রণায় দগ্ধ হতাম আমি। কতবার বলেছি, এসব বাচ্চা কাচ্চা আমার চাই না! কিন্তু তুমি তো…….’

তিথি সম্পদের ঠোঁটে হাত রেখে চুপ করিয়ে দিল। দু গালের জল মুছে দিয়ে বলল,

‘এসব বলতে হয় না সম্পদ। তুমি কখনো বাবা ডাক শুনতে পাবে না এটা আমি কখনো মানতে পারতাম না। একটা বাচ্চার জন্য আমি কত ছুটোছুটি করেছি তুমি দেখোনি? এবার বলো তো, মেয়েকে দেখেছ?’

সম্পদ ডানে বায়ে মাথা নেড়ে বলল,

‘না!’

‘কেন? দেখোনি কেন?’

তিথিকে সহজ দেখে এতক্ষণে সম্পদ লম্বা করে শ্বাস নিল। দু হাতে চোখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে এলো। লাজুক স্বরে বলল,

‘আমায় ভয় লাগছে। সত্যি তিথি! আমি ভীষণ ভয় পাচ্ছি তার মুখোমুখি হতে।’

তিথি হাসতে নিতে সম্পদ বাঁধা দিল। শাসিয়ে বলল,

‘একদম হাসাহাসি করবে না। ডাক্তার বারণ করেছে।’

তিথি হাসি থামিয়ে কেবিনের চারপাশে নজর বুলালো। প্রাইভেট হাসপাতালের নরমাল সিঙ্গেল বেডের কেবিন। গ্রাম্য এলাকার মধ্যে এত সুন্দর হাসপাতাল দেখে সে কিছুটা বিস্মিত হলো। ধীরে ধীরে গ্রামের অনেক উন্নতি হচ্ছে। সে দরজার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘বাবা-মা, মারিয়া ভাবী, স্নেহা। বাকি সবাই কোথাও?’

‘আছে বাহিরে! তুমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো তো।’

‘আমার এখন ঘুম আসবে সম্পদ? মেয়েকে দেখার আগ পর্যন্ত ঘুম হবে না।’

তিথির অস্থিরতা সম্পদের বুঝতে অসুবিধা হলো না। সে নিজেও ভেতরে ভেতরে দারুণ অস্থির। সাথে একরাশ নতুন অনুভূতি। প্রথম বাবা হওয়ার অনুভূতি। টানা পাঁচ বার মিসক্যারেজের পর এই শিশুর আগমন। এ যে খুব স্পেশাল! সম্পদের অস্থিরতা আরো বেড়ে গেল। বুকের অস্থিরতা দূর করার জন্য সে তিথির দিকে ঝুঁকে আসলো। তিথি বাঁধা দিয়ে বলল,

‘মি. প্রোপার্টি, কি করছো?’

সম্পদ উত্তর দিল না। তিথির হাত ধরে কপালে কপাল স্পর্শ করলো। চোখ বন্ধ করে টেনে টেনে শ্বাস নিল। বিড়বিড় করে বলল,

‘আমার ভীষণ অস্থির লাগছে তিথি। তোমার মেয়ের সাথে সাক্ষাৎ করার মতো সাহস নেই আমার।’

তিথি সম্পদের পিঠে হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত করলো। নরম গলায় বলল,

‘একবার দেখলে আর অস্থির লাগবে না। তুমি শান্ত হও!’

আস্তে আস্তে সম্পদ শান্ত হয়ে এলো। তিথির কপালে চুমু খেল। কেবিনের ভেড়ানো দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে সম্পদ সোজা হয়ে বসলো। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো মারিয়া ভাবী। তার প্রসারিত বাহুতে টাওয়াল দিয়ে প্যাঁচানো একটা বাচ্চা। সম্পদের বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো। তিথির হাতটা চেপে ধরে চোখ সরিয়ে নিল। মারিয়া হাসিমুখে এগিয়ে এলো। সাবধানে বাচ্চাকে তিথি আর সম্পদের মাঝে শুইয়ে দিল। বলল,

‘এই তোরা থাক! আমাকে একটু বাড়ি যেতে হবে। বাবা পাগলামি শুরু করেছেন। তিনি নাকি আশপাশের তিনগ্রাম পর্যন্ত মিষ্টিমুখ করাবে। কিছু দায়িত্ব আমাকে নিতে হবে।’

তিথি হাসিমুখে মারিয়াকে বিদায় দিল। সম্পদের থেকে হাত ছাড়িয়ে মেয়ের দিকে তাকালো। শুভ্র রঙের টাওয়াল দিয়ে মোড়ানো একটা শিশু বাচ্চা। ছোট্ট ছোট্ট হাত দুটো মুঠ পাকিয়ে আছে৷ চোখ জোড়া বন্ধ। তিথির চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। বুকের ভেতর নতুন ধরনের শীতলতা অনুভব করলো। এই একটা বাচ্চার জন্য কত কিছু সহ্য করতে হয়েছে৷ অবশেষে তাকে ছুঁতে পারলো। মেয়েকে বুকে জড়িয়ে সে সম্পদের দিকে তাকালো। সম্পদ অপলক দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তিথি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো, তার মেয়ে সম্পূর্ণ বাবার গড়ন পেয়েছে। তার পৃথিবীর সবচেয়ে পছন্দের মানুষের গড়ন পেয়েছে। হাসলো সে। শুকনো ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে আবেগ মেশানো কন্ঠে ডাক দিল,

‘সম্পদ জুহায়ের! মাই পারসোনাল প্রোপার্টি।’

সম্পদ এক পলক তিথির দিকে তাকালো। তার শরীর কাঁপছে এখনো। কন্ঠে জড়তা! আচমকা তিথির হাত চেপে ধরলো সে। অস্পষ্ট ভাবে বলল,

‘তিথি, তোমার মেয়েকে একবার ছুঁয়ে দেখি?’

সম্পদের বলার ভঙ্গিতে তিথি হেসে ফেলল। মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিল। কিন্তু ঠোঁট থেকে হাসির রেশ গেল না। সম্পদ কম্পমান হাত বাড়িয়ে মেয়ের ছোট্ট ছোট্ট আঙুল আঁকড়ে ধরলো। সঙ্গে সঙ্গে বুকের ভেতরে স্বর্গীয় আনন্দে খেলে গেল। কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকালো তিথির দিকে। এই মেয়েটা তাকে কত নতুন অনুভূতির সাক্ষী করলো। মেয়েটার এত ঋণ সে কি করে শোধ করবে?

সম্পদের একহাত তিথির হাতের ভাঁজে। আরেক হাত সদ্য জন্ম নেওয়া মেয়ের আঙুল ছুঁয়ে আছে। তিথির ঠোঁটে এখনো হাসি। তার হাসির কিছু অংশ সংক্রামকের মতো মেয়ে ”সততা জুহায়ের” এর মধ্যে ছড়িয়ে পড়লো। ঘুমন্ত মেয়ের ঠোঁটের কোণেও অস্পষ্ট হাসির রেখা ফুটে উঠলো। মা-মেয়ের হাসিতে সামিল হলো সম্পদ। মেয়ের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল,

‘মামণি! পাপা দোয়া করলো। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম হাসি তোমার হোক।’

*সমাপ্ত*

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here