প্রেয়সী পর্ব – ৩১+৩২

#প্রেয়সী 🤎🥀(৩১)
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা

৬০.

সকাল থেকেই মনটা ভীষণ খচখচ করছে আমার। মনে হচ্ছে আজ বিয়ে উপলক্ষে মানুষগুলো একটু অতিরিক্তই মাতামাতি করছে। ঘড়ির কাটা ৯টার ঘরে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। কয়েক সেকেন্ডের ব্যাতিরেকেই ৯টার ঘরে তার অস্তিত্বের জাগরন ঘটবে। ঠিক সাড়ে আট টার দিকেই ফাহিম ভাইয়ার ছোট চাচার ছেলে জিতু আ-গু-ন লাগিয়ে দিলো সিড়ির কাছটাতে। মজার ছলে দিয়াশলাই নিয়ে আ-গু-ন খেলতে খেলতে সিঁড়িতে সাজানো ঝুলিয়ে রাখা পর্দায় ধাপ দিয়ে আ-গু-ন ধরে গেলো। যার জন্য প্রস্তুত ছিলো না উপস্থিত কেউ! বেচারা ভ-য়ে গুটিশুটি মে-রে ডাইনিং টেবিলের নিচে লুকিয়ে পড়ল। আর তাদের সঙ্গী সাথীরা যে যেখানে পারল লুকিয়ে পড়ল।

এই আণ্ডাবাচ্চােদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হলো তৈশি আপুর মেয়ে রাফামনি! তৈশি আপু রিম্মি আপুর ফুপুুর মেয়ে। বছর ছয় আগে বিয়ে হয়েছে। তার একমাত্র কন্যা রাফামনি। বয়স বোধকরি ৪ হবে। সবার উঠেপড়ে দৌড়ে পালানো দেখে ও হতভম্ব হয়ে ওখানেই বসে রইল! আমি সিঁড়ির পাশ থেকেই গতকালের রং খেলার রং গুলো নিয়ে যাচ্ছিলাম বাইরে ফেলার উদ্দেশ্যে। এমন সময় নাকে কিছু পো-ড়া-র গ-ন্ধ পেতেই দেখি সিঁড়ির গোড়ায় এমন দশা। বেচারি রাফমনি দাঁড়িয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে আর আ-গু-নে-র তী-ব্র-তা পর্যবেক্ষণ করছে। বারে বারে মাকে ঠোঁট ফুলিয়ে ডেকেও উঠছে। আগুন ওর থেকে সামান্যই দূরে ছিলো। আমার আসার আর কিছুক্ষণ দেরি হলে ওর গায়ে লেগে যেতেও সময় নিতো না। আমি হাত থেকে সব ছুঁড়ে ফেলেই দৌড়ে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলাম। আগুন দেখলেই আমার বড্ড গা গোলায়। রোগটা মায়ের থেকে পাওয়া। মায়েরও নাকি আ-গু-নে ফো/বি/য়া ছিলো!

গলা ফাটিয়ে কাউকে ডাকার বদলে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়লাম রাফামনিকে নিয়ে। কথায় আছে বিপদের সময় কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা! তেমনই ঘটল। আ-গু-ন বাড়তে লাগল অথচ আমি আর রাফামনি বাদে একটা মানুষও নেই আশেপাশে। রাফামনি আমার গলা জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে লাগল। চোখের সামনে আ-গু-নে-র তেজ বাড়ছে! কিন্তু থামানোর জন্য কাউকে পাচ্ছি না।

আমাকে আর রাফামনিকে এভাবে বসে থাকতে দেখে ডাইনিং টেবিলের নিচ থেকে বেরিয়ে এলো জিতু। দৌড়ে এলো আমাদের দিকে। আমি ওকে দেখতে পেয়ে ওর দিকে হাত তুলে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম কাউকে ডেকে আনতে! ও আর এগোলা না আমাদের দিকে। দৌড়ে গেলো বাইরে। গলা ফাটিয়ে সবাইকে জানান দিলো ঘরের মধ্যে সিঁড়িতে আ/গু/ন লেগেছে! ওর কথাতেই সবাই এক দৌড়ে এসে হাজির হলো। সিঁড়ির পাশেই আমাকে আর রাফামনি পড়ে থাকতে দেখে অর্ধেক মানুষ আমাদের কাছে দৌড়ে এলো। তৈশি আপু কেঁদে ফেললেন মেয়ের কান্না দেখে। মেয়ের কোনো জখম হয়েছে কিনা সেই দুশ্চিন্তায় হাস ফাঁস করতে লাগলেন তিনি। আমাকে রাহিয়ান আর রাই ধরল। নিজের শরীরের ভার নিজেরই বহন করতে ভীষণ ক-ষ্ট হচ্ছে। কম্পিত হাতে রাহিয়ানের হাতটা চেপে ধরতেই উনি জড়িয়ে ধরলেন আমায়। অস্থির কন্ঠে সান্ত্বনা দিতে দিতে জানতে চাইলেন আমি ঠিকাছি কিনা!

আগুন নেভালেন আরফান ভাইয়ারা! সিঁড়ির একপাশেই সব ফুল,পর্দা খুলে আবারও নতুন করে লাগানো হলো। এখন সব ঠিক আছে। আধঘন্টা আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা আর কেউ মনে রেখে বসে নেই। আবারও আগের উৎসাহে মেতে উঠেছে সবাই! একমাত্র আমিই স্বাভাবিক নই ওমন ঘটনার পর! ভেতরটা কেমন থেকে থেকেই কাঁপছে আমার! আবার কোনো অনাচারের পূর্বাভাস পাচ্ছি! কিন্তু মনে মনে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছি আর যেন কোনো অ/ঘ/ট/ন না ঘটে! সবটা যেন ঠিকঠাক ভাবে মিটে যায়।

—-” ন’টা বাজে। এখনও কিছু খেলিনা! রাহিয়ান ভাইয়া জানতে পারলে কিন্তু খুব বকবে নিধু!”

রাইয়ের মুখ ভার! কি জানি কি হয়েছে? জিজ্ঞেস করায় বলেছিলো সব ঠিকাছে! রূপ ভাইয়া বিয়েতে আসেননি! শুনেছিলাম সে পড়াশোনাও ছেড়ে দিয়েছে! নিশ্চয়ই সেই বিষয় নিয়েই মেয়েটার মন খারাপ! আমি জানালা ছেড়ে সরে এলাম। বিছানার উপর বসতে বসতে রাই মুখে জোরপূর্বক হাসির রেখা টানার চেষ্টা চালালো। আমি ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম,

—-” রূপ ভাইয়ার সাথে ঝা/মে/লা কি করে পাকালি? ছেলেটা তো এতটাও ঝ/গ/ড়ু/টে টাইপ নয়!”

রাই তাচ্ছিল্য করে হাসল। কথা ঘোরানোর তালে বলল,

—-” উঠেছিস সেই ভোর ছ’টায়। রাহিয়ান ভাইয়া অনেকবার করে বলে দিয়েছেন তোর সঠিক সময়ে খাবারের কথাটুকু যেন আমি মনে করিয়ে দেই! দরকার পড়লে নিজ হাতে খাইয়েও যেন দেই! কি খাবি বল? আমি নিচে গিয়ে তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি।”

—-” কথা ঘোরাচ্ছিস কেন? আজকাল বড্ড পরপর ভাবিস দেখছি!”

—-” কি যা-তা কথা বলিস বলতো? জলদি বল কি খাবি? একটু পর আবার রিম্মি আপুকে নিয়ে পার্লারে যেতে হবে! কতগুলো মানুষ বলতো? এক এক করে সবার সাজতেও তো….”

—-” রিম্মি আপুকে পার্লারে নিয়ে যাওয়ার অনেক লোক আছে। তুই এতো ভাবিস না! এবার চটপট বল কি হয়েছে তোর?”

—-” উফফ নিধি! তুই কিন্তু দিনদিন বড্ড বেশি জেদী হচ্ছিস! বললাম তো সব ঠিকাছে!”

—-” রূপ ভাইয়া বিয়েতে কেন এলো না?”

রাই হঠাৎই ক্ষে-পে গেলো! ক্ষে-পা গলায় বলল,

—-” রূপ হলো রাহিয়ান ভাইয়ার বন্ধু! সে কেন বিয়েতে এলো না তা রাহিয়ান ভাইয়াই সঠিক জানবে! আমি কি সবার খোঁজখবর রেখে বসে আছি নাকি?”

—-” তুই রে-গে যাচ্ছিস কেন! আমি তো এমনিই…”

—-” আমি মোটেই রা-গ-ছি না নিধি! সোজাসাপটা কথা হলো রূপ আর আমার মাঝে বিচ্ছেদ ঘটেছে! কারন সে তার বাবার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করে ফেলেছে! আমার সাথে তার এতোটাও লাগাপড়া নেই যে সে আমায় জানিয়ে বিয়ে করবে! যেখানে তার নিজের বন্ধুরাই জানেনা সেখানে আমি দু’দিনের মেয়ে হয়ে কি করে জানবো বল?”

আমি আহাম্মক হয়ে গেলাম! রূপ ভাইয়া বিয়ে করে ফেলেছেন? মানে কি! রূপ ভাইয়া আর রাইয়ের বিচ্ছেদ ঘটেছে আর আমি সেসব জানিওনা! রাই আমায় কিছুই জানালো না?

—-” এতকিছু ঘটে গেলো আর তুই আমাকে জানালিও না রাই? মনের ভেতর পাথর চাপা রেখে কি বিন্দাস আছিস! কাউকে কিচ্ছু বুঝতে দিসনি! আমাকেও না!”

রাই ছলছল চোখে তাকালো। আমার হাত দুটো শক্ত করে চেপে ধরে জড়ানো গলায় বলল,

—-” কি করে বলতাম বলতো? তুই নিজেই তো স্বাভাবিক ছিলিস না! আঙ্কেলের হঠাৎ চলে যাওয়া তোকে এতোটা পা-থ-র করে দিয়েছিলো যে আমি নিজেই আমার ক-ষ্ট ভুলে গিয়েছিলাম! জানিস, রূপের এমন কাজে আমি বিন্দু মাত্র অবাক নই! কারন আমার ভাগ্যটাই এমন! কেউ আমায় ধোঁকা না দিয়ে থাকতেই পারেনা! আর আমার সাথে সবার থেকে ধোঁকা খাওয়াটাই বেশি স্যুট করে! কেন তোর মনে নেই অলি ভাইয়ার কথা!”

অলি রাইয়ের প্রথম প্রেম! ক্লাস টেনে ওদের সম্পর্ক হয়! টানা দুই বছর সম্পর্ক করার পর খুব বি-শ্রি ভাবে রাইকে ধোঁ-কা দেয় ছেলেটা! হঠাৎ এসে রাইয়ের নামে যা-তা বদনাম দিয়ে ছেড়ে যায়! রাই মানতে পারেনি সেই ক/ষ্ট! এক তো আবেগি বয়স তারউপর খুব কাছের কেউ ছেড়ে যাওয়ার ব্যা/থা! সব মিলিয়ে মেয়েটা বড্ড বেশি ক/ষ্ট পেয়েছিলো!

আমি আর কিছু বলতে পারলামনা! রাইকে বুকে আগলে নিয়ে আমিও কেঁদে ফেললাম! রাইও আর শক্ত থাকতে পারল না। আমাকে পেয়ে যেন ওর সব কষ্ট গুলো একসাথে উপচে এলো। শব্দ করে কেঁদে উঠল মেয়েটা! আমি ওকে বাঁধা দিলাম না! আজ ও যত খুশি কাঁদুক! কেঁদে ওর ক/ষ্ট গুলো একটু হলেও হালকা করুক!

৬১.

কাজী সাহেব এলেন দুপুর দুটোর দিকে। বিয়ে পড়ানো হবে ২ টা বেজে ৩০ মিনিটে। আগের সময় টুকু তাকে নিয়ে খাওয়া দাওয়ার পর্ব সারতে নিয়ে গেলেন বাকি মেহমানদের সাথে!

রিম্মি আপুকে পার্লার থেকে নিয়ে ফিরল মিনিট দশেক হলো। আসিফ ভাইয়ারাও এসেছেন অনেক্ষন। তাদের মেহমানেদরই খাতিরদারি করছেন বাড়ির লোক। আমাকে আজ শাড়ি পড়তে দেওয়া হয়নি! মহারাজের আদেশে মেরুনরঙের একখানা ভারি লেহেঙ্গা পড়তে হয়েছে। লেহেঙ্গাটা পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে আমার থেকে এই লেহেঙ্গার ভার বেশি হবে। এ কথা শুনে রাই হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেয়েছে অনেক্ষন।

এখন আপাতত রিম্মি আপুর শশুর বাড়ির মহিলা মহলের খাতিরদারিতে আছি আমরা বাড়ির মেয়ে বউরা। সবাই ছোটাছুটি করে খাবার দেওয়া নেওয়া করছি। বারবার ভারী লেহেঙ্গায় আঁটকে হুমড়ি খেয়েও পড়ার দশা হচ্ছে আমার। তা দেখে আবার হাসতে হাসতে ধরে ফেলছেন বউমনি আর রাই।

খেতে খেতে এক মধ্যবয়স্কা মহিলা আমায় দেখে বেশ কানাঘুঁষা করছেন। আর যার সাথে করছেন সেও তার সাথে তালে তাল মিলিয়ে চলেছেন। ঘুরে ফিরে আমায় নিয়ে তাদের কানাঘুঁষা মোটে শেষ হচ্ছে না! যা দেখে অস্বস্তিতে মাথা ঘুরছে আমার। আমি ইনিয়েবিনিয়ে তাদের দু’জনকে এড়িয়ে চলছি। কিন্তু তারা দু’জন খাবারের খাতিরদারিতে আমাকেই ডেকে ডেকে তাদের সামনে এনে দাঁড় করাচ্ছেন! অবশেষে আমি না পেরে বউ মনিকে বলে উঠলাম “দু’মিনিটের জন্য বাইরে যাচ্ছি!” বউমনি মুচকি হেসে সম্মতি দিলেও উনাদের থেকে ছাড়া পেলাম না! তাদের মধ্যে কালো দেখতে করে মহিলা বলে উঠলেন,

—-” নাম কি তোমার?”

আমি জোরপূর্বক হেসে বউমনির দিকে তাকাতেই বউমনি হাসি মুখে বলল,

—-” মাওইমা, ও হলো আমাদের নিধি! রাহিয়ানে….”

বউমনিকে আর বলতে দিলেন না উনি। আগ বাড়িয়ে বললেন,

—-” বেশ বেশ। তা মা তোমার পড়াশোনা কদ্দূর?”

আমি অস্বস্তি নিয়ে বললাম,

—-” জ্বী, অনার্স প্রথম বর্ষ!”

পাশের মহিল খোঁচা দিয়ে কিছু একটা বললেন! ঠিক বুঝতে সক্ষম হলাম না। তাদের কান্ড দেখে রাই বিরক্ত কন্ঠে বলল,

—-” খাওয়ার সময় এতো কথা বলতে নেই আন্টি! খাবার গলায় আঁটকে যাবে।”

রাইয়ের কথায় দু’জনেই ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। ফর্সা করে মহিলা মুখ বাঁকিয়ে বললেন,

—-” তোমার কি হয়েছে! খাবার দিচ্ছো দাও না!”

রাই ক্ষে/পা চোখে তাকালো তৎক্ষনাৎ! আমি রাইয়ের হাত ধরে শান্ত হতে বলে উনাদের উদ্দেশ্যে বললাম,

—-” আন্টি ও কিন্তু ঠিকই বলেছে! আপনারা বরং খেয়ে উঠুন তারপর না হয় আমরা কথা বলবো ক্ষন।”

আমার কথা মানলেন না উনারা। কালো চেহারার অধিকারী মহিলা পাশের জনকে আস্তে করে বলে উঠলেন,

—-” আমাদের কেশবের জন্য মেয়েটারে বেশ লাগবে কি বলো?”

—-” হ্যাঁ আপা! তুমি ঠিক বলছো। কেশবের মাকে বলে দেখব। না করতে পারবেনা দেখো!”

উনাদের কন্ঠ বেশ সতর্ক হলেও আমার কানে তাদের কথা স্পষ্টই আসছিলো। আমি বিরক্ত চোখে তাকালাম তাদের দিকে! কিছু বলতে নিলেই পেছন থেকে ভেসে এলো কেশবের গলা।

—-” এমন সুযোগ থাকলে সবার আগে প্রস্তাবটা আমিই দিতাম খালা!”

উনার গলা পেয়ে পেছন ফিরে তাকালো সবাই! রাই আমার দিকে আঁড়চোখে তাকালো। কেশব ওর ক্রাশ হলেও এই মুহুর্তে ওর যেন এদের কানাঘুঁষা আর মশকরা মোটেও পছন্দ হচ্ছে না!

ফর্সা মহিলা প্রশ্ন সূচক মুখ করে কেশবের দিকে তাকাতেই কেশব ফিচেল গলায় বলল,

—-” উনি কিন্তু তোমাদের আগেই আমার বেশ মনে ধরেছে।কিন্তু যতক্ষণে বলব ভেবেছি ততক্ষণে তার এনগেজমেন্ট হয়ে গিয়েছে!”

কথা গুলো বলতে বলতে এগিয়ে এলেন কেশব। আমার পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালেন। আমি সরে যেতে নিলেই সে আবারও বলে উঠলেন,

—-” ভালো মানিয়েছে না ফুপু?”

আমি রাগি চোখে তাকালাম কেশবের দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,

—-” নাইস জোক্স।”

কেশব দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠলেন। আমি তার পাশ থেকে সরে আসতেই সামনে এসে দাঁড়ালেন রাহিয়ান। কোত্থেকে, কখন তার আবির্ভাব ঘটল আমার মতোই হয়তো সবার মনেও একই প্রশ্ন। এতো কান্ড দেখে বউমনি অসহায় চোখে তাকাতে লাগলেন সবার দিকে। রাহিয়ানের কান দুটো টকটকে লাল হয়ে আছে। চোখ,নাক,ঠোঁট সবারই একই অবস্থা! রা-গে সে আপাতত হিতাহিতজ্ঞানশূন্য! আমি শান্ত চাহনি দিয়ে তাকে শান্ত হতে বললাম! কিন্তু উনি শান্ত হতে পারছেন না। গলার কাছে দু’পাশ দিয়ে মোটা রগ গুলো ফুলে ফেঁপে উঠছে ক্রমশই! উনি কেশবের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই আমি ক্ষপ করে উনার হাত ধরে ফেললাম! চোখের ইশারায় বারন করতে লাগলাম উনাকে! কিন্তু উনি তো উনি! পারলে আমাকে সহই হেঁটে যান কেশবের সামনে! পরিস্থিতির তাল ধরতে পারছেনা বেচারি বউমনি! সামাল দেওয়া তো দূর! তবুও সবার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললেন,

—-” মাওইমা, ও হলো আমাদের রাহিয়ান! নিধি আর রাহিয়ানের এনগেজমেন্ট হয়ে আছে। রিম্মির বিয়েটা ভালোয় ভালোয় সম্পন্ন হলেই ওদের বিয়েটাও দিয়ে দিবো। আপনারা সবাই আসবেন কিন্তু! স্পে..শাল দাওয়াত রইল!”

মহিলা দু’জনের কপাল কুঁচকে এলো। ফিসফাস করে কিছু একটা বলল! আমার কান অব্দি এলো না! রাহিয়ান আর এক সেকেন্ড সময়ও দাঁড়িয়ে রইলেন না! আমাকে সহই গটগট করে হেঁটে বেরিয়ে এলেন।
আশেপাশে আর দাঁড়ানো হলো না। আমাকে নিয়ে রুমে এসে ধারাম করে গেটে লক করে দিলেন উনি! আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি তার দিকে! তার রূপ ভ-য়ং-ক-র! যখন তখন অঘটন কিছু ঘটিয়ে দিতে বিন্দু মাত্র সময় নিবেননা!

আমি কাঁপা কাঁপা হাতে তার হাতটা ধরতে নিলেই উল্টে উনি আমায় চেপে ধরলেন দেয়ালের সাথে! চোখ মুখ শক্ত করে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে উঠলেন,

—-” কেন গিয়েছো ওখানে? এতকাজ কে করতে বলেছে তোমাকে? খুব কর্তব্যপরায়ণ তুমি তাই না? কাজ করে করে একদম দুনিয়া উদ্ধার করে ফেলছো দেখছি?”

শেষের কথাটা বেশ চেঁচিয়ে বলে উঠলেন উনি! আমি
ভ/য়া/র্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে করুন কন্ঠে বললাম,

—-” আ,,আপনি অযথা রা/গ করছেন! এটা বিয়ে বাড়ি। এখানে কতশত কাজ থাকে। আমি যদি সবার সাথে হাতে হাতে একটু সাহায্য করি তো তাদের উপকার হবে! আপনি এভাবে কেন ভাবছেন?”

—-” কিভাবে ভাবছি আমি? ওখানে বসে ঐ মহিলা দুজন তোমায় কেশবের বউ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন! আবার কেশব এসে তোমার আর ওর ম্যাচিং নিয়ে কথা বলছিলো! তুমি সবটাই চুপচাপ দেখলে! কিচ্ছু বললে না! এরপরও আমি কিভাবে ভাববো তুমিই বলে দাও?”

—-” কেউ আমায় কারোর জন্য পছন্দ করলেই বুঝি আমি তার ঘরের বউ হয়ে যাবো? কেউ আমার সাথে তার ম্যাচ করেছে কিনা তা নিয়ে আনন্দ পেয়ে একা একাই খুশিতে গদগদ করছে বলে আমিও খুশিতে গদগদ করবো? একদমই তা নয়! আমি শুধু এই মানুষটার জন্যই আছি! বউ হলেও আমি তারই হবো আর ম্যাচিং করুক বা না করুক তবুও আমি তার সাথে থাকবো। আমি তো আপনারই বউ! এই দেখুন? আমার হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে আপনার পরিয়ে দেওয়া আংটিটা কত সুন্দর জ্বলজ্বল করছে। তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে প্রতিটা ক্ষনে ক্ষনে! এই প্রকৃতিও জানে নীলাদ্রিতা রাহিয়ান ব্যতীত আর কারোর হবেনা! সেটা অসম্ভব! তবুও কিসের এতো ভয়/? কিসের এতো চিন্তা?”

রাহিয়ান শান্ত হয়ে গেল হঠাৎ! আমায় ছেড়ে দিয়ে তৎক্ষনাৎ উল্টো দিকে ঘুরে গেলো! তার নীরবতা এবার আমাকে সত্যি বড্ড ভাবাচ্ছে। তার আচরন এবার বড্ড বেশি অস্বাভাবিক লাগছে। আচ্ছা এমন কি কোনো গোপন কথা আছে যেটা উনি জানেন কিন্তু আমি জানিনা? যার জন্যই উনার এতো ভ/য়!

#চলবে____________________#প্রেয়সী 🤎(৩২)
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা

৬২.

—-” রাফিদ তোমার উপর দয়া দেখাচ্ছে নিধি! একটা অনাথ মেয়ের উপর দয়া দেখিয়ে মহান সাজছে রাফিদ। তুমি ওকে এখনও ভালো করে চিনতে পারোনি! আমি বলছি তোমায়, তুমি কখনও ওর সাথে সুখী হবেনা। কিছুদিন গেলেই তোমার উপর থেকে ওর সব দয়া চলে যাবে! তখন তোমার ফিরে আসার আর কোনো পথ থাকবেনা। জীবনটাকে ন-র-ক করে বাঁচতে হবে তোমাকে! আমি তোমার ভালো চাই! বড় বোনের মতো ছোট্ট একটা সাজেশন দেই, বিয়েটা তুমি করো না! ক্যানসেল করে দাও! বেটার হবে তুমি কেশবকে বিয়ে করে নাও। হি ইজ আ সাচ্চা গুডবয়। এন্ড হি লাভস ইউ সো মাচ! কেশব তোমায় রাজরানির মতো করে রাখবে। কি নেই ওর টাকা, পয়সা,বাড়ি-ঘর! ইভেন আমেরিকার মতো একটা দেশে সে নিজের ক্যারিয়ার গড়েছে। সুখই সুখ! তুমি সব পাবে নিধি! রাফিদের সাথে ন-র-কে পো-ড়া-র চেয়ে বুদ্ধিমতী মেয়ের মতো কেশবের হাত ধরো। সময় থাকতে বুঝতে চেষ্টা করো নিধি! আমি বলছি তোমায়, কেশবের থেকে স্বর্গ সুখ পাবে তুমি! আমার কথা শোনো নিধি, বিয়েটা ভে-ঙে দাও তুমি!”

—-” রাহিয়ানের সাথে বিয়ে করে আমার জীবন ন/র/কে পরিনত হলেও তাতে আপনার কি যায় আসে? হঠাৎ আপনি কেন আমাকে নিয়ে এতটা চিন্তিত?”

আমার প্রশ্নে কফির মগটা পাশে নামিয়ে রাখল অরিন আপু। চি/ন্তাক্লি/ষ্ট কন্ঠে বলল,

—-” কারন তুমিও একটা মেয়ে আর আমিও একটা মেয়ে! আর আমি একটা মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়ের কিছুতেই খারাপ চাইতে পারিনা!”

আমি হাসলাম। প্রথম চুমুকেই বুঝলাম কফির স্বাদটা বি-কৃ-ত। আমার সামনে বসে আমার হবু স্বামীর বি-রু-দ্ধে ভাষন দিয়ে চলা এই মানুষটার মতোই বি-কৃ-ত!

—-” হঠাৎ এতোটা ভালো চাওয়া কি সন্দেহজনক নয়?”

কফি খেতে নিয়ে এবার কেশে উঠল অরিন আপু। গলা খাঁকারি দিয়ে বার কয়েক ঢোক গিলল। সে তার লক্ষ স্থীর রেখে কথা বলতে পারছে না। তা তার মুখের ভাব ভঙ্গিতেই বোশ স্পষ্ট! উনি ভীষণ ক্ষে/পে আছে আমার উপর! কিন্তু এই মুহুর্তে উনি রা/গ দেখিয়ে নয় বরং ভালোবাসা দেখিয়ে কথা বলার প্রচেষ্টায় লিপ্ত। কিন্তু উনি বারে বারে স্বভাবের কাছে হার মেনে যাচ্ছে! চেয়েও নিজের রা/গ/টা বারবার সংযত করতে ব্যার্থ হচ্ছে! কফির মগটা শক্ত করে চেপে ধরে মাথা নীচু করে নিজেকে শান্ত করছে অরিন আপু! আমি তার কান্ড দেখে না হেসে পারছি না! মানুষ সবসময় অযথাই অপকর্মে কেন সময় ব্যয় করে ভেবে পাইনা আমি! এই দুনিয়াতে ভালো কাজের তো অভাব নেই! তবে কেন তারা সেগুলো রেখে অযথাই এসবে সময় ন/ষ্ট করে বেড়ায়?

—-” কেশবের আগেও রাহিয়ান আপনার ফ্রেন্ড অরিন আপু। এ’কদিনে আমি উনাকে যতটা দেখেছি বা চিনেছি তার থেকেও অনেক বছর আগে থেকে আপনি উনাকে দেখে আসছেন। উনাকে খুব ভালো করেই চিনেন আপনি। তবে কেন হঠাৎ করে তার প্রতি এতো আ-ক্রো-শ? তার বি-রু-দ্ধে এই ষড়যন্ত্র! আচ্ছা এর মূল কারন কি আমি? দেওয়া নেওয়ার অফার চলছে নাকি?”

অরিন আপু চোখ মুখ শক্ত করে তাকাল! রা-গা-ন্বি-ত কন্ঠে বলে উঠল,

—-” ভালো কথা বলছি বুঝতে পারছো না তাই না? রাফিদের সাথে তোমার কিছুতেই যায় না! ওকে আমি ভালোবাসি! আর ওকে বিয়েও এই আমিই করবো। লুক এট ইউ এন্ড লুক এট মি নিধি! কোথায় সুন্দরীদের রানী আমি আর কোথায় কোন বনের কালো জ-ঙ্গ-লী-দের মতো দেখতে তোমায়! তুমি ভেবো দেখো, রাফিদের মতো এমন একজন ড্যাশিং ছেলে তোমার মতো একটা কালো মেয়েকে কেন বিয়ে করতে চাইবে? এখানে দয়া নয়তো কি? তোমার মা নেই, বাবা ছিলো সেও ম//রে ভূত হয়েছে! তোমার পরিবার বলতে কেউ নেই কিচ্ছু নেই!! তুমি অনাথ নিধি! তাই ও ওর পরিবারের চাপে পড়েই তোমায় দয়া করছে! বুঝতে পারছো না তুমি? নাকি বুঝতে চাইছো না? আরে বোকা মেয়ে রাফিদের মতো একটা ড্যাশিং, হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে আমার মতো সুন্দরী কাউকেই মানাবে নিধি! ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড! রাফিদ তোমায় ভালোবাসে না! কিন্তু কেশব তোমায় ভালোবাসে! রাফিদের সাথে বিয়ে করে তুমি কিছুই পাবেনা কিন্তু কেশবের সাথে বিয়ে করে তুমি সব পাবে সব!”

না দেখলেও বেশ বুঝতে পারছি আমার মুখ খানা শুঁকিয়ে শুঁকনো কাঠে পরিনত হয়েছে! অরিন আপুর কথা গুলো অবান্তর বলেও ভাসিয়ে দেওয়া যায় না! রাহিয়ান বিয়ে করলে অরিন আপুর মতো কোনো সুন্দরীকেই বিয়ে করা উচিৎ। কেননা কোন সুন্দরী মেয়েই উনার সাথে ম্যাচ করবে। আমার মতো কোনো শ্যামা মেয়ে উনার সাথে স্যুট করে না! কিছুতেই না! উনাকে বোঝাতে হবে। বলতে হবে, যদি উনি পরিবারের চাপে পড়ে আমার উপর দয়া দেখাতে চান তবে যেন সে কাজ হতে বিরত থাকেন! উনার কোনো দয়া ছাড়াও আমি টিকে থাকতে পারবো। কারন, অনাথ কেবল একমাত্র আমিই নই! যে কি না দমকা হাওয়া সইতে না পেরে মিলিয়ে যাবো। যে মানুষ গুলো জন্ম থেকেই অনাথ তারাও কিন্তু বেঁচে রয়। বেঁচে আছে! আমিও বেঁচে থাকব।

অরিন আপুর থেকে আর কোনো কথা শোনার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই বলেই উঠে পড়লাম আমি। ক্যানটিনের মেইন গেট থেকে বের হতে হতে মাঠের দিকে চোখ পড়তেই দেখা মিলল রাহিয়ানের। বন্ধুদের সাথে আড্ডায় আছেন। আমাকে যেন দেখতে না পান সেভাবে করেই সরে এলাম ওখান থেকে। সোজা ক্লাসে এসে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে আসতেই সামনে এসে দাঁড়ালো রাই। চোখে মুখে সন্দেহের ছাপ। মনে মনে নিশ্চয়ই তার অসংখ্য প্রশ্ন, কেন অরিন আপু আমাকে হঠাৎ আলাদা করে ডেকে নিয়ে গেলেন? কি কি বললেন? ওর প্রশ্ন গুলো থেকে বাঁচার ছলেই বলে উঠলাম আমি,

—-” বাসা থেকে কল এসেছে! খালামনি বাসায় ফিরতে বলল।”

রাই ভ্রু কুঁচকে বলল,

—-” ক্লাসের মাঝখান থেকে চলে যাবি? এটলিস্ট শেষ ক্লাসটা করে যা?”

আমি শুঁকনো হাসি দিয়ে বললাম,

—-” না রে। রিম্মি আপু আর আসিফ ভাইয়ার দাওয়াত আজ আমাদের বাড়িতে। বিয়ের পর এই প্রথম কাপল হয়ে আসছেন আমাদের বাড়িতে। কত আয়োজন আছে। তাছাড়া বউমনি একা একা কয়দিকে দেখবে বল? তুই বরং ক্লাস শেষ করে সোজা বাসায় ফের। ফিরে টেক্সট করে জানাস ঠিক মতো পৌঁছেছিস কি না! আমি জলদি করে যাই কেমন?”

—-” ভাইয়া যাবে না? ভাইয়া কোথায়?”

আমি থমকে দাঁড়ালাম! গলার কাছে অভিমান গুলো দলা পাকিয়ে আসতেই ঢোক গিলে বললাম,

—-” দেখলাম ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে তাই আর ডাকি নি। সমস্যা নেই,আমি একাই ফিরতে পারব।”

—-” তোর মুখটা ওমন শুঁকনো লাগছে কেন রে? কেউ কিছু বলেছে?”

আমি জোরপূর্বক হাসতে লাগলাম। কথায় কথায় রাই ঠিকই পেটের কথা মুখে এনে ছাড়বে। তাই রাইকে তাড়া দিয়ে বললাম,

—-” ক্ষিদে পেয়েছে তাই ওমন লাগছে। তুই থাক আমি আসছি।”

—-” খেয়ে যা কিছু!”

—-” বাসায় খাবারের তোড়জোড় চলছে। এখানে খেলে বাসায় গিয়ে আর কিছু খাওয়া হবে না। যা দেখে উনিও রা-গ-বে-ন আর খালামনিও রা-গ-বে। আসছি রে।”

—-” সাবধানে যাস।”

রাইয়ের শেষ কথাটা কানে আসতেই জড়ানো গলায় ফের ঢোক গিললাম। নিজেকে আজ বড় অসহায় লাগছে। অরিন আপুর কথা গুলো বড্ড ভাবাচ্ছে। সত্যিই তো আমি অনাথ! মা নেই, বাবাও নেই! সবাই চলে গিয়েছে আমায় অনাথ করে। আচ্ছা অনাথরা বড্ড অসহায় হয় তাই না? সবার দয়া নিয়েই তাদের গোটা জীবনটা পার করে দিতে হয়। আমিও কি তার ব্যাতিক্রম? এই যে চারপাশে এতো এতো মানুষ আমায় এতো ভালাবাসে এগুলা কি সত্যিই ভালোবাসা? নাকি দয়া? কি করে বুঝবো? কাকে জিজ্ঞেস করবো? কার থেকে জানবো সবাই কি আদৌও আমাকে ভালোবাসে নাকি সবটাই দয়া করে!

বাসায় ঢুকতেই বড় খালামনিকে রান্নাঘরে দেখতে পেলাম! রান্নাবান্না হচ্ছে বোধহয় রিম্মি আপুদের জন্য। আমাকে শুঁকনো মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই মিষ্টি করে হাসল সে। পরক্ষণেই আবারও হাসির সমাপ্তি ঘটিয়ে মন খারাপ সুরে বলল,

—-” মুখটা ওমন শুঁকনো কেন আমার মায়ের? মন খারাপ মা?”

বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠল খালামনির স্নেহভরা কন্ঠে। মুহুর্তেই গলায় চিনচিনে ব্যা-থা আরম্ভ হলো। কান্না আসছে খুব। কিন্তু এই মুহুর্তে আমি কাঁদতে চাইছিনা! আমাকে একই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গ্যাসের পাওয়ার একদম অল্প করে কাপড়ে হাত মুছতে মুছতে আমার দিকে এগিয়ে এলো খালামনি। আমার সামনে দাঁড়িয়ে আহ্লাদী গলায় বলল,

—-” সকালে খেয়ে বের হলি না কেন মা? দেখ মুখটা কেমন শুঁকিয়ে আছে? ক্ষিদে পেয়েছে খুব তাইনা? আয়। এখানে বস আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসি। খেয়ে নিবি। আয় জলদি আয়।”

খালামনি দ্রুতপায়ে এগোলেও আমি ধীরেসুস্থে এগোলাম ডাইনিং টেবিলের কাছে। চেয়ারে বসতে বসতে ততক্ষণে খালামনি প্লেট ভর্তি খিচুড়ি নিয়ে হাজির হলো। আমার সামনে প্লেট রেখে গ্লাসে জল ভর্তি করে আমার সামনে রেখে আমার পাশের চেয়ারটা টেনে বসল।

—-” রাহিয়ান ভাইয়ার মতো এমন সুদর্শন একজন ছেলের সাথে আমার মতো মেয়েকে মানায় না! তুমি আমাদের বিয়েটা দিওনা খালামনি! তুমি চাইলেই তোমার ছেলের জন্য রাজকন্যা নিয়ে আসতে পারবে!”

আমার কথা শুনে খালামনি থমকে গেল। আমাকে সামনে বসিয়ে খাওয়ানোর উৎসাহটুকু তার মুহূর্তেই মিলিয়ে গেলো! চোখে মুখে ভর করল এক আকাশ কালো মেঘ! খালামনির কালো মুখটা দেখে আমার ভেতরটাও কেঁপে উঠল! আমি আর বসে থাকতে পারলাম না মানুষ টার সামনে! চেয়ার ঠেলে বের হয়ে দৌড়ে চলে এলাম নিজের রুমে। ভেতরটা ক্রমশই ডুকরে উঠছে কান্নায়! কান্না গুলো আটকানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়েও কোনো লাভ হলো না! বিছানার পাশে ধপ করে বসে পড়েই হেঁচকি তুলে কাঁদতে লাগলাম!

অরিন আপু রাহিয়ান কে ভালোবাসে সে কথা কি রাহিয়ান জানেন? হয়তো জানেন। হয়তো সেও তাকেই ভালোবাসে! কেবল আমার জন্যই প্রকাশ করতে পারেনি! অরিন আপুর সাথে উনাকে সত্যি ভীষণ মানাবে! ওমন রাজপুত্রের মতো দেখতে ছেলের সাথে কি আমার মতো কালো মেয়ে মানায়? ঠিকই বলেছে অরিন আপু। আমায় দেখতে কোনো বনের জঙ্গলীদের মতোই লাগে। আমিও বোকার মতো কত স্বপ্ন দেখেছি উনার সাথে! একবারও বুঝতে চাইনি মানুষ আজও সৌন্দর্যের পূজারী!

বিছানার চাদর খামচে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছি। অভিমানটা আজ নিজের উপর নয় বাবার উপর হচ্ছে! বাবা যদি আজ আমার সাথে থাকতো তাহলে হয়তো, আমায় কখনও এই কথা শুনতে হতো না! কিন্তু যা শুনতে পারবো না তাই-ই তো লোকজন বলা বলি করবে। নিধি অনাথ! অনাথ বলে সবাই দয়া দেখাতে আসবে! নাহ্ আমি কারোর দয়া নিবো না! আমার কারোর দয়ার দরকার নেই! আমি চলে যাবো নিজের বাড়িতে। ওখানে গিয়ে বাবা আর মায়ের ছবি আগলেই বাকি জীবন পার করব। কখনও কারোর দয়া আমি চাই না! কারোর দয়ার প্রয়োজন নেই আমার।

৬৩.

দুপুর ৩টা। মাথার উপর কাঠফাটা রোদ। গা পোড়ানো গরম। ছাদের মধ্যে পায়চারি করছি বাসার সবার নজর এড়াতে। সবাই যখন যে যার রুমে প্রবেশ করবে আমিও সুযোগ বুঝে ব্যাগপত্র নিয়ে বের হয়ে যাবো। রিম্মি আপুরা এসেছেন সাড়ে বারোটার দিকেই। আমি কেবল একবারই গিয়েছি তাদের সামনে! তারপর থেকেই নিজের রুমে আছি। তাদের খাওয়া দাওয়া এতক্ষণে হয়ত কমপ্লিট হয়ে গেছে। রাহিয়ান এখনও বাসায় ফেরেননি। এই সুযোগ! আল্লাহ্ রক্ষা করলে উনার সামনে পড়তে হবে না। দোয়াদরুদ পড়তে পড়তে নিজের রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরলাম। ছাদের সিঁড়ি বারোটা। গুনে গুনে পাঁচ টা সিঁড়ি পেরোতেই মনে হলো শূন্যে ভেসে উঠলাম।

আঁ-ত-কে উঠে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে পায়ের নীচে জমিন খোঁজার বৃথা চেষ্টা চালালাম। পেলাম না তো কিছুই উল্টে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে কারোর পেছনে ছুটতে লাগলাম যেন। ভ-য়ে সারা শরীরে কাটা দিয়ে উঠছে বার-বার। সামনের মানুষটার মুখটা দেখার জন্য সেকেন্ডের চেয়েও কম সময় মিলছে না আমার! এমন গাঁজাখুরি কাজকারবার রাহিয়ান ছাড়া কারোর করার কথা নয়! বুঝলাম বাবা সবাই দয়া করছে, কিন্তু এটাকে কেমন দয়া বলে? আমি তো বলব উনি জীবনকালে এই পো-ড়া-মু-খী-কে দয়া বাদে সবই করেছেন!

টানতে টানতে নিজের রুমে এনেই ক্ষান্ত হলেন উনি। ঠিক ক্ষান্ত হলেন না! আরও বাকি আছে, আমাকে ছুঁড়ে ফেললেন বিছানার উপর! অতঃপর রা-গে দিশেহারা হয়ে দরজা লক করে দিলেন। আজ আমার একেবারে বাঁচার আশা শূন্য! রা-গে উনার মাথার প্রত্যেক টা চুল কাটা কাটা হয়ে আছে। কপালের দুই পাশের রগ গুলো মোটা হয়ে ফুলে উঠেছে। চোখের মধ্যে র-ক্ত যেন টগবগ করছে। লালচে চোখ জোড়া সূর্যের তেজকেও হার মানাবে। পুরো মুখ-মন্ডলে রা-গে কঠিন আকার ধারন করেছে! হাত জোড়া মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছেন। দৃষ্টি কঠিন ভাবে আমাতেই নিবদ্ধ। চড় থাপ্পড় খাওয়ার অনেক চান্স আছে। যেভাবে রে-গে আছেন তাতে গলা চে-পে মে-রে দিতেও সময় বেশি লাগবেনা বলেই মনে হচ্ছে। ভেতরটা খুব তেজে ছটফট করছে আমার। আমার সাথে কোনো অনাচার তো নিশ্চিত ঘটবে আজ!

আমি দু’হাতে ভর করে উঠতে নিলেই ঝড়ের বেগে এসে উনি আমাকে বিছানাতেই চেপে ধরলেন তিনি। ভ-য়ে আমার আত্মা ছোটাছুটি করছে বেরিয়ে আসবে বলে। উনি রা-গ-কে সংযত করতে পারছেন না! রা-গা-ন্বি-ত স্বরে চেঁচিয়ে বলে উঠলেন উনি,

—-” আমার থেকেও ভালো ছেলে পেয়েছিস তাই তো? আর সেই ভালো ছেলেটা কে? কেশব! মাকে বলছিস তোমার ছেলের জন্য চাইলেই রাজকন্যা নিয়ে আসতে পারবে! আমার যদি মায়ের খোঁজা রাজকন্যাই লাগত তবে আমি তোকে কেন ভালোবাসলাম? তোর সাথে কেন ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখলাম? কেন আমার জন্য ম-রে যাওয়া মেয়েগুলোকে আমি আপন করলাম না? বল? কেন করলাম না? এই আজকের দিনটার জন্য? আজকের দিনটা দেখার জন্য, তোর জন্য আমি এতো ম-রি হু? এতো ভালাবাসার পরও যদি শুনতে হয় আমার জন্য তোকে নয় যেন কোনো সো কল্ড রাজকন্যা দেখতে মেয়েকে নিয়ে আসা হয় বিয়ে করানোর জন্য তবে তোর জন্য এতো ম-রি কেন আমি? বল??”

তার কন্ঠে রা-গ নয় চাপা ক-ষ্ট গুলো যেন উপচে পড়ছে। চোখজোড়াও ছলছল করছে! মানুষটা ক-ষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু আমি কি করব? অরিন আপু যে তাকে ভালোবাসে। আর অরিন আপুর মতো কেউই তার জন্য যোগ্য। আমার মতো কেউ নয়।

—-” আপনার মতো পার্ফেক্ট কারোর জীবনে আমার মতো মেয়েরা কেবল উড়ে এসে জুড়েই বসতে পারে। আমিও তাই! ব্যতিক্রম নই,আমিও আপনার জীবনে উড়ে এসে জুড়ে বসেছি৷ আমার জন্য আর পাঁচটা মেয়ে কেন ভুক্তভোগী হবে বলুন তো?”

উনি আমার হাত ছেড়ে গলা চে*পে ধরলেন! আমি দ*ম*ব*ন্ধ করে উনার দিকে তাকাতেই উনি ফুঁসে উঠে বললেন,

—-” তোকে আর পাঁচটা মেয়ের কথা কে ভাবতে বলেছে? এতো মানবদরদী হতে কে বলেছে? আমি তোকে ভালোবাসি না? আমি তোকে কাছে টানি না? নাকি তোর উপর দয়া করি বল? তোর কি মনে হয় আজ পরিস্কার করে বল? আমি দয়া করি তোর উপর?”

আমার শ্বা*স*ক*ষ্ট হতে ছটফট করতে লাগলেই রাহিয়ান আমার গলা ছেড়ে দিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমার উপর থেকে সরে গিয়ে পা*গ*লের মতো করে জলের গ্লাস খুঁজতে লাগলেন! আমি কাশতে কাশতে উঠে বসতে জলের গ্লাস নিয়ে হাজির হলেন তিনি। আমার মুখের সামনে জলের গ্লাসটা ধরে জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলেন,

—-” স..সরি সরি জান! ক্ষমা করে দাও আমায়। আ..আমি ইচ্ছে করে তোমায় ক*ষ্ট দিতে চায়নি! আমায় ক্ষমা করে দাও! আমা..য়য়য় ক্ষমা করে দাও প্লিজ!”

—-” একটা অনাথ মেয়েকে সবাই দয়াই করবে রাহিয়ান! আপনিও তা-ই করছেন! অস্বাভাবিক তো কিছু নয়!”

স্পষ্ট গলায় আমি কথাটা বলে উঠতেই রাহিয়ান থমকে গেলেন। চোখের মাঝে এক আকাশ সমান বিস্ময় নিয়ে শান্ত কন্ঠে বললেন,

—-” আমি তোমায় দয়া করছি নীলাদ্রিতা?”

আমি টলমল করা চোখ নিয়ে উনার দিকে তাকাতেই উনি ছুঁড়ে মারলেন হাতের গ্লাসটা। বিকট চিৎকার পেড়ে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত হলো গ্লাসের টুকরোগুলো। আমি চমকে উঠে উনার দিকে তাকাতেই হেঁচকা টানে তুলে দাঁড় করালেন আমাকে। আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে টেনে নিয়ে উনার ঘরের বড় আয়নাটার সামনে দাঁড় করালেন আমায়। এটাই সেই রহস্যময়ী আয়না! যেটাতে ভূ-তে-র থ্রিডি পেইন্টিং দেখে আমি ভ/য় পেয়ে ছোটাছুটি করে কে*লেং*কা*রী কান্ড করেছিলাম! কিন্তু উনি আমাকে হঠাৎ এই আয়নার সামনে এনে কেন দাঁড় করালেন?

আমি আয়না থেকেই উনার দিকে দৃষ্টিপাত করলাম। আজ বিচ্ছেদের আ*গু*নে দু’জনেই জ্ব*লেপু*ড়ে খাক হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু প্রকাশ করার বেলায় দু’জনেই শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কেউ কোনো কথা বলছি না! প্রতিত্তোর করছিনা! উনি আমার হাত ছেড়ে আয়নার মাঝখানে ঝুলে থাকা সাদা ফিতেটা ধরে টান দিতেই উদ্ভট এক শব্দ করে ভেসে উঠলো খুব বি*ভৎ*স দেখতে এক ভূ*তে*র ছবি! আমি আঁতকে উঠে দৌড় দিতে নিলেই উনি আমায় আঁটকে ফেলেন! বুঝতে পারছিনা, উনি কি এখন ভূ*তে*র ভ*য় দেখিয়ে আমায় পা*গ*ল বানাতে চাচ্ছেন?

—-” দ..দেখুন আ..আমার কিন্তু খুব ভ..য়য় লাগছে! প..প্লিজ আ..মায় ছেড়ে দিন! প্লিইইইজজজ! মাআআ..”

উনি আমার একটা কথাও কানে তুলছেন না! আমার হাতটা চেপে ধরে কেমন করে পা*ষা*নে*র মতো করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ছবিটার দিকে। ভ*য়ে আমার কলিজা পু*ড়ে কয়লা হয়ে যাচ্ছে। বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত ছ্যাঁত করে ভ*য়ং*ক*র ভাবে পু*ড়*ছে! ভ*য়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলাম আমি। বার-বার ঢোক গিলেও গলা ভেজাতে পারলাম না। উনি এমন পা*ষা*ন কেন? দুঃখিত! প্রশ্নটা উল্টো হবে, আমি এতো বোকা কেন? আয়নার উপর আমার হাত পড়তেই ছবিটা পাল্টে আমার হাস্যজ্বল একটা ছবি ভেসে উঠলো! আমার মস্তিষ্ক অবাক হয়ে কুল পাচ্ছে না! এই ছবি টা তো….

উনি আমায় ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে গেলেন ক’পা। আমি আমার বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছি।

—-” দেখো ভালো করে, ছবিটা দেখে কিছু মনে পড়ছে? ঠিক দুই বছর আগের এই ছবি! সেদিন রাস্তার পাশে কিছু অনাথ বাচ্চাদের সাথে তোমার এই মনোরম দৃশ্য! সাথে কিন্তু সেদিন তোমার বাবাও ছিলো! বাচ্চাগুলোর সাথে হেসে খেলে তোমার কথা বলা। ওদের খাওয়ানো ওদের পড়ানো! এত সুন্দর মনোরম দৃশ্যটা আমার মন কেড়েছিলো নীলাদ্রিতা। সেদিন তোমার এই হাস্যজ্বল মুখ খানা দেখে আমার বুকের পা পাশটা খুব করুন ভাবে চিনচিন করে ব্যা*থা করছিলো! জানান দিচ্ছেিলো প্রকৃতির সবচেয়ে মায়াবী মেয়েটা আমার মন কেড়েছে। আমি কয়েক মুহুর্তের জন্য এই দুনিয়া থেকে হারিয়ে গিয়েছিলাম! বুকের মধ্যে তোলপাড় করে জানান দিচ্ছিলো এই নিষ্পাপ হাসিটার প্রেমে পড়েছি আমি। প্রথম দেখাতেই তোমায় ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তাই তোমার থেকে পারমিশন না নিয়েই তোমার ছবিটা ক্লিক করি। সেদিন থেকে আজও অব্দি সেই ছবিটা বুকের বা পাশটায় ঠিক আয়নার ছবিটার মতোই জলজ্যান্ত হয়ে ভাসছে। সেদিন কিন্তু তুমি অনাথ ছিলেন না নিধি! তাই তোমার উপর দয়া করে ভালোবাসার কোনো প্রশ্নই আসেনি। সেদিন হঠাৎ করে তোমার দেখা মিললেও টানা দু’দুটো বছরে তোমার দেখা আমি আর পাইনি! পুরো শহর তন্নতন্ন করে ফেলেছি তোমায় খুঁজতে কিন্তু তোমার খোঁজ মিলেনি! ঠিক দু’বছর বাদে তোমায় আবারও খুঁজে পেলাম! তোমার আমার সম্পর্কের একটা নাম খুঁজে পেলাম! নিধি, তুমি কিন্তু সেদিনও অনাথ ছিলেনা! সেই দু’বছর আগে থেকে তোমার প্রতি আমার যে অনুভূতি সবটাই ভালোবাসার কোমল অনুভূতি ছিলো! বিলিভ মি নিধি, আমি তোমায় কখনও দয়া করে ভালোবাসিনি! তাহলে আজ কেন প্রশ্ন উঠছে আমি তোমায় দয়া করছি! তুমি অনাথ হয়েছো বলো তোমায় আমি দয়া করছি! কি করে ভাবলে বলো তো?? মনে এক সেকেন্ডের জন্যও প্রশ্ন জাগল না এই মানুষটা কি করে আমাকে দয়া করতে পারে? ভালো তো তুমিও আমায় একই ভাবে বাসো নীলাদ্রিতা? তবে?”

নিজেকে অসহায় নয় বরং ছন্নছাড়া লাগছে বড়। অনুভূতি গুলোও বড় ছিন্ন-বিছিন্ন লাগছে। কান্না পাচ্ছে খুব! কিন্তু এই মানুষটাকে জড়িয়ে ধরার সাহস হচ্ছে না!

—-” অরিন আপু আপনাকে ভালোবাসে….”

—-” আর আমি?”

—-” জানিনা!”

—-” আজ আমার থেকে অরিন তোমার কাছে বড় হয়ে গেলো নিধি?”

—-” অরিন আপুও একটা মেয়ে আর আমিও একটা মেয়ে! একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের অনুভূতি বুঝবো না?”

—-” কেশবও তো তোমাকে চায়? তাই বলে কি আমি একটা ছেলে হয়ে অন্য একটা ছেলের অনুভূতি বুঝে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে দিয়ে দিবো? এতো ইজি? নিজের ভালোবাসার এই মূল্য? তাহলে ভালোবাসলাম কেন?”

আমি হেঁচকি তুলে এবার কেঁদে ফেললাম! উনি আর কিছু না বলেই আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন! গালে কপালে ভালোবাসার পরশ একে বললেন,

—-” আর কত বোকা থাকবে বলোতো? এবার তো নিজের অধিকারটা শক্ত হাতে ধরতে শিখো? সামনেই বিয়ে আমাদের। বিয়ের একবছরের মাথায় দেখবে তোমার কোল জুড়ে ফুটফুটে এক রাজকন্যা এসে গেছে। তখন কি হবে বলো তো? দেখা যাবে মা, মেয়ের চেয়েও বেশি বাচ্চামো করছে! তখন কি মেয়েকে সামলাবো নাকি মাকে?”

আমি লজ্জায় তার বুকে মুখ লুকিয়ে ফেললাম! সত্যিই তো ভালোবাসার মানুষটাকে কেউ চাইলেই বুঝি এতো সহজে দিয়ে দেওয়া যায়? সে তো অসম্ভব তাই না?

#চলবে____________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here