#ফাল্গুনের_ঢেউ
পর্ব – ১৩
লেখিকা – Zaira Insaan
ওর হাসিতেই যেন ঘোরে চলে গেল ও। পরক্ষণে কারোর ডাকাডাকি তে গভীর ধ্যান ভাঙলো। পাশ ফিরে দেখলো চৈতি ডাকছে স্যার স্যার করে। স্নিগ্ধ কপাল কুঁচকে গম্ভীর হয়ে বলে,,
“কি? এভাবে ডাকছো কেন?”
ধমক খেয়ে চুপ করে গেল চৈতি। মিনমিন করে বলে,,
“নীলিম স্যার ডাকছে আপনাকে।”
ফোঁস করে শ্বাস ফেলে চোখ বুলালো চারিদিকে। মিহি নামক মেয়েটি নেই! চৈতি চলে যেতে নিলে স্নিগ্ধ ডেকে জিজ্ঞেস করে,,
“মিহি কই?”
“ও আমাদের সাথে ওখানে।”
আঙুল দিয়ে ইশারা করে দেখালো চৈতি। স্নিগ্ধ ভ্রু কুঁচকে দেখে নেয়। তারপর আনমনে বলে,,
“কি এক অদ্ভুত মেয়ে!”
চৈতি চলে গেল। স্নিগ্ধ হাত উল্টে ঘড়ি দেখে তারপর তর্জনী দিয়ে কপাল ঘষে বলে,,
“তাহলে ১০ মিনিট ধরে পাগলের মত দাঁড়িয়ে ছিলাম এখানে!?”
সে আর সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে সেখানে যেতে লাগলো। নীলিম স্যারের সামনে আসতেই নীলিম হেঁসে বলে,,
“কিরে স্নিগ্ধ মন কোথায় থাকে আজকাল?”
“মানে?” না বুঝে ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুঁচকে প্রশ্ন করল স্নিগ্ধ।
“তো আর কতদিন আছে তোমার?”
“দেড় মাসের মতো।”
“অহ্ আচ্ছা আচ্ছা।” তীর্যক চাহনি দিয়ে কথাটি বলে নীলিম।
আরো কিছুক্ষণ তাদের মাঝে কথা চলে। পরে হাঁটতে হাঁটতে কোনো এক রেস্তোরাঁয় উঠে সকালের খাবার সেরে নেয় তারা। শিউলি ম্যাম আওয়াজ উঁচু করে ছেড়ে দিয়ে বলে,,
“আমরা এখন হোটেলে উঠব ফ্রেশ হয়ে টেকনাফে যাওয়ার জন্য তৈরি হবো। কেমন?”
বন্নি তনুর কানে ফিসফিস করে বলে,,
“উনার কথা বলার স্টাইল দেখছিস? পুরো অগোছালো।”
“হুম~ ”
শিউলি কে নিয়ে কিছুক্ষণ হাসাহাসি করলো তনু ও বন্নি। চৈতি এসে এক ভ্রু উঁচু করে বলে,,
“সব শুনেছি আমি, এসব কথা যদি আমি শিউলি ম্যামকে বলে দেয় তবে।”
“তবে আলুকচু হবে তোর।” এক গাল হেঁসে বলে বন্নি।
“মানে?” রাগে প্রশ্ন করল চৈতি।
তনু টিটকারি মেরে বলে,,
“ঘি মধু চিনি! যাহ এবার।” এক গাল ভেটকি মাছের মত হেঁসে বলল।
চৈতি গজগজ করতে করতে সেখান থেকে চলে গেল। মিহি চৈতি কে এমন রাগান্বিত অবস্থায় দেখে তাদের কাছে এসে বলে,,
“ওর আবার কি হলো?”
তনু হাসতে হাসতে বলে,,
“ধূর বাদ দে তো, মেয়েটা এমনে পাগল ওর কথা বলে লাভ নাই।”
বন্নি তার কথার সাথে তাল মিলালো। কথা বলতে বলতে তিনজন একসাথে হাঁটতে লাগলো বহু দূর।
তাদের শিউলি টিচারের কথা মতোই প্রথমে হোটেলে যাবে পরে তৈরি হয়ে টেকনাফ ঘুরতে বেরুবে।
____________
সাদা রঙের লেডিস শার্ট পরলো মিহি। হাঁটু থেকে কিঞ্চিৎ উপরে হরেক রঙের ছোট ছোট ফুল আঁকার করা। গলায় এক প্যাচ দিল ধূসর রঙের স্কার্ফ টা। চুলগুলো খোলায় রাখলো। কাপড় টা তার অতি প্রিয়। তার ছোট বোন মিলি যে এ কাপড়টা উপহার দিল জন্মদিনে তাই। মিহি কাপড়টা গুছিয়ে রেখেছিল কোথাও সুন্দর জায়গায় পড়ার জন্য। এ সুবর্ণসুযোগ পেয়ে গেল সে। তনু এসে বলে,,
“কাপড়টা সুন্দর আছে।”
“হুম, মিলি গিফ্ট দিয়েছিল আমার গত জন্মদিনে।”
“বাহ্! ভালো তো, আর আমার ভাইটার যে চোইস~ যে কেউ দেখলে নির্ঘাত বলবে, হয়ছে তোর আর কষ্ট করে আমার জন্য কিছু আনতে হবে না।”
হো হো করে হেঁসে দিল বন্নি ও মিহি। বন্নি জুতো পরে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,
“তাড়াতাড়ি চল নাহয় শিউলি ম্যাম আবার বকবে আমাদের।”
______________
নীচে তড়িগড়ি করে নামলো সবাই। কিছুদূর হেঁটে গেল তারপর থমকে গেল ইতিমধ্যে সবগুলো। সামনে বড় বড় জীপ গাড়ি। অনেক হবে। ইসকাত স্যার সবাইকে চমকে দিয়ে বলল,,
“আমরা এগুলো করেই টেকনাফ যাবো।”
কেউ কিছু বলল না শুধু তাকিয়ে রইল। তনু মিহি ও বন্নির হাত ধরে ফিসফিস করে বলে,,
“আমরা একসাথে বসব কেমন?”
পেছন থেকে নীলয় নামক এক ছেলে বলে উঠে,,
“আমাকে বাদ দিয়ে দিলে?”
বন্নি পেছনে বিরক্ত হয়ে বলে,,
“তুই অন্যটাতে যা। মেয়েদের সাথে তুই কি করবি?”
“তোর মতো নাটক করব আরকি।”
এদের ঝগড়ায় মিহি অতিষ্ঠ হয়ে বলে,,
“আচ্ছা ঠিক আছে আসিস।”
নীলয় বন্নিকে মুখ বেঙ্গ করে বলে,,
“ম্যাডাম পারমিশেন দিয়ে দিছে, হুহহ।”
বলে একটা ঠাট দেখিয়ে এক জীপ গাড়ির ভেতরে করে বসল নীলয়। তনু, মিহি, বন্নিও উঠে গেল সাথে আরো কয়েকজন। গাড়িগুলোতে প্রায় ১২ জন করে বসার মতো সীট আছে। পেছনে নয়জন সামনে ড্রাইভার সহ দু’জন। সব স্টুডেন্টরা আলাদা আলাদা গাড়িতে বসতেই স্যার ম্যাডাম’রা একে অপরের সাথে আলাপ করতে লাগল। কোন স্যার কোন স্টুডেন্টদের সাথে বসবে। মিহি আড়চোখে ওদের আলাপের দিকে তাকিয়ে আছে হঠাৎ স্নিগ্ধের সাথে চোখে চোখ পড়তেই ধড়ফড়িয়ে চোখ সরিয়ে নিল। স্নিগ্ধ ও ইসকাত স্যার এসে ড্রাইভারের পাশে বড়ো সীটে ওখানে বসল । স্নিগ্ধ একদম মিহির বা পাশে সামনে বসল মিহি চাইলে ঘাড় সামান্য ঘুরিয়েই তাকে দেখে নিতে পারবে পুরোপুরি। ইসকাত স্যার মাঝখানে, উপরে ছোট একটা লম্বাটে চিকন গ্লাস। হঠাৎ ইসকাত স্যার বলে উঠল,,
“ভালোভাবে বসতে পারছো তো তোমরা?”
সবাই ইয়েস স্যার বলতেই ইসকাত গুড বলে পাশের ড্রাইভারকে গাড়ি স্ট্রার্ট দিতে নির্দেশ দিল। শুরু হলো জার্নি। দ্রুত গতিতে চালানোর কারণে দমকা হাওয়ায় চুলগুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে। আশেপাশে কোন দৃশ্য দেখতে পারছে না মিহি, খোলা চুলগুলোর কারণে। ব্যাগ থেকে ছোট ক্লিপ বের করে সামনের চুলগুলো পেছনে নিয়ে গিয়ে আঁটকে দিল। এবার শান্তি লাগছে। চৈতি পাশের থেকে বলে উঠে,,
“চুলগুলো যখন বেঁধে রাখবাই তাহলে এতক্ষণ খোলা দরকার কি ছিল?”
“তোমার কোন সমস্যা?”
“না মানে…।”
মিহি বিরক্ত হয়ে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে দ্রুতগতিতে বলে,,
“ওই ওই দেখ কীভাবে পাখি উড়তেছে।”
চৈতি আকাশে তাকাতেই তনু টিটকারি মেরে বলে,,
“তুমিও ওদের মতো উড়ে যাও।”
বলতেই সবাই জোরে হেঁসে দিল। চৈতির মাথা গরম হয়ে যেতেই সে উঠে স্পৃহার পাশে বসে গেল।
মিহি চোখ মুখ কুঁচকে পেছনে প্রকৃতির দৃশ্য দেখতে লাগল। মুখে রোদ পড়ছে চোখ খিচে রাখতে হচ্ছে সবার। তার উপর উপরে কোন কাপড় বা চাল নেই যে এই তপ্ত রোদ থেকে বাঁচা যাবে। শুধু মোটা ও লম্বা লোহা উপরে । লোহাগুলোর মধ্যে বেশ দূরত্ব হলেও কারোর দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। বসেই থাকতে হবে। ঘেমে একাকার মিহি। একটু মজাও পাচ্ছে না এই মরা গরমের জ্বালা। গাড়ি চলাচলের অবস্থায় রাস্তার এক টুকরো পাথর চলে আসলো চাকার নীচ তলায়। গাড়ি বেসামাল হয়ে উপর নীচ হতেই উপরে লোহার মধ্যে মাথায় ধরাম করে জোরে বারি খেল মিহি। ব্যাথায় মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো।
“উঃ মা~~ আহ্!”
কারোর ব্যাথা কন্ঠ পেয়ে গাড়ি ব্রেক ধরলো ড্রাইভার। পেছনে ফিরে তাকালো ড্রাইবার সহ স্নিগ্ধ, ইসকাত। মিহি মাথায় দুই হাত একত্র ধরে চেপে ঝুঁকে বসল। তনু, বন্নি ও নীলয় চমকে ভয় পেয়ে গেল। স্নিগ্ধ জিজ্ঞেস করার আগে ইসকাত স্যার জিজ্ঞেস করলো,,
“কিরে মিহি, কি করলি এবার তুই।”
“আহহ্ স্যার উপরে টাতে মাথায় ব্যাথা পাইছি।”
স্নিগ্ধ চোখ উঁচু করে দেখল। নিজের উপর বেসামাল হয়ে যে কেউর মাথা ফাটবে স্বাভাবিক। তনু মিহির হাতের উপর হাত সরানোর চেষ্টা করে বলে,,
“দেখি তো ফোলে উঠছে নাকি। হাত সরা।”
মিহি ঝুঁকানো অবস্থায় হাত সরাতে চাইলেও সরালো না। ভালোই ব্যাথা পেয়েছে! স্নিগ্ধ গাড়ি থেকে নেমে কোন এক দোকানের খোঁজ করলো। সাথে পেয়েও গেল। গিয়ে মলম কিনে আনলো। গাড়ির পেছনে এসে সবাইকে বলল,,
“মিহি ছাড়া সবাই নীচে নামো।”
তার হুকুমস্বরূপ সবাই নীচে নামলো। মিহির সামনের সীটে বসে আলতো করে হাত রাখলো মিহির হাতে। তারপর আস্তে আস্তে করে হাত দুটো সরিয়ে দুই আঙুলের মাঝে মলম নিয়ে ওর মাথায় আস্তে করে বুলিয়ে দিল। মিহি মৃদু কেঁপে ঠান্ডা তরলে। মাথা নীচু রাখা অবস্থায় সামনে তাকানোর চেষ্টা করলো। বুঝতে পারলো এটাই স্নিগ্ধ। স্নিগ্ধতা আছে তার হাতে! ব্যাথা ভুলতে অগ্ৰীম চেষ্টা করলো। স্নিগ্ধ অতি আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করে,,
“ব্যাথা কমেছে?”
“উঁহু, এখনো আছে এখন।”
মিহি চোখ চেপে বন্ধ করলো নিজের। অনুভব করছে তার হাতের আর্দ্রতা। কুড়ি মিনিটের মধ্যেই হাত সরিয়ে নিল স্নিগ্ধ। বলল,,
“ব্যাথায় ফোকাস দিও না। অন্যদিকে মনোযোগ রাখো তাহলে আপনাআপনি ব্যাথা কমবে।”
বলে সে উঠে চলে আসলো। মিহি অতটুকু অবস্থায় রয়ে গেল। সবাই পুনরায় আগের স্থানে বসে পড়লো। একটু পর পর সবাই দেখে যাচ্ছে মিহি কে। সে এবার মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসলো। গাড়ি মধ্য গতিতে চলছে। বন্নি তার পাশ থেকে বলে উঠে,,
“বেশি ব্যাথা করছে তাই না?”
মেজাজ তীক্ষ্ণ হয় মিহির দাঁত চোয়াল শক্ত করে বলে,,
“একদমও না, আমি তো সেই মজা পাইছি। তুইও চাইলে আমার সাথী হতে পারস।”
কথা শেষ হতে না হতেই এবারের বারি খেল বন্নি। সবাই দমফাটা হাসি দিতেই কাঁদো কাঁদো মুখ করে নেয় ও। হঠাৎ ই ব্যাগের ভেতর থেকে মুঠোফোনটি বেজে উঠল মিহির। মোবাইলটি হাতে নিতেই রোদের তীব্র আলোর কারণে নাম্বারটি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। রিসিভ করে মোবাইলটা কানে ধরে বলে,, “হ্যালো?”
(চলবে…)
[ রিচ না কমার জন্য একটু কষ্ট করে রেসপন্স করবেন সবাই। ]