ফাল্গুনের ঢেউ পর্ব -১৪

#ফাল্গুনের_ঢেউ
পর্ব – ১৪ #পাচঁফোড়ন
লেখিকা – Zaira Insaan

মোবাইলটি হাতে নিতেই রোদের তীব্র আলোর কারণে নাম্বারটি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। রিসিভ করে মোবাইলটা কানে ধরে বলে,, “হ্যালো?”
ওইপাশ থেকে কোন আওয়াজ এলো না। শুধুমাত্র আশেপাশে রাস্তার জ্যামজটের কোলাহল শব্দ। দু’তিন বার হ্যালো হ্যালো বলে বিরক্ত হয়ে মোবাইল না কেটেই ব্যাগে ঢুকিয়ে দিল। রেগে বিড়বিড় করে বলে,,

“মোবাইলে সব টাকা চলে যাক যে কল করছে, তাতে আমার কি আমি ফোন কাটবো না।”

বন্নি মাথায় হাতের ঘর্ষণ চালাতে লাগলো। স্নিগ্ধ পেছনে একবার তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে মলম টা এগিয়ে দিয়ে বলল,,

“এটা নাও।”

মিহি নিল ওটা। মলমের মুখ টা খুলে ভেতরে তরল গুলো দুই আঙুলে নিয়ে বন্নির মাথায় মালিশ করে দিতেই, বন্নি কিছুটা ব্যাথা অনুভব করলো, পরক্ষণে কিছুটা ঠিক হয়ে গেল। বন্নি মিহির কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,,

“ভাবছিলাম স্নিগ্ধ স্যার আসবে কিন্তু……!”

মিহিও ফিসফিস করে বলে,,

“অতিরিক্ত ভাবা ভালো না।”

তনুও কোথ থেকে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,,

“আর তোর জন্য কোন ছেলেও আসবে না।”

বন্নি অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে। তনু ঠোঁট চেপে হেঁসে সরে বসল তখন নীলয় হেঁসে বলে,,

“আমি আছি না? আমি তো আছি সবসময় ওর জন্য।”

অবাক নয়ন পাকলো সবাই। স্নিগ্ধ ও ইসকাত স্যার পেছনে ঘাড় ফিরাতেই সাথে সাথে মুখ বন্ধ করলো নীলয়। অতঃপর গাড়ি তার নিজ গতিতে চলে থামলো টেকনাফের সীমান্তরে। ছুটে আসলো সবাই খুশি রাঙ্গিয়ে। ছোট একটা ব্রিজ পার করে বড় নৌকায় একবার রাউন্ড দিবে নদীতে। নীলিম স্যার সবাইকে দল করে আলাদা আলাদা নৌকায় উঠতে নির্দেশ দিলেন। সেই অনুযায়ী স্যারেরাও আলাদা হয়ে বসবেন। আগের জীপে যারা যেরকম দল করেছিল সেই অনুযায়ী নৌকায় উঠতে লাগলো সবাই। মিহি দূরে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল। মুখটা মলিন করে। সবাই উঠে গেল যে যার নৌকায় কিন্তু একজনকে অনুপস্থিত দেখে ভ্রু কুটি করে আশেপাশে তাকালো স্নিগ্ধ। মিহি এক কোণায় ব্যাগ চেপে ধরে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্নিগ্ধ এসে বলল,,

“দাঁড়িয়ে আছো কেন তুমি? যাও?”
“স্যার আমার পানি ভয় লাগে।” মিনমিন করে বলল মিহি।

ধাতস্থ হয়ে স্নিগ্ধ বলল,,

“ইউ মিন একুয়াফোবিয়া রাইট?”

হালকা মাথা নাড়ল মিহি। স্নিগ্ধের চোখ মুখ কুঁচকে এলো ঝাঁঝালো রোদের আলোর কারণে মিহি দিকে হালকা ঝুঁকে বলে,,

“তাহলে তুমি কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবা? আমরা না আসা পর্যন্ত?”

ভ্রু জোড়া সোজা হয়ে গেল মিহির। বলে,,

“আপনি আমাকে রেখে যাবেন?”

“তো তোমার কারণে আমি আমার ট্রিপ মিস করবো!”

মুখখানি এক ধরনে করে বলে,,

“সমুদ্র, নদী এসব ছাড়া কি আর জায়গা নেই? ওখানে চলেন নাহয়।”

চমকালো স্নিগ্ধ বেশি চমকালো। মানুষ কক্সবাজার আসে কিসের জন্য? শুধু সমুদ্র দেখার জন্য আর এ বলে অন্য জায়গায় যেতে! স্নিগ্ধ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলে,,

“আমার পাশে বসিও তখন আর ভয় লাগবে না, চলো।”

মিহি ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকালো স্নিগ্ধের দিকে। সে কি অবাক হচ্ছে নাকি হচ্ছে না বুঝলো স্নিগ্ধ। সে আর বুঝতেও চাইলো না। আবারো বলল,,

“আমি আছি তোমার সাথে সবসময়। আসো।”

ঠান্ডা গলায় মৃদু স্বরে বলল স্নিগ্ধ। শিউরে উঠলো মিহি। স্নিগ্ধ মুচকি হেঁসে হাত বাড়ালো। মিহি তাকালো তার হাতের দিকে কিন্তু তার হাতে হাত রাখতে অনেকটা ইতস্তত বোধ করতে লাগল। যদি কেউ দেখে নেয়! মিহিকে অনড় হতে দেখে স্নিগ্ধ হাতটা পকেটে ঢুকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,

“আই থিঙ্ক তোমার এখানেই থাকতে ইচ্ছে করছে। সমস্যা নেই তুমি থাকো আমি আসি, বাই!”

বলে স্নিগ্ধ এক পা পেছনে নিয়ে তারপর ঘুরে যেতে লাগল। মিহির হুশ ফিরতেই দ্রুত তার পাশাপাশি হেঁটে বলে,,

“আসার সুযোগ তো দিবেন।”

নিঃশব্দে হাসলো স্নিগ্ধ। নৌকার কাছে এসে আবারো থেমে যায় মিহি স্নিগ্ধ ওকে খেয়াল না করে উঠে যায়। পিছনে ফিরে দেখে মিহি দাঁড়ানো। স্নিগ্ধ এক পা সামনে রেখে বেশ খানিকটা ঝুঁকে তার দিকে হাত বাড়িয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বলে,,

“তাড়াতাড়ি আসো নৌকা ছাড়বে এখন।”
মিহি কিয়ৎক্ষণ সময় নিয়ে চিন্তা করে। তারপর আর সাত পাঁচ না ভেবে চোখ বন্ধ করে স্নিগ্ধের হাতের উপর হাত রাখতেই। স্নিগ্ধ তাকে সাবধানে আস্তে করে টেনে নিল। নৌকাটা দুলে উঠতেই মিহি তড়িৎ গতিতে ভয়ে বসে পড়লো। স্নিগ্ধ এর অবস্থা দেখে ঠোঁট চেপে হাসলো। স্নিগ্ধ অন্য স্থানে বসলো বন্নি ও তনু কে ডেকে বলে,,

“মিহি কে তোমাদের মাঝখানে বসতে দাও।”

বন্নি ও তনু সাইড হলো মিহি এদের মাঝখানে সাবধানে বসলো। নৌকা ছেড়ে দিল শ্রীঘ্রই। নৌকা নদীর মাঝখানে দুলে দুলে সামনে যেতে লাগল।
মিহির যেন শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে মনে হচ্ছে এখনি ডুবে যাবে এই নৌকা, আর মরবে সবাই একসাথে। এর চেয়েও বাজে বাজে খেয়াল আসতে লাগল মনে। সবাই আশপাশ এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগল। ছবি তুলতে লাগল হরেক রকমের। এদিকে মিহি কাপড়ের নিচ অংশ মুষ্টির মধ্যে চেপে ধীরে ধীরে শ্বাস নিচ্ছে। মাথা তুলে কোথাও কিছু দেখছে না। শুধু সময় গুণতে লাগল কবে এই নৌকা ঘাটে এসে থামবে।
______________

টেকনাফের ভ্রমণ শেষ। আরো অনেক জায়গা আছে সেখানে তবে সব জায়গায় যাওয়ার সামর্থ্য নেই তাদের। কালকেই আবার ফিরে যেতে হবে। দুই দিনের সময় শুধু। আজকের দিন শেষ আর আছে শুধু কালকের দিন। এখন ঘুরতে যাওয়ার জন্য ঝাউ বনে যাবে তারপর সোজা হোটেলে উঠবে। আগামীকাল হিমছড়ি ও ইনানী বীচে ঘুরে এসে সবাই আবার ফিরে আসবে ঢাকায়। বাস ডেকে আনলো ওখানে নাকি জীপ করে যাওয়ার কোন প্রান্ত নেই। মিহির শান্তি হলো যাক ওই জীপে করে গিয়ে আবার মাথা ফাঁটাতে হবে না। বাসে উঠলো হাতের ঘড়িতে সময় দেখে ৩:৩২ বাজে। পৌঁছতে আরো পনেরো মিনিট লাগবে। সীটে মাথা হেলিয়ে দিল মিহি। এই পনেরো মিনিট নাহয় একটু শান্তির ঘুম দিয়। কুড়ি মিনিট ও গেল না চোখ খুলল সে। ঘড়িতে সময় দেখে সতেরো মিনিট হয়ে গেছে বাস থেমেছে মাত্র। একটা ছোট হামি তুলে সবার সঙ্গে কথা বলতে বলতে নীচে নামলো। সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখে ঝাউ বন আর বন নেই। অনেকটা বিলীন হয়ে গেছে। ফাঁকা মাঠের মতো। কোন স্টুডেন্ট মজা পেল না এখানে। খামাখা এদিক ওদিক হেঁটে ছবি তোলার স্পোট খুঁজতে লাগল। মিহি একটা ছবি তুলে নিল পুরো বনের যাতে ঘরের সবাইকে দেখানো যায়। ছবি তোলার শেষ হতেই রিং টোন হুট করে বেজে উঠল। মুঠোফোন টা বের করে স্ক্রিনে নাম্বারটি ভেসে আসায় পরিচিত মনে হলো তার। কানে দিতে না দিতেই কে যেন এসে ধাক্কা মেরে ফেল দিল মোবাইলটা।

(চলবে…)

[ গল্পটা নিয়ে একটু মন্তব্য করে যান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here