#ফেমাস_বর🙈(বিবাহ পর্ব)
#পার্ট_২৩
#লেখিকা_রামিসা_মালিয়াত_তমা
আদনান-মানে এত কিছু হয়ে গেল আর আমাকে তোমরা কেউ একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলা না?হোয়াট দ্যা হেল?
তুরিন-আরেহ,আমরা তো ভেবেছিল যে রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম তাই তমার আসতে দেরি হচ্ছে।আর,তাই আমরা আর ওকে ঘাটাইনি।
আদনান- ঘাটাইনি মানে কী?একটা পিচ্চি মেয়ে এতোক্ষন ধরে বাসার বাইরে আর তোমরা ট্রাফিক জ্যাম ভেবে বসে আছো?ওয়াও!আর কী কী করবে তোমরা?
আফসানা হাসিব আদনানকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
আদনান আর কিছু ভাবতে পারছেনা।কী থেকে কী হয়ে গেল সেটা আদনান ভাবতেই পারছেনা।
মানিতা কাবির খুবই চিন্তিত হয়ে পরেছেন।এদিকে রাত প্রায় ১০টা বাজতে চলেছে।কিন্তু তমা এখন অবধি বাসার বাইরে।এখন অন্তত সবাই শিউর যে তমা বিপদে পরেছে।
অন্যদিকে
তমা ছুটছে তো ছুটছেই কোনোদিকে আর তাকানোর নাম নেই।নিজের জান হাতে নিয়ে ছুটছে তমা।নিজের সম্মানকে অক্ষুন্ন রাখার জন্য ছুটে চলেছে তমা।
ছুটতে ছুটতে তমা একটা নির্জন গলির ভিতর চলে এলো।তমার এখন আরো ভয় লাগতে লাগলো।
তমা-এটা কোথায় চলে এলাম?রাস্তাঘাট তো কিছুই চিনিনা।
তমা আবার দৌড়াতে শুরু করল।
অন্যদিকে
আদনান চুলের ভিতর হাত দিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।কিন্তু কিছুতেই পারছেনা।মাথায় তার হাজারো চিন্তা।
তুরিন-অনেক হয়েছে।এই পুলিশের জিডি করেও ছাতার মাথা কিচ্ছু হবেনা।এতক্ষন হয়ে গেল তাও একটা খবর এনে দিতে পারলনা।এখন যা করার আমাদেরকেই করতে হবে।
আফসানা হাসিব-হ্যাঁ,ঠিক বলেছিস।আদি,আবির তোমরা একটু বের হয়ে দেখো তো কোনো খোঁজ পেতে পারো কিনা!
এদিকে মানিতা কাবিরের প্রেসার ফল করছে একটু পরপর।
আবরার-আমি পুলিশকে এখনি ফোন করছি।
আদনানের এবার রাগ উঠে গেল।আরো ১ ঘন্টা আগে তমার নামে জিডি করেছে তারা পুলিশের কাছে।কিন্তু এখন অবধি কোনো খোঁজ পায়নি তারা।
আদনান-এনাফ ইজ এনাফ।মম,মানিন আমি বের হচ্ছি।যতক্ষন না পর্যন্ত তমুকে খুঁজে পাই,আমি বাসায়
ফিরবনা।যদি ফিরতেই হয় তবে তমুকে নিয়েই ফিরব,আর তা নাহলে….
আদনান আর কথা শেষ করলো না।ঘর থেকে বের তো গেল।
অন্যদিকে
নিশান-ইউ গাইস আর ফাকিং বিচেস।একটা বাচ্চা মেয়েকে জাস্ট দেখে রাখতে বলেছিলাম বাট তাও পারলিনা।এই তোদের কে কত দিয়ে হায়ার করেছিলাম?বল,কত দিয়ে হায়ার করেছিলাম।কাজের জন্য হায়ার করেছিলাম তোদের।অথচ তোরা ইডিয়েটগুলো কিছুই করতে পারলিনা।মাঝখান দিয়ে আমার মাল ভ্যানিস হয়ে গেল।কী হলো?এখনো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিস কী?গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার!
কী?অনেকেই ভাবছেন না যে নিশান এখনো অক্ষত থাকলো কী করে?আমি কিন্তু আগের পার্টে বলেছিলাম যে তমা জানালা দিয়ে পালিয়ে গেছে।আর তমা কিন্তু জানালা খোলা রেখেই পালিয়ে গিয়েছিল।আর,তমা পালিয়ে যাওয়ার ২০ মিনিটের মাথায় নিশান ফিরে আসে।কিন্তু জানালা খোলা থাকার কারণে ততক্ষনে স্প্রেয়ের ধাক চলে গিয়েছিলো।আর তাছাড়াও,নিশান ঘরে ঢোকার আগেই এমন কিছুর ধাক পাচ্ছিলো।তাই নিশান নাকে রুমাল চেপে ঘরে প্রবেশ করেছিলো।তাই নিশানের কিছু হয়নি।
বর্তমানে
নিশান মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পা নাচাচ্ছে।ইতিমধ্যে সে চারপাশে লোক লাগিয়ে দিয়েছি তমাকে খুঁজে আনার জন্য।
নিশান-জানপাখি,কতোদূরই বা পালাবে?পারবেনা পারবেনা।জ্বালে তো তোমাকে আবার বন্দি হতেই হবে!
(হাসতে হাসতে বলল)
এদিকে
আদনান ঘর থেকে বের হয়ে মেইন গেটের সামনে গেলো।গার্ডকে বলল গাড়ির চাবি এনে দিতে!গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আদনান বের হয়ে গেল।কিন্তু কোথায় যাচ্ছে তা তার কাছে অজানা।তার মাথায় শুধু এক চিন্তা।কী করে সে তার তমুকে খুঁজে বের করবে?
আদনান নাম মাত্রই গাড়ি চালাচ্ছে।কিন্তু তার পুরোটা জুড়েই যে এখন তমার চিন্তা।
হঠাৎ আদনান জোড়ে একটা ব্রেক করলো।
আদনানের মুখ দিয়ে অজান্তেই একটা গালি বের হয়ে গেল।আদনান রাগান্বিত হয়ে গাড়ি থেকে নামলো।
আদনান-এভাবে রাস্তার মাঝখান দিয়ে কেউ দৌড় দেয়?আশ্চর্য!মানে আপনাদের মতন মানুষদের জন্যই তো এক্সি….
আদনান আর কথা বলতে পারলনা।কাউকে দেখে আদনান নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
আদনানের মুখ দিয়ে অজান্তেই একটা নাম বের হয়ে গেল,
আদনান-তমু!
তমা আদনানের নাম শুনে মুখ তুলে তাকালো।তমাকে দেখে আদনান রীতিমতো ভয় পেলো।
কেননা,তমার মুখে ক্লান্তির ছাপ।ঠোটের কোণা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে তমার।আদনান আর কিছু বলতে পারলোনা!হাঁটু গেরে বসে তমাকে জড়িয়ে ধরলো।
তমার শরীরে এক ফুটো জোর নেই যে সে মুখ ফুটে কিছু বলবে।তমার মুখ থেকে শুধু গোঙ্গানির শব্দ আসছে।
আদনান তারাতারি উঠে বসে তমাকে নিয়ে সোজা হসপিটালে চলে এলো।সারা রাস্তায় তমাকে একটা প্রশ্ন অবধি আদনান করেনি।
হসপিটালে এসে তমাকে সোজা ড্রেসিংয়ের জন্য ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো।
আর আদনান তমা বের হওয়া না অবধি বাহিরে পাইচারি করতে লাগলো।
ড্রেসিং করা শেষ হলে তমাকে নিয়ে আদনান বাসায় চলে এলো।
অন্যদিকে
সবাই আদনানকে অনেকক্ষণ যাবত ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু আদনান কিছুতেই ফোন ধরছেনা।
মানিতা কাবির-আমার মেয়ের কপালে শনির আছড় পরেছে।আর সেজন্যই তো বারবার এমনটা হচ্ছে।
তুরিন কী বলে তার মাকে শান্ত করবে বুঝতে পারলোনা।সে নিজেও খুব চিন্তায় পরে গেছে।কী করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা।
তুরিন-আমি একটু আসছি।
এই বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।
এরই মধ্যে হঠাৎ আবরার দৌড়াতে দৌড়াতে ঘরে ঢুকতে লাগলো।আর বলল,
“ভাইয়ার গাড়ি ঢুকছে গেইট দিয়ে”
সবাই আবরারের কথা শুনে দৌড়ে গার্ডেনে এলো।সবার মুখে এক বিশেষ কৌতূহল।আদনান কী পেরেছে তমাকে খুঁজে আনতে?
আদনান গাড়ি থেকে নেমে কোলে করে তমাকেও বের করলো।তমাকে দেখে যেন সবার জান ফিরে এলো।কিন্তু তমার কোনো সেন্স নেই।তবে আদনান এই ব্যাপারটা এখনও খেয়াল করেনি।
আদনান তমাকে কোলে করে নিয়ে তার ঘরে শুইয়ে দিতে নিলে লক্ষ্য করল যে তমা মরার মতো শুয়ে আছে।তার না আছে কোনো সেন্স,আর না আছে কোনো বোধশক্তি।
আদনান তারাতারি করে তমার পাল্স চেক করলো।
আফসানা হাসিব -কী হয়েছে আদি?
আদনান-বুঝতে পারছিনা মা।একটু আগেও ভালোই ছিলো।কিন্তু হঠাৎ করে ওর কী হয়ে গেল?
তমা একটু কেশে উঠলো।আর তা দেখে আদনান তারাতারি তমার কাছে গেল।
কিন্তু আদনান যাওয়ার আগেই তমা হঠাৎ করে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
একটুপর তমা টলতে টলতে ওয়াশরুম থেকে বের হতে লাগলো।কিন্তু বেচারি আর হাঁটতে পারলোনা।কিছুদূর এগিয়ে এসেই পরে গেল।
তমার এমনতাবস্হা দেখে আদনান তারাতারি এসে তমাকে ধরলো।
আদনান-মানিন,মম,তুরু তারাতারি এদিকে এসো।তমুর যেন কী হয়েছে!(ব্যস্ত হয়ে বলল)
অন্যদিকে
এখন কী হবে,দিনা?তমা তো সবকিছু বলে দিবে।আর তখন আমরা কী করবো?
দিনা-উফ,কী আবালের পাল্লায় পরলাম।একটা কাজও ঠিকমতন করতে পারেনা।ধ্যাৎ তেরি!(মনে মনে বলল)
ইয়ে মিস্টার নিশান,আমি আপনার সাথে এই বিষয়ে পরে কথা বলছি।
এই বলে দিনা ফোন কেটে দিলো।আর ভাবতে লাগলো এখন কী করে কী করবে।
আর ওপাশ থেকে নিশান হ্যালো হ্যালো করতে লাগলো।
চলবে,,,,,,,,,