“ফেমাস_বর🙈(বিবাহ পর্ব) পার্ট_২৪

#ফেমাস_বর🙈(বিবাহ পর্ব)
#পার্ট_২৪
#লেখিকা_রামিসা_মালিয়াত_তমা

ডাক্তার-উনি ঠিক আছে!তবে উনার শরীর এমনিতেই একটু দুর্বল,তারউপর এতো ইনজুরড হয়েছে যে আরো দুর্বল হয়ে গেছে।আর আমার ধারণা,কাল থেকে উনি কিছু খাননি।যার কারণে আরো এমনটা হয়েছে।রেস্ট নিক,স্টেবেল হয়ে যাবে।

তমার শরীর অনেক খারাপ লাগছে।ঠিকমতন কথাও বলতে পারছেনা।

আদনান-আমি তো বুঝতে পারছিনা যে কীভাবে কী হয়েছে!আমার আর তমুর বিয়ের পর থেকেই এতো কিছু শুরু হয়েছে।এর কারণটা কী?

তমার শরীর খারাপ শুনে তমার খালামণি মাফিয়া হক এবং ভাবি আয়েশা এসেছে।আদনানের কথা শুনে মাফিয়া হক আয়েশার দিকে তাকালেন।

আফসানা হাসিব তমার মাথার কাছে গিয়ে বসলেন।তারপর তমার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বললেন,

আফসানা-তমা,মা বলতো কালকে কী হয়েছিল?বলতো মা।

তমা বুঝতে পারছেনা সে কী করবে।যে বা যারা তার সাথে এমনটা করেছে তারা তো তার নিজেরই আপন খালাতো বোন ও চাচাতো ভাই।কী করে তাদের নামে দোষ দেবে সে?

আদনান-কী হলো?বলছিস না কেন?তুই…

আয়েশা-আচ্ছা আদনান ভাই!তমা কে সবে মাত্র ইনজেকশনটা দেওয়া হলো।কিছুক্ষন রেস্ট নিক,তারপর নাহয় বলবেক্ষন।

মাফিয়া হক-হ্যাঁ সেই ভালো।পরে জানবো কী হয়েছিল।এখন যেটা নিয়ে কথা বলতে এলাম তা নিয়ে বলি।

তমা-যাক এযাত্রায় নাহয় বেঁচে গেলাম।কিন্তু আমি তো সত্যি জানিনা কী বলবো।এরপর পরের বা যখন জিজ্ঞাসা করবে তখন আমি কী বলব?উফ!(মনে মনে)

আদনান-কাল দুপুরেই আমার তমুর বিয়ে।আমি আর কোনো সময় দিবোনা।এর মধ্যে যেভাবে বিয়ে হয় সেভাবেই বিয়ে হবে।বিয়ে হয়ে যাওয়ার দু’তিনদিন পরে একটা গ্যান্ড পার্টির আয়োজন করা হবে,সেখানে সবাই ইনভাইটেড।গট ইট?

আফসানা হাসিব-কিন্তু আদি…

আদনান তার মা কে থামিয়ে দিয়ে বলল,

আদনান -কোনো কিন্তু না মম।তোমরা কী বুঝতে পারছনা যে আমার সাথে তমুর বিয়ের প্ল্যান হওয়ার পর থেকেই এসব ঝামেলা হচ্ছে।আমি তো এটাই বুঝতে পারছিনা যে কে বা কারা এমনটা করছে?কারা মেনে নিতে পারছেনা আমার আর তমুর বিয়েটা?হুজ দ্যাট গাই’স?

তমা এক পলকে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে।চাইলেও সে বলতে পারছেনা কারা একের পর এক তাদের এতো বড় ক্ষতি করছে।

সবাই আদনানের কথা চুপচাপ মেনে নিলো।

রাতে খাওয়ার পর আয়েশা তমার ঘরে এলো।

আয়েশা-আসতে পারি?

তমা-আরে ভাবিমনি,আসো আসো।আর আমার ঘরে আসতেও পারমিশন নিতে হবে নাকি?

আয়েশা-নাহ তারপরেও!

আয়েশা এসে তমার পাশে বসলো।

আয়েশা-দিনা আর তোমার চাচাতো ভাই মিলে কাল তোমাকে কিডন্যাপ করেছিল তাইনা?

আয়েশার কথা শুনে তমা হকচকিয়ে গেলো।একবার আয়েশার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল,

তমা-তুমি কীভাবে জানলে?(এক নি:শ্বাসে বলল)

আয়েশা-কাল দিনাকে আমি অনেকবার বাইরে আসা যাওয়া করতে দেখেছি।বলতে গেসে একটু পরপরই।তারপর আমি একবার দিনার রুমে এসেছিলাম ওকে ডাকতে।কিন্তু দরজার এপাশ থেকে কিছু কথা শুনে রুমে না থেকে আড়াল থেকে কিছু কথা শুনতে পাই।দিনা তোমার চাচাতো ভাইয়ের সাথে কথা বলছিলো।আর তাদের কথা গুলো কিডন্যাপিং রিলেটেড ছিলো।
আমি ভেবেছিলাম একবার তোমাকে ফোন করে জানাবো।কিন্তু আমি শিউর ছিলাম না।তাই তোমাকে জানাইনি।(একটু সেড হয়ে বলল)

তমা একটু উঠে বসল।বসে আয়েশার হাত ধরে বলল,

তমা-ভাবি প্লিজ!এটা কাউকে বলোনা প্লিজ ভাবি!আমি চাইনা দিনা আপু…

আয়েশা তমার কথার মাঝেই বলল,

আয়েশা-আমি জানি তমা।আমি জানি।সবার সম্মানের কথা ভেবেই তুমি যে ব্যাপারটা গোপন রাখতে চাইছ তা আমি জানি।কিন্তু তাও তোমার সবাইকে বলা উচিত ছিলো।

আয়েশা আর কিছু না বলে উঠে রুম থেকে চলে গেল।

তমা কিছু বুঝতে পারছেনা যে কী করবে।সে আর যাই হোক,কখনোই চাইবেন যেনো তার কাজিনদের সম্মানহানি ঘটে।

পরেরদিন,

সকাল থেকেই সবাই অনেক ব্যস্ত হয়ে গেছে।যে যার মতন ব্যস্ত।এর মধ্যে আদনান হচ্ছে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত।এক রাতের মধ্যে বিয়ের সব আয়োজন করতে হয়েছে।এটা কোনো সহজ ব্যাপার না।

তমা-উফ ফো,বাসায়ই তো প্রোগ্রাম।এতো মেকাপ করার কী আছে।একটু শুধু লিপস্টিক দিবো।আর কিছুনা প্লিজ!

তুরিন তমার কান টেনে বলল,

তুরিন-তোর এই মানধাতা আমলের মেকাপ করা এবার অফ কর বুঝলি?শুধু একটু লিপস্টিক দিবো।এহ,ঢংয়ে বাঁচে না।এই অরু,ওর দুইটা চাইপা ধর তো।ওরে আজকে আমি সাজামুই সাজামু।

তমা-নেহিিিিিিিিি!(কান্নার ভান করে)

অন্যদিকে,

আবরার-ভাইয়া তুই এটা পর।সেই লাগবে তোকে।

আদনান-আরেহ,পাগল নাকি।বাসার বিয়েতে এতো গর্জিয়াস শেরওয়ানি পরার কোনো মানে নেই।নরমাল একটা শেরওয়ানি পড়বো আমি।

আফসানা হাসিব-একদম না।এই গর্জিয়াসটাই তুমি পড়বে আদনান।

আদনান-বাট মম!

আফসানা হাসিব-কোনো বাট-টাট নয়।তোমার একটা কথা যেমন আমরা রেখেছি,তেমন তুমিও আমার এই কথাটা রাখো।

আদনান আর কিছু বলল না।শেরওয়ানি পড়ে সুন্দর মতো রেডি হয়ে গেলো।

এদিকে

তুরিন-ব্যস,সাজানো ডান।

আফসানা হাসিব-দেখি,দেখি!আমার ছেলের বউকে দেখি তো!

আফসানা হাসিব তমার সামনে গেলেন।

গায়ে লাল বেনারশী শাড়ি,গায়ে ভারি সোনার গহনা,মাথায় গোল্ডেন কালারের কাজ করা গয়না,আর মুখে ভারি মেকাপে তমাকে দারুন লাগছে।একদম রাজরাণি যাকে বলে।আজকে তমাকে যে-ই দেখবে সেই ক্রাশ খাবে।কিন্তু তা কী আদনান হতে দেবে?…..কাভি নেহি!

আফসানা হাসিব-মাশাল্লাহ,পরী একটা!

তমা লজ্জ্বা পেলো।

আফসানা হাসিব তমার মাথায় একটা সোনার মুকুট পড়িয়ে দিলেন।

আফসানা হাসিব-এটা যে তোর নানুবাড়ির খানদান তা তো তুই ভালোই জানিস!(মুচকি হেসে বলল)

তমা মাথা নাড়ল।

অন্যদিকে
গায়ে ব্ল্যাক কালার শেরওয়ানি,পায়ে রেশম সুতোর কাজ করা নাগড়া,মাথায় গোল্ডেন কালারের পাগড়ি পরে কেউ একজন আয়নার সামনে দাঁড়ালো!

আবরার,দায়ান(দিনার বড় ভাই)-মাশাল্লাহ!

ওদের কথা শুনে আয়নার সামনে থেকে পিছনে ঘুরে তাকালো আদনান।দাঁত বের করে হাসি দিলো একটা!

দায়ান-ব্রো,ওতো হাসিশ না।কিছুক্ষন পরই তোর জীবনের সব সুখ হারিয়ে যাবে।(ইয়ার্কি করে বলল)

আদনান দায়ান কথা শুনে হেসে দিয়ে বলল,

আদনান-ভুল বললি দায়ান ভাই।আর কিছুক্ষন পর আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সুখটা পেতে চলেছি।আর তার জন্য যদি আমার অন্য একটা সুখ শেষ হয়ে তাতেও আমার কিছু যায় আসেনা।আর,তমুকে পাওয়ার জন্য যদি আমাকে সর্বস্ব হারিয়ে ভিকিরি হতেও হয়,তাহলেও আমি রাজি!

আবরার,দায়ান-ওয়াহ,ওয়াহ!হোয়াট আ ডায়লগ,ইয়ার!

মারজান হাসিব-এই তোমরা বের হয়ে যাও!সবাই কিন্তু ওখানে ওয়েট করছে।

দরজার ওপাশ থেকে বলে তিনি চলে গেলেন।মারজান হাসিব সবসময়ের জন্যই ব্যস্ত একজন মানুষ।কোথাও দুদন্ড দাঁড়ানোর সময় তার নেই।

আদনান ও বাকি বরযাত্রীরা বের হয়ে গেলো।

এদিকে,

অরিত্রি-আরে ২০,০০০!

তুরিন-হুট!এতো নাহ!

অরিত্রি-কীসের এতোটা তুরিন আপু।২০,০০০ মানে ২০,০০০।এটাই ফাইনাল।কেউ কিছু বলবানা।

তুরিন-বাট এতো কী দিবে?

অরিত্রি-না দিলে তমাকেও আমরা দিবোনা।হুহু!(ভাব নিয়ে বলল)

হঠাৎ কয়েকজন ঘরে ঢুকে চিল্লিয়ে বলল,
বর এসেছে,বর এসেছে!

বর এসেছে শুনে অরিত্রি,তুরিনসহ সবাই দৌড়ে নিচে গেল।

তমা-আল্লাহ শেষমেষ ভালোই ভালোই যেন আমাদের বিয়েটা হয়!

চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here