বন্ধ দরজা পর্ব ১৮

#বন্ধ_দরজা ১৮
লেখা-মিম
শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠে তানভীর ফিসফিস করে বলছে,
– এই মেয়ে চুপ। আমি ভুত না তানভীর।
সুহায়লার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। এখানে এই রাতে তানভীরের আসার কোনো প্রশ্নই আসে না। সে তো চট্টগ্রাম। সুহায়লার ধারনা তানভীরের বেশ ধরে ভুত এসেছে। সে আবার চিৎকার দিলো,
-” সাদিইইইইই…… ভুউউউউত।”
এবার তানভীর উঠে যেয়ে লাইট জ্বালালো। এর সাথে সাথেই দরজায় টোকা পড়লো। সুহায়লার মা আর ভাই বাহির থেকে ডাকছে। তানভীর দরজা খুলে দিলো।
-” কি রে ভুত পেলি কোথায়?’
তানভীর পাগলের মতো হাসছে সুহায়লার কান্ডে। লাইট জ্বালানোর পর তানভীরকে দেখে সুহায়লার মনে হচ্ছে সে আকাশ ভেঙে নিচে পড়ে যাবে। এটা কাকে দেখছে সে?
-” কি রে কথা বলিস না কেনো? কিসের ভুত?”
-” আপনার মেয়ে ভেবেছে আমিই ভুত।”
-” হা হা হা, আরে উনি ভুত হতে যাবে কেনো? এটাতো তানভীর ভাইয়া। ”
-” ও কখন এসেছে? আমার পাশে তো সাবা শুয়ে ছিলো?”
-” হ্যাঁ উনি এসেছে প্রায় আধাঘন্টার উপর হয়ে গেছে। এইতো পাঁচ মিনিট আগেই তোর রুমে এসেছে। ভাইয়া লাইট অফ করে দেন। অনেক রাত হয়েছে। ঘুমিয়ে পড়েন।”
সুহায়লার মা ভাই চলে গেছে রুম থেকে। তানভীর গেট লাগিয়ে লাইট অফ করে দিলো। সুহায়লার পাশে বসে ওর হাতটা ধরলো তানভীর। হাতে আলতো করে চুমু খাচ্ছে সে। সুহায়লা তার হাতটা দ্রুত ছাড়িয়ে নিয়েছে তানভীরের হাত থেকে।
-” তুমি এতরাতে এখানে কি করো? তুমি না চিটাগাং তিনদিনের জন্য গিয়েছিলে?”
-” হুম গিয়েছিলাম তো। কিন্তু তুমি আমাকে থাকতে দিলে কোথায়?”
-” মানে?”
-” মানে বুঝো না? সারাদিন চলে গেলো একটা খবরও তুমি আমার নিলে না। নিজের ফোনটাও অফ করে রেখেছো। তোমাকে খুব বেশি মিস করছিলাম। তাই চলে এসেছি।”
সুহায়লা খুব শান্ত চোখে তানভীরের দিকে তাকিয়ে আছে। তানভীর আবার সুহায়লার হাতটা ধরলো।
-” তোমাকে কি নয়ন আপা কোনো চিঠি দেয়নি?”
-” হুম দিয়েছে।”
-” পড়েছো?”
-” আগা গোড়া সম্পূর্নটাই পড়েছি।”
-” তাহলে এখানে এসেছো কেনো?”
-” আমি আমার বউয়ের কাছে আসবো না?
সুহায়লা হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিতেই তানভীর একটানে সুহায়লাকে নিজের বুকে টেনে আনলো। শক্ত করে ধরে রেখেছে সুহায়লাকে।
-” তানভীর ছাড়ো। আমি ব্যাথা পাচ্ছি।”
-” ভালো হয়েছে ব্যাথা পাচ্ছো। এটা তোমার শাস্তি। কতবড় সাহস তোমার? আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছো তুমি! তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো আমি? তুমি জানো আজ সারাটাদিন কি পরিমান অস্থির ছিলাম?”
-” তানভীর আমি সত্যিই ব্যাথা পাচ্ছি।”
এবার খানিকটা হালকা করে ধরলো সুহায়লাকে সে।
-” খবরদার একদম নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করবে না। আর নয়তো আবার জোরে চেপে ধরবো।”
-” এসব নাটকের মানে কি?”
-” কিসের নাটক?
-” এখন তুমি যেটা করছো সেটার কথা বলছি।”
-” নিজের বউকে জড়িয়ে ধরে নিজের ফিলিংসগুলো এক্সপ্রেস করবো এখানে নাটকের কিদেখলে তুমি?’
-” তোমার সাথে অহেতুক তর্কে আমি জড়াবো না। কাল সকাল হলেই এখান থেকে চুপচাপ চলে যাবা।”
কথাটা বলেই তানভীরকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে বিছানায় শুয়ে পলো সুহায়লা। তানভীরও যেয়ে সুহায়লার উপর শুয়ে গলায় একের পর এক চুমু খেয়েই যাচ্ছে। প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে সুহায়লার। তানভীরকে ধাক্কা দিতে যেয়েও পারছেনা সে। ওর দুহাত চেপে ধরে রেখেছে তানভীর। তবুও সে ছটফট করেই যাচ্ছে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য। তানভীর মুখ তুলে হাসতে হাসতে সুহায়লাকে বললো,
-” এই পিচ্চি, এত শক্তি পাও কোথাও তুমি? তোমাকে হ্যান্ডেল করতে আমার বারোটা বেজে যাচ্ছে।”
-” তুমি কিন্তু অতিরিক্ত করছো। ছাড়ো আমাকে।”
-” কেনো ছাড়বো? তুমি কি অন্য কারো বউ? তুমি আমার বউ। তোমার সাথে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করার অধিকার আমার আছে।”
-” চিঠিতে কি লিখে এসেছি সেটা দেখোনি? তোমাকে আর দুমাস বাদে ডিভোর্স দিবো আমি।।”
-” যা বলেছো তো বলেছো। নেক্সট টাইম আর কক্ষনো মুখে এই কথা আনবে না। যদি আনো আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।”
-” একশবার আনবো। কি করবা তুমি? হ্যাঁ?”
-” দেখো ভদ্রভাবে বলছি। আমার কথা শুনো।”
-” আমিও তোমাকে ভদ্রভাবেই বলছি। আমাকে ছাড়ো। চুপচাপ ঘুমাও। কাল সকালে ঘুম থেকে উঠেই চলে যাবা।”
-” যাবো তো অবশ্যই। তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাবো। তোমাকে রেখে এক পাও আগাবো না আমি।”
-” মগের মুল্লুক পেয়েছো? যখন যা খুশি তাই করবে? আমার জন্য দরদ এতো উথলে উঠছে কেনো? রাত কাটানোর জন্য কাউকে পাচ্ছো না বুঝি?”
-” তুমি আমার ওয়াইফ সুহায়লা। রাত কাটানো ছাড়াও আরো বহু কারনে তোমাকে আমার প্রয়োজন।”
-” উহুম, আমি তোমার ওয়াইফ না। আমি তোমার একজন রেজিস্ট্রি করা পতিতা। আমাকে শুধুমাত্র রাত কাটানোর কাজেই ব্যবহার করা যায়। কারো বউ হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। আমি তো মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে তাই।”
-” হ্যাঁ যাও তুমি আমার রেজিস্ট্রি করা পতিতা। তোমাকে ছাড়া রাত কাটাবো কার সাথে তুমিই বলো?”
-” কেনো? তোমার তো অনেক টাকা। তুমি নিজের মুখেই তো বলেছো টাকা ঢাললে আমার চেয়ে সুন্দরী মেয়ে নাকি পাওয়া যায়। তো এখন যাও ওদের কাছে।”
-” হুম কথাটা সত্যি তোমার চেয়ে সুন্দরী মেয়ে পাওয়া যায়। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে ওদের বেড পারফরমেন্স ভালো না। তোমার মতো করে ওরা আমাকে সাপোর্ট দিতে পারে না।”
-” তারমানে তুমি গিয়েছিলে অন্য মেয়ের কাছে?”
-” হ্যাঁ গিয়েছিলাম তো।”
-” অন্য মেয়েকে যে ঠোঁটে চুমু খেয়ে এসেছো সেই ঠোঁট দিয়ে আবার আমাকে চুমু খাচ্ছো। ছিঃ….. গা ঘিনঘিন করছে আমার।”
-” তুমি যেমনটা ভাবছো ব্যাপারটা তেমন না। আমি কিন্তু ঐ মেয়েকে চুমু খাওয়ার পর সাবান দিয়ে ঠোঁট ধুয়ে এসেছি। এরপর তোমাকে চুমু খাচ্ছি।”
শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে এবার তানভীরকে ধাক্কা দিতে সক্ষম হলো সুহায়লা।
-” তোমার মতো নোংরা মানুষ আমি কখনো দেখিনি।”
-” দেখোনি তো কি হয়েছে? এখন দেখে নাও।”
-” তোমাকে আমার অসহ্যলাগছে। তুমি এখুনি ঘর থেকে বের হও। ”
-” ঠিকাছে চলো যাই। কাপড়ের ব্যাগ কোথায় রেখেছো বলো?”
-” আমি কোথ্থাও যাবো না তোমার সাথে।”
-” তোমার ঘাড় ধরে নিয়ে যাবো। চিনো তুমি আমাকে? আমি প্রয়োজনে কতটা খারাপ হতে পারি তা তুমি চিন্তা করতে পারবে না। যদি চাও সাদমানের বিয়েটা ভালোয় ভালোয় হয়ে যাক তাহলে আমার সাথে ঝামেলা করবে না একদম।”
-” আমাদের মাঝে তুমি সাদি কে কেনো টানছো?”
-” ঐ যে বললাম প্রয়োজনে আমি অনেক নিচে নামতে পারি। তোমাকে বাড়ি ফিরিয়ে নেয়ার জন্য প্রয়োজনে সাদমানের এত বছরের ভালোবাসা কোরবানী দিতে আমি সেকেন্ড টাইম চিন্তা করবো না।”
-” কি করবে তুমি?”
-” হৃদিতার ফ্যামিলির লোক যে রাজি না সেটা আমি জানি। শুধুমাত্র মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে উনারা রাজি হচ্ছে। চাইলে কাল সকালের মধ্যে উনাদের সামনে এমন পাত্র নিয়ে হাজিরকরবো যে উনারা উনাদের মেয়ের মুখে দিকে তাকাবে না। জোর করে ঐ ছেলের সাথে হৃদিতার বিয়ে দিবে। আবার এমনও হতে পারে তোমার ভাইয়ের সাথে অন্য মেয়েকে এমনভাবে জুড়িয়ে দিবো যে হৃদিতা নিজেই তোমার ভাইয়ের রাস্তায় দ্বিতীয়বার পা দিবে না।”
-” তুমি সাদমানের বউকে চিনো কিভাবে? ওর ফ্যামিলি রাজি না সেসব কে বললো?”
-” শুধু এতটুকুই না। মেয়ে কি করে? বাসা কোথা? বাবা ভাই কি করে এভরিথিং আমি জানি। তানভীরকোনো কাঁচা কাজ করেনা। আটঘাট বেঁধেইনামে।”
সুহায়লার দুগাল বেয়ে পানি পড়ছে। সে পানি তানভীরের কব্জির উপর যেয়ে পড়লো। তার চোখের পানি মুছে দিচ্ছে তানভীর।
-” বোকা মেয়ে তুমি কাঁদছো কেনো?”
-” ঝামেলা তোমার আমার মাঝে হচ্ছে। সাদি তো তোমার কোনো ক্ষতি করেনি। তুমি কেনো ওর ক্ষতি করবে?”
-” তুমি আমার সাথে গেলে আমি সাদমানকে কিচ্ছু করবো না। ট্রাস্ট মি। আর যদি না যাও তাহলে আমি বাধ্য হবো…..”
-” প্লিজ তানভীর…. আমার ভাইটা হৃদিতাকে খুব ভালোবাসে।”
তানভীর দুহাতে সুহায়লার দু গালে ধরে বললো,
-” তুমি আমারসাথে বাসায় চলো। এভাবে হুট করে আমাকে ছেড়ে চলে আসাটা তোমার মোটেই উচিত হয়নি। আমার উপর রাগ হয়েছো তো আমার উপর ঝাল মিটাও। এভাবে নিজের ঘর সংসার ছেড়ে আসার মানে কি? এতদিন এত যত্নে সংসারটাকে আগলে রেখেছো, আমাকে আগলে রেখেছো। অথচ আজ রাগ করে আমাকে আর সংসারটাকে এভাবে ছুঁড়ে চলে আসতে পারলে সুহায়লা? চলে আসার আগে একটাবার মনে হলো না তানভীরকে একটাবার বলে দেখি ডিভোর্সের ব্যাপারে। ও কি চায় সেটা একবার জেনে দেখি। বিয়েটা তো তুমি একা করোনি। আমিও করেছি। তুমি শুধু তোমারটাই দেখলে। নিজের সিদ্ধান্তটাকেই প্রাধান্য দিয়ে ঢ্যাং ঢ্যাং করে বাবার বাড়িচলে এলে।”
-” আমি তোমার সাথে গেলে সাদমানকে কিছু করবে না তো?”
-” কক্ষনো না। তুমি বাসায় ফিরে আমার উপর যতখুশি ঝাল মিটিয়ো। আমি তোমাকে কিচ্ছু বলবো না। কিন্তু শর্ত একটাই যত যাই হোক তুমি ঘর ছেড়ে আসতে পারবা না।”
-‘ ঠিকাছে আমি যাবো। কিন্তু এক সপ্তাহ পরই আবারব ব্যাক করবো এখানে। সাদির বিয়ের শপিং করতে হবে অনেক । তাছাড়া বিয়ের পর এইদেড়বছরে আমি শুধু দুরাত এখানে থেকেছি। তাই আমি কিছুদিন থাকতে চাই।”
-” উহুম…. এখানে কোনো থাকাথাকি নেই। এইসপ্তাহে বিদেশ থেকে ক্লাইন্ট আসবে। দুদিন থাকবে। ক্লাইন্ট চলে যাওয়ার পর নেক্সট উইক তোমাকে নিয়ে ঢাকার বাহিরে যাবো ঘুরতে। সেখান থেকে এসে সাদমানের বিয়ের শপিং করবে। আর বাবার বাড়ি থেকে শপিং খরার প্রয়োজন নেই। আমি অফিসে যাওয়ার সময় তোমাকে তোমার বাবার বাসায় নামিয়ে দিয়ে যাবো। সকাল সকাল মার্কেটে চলে যাবে। বিকাল নাগাদ শপিং শেষ করে বাসায় ফিরবে। ঘরে ফিরেই তোমার মুখ আমি দেখতে চাই। আর সাদমানের উপলক্ষ্যে তুমি থাকতে চাইলে বিয়ের এক সপ্তাহ আগে যাবা। তখন আমিও তোমার সাথে যাবো। বাবার বাড়িতে আমাকে ছেড়ে থাকা যাবে না। বুঝেছো?”
-” হুম।”
-” চলো এখন ঘুমাবা। কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেড়ে বাসায় ফিরতে হবে।”
সুহায়লাকে বুকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তানভীর। সুহায়লা চুপচাপ শুয়ে আছে। সে খুঁজে পাচ্ছে না চাহিদা মেটানোর জন্য তো টাকা খরচ করলেই অসংখ্য মেয়ে পাবে তানভীর। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সুহায়লাকেই কেনো টানাটানি করছে ও?
(চলবে)
.
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here