বর্ষণের সেই রাতে- ২ পর্ব ২৫+২৬

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

২৫.

আদ্রিয়ান গালে হাত দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকাল অনিমার দিকে। অনিমা যে ওকে চড় মেরে দিতে পারে সেটা ভাবতেও পারেনি বোধহয়। অনিমার নিজেরও অপরাধবোধ কাজ করছে। এরকম কিছু করার কথা ও কল্পনাতেও আনতে পারেনা, কিন্ত কীকরে কী করে ফেলল নিজেই বুঝে উঠতে পারছেনা। মেরেছে তো মেরেছে এতো জোরে মেরেছে যে ওর হাতও জ্বালা করছে। ছিঃ এমনটা কীকরে করে ফেলল। আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে ও শান্ত চোখে অনিমাকে দেখছে। ফর্সা বাম গালে হালকা লালচে ভাব এসছে। অনিমার মাথায় অাবারও স্মৃতির বাহু জড়িয়ে বসে থাকার দৃশ্যটা ভেসে উঠল, আবার সেদিন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছবি তোলার দৃশ্য। তারপর বারবার অনিমার এতো কাছে আসা। সব মনে পরতেই আবার রেগে গেল। তাই শক্ত কন্ঠে বলল,

” এমন কেন আপনি? আপনাকে বলেছিনা আমাকে এভাবে ছোঁবেন না। একটা মেয়েকে জোর করে নিজের বাড়িতে রেখে দেবেন বুঝি? লজ্জা করছেনা? আপনাকে আলাদা ভেবেছিলাম, কিন্তু অাপনারা মিডিয়া জগতের সবাইকী এরকম? ঘরে একজন লাগবে আর বাইরে আরেকজন লাগবে? একটা দিয়ে হয়না তাইনা? বাইরেতো একজন আছেই আপনার, তাই ঘরে এখন আমাকে চাই তাইতো?”

আদ্রিয়ান শান্ত কন্ঠে বলল,

” তোমার আমাকে সত্যিই এই টাইপ ছেলে মনে হয়?”

” এরচেয়েও জঘন্য মনে হয়। যে একটা মেয়ের মন নিয়ে খেলার আগে দুবার ভাবেনি। আপনার কাছে তো আমি জাস্ট একটা সস্তার জিনিস। যাকে ফ্রিতে পেয়ে একটা সস্তা জায়গা থেকে তুলে নিয়ে এসছেন। আর সেভাবেই ব্যবহার করতে চাইছেন ”

আদ্রিয়ান এবার ঝাড়ি দিয়ে বলল,

” বারবার এক কথা বলে যাচ্ছো। ঘরে-বাইরে, মন নিয়ে খেলেছি এসব বাচ্চাদের মত ভিত্তিহীন অভিযোগ করে যাচ্ছো। আমাকে ক্যারেক্টার লেস বলেই মনে হয় তাইনা? যদি সেরকম হতাম না এতদিনে তোমার সাথে আমি.. হোয়াটএভার এতো রাগ, এতো ঘৃণা কীসের হ্যাঁ? যে আমার গায়ে হাত তুলতেও দুবার ভাবলেনা? দুদিন আগেও বাচ্চামো করলে। কেন করলে সেটা আজও জানিনা। আবার এখন শুরু করে দিয়েছ। আ’ম জাস্ট ফেড আপ উইথ ইউ। জাস্ট ফেড আপ। সবকিছুর একটা সীমা থাকে অনি। এসবের মানে কী?”

” আপনাকে এসবের জবাব দেবনা আমি। আমি জানি আপনি আমার জন্যে অনেক করেছেন, তাই বলে কিনে নেননি। তাই আপনি আপনার মত থাকুন আর আমাকে আমার মত থাকতে দিন। বারবার এভাবে আমাকে বিরক্ত করবেন না।”

কথাগুলো বলে আদ্রিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল আদ্রিয়ান শক্ত হয়ে স্হির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। থাপ্পড়ের এফেক্টটা এখনও যায়নি। অনিমা চোখ সরিয়ে আর কিছু বলতে না দিয়েই বেড়িয়ে এলো। আদ্রিয়ান রাগে একটা চেয়ার লাথি মেরে ফেলে দিল। পরপর তিনবার টেবিলে ঘুষিও মারল। তারপর মাথা চেপে ধরে বসে পরল টুলের ওপর। সব অসহ্য লাগছে, সব।

এদিকে অনিমার খুব কান্না পাচ্ছে এখন। ও তো এরকমটা চায়নি। ও তো আদ্রিয়ানের কাছেই থাকতে চেয়েছিল। সারাজীবন। একসাথে জীবন কাটাতে চেয়েছিল। কিন্তু কেন এরকম করল আদ্রিয়ান? কেন? ওয়াসরুমে ঢুকে শব্দ করে কেঁদে দিল ও। ও জানেনা ও বাড়াবাড়ি করেছে কি-না। কিন্তু ওর মনে যা চলছে সেটা ও ছাড়া কেউ বুঝবেনা। আদ্রিয়ান যদি ওর বয়ফ্রেন্ড বা হাজবেন্ড হত তাহলে প্রথমেই গিয়ে কলার ধরে জিজ্ঞেস করত এসব কী হ্যাঁ ? ওই মেয়েটা আপনার এতো কাছে আসবে কেন? কিন্তু কীসের ভিত্তিতে জিজ্ঞেস করবে ও? ওরা দুজনতো প্রেম করছে না? আদ্রিয়ান আর ওর সম্পর্কের তো কোন নাম নেই, একে ওপরকে বলেও নি ভালোবাসার কথা। যা আছে সবটাই মনে মনে। একে ওপরের অনুভূতির কথা সরাসরি বলেনি কেউই। যেখানে সম্পর্কটাই এখনও সরাসরি শুরু হয়নি সেখানে এই বিষয় নিয়ে সরাসরি অভিযোগ করা বা প্রশ্ন করাটা হাস্যকর ছাড়া কিছুই না। অনুভূতিটা পুরোটাই মনে মনে তাই অভিমান আর অভিযোগটাও মনেই আটকে আছে, চাইলেও প্রকাশ করতে পারছেনা। কেউ পারতোনা করতে। এখন অনিমা না বলতে পারছে, আর না সহ্য করতে পারছে। অবস্থাটা জটিল, বড়ই জটিল।

_____________

রঞ্জিত চৌধুরী টেবিলে রাখা গ্লোবটা ঘোরাচ্ছে আর ভাবছে। ভাবতে ভাবতে পাশে বসে কাজ করতে থাকা কবির শেখকে বলল,

” একটা মেয়ে কী হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারে কবির? কোথায় পাচ্ছিনা? সম্ভব কীকরে?”

” কেউ লুকিয়ে রেখেছে ওকে।”

সাবলীলভাবে বললেন কবির শেখ। রঞ্জিত চৌধুরী বলল,

” কে?”

কবির শেখ কাজ থামিয়ে দিয়ে বললেন,

” ‘কে’ সেটার চেয়েও বড় প্রশ্ন হচ্ছে ‘কেন?’ কেউ কেন ওকে লুকিয়ে রাখতে চাইবে। আমরা দুজন আর ঐ মেয়েটা ছাড়া এমন কে আছে যে দেড় বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা সম্পর্কে জানে?”

” মাদার আর আর্জু। আর্জুকে তো… তাহলে কী মাদার?”

” আরে না। ঐ বুড়ির এতো ক্ষমতা নেই। যে কাজটা করছে সে খুব শেয়ানা খিলারী। সবটাই জানে কিন্তু কিছুই জানেনা এমন টাইপ। বুদ্ধি না থাকলে একটা মেয়েকে এভাবে লুকিয়ে রাখতে পারতোনা। তবে হ্যাঁ লোকটা কে বা কারা সেটা জানা জরুরী। দেড় বছর আগে যেই খাতা বন্ধ হয়ে গেছিল একবার যদি সেই খাতা খুলে যায়না। পাতালে গিয়ে লুকোলেও আমরা বাঁচতে পারব না। কিন্তু প্রশ্ন হল এই রহস্য সে কীকরে জানে? সে কে?”

রঞ্জিত চৌধুরী চিন্তিত কন্ঠে বলল,

” রিক নয়তো?”

কবির শেখ কাঁচের দেয়াল দিয়ে ওপাশে বসে কাজ করতে থাকা রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

” না। ও বাইরে দিয়ে কঠিন হলেও ভেতর দিয়ে ভীষন আবেগী। সত্যিটা জানলে ও এতো শক্ত থাকতে পারত না। ও এখন ঐ মেয়েকে খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে করতে দাও।”

” আমরা কী করব?”

” অতীত ঘাটতে হবে। জানতে হবে সেদিনের ঘটনা ওরা ছাড়াও আর কার বা কাদের জানার সম্ভাবনা আছে। আর ঐ বুড়িকেও খুঁজতে হবে এবার। অনেক কিছুই জানে। কোথায় ঘাপটি মেরে বসে আছে কে জানে?”

রঞ্জিত চৌধুরী সম্মতি জানালেন। কবির শেখের ভেতরে ভয় যেকে বসেছে। অনিমা ছাড়া এমন কে আছে যার কাছে ওনাদের সেই রহস্যের খোঁজ আছে যেটা ওনাদের সমূলে বিনাশ করতে যথেষ্ট।

_____________

দেখতে দেখতে তিনটা দিন কেটে গেছে। ঐ দিনের পর অনিমা আর ভার্সিটি যায় নি। কিছুই ভালো লাগছেনা ওর। প্রথম একদিন আদ্রিয়ান অরুমিতার ফোনে কয়েকবার কল করেছিল কিন্তু অনিমা ধরতে দেয়নি। তারপর আদ্রিয়ানও আর ফোন করেনি। আর কোন যোগাযোগের চেষ্টাও করেনি। বিকেলে সোফায় বসে টিভি দেখছে ওরা। অরুমিতা বলল,

” অনি তোর কী মনে হয়না তুই এবার বাড়াবাড়ি করে ফেলছিস?”

স্নেহাও সম্মতি দিয়ে স্নেহাও বলল,

” হ্যাঁ অনি এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে তোর।”

অনিমার ধৈর্য্যের বাদ ভেঙ্গে গেল। রোজই এককথাই বলে ওরা। এবার স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলল,

” যদি দেখিস কোন মেয়ে তীব্রর হাত ধরে না রীতিমতো বাহু জড়িয়ে লেপ্টে বসে আছে। আর দুজনেই হাসছে। তোর কেমন লাগবে? তাও বারবার মেয়েটার সাথে আলাদা আলাদা একেকজায়গায় যাবে? কখনও রেস্টুরেন্ট কখন মলে। আরে তোকে কী বলছি? তীব্রর ফোন দুবেলা বিজি পেলেই তো তোর কপাল কুচকে আসে। দূর থেকে দেখে অন্যকে বলা অনেক সহজ হয়। কিন্তু যার সাথে হয় সেই বোঝে।”

স্নেহা চুপ হয়ে গেল। কথাগুলো পুরোপুরি ফেলনা না। অনিমা অরুমিতার দিকে তাকিয়ে বলল,

” আর তুইতো এখনও কাউকে ভালোই বাসিস নি তুই কীকরে বুঝবি?”

অরুমিতার মুখ অন্ধকার হয়ে গেল। বেসেছিল তো একজনকে ভালো। আর নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যকারো সাথে দেখার কষ্টটা ও জানে। তাই আর কিছুই বলল না।

হঠাৎ দেখল টিভিতে আদ্রিয়ানেরই শো হচ্ছে। অনিমা বিরক্ত হল। নিজেতো দিব্বি হাসি আনন্দ করে শো করে বেড়াচ্ছে। আর কষ্টে গুমরে গুমরে শুধু ও একাই মরছে। এই লোকটার তো কিছুই যায় আসেনা। ঠিক করেছে চলে এসছে। যার কাছে ওর কোন মূল্যে নেই তার কাছে কেন থাকবে? অনিমা রেগে উঠে যেতে নিলেই স্মৃতি নামটা এনাউস করা হল। চমকে উঠল অনিমা। তাকিয়ে দেখল আদ্রিয়ান আর স্মৃতির নতুন ডুয়েট গান ‘ শুধু তোমাকেই ভালোবাসি’ এর লঞ্চিং প্রোগ্রাম চলছে। অনিমা মাথায় এবার ধাক্কা লাগল। তারমানে ওনারা দুজন একসাথে গান গাইবে? সেদিন আদ্রিয়ানের ফোনে বলা, ‘শুধু তোমাকেই ভালোবাসি’ কথাটা অনেকটা রিলেট করতে পারছে। অনিমা তাকিয়ে দেখল আদ্রিয়ানের মুখে হাসি থাকলেও সেটা কৃত্রিম। চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে এই তিনদিনে। অরুমিতা বলল,

” দেখ ওদের গান ছিল। আমার মনে হয় এইজন্যই একসাথে থাকত।”

অনিমা কিছু না বলে বিরক্তি নিয়ে উঠে চলে এলো। মনে এখন একটু হলেই দ্বিধা ঢুকেছে ওর। কিন্তু যদি কাজের জন্যেও একসাথে গিয়ে থাকে। সিঙ্গারদের কাজতো স্টুডিওতে থাকবে। হ্যাঁ গেট টুগেদার বা ফ্যানমিটের জন্যে না হয় রেস্টুরেন্টে আর মলে গিয়েছিল, মেনে নিল। কিন্তু সিঙ্গারদের এমন গেট টুগেদার বা ফ্যানমিটের কথা ও জীবনে শোনেনি যেখানে শুধু দুজন সিঙ্গারই থাকে কোন ডিরেক্টর বা টিমের দরকার হয়না? হ্যাঁ সিনেমার হিরো হিরোয়িনের ক্ষেত্রে প্রমোশন বা ইন্টাভিউতে শুধু লিড দুজনই যায় অনেক সময়। কিন্তু সিঙ্গারদের ক্ষেত্রে তো এমনটা ও কখনও শোনেনি আর দেখেওনি। দূর! কিচ্ছু মেলাতে পারছেনা। আদ্রিয়ান মুখ দেখে এটুকু বুঝে গেছে আদ্রিয়ান কষ্টে আছে ওকে ছাড়া। কিন্তু এতোই যদি ওর প্রতি ভালোবাসা তাহলে স্মৃতির সাথে এতো ঢলাঢলি কীসের?

____________

ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে অনিমা দেখল যে অভ্রর গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গেইটের সামনে। ও একটু অবাক হল। অনিমাকে দেখে অভ্র এগিয়ে এসে বলল,

” ম্যাম, কিছু কথা আছে অাপনার সাথে। প্লিজ একটু সময় দেবেন। জাস্ট বসে একটু কথা বলব।”

” কিন্তু..”

” ম্যাম প্লিজ। আমি ফ্লাট অবধি ড্রপ করে দেব।”

অভ্র এভাবে বলল যে অনিমা না করতে পারল না। তাই অরুমিতাদের যেতে বলে ও অভ্রর সাথে গাড়িতে বসল।

একটা কফিশপে মুখোমুখি অনিমা আর অভ্র বসে আছে। অনিমা বলল,

” তাড়াতাড়ি বলুন দেরী হচ্ছে আমার।”

অভ্র বলল,

” ম্যাম কাল রাত থেকেই স্যারের ভীষণ জ্বর। পরশু থেকেই শরীর ভালো ছিলোনা। কিন্তু কাল বেশি অসুস্থ হয়ে পরেছে। আসার আগে একশ চার জ্বর চেক করে এসছি।”

অনিমা কেঁপে উঠল। যতই অভিমান থাক ও তো ভালোবাসে ছেলেটাকে। কিন্তু তবুও নিজেকে সামলে বলল,

” ত-তো ডক্টর দেখান, ঔষধ খাওয়ান আমায় কেন বলছেন?”

” আপনি না গেলে স্যার সুস্থ হবেনা ম্যাম। উনি আপনাকে কতটা চায় আপনি ভাবতেও পারবেন না। কাল রাতে জ্বরের ঘোরে আপনার নামই নিচ্ছিল। জাবিন তো সারারাত কেঁদেছে কাল।”

অনিমার কেমন যেন লাগছে, ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে আদ্রিয়ানের কাছে। তবুও বলল,

” তা আমাকে কেন ডাকছে? স্মৃতি ম্যাম আছেনা। ওনার গার্লফ্রেন্ড। তাকে ডাকলেই তো হয়।”

অভ্র কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে হঠাৎই হেসে দিয়ে বলল,

” ম্যাম আপনি ওই নিউস দেখে এসব ভাবছেন? তাইতো বলি। আরে সেরকম কিছুই না। ওটা ভুয়া নিউস ছিল। না জেনেই একটা ফটোকে ইস্যু নিয়ে লিখেছে। আপনার তো এসব আগে বোঝার কথা।”

” সেসব বুঝেছি আমি অভ্র। কিন্তু উনি কেন একা কোন মেয়েকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাবেন? তারওপর এভাবে হাত জড়িয়ে বসে থাকবেন? যখন উনি জানেন যে মিডিয়ায় লোকেরা এরকম সুযোগই খোঁজে?”

” শুধু স্মৃতি ম্যামকে নিয়ে গেছে এটা আপনাকে কে বলল? ”

” তাহলে?”

” আরে ওই মিউসিক অফিসের সবাই গেছিল। আসলে সেদিন হঠাৎ রেকর্ডিং এর জন্যে স্যারকে ডেকেছিলেন। ওটা দুদিন পর হবার কথা ছিল কিন্তু কোন একটা সমস্যার জন্যে সেদিনই ইমার্জেন্সি করতে হয়। রেকর্ডিং শেষে সবাই মিলে ডিনারে গেছিল। যদিও অনুষ্ঠান ছিল বলে স্যার যেতে চান নি। কিন্তু সবাই নাকি এতো জোর করেছিল যে স্যার সৌজন্যতা রক্ষায় খেয়েছিলেন। রাতে এমনিতেও স্যার বেশি খাননা। কোনরকম খেয়েছিলেন যাতে অনুষ্ঠানে এসেও কিছু খেতে পারে। আর ওনাদের টেবিলে চারজন বসেছিল। বাকি যেদুজন ছিল তারা একটু বাইরে গেছিল। তখন ঐ টেবিলে শুধু স্মৃতি ম্যাম আর স্যার ছিল কিছু নিয়ে কথা বলছিল। স্মৃতি ম্যাম ওনার বেশ কাছের বন্ধু অনেক ফ্রি ওনার সাথে। তাই হয়ত মজা করছিলেন কথা বলার সময় আর ওরা ছবি তুলে নেয়।”

অনিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কী বলবে বুঝতে পারছেনা। অভ্র আবার বলল,

” আর প্রথমদিনতো স্যারকে কনট্রাক্ট সাইন করার জন্যে ডেকেছিল। ডেট টা স্যার ভুলে গেছিল তাই আপনাকে রেডি হতে বলে ফেলেছে ভুলে। দোষটা আমার ছিল। আমিই স্যারকে রিমাইন্ড করাই নি ব্যাপারটা। আর যেই মলে আপনি ওনাদের দুজনকে দেখেছিলেন ওইমলের অপরের তলাতেই তো অফিস। তাই ওখানে থাকা অস্বাভাবিক না।”

অনিমা শুধু তাকিয়ে দেখছে অভ্রকে। অভ্র হেসে বলল,

” তাইতো বলি। স্যার পরশু এটা কেন বলল।”

” ক-কী বলেছে?”

” বলেছে যে, তোমার ম্যাম বড্ড বেশি অবুঝ অভ্র। একদম বাচ্চা। একটুও বোঝেনা আমাকে। একটুও না।”

অনিমা এবার টেবিলে বারি মেরে রাগী গলায় বলল,

” আপনার স্যার ঠিক বলে, আপনি একটা গাধা, ইডিয়ট, আপনি..আপনি একটা স্টুপিড, মাথামোটা, যাচ্ছেতাই!”

অভ্র হা করে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ানও ওকে এগুলো বলেই বকে। কিন্তু আলাদা আলাদা। এভাবে সবগুলো একসাথে বলে বকেনি। ও অবাক কন্ঠে বলল,

” আমি কী করলাম?”

অনিমা কাঁদোকাঁদো গলায় রেগে বলল,

” চুপ করুন। এই কথাগুলো কদিন আগে বলেন নি কেন হ্যাঁ? এতো লেট করে কেউ? শুধু শুধুই কেঁদে সমুদ্র বানিয়েছি। জানেন এই কদিন ঘুমও হয়নি আমার। সব আপনার জন্যে। আগে আসবেন না!”

অভ্র বোকা বনে গেল। এখন এতেও ওর দোষ? রাগ করবে দুজনে আর যত দোষ বেচারা অভ্রর। তবুও নিজের না জানা ভুল স্বীকার করে অভ্র বলল,

” সরি ম্যাম।”

” রাখুন আপনার সরি। চলুন, বাড়ি যাবো।”

অভ্র বুঝতে পারল কোন বাড়ির কথা বলছে তবুও খোঁচা মেরে বলল,

” অরুমিতাদের বাড়ি?”

অনিমা ঝাড়ি দিয়ে বলল,

” আপনার স্যারের বাড়ি ডাফার!”

অভ্র দ্রুত মাথা নেড়ে বলল ‘আচ্ছা’। তারপর নিজের মনেই হাসল। দোষ থাক বা না থাক। এই বর-বউ দুজনের ঝগড়ায় দিন শেষে ঝাড়িটা ওকেই শুনতে হয়। একেই বলে সোনায় বাঁধানো ঝাড়ি খাওয়া কপাল।

#চলবে…#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

২৬.

আদ্রিয়ানের বাড়ির পৌছাতে পৌছতে রাত হয়ে গেল। ড্রয়িং রুমে এসেই অনির পা থেমে গেল। অনিমাকে থামতে দেখে অভ্র থেমে গেল। অনিমা অভ্রর দিকে তাকি ঠোঁট কামড়ে কিছ একটা ভেবে বলল,

” এদিকে শুনুন!”

অভ্রও এগিয়ে এসে অনিমার মত ফিসফিস করে বলল,

” বলুন ম্যাম।”

” আপনার স্যার কী জানেন যে আমি কেন রেগে ছিলাম বা চলে গেছিলাম।”

অভ্র মাথা নাড়িয়ে বলল,

” উমহুম! স্যার জানেনা। ইভেন আমাকেও জানতে বলেছে। কিন্তু আমি নিজেও এখনও ক্লিয়ার না। আপনি রাগ কেন করেছিলেন? মূল কারণ কী ছিল?”

অনিমা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল,

” জানতে হবেনা। আর হ্যাঁ খবরদার আপনার স্যারকে এইসব স্মৃতি আপুর ব্যাপারের কথাগুলো কিচ্ছু বলবেন না। মনে থাকবে?”

” হুঁ মনে থাকবে।”

বলে এগুতে নিলেই দেখল যে জাবিন ট্রেতে কিছু একটা নিয়ে ওপরের দিকে যাচ্ছে। অনিমাকে দেখে থেমে গেল জাবিন। ট্রে টা রেখে দৌড়ে এসে অনিমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

” তুমি এখান থেকে চলে কেন গেছিলে অনিপু? জানো ভাইয়া কাল থেকে কত জ্বর? একন যদিও একটুখানি কমেছে। মাঝেমাঝেই তোমার নাম করে যাচ্ছে। এভাবে চলে যায় কেউ।”

অনিমা জাবিনকে ছাড়িয়ে এক কান ধরে কিউট করে বলল,

” সরি। ভুল হয়ে গেছে। আর কক্ষণো যাবোনা।”

” প্রমিস?”

” পাক্কা প্রমিস।”

” ভাইয়ার জন্যে রাতের খাবার নিয়ে যাচ্ছিলাম। চলো। তুমিই খাইয়ে দিও।”

অনিমার কেমন যেন গিল্টি ফিলিং হচ্ছে আদ্রিয়ানের কাছে যেতে। তাই বলল,

” তোমার ভাইয়া কী জেগে আছেন?”

জাবিন মুখ ছোট করে বলল,

” না, এখনতো তাকাতেও পারছেনা ঠিক করে।”

” আচ্ছা চল।”

এরপর তিনজনই আদ্রিয়ানের রুমে গেল। আদ্রিয়ান আসলে চোখ খুলতে পারছেনা ক্লান্তিতে, জ্বরের ঘোরে হুসও নেই ওর। অনিমা আদ্রিয়ানের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। আদ্রিয়ান কেঁপে উঠল, যেন ওর স্নায়ু অনিমার উপস্থিতি বুঝতে পারছে। আদ্রিয়ানের রুমে কিছুক্ষণ থেকে অভ্র আর জাবিন বেড়িয়ে এলো অনিমাকে রেখে। বেড়োনোর সময় জাবিন অভ্রকে ডাকতেই অভ্র ভ্রু কুচকে পেছনে তাকিয়ে বলল,

” কিছু বলবে?”

আসলে অভ্র এখন জাবিনকে এখন তুমি করে বলে। সেদিন কথার ছলে আপনি করে বলছিল বলে জাবিন মুখ ফুলিয়ে বলেছিল, ‘দেখুন আপনি কিন্তু আমার অনেক বড়। তাই এসব আপনি টাপনি বলবেন না প্লিজ। নিজেকে আশি বছরের বুড়ি মনে হয়।’ জাবিনের কথায় সেদিন হেসেছিল। ঐদিনি প্রথম জাবিনের কোন আচরণ মনে ধরেছিল ওর। গাল ফোলালে মেয়েটাকে বড্ড কিউট লাগে। জাবিন এগিয়ে এসে বলল,

” থ্যাংকস।”

অভ্র ভ্রু কুচকে রেখেও হেসে বলল,

” কেন?”

” ভাবীকে ফিরিয়ে আনার জন্যে।”

” স্যার বায়োলজিক্যালি আপনার ভাই হতে পারে। কিন্তু রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও আমার কাছে ভাইয়ের চেয়ে কোন অংশে কম না।”

বলে একটু হেসে অভ্র চলে গেল। জাবিন অভ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। নাহ, যতটা মুডি ভেবেছিল ততোটা না।

অনিমা আদ্রিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর কাঁদছে। চোখ ভিজে উঠেছে ওর। আদ্রিয়ানের মাথায় বারবার জ্বরপট্টি দিয়ে দিচ্ছে। জ্বরটা হঠাৎ আবার বেড়ে গেছে। আদ্রিয়ানকে খাইয়ে, ঔষধ খাইয়ে অনিমা আর রুম থেকে বেড় হয়নি। জাবিন এসে পোশাক দিয়ে গেছে ও আদ্রিয়ানেল ওয়াসরুমেই চেঞ্জ করেছে। আদ্রিয়ান বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। আদ্রিয়ানের এরকম অবস্থা মেনে নিতে পারছেনা অনিমা। নিজেকে দায়ী মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সবটা ওর জন্যেই হয়েছে। সবটাই। জাবিন অভ্র মাঝেমাঝে এসে দেখে গেছে। ওরা থাকতে চেয়েছিল অনিমাই জোর করে ঘুমোতে পাঠিয়ে দিয়েছে। ও বারবার জ্বরপট্টি দিচ্ছে, হাত পা ঘষে দিচ্ছে আর আল্লাহর নাম নিচ্ছে শুধু। আদ্রিয়ান সত্যিই মাঝেমাঝে বিড়বিড় করে অনিমার নাম নিয়েছে। রাত আড়াইটায় আদ্রিয়ানের জ্বর সম্পূর্ণ ছেড়ে গেল। ঘাম বেড়ায়েছে প্রচুর। অনিমা সুন্দর করে ঘাম মুছে নিয়ে ফ্লোরে বসে আদ্রিয়ানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে খাটের ওপর মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পরেছে।

_____________

ফার্মহাউজে রুমের ফ্লোরের এক কোণে পরে ড্রিংক করে যাচ্ছে রিক। প্রচন্ড নেশা হয়ে গেছে তবুও করছে। নিজের ইচ্ছেতে কিছুই করতে পারছেনা ও। কেন? এতো কষ্ট করে ডক্টর হয়েও জয়েন করতে পারছেনা ওর বাবার জন্যে। যেই মেয়েটাকে সবটা দিয়ে ভালোবাসতো সেই ওকে ঠকিয়ে চলে গেল। আচ্ছা এটাকে ঠকানো বলে? মেয়েটাতো কখনও বলেনি ভালোবাসে ওকে। তাতে কী? তবুও এটাকে ঠকানোই বলে। মামাতো বলেছে এটাকে ঠকানো বলে। ও তো জানতো রিক ওকে ভালোবাসে। তাহলে কীকরে পারল অন্যকারো হাত ধরে পালিয়ে যেতে। এতোটাই স্বার্থপর ঐ মেয়েটা? অকৃজ্ঞ! নেশাক্ত অবস্থাতেই গ্যালারিতে ছবি ঘাটতে ঘাটতে ওর আর অনিমা একটা ছবি পেল। দুজনেই একটা বেঞ্চে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে। অনিমা আইসক্রিম খাচ্ছে আর রিক ওর ওড়নার কোণ হাতে নিয়ে কিছু একটা করছে। আসলে অনিমাকে ভার্সিটি থেকে নিয়ে আসার পথে অনিমা রিকের কাছে বায়না করে আইসক্রিম খাবে। রিক কখনও অনিমার কথা ফেলেনা তাই ওকে নিয়ে আইসক্রিম খেতে যায়। আইসক্রিম খেতে খেতে একটা বেঞ্চে গিয়ে বসেছিল দুজনেই। দুজনেই খেতে খেতে গল্প করছিল। রিক কথা বলছিল কম আর অনিমাকেই দেখছিল বেশি। কিন্তু হঠাৎ করে অনিমার আইসক্রিম থেকে কিছু অংশ পরে যায়। রিক তাই ওড়নার ঐ অংশটা তুলে পরিস্কার করে দিচ্ছিল। যদিও অনিমার সেদিকে মোটেও খেয়াল ছিলোনা। খেয়াল করলে অবশ্যই অপ্রস্তুত হয়ে যেত। কারণ রিকের সাথে ওর মোটামুটি ভালো বন্ধুত্বের বন্ডিং থাকলেও যথেষ্ট ডিসটেন্স মেইনটেন করে চলত। সেটাই রিকের বেশি ভালো লাগত। আর ছবিটা ওদের ড্রাইভার না বলেই তুলেছে। পরে রিককে দেখিয়েছে। ছবিটা দেখে রিক এতোই খুশি হয়েছিল যে ড্রাইভারকে পাঁচ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়েছিল তখনই। ছবিটা দেখতে দেখতে অজান্তেই হেসে ফেলেল রিক। কত মিষ্টি একটা সম্পর্ক ছিল ওদের। দুপক্ষ থেকে ভালোবাসা না থাক বন্ধুত্ব তো ছিল। কিন্তু হঠাৎ কী কারণে এই সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে গেল সেটা আজও রহস্য ওর কাছে। আর যখন ওর মনে পরল ওর নীলপরী ওর কাছে নেই এমনিতেই চোখ ভিজে আসতে চাইল। বোতলে একটা লম্বা চুমুক দিয়ে বলল,

” কেন করলে এরকম? এভাবে চলে গেলে কেন? একবারও আমার কথা ভাবোনি। ইউ বিট্রেট মি। ইয়েস ইউ বিট্রেট ভি। তোমাকে ছেড়ে দেবনা আমি। ইউ আর ওনলি মাইন। ওনলি মাইন।”

এসব বিড়বিড় করতে করতেই ফ্লোরেই ঘুমের মধ্যে তলিয়ে গেল রিক।

_____________

অনিমা লম্বা এক শাওয়ার নিয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে। নিজেই নিজেকে আয়নায় দেখে ব্লাস করছে আর মুচকি হাসছে। সকালে ঘুমন্ত অবস্থাতেই আদ্রিয়ানকে রেখে রুমে এসছিল। পরে যখন খেয়াল করল যে আদ্রিয়ান জেগে গেছে তখন নিজের হাতে কফি করে নিয়ে গেছে আদ্রিয়ানের জন্যে। কতদিন পর আবার কফি বানালো আদ্রিয়ানের জন্যে।তবে আদ্রিয়ানের সামনে যায়নি। আদ্রিয়ানের ওয়াশরুমে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে কাপটা রেখে এসছে সাথে একটা চিরকুট। যেটাতে লেখা ছিল, “রকস্টার সাহেব! আমার ওপর রাগ করে কফি ফেলে দিলে কিন্তু আমি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দেব। মারাত্মক কান্না। পরে সেই কান্নার দায় কিন্তু আপনাকে নিতে হবে। তাই ভদ্র ছেলের মত কফিটা খেয়ে নেবেন। পরে না হয় মগটা ভেঙ্গে আমার ওপর রাগ মেটাবেন।” আসলে চড়টা মারার পর থেকেই কেমন একটা গিল্টি ফিলিং হচ্ছে ওর। তাছাড়াও কত মিসবিহেভ করেছে তাই এখন আদ্রিয়ানকে ফেস করতে কেমন লাগছে। তারওপর আদ্রিয়ান নামক ঐ মানুষটা ওকে ভালোবাসে? আদ্রিয়ান শুধুমাত্র ওর। ওর? ভাবতেই ওর শিরা উপশিরা অবধি শিহরিত হয়ে যাচ্ছে। এতো ভালোলাগার অনুভূতি এর আগে কোনদিন পায়নি ও। কেমন লাগছে নিজেই জানেনা। আদ্রিয়ানের সামনে দাঁড়াতেই লজ্জা করবে। আচ্ছা চিঠিটা পড়ে আদ্রিয়ানের রিঅ্যাকশনটা কীকরম হয়েছে? চুল মুছে খাটে বসতেই আদ্রিয়ানের কিনে দেওয়া একটা টেডি দেখতে পেল। টেডিটা হাতে নিয়ে একটা চুমু দিল অনিমা। তারপর নিজে নিজেই ওটা হাতে নিয়ে হাটতে হাটতে গুনগুনিয়ে গাইল,

ঝিরি ঝিরি স্বপ্ন ঝরে,
দুটি চোখের সিমানায়
চুপি চুপি কানে কানে,
কেউ আমাকে ডেকে যায়
মন হারানোর এ সময়,
পাখা মেলে.. না জানি যাবো কোথায়
তেরে রারা রুরু, মন উড়ু উড়ু
প্রেম হলো শুরু মনে হয়,
তেরে রারা রুরু, মন উড়ু উড়ু
প্রেম হলো শুরু মনে হয়।

কাশির আওয়াজে চমকে তাকিয়ে চমকে পেছনে দেখে জাবিন দাঁড়িয়ে আছে। জাবিন মেকী হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

” এতো প্রেম কীসের শুনি? হুম?”

অনিমা কিছু না বলে মাথা নিচু করে হাসল। জাবিন বলল,

” থাক আর লজ্জা পেতে হবেনা। খেতে যাবেনা? ভাইয়া কিন্তু খুঁজছে। চল!!”

” না প্লিজ। আমি পরে খেয়ে নেব। এখন নিচে যাবোনা।”

” ওহ হো। চোখে চোখে এতো কথা মুখে কেন বলোনা? কেন বলোনা?”

” যাও তো!”

অনিমা হাসতে হাসতে জাবিনকে ঠেলে বার করে দরজাটা লাগিয়ে দিল। সারাদিন অনিমা আদ্রিয়ানের সামনে যায়নি শুনু পালিয়ে বেড়িয়েছে। আদ্রিয়ান কয়েকবার খুঁজেছিল, অনিমা শুধু লুকিয়ে পরেছে। অদ্ভুতভাবে ভীষণ লজ্জা লাগছে আজ ওর। পরতেই চায়না আদ্রিয়ানের সামনে। বিকেলে জাবিনের রুম থেকে নিজের রুমে এসে আরেকবার শাওয়ার নিল। ভীষণ গরম তাই। হুট করেই কালো রঙের শাড়ি পরল ও। কেন জানি ইচ্ছে হল। বাইরে এসে টি-টেবিলে চোখ পরতেই একটা কাগজ চোখে পরল। ভ্রু কুচকে কাগজটা খুলে দেখল সুন্দর করে লেখা আছে,

” এইযে মায়াবিনী? আর কত পালাবে হুম? সেইতো আমার কাছে আসতেই হবে। যত দেরীতে আসবে শাস্তি তত বেশি পেতে হবে। তাড়াতাড়ি চলে এসো শ্যামবতী। তোমাকে ছাড়া একেকটা মুহূর্তও একেকটা যুগ মনে হচ্ছে। আর পুড়িয়ে না। জ্বলে পুরে ছাই হয়ে যাবো তো।”

মুচকি হেসে চিঠিটায় ঠোঁট ছোঁয়ালো অনিমা।সবকিছুই অদ্ভুত ভালোলাগছে ওর। কেমন স্বর্গ স্বর্গ ফিলিংস। উফফ! এতো ভালোলাগা কেন?

অনিমা ওরকম ভেজা চুলেই বাইরে এলো সারাবাড়ি খুঁজেও আদ্রিয়ানকে পেল না। মনটা কেমন করছে। বাড়িতে কী নেই আদ্রিয়ান। হঠাৎ ছাদের কথা মনে পরতেই ছাদে চলে গেল অনিমা। কিন্তু ওখানেও কাউকে পেলোনা। তাই মন খারাপ করে ফিরে আসতে নিলেই কেউ হ্যাচকা টান দিয়ে ওকে নিজের দিকে টেনে নিল। অনিমা প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও পরে তাকিয়ে দেখল এটা আদ্রিয়ান। ও লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। আদ্রিয়ান একহাত অনিমার কোমড়ে রেখে অপরহাত দিয়ে কপালের ভেজা চুল সরিয়ে বলল,

” তো ম্যাডাম! আজ সারাদিন এভাবে পালিয়ে বেড়ালেন। এর শাস্তি এখন কী পেতে চান? হুম?”

অনিমা লাজুক হেসে মাথা নুইয়ে নিল। ওর বলতে ইচ্ছে হচ্ছে ‘আপনার দেওয়া সব শাস্তিই আমার কাছে চরম সুখের প্রাপ্তি’। আদ্রিয়ান অনিমাকে আরেকটু কাছে টেনে বলল,

” তোমার এই লাজুক হাসিটা দেখতে মনটা কতোটা ব্যাকুল হয়ে ছিল জানো? জানো তোমার গলার স্বর, এই গালের টোলটা, তোমার বাচ্চামো সবটা কতটা মিস করেছি? আর এভাবে শাড়ি পরে ভেজা চুলে যে আমায় এলোমেলো করে দিলে তার দায় কে নেবে হুম? জানো এই সাজ, লজ্জা মাখা লালচে গাল সব মিলিয়ে কেমন লাগছে তোমাকে? একদম খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে..। এই লজ্জা পেলে?”

অনিমা কিছু বলছেনা চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে আছে। তাই আদ্রিয়ান অনিমার ভেজা চুলে নাক ডুবিয়ে বলল,

” এই জানপাখি! কথা বল!”

জানপাখি শব্দটা অনিমার হৃদপিণ্ডে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা দিল। পুরো শরীর কেঁপে উঠল। যেন রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে গেল নামটা। সবটাই যেন এলোমেলো হয়ে গেল। ওর হৃদস্পন্দন যেন আজ সব সীমা পেড়িয়ে ফেলবে। এ কেমন অনুভূতি? এই অনুভূতির নাম কী?

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here