বর্ষণের সেই রাতে- ২ পর্ব ২৭+২৮

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

২৭.

আদ্রিয়ানের প্রতিটা বাক্যে অনিমা লজ্জায় এতোটাই কুঁকড়ে যাচ্ছে যে এখনও চোখ খুলে তাকাতেই পারছেনা। আদ্রিয়ান অনিমার চুল থেকে নাক সরিয়ে অনিমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

” এভাবে লজ্জা পেওনা লজ্জাবতী। তোমার লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখটা দেখে কিন্তু আমার নিজেকে সামলে রাখতে ভীষন কষ্ট হয়।”

কথাটা বলে অনিমার মুখের দিকে তাকিয়ে হালকা করে ফু দিল। অনিমা চোখ আরো খিচে বন্ধ করে ফেলল। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

” পরে কিছু করে ফেললে আবার ক্যারেক্টারলেস উপাধি দিয়ে দেবে। যদিও তোমার কাছে হাজারবার ক্যারেক্টারলেস হতে পারি।”

অনিমা চোখ খুলে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে তারপর আবার চোখ নামিয়ে নিল। লজ্জা লাগছে ভীষণ ওর। আদ্রিয়ান বলল,

” আর হ্যাঁ কফিটা কিন্তু খেয়েছি আর মগটাও কিন্তু ভাঙিনি। যদি তুমি সত্যিই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দাও? তোমার চোখের জল কীকরে সহ্য করব হুম? আর তাছাড়াও তোমার ওপর রেগে থাকতে পারিনা আমি। এটাকে আমার বদঅভ্যাস বলতে পারো। কিন্তু তোমার প্রতি রাগ বা অভিমান আসতে চায়না আমার। অন্যকিছু আসতে চায়। বলব কী?”

অনিমা মাথা নিচু রেখেই ‘না’ বোধক মাথা নাড়াল। ওর যে আদ্রিয়ানের কথাগুলোতে ভীষণ লজ্জা লাগছে।

” বলে দে, ভাই আমার বলে দে। পেটের মধ্যে আর কত রাখবি বলত? এবার বলেদে।”

কারো মুখে একথা শুনে অনিমা আর আদ্রিয়ান দুজনেই একে ওপরের থেকে দূরে সরে দাঁড়াল। জাবিন দাঁত বার করে হাসছে। ও পেছনে হাত নিয়ে দুলতে দুলতে এসে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

” আহা, কত প্রেম। প্রেম আজ আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পরেছে। এ প্রেমের জয় হোক।”

আদ্রিয়ান একটু গলা ঝেড়ে বিরক্তি নিয়ে বলল,

” তোর মত কাবাবের হাড্ডিরা যতদিন দুনিয়াতে আছে প্রেমের আর জয় হবেনা।”

কথাটা শুনে জাবিনের মুখের হাসি উধাও হয়ে গেল। ও মুখ কালো করে বলল,

” এভাবে অপমান? আমি এখন কাবাবে হাড্ডি হয়ে গেলাম? নাহ, এ অপমান মানা যায় না। আমি অনশন কর। হুহ।”

আদ্রিয়ান হেসে বলল,

” তুই করবি অনশন? তাহলেই হয়েছে। প্রতি দুই ঘন্টা অন্তর অন্তর তো কিছু না কিছু খেয়েই চলেছিস। রাক্ষুসী একটা। তোর যার সাথে বিয়ে হবে তাকে নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত আমি। বেচারা তোকে খাবার খাওনোর জন্যেই বাপ দাদার সম্পত্তি বেঁচে ফেলতে হবে। বাকি সব বাদ দিলাম।”

” তুই এভাবে বলতে পারলি?”

” বলবনা। যদি তুই নিজের ভাই আর ভাবীর রোমান্সের মধ্যে কাবাবের হাড্ডি হয়ে না আসিস।”

আদ্রিয়ানের এমন লাগামহীন কথা শুনে অনিমা আর দাঁড়াল না লজ্জা পেয়ে চলে গেল ওখান থেকে। ভাই বোন দুটোই বেহায়া। নাহলে এতো লাগামহীন কথা বলে?

____________

রিক পার্টি অফিসে নিজের কেবিনে বসে কিছু কাগজ দেখছে। তবে ওর এসবে একদমই মন নেই। কোনকালেই এসব রাজনৈতিক কাজ ভালো লাগেনা ওর। কিন্তু বাধ্য হয়েই করতে হচ্ছে। বিরক্তি কী জিনিস সেটা এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে ও। ফোনের আওয়াজে বিরক্তি আরও বৃদ্ধি পেল ওর। স্ক্রিনে তাকিয়ে আদ্রিয়ানের নাম দেখে বিরক্তি কিছুটা কাটল। রিসিভ করে বলল,

” হ্যাঁ বল হঠাৎ ফোন?”

” ইদানীং খুব ব্যস্ত আছিস বলে মনে হচ্ছে?”

” হ্যাঁ। সামনে ইলেকশন, এসব নিয়ে ব্যস্ত আরকি।”

আদ্রিয়ান বিরক্তি নিয়ে বলল,

” এতোবছর কষ্ট করে ডাক্তারি পড়ে এরপর রাজনীতি করার লজিকটা আমি এখনও বুঝছিনা।”

রিক ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,

” এসব ছাড়। কিছু বলবি?

“আদিবের বিয়ে এই পনেরো তারিখ। তুই আসবি?”

” তোর বন্ধু আদিব?”

” হুম।”

রিক একটু ভেবে বলল,

” আচ্ছা দেখছি। এখনও শিওর নই তবে আসলেও একেবারে বিয়ের দিনই আসব।”

” হুম দেখ। আসলে সবার মাঝে তোরও ভালো লাগবে।”

আরও কিছুক্ষণ টুকিটাকি কথা বলে ফোনটা রেখে দিল রিক। লম্বা একটা শ্বাস ফেলে ভাবতে লাগল অনিমা কোথায় যেতে পারে? ও এতো সোর্স লাগিয়ে খুঁজছে কোথাও তো পাওয়া উচিত। এভাবে তো ভ্যানিস হয়ে যেতে পারেনা একটা মেয়ে।
ঠিক পাশের রুমেই কবির শেখ আর রঞ্জিত চৌধুরী তাদের নিকৃষ্ট পরিকল্পনায় ব্যাস্ত। তাদের যেখানে যত অবৈধ কারবার আছে সবকিছুরই টাকা পয়সার হিসেব করছেন ওনারা। তবে মাদারের খোঁজ পেয়েছেন ওনারা। উনি সিলেট আছেন এখন। তবে ঠিক কোন জায়গায় আছে সেটা এখনও জানেনা। আর সেটা জানা ওনাদের জন্যেই ভীষণ জরুরি। ওনাদের বর্তমান পরিকল্পনা এগোতে হলে মাদারকে প্রয়োজন।

____________

পাঁচদিন পরেই আদিবের বিয়ে। বিয়ের জন্যে যেই বাংলো ভাড়া করা হয়ে নিকট আত্মীয়রা সবাই এসে গেছে সেখানে। আদ্রিয়ানরাও ওই বাড়িতে চলে গেছে। যদিও এক সপ্তাহ পরে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু আদিবের জোড়জুড়িতে এতো আগে চলে আসতে হল। সকলের কাছে অনিমার পরিচয় আদ্রিয়ানের ফুঁপাতো বোন হিসেবেই দেওয়া হয়েছে। কারণ আমাদের সমাজে এক মেয়ের এভাবে কোন পরপুরুষের বাড়িতে থাকাকে ভালো চোখে দেখেনা। আর আদ্রিয়ান চায়না অনিমাকে কেউ কোনরকম কথা শোনাক বা অনিমা কারো কাছে ছোট হোক। গতকাল রাতে এসছে ওরা এখানে। আজ সকালে আদিবের ফুপির বাড়ি থেকেও তিনজন চলে এলো। ওর ফুপা, ফুপি আর তাদের ছেলে আরমান। আরমান এসে ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখল ড্রয়িং রুমে তিনচারজন মেয়ে মিলে ফল কাটছে আর গল্প করছে। ওখানে জাবিন, অনিমা আর আদিবের দুজন কাজিন ছিল। কিন্তু অনিমার দিকে আরমান বেশ অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল। বলা বাহুল্য সেই দৃষ্টিতে খারাপ কিছু ছিলোনা। অনেক্ষণ যাবত আদ্রিয়ান অনিমাকে বিরক্ত করে যাচ্ছে। যেখানে যায় সেখানেই পেছন পেছন ঘুরঘুর করে বেড়াচ্ছে। অনিমা বেশ বিরক্তও হচ্ছে। অনিমা ছাদে কাপড় মেলে দিয়ে নিচে আসার সময় হঠাৎ কেউ ওর হাত টেনে ধরল। আর এটা আদ্রিয়ান ছাড়া আর কে হবে? অনিমা বিরক্ত হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

” সমস্যা কী আপনার বলবেন? সকাল থেকে জ্বালিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে ইরিটেড করার কোন মানে আছে?”

আদ্রিয়ান পাত্তা না দিয়ে মুচকি হেসে অনিমার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে বলল,

” আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে তোমাকে। তারওপর নেভিব্লু কুর্তি পরেছ। এই রং টাতে তোমাকে বেশ মানায়। তাই গার্ড দিচ্ছি যাতে কেউ নজর না দেয়। ঐ আরমান সকাল থেকে তোমাকে কীভাবে যেন দেখছে। যেটা আমার একদম ভালো লাগেনি। আমার জিনিসে অন্যকারো নজর পরবে ব্যাপারটা আমার মোটেও পছন্দ না।”

” আমি জিনিস?”

” সবার ক্ষেত্রে না। শুধু আমার ক্ষেত্রে। বাকি সব দিক দিয়ে তুমি স্বাধীন। শুধু এই দিকটা বাদে। না কেউ তোমার দিকে নজর দিতে পারবে। আর না তুমি অন্য কারো দিকে নজর দেবে। বুঝলে?”

” যদি আমি দেই তো?”

” কেন কাউকে মনে ধরেছে?”

অনিমা আদ্রিয়ানকে জ্বালানোর জন্যে বলল,

” তা জানিনা। কিন্তু ইউ নো হোয়াট! ঐ আদিব ভাইয়ার ফুপির ছেলেটা আছেনা, আরমান। ওনাকে কিন্তু দেখতে বেশ ভালো। বলিউড স্টার।”

আদ্রিয়ান একটু রেগে গেল। চোখে রাগ থাকলেও মুখে রহস্যময় হাসি ফুটিয়ে অনিমার হাতটা হালকা চাপ দিয়ে ধরে বলল,

” বেশি সাহস ভালোনা জানপাখি। আমাকে তুমি এখনও পুরোটা চেনোনা।”

” হাত ছাড়ুন কাজ আছে নিচে।”

” কেন আরমানকে দেখতে ইচ্ছে করছে বুঝি?”

” হ্যাঁ।”

আদ্রিয়ান অনিমার হাতে আরেকটু চাপ দিয়ে ধরে বলল,

” আবার বলো?”

অনিমা মেকি হেসে বলল,

” আমিতো মজা করছিলাম। নিচে কাজ আছে। ছাড়ুন প্লিজ।”

” যদি না ছাড়ি?”

” আমি চেঁচাবো।”

” চেঁচাও।”

অনিমা এবার করুণ চেহারা করে বলল,

” প্লিজ।”

আদ্রিয়ান আর অনিমাকে বিরক্ত না করে ছেড়ে দিল। অনিমা প্রায় দৌড়েই নিচে চলে গেল সবার কাছে। নিরিবিলি জায়গায় থাকা মানেই আদ্রিয়ানের জ্বালাতন সহ্য করা।

বিকেলে সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। বিয়ে বাড়িতে তো হাজারটা কাজ থাকে। আদিবের দাদি নামক মানুষটা অন্যরকম। রসিক প্রকৃতির, কিন্তু কিছুকিছু ক্ষেত্রে আবার কেমন কঠিনও। অনিমাকে এরমধ্যেই নাতনির মত দেখতে শুরু করেছে। তবে এরমধ্যে দুবার বকাও খ
দিয়ে ফেলেছে। আদ্রিয়ানের সাথেও বেশ ভাব। যদিও তার কিছু কিছু কথায় আদ্রিয়ান নিজেও বিরক্ত হচ্ছে।
আদ্রিয়ান, আশিস আরও কজন মিলে ড্রয়িং রুমের সাইডেই কাজ করছিল। বড় একটা ঝুড়ি লাগবে তাই অনিমা আদ্রিয়ানকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বলল,

” আদ্রিয়ান এদিকে একটা ঝুড়ি লাগবে।”

ঠিক তখনই আদিবের দাদি রাগী গলায় হালকা ধমকে বলল,

” এই মেয়ে ও না তোমার বড় ভাই হয়? আদ্রিয়ান কী হ্যাঁ? ভাইয়া বলে ডাকতে পারছ না?”

অনিমা মাথা নিচু করে ফেলল। কেউ কিছু বলল না কারণ কাজিন ভাইকে তো স্বাভাবিকভাবে ভাইয়া বলেই ডাকার কথা। আদিব, আশিস, জাবিন ওরা মিটমিটিয়ে হেসে যাচ্ছে। আদ্রিয়ানের তো মনে মনে এই বুড়ির ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে। এখন নিজের হবু বউয়ের মুখে ভাইয়া ডাক শুনিয়ে ছাড়বে? এমন দুর্ভাগ্য কজনের হয়? অনিমা আর কী করবে অসহায় মুখ করে বলল,

” ভাইয়া? ঝুড়িটা দিয়ে যান।”

আদ্রিয়ান কিছু বলবে তার আগেই আরমান এসে একটা ঝুড়ি এনে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” এই নাও তোমার ঝুড়ি।”

অনিমা জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বলল,

” থ্যাংকস।”

আরমান হেসে বলল,

” মাই প্লেজার, বিউটি।”

ব্যাস! হয়ে গেল। দাদি যে আগুন লাগিয়েছে আরমান সুন্দর করে তার মধ্যে ঘি ঢেলে দিয়েছে। অনিমা একটা শুকনো ঢোক গিলে আদ্রিয়ানে দিকে তাকিয়ে দেখে আদ্রিয়ানের কোন পাত্তা নেই। সে নিজের মত কাজ করছে। আদিব ওরা পারছেনা এখন ঘর কাঁপিয়ে হাসতে। অনিমা আদ্রিয়ানের অবস্থা দেখে ভীষণ হাসি পাচ্ছে ওদের।

সন্ধ্যার পর ড্রয়িংরুমে সবাই মিলে গল্প করছে। সবাই বলতে ইয়াং রাই। তাও ওরা নিজেরা। বাইরের কেউ নেই। আদ্রিয়ান তো বেশ ফুলে আছে বিকেল থেকেই। অনিমা আর কী করবে ও অসহায়ের মত বসে আছে। এসবে ওর কী দোষ? এরমধ্যেই একজন বলে উঠল,

” হোয়াটস আপ গাইস?”

সবাই সেদিকে তাকাল। লোকটাকে দেখে অাদ্রিয়ান, আদিব, আশিস তিনজনই অবাক হল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তিনজনেই ‘শালা’ বলে চেঁচিয়ে উঠল। তিনজনে গিয়েই জড়িয়ে ধরল ছেলেটাকে। আদ্রিয়ান বলল,

” তোর ফ্লাইট তো কাল ছিল তাইনা?”

” সারপ্রাইজ।”

আদ্রিয়ান সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। ওর নাম নাহিদ। ইউএসএ থেকে এলো আজ। আদিবের বিয়ের জন্যেই এসছে। এরকমটাই সবাই জানে। অনিমার সাথে পরিচয় করাবে তার আগেই নাহিদ বলল,

” ওয়েট! ওয়েট! লেট মি গেস। দিস ইজ ভাবী রাইট? অনিমা?”

আদ্রিয়ান নাহিদের কাধে হাত রেখে বলল,

” আরে বাহ। খুব জলদি চিনে ফেললি?”

” তোর মুখে ডেসক্রিপশন শুনতে শুনতে আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। যাই হোক ভাবী আমি নাহিদ। সম্পর্কে আপনার দেবর হই। ”

অনিমা মুচকি হেসে বলল,

” ভালো আছেন?”

” আমি সবসময়ই ভালো থাকি।”

এরপর সবার সাথেই জমিয়ে আড্ডা দিল ও। নাহিদ ছেলেটা বেশ মিশুক। সবার সাথে কিছুক্ষণের মধ্যেই দারুণভাবে মিশে গেল। যেন সবাই ওর পূর্বপরিচিত। সবারই বেশ ভালো লেগেছে ওকে। আদ্রিয়ান সবার আড়ালে চোখের ইশারায় নাহিদকে কিছু বলল, নাহিদও কিছু ইশারা করে অনিমার দিকে একপলক তাকালো। আদ্রিয়ানের নাহিদকে এখানে আনার উদ্দেশ্য শুধু বিয়েটা না, অনিমাও। যেটা কেউ জানেনা।

#চলবে…#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

২৮.

সকাল থেকে সবাই দ্রুত সব কাজ সেড়ে রেডি হয়ে নিচ্ছে। আদিবের বিয়ের কিছু শপিং আর যার যার ব্যাক্তিগত প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে যেতে হবে তাই। সব কাজ সেড়ে নিয়ে বিকেলের দিকে বেড় হবে ওনারা। রাইমাদের পরিবারও এই বাংলোতেই আছেন। কারণ ওনাদের নিজস্ব বাড়ি এখানে নেই। তাই একবাড়িতে থেকেই বিয়ে হবে। আদিব আর রাইমা দুজনের মা বেশ ভালো। ওদের সবাইকে দ্রুত আপন করে নিয়েছেন। পরশু রাত থেকেই আদ্রিয়ান একটু বিরক্ত। ঐ আরমান নামক ছেলেটা অনিমার সাথে একটু বেশিই চিপকে থাকতে চাইছে। যেটা আদ্রিয়ানের মোটেও ভালো লাগছে না। অনিমা বুঝতে পারছে ব্যাপারটা কিন্তু কিছু করতে পারছেনা। মাঝেমাঝে শুধু অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আদ্রিয়ানের রাগে ফুঁসে ওঠাটাই দেখছে। বাকি ছেলে মেয়ে যারা ওদের ব্যাপারটা জানে তারাতো হেসে কুটিকুটি ওদের দুজনের হাল দেখে। যদিও সবার সামনে হাসিটা কন্ট্রোল করে রাখতে হয়। আর নাহিদতো এই অল্পসময়েই এমনভাবে সবার সাথে মিশে গেছে যে এখন ওকে এই বাড়ির কেউই মনে হচ্ছে। তবে আজ সকাল থেকে আদিবের ফুপি, মানে আরমানের মাও অনিমাকে কেমন করে ঘুরে ঘুরে দেখছে। যেটা অনিমা আর আদ্রিয়ান দুজনেই খেয়াল করেছে। ছেলে কী কম ছিল যে এখন মাও এভাবে পেছনে পরেছে?

তিনদিন পর বিয়ে, বাড়িতে প্রচুর মানুষ তাই দুপুরের খাবারের জন্যে সবাই ছাদের ফ্লোরে বসেছে। সবাই মিলে একসাথে খাবে তাই। এক লাইনে ছোটরা মানে ইয়াংরা সবাই বসেছে। ওপর লাইনে মুখোমুখি হয়ে বড়রা বসেছেন। অনিমা আদ্রিয়ান পাশাপাশি বসলেও আরমানও অনিমার পাশে বসে পরেছে। যদিও ওখানে জাবিন বসতে চেয়েছিল কিন্তু তার আগেই আরমান বসে পরেছে। আর আরমানের মা অনিমা আদ্রিয়ানে মুখোমুখি হয়েই বসেছে। আবার অভ্র জাবিনও পাশাপাশি বসেছে। মুখে কিছু না বললেই চোখে চোখে হালকাপাতলা কথা হচ্ছে এদের। খাওয়ার মাঝে আরমান ইচ্ছে করেই অনিমার সাথে নানারকমের কথা বলছে। অনিমাও ভদ্রতা রক্ষায় টুকটাক উত্তর দিচ্ছে, কখনও চুপ করে আছে। আদ্রিয়ানতো শক্ত হয়ে বসে খাচ্ছে কম হাত নিয়ে খাবার নাড়ছে বেশি। আদিব ফিসফিসিয়ে আদ্রিয়ানকে বলল,

” কী ভাই? জ্বলছে?”

আদ্রিয়ান একবার তাকাতেই আদিব আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিল, যেন ও কিছুই বলে নি। আরমান একটা বাটি থেকে মাংস তুলে অনিমার পাতে দিয়ে বলল,

” মাংস না নিয়েই তো ভাত শেষ করে ফেলছিলে। মাংসটা ভালো হয়েছে খেয়েই দেখ? আরেকটু ভাত দেই?”

আদ্রিয়ান মুখে লোকমা তুলতে যাচ্ছিল কিন্তু এটা শুনেই থেমে গেল। অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে তারপর আরমানের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,

” না, ঠিক আছে।”

” আরে আরেকটু নেও। এতো কম খাও বলেইতো এমন রোগা তুমি।”

তখন আদ্রিয়ান বলে উঠল,

” তুমি এতো চাপ নিওনা। ও রোগা হলে সেটা ওর বরের প্রবলেম। ঠিক ম্যানেজ করে নেবে। তার প্রয়োজন হলে রোগা থেকে মোটাও করে নেবে। তুমি খাও।”

” কিন্তু আমি যতদূর জানি অনি এখনও আনম্যারিড।”

” প্রথমত ওর নাম অনিমা। আর দ্বিতীয়ত ও চিরকুমারী থাকার প্রতিজ্ঞা করেনি। বিয়ে করবে একদিন।”

কথাটা শুনে যেন আরমান স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। তবে আর কথা বাড়াল না। নাহিদ একটু গলা ঝেড়ে বলল,

” আচ্ছা এখানে কী কোন পোড়া খাবার নিয়ে এসছো না-কি? কেমন পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি।”

আশিসও সম্মতি দিয়ে বলল,

” সেম সেম। আমারও একই ফিল হচ্ছে।”

আদিবের মা অনেকটা অবাক হয়ে বললেন,

” কী বলছিস কী? পোড়া খাবার কেন আনতে যাবো?”

আদ্রিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” তোদের দুটোর নাকে ইনফেকশন হয়েছে, নাকের ডক্টর দেখা গাধাস্।”

আদ্রিয়ানের এই কথা নিয়ে একদফা সবাই হেসেও নিল। নাহিদ আর আশিস ওকে আর বেশি না ঘাটিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিল। অভ্র তো ভয়ে মুখ খুলছেনা, কখন আবার ঝাড়ি খেতে হয়। জাবিন আর রাইমা দুজনেই নিরবে বিনোদন নিচ্ছে। হঠাৎই আরমানের মা আদ্রিয়ানের উদ্দেশ্য বলে উঠল,

” আদ্রিয়ান তোমার ফুপির নাম্বারটা দিওতো।”

আদ্রিয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,

” কোন ফুপি?”

” আরে তোমার ফুপি। মানে অনিমার মা।”

আদ্রিয়ান আর অনিমা একসাথে অবাক হয়ে তাকাল আরমানের মায়ের দিকে। আরমান হালকা ব্লাশ করছে। তবুও আদ্রিয়ান একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,

” ফুপির নাম্বার দিয়ে আপনি কী করবেন? মানে..”

” আরে দরকার বলেই তো চাইছি। খাওয়া শেষ করে নাম্বারটা দিও কিন্তু।”

অনিমার তো ঘাম বেড়োচ্ছে। কী চায় কী এই মহিলা? আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” ফুপির ফোন তো নেই।”

আরমানের মা অনেকটা অবাক হয়ে বললেন,

” নেই মানে?”

” নেই মানে নেই? এইতো গত পরশু বাসের মধ্যে চুরি হয়ে গেল। ইশ! কত দামি ফোন ছিল। বল আদিব।”

আদিব হকচকিয়ে গিয়ে বলল,

” হ্যাঁ? ও হ্যাঁ তাইতো। অনেক দামি ফোন ছিল। ফুপির তো ফুপাও এতোটা প্রিয় ছিলোনা যতটা ঐ ফোনটা ছিল। ”

” এক্সাক্টলি। তাই ফুপি এখনও তার পুরোনো ফোনের শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আর ফুপাও এখনও এবরট থেকে ফোন কিনে পাঠায়নি। এইজন্যই তো অনি ওর মাকে ফোন করছেনা, সি।”

আদিবের দাদি বলে উঠলেম,

” হয়েছে খাওয়ার সময় এতো কথা বলতে নেই, খেয়ে নাও সবাই।”

আরমানের মা আশাহত হয়ে আবার খাওয়া শুরু করলেন। তবে আদ্রিয়ান খেতে পারছেনা শান্তিতে। অনিমার তো মনে মনে বড্ড ভয় লাগছে। ও বুঝতে পারছে যে আদ্রিয়ান বিরক্ত আর রাগ দুটোই হচ্ছে।

____________

গোটা দুপুর জুড়ে চৌধুরী বাড়িতে বা পাশের বেডরুমটায় আবারও তান্ডব হয়েছে। সেটা রিকই করেছে। আসলে মাঝেমাঝেই ও এরকম করে। এমনিতে স্বাভাবিক থাকলেও যেই মুহূর্তে অনিমার কথা মনে পরে, এটা মাথায় ঘোরে যে অনিমা ওকে ঠকিয়ে পালিয়ে গেছে, তখনই এরকম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায় ও। মাত্রাতিরিক্ত নেশা করে সবকিছুই ভেঙ্গে ফেলে। যদিও সব শান্ত হয়ে গেছে বেশ অনেকটা সময় হল। স্নিগ্ধা খাবারের ট্রে এনে আস্তে করে দরজা ফাঁক করে দেখে রিক উপর হয়ে শুয়ে আছে। ওর বা হাত দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পরছে। স্নিগ্ধা গুটিগুটি পায়ে ভেতরে এলো। প্লেটটা টি-টেবিলে রেখে রিকের পাশে বসে ওর মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বলল,

” রিক দা?”

রিক চোখ বন্ধ করে রেখেই শক্ত কন্ঠে বলল,

” দেখ বিরক্ত করিস না আমাকে এখন। যা এখান থেকে।”

স্নিগ্ধা উঠে গিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এলো। রিকের পাশে বসে রিকের কাটা হাতটা ধরতেই রিক ঝাড়ি মেরে বলল,

” তোকে যেতে বললাম না?”

সিগ্ধা রিকের ধমকে পাত্তা না দিয়ে রিকের হাত টেনে নিজের কাছে নিল। রিক সরাতে নিলেই স্নিগ্ধা কাটা জায়গায় একটু চাপ দিল। রিক ‘আহ’ করে উঠল। স্নিগ্ধা কোন কথা না বলে রিকের হাতে আলতো হাতে পরিষ্কার করে ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছে। রিকও আর কিছু বলেনি শুধু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ছিল স্নিগ্ধার দিকে। ব্যান্ডেজ করার সময় রিক বলল,

” তোকে এতো সাহস কে দেয় বলত? লোকে আমার দিকে চোখ তুলে তাকাতেও ভয় পায় আর তুই?”

” তুমি বলোনা আমার আর অনিমার মধ্যে অনেক সিমিলারিটিস্ আছে? তার মধ্যে কিন্তু এটাও একটা। ওও কিন্তু প্রথমে তোমাকে একদম ভয় পেতোনা। কিন্তু পরে এভাবে যমের মত ভয় পেতে শুরু করল কেন বলোতো? কী করেছিলে ওর সাথে?”

রিক বিরক্ত হয়ে বলল,

” কিছুই করিনি। জানি অদ্ভুত শোনাচ্ছে, কিন্তু এটাই সত্যি।”

” বাদ দাও। আদিব ভাইর বিয়েতে যাবে?”

” ফ্রি হলে, আর গেলে তোকে নিয়েই যাবো। এবার যা।”

” যাবোতো খেয়ে নাও আগে।”

রিক রাগী চোখে তাকাল স্নিগ্ধার দিকে। স্নিগ্ধা হেসে বলল,

” কী হল আমি খাইয়ে দেব?”

রিক বিরক্তি নিয়ে স্নিগ্ধার হাত থেকে প্লেট নিয়ে নিল। এরপর নিজেই খেতে শুরু করল। স্নিগ্ধা ভেংচি কেটে বলল,

” নীলপরী বললে তো নাচতে নাচতে ওর হাতে খেতে।”

রিক চোখ ছোট ছোট করে তাকাতেই স্নিগ্ধা প্রায় দৌড়ে ওখান থেকে চলে গেল। ওখানে এখন থাকা মানেই সিংহের মুখে হাত ঢোকানো। স্নিগ্ধার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে যে রিক হেসেছে সেটা হয়তো রিক নিজেও জানেনা।

____________

অনেক খাটাখাটনির পর বিকেলের শপিং এর কাজ শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে এরেঞ্জ করে কেনাকাটা করতে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে এদের। তবে তারমাঝেও বেশ মজার মজার ঘটনা ঘটেছে। আরমান সারাক্ষণ অনিমার পেছনেই চিপকে ছিল। অনিমা বারবার বারণ করার পরেও জোর করেই একটা পেন্ডেন্ট গিফট করেছে ওকে। এমনকি নিজের হাতে পরিয়েও দিয়েছে। অনিমা অনেক চেষ্টা করেও বারণ করতে পারেনি। পরিস্থিতিটাই এমন হয়ে ছিল। ঐ মুহূর্তে ভীত চোখে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে ছিল ও। দুবার আরমান অনিমার গায়ে হাতও দিয়েছিল। যদিও সেটা পজিটিভলি, নরমালি কথার ছলে বা আড্ডার ছলে যেভাবে দেয় সেভাবেই। সেরকম কিছু ভেবে দেয়নি। কিন্তু সেটা আদ্রিয়ানের মোটেও সহ্য হয়নি। ও না পেরেছে সবার সামনে কিছু বলতে আর না সহ্য করতে পেরেছে। আদিব, আশিস, নাহিদ, জাবিন, রাইমা ওরা সবাই বেশ মজা নিয়েছে ব্যাপারটায়।

আদ্রিয়ান পরশু থেকে এমনিতেই হালকা রেগে ছিল। শপিং মল থেকে বেড়োনোর পর থেকে ফুলে বোম হয়ে রয়েছে। কারো সাথেই কথা বলেনি তেমনভাবে। অনিমার সাথেতো না-ই। বাড়ি ফিরে রেস্ট আবার সবাই কাজে লেগে পরেছে। আদ্রিয়ান এখনও বম হয়ে আছে। আদিব ওরাও মাঝে মাঝে গিয়ে একটু খোঁচা মেরে আসছে। তবে এই দুদিন ধরেই আদিবের কাজিন সিস্টারদের দু একজন আদ্রিয়ানের ওপর একটু বেশিই ঢলে পরে। মুখে ‘ভাইয়া’ ‘ভাইয়া’ বললেও আদ্রিয়ানকে দেখলেই যে ওদের মন ‘সাইয়া’ ‘সাইয়া’ করে সেটা অনিমা বেশ বুঝতে পারে। বিশেষ করে আদিবের খালাতো বোনটা। আদ্রিয়ানকে সাহায্য করার নাম করে শুধু গা ঘেষছে। আদ্রিয়ানও আজ ঐ মেয়ের সাথে একটু বেশিই মিশছে। অনিমার রাগ হচ্ছে ঠিকই এটাও বুঝতে পারছে যে আদ্রিয়ানেরও এরচেয়ে বেশি রাগ হয়েছে নিশ্চয়ই ঐ আরমানের কজে। কিন্তু ঐ বা কী করবে? অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবটা দেখা ছাড়া আপাতত কোন উপায় নেই। জাবিন এসে অনিমার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

” ভাবি বি রেডি। বোম যেভাবে আস্তে আস্তে যত্ন নিয়ে বিশাল আকাড়ে তৈরী হচ্ছে, যেকোন সময় ফাটবে কিন্তু। সাবধান হ্যাঁ?”

অনিমা অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল জাবিনের দিকে। জাবিন মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। রাইমার দিকে তাকাতে রাইমাও ইশারায় বলল ‘তৈরী থাকো বাচ্চা, খুব শীঘ্রই তোমার ওপর দিয়ে সুনামি যাবে’। অনিমা অসহায়ভাবে একটা শুকনো ঢোক গিলল।

কাজকর্ম শেষ করে ড্রয়িং রুমে সবাই একসাথেই একটু বসেছে। দরকারি কথাও হচ্ছে এরমধ্যে। আদ্রিয়ান এসে বসে জগ থেকে গ্লাসে পানি নিল। অনিমা শুধু আড়চোখে দেখছে আদ্রিয়ানকে আর ভাবছে যে আক্রমণটা কখন কোনদিক থেকে হতে পারে। কথার মাঝেই দাদি বলে উঠল,

” এইযে আদিব, আদ্রিয়ানকে দেখে শেখ যে বোনের খেয়াল কীকরে রাখতে হয়। সরাটাদিন অনিমাকে কেমন চোখে চোখে রাখে। বাপ মা এখানে নেই তো তাই। তুইতো তোর বোনগুলোর দিকে তাকাসও না। ভাইদের এমনই হতে হয় বুঝলি? আর অনিমাও কী সুন্দর আদ্রিয়ানের কথা মেনে চলে। কী সুন্দর সম্পর্ক ভাই বোনের।”

আদ্রিয়ান বেচারা জল খাচ্ছিল কিন্তু দাদির কথা বিষম খেয়ে গেল। আদিব উঠে আদ্রিয়ানের পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,

” হ্যাঁ হ্যাঁ একদম। একেবারে সচ্ছ পবিত্র ভাইবোনের সম্পর্ক ওদের। পুরো বাঁধাই করানোর মতো।”

আদ্রিয়ানের কাশি থামছেইনা। অনিমা এখন পারছেনা মাটি ফাঁক করে তারমধ্যে ঢুকে যেতে। নাহিদ বলল,

” বাঁধাই মানে। ঐতিহাসিক ভাইবোনের সম্পর্ক এটা। বাঙালি.. না না শুধু বাঙালি না মানবজাতি যুগ যুগ ধরে মনে রাখবে ভাই বোনের এই অমর সম্পর্ক।”

আদ্রিয়ান রাগী চোখে তাকাল ওদের দিকে। জাবিন আর পারল না,সবার সামনেই ঘর কাঁপিয়ে হেসে দিল। অভ্র ঠোঁট চেপে অনেক কষ্টে হাসি আটাচ্ছে। যারা ব্যাপারটা জানে সবার অবস্থা একই। জাবিনের হাসির কারণটা বাকিরা বুঝলনা। রাইমা অনেক কষ্টে সবাইকে সামলালো।

সবাই যে যার যার মত শুতে চলে যাচ্ছে। আদিব, আশিস, নাহিদ, অভ্র ওরা এখনও এই বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করছে। আদ্রিয়ানের ধমকিতে সব থেমে একে একে শুতে গেল। আদ্রিয়ানও ওপরে যেতে নেবে এমন সময় আরমানের মা ডাকল ওকে। আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে বলল,

” কিছু বলবেন?”

আরমানের মা মুখে হাসি ফুটিয়ে ইতস্তত করে বলল,

” কীকরে যে বলি। আসলে..”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে ফেলল। খানিকক্ষণ ভনিতা করে আরমানের মা বললেন,

” আসলে আরমানের তো বিয়ের বয়স হয়েছে এতো ভালো চাকরীও আছে। তুমি অনিমার কাজিন ভাই হও তাই তোমাকেই বলছি। আরমানের অনিমাকে পছন্দ হয়েছে। আমাদেরও বেশ পছন্দ হয়েছে ওকে। তাই বলছিলাম ওদের দুজনের বিয়েটা নিয়ে যদি তোমার ফুপির সাথে একটু কথা বলতে আরকি। বুঝতেই পারছ।”

#চলবে…

[ যত যাই বলেন। লেখিকার কিন্তু রিকের প্রতি একটা এক্সট্রা উইকনেস আছে। ওয়ান কাইন্ড অফ ক্রাশও বলতে পারেন😑]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here