বর্ষণের সেই রাতে- ২ পর্ব ২৯+৩০

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

২৯.

আদ্রিয়ান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আরমানের মায়ের দিকে। ওর সামনে আজ ওরই ভালোবাসার মানুষের, আরও সহজ করে বললে হবু বউয়ের বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে? আর সেই প্রস্তাবটাও কি-না ওকেই দিচ্ছে। আদ্রিয়ান এখন হাসবে না-কি কাঁদবে বুঝে উঠতে পারছেনা। আরমানের মা হেসে বলল,

” তুমি বুঝতে পারছতো কী বলছি?”

ওনার কথায় আদ্রিয়ানের হুস এল। আদ্রিয়ান একটু গলা ঝেড়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

” আপনি অনিমার কথা বলছেন? মানে ঐ পিচ্চি মেয়েটা?”

” হ্যাঁ তোমার ফুপাতো বোন, অনিমা।”

আদ্রিয়ান একটু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

” বিয়েতো হবেনা। মানে ফুপা এতো তাড়াতাড়ি ওর বিয়ে দেবেনা। ওর এখনও পড়াশোনা শেষ হয়নি।”

আরমানের মা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললেন,

” ও এই ব্যাপার? সমস্যা কী? আমরা বিয়ের পরেও পড়াব। আমি কথা বলে নেব এই বিষয়ে।”

আদ্রিয়ানের মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে। দুনিয়াতে মেয়ের অভাব না-কি? ওর বউটাকেই পেল?তবুও একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,

” ওরতো এখনও বিয়ের বয়সই হয়নি। ও তো নাবালিকা। সবে সতেরো বছর হয়েছে।”

” কী? কিন্তু আমিতো জানি ও ওনার্স সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী। উনিশ বা বিশ তো হওয়ারই কথা বয়স।”

” আসলে অনেক ট্যালেন্টেড মেয়েতো! তাই আগে আগে ভর্তি করে দিয়েছে।”

” তাই বলে এতো আগে? কীভাবে সম্ভব? কিছুই তো মিলছেনা..যাই হোক এক বছরই তো কম। আমাদের কোন অাপত্তি নেই। তুমি তোমার ফুপি..ও ফুপির তো ফোন নেই চুরি হয়ে গেছে। আচ্ছা তোমার ফুপার নাম্বারটাই দাও। আমি কথা বলে নিচ্ছি।”

আদ্রিয়ান এবার মহা ঝামেলায় পরল। এই মহিলাতো পেছনই ছাড়ছেনা। আদ্রিয়ান মাথায় চট করে কিছু একটা এল। ও একটু ভেবে আরমানের মায়ের একটু কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

” আন্টি আসলে আপনাকে বলতে চাইনি আমি, আমাদের পারিবারিক ব্যাপারতো তাই। কিন্তু আপনি যখন এমন কিছু একটা ভেবেছেন তখন আমার জানানো উচিত। আর যাই হোক কাউকে ঠকানোতো যাবেনা তাইনা?”

আরমানের মা শোনার জন্যে উৎসাহি হয়ে একটু ঝুঁকে নিজেও আস্তে করে বললেন,

” কী এমন কথা?”

আদ্রিয়ান আরমানের মায়ের দিকে তাকিয়ে বাঁকা একটা হাসি দিল।

পরশু বিয়ে তাই আজ কাজের চাপটা অনেকটাই বেড়ে গেছে। সকাল থেকেই সবাই নানারকম কাছে ব্যস্ত। তবে অনিমা একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করছে সেটা হল আরমানের মা আজ আর ওকে সেভাবে দেখছে না। বরং ওর থেকে দূরে দূরেই থাকছে। মাঝেমাঝে যাও একটু তাকাচ্ছে তাও অদ্ভুতরকমভাবে। প্রথমে অবাক হলেও পরে অনিমা ভাবল যা খুশি করুন তাতে ওর কী? তবে আরমানও সকাল থেকে কেমন মুখ ভার করে আছে আর কিছুক্ষণ পরপরই অনিমার দিকে দেখছে। তবে আদ্রিয়ানের ব্যবহার আজ বেশ স্বাভাবিক। ও ভালোভাবেই সবার সাথে হেসে খেলে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু অনিমা জানে যতই স্বাভাবিক থাক ওর ওপর দিয়ে একটা ঝড় নিশ্চয়ই যাবে। ব্যস্ততার মাঝে সারাটাদিন কাটল ওদের আজ। দুপুরে খাওয়া শেষ করে সবাই একটু রিল্যাক্স করছে। অনিমা, জাবিন, রাইমা মিলে গল্প করছিল আর হাটছিল। হঠাৎ দাদি রাইমাকে ডাকল কেন জেনো। জাবিন ফোনে ব্যস্ত তাই অনিমা হাটছে আর বাগানটা দেখছে। বাগানটা বেশ সুন্দর। হঠাৎ ওর সামনে এসে আরমান দাঁড়াল। অনিমা অনেকটা চমকে গেল, পরে নিজেকে সামলে বলল,

” কিছু বলবেন?”

” অনি দেখ কাল থেকে মা কীসব বলছে। বলছে তোমার সাথে আমার বিয়ে হবেনা। উনি নাকি রাজি নন। অথচ ওনারই তোমাকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ ছিল। এরকম কেন করছে বুঝতে পারছিনা। আমিতো ঠিক করে নিয়েছি বিয়ে করলে তোমাকেই করব। কিন্তু হঠাৎ করেই আম্মু বেঁকে বসল। তুমি কী বুঝতে পারছ আমার সমস্যাটা?”

অনিমা বোকার মত না বোধক মাথা নাড়ল। ও আসলেই বোঝেনি কিছু। কী বলছে এই ছেলে? আরমান অনিমান অনিমার দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে বলল,

” আরে ইয়ার পছন্দ করি আমি তোমাকে। আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ। মা মানুক আর না মানুক দরকারে আমরা পালিয়ে বিয়ে করব। শুধু তুমি রাজি হয়ে যাও প্লিজ।”

অনিমাতো এবার সত্যিই বোকা বনে গেছে। কী বলছে এই ছেলে? অনিমা ইতস্তত করে বলল,

” দেখুন আমি..”

আরমান অনিমার দু বাহুর ওপর হাত রেখে বলল,

” প্লিজ রাজি হয়ে যাও। দরকারে আমরা আজই লুকিয়ে বিয়ে করব। তুমি রাজি তো?”

অনিমা দ্রুত নিজেকে ছাড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর ভাবছে এর এই পছন্দের চক্করে অনিমার কপালে কেন শনি নিয়ে আসছে? ঐ পাগলটা কোনভাবে দেখে ফেললে আরমানের কপালে কী আছে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা। ওর যা খুশি হোক তাতে অনিমার কিছু যায় আসেনা, ওরতো নিজের কথা ভেবে ভয় হচ্ছে। অনিমা কাঁপা গলায় কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেউ বলে উঠল,

” অনি তোমাকে দাদি ডাকছে।”

অনিমা চমকে তাকাল। আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ানের চোখে যে মারাত্মক রাগ আছে সেটা অনিমা ভালোই বুঝতে পারছে। অনিমা যেতে নিলেই আরমান বলে উঠল,

” আদ্রিয়ান, তুমি তোমার বোনকে একটু বোঝাও প্লিজ আর আমার বাবা মাকেও। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই এতে সমস্যা কী তুমিই বল? আমি কী ছেলে হিসেবে খারাপ? আর আমারতো মনে হয় অনিমার সাথে আমাকে বেশ মানায়।”

অনিমা মনে মনে যত দোয়া জানে সব পড়ছে। আজ ওকে কেউ বাঁচাতে পারবেনা। আর মনে মনে বলছে, ‘আরে ভাই থাম, দয়া করে থাম। কার সামনে কী বলছিস?’ আদ্রিয়ান আরমানের কথায় পাত্তা না দিয়ে অনিমার উদ্দেশ্য ঠান্ডা গলায় বলল,

” কী হল যাও?”

অনিমা একটা ঢোক গিলে মাথা নিচু করে চলে গেল। আদ্রিয়ান একপলক আরমানের দিকে তাকিয়ে ওকে আর কিছু বলতে না দিয়ে নিজেও চলে গেল।

_____________

রাত সাড়ে দশটা বাজে। জাবিন, রাইমা বাকি মেয়েরা সবাই গল্প করছে। কিন্তু অনিমার ক্লান্ত লাগছে তাই ও ওর রুমে চলে এলো। রুমটাতে ও আর জাবিন থাকে। কিন্তু জাবিন আজ অনেক দেরীতে আসবে, সবার সাথে গল্প করবে তাই। অনিমা রুমে এসে বেডে বসে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে না ফেলতেই দরজা লাগানোর আওয়াজে চমকে উঠল। তাকিয়ে দেখে আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। মুখে একটা শয়তানী হাসি ঝুলে আছে ঠিকই কিন্তু ভেতর ভেতর যে কী ভয়াবহ পরিমাণ রেগে আছে কেউ জানেনা। আদ্রিয়ানকে দেখে অনিমা ভয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। এমনিতেই দাঁড়িয়ে গেল ও। আড্ডা আর কাজের জন্যে কিছুক্ষণের জন্যে ভুলেই গেছিল সেসব কথা। মনে থাকলে কখনই এভাবে একা একা থাকত না। ও কাঁপাকাঁপা গলায় বলল,

” আ্ আপনি এখানে কেন? আর দ্ দরজা বন্ধ করলেন কেন?”

আদ্রিয়ান মুখে সেই ডেবিল টাইপ হাসি ধরে রেখেই বলল,

” আদর করার সময় দরজা জানালা সব বন্ধ করে নিতে হয় জানপাখি। লোকে দেখে ফেললে পরে তুমিই লজ্জা পাবে।”

” ম্ মানে?”

” ওয়েট বেবী, ওয়েট। এতো তাড়া কীসের? সবটা বোঝাচ্ছি ধীরে ধীরে।”

আদ্রিয়ান পকেটে হাত ঢুকিয়ে সিটি বাজাতে বাজাতে বিছিনায় বসে অনিমাকে ভালোভাবে স্কান করে নিয়ে বলল,

” হুম.. রূপ ছিটকে ছিটকে পরছে। ছেলের পছন্দ হয়, ছেলের মায়ের পছন্দ হয়। সোজা বিয়ে করে ঘরে তুলতে চায়। বাহ!”

অনিমা একটু অবাক হল ছেলের মায়েরও পছন্দ মানে? আদ্রিয়ান মুখে হাসি রেখেই বলল,

” তোমার জন্যে আমার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে আরমানের মা, আরমানের জন্যে। তুমি কী বল? হ্যাঁ বলে দেব? ছেলের এতো ভালো চাকরি, দেখতেও ভালো। কেমন জেনো? হ্যাঁ বলিউড স্টার। এরপর আবার দুজনকে নাকি পাশাপাশি খুব ভালো মানায়। কি বল সম্বন্ধ পাকা করে ফেলি? এতো ভালো প্রস্তাব।”

অনিমা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

” আচ্ছা এসব ছাড়ো। আমিতো এখানে প্রেম করতে এসছি তোমার সাথে, প্রেম করার সময় ওসব আউটসাইডারদের কথা না ভাবাই ভালো।”

কথাটা বলে আদ্রিয়ান অনিমার দিকে এগোতে লাগল। অনিমা একটা শুকনো ঢোক গিলে পেছাচ্ছে বেশ বুঝতে পারছে যে ওর কপালে আজ খুব দুঃখ আছে। সব দোষ ঐ মা আর ছেলের। নিজেরা উল্টোপাল্টা কাজ করে ওকে ফাঁসিয়ে দিল। আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে বলল,

” তো বেবী, শুরু করি?”

অনিমা দ্রুত ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে নিলে অাদ্রিয়ান ওর হাত টেনে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এল। ওর কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে ধরল। আদ্রিয়ান কোমর এতো জোরে চেপে ধরেছে যে অনিমা প্রচন্ড ব্যাথা পাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে এতক্ষণ বলা কথাগুলো শুনতে ফানি লাগলেও আদ্রিয়ান প্রচন্ড রেগেই বলেছে। আর এখনতো সীমাহীন রেগে আছে। ব্যাথায় কাঁদোকাঁদো মুখ করে আদ্রিয়ানের দিকে তাকাল অনিমা। নিজেকে ছাড়াতে চাইছে কিন্তু আদ্রিয়ানের শক্তির কাছে ওর শক্তি কিছুই না। আদ্রিয়ান আরেকটু চেপে ধরে বলল,

” এখন যেভাবে ছাড়ানোর চেষ্টা করছ সেভাবে আরমান যতবার ছুঁয়েছে ততবার ছাড়ানোর চেষ্টা করোনি কেন? তখন এতো জোর ছিল কোথায়? আর আমি ছুঁলেই শুধু অস্বস্তি হয় তাইনা?”

এরপর ঘাড় বাঁকা করে অনিমার গলার দিকে তাকিয়ে দেখল সেই পেন্ডেন্টটা এখনও পরে আছে অনিমা। আদ্রিয়ান ঠোঁটে আবার সেরকম হাসি ঝুলিয়ে বলল,

” বাহ! এখনও এটা খোলনি? এতো মায়া পরে গেছে?”

অনিমার এখন নিজেরই নিজের মাথা ফাটাতে ইচ্ছে করছে। এই পেন্ডেন্ট এর কথাতো ভুলেই গেছিল ও, খুলবে কীকরে? এসব ভাবনার মাঝেই জোরে ব্যথা পেয়ে ‘আহ’ করে উঠল অনিমা। হ্যাঁ আদ্রিয়ান পেন্ডেন্টটা একটানে খুলে নিয়েছে। অনেকটা ব্যথা পেয়েছে অনিমা। ও এবার কেঁদেই দিল। আদ্রিয়ান সাথেসাথেই ওকে দেয়ালের সাথে আটকে ধরে বলল,

” একদম কাঁদবেনা। উল্টোপাল্টা কাজ করার সময় মনে থাকেনা? অন্যকেউ তোমাকে ছোঁয়ার সাহস পাবে কেন? কেন ছোঁবে তোমাকে? তোমার গলায় এসব কেন পরিয়ে দেবে? হ্যাঁ?”

অনিমা মাথা নিচু করে কাঁদছে। দুই বাহু একেবারে শক্ত করে ধরে চেপে রেখেছে। তারওপর ঘাড়ের দিকটা জ্বলছে ওর। মনে মনে ইচ্ছেমতো আদ্রিয়ানকে বকছে ও। এরকম করে কেউ? এমন পাগল কেন লোকটা? আদ্রিয়ান খেয়াল করল অনিমার ঘাড়ের ওদিকটা লাল হয়ে গেছে। আদ্রিয়ান অনিমার গলায় হালকা আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে ঝুঁকে ঠোঁট ছোঁয়ালো। হালকা কেঁপে উঠল অনিমা। মাথা তুলে অনিমার চোখ মুছে দিয়ে আদ্রিয়ান নরম স্বরে বলল,

” খুব লেগেছে না? এমন কাজ করো কেন হুম? তুমি জানো রেগে গেলে আমার মাথা নষ্ট হয়ে যায়।”

অনিমার রাগ লাগছে এবার ওর কোমর, হাত, গলা সব ব্যাথা বানিয়ে দিয়ে ন্যাকামো করছে। অনিমা আদ্রিয়ানকে ঠেলে সরিয়ে বলল,

” আমাকে অন্যকেউ ছুঁলে আপনার কী হ্যাঁ? আপনিও তো ছুঁলেন আমাকে সেইবেলা? আর তাছাড়াও যখন ঐ স্মৃতি যখন আপনার হাত জড়িয়ে রেস্টুরেন্টে বসে থাকে, বিয়ে বাড়িতে মেয়েগুলো আপনার গায়ে ঢলে পরে তখন কিছু না? আমায় কেউ ছুঁলেই দোষ?”

আদ্রিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” স্মৃতি আমার বন্ধু, আর ঐ মেয়েরা আদিবের বোন মানে আমারও বোন। আরমান তোমার কে হয় শুনি?”

অনিমা ভয় আর রাগের মিশ্র অনুভূতিতে কী বলছে নিজেই জানেনা তাই বলে ফেলল,

” হয়না তো কী হয়েছে হ্যাঁ? বানিয়ে নেব। এমনিতেও তো বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেই?”

আদ্রিয়ান অনিমাকে আবারও নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলল,

” আরমানের বউ হওয়ার খুব শখ?”

” হবে না কেন? ছেলে হিসেবেতো ঠিকঠাকই আছে। আর যাই হোক আপনার মত এভাবে টর্চার করবেনা।”

আদ্রিয়ান অনিমাকে কপালের চুলগুলো সরাতে সরাতে বলল,

” আজ বলেছ বলেছ। কিন্তু ভুল করেও যদি আরেকবার মুখ দিয়ে এই কথা বেড় হয় একদম খুন করে ফেলব।”

অনিমা ভয় পেয়ে একটা ঢোক গিলল। আর কিছু বলল না। কারণ একে এখন আর ক্ষেপানো ঠিক হবেনা। না জানি কী করে বসে।

” কী মনে থাকবে?”

আদ্রিয়ানের থমকিতে অনিমা দ্রুত হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান মুচকি অনিমার কপালে চুমু দিয়ে কানের কাছে মুখ এনে বলল,

” গুড নাইট জানপাখি। হ্যাভ আ সুইট ড্রীম।”

বলে আদ্রিয়ান দরজা খুলে চলে এলো। অনিমা দ্রুত এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিল। তখনই জাবিন এসে অবাক হয়ে দরজার দিকে একবার তাকিয়ে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” ভাইয়া হঠাৎ এই রুমে কেন এসছিল?”

অনিমা মুখ মুছে ভীত কন্ঠে বলল,

” ডোস দিতে। এদিকের ডোস দেওয়া শেষ। ঐদিকে এবার কী করে খোদা জানে। আল্লাহ দেখ ছেলেটা যাতে প্রাণে বেঁচে যায়।”

জাবিন হাত উঠিয়ে বলল,

” আমিন।”

অনিমা তাকাতেই জাবিন ফিক করে হেসে দিল। কিন্তু অনিমারও হাসি পাচ্ছে এখন। ঐ ছেলের কপালে শিওর দুর্ভোগ আছে। কিন্তু মায়াও হচ্ছে বেচারার জন্যে।

সকালে চেঁচামেচি শুনে অনিমা আর জাবিন দুজনেরই ঘুম ভাঙল। এতো চেঁচামেচি শুনে ওরা উঠে দ্রুত বাইরে এলো। খেয়াল করে বুঝল আওয়াজ আরমানের রুম থেকেই আসছে। অনিমা আর জাবিন তাড়াতাড়ি সেই রুমে ঢুকে দুজনেই অবাক হয়ে গেল। অনিমা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে।
#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৩০.

অনিমা অসহায় দৃষ্টিতে জাবিনের দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকাল। আরমান ওয়াসরুমের ফ্লোরে পরে আছে, মনে হচ্ছে প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছে। আদিব আর আরেকটা ছেলে মিলে ওকে তোলার চেষ্টা করছে। আরমান সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে যাচ্ছিল। শুধু হাতমুখ ধোবে তাই দরজা লক করেনি। কিন্তু একটু এগোতেই স্লিপ করে পরে গেছে। আর পরেছেও ভুলভাবে যার ফলে অনেকটা বেশিই ব্যাথা পেয়েছে। আরমানের চিৎকারেই সবাই ছুটে এসছে। ওকে তুলে আনতে আদিব একটা ছেলেকে নিয়ে গেছে। আরমানের মা সহ সবাই মোটামুটি অস্হির হয়ে গেছে আরমানের এরকম অবস্থায়। আরমান ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। এমনিতেই রেগে থাকলেও অনিমার এবার একটু মায়া হচ্ছে বেচারার ওপর। এটাও বুঝতে পারছে যে আদ্রিয়ানই কিছু একটা করেছে। ওরা সবাই ধরাধরি করে আরমানকে খাটে বসাতে চাইল কিন্তু আরমান ব্যাথায় চিৎকার করছে। ওরা বুঝলো যে আরমানের হয়ত কোথাও ফ্রাকচার হয়েছে বা কোন সমস্যা হয়েছে তাই কাছের হাসপাতালে নিয়ে গেল ওকে। আরমানের সাথে আরমানের বাবা আর আরও আদিবের আরও দুজন কাজিন গেছে। কিছুক্ষণ পর আরমানের মাও পার্স নিয়ে ছুটলেন। তাই পেছন পেছন আদিবও গেছে। আরমানকে নিয়ে যাওয়ার পর সবাই কিছুক্ষণ আপসোস করে কাজে লেগে পরল। কাল বিয়ে তাই এখন বসে থাকলে চলবে না। পরে না হয় আবার খবর নিয়ে নেবে। অনিমা ভাবছে এতো কিছু হয়ে গেল অথচ আদ্রিয়ান কেন এলোনা? নিচে সবাই মিলে বসে তরকারি, মসলা, পেয়াজ সব কাটছে রান্না জন্যে। অনিমা, জাবিন, রাইমা ওরা সবাই সোফায় বসে আছে। অনিমা দাঁত দিয়ে নখ কাটছে আর আশেপাশে তাকিয়ে আদ্রিয়ানকে খুঁজছে। রাইমা বলল,

” ইশ! কী হয়ে গেল না? আমার দুদিন ধরেই কেমন মনে হচ্ছিল একটা কিছু হবেই। দেখ? হয়ে গেল!”

জাবিন একটু বিরক্তি নিয়ে বলল,

” দূর তেমন কিছুই তো হলোনা। আমিতো ভেবেছিলাম আরও মারাত্মক কোন অবস্থা হবে। কিন্তু হলো কই?”

অনিমা অবাক হয়ে বলল,

” এটা তোমার কম হচ্ছে?”

” না, তা না কিন্তু হ্যাঁ এক্সপেক্টেশন আরও বেশিই ছিল। ভেবেছিলাম তিন চার মাসের মধ্যে উঠতে পারবেনা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।”

অনিমা অবাক হতে গিয়েও হলোনা, শুধু একটা হতাশ নিশ্বাস ত্যাগ করল। যেমন ভাই আর তেমন বোনই তো হবে। এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই এমন সময় আদ্রিয়ান চোখ ডলতে ডলতে বেড়িয়ে এলো, চারপাশে চোখ বুলিয়ে লম্বা হাই তুলে বলল,

” সব এতো চুপচাপ কেন? কিছু কী হয়েছে?”

আদিবের মা আফসোসের সুরে বললেন,

” আর বলিস না আদ্রি। আরমানটা সকাল সকাল ওয়াসরুম থেকে পরে ভীষণ ব্যাথা পেয়েছে। হাসপাতালেও নিতে হল।”

আদ্রিয়ান অবাক চেহারা করে বলল,

” কী বলছ? আমাকে একবার ডাকবে তো? এখন ভালো আছে তো? মানে বেশি কিছুই হয়নি তো?”

” পায়ে কী যেন হয়েছে বলল। আর হাতের কনুইয়ের হাড়ে ফ্রাকচার হয়ে গেছে।”

” ওহ, সো স্যাড। আমিতো কিছু টেরই পাইনি। অনেক রাত করে ঘুমিয়েছি তো।”

কথাটা বলে আদ্রিয়ান ওখান থেকে সরে এসে সোফায় বসল। অনিমা চোখ ছোট ছোট করে দেখছে আদ্রিয়ানকে। ও খুব ভালো করেই জানে যে আদ্রিয়ান সবটাই জানে। কিন্তু শেয়ানাগিরী করে সবার সামনে ভালো হচ্ছে। আশিস অনেকগুলো চেয়ার একত্র করে দুহাতে ধরে আনছিল। আদ্রিয়ানের কথা শুনে আশিস বলল,

” হ্যাঁ সেই! এতো খাটাখাটনির পর ঘুম তো বেশি আসবেই।”

বলতে বলতে চেয়ার নিয়ে আশিস চলে গেল। তখন নাহিদ আর অভ্র দুজনেই এল। অভ্র আর জাবিনের চোখাচোখি হল কয়েক সেকেন্ডের জন্যে। অভ্র চোখ সরিয়ে বসে পরল। নাহিদ এসে আদ্রিয়ানের বসা সোফাটার হ্যান্ডেলের ওপর বসে আদ্রিয়ানের কাঁধে হাত রেখে বলল,

” তো ভাই এতো পরিশ্রমের পর ঘুম ভালো হয়েছে তো।”

আদ্রিয়ান হেসে ঘাড়ে হাত দিয়ে একটু আড়মোড়া ভেঙ্গে বলল,

” সলিড হয়েছে!”

কথাটা বলে অনিমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু একটা হাসি দিল আদ্রিয়ান। অনিমা ভ্রু কুচকে ফেলল। এই ছেলেটা যে কোন লেভেলের পাগল সেটা আস্তে আস্তে বুঝতে পারছে অনিমা এখন। নাহিদ বলল,

” হ্যাঁ সলিড তো হবেই তাইনা। মনে জ্বালাই বড় জ্বালা। সেটা মিটে গেলেই সব শান্তি।”

জাবিন একটু চিন্তা করে বলল,

” কিন্তু ভাইয়া! আই হ্যাভ এ খুব গভীর প্রশ্ন। তুই ওনাকে ওয়াশরুমে ফেললি কীকরে?”

আদ্রিয়ান একটু হাসল। নাহিদ বলল,

” আমি বলছি, আমি বলছি। ইনি একা করেননি। আমাদের সবাইকে ক্রাইম পার্টনার বানিয়ে ছেড়েছে। বুঝলে না?”

জাবিন মাথা নাড়ল। নাহিদ হেসে বলল,

” আদ্রিয়ান অারমানের ওয়াশরুমের টাইলসে সুন্দর করে সাবান আর ওয়েল মেখে একেবারে পিচ্ছিল করে দিয়ে এসছিল। আমরাও হেল্প করেছি।”

রাইমা বলল,

” কিন্তু তোমরা ঢুকলে কীকরে?

অভ্র বলল,

” আসলে ব্যালকনির দরজা খোলা ছিল। আমি আর আশিস ভাই মই ধরেছি, স্যার আর নাহিদ ভাই ভেতরে গেছিল, আর আদিব ভাই পাহারা দিয়েছিল।”

জাবিন হেসে দিয়ে দিয়ে বলল,

” ওয়াও! কিন্তু, পরে তো কেউ কিছু পায়নি বাথরুমে?”

” পাবে কীকরে? সবাই যখন আরমানকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল তখন আমি আর নাহিদ ভাই ক্লিন করে দিয়েছি। এইজন্যই তো ওকে তুলতে শুধুই আদিব আর আরেকটা ছেলেকে নিয়েছিল। ছেলেটাও সব জানত। পা টিপে টিপে গেছিল যাতে ওখানে পা পরলেও স্লিপ না করে।”

” বাহ! তালিয়া, তালিয়া।”

নাহিদ আর অভ্র কলার ঠিক করে একটু ভাব নিল। অনিমা হতাশ দৃষ্টিতে তাকাল এদের দিকে। সত্যিই সবগুলোরই তার ছেড়া। কিন্তু আদ্রিয়ানের ভয়ে আর কিছু বলল না। অভ্র নাহিদের দিকে তাকিয়ে বলল,

” তো নাহিদ ভাই! আপনার কী খবর? মানে আমাদের ভাবী কোথায়? আমাদেরও তো দেখাবেন না-কি?”

আদ্রিয়ান বলল,

” হ্যাঁ একদমই তাই! তনয়ার কথা তো ভুলেই গেছিলাম কবে আসছে দেশে?”

নাহিদ মাথা চুলকে বলল,

” কেন এক্সট্রা প্যারা দিচ্ছিস ভাই? এখন দেখ কত স্বাধীন আছি। মহারানি এলেই আমায় ইন্ডিপেন্ডেন্সির রফাদফা করে দেবে। ওসব ছাড় এটা বল যে ভাবীকে সত্যি সত্যি ভাবী কবে বানাচ্ছিস? আই মিন এখনতো লাইসেন্স ছাড়াই ভাবী ডাকতে হচ্ছে। এবারতো বল লাইসেন্স কবে করছিস?”

আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে একটুখানি হেসে বলল,

” সেটাতো বলেই দিয়েছি। সয়ম্বরা যেদিন বরমালা পরাবে।”

আদ্রিয়ান কথাটা শুনে অনিমা হালকা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। আদ্রিয়ানের কথা শুনে রাইমা, জাবিন, নাহিদ অভ্র একসাথে বলে উঠল,

” ওগো সয়ম্বরা, এবারতো বরমালা পরিয়ে দাও।”

অনিমা আর ওখানে বসে থাকতে পারল না। লজ্জা পেয়ে ওখান থেকে উঠে চলে গেল। ও এমনিতেই এবিষয়ে ভীষণ লাজুক। তারওপর ওরা সবাই বারবার ইচ্ছে করেই ওকে এভাবে অস্বস্তিতে ফেলে।

____________

রঞ্জিত চৌধুরী আর কবির শেখ কেবিনে বসে কাজ করছিলেন তখন ওখানে রিক এলো, আসলে কালকে আদিবের বিয়েতে ও যাবে সেটা বলার জন্যেই এসছে। রিক নক করে বলল,

” ড্যাড আসব?”

রঞ্জিত চৌধুরী না তাকিয়েই বললেন,

” হ্যাঁ এসো!”

রিক ভেতরে এসে বলল,

” ড্যাড আমি..”

রিকের কথা শেষ হওয়ার আগেই রঞ্জিত চৌধুরী মাথা উঠিয়ে বললেন,

” কালকে তোমাকে দক্ষিণ গ্রামের সাইডের গোডাউনটায় যেতে হবে। আর ওখানকার লোকেদের সাথে দেখাও করবে। ইলেকশন সামনে তাই একটু সিনসিয়ার হও।”

” কিন্তু বাবা আমি কাল আদিবের বিয়েতে যাবো ভাবছিলাম।”

” আদ্রিয়ানের বন্ধু আদিব?”

” হ্যাঁ।”

” ও আদ্রিয়ানের বন্ধু! তোমার বন্ধুতো নয়, তাই ওখানে যাওয়ার তেমন কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু গ্রামের ওখানে যেতে হবে।”

” কিন্তু..”

” আমার শর্ত ভুলে গেছ?”

রিক রঞ্জিত চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,

” আর কিছু?”

” না, এখন যেতে পারো।”

রিক হনহনে পায়ে বেড়িয়ে গেল। কবির শেখ মুখ দিয়ে ‘চাহ’ টাইপ শব্দ করে উঠে গেলেন রিকের পেছন পেছন। এরপর রিককে বোঝালেন যে রঞ্জিত চৌধুরী যেটা বলছে আপাতত সেটা করাই ঠিক হবে। কিছু যুক্তি দিয়েও দেখিয়ে রিককে বোঝাতে সক্ষম হলেন। রিক প্রথমে আদ্রিয়াকে ফোন করে বলল যে ও যাবেনা। আদ্রিয়ান তেমন রিঅ্যাক্ট করে নি। শুধু বলেছে, ‘আসলে ভালো লাগত, বাট ঠিকাছে।’ তবে প্রমিস করিয়ে নিয়েছে যে খুব শীঘ্রই ওর এখানকার বাড়িতে আসতে হবে। রিকও প্রমিস করেছে তাড়াতাড়ি যাবে। এরপর স্নিগ্ধাকে ফোন করে জানিয়েছে ও যাবেনা তাই কোন প্রস্তুতির দরকার নেই। স্নিগ্ধা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে শুধু। ছোটবেলা থেকেই সবসময় সব আনন্দ, উৎসব, খেলাধুলা, বন্ধুবান্ধব থেকে দূরেই রাখত রিকের বাবা ওকে। রিক না শৈশবের অজ্ঞানতার আনন্দ উপভোগ করতে পেরেছে, না কৈশোরের উচ্ছলতা উপভোগ করতে পেরেছে। তাই হয়তো যৌবনে ও এতোটা উগ্র আর বদমেজাজি।

____________

আরমানকে দুপুরের পরে নিয়ে আসা হয়েছে বাড়িতে। বেচারা এখনও হাটতে পারছেনা। হাতে ব্যান্ডেজও আছে। ওর মাথা থেকে আপাতত অনিমার চিন্তা সরে গেছে। সে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। ওকে রুমে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে। সবাই গিয়েই দেখে এসছে ওকে। অনিমাও গিয়ে একবার দেখে এসছে। আরমানের অবস্থা দেখে একটু মায়া হচ্ছিলো ওর কিন্তু বেশি মায়া দেখাতে যায়নি। তাহলে ছেলেটা যেটুকু সুস্থ আছে পরে তাও আর থাকবে না। সারাদিনের কাজে আদ্রিয়ানও ব্যস্ত তাই অনিমার সাথে তেমন কথা বা দেখা হয়নি।

সন্ধ্যার আগ দিয়ে তীব্র, স্নেহা আর অরুমিতাও এলো। আসলে ওরা কালকে আসতে চেয়েছিল কিন্তু আদিবের জোড়াজুড়িতে আজকেই আসতে হলো। অনিমা ওদেরকে পেয়ে আরও খুশি হয়ে গেছে। যদিও জাবিন রাইমা ওদের সাথেও ও ফ্রি কিন্তু ওদের সাথে অনিমা একটু বেশিই এটাচড। ওরা বসে আড্ডা দিচ্ছে তার মাঝে স্নেহা বলল,

” কতকিছু মিস করলাম ইয়ার। আমিতো দুদিন আগেই আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এই গবেটটার জন্যে পারিনি।”

তীব্র হালকা ধমকে বলল,

” চুপ কর। তোর কোন কালের আত্মীয়র বাড়ি এটা? একদিন আগে এসছি এটাই অনেক। গাধা মেয়ে একটা।”

” আমি গাধা?”

” গাধাই তো?”

” তাহলে এই গাধার সাথে প্রেম করিস কেন শুনি?”

” ফেঁসে গেছি তাই!”

স্নেহা রেগে বলল,

” আচ্ছা তাই? ফাইন! দেন ব্রেকআপ।”

তীব্রও বিরক্তি নিয়ে বলল,

” হ্যাঁ ব্রেকআপ।”

অনিমা আর অরুমিতা একটুও বিচলিত না হয়ে আরামে চানাচুর চিবোচ্ছে। এতে ওরা এখন অভ্যস্ত। এদের সপ্তাহে চারবার ব্রেকআপ হয়, আটবার প্যাচআপ হয়। এ নতুন কিছুই না।

অনেকে ঝাকঝমকভাবে হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে আজ। অনিমা সুন্দর করে হলুদ রঙের শাড়ি পরে হালকা করে সেজেছে। কৃত্রিম ফুলের হালকা কিছু গহনা পরে চুল ছেড়ে দিয়ে করিডর দিয়ে দ্রুত যাচ্ছে এমনিতেই লেট হয়ে গেছে তাই। সবাই অনেক আগেই চলে গেছে ওপরে। হঠাৎ করেই কেউ হাত টেনে ওকে রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। অনিমা তাকিয়ে দেখে আদ্রিয়ান মুচকি হাসছে। হলুদ পাঞ্জাবী পরেছে, লাল ওড়নার মত কিছু একটা গলায় ঝুলিয়ে রাখা আছে, চুলগুলোও কপালে পরেছে খানিকটা, মুখে সেই সুন্দর হাসি। অনিমা রেগে বলল,

” সবসময় এভাবে হুটহাট টেনে নেওয়া আর দরজা বন্ধ করা কী আপনার জন্মগত দোষ?”

আদ্রিয়ান অনিমাকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে বলল,

” উমহুম, প্রেমগত দোষ!”

” ছাড়ুন দেরী হচ্ছে।”

” হোক দেরী। আমি বেশি ইম্পর্টেন্ট নাকি হলুদের প্রোগ্রাম?”

অনিমা মুখ বাঁকিয়ে বলল,

” হলুদের প্রোগ্রাম।”

আদ্রিয়ান ওকে আরেকটু কাছে টেনে বলল,

” তাই না?”

” তাইতো! আপনিতো একটা পাগল। আরমানের সাথে এটা না করলেও হত।”

আদ্রিয়ান এবার একটু চেপে ধরে রাগীভাবে বলল,

” কেন মায়া হচ্ছে ওর জন্যে?”

অনিমা কিছু বলল না। যদি বলে ‘হ্যাঁ’ তাহলে আর রক্ষা থাকবেনা।

” ও তোমাকে পছন্দ করেছে সেটা বিগ ডিল না। করতেই পারে। বাট তোমার গায়ে হাত দেওয়া, পেন্ডেন্ট পরিয়ে দেওয়া ওর উচিৎ হয়নি। ইউ নো আই কান্ট টলারেট। তাই ওর শাস্তিটা অর্ধেক আমি দিয়েছি অর্ধেক ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। আমি শুধু পরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। অল্প ব্যাথাও পেতে পারত, কিন্তু এতো বাজেভাবে পরেছে সেটা ওর কপালের দোষ। আমি কী করতে পারি?”

অনিমা শুধু বোকার মত তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ানের দিকে। কত সহজে নিজের সব দোষ ভাগ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিল। বাহ! ভাগ্যও হয়ত আদ্রিয়ানকে মনে মনে বকছে অনিমার মত।

” আচ্ছা যদি এরপর আবার আমার পেছনে পরে তো?”

” পরবে না, শিওর থাকো।”

” কেন?”

আদ্রিয়ান ফিসফিসে আওয়াজে বলল,

” সিকরেট!”

অনিমা মুখ গোমড়া করে নিল। এতো সিকরেট কেন এই ছেলের মধ্যে? পরে কিছু একটা ভেবে একটু কৌতুহলী হয়ে বলল,

” আরমানের মায়ের মাথা থেকে বিয়ের ভুত কীকরে নামল? মানে কী করেছেন আপনি?”

” ওটাও সিকরেট।”

অনিমা করুণ স্বরে বলল,

” বলুন না।”

আদ্রিয়ান আড়াআড়ি স্টাইলে ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,

” বলতেই হবে?”

অনিমা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে একটু ঝুকে বলল,

” বলেছি যে তুমি এক বিশাল বড় মাফিয়ার হবু বউ। লোকটা ভীষণ ভয়ংকর, কিন্তু সে তোমাকে পাগলের মত ভালোবাসে। আর তোমার দিকে যে চোখ তুলে তাকায় তাকে সোজা ওপরে পাঠিয়ে দেয়। একবার একজনের চোখও তুলে নিয়েছে। শুধু তাই না কোন ছেলের মাও যদি এমন চিন্তা করে তাকেও… বুঝতেই পারছ। তার নজর সবসময় তোমার ওপর থাকে। সো আরমানের লাইফ ইজ ইন রিস্ক। ব্যাস! এটুকু শুনেই মহিলার হাওয়া ফুস…লাইক বালুন ইউ নো।”

অনিমা হেসে দিয়ে বলল,

” আপনি সত্যিই একটা পাগল!”

” হতে পারি।”

” হয়েছে এবার ছাড়ুন।”

অনিমা ছাড়াতে নিলেই আদ্রিয়ান অনিমাকে একদম নিজের কাছে এনে গালে আলতো করে হলুদ লাগিয়ে দিল। অনিমা আদ্রিয়ানের আলতো স্পর্শে আগেই চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। আদ্রিয়ান অনিমার কপালে কপাল লাগিয়ে ফলল,

” ওপরে সবাই সবাইকে হলুদ লাগাবে। কিন্তু তোমার ওপর প্রথম অধিকার আমার। আমার অধিকার আমি বুঝে নিতে জানি মায়াবিনী, তাই প্রথম হলুদ আমিই তোমাকে ছোঁয়ালাম।”

#চলবে…
#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here