বর্ষণের সেই রাতে- ২ পর্ব ৩৫+৩৬

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৩৫.

অনিমার কথা শুনে আদ্রিয়ান অনিমার হাত ছেড়ে দিয়ে ভ্রু কুচকে তাকাল। অনিমা এখনও কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ানের চোয়াল খানিকটা শক্ত হয়ে এলো। ও চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস ফেলে সামনে তাকাল। আদ্রিয়ান এরকমটা তখনই করে যখন ও রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। অনিমা সেটা জানে। তাই একটু ভয় পেল। না জানি আবার কী ভুলভাল বকে ফেলেছে। কিন্তু ও তো সাধারণ একটা প্রশ্ন করেছে। রেগে যাওয়ার মতো তো কিছু বলে নি। হ্যাঁ ও জানে আদ্রিয়ান ওকে ভালোবাসে। কিন্তু হঠাৎ করেই বিয়ের মত একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা সহজ নয়। বিয়েটা ছেলেখেলা নয়। অনেক ভাবনা চিন্তা করতে হয়। পরিবারিক ব্যাপারও আছে। ও তো শুধু সেইজন্যেই জিজ্ঞেস করেছিল। আদ্রিয়ান শান্ত গলায় বলল,

” তোমার কী মনে হয়? কেন বিয়ে করেছি আমি তোমাকে?”

আদ্রিয়ানের এমন ঠান্ডা গলার সাথে অনিমা পরিচিত। এটা একপ্রকার বিপদ সংকেত। তাই অনিমা একটু ভয়ে ভয়ে বলল,

” আমি কীকরে বলব? আপনি কেন বিয়ে করেছেন সেটাতো আপনি ভালো বলতে পারবেন তাইনা? ”

আদ্রিয়ান মাথা নাড়িয়ে বলল,

” কান্ড তো তুমি ঘটিয়েছ। কারণটা আমি ভালো কীকরে জানবো?”

আদ্রিয়ানের কথায় অনিমার একটু অভিমান হল। ও মাথা নিচু করে অভিমানী গলায় বলল,

” হুম। দোষটা আমারই। আমারই আপনাকে শুরুতে সবটা বলা উচিত ছিল। তাহলে আপনি প্রথমেই সবটা সামলে নিতে পারতেন। এতোটা সিনক্রিয়েট হত না। আর আপনাকে আমায় বিয়ে করতেও হতোনা।”

কথাটা শেষ করতেই আদ্রিয়ান অনিমার কোমর চেপে ধরে টেনে ওর দিকে টেনে এনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। অনিমা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। আদ্রিয়ান খানিকটা শক্ত কন্ঠে বলল,

” এই মুহূর্তে আমার কী ইচ্ছে করছে জানো? তোমার ঐ তুলতুলে নরম গাল দুটোতে ঠাটিয়ে দুটো চড় মারতে। কিন্তু তোমার ভাগ্য অনেক ভালো আজ আমি সেটা করব না। কারণ প্রথমত আজ এমনিতেই তোমার ওপর দিয়ে অনেক কিছু গেছে। আর দ্বিতীয়ত আজ আমাদের বিয়ের প্রথম রাত। সুতরাং আজ কোন মারামারি না শুধু প্রেম হবে।”

অনিমা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। লোকটা আসলেই অদ্ভুত। কখন তার মুড কেমন থাকে সেটা উনি ছাড়া কেউ জানেনা, আন্দাজও করতে পারেনা। যেমন ও ভেবেছিল এই ছেলে এখন ওকে আচ্ছা ধোলাই দেবে। কিন্তু তা হলোনা। সে তো এখন অন্য গান গাইছে। অনিমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদ্রিয়ান ভ্রু নাচালো। অর্থাৎ ‘কী দেখছ?’ অনিমা মাথা নেড়ে বোঝালো ‘কিছু না’। তারপর আশেপাশে তাকিয়ে বলল,

” অনেকটা রাত হয়েছে। ঘুমাবেন না? চলুন!”

আদ্রিয়ান অনিমাকে নিজের সাথে আরও ভালোভাবে মিশিয়ে ধরে বলল,

” উমহুম। আজ কোথায় যাচ্ছিনা। আজ নিচে ঘুমাতে গেলেই দুজনকে আলাদা আলাদা রুমে ঘুমাতে হবে। কারণ বিয়েটা হুট করেই হয়েছে। তুমি প্রস্তুত ছিলেনা একদমই। আমিও যে খুব বেশি তৈরী ছিলাম তা না। আমি চাই তোমাকে একটু সময় দিতে। আপাতত ব্যাপারটা এই অবধিই রাখতে চাইছি আমি। তাছাড়া বিয়েতো হয়েছেই আমাদের। অপেক্ষা করলে সমস্যা কোথায়। এটা তো সত্যি তুমি আমার বউ। মিসেস আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের।”

অনিমার মন হালকা কেঁপে উঠল শেষের কথাটা শুনে। সত্যিই ও আদ্রিয়ানের বউ এখন। আদ্রিয়ানের নামের সাথে ওর নাম জড়িয়ে গেছে। নিজের ভালোবাসার মানুষটার বউ হতে পেরেছে। ওর পাশে বসা মানুষটা এখন ওর। শুধুই ওর। এসব ভাবতে ভাবতে নিজেও আদ্রিয়ানের পেটের ওপর হাত রেখে বুকের পাশে মাথা রেখে দিল। আদ্রিয়ান একহাতে অনিমার মুখের পাশের চুলগুলো সরাতে সরাতে বলল,

” তাই আজকের এই বিশেষ রাতটা একসঙ্গে কাটাতে চাই!”

অনিমা কিছু একটা ভেবে বলল,

” আঙ্কেল, আন্টির সাথে কথা বলেছেন?”

” হ্যাঁ। রেগে আছে একটু। তোমাকে বিয়ে করেছি বলে না, ওনাদের দেরীতে ফোন করেছি তাই। তোমাকে নিয়ে ওনাদের সমস্যা নেই। দেখো, কাল পরশুই ফোন করবে তোমার কথা বলার জন্যে। এরপর আমাকে ভুলে তোমাকে নিয়ে নাচবে। আমার মিষ্টি বউ বলে কথা।”

অনিমা আর কিছু বলল না। এখন একটু লজ্জা লজ্জা লাগছে ওর। একজন সার্ভেন্ট দুটো মগে কফি দিতে এল। ওনাকে দেখে অনিমা আদ্রিয়ানকে ছেড়ে দিলেও অাদ্রিয়ান ওভাবেই জড়িয়ে ধরে বসে রইল ওকে। মেয়েটি ওগুলো রেখে দ্রুত মাথা নিচু করে চলে গেল। অনিমা বিরক্তি নিয়ে বলল,

” এরকম করলেন কেন? কী ভাবলো ও?”

” কী ভাববে? কেন ভাববে? আমার বউ আমি ধরেছি তাতে কার কী?”

অনিমা কিছু বলল না। আদ্রিয়ানের মুখে বারবার ‘বউ’ শব্দটা শুনে কেমন একটা ফিল হচ্ছে ওর। আদ্রিয়ান অনিমাকে ছেড়ে একটা কফিমগ অনিমার দিকে এগিয়ে দিলো। অনিমা কফি মগটা নিয়ে দূরে সরতে নিলেই আদ্রিয়ান আবারও একহাতে ওকে বুকে জড়িয়ে নিল। অনিমা আর কিছু বলল না চুপচাপ ওভাবেই কফির মগে চুমুক দিতে লাগল।
বেশ অনেকটা সময় কেটে গেছে। দুজনেই চুপচাপ আছে। কফি শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। আদ্রিয়ান এখনও বুকে জড়িয়ে রেখে দিয়েছে অনিমাকে। আদ্রিয়ান অনিমার চুলে আঙ্গুল নাড়তে নাড়তে বলল,

” জানপাখি!”

অনিমা আদ্রিয়ানের বুকে মাথা রেখে আদ্রিয়ানের টিশার্টের ওপর নখ ঘষতে ঘষতে বলল,

” হুম।”

” তুমি খুশি তো!”

” আপনি খুশি?”

” আমার জীবনের সেরা দিনগুলোর মধ্যে একটা এটা।”

অনিমা চোখ তুলে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

” এতো খুশি হওয়ার কারণ? আপনি যেরকম মানুষ আপনিতো আরও বেটার কাউকে ডিসার্ব করতেন। আরও সুন্দরী, হায়ার ক্লাসের মেয়ে পেতে পারতেন। সেখানে আমার মত একটা মেয়েকেই কেন?”

আদ্রিয়ান এবার একটু রাগী কন্ঠে বলল,

” অনি আই সোয়ার আমি কিন্তু এবার আর কোন ফার্স্ট নাইট টাইট দেখব না। সত্যিই মেরে দেব কিন্তু!”

অনিমা কিছু না বলে সাথেসাথেই আদ্রিয়ানের বুকে গুটিয়ে গেল। ব্যাস! আদ্রিয়ানের রাগটাও সাথেসাথেই জল হয়ে গেল। ও আবার অনিমার চুলে আঙুল চালাতে চালাতে বলল,

” জানপাখি আজকাল খুব চালাক হয়ে যাচ্ছো তুমি।”

অনিমা আদ্রিয়ানের বুকে মুখ গুজে রেখেই হাসল। আদ্রিয়ান বলল,

” কাল আমার ভাই আসছে। কাজিন ব্রাদার।”

” কখন আসবে?”

” এসে দুপুরে খাবে বলেছে।”

অনিমা কিছু বলল না। এভাবে গল্প করতে করতে বেশ অনেকটা রাত হয়ে গেল। আদ্রিয়ান খেয়াল করল যে অনিমা ঘুমিয়ে পরেছে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমাকে বুকে রেখেই দোলনার সাথে হেলান দিয়ে বসল। অনিমা একদম নিশ্চিন্তে আদ্রিয়ানের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। ‍যেন এরচেয়ে নিরাপদ জায়গা ওর কাছে কিছুই নেই। আদ্রিয়ান অনিমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে ওকে আরও শক্ত করে বুকে জড়িয়ে রাখল। এই মেয়েটা এখন ওর বউ। ওর নিজের। এরচেয়ে ভালো অনুভূতি ওর জন্যে আর কী হতে পারে! কিন্তু এটা ভেবেও চিন্তা হচ্ছে যে এখন অনিমার কথা সবাই জানে। এখন ওকে আর ওকে লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। এখন ওকে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। আগলে রাখতে হবে ওর জানপাখিকে। যেন নতুন কোন ঝড় ওকে ছুঁতে না পারে।

______________

রিক খুব দ্রুত রেডি হচ্ছে। ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেছে এমনিতেই। এতক্ষণ কেন ঘুমালো সেটাই বুঝতে পারছেনা। যেতে যেতে এবার প্রায় বিকেল হয়ে যাবে। তাই ঘুম থেকে উঠেই কোনদিকে না তাকিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হতে শুরু করেছে। স্নিগ্ধা রুমের কোণে দাঁড়িয়ে হাত কচলে যাচ্ছে। ও জানে আজ রিক যদি আদ্রিয়ানের বাড়িতে যায় তাহলে ভয়ংকর কিছু একটা হয়ে যাবে। কিন্তু রিককে আটকাচ্ছে না কারণ একদিনতো জানবেই। ব্যাপারটা যত তাড়াতাড়ি হয় ততই ভালো। রেডি হয়ে রিক স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,

” আসছি আমি।”

স্নিগ্ধা শুধু মাথা নাড়ল। রিক বেড়িয়ে ড্রয়িংরুম পাস করতে যাবে তখন ওর রঞ্জিত চৌধুরী বলে উঠল,

“কোথায় যাচ্ছো?”

রিক দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল,

” তুমিতো জানো, আজ আদ্রিয়ানের বাড়ি যাচ্ছি।”

রঞ্জিত চৌধুরী গম্ভীর স্বরে বললেন,

” আজ না অন্যদিন যেও। বিকেলে একটা..”

রিক বিরক্তি নিয়ে বলল,

” ড্যাড প্লিজ। এতদিন যখন নিজেরা সব সামলে নিয়েছ। আজকেও পারবে। তোমার রোজ রোজকার এসব আমার আর ভালো লাগছে না। আমিও মানুষ! একটু শান্তি দাও। আমি যাচ্ছি। মামা আমি এলাম। মা কে বলে দিও।”

বলে রিক বেড়িয়ে গেল। রঞ্জিত চৌধুরী কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু কবির শেখ আটকে নিয়েছে ওনাকে। রঞ্জিত চৌধুরী রেগে বললেন,

” থামালেনা কেন ওকে?”

কবির শেখ রিকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,

” আজ ও যেতোই। আটকে লাভ হতোনা। খেলার মোর ঘুরেছে। এবার নতুন কিছু ভাবতে হবে।”

” কিন্তু কী ভাবব? আর সারা দুনিয়ায় এতো জায়গা থাকতে তোমার ঐ ভাগ্নের বাড়িতে গিয়েই পরল মেয়েটা? তোমার ভাগ্নে আবার ওকে বিয়েও করে নিল?”

কবির শেখ গভীর ভাবনায় থেকে বলল,

” এটাই তো প্রশ্ন! আদ্রিয়ানই কেন? কিছুতো গন্ডগোল আছেই। কিছু একটা হয়েছে আমাদের অগচরে। ঐ ছেলেটা সুবিধার না। তারওপর সিলেটের ঐখানেও ঐ বুড়িকে পেলাম না। গেলোটা কোথায়!”

বলে টেবিলে ঘুষি মারলেন উনি। রঞ্জিত চৌধুরীর চোখেমুখেও ভীষণ গাম্ভীর্য আর চিন্তা।

____________

এদিকে যাওয়ার পথে রিক কানাঘুষায় শুনতে পেল আদ্রিয়ান কাল বিয়ে করেছে। রিক একটু অবাক হল। গুজব নয়তো? আদ্রিয়ান বিয়ে করলেতো ওকে বলবে তাইনা? এসব ভাবতেই আদ্রিয়ানের ফোন চলে এলো। রিক ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আদ্রিয়ান বলে উঠল,

” ঐ তোর না দুপুরে এসে খাওয়ার কথা? কটা বাজে?”

” আমার কথা ছাড়। কী শুনছি? তুই বিয়ে করেছিস? ”

আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে ইতস্তত করে বলল,

” হ্যাঁ কালকেই করেছি।”

” শালা, দাওয়াত তো দূর জানালিও না? এটা কোন কথা হল নাকি?”

” আরে সব অনেক দ্রুত হয়ে গেছে। নিজেও রেডি ছিলাম না। আয় সব খুলে বলছি। আর নেটে ঢুকলেই আমার বউয়ের ছবি পেয়ে যাবি।”

রিক হেসে বলল,

” ঢোকার ইচ্ছে ছিল কিন্তু এখন আর ঢুকবোনা। একবারে সামনাসামনি ভাবিকে দেখব। ভাবিটা নিশ্চয়ই তোর মায়াবিনী?”

আদ্রিয়ানও হেসে দিয়ে বলল,

” হ্যাঁ ওই আরকি। যাই হোক কখন আসছিস?”

রিক একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,

” পৌছাতে পৌছাতে বিকেল হবে। ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেছে।”

” আচ্ছা দ্রুত আয়।”

রিক ফোনটা রেখে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলল। যদি ওর নীলপরী আজ ওর কাছে থাকতো তাহলে হয়তো এতোদিনে ওদের বিয়ে হয়ে যেত। কোথায় আছে মেয়েটা কে জানে?

____________

অনিমা আর জাবিন মিলে কিচেনে কয়েকরকম স্নাকস বানাচ্ছে। আসলে রিক বলেছে যে ও দুপুরে বাইরেই খাবে। তাই অনিমা ভাবল যে বিকেলের ভালো কিছু স্নাকস বানিয়ে রাখুক। এসে খেতে পারবে। এতোকিছুর মধ্যে অনিমা জিজ্ঞেস করেনি আদ্রিয়ানের ঐ ভাইয়ের নাম কী? তেমন আগ্রহ নেই ওর। জাবিনও ‘ভাইয়া’ বলে সম্বোধন করছে। আদ্রিয়ানও নাম নেয়নি। এদিকে আদ্রিয়ান, অভ্র আর নাহিদ মিলে ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছে। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠল। নাহিদ বলল,

” রিক এসে গেছে বোধ হয়।”

আদ্রিয়ান উঠে গেল দরজা খুলতে। দরজা খুলে দেখে সত্যিই রিকই দাঁড়িয়ে আছে। দুজনেই হেসে দিয়ে একে ওপরকে জড়িয়ে ধরল। আদ্রিয়ান ছাড়িয়ে বলল,

” আয় ভেতরে আয়!”

রিককে নিয়ে ভেতরে আসার পর রিক অভ্র আর নাহিদ দুজনকেই জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করল। দুজনকেই চেনে ও আগে থেকে। নাহিদের দিকে তাকিয়ে বলল,

” দেশে এলি কবে?”

” এইতো আদিবের বিয়েতেই এসছি।”

রিক উৎসাহি চোখে চারদিকে তাকিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

” ভাবী কোথায়? কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস? তাড়াতাড়ি সামনে আন। দেখি কোন মায়াবিনীকে এভাবে হুট করে বিয়ে করে নিলি!”

আদ্রিয়ান একটু শব্দ করে হেসে দিয়ে বলল,

” আরে আনছি। এতো অধৈর্য হচ্ছিস কেন?”

বলে আদ্রিয়ান রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে জোরে ডাকল,

” অনি!”

‘অনি’ নামটা শুনে রিকের বুকের মধ্যে ধক করে উঠল। বিস্ফোরিত চোখে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। অনি? কোন অনি? ওর নীলপরী নয়তো? না এরকম হতে পারেনা। দুনিয়াতে কী অনি নামের ঐ একটা মেয়েই আছে না-কি? নিশ্চয়ই অন্যকেউ। হ্যাঁ অন্যকেউ। তখনই অনিমা হাত মুছতে মুছতে এগিয়ে এসে বলল,

” জি ডাকছিলেন?”

অতি পরিচিত কন্ঠ শুনে রিক অবাক হয়ে তাকালো সেদিকে। তাকিয়ে সত্যিই সত্যিই অনিমাকে দেখে ও থমকে গেল। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। অনিমা এখানে আছে? আর ও এখন আদ্রিয়ানের বউ? মানে ওর নীলপরী এখন ওরই ভাইয়ের বউ? অনিমার দৃষ্টি রিকের ওপর পরতেই ওর পা থেমে গেল। ওও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রিক এখানে কী করছে? এখন কীকরে এলো? গা কাঁপছে ওর। মাথা চক্কর দিয়ে উঠছে। নিজের অজান্তেই দুকদম পিছিয়ে গেল অনিমা।

#চলবে…#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৩৬.

রিক এখনও হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। ওর মন খুব করে বলছে এটা মিথ্যা হোক, স্বপ্ন হোক। কিন্তু না; এটা বাস্তব। আর ও সেটা এতক্ষণে বুঝেও গেছে। অনিমার পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। মাথা যন্ত্রণা আবার তীব্রভাবে শুরু হয়ে গেছে। হঠাৎ এরকম ধাক্কা নিতে পারছেনা ও। আচমকা এরকমভাবে রিকের সম্মুখীন হওয়াটা মেনে নিতে পারছেনা । ওর মনে হচ্ছে ও আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেনা। হলোও ঠিক তাই। আবারও জ্ঞান হারিয়ে ফেলল ও। অনিমা পরে যেতে নিলে রিক দ্রুত দৌড়ে ধরতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই আদ্রিয়ান ধরে ফেলল। রিক সাথে সাথেই থেমে গেল। আদ্রিয়ান দুই হাতে অনিমাকে জড়িয়ে ধরে গালে হালকা চাপড় মেরে ডাকল। জাবিন এসে এরকম পরিস্থিতি দেখতে পেয়ে দাঁড়িয়ে গেল। নাহিদ বলল,

” জাবিন, দ্রুত পানি নিয়ে আয় যা।”

জাবিন দৌড়ে কিচেনে গেল জল আনতে। আদ্রিয়ান অনিমাকে কোলে তুলে নিয়ে বড় সোফায় শুইয়ে দিয়ে আবার ডাকতে শুরু করল। অভ্র আর নাহিদও ওর মাথার কাছে এসে ডাকছে ওকে কিন্তু অনিমার কোন সাড়াশব্দ নেই। রিক শুধু তাকিয়ে আছে অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে। অনেকটা থমকে গেছে ও। তারওপর অনিমার এরকম অবস্থা দেখে কী বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছেনা। এরমধ্যেই জাবিন জল নিয়ে চলে এলো। আদ্রিয়ান দ্রুত সেটা হাতে নিল। রিক একটু এগিয়ে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলল,

” ক্ কী হয়েছে ও্ ওর?”

আদ্রিয়ান অনিমার মুখে পানি ছেটাতে ছেটাতে ব্যস্ত কন্ঠে বলল,

” টেনশন করিস না। ও একটু অসুস্থ। আমি দেখছি।”

কিছুক্ষণ চেষ্টার পর অনিমা চোখ খুলে তাকাল। আদ্রিয়ানের মনে ভয় ঢুকে গেছে। ডক্টর যা বলেছিল তেমন কিছু হয়ে গেলে ও মানতে পারবেনা। ও অনিমাকে নিজের সাথে আরেকটু জড়িয়ে নিয়ে নরম কন্ঠে বলল,

” ঠিক আছো তুমি এখন?”

অনিমা একটা শুকনো ঢোক গিলে আদ্রিয়ানের টিশার্ট খামচে ধরল। জোরে জোরে দুটো শ্বাস ফেলে ভয়ে ভয়ে পাশে তাকাতেই রিকের দিকে চোখ পরল। রিকের চোখ লালচে হয়ে গেছে। ঠোঁট সামান্য কাঁপছে। অনিমা ওদের সামনেই আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুজে দিল। রিক সাথেসাথেই নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলল। অনিমার মত এমন লাজুক মেয়ের এমন কান্ড দেখে আদ্রিয়ান নিজেও অবাক হয়ে গেল। নাহিদ, অভ্র আর জাবিন ঠোঁট চেপে হাসছে। আদ্রিয়ান খেয়াল করল অনিমা নিঃশব্দে কাঁদছে। ও অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

” জানপাখি, কী হয়েছে কাঁদছো কেন?”

আদ্রিয়ানের কথা শুনে অনিমা আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ানও আর কিছু না বলে চুপচাপ ওকে জড়িয়ে ধরে বসে রইল। নাহিদ হঠাৎ বলে উঠল,

” রিক, তুই ঠিক আছিস? তোর কী হয়েছে?”

নাহিদের কথায় রিকের হুশ এলো। বাকি সবাই তাকাল রিকের দিকে। অনিমাও অনেকটা ভয় নিয়েই তাকাল। রিক যথাসম্ভব নিজেকে সামলে বলল,

” হ্যাঁ, ঠিক আছিতো!”

আদ্রিয়ান চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,

” তোর চোখ, নাক এমন লাল হয়ে গেল কেন?”

” আরে একটু ঠান্ডা লেগেছে। তারওপর এখন আবার চোখটা জ্বলছে একটু। একটু ওয়াশরুমে যাবো আমি।”

জাবিন বলল,

” চল আমি নিয়ে যাচ্ছি।”

জাবিন রিককে নিয়ে চলে গেল। অনিমা রিকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। রিক আদ্রিয়ানের ভাই? কাজিন ব্রাদার? ওর জানামতে রঞ্জিত চৌধুরীর কোন ভাই বোন নেই। তাহলে? মায়ের পক্ষের কেউ? কবির শেখতো বিয়েই করেনি। হ্যাঁ শুনেছিল লিমা আন্টির আরেকটা জমজ বোন আছে। নামটা মনে নেই ওর। আদ্রিয়ান কি কবির শেখের ভাগ্নে? আদ্রিয়ানও কী তাহলে ওদের মতই? না কী ভাবছে কী ও? এক পরিবারের হলেই একরকম হবে এরকম কোন মানে নেই। লিমা আন্টিও তো কত ভালো। কিন্তু ভাগ্য ওকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আবার সেখানেই এনে কেন দাঁড় করালো? যে মানুষটাকে ও সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে ও আজ তারই ভাগ্নের বউ! এটা কেমন নিয়তি? আর কিছু ভাবতে পারছেনা ও। কোনরকমে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

” পা-পানি।”

নাহিদ দ্রুত পানি এগিয়ে দিল। আদ্রিয়ান সেটা নিয়ে ওকে খাইয়ে দিয়ে বলল,

” রুমে যাবে? শুয়ে একটু রেস্ট করলে ভালো লাগতো।”

অনিমা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। আদ্রিয়ান অনিমাকে ধরে ওপরে নিয়ে গেল। নাহিদ আর অভ্র বসে পরল সোফায়। আর রিকের আসার অপেক্ষা করতে লাগল। সন্ধ্যার দিকে আদিব, আশিস আসবে। তীব্র, অরুমিতা, স্নেহাকেও ইনভাইট করা হয়েছে, ওরাও আসবে।

বাথরুমের দরজা বন্ধ করে বেসিনের কল ছেড়ে দিয়ে আয়নার দিকে তাকাল রিক। চোখ, নাক সত্যিই লাল হয়ে আছে। মাথায় একটা কথাই ঘুরছে যে ওর নীলপরী এখন অন্যকারো বউ। অনিমার ওভাবে আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরা, ওরকম ঘনিষ্ঠতা সব চোখের সামনে ভেসে উঠতেই সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। প্রচন্ড জোরে চেঁচাতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু ওর ভেতরের কোন এক সত্তা ওকে বাঁধা দিচ্ছে কোনরকম সিনক্রিয়েট করতে। জোরে জোরে মুখে কিছুক্ষণ পানির ছিটা দিয়েও নিজেকে সামলে রাখতে পারছেনা। আদ্রিয়ানতো ওর ভাই! ও জানতো ও নীলপরীকে ঠিক কতটা চায়, সবটা জেনে শুনে ভাই হয়ে ভাইয়ের সাথে এরকম কীকরে করল? কিন্তু পরক্ষণেই মনে হল যে আদ্রিয়ানতো জানতোনা ওর নীলপরী কে। ও আসল নামটাও কখনও বলেছি আদ্রিয়ানকে। ও কীকরে জানবে? কিন্তু অনিমা এখানে কীকরে এলো? ওর মামা বলেছিল কোন ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে। সেই ছেলেটাকে কী আদ্রিয়ান? কিচ্ছু ভাবতে পারছেনা ও। কিন্তু ওর নীলপরীকে অন্যকারো সাথে সহ্য করতে পারবেনা ও, সম্ভব না সহ্য করা। কিন্তু কী করবে এখন? একটাদিন আগে হলেও ও ঠিক অনিমাকে নিজের করে নিতো কিন্তু এখন ও ওর ভাইয়ের বউ। শুধু তাই না। রিক জানে আদ্রিয়ান ওর মায়াবিনীকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। কিন্তু ওও তো ওর নীরপরীকে ভালোবাসে। কীকরে ছেড়ে দেবে? কীকরে? সবকিছুই অসহ্য হয়ে উঠছে। রেগে গিয়ে সামনের আয়নায় জোরে ধাক্কা মারলো। আয়নাটা ভেঙে নিচে পরে গেলো। রিকের হাতও কেটে গেছে খানিকটা। দমবন্ধ লাগছে,কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছেনা ও। কিছুতো করতে হবে। কী করবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেনা।

” ভাইয়া? কী হয়েছে? কী ভাঙল? তুমি ঠিক আছো?”

জাবিনের গলায় আওয়াজ শুনে রিক নিজেকে সামলে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে দরজা খুলল। জাবিন রিকের কাটা হাত দেখে বলল,

” কী হয়েছে? কাটলো কীকরে?”

রিক হাতের দিকে তাকিয়ে এরপর সামনে তাকিয়ে বলল,

” ধাক্কা লেগে আয়নাটা পরে গেছে। আর হাতে লেগেছে তাই___

” ইশ! কতখানি কেটে গেছে! চলো ড্রেসিং করে দিচ্ছি।”

জাবিন রিকের হাত ধরে নিয়ে গেল। রিকও কিছু বলল না। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান নিচে নেমে দেখে ওরা সবাই বসে আছে সোফাতে। রিকের হাতে ব্যান্ডেজ দেখে অবাক কন্ঠে বলল,

” হাতে কী হয়েছে?”

রিক হাতের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,

” কিছুনা, ওয়াসরুমে আয়না ভেঙ্গে একটু কেটে গেছে।”

” তো ওয়াসরুমে গিয়ে কী যুদ্ধ করছিলি না-কি?”

আদ্রিয়ানের কথা শুনে উপস্থিত সবাই হেসে দিলো। রিক বলল,

” ন_ ভাবি কেমন আছে এখন?”

” এখন একটু ঘুমাচ্ছে। সন্ধ্যায় বাকিরা চলে এলে ডেকে দেব।”

রিক কিছুই বলল না। মাথাটা ধরে যাচ্ছে এখন।বাতাসটাও অসহনীয় হয়ে উঠছে। ওর এখন কী করা উচিত সেটাই বুঝে উঠতে পারছেনা।

_____________

সন্ধ্যার পর একে একে আদিব, রাইমা, আশিস। পরে অরুমিতা, তীব্র, স্নেহা সবাই চলে এলো অরুমিতা ওরা রিককে দেখে বেশ অবাক হল। অনিমার মুখ কিছুটা শুনেছে ওরা। কিন্তু কিছু বলল না। পরিস্থিতি বিগড়ে দিতে চায়না আপাতত। রিক তেমন কথা বলছেনা চুপচাপ বসে আছে। এতক্ষণে কেবল অনি-আদ্রিয়ানের বিয়ের ঘটনাটা কিভাবে ঘটেছে সেটাই জানতে পেরেছে। অন্যকিছু জানতে চাওয়ার মানসিকতা এখন নেই ওর। আদ্রিয়ান গিয়ে অনিমাকে ঘুম থেকে তুলে ফ্রেশ করিয়ে নিচে নিয়ে এলো। অনিমা রিককে দেখে আবার ঘাবড়ে গেল। রিক যদি আদ্রিয়ানকে কিছু বলে? আদ্রিয়ান ভুল বুঝবে না-তো ওকে? শুনবেতো ওর কথা? রাইমা উঠে গিয়ে অনিমাকে জড়িয়ে ধরে বিয়ের জন্যে কনগ্রাচুলেট করল। এরপর অনিমাকে নিয়ে ওদের মাঝে বসাল। অনিমা ওখানে বসতেই রিক তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকাল অনিমার দিকে। অনিমা রিকের দিকে তাকাচ্ছেনা ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে ওর। আদ্রিয়ান বলল,

” অনি, তুমি তো অসুস্থ হয়ে পরলে তাই আলাপ করানো হয়নি। ও আমার খালাতো ভাই, রিক।”

অনিমা একপলক রিকের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে চোখ নামিয়ে নিল। রিক নিজের চোয়াল শক্ত করে রেখেছে। আদ্রিয়ান রিকের কাধে হাত রেখে বলল,

” কীরে? ভাবিকে দেখার জন্যে তো মরে যাচ্ছিলি। এখন চুপ কেন?”

রিক অনিমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেই বলল,

” আছিতো এখানেই ঠিক কথা বলে নেব। এখনতো অসুস্থ। চুপচাপ থাকাই ভালো।”

অনিমা শুধু নিচের দিকে হাত কচলে যাচ্ছে। অভ্র জাবিন একে ওপরেই থেকে দশ হাত দূরে থাকার চেষ্টা করছে। তীব্র স্নেহার সেই বিখ্যাত ঝগড়া মাঝেমাঝেই শুরু হচ্ছে। আদিব আর রাইমা নিজেদের মতো বসে টুকটাক কথা বলছে। আশিস কিছুক্ষণ পরপরই কীরকমভাবে দেখছে অরুমিতাকে। যেটা আর কেউ বুঝতে না পারলেও অরুমিতা বুঝতে পারছে। কিন্তু পাত্তা দিচ্ছেনা। ওর আর এসবে কিছু যায় আসেনা। সারাটা সন্ধ্যা সবার হাসি মজাতেই কেটেছে। শুধু রিক আর অনিমার মধ্যে দুটো আলাদারকম ঝড় বইছিলো। রাতে আদ্রিয়ান নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছিল অনিমাকে। ও অসুস্থ বলে। রিকের গা জ্বলে যাচ্ছিল এসব দেখে। পারছিল না সহ্য করতে। এবার ওর অনিমার ওপর রাগ হতে শুরু করল। যুক্তি নেই জেনেও সবকিছু জন্যে ওকেই দোষী মনে হচ্ছে এখন রিকের। এমন মনে হচ্ছে অনিমা ইচ্ছে করে ওদের দুজনের জীবন নিয়েই খেলেছে। ঠিক করে আর খেতে পারলোনা রিক। কোনরকম খেয়ে উঠে পরল।

সবাইকে বিদায় দেওয়ার পর সবাই যে যার রুমে শুতে চলে গেল। প্রচন্ড ক্লান্ত এখন সবাই। আদ্রিয়ান অনিমা এখনও আলাদা রুমেই শোয়। স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন এখনই শুরু করছেনা ওরা। সেটাও আদ্রিয়ানের কথাতেই। রুমে যাওয়ার সময় আদ্রিয়ান অনিমাকে একটু ডাকল ওর রুমে। যেটা রিক তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করেছে।

_____________

অনিমা আদ্রিয়ানের রুম থেকে থেকে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। অন্যমনষ্ক হয়ে কিছু ভেবে চলেছে। কিন্তু সামনে তাকিয়ে রিককে ওর বিছানায় বসে থাকতে দেখে ও চমকে উঠল। রিকের চোখে মুখে ভয়ংকর রাগ। অনিমা ভয় পেল প্রচন্ড। ভীত গলায় বলল,

” আপনি?”

রিক উঠে দাঁড়িয়ে একটু হেসে বলল,

” আশা করোনি তাইনা? বিশ্বাস করো, আমিও আশা করিনি। আমি ভাবিও নি তুমি এরকম কিছু করতে পারো। তোমাকে সবার চেয়ে আলাদা মনে হতো। কিন্তু তুমিও তো সেই লোভী মেয়েদের দলে গিয়েই পরলে।”

অনিমা অবাক হয়ে তাকাল। রিকের কথার মানে বুঝে উঠতে পারছেনা। রিক আবার বলল,

” আমার কাছেতো ভালোই ছিলে। কিন্তু আমাকে পরে আর ভালো লাগেনি তাইনা? তাই এখন আমার ভাইয়ের গলায় এসে ঝুলেছো।”

রিকের কথা শুনে অনিমা কেঁদে ফেলল। এরকম কথা কেন বলছে সে? রিক রাগে দুঃখে কী বলছে নিজেও জানেনা। ও চেনে অনিমাকে। তবুও বলছে এসব। রিক অনিমার দুই বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলল,

” কাঁদছো কেন? কেন করলে এটা নীলপরী? কী করিনি আমি তোমার জন্যে? তোমার প্রাণ বাঁচিয়েছি, তোমাকে আশ্রয় দিয়েছি, বাবার আপত্তি সত্ত্বেও তোমাকে আগলে রেখেছি। আর তুমি এভাবে চলে এলে?”

অনিমা কান্নাভেজা কন্ঠে বলল,

” ছাড়ুন, আমার লাগছে।”

” আমার প্রশ্নের উত্তর দাও! কেন করলে এটা?”

” আমি কারো প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই। ছাড়ুন!”

রিক আরও জোরে চেপে ধরে বলল,

” একশবার বাধ্য তুমি! আমার জবাব চাই।”

অনিমা এবার একটু রেগে গেল। অনিমা ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে রিককে থাপ্পড় মেরে দিল। রিক অবাক হয়ে তাকাল অনিমার দিকে। অনিমা হাফানো কন্ঠে বলল,

” আমি কী করেছি, কেন করেছি; সেটা সবচেয়ে ভালো আপনি জানেন। জেনে শুনে ন্যাকামো করছেন? সেটাইতো হয়েছিল না যেটা আপনি চেয়েছেন? না-কি আজ আমি এখনও বেঁচে আছি বলে আপনার রাগ হচ্ছে, আফসোস হচ্ছে।”

রিক হতভম্ব হয়ে গেল। অনিমার কথার মানে বুঝতে পারল না ও। যেখানে ওর অভিযোগ করার কথা সেখানে উল্টে অনিমা অভিযোগ করছে ওকে নিয়ে? কী করেছে ও?

#চলবে…

[ রি-চেইক করিনি। ভুলত্রুটিগুলো একটু নিজ থেকে বুঝে নেবেন। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here