বর্ষনের শেষে, পর্ব:১

অরিনকে একপ্রকার টেঁনেহিঁচড়ে নদীর তীরে অবস্থিত কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে এনে থামলো তারেক।দম ফেলে অরিনকে উদ্দেশ্য করে বললো

“এই গাছে দড়ি বেধেই তো আত্মহত্যা করবে বলেছিলে তাই না”

ভার্সিটি থেকে আসার পথে হঠাৎ কোথায় থেকে অরিনের সামনে হাজির হয় তারেক।হাত ধরে জুড়ে গাড়িতে বসিয়ে এখানে এসে গাড়ি থামিয়ে তাকে একপ্রকার টেঁনেহিঁচড়ে নামিয়ে গাছের নিচে আনে।৭ দিন পর তাদের বিয়ে।কাল সারাদিন একটা কথাও হয়নি তাদের মধ্যে যদিও পরিবার থেকে তাদের কথা বলার অনুমতি দেয়া হয়েছে।বিভিন্ন ব্যস্ততার কারনেই কথা বলা হয়ে উঠেনি।তারেকের কথা শুনে অরিন চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।একে তো না বলে তাকে জুড়ে আনা হয়েছে আবার বলছে সে নাকি আত্মহত্যা করার কথা বলেছে।তা ও এই কৃষ্ণচূড়া গাছে দড়ি বেধে।কিছুটা বিস্ময় নিয়েই অরিন বললো

“মানে!আমি আত্মহত্যা কর‍তে যাব কেন”

“একদম মিথ্যে বলবে না।কাল রাতেই তো মেসেজ দিয়ে বললে আমাকে নাকি বিয়ে করতে পারবে না।তুমি অন্য কাউকে ভালোবাস হেন তেন।আর এখন বলছো তুমি কেন আত্মহত্যা কর‍তে যাবে।বাহ!”

তারেকের কথায় অরিন আসমান থেকে পরলো মনে হচ্ছে।তার তো কারো সাথেই রিলেশন নেই। আর এই বিয়েতেও তার মত আছে সুতরাং তারেককে কেন এমন কথা বলতে যাবে।তার যতটুকু মনে আছে কাল তাদের একটা কথাও হয়নি।কপাল কুচকে অরিন বললো

“কি বলছো এসব।আমি কেন এগুলা বলবো।আমি তো,,,”

তাকে কথার মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে তারেক বলে উঠলো

“দেখো অরিন তুমি কাকে ভালোবাস সেটা আমার দেখার বিষয় নয়।আমাদের পারিবারক ভাবে বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিয়ে মাত্র আছে আর সাতদিন।আমাকে বিয়ে করবে না তা এখন বলে কি লাভ হবে শুনি”

“আরে আমি তো,,,”

” আর কোন এক্সপ্লেইন আমি শুনব না।আর তুমি বল্লেও আমি তা মানবো না।খবরদার বিয়ে ভাঙার কোন ট্রাই করতে যেও না।আড়চোখে তাকিয়ে আবার বলে উঠলো অবশ্য ট্রাই করলে করতে পারো এটা তোমার ইচ্ছা বাট কোন লাভ হবে না”

কাঁদু কাঁদু মুখ বানিয়ে দুঃখভরা কন্ঠের শীষ তুলে অরিন বললো

“আমার কথাটা তো শুনবে”

“কি শুনবো হেহ।এসব শুনার এতো সময় আমার নেই।আর শুনে রাখো সুইসাইড করার মতো প্ল্যান যদি আবার করো তাহলে কিন্তু খবর আছে”

কথাটি বলে দু কদম এগিয়ে গিয়ে আবারো ফিরে আসলো তারেক।মুখের সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো

“আজ আমায় কোন কল বা মেসেজ দিবা না।ফ্রি হলে আমিই কল দিবো”

বলেই সে হনহন করে চলে গেলো।অরিন ভ্যাবলাকান্তের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।তার সাথে কি হলো এটা।সে কখনই বা আত্মহত্যার কথা বললো আর কাকেই বা ভালোবাসে বললো।তার কোন কথাই তো শুনলো না তারেক।সব কিছুই যেন অরিনের মাথার উপর দিয়ে গেলো।ধেত মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেছে তার।এসব চিন্তা বাদ দিয়ে কপালে চিন্তার ছাপ ফুটিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো সে।

বাসায় ঢুকতেই ড্রইংরুমে সবাইকে বসে থাকতে দেখলো অরিন।কিছু না বলে সে ভিতরে যেতে লাগলো। পা ফেলতেই তার মা ডাক দিয়ে বলে উঠলেন

“অরিন এদিকে আয় মা”

মায়ের ডাকে অরিনের গলা শুকিয়ে গেছে।তারেক তো কি থেকে কি বললো তাকে এখন কি মা ও এই একই কথাই বলবেন।অাল্লাহর নাম জপে ঘুরে গিয়ে মায়ের পাশে বসলো।যথাসম্ভব নিজেকে স্বভাবিক রেখে বললো

“কিছুকি বলবে মা”

তার মা কিছু বলার আগেই ওর বাবা বলে উঠলেন

“আজ ভার্সিটিতে গেলি কেন। কাল থেকে বিয়ের আগে আর যাওয়ার প্রয়োজন নেই”

“আচ্ছা বাবা”

“আচ্ছা এসব কথা পরে হবে।এই গরমের মধ্যে ঘেমে অবস্থা নাই মেয়েটার।যা ফ্রেশ হয়ে নে আগে”

চাচির কথায় মা ও সম্মতি জানালেন।তাদের কথা মতো রুমে এসে বিছানায় বেগ রেখে ওয়াশরুমে চলে গেলো সে।ভেসিনের সামনে গিয়ে চুখে মুখে পানি দিয়ে আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে অাছে।মাথায় এখনো তারেকের বলা কথা গুলু ঘুরছে তার।

“এই আপু দরজা খুল।খাওয়ার জন্য নিচে তোকে ডাকে”

তারিনের কথা কানে যেতেই দরজা খুলে বেরিয়ে অাসলো। সে।তাকে দেখেই তারিন কেমন করে যেন হাসলো।অরিন মুখ মুছতে মুছতে ভ্রু কুচকে তারিনকে জিজ্ঞেস করলো

“কিরে এইভাবে হাসছিস কেন”

“তোর কদিন পর বিয়ে।তোকে দেখলেই অামার কাছে নতুন বউ লাগে।জানিস তোর কপাল কত্তো ভালোরে আপু।কতো সুন্দর একটা জামাই পেয়েছিস।আমার তো এখন তোর প্রতি হিংসে হচ্ছে।”

তারিনের এমন কথার কিছুটা ভরকালো অরিন।সেতো কখনো এমন কথা বলে না।বলার কথাও নয়।আর কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই মা এসে আবার খাওয়ার জন্য ডাকছেন তাদের।তাই আর কোন কথা না বাড়িয়ে নিচে গেলো।

রাতে গভীর ঘুমে আচ্ছাদিত অরিন।তবে কেন যেন হঠাৎ করেই ঘুমটা বেশ হালকা হয়ে গেলো ওর। কিছুক্ষণ গড়াগড়ি খেয়ে বিছানা থেকে নেমে বারান্দার উদ্দেশ্যে হাটা ধরলো।কেন যেন মনে হচ্ছে তার পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।সে কি তাকিয়ে দেখবে?ভেবে চিন্তে পিছনে তাকালো সে।

(চলবে)
পর্বঃ১
#সাদিয়া_চৌধুরী_তাহমিনা
#বর্ষনের_শেষে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here