বর্ষনের শেষে, পর্ব:২

#বর্ষনের_শেষে
পর্বঃ২
#সাদিয়া_চৌধুরী_তাহমিনা

পিছনে তাকিয়ে মুখ কাপড় দিয়ে ঘুরা কাউকে দেখে অরিন চিৎকার করতে যাবে তার আগেই তার মুখ ধরে ফেললো।ফিস ফিসিয়ে সেই ব্যক্তিট বললো

“আরে এভাবে চিৎকার দিও না।আমি তারেক”

কথা গুলো বলেই মুখ থেকে হাত সরালো সে।দম ফেলে বিস্ময় নিয়ে অরিন বললো
“তুমি!এতো রাতে এখানে কি করো”

“না আসলে তো তোমার এসব কান্ডকারখানা দেখতে পেতাম না”

“মানে!কিসের কান্ডকারখানা”

“দেখো তুমি বুঝেও না বুঝার ভান ধরবে না প্লিজ”

“আরে আমি কি করেছি সেটা তো বলবে”

অরিনের কাঁধ বেশ শক্ত করে ধরে তারেক বললো

“কিছুই বুঝ না তাই তো?এই মুহুর্তে তুমি আত্মহত্যা করার জন্য বারান্দায় এসেছ।আর আমি যদি এখন না আসতাম তাহলে হয়তো এতক্ষনে তুমি নিচে চিৎপটাং হয়ে যেতে।”

“কিহ!আমি আত্মহত্যা করতে যাব কেন?কিসব উল্টা পাল্টা বলছ দিন থেকে”

“আমি কোন কিছুই উল্টা পাল্টা বলছি না।একটু আগেও তো আমায় মেসেজ দিয়ে বলেছ আমি যেন তোমায় ক্ষমা করে দেই,ভুলে যাই”

“কি বলো এসব।দেখি মেসেজ দেখাও দেখি”

ভ্রুকুঁচকে অরিন কথাটি বললে পকেট থেকে ফোন বের করলো তারেক।অরিনের সামনে ফোন ধরলে অরিন অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে।এতো অরিনের নাম্বার থেকেই মেসেজটা গিয়েছে।কিন্তু সে তো এই মেসেজ দেয় নি।কি হচ্ছে তার সাথে।উফ! নাহ আর কিছু ভাবতে পারছে না সে।তারেক বললো

“দেখলে তো।এখনও কি বলবে তুমি কোন মেসেজ দাও নি?”

অরিন কিছু বলে না। কিছু বলার মতো নেই তার কাছে।তারেক অরিনকে পাশ কাটিয়ে সোজা গিয়ে অরিনের বিছানায় শুয়ে পড়লো।কেউ দেখলে বদনাম হবে ভেবে তারেককে চলে যাওয়ার জন্য বার বার জোর করছে অরিন কিন্তু তারেক অনড়।কোন উপায় না পেয়ে সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজল অরিন।কিছুক্ষণের মধ্যেই তার চোখে হাজারো ঘুম ভর করলো।সকালে ঘুম ভাঙতেই আগে তারেককে খুঁজছে সে।পুরো রুমে সে ছাড়া কোথাও তারেক নেই।ওয়াশরুম,বারান্দায় খুঁজে না পেয়ে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো অরিন।নিচে নামতে দেখে অরিনের মা অরিনকে বললেন

“কিরে ঘুম ভাঙলো তোর?”

” হ্যাঁ মা ভেঙেছে”

“আয় নাস্তা খেতে আয়”
অরিনের মা রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন।অরিন মাথায় হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবছে তখনি পিছন থেকে কেউ এসে ধাক্কা খেলো।

“উফ আপু এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছিস কেন।পথ দেয়, আমার আবার বাহিরে যেতে হবে।”

“বাহিরে যাবি মানে।এখন আবার বাইরে কিসের কাজ তোর?”

“অনেক ইম্পর্ট্যান্ট কাজ।হয়েছে পথ দে এতো কথা বলতে হবে না”

অরিনকে পাশ কাটিয়ে তারিন বের হয়ে গেলো।তারিনের মাঝে বেশ পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছে অরিন।কেন যেন তার কিছু একটা খটকা লাগছে।এসব ভাবনাকে পাশে রেখে নাস্তা খাওয়ার জন্য বসলো।খাবার মুখে দিতে যাবে এই সময় ফোন বেজে উঠলো।নাম্বারটি অপরিচিত।তাই আর ধরলো না।খাওয়া শেষে উঠে আবারও উপরে চলে গেলো সে।কালকের ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটি ঘটনা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।এমন সময় অরিনের মা এসে বললেন

” অরিন তোর নামে একটি পার্সেল এসেছে”

অরিনের হাতে একটা রঙিন কাগজে মুরানো বাক্স দিয়ে তিনি চলে গেলেন।অরিন কপাল কুঁচকালো, তাকে আবার কে পার্সেল পাঠালো।ভাবনার সুতো কেটে রঙিন কাগজ গুলো খুললো।বাক্স খুলে সে অবাক।তার প্রিয় ফুল,কাচের চুড়ি,পায়েল আর একটি ডাইরি।ডাইরিটা হাতে নিয়ে একটার পর একটা পেজ উল্টাতে লাগলো।প্রথম পেজে লেখা
“প্রেয়সী,
ভালোবেসে উপহারগুলো গ্রহণ করো”

এভাবে প্রত্যেকটা পেইজে কিছুনা কিছু লেখা।হঠাৎ অরিনের হাত থেকে কেউ ডাইরিটা ছু মেরে নিয়ে গেলো।তাকিয়ে দেখে তারেক আর তারিন।হাতে ডাইরি নিয়ে লেখাগুলো পড়ে তারেক বললো

“এসব কি অরিন?এই সেই ব্যাক্তির দেয়া উপহার নয়তো যাকে তুমি ভালোবাস?”

“মানে কি বলছ?আমি কাউকে ভালোবাসি না”

তারেক কিছু বলতে যাবে তার আগেই তারিন বলে উঠলো
“তাহলে আপু তুই কেনই বা ভাইয়াকে এসব মেসেজ দিস মরে যাবি আবার আজকে তোর নামে পার্সেল আসলো যেখানে কিনা তোকে প্রেয়সী বলেছে?”

তারিনের কথায় অরিন কি বলবে বুঝতে পারছে না।সে বললেও তো তারা বিশ্বাস করবে না।তবুও আল্লাহর নাম জপে বললো

“তোমরা বিশ্বাস করো আমি এসবে কিচ্ছু জানিনা”

“হাহ বললেই হলো নাকি।বুঝেছি যা করার আমাকেই করতে হবে।”

তারেকের বলা কথা শুনে অরিন বললো

“কি করবে?”

অরিনকে পাত্তা না দিয়ে তারিনের উদ্দেশ্যে তারেক বললো

“শুনো তারিন তোমার কাছে তোমার আপুকে দেখে রাখার দায়িত্ব দিয়ে গেলাম।আর এখনি আমি আমার মা বাবাকে পাঠাচ্ছি আমি চাই আজ কালকের ভিতরেই আকদ করে ফেলতে পরে নাহয় শুক্রবারেই আনুষ্ঠানিক ভাবে উঠিয়ে নেব।আমি কোন রিক্স নিতে ইচ্ছুক নই”

তারেক আর না দাঁড়িয়েই চলে গেলো।এদিকে বিরক্তি মাখা চাহনি দিয়ে বোনের পাশেই বসলো তারিন।আর অরিন তো বিস্ময়ে মশগুল।কি হচ্ছে কি হবে কিছুও তার বোধগম্য হচ্ছে না।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here