বর্ষনের শেষে, পর্ব:৩

#বর্ষনের_শেষে
পর্বঃ৩
#সাদিয়া_চৌধুরী_তাহমিনা

অরিনদের বাসায় আজ বেশ হৈচৈ পড়েছে।তারেক সত্যি সত্যিই তার মা বাবাকে নিয়ে এসে আকদ এর ডেট আগে আগে ফিক্সড করেছে।রুমের এক কোনায় বসে বসে সবার কার্যকলাপ দেখছে অরিন।একটু পরেই মাগরিবের আজান দিবে।৮ টার সময় আকদ পড়ানো হবে।বিছানায় আকদ এর জন্য শাড়ি,চুড়ি সব রাখা আছে।শুধু অরিনের তৈরি হওয়ার পালা।আজান শেষে অরিন তৈরি হতে লাগলেই তারিন বললো

“আপু তুই একটা হেল্প করবি?”

বিছানার উপর থেকে শাড়ি হাতে নিতে নিতে অরিন বললো
“কী হেল্প”

তারিন হাত কচলে আমতা আমতা করে বলে উঠলো
“আমার বাইরে যাওয়ার খুব প্রয়োজন।তোর আকদ যে আজ হবে তা তো আগে জানতাম না তাই আজকের এই সময় আমার কাজটা ফেলেছিলাম”

“কিহ এই সন্ধাবেলায় বাইরে।একবার তাকিয়ে দেখ পুরো অন্ধকার হয়ে গেছে।আর তোর এই মুহূর্তে আবার বাইরে কীসের কাজ?”

“আছেরে আপু, দরকার আছে বলেই তো যেতে চাচ্ছি।শুন তুই এদিকটা শামলে নিস আমি গেলাম”

অরিনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ছুট লাগালো তারিন।বিস্ময় নিয়ে তারিনের যাওয়া পথে তাকিয়ে আছে অরিন।তার কোন কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না।হঠাৎ ফোনের শব্দে ধ্যান ভাঙলো তার।শ্বাস ফেলে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো কালকের সেই অচেনা নাম্বার।ধরবে কী ধরবে না এসব ভাবতে ভাবতেই কল কেটে গেলো।ফোন রাখতে যাবে তখন আবারও রিং বেজে উঠলো।শাড়ি পাশে রেখে ফোন ধরে সালাম দিলো অরিন।কিন্তু কেউ কোন কথা বলছে না।শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ ভেসে আসছে।ভ্রুযোগল কুঁচকে কল কেটে দিলো।আবারও ফোন বেজে উঠলে নাম্বার না দেখেই কল ধরে রাগী গলায় বললো

“কী সমস্যাটা কী?কল না ধরলে কল দিতেই থাকেন আবার ধরলে কথা বলেন না, কী চাই কাকে চাই কোন কিছুই বলেন না,বোবা নাকি আপনি?”

“আরে তুমি আমায় এভাবে কেন বলছ?”

তারেকের কন্ঠ কানে আসতেই চমকে গেলো অরিন।ফোন সামনে এনে দেখলো অচেনা নাম্বার নয় তারেক ফোন দিয়েছে।জিবে কামড় দিয়ে বললো
“ওহ সরি।আসলে আমি দেখিনি তুমি যে ফোন দিয়েছ”

“তা বুঝলাম কিন্তু তুমার কথা শুনে যা মনে হলো তোমায় কেও কল দিয়ে ডিস্টার্ব করে”

“না তেমন কিছু না।আচ্ছা বাদ দাও তোমরা কখন আসবে?”

“এই তো ৭টা ৪৫ এর দিকে এসে তোমাদের এখানে পৌঁছে যাব।তুমি তৈরি হও নি এখনো?”

“না এখন হবো”

“দ্রুত তৈরি হও নাহলে লেট হয়ে যাবে।আচ্ছা শুনো তারিন কোথায়?”

অরিন ভাবছে কি বলবে।সে কি বলে দিবে তারিন এখন বাসায় নেই।বলাটা ঠিক হবে না ভেবে তারেককে বললো
“আছে পাশের রুমেই আছে”

“ওহ সে এখন বাসায়।আচ্ছা রাখি এখন পড়ে কথা হবে”

বলেই কল কেটে দিলো তারেক।তারেকের বলা কথাটার মানে বুঝলো না অরিন।তারিন বাসায় শুনে এভাবে বললো কেন?হয়তো এমনিই বলেছে।হঠাৎ অরিনের কেন জানি ভয় লাগছে।এই রাত বিরাতে তারিন একা একা বের হয়ে গেলো কোথায় গেছে বলেও যায় নি।উফ আর কিছু ভাবতে পারছে না সে।দু দিন যাবত এমনিতেই কি সব কাহিনী ঘটছে তার সাথে এর মধ্যে আবার এই তারিনটা তাকে জ্বালিয়ে মারছে।একটু পড়েই নিচ থেকে আওয়াজ আসলো তারেকরা এসে পরেছে।তাড়াহুড়া করে অরিন কোনমতে তৈরি হয়ে গেলো।দরজা খোলার শব্দে পিছনে তাকিয়ে দেখে তারিন এসে গেছে।তবে তারিনের মুখটা কেমন অন্ধকারে ছেয়ে আছে।চোখ ও কেমন ফোলা ফোলা ভাব।তারিনের সামনে গিয়ে অরিন বললো
“কিরে তুই কোথায় গিয়েছিলি আর তোর চোখ মুখ ফোলা কেন?”

“মাথায় বেশ ব্যাথা করছে আপু তাই হয়তো ফোলে গছে।আচ্ছা এসব বাদ দেয়, তোকে নিয়ে নিচে যেতে বলেছে”

অরিন আর কথা বাড়ালো না।বোনের সাথে পা ফেলে নিচে চলে গেলো।আকদ হয়ে গেলে অরিনকে আবারও উপরে নিয়ে গেছে তারিন।তবে অরিনকে রুমে দিয়ে এক মুহূর্তের জন্যও বোনের কাছে থাকে নি সে।
তারেককে সবাই মিলে অরিনের কাছে পাঠিয়েছেন কথা বলার জন্য।তারেক এসেও কেমন চুপচাপ বসে আছে।অরিনের সাথে আগের মতো কথা বলছে না।তারেকের হাতে হাত রেখে অরিন বললো
“কী হয়েছে তোমার,এমন চুপচাপ যে”

“তোমাকে নিয়ে চিন্তায় আছি”

“আমাকে নিয়ে আবার কীসের চিন্তা”

“এই কাগজটা পড়ে দেখো”

তারেকের হাত থেকে কাগজ নিয়ে ভাজ খুলে পড়তে লাগলো অরিন।কালকের ডাইরির লেখার মতোই এই কাগজটার লেখা।খুব সুন্দর করে কালার কলম দিয়ে অরিনের নাম আর্ট করা তারপর কয়েকটি লাইন লিখা।যেখানে আজকেও প্রেয়সী উল্লেখ করা।ভয়ে অরিনের গা কাঁপছে।এখন কি তারেক তাকে ভুল বুঝবে?যদি ভুল বুঝে কিছু একটা করে ফেলে।ডুক গিলে অরিন বললো

তুমি এই কগজ কোথায় পেলে কে দিয়েছে তোমাকে”

তারেক কোন জবাব দেয় না।পুনরায় অরিন বললো
“আমার সাথে কি হচ্ছে না হচ্ছে আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।তুমি আমায় ভুল বুঝো না প্লিজ”

তারেকের উত্তরে আশায় বসে আছে অরিন।তারেককে এখনো চুপ দেখে আবার কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজায় নক করছে কেউ।অরিন উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে তারিন হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।ঠোঁট ভিজিয়ে অরিন বললো
“কী ব্যাপার এতো খুশি কেন?”

“বোনের বিয়ে তাই খুশি।এখন পথ দেয় দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলবো সর”

অরিনকে সরিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলো তারিন।সাথে অরিন ও তাদের কাছে আসলো।তারেকের পাশে বসে তারিন বললো

“কী খবর দুলাভাই বিয়ে তো করে ফেললেন এখন শালিকার দাবী তো মানতে হবে নাকি?

” কী দাবী শুনি”

“কালকে আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন তবে আপুকে নিব না”

কোমরে হাত দিয়ে অরিন বললো
“আমাকে নিবি না কেন?”

“আল্লাহ দু দিন পর তো এমনিই দুলা ভাইদের বাসায় চলে যাবি সারাদিন ঘুরবি ফিরবি।এখন না গেলে কিছু হবে না”

হেসে হেসে তারেক বলে উঠলো
“আমার একমাত্র শালিকার কথা তো আর ফেলতে পারি না।কালকে নিয়ে যাব তৈরি থেকো তুমি”

অরিন তাদের কথার মাঝে আর কথা বলে নি।রুম থেকে যাওয়ার আগে তারেককে কিছু একটা ইশারা করলো তারিন।তারেক ও মুচকি হেসে চোখ দিয়ে ইশারায় কিছু একটা বললো।যা অরিনের চোখ এড়ায় নি।কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করছে না।বলার হলে তো তারা তার সামনেই বলতো।শুধু শুধু জিজ্ঞেস করে কি লাভ।
(চলবে)

[তারিনের জন্য দেখি কারো মায়া দয়া নেই😕শুধু শুধু বেচারিকে সবাই ভিলেন বানিয়ে দিচ্ছেন।একটু মায়া করেন তাকে😑]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here